Ajker Patrika

ইউরোপীয় মঞ্চে ‘দেশহীন’ এক ক্লাবের গল্প

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ২৭
Thumbnail image

চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রয়ের আগ পর্যন্ত অনেক ফুটবল রোমান্টিকের কাছেও স্বল্পপরিচিত ছিল শেরিফ তিরারসপোলের নাম। মলডোভার অচেনা এই ক্লাব এর আগে ইউরোপা লিগে খেললেও আলো ছড়াতে না পারায় তেমন আলোচনায় আসেনি। তবে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এসে প্রথম ম্যাচেই চমক দেখিয়েছে ট্রান্সনিস্ট্রিয়ান অঞ্চলের ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়নস লিগের পরিচিত মুখ শাখতার দোনেৎস্ককে ২-০ গোলে হারিয়েছে তারা।

শুধু ফুটবল মঞ্চেই নয়, এর বাইরেও বেশ আলোচিত দল শেরিফ। উয়েফাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেখানে ক্লাবটিকে মলডোভা প্রজাতন্ত্রের তিরাসপোল শহরের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করে, সেখানে খোদ তিরাসপোলের অধিকাংশ নাগরিকই নিজেদের শহরকে ট্রান্সস্ট্রিয়ান অঞ্চলের রাজধানী বলে দাবি করেন। এমনকি মলডোভার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই অঞ্চলের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাসও রয়েছে।

শেরিফের অঞ্চল ট্রান্সস্ট্রিয়ান হচ্ছে ডিনিস্টার নদী ও মলডোভার পূর্ব সীমান্তের মধ্যে ৪০০ কিলোমিটারের একটি ভূখণ্ড। এটি স্বঘোষিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিহীন ৪ লাখ ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর একটি রাষ্ট্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর ১৫টি সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তবে ট্রান্সস্ট্রিয়ান অঞ্চলের নাম সেই তালিকায় নেই।

বিচ্ছিন্নতাবাদী এই অঞ্চলের মুদ্রা, সীমান্ত পুলিশ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, সামরিক বাহিনী, পাসপোর্ট এবং মোবাইল নেটওয়ার্কও আলাদা। তবে এগুলো মাত্র তিনটি দেশে বৈধ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় শেরিফকে তাই মলডোবান ক্লাব হিসেবেই খেলতে হচ্ছে।

এমন সংঘাতপূর্ণ ও বিতর্কিত অঞ্চল থেকে শেরিফের উত্থান অনেকটা স্বপ্নের মতো। বাছাইপর্বে তারা হারিয়েছে রেড স্টার বেলগ্রেড ও ডায়নামো জাগরেবের মতো ইউরোপিয়ান মঞ্চের পরিচিত দলকে। আর গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে শাখতারকে হারিয়ে রীতিমতো ইতিহাসই গড়েছে শেরিফ।

শেরিফের সাবেক কোচ গাভরিল বালিন্ট বলেন, ‘আমি কখনো ভাবতেও পারিনি মলডোভার কোনো ক্লাব চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে খেলতে পারবে। কিন্তু তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। এটা বিশাল অর্জন।’

শেরিফের এই অর্জনে কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ইউক্রেনীয় কোচ ইউরি ভেরনাইদোবকে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকটা কৃতিত্ব এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান শেরিফ লিমিটেডকেও দিতে হবে, যারা অঞ্চলটির জীবনযাত্রার অনেক কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করছে।  ২০০২ সালে শেরিফ নিজেদের স্টেডিয়াম তৈরি করে, যেটা গোটা মলডোভার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক। এমনকি সম্পর্ক ভালো না থাকার পরও মলডোভা জাতীয় দলও বেশির ভাগ হোম ম্যাচ খেলে এই স্টেডিয়ামে।

এই ক্লাবের সঙ্গে ভালো স্মৃতি রোমন্থন করে বালিন্ট বলেন, ‘শেরিফে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ইতিবাচক। ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল অসাধারণ।’ বড় মঞ্চেও শেরিফের যাত্রার শুরুটা সুন্দর হলো। এখন সামনের ম্যাচগুলোয় এই শুভসূচনা ধরে রাখার অপেক্ষা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত