Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শেষ পর্যন্ত সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি

Thumbnail Image

মাত্রই শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে বাংলাদেশের সেরা আবিষ্কার মোসাম্মৎ সাগরিকা। তাঁর ৪ গোলেই ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। অনেক নাটকের পর ভারতের সঙ্গে হয়েছে যৌথ চ্যাম্পিয়ন। মাঠের খেলায় উজ্জ্বল সাগরিকা সংবাদমাধ্যমের সামনে খানিকটা অপ্রতিভ, কেমন লাজুক। সেই সাগরিকাই গতকাল আজকের পত্রিকাকে বললেন নিজের মনের সব কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাজিম আল শমষের

প্রশ্ন: মা-বাবা গ্রামে চলে গেলেন। মন খারাপ? 
সাগরিকা: একটু তো মন খারাপ হচ্ছেই। অনেক দিন পর বাবা-মাকে দেখেছি। কিন্তু কাছে পেয়েও তাঁদের সঙ্গে একটা দিন থাকা হলো না, শুধু একনজর দেখতে পারলাম। 

প্রশ্ন: কত দিন পর দেখা তাঁদের সঙ্গে?
সাগরিকা: চার-পাঁচ মাস তো হয়ে গেলই। সপ্তাহে একদিন ফোন পাই।

প্রশ্ন: মা-বাবার গ্যালারিতে উপস্থিতি মাঠে নিজের সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত করেছে নিশ্চয়ই...
সাগরিকা: একটাই লক্ষ্য ছিল—আমাদের খেলতেই হবে, জিততেই হবে। আর যখন জেনেছি, আমার বাবা-মা চলে এসেছেন, তখন আরও ভালো লেগেছে। যেহেতু তাঁরা সরাসরি খেলা দেখেছেন, তখন লক্ষ্য ছিল মাঠে ভুল খেলা যাবে না, ভুল পাস দেওয়া যাবে না। কেউ যেন বলতে না পারেন, বাবা-মা আসায় মেয়েটা ভালো খেলছে না। তাঁদের দিকে যেন কেউ আঙুল তুলতে না পারেন, সেই জেদ নিয়ে মাঠে খেলেছিলাম।

প্রশ্ন: ফাইনালের আগে আপনি ৩ গোল করেছিলেন। অবশ্যই ভারতের খেলোয়াড়দের নজরে ছিলেন। ভারতের ফুটবলাররা আপনাকে ঘিরে রেখেছিল...
সাগরিকা: শুরুতে তো ওরা আমাকে বলই ধরতে দেয়নি। বল ধরতে গেলেই পেছন দিক থেকে মেরেছে। দু-তিনজন মিলে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত যে ওদের কাটিয়ে, হার মানিয়ে গোল করতে পেরেছি, তাতেই অনেক ভালো লাগছে। 

প্রশ্ন: ফাইনালে একদম শেষ সময়ে যেভাবে গোল করলেন, একবারও কি মনে হয়েছে যে ভারত একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল? ওরা কি ভেবেছিল যে আপনারা গোল করতে পারবেন না?
সাগরিকা: ওরা হয়তো ভেবেছিল, আমরা গোল করতে পারব না। জিতে যাচ্ছি, এমনটাই হয়তো ওরা ভেবেছিল। তবে আমাদের মনে জেদ ছিল যে এক সেকেন্ড বাকি থাকলেও আমরা গোল করব। হয় ড্র করব, নয়তো জিতব।

প্রশ্ন: ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে শেষ দিকে গোল করেছিলেন, ফাইনালেও শেষ সময়ে গোল। শেষ দিকে এসে এই গোল করাটাকে কি অভ্যাস বানিয়ে ফেললেন? 
সাগরিকা: না না। প্রথম থেকেই গোল করতে হবে। ভাগ্যে ছিল না বলে ফাইনালে শুরুতে গোল পাইনি। 

প্রশ্ন: কখনো ভাবতে পেরেছিলেন, এই এক টুর্নামেন্ট দিয়েই দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নেবেন? 
সাগরিকা: এটা তো কখনোই ভাবিনি যে আমি এভাবে মানুষের মনে ঢুকে যাব। তবে স্বপ্ন ছিল যে একদিন অনেক বড় ফুটবলার হব। সবাইকে ভালো খেলা দেখাব, ভালো খেলোয়াড় হব।

প্রশ্ন: লক্ষ্য নিশ্চয়ই জাতীয় দলে খেলা।  নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করতে চান? 
সাগরিকা: জাতীয় দলে অনেক সিনিয়র আপু আছেন। সাবিনা আপু, সানজিদা আপুদের মতো ভালো খেলোয়াড় আছেন। আমারও চেষ্টা করতে হবে যেন ওনাদের সঙ্গে একই দলে খেলতে পারি। আপুরা অনেক ভালো খেলেন। আমার নিজেরও বিশ্বাস আর জেদ আছে যে আপুদের মতো করে খেলে তাঁদের সতীর্থ হব। 

প্রশ্ন: ফাইনালের দিন আপনার মা বলেছিলেন, যখন আপনি এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হয়ে খেলছিলেন, তখন গ্রামে রটিয়ে দেওয়া হয় যে আপনি এক ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেছেন। গ্রামবাসীর এসব আচরণেই কি ভেতরে ভেতরে নিজেকে দেখিয়ে দেওয়ার জেদ তৈরি হয়েছিল? 
সাগরিকা: আমার বাবা একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলছিলেন, গ্রামে সবাই বলছে, তুই নাকি ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেছিস। আমি তো শুনেই অবাক! তখন মনে হলো, ভালো খেলে একদিন না একদিন দেখিয়ে দেব, ছেলের হাত ধরে পালিয়েছি, নাকি কোথায় গিয়েছি! শেষ পর্যন্ত সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি। সবাই এখন আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। 

প্রশ্ন: আপনি যে একাডেমি থেকে উঠে এসেছেন, সেই রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড স্পোর্টস একাডেমিতেই হয়তো অনেক সাগরিকা আছেন, যাঁরা যথার্থ সমর্থনের অভাবে অকালে ফুটবল ছেড়ে দিচ্ছেন। তাঁদের জন্য আপনার কী বার্তা থাকবে?
সাগরিকা: সবাইকে জেদ নিয়ে খেলার পরামর্শ আমার। যারা খেলতে দিতে চায় না, যারা খারাপ কথা বলে, তাদের দেখিয়ে দাও—কোনো কিছুই তোমাদের বাধা হতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত