Ajker Patrika

নিলামের ৫ ফুটবলারকে রহস্যজনক বহিষ্কার

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১: ০৭
Thumbnail image

 

ধুমধাম করে গত ২৬ আগস্ট এলিট একাডেমির ১০ ফুটবলারকে নিলামে পাঁচ ক্লাবের কাছে বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই ১০ ফুটবলারের ৫ জনই ছিল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) ছাত্র। এই পাঁচ ফুটবলারকেই বহিষ্কার করে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বহিষ্কার হওয়া ফুটবলারের মধ্যে ইমরান খান, রুবেল শেখ, সিরাজুল ইসলাম রানা ও মিরাজুল ইসলামকে কিনেছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর আসাদুল মোল্লাকে কিনেছে আবাহনী লিমিটেড।

বহিষ্কার হওয়া একাধিক ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানালেন, তাঁরা নিজেরাও নিশ্চিত নন, কেন বিকেএসপি তাঁদের বহিষ্কার করেছে। বয়সভিত্তিক একাধিক জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ইমরান খান যেমন বললেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমরা নেপাল থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ খেলে আসার পর ছুটিতে বাড়িতে চলে যাই। এ সময় আমাদের বিকেএসপিতে যেতে বলা হয়, একই সময়ে ক্লাবও (ব্রাদার্স) আমাদের ক্যাম্পে যোগ দিতে বলে। বিকেএসপিতে গেলে ক্লাবে ফিরতে দেওয়া হবে না—এমন ভাবনা থেকেই আমরা আর বিকেএসপির সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। ভেবেছিলাম সেটা বাফুফেই করবে। ক্লাবের সঙ্গে বাফুফের একটা চুক্তি আছে।’

১০ ডিসেম্বর বিকেএসপি থেকে ইমরানের বহিষ্কার আদেশের কারণ দেখানো হয়েছে, তার বকেয়া ৩২ হাজার ৭১০ টাকা। এই ফি জমা দিয়ে খুলনা বিকেএসপি থেকে ইমরানের বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এ কারণে যে তার ছাত্রত্ব কেড়ে নেওয়া হবে, সেটি ভাবতেও পারেনি ১৭ বছর বয়সী ইমরান, ‘আমাদের বলা হয়নি যে বিকেএসপিতে না গেলে আমাদের বহিষ্কার করে দেওয়া হবে। না জানিয়েই বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।’

আবাহনীতে যাওয়া ফরোয়ার্ড আসাদুল তার ছাত্রত্ব হারানোর খবর পেয়েছে শ্রেণিশিক্ষক লাইলুন নাহারের কাছ থেকে। বিকেএসপিতে বকেয়া আছে তারও। তবে এই বকেয়ার কারণে তাকে বহিষ্কৃত হতে হবে, তা বিশ্বাসই হচ্ছে না আবাহনীর ক্যাম্পে থাকা আসাদুলের, ‘এই বহিষ্কার টাকার কারণে নয়। আমি ক্লাবে থাকছি। পরীক্ষার সময়ই শুধু বিকেএসপিতে যাওয়া হতো। বড় ক্লাব ছেড়ে যদি চলে যাই, তাহলে ভবিষ্যৎ কী থাকল! তাঁরা সেটা বুঝতেই চাননি।’

শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ ডিফেন্ডার সিরাজুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে। দেরি করে যোগ দেওয়া এবং কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে দেয়াল টপকে ছুটির আগের দিন বাড়ি চলে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে রানার ব্যাখ্যা, ‘ছুটির দিন বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ভয় থেকে আমরা আগের দিন রাতে চলে যাই। আমার সঙ্গে এক বন্ধুও ছিল। তাকে ডেকে নেওয়ার পর সে দোষ স্বীকার করলে তার বিপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ আমাকে না ডেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করে দেওয়া হলো।’

বাফুফের এলিট একাডেমিতে ৩৬ ও বাফুফের নারী দলের ক্যাম্পে ৩৩ জন ফুটবলার বিকেএসপির ছাত্র। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষাতেই অংশ নেন। অনেকের লম্বা সময়ের বকেয়া। বিকেএসপি এমন এক সময় পাঁচ ফুটবলারকে বহিষ্কার করেছে, যখন জালিয়াতির অভিযোগে এক বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ ডিসেম্বর নিষিদ্ধ করে বাফুফে। এর আগে ফুটবলারদের নিলাম থেকে প্রাপ্য কমিশন নিয়ে বাফুফের সঙ্গে সম্পর্কের চিড় ধরেছিল বিকেএসপির। তবে এই বহিষ্কার আদেশের সঙ্গে নিলামের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি বিকেএসপির পরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল মো. মিজানুর রহমানের। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘এর সঙ্গে মোটেও নিলামের সম্পর্ক নেই। অন্য কোনো শৃঙ্খলার কারণ থাকলে থাকতে পারে। আমাকে দেখে সেটা জানাতে হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিকেএসপির একজন ফুটবল কোচ বললেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী এরা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের মধ্যে পড়ে গেছে। এলিট একাডেমিতে গিয়ে অনুশীলন করলেই হয় না, কথাও শুনতে হয়।’

বহিষ্কৃত ছাত্রদের পাশে থাকছে বাফুফে। ফেডারেশনের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া পরিচালিত কলেজে তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানালেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত