Ajker Patrika

সাদ উদ্দিনের গোলে মালদ্বীপে ড্র বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সাদ উদ্দিনের গোলে মালদ্বীপে ড্র বাংলাদেশের

একের পর এক সুযোগ নষ্টের পর ডিফেন্ডারদের ভুল। ৮৭ মিনিটে এগিয়ে গেল মালদ্বীপ। সেই গোলে যখন চোখ রাঙাচ্ছে হার তখনই ত্রাতা হয়ে এলেন সাদ উদ্দিন। বদলি নামা এই ডিফেন্ডারের গোলে বাংলাদেশ শিবিরে বয়ে গেল স্বস্তির হাওয়া। 

বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে মালে জাতীয় স্টেডিয়ামে পিছিয়ে পড়েও মালদ্বীপের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ৮৭ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পর স্বস্তির এই ড্র এসেছে সাদ উদ্দিনের পা থেকে। ২০১৯ সালের পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে দ্বিতীয় গোল পেলেন ২৫ বছর বয়সী রাইটব্যাক। মালেতে ড্র হওয়ায় বাছাইপর্বে যাওয়ার রাস্তাটা এখন উন্মুক্ত দুই দলের জন্যই। ১৭ অক্টোবর কিংস অ্যারেনায় প্রাক বাছাইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে যে দলই জিতবে, তারাই খেলবে আগামী বছর থেকে শুরু হওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। 

ড্রয়ে স্বস্তি এলেও জয় না পাওয়ার আক্ষেপ পোড়াবে বাংলাদেশ দলকে। মালদ্বীপকে কখনোই তাদের মাটিতে হারানো হয়নি বাংলাদেশ ফুটবল দলের। আজ সেই সুযোগ এসেছিল। কিন্তু রাকিব হোসেন-ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা অন্তত দুই হালি সুযোগ করলেন। কখনো রাকিব, কখনো বা ফাহিম; দুজনে মিলে যেন প্রতিযোগিতাই করলেন কত রকমভাবে সুযোগ নষ্ট করা যায়। ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত গোলের জন্য এগিয়ে আসতে হলো সাদ উদ্দিনকেই। 

 ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে গোল করে নায়ক হয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। সেই গোলের পর তার ভুলে সাফ, চার জাতি টুর্নামেন্টে হেরেছিল বাংলাদেশ। চার বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল পেয়ে সব পাপের প্রায়শ্চিত্তই যেন করলেন বসুন্ধরা কিংসের এই ডিফেন্ডার। 

 ‘মদ’ কাণ্ডে নিষিদ্ধ হওয়ায় গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো, ডিফেন্ডার তপু বর্মণ ও মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিনকে রাখা হয়নি মালদ্বীপের বিপক্ষে দলে। আজ মালে জাতীয় স্টেডিয়ামে জিকো ও তপুর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে এশিয়াডে আলো ছড়ানো গোলরক্ষক মিতুল মারমা এবং ডিফেন্ডার শাকিল হোসেনের। মোরসালিনের জায়গা নেন উইঙ্গার ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। 

মালে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দুই দলই খেলল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের খেলায় প্রথম বড় সুযোগ এসেছিল মালদ্বীপের, ম্যাচের ১৮ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বলে বক্সে ফাঁকায় বল পান মালদ্বীপ অধিনায়ক আলী ফাসির। তাঁর গতিময় শট গোলরক্ষক মিতুল মারমার হাত ছুঁয়ে পোস্টে আটকে যাওয়ায় রক্ষা বাংলাদেশের। 

বাংলাদেশের প্রথম আক্রমণ ২৬ মিনিটে। সোহেল রানার বাড়ানো বলে মালদ্বীপের তিন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে মাটি কামড়ানো শট রাকিব হোসেনের। তবে সেই শট অল্পের জন্য খুঁজে পায়নি জাল। ৩৫ মিনিটে রাকিবের আরেকটি চেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি। সোহেল রানার কর্নার থেকে রাকিবের হেডে বল এবারও পোস্টের বাইরে। 

প্রথমার্ধে বাংলাদেশের সেরা সুযোগটা নষ্ট হয়েছে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ভুলে। পোস্টের মুখে মালদ্বীপ ডিফেন্ডার আনাফ রশীদের ভুলে গোলে শট নেওয়ার পরিবর্তে ফাহিম শট নেন বাইরে। 

 ৫৩ মিনিটে রাকিব আবারও হতাশ করেন দলকে। সোহেল রানার দূরপাল্লার ক্রস থেকে বাংলাদেশি ফরোয়ার্ডের আড়াআড়ি শট এবারও জড়ায়নি জালে। তিন মিনিট পর ফাহিমও শট নেন পোস্টের বাইরে। 

দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত মালদ্বীপ ৬৫ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই বসেছিল। বাঁ প্রান্ত ধরে বিপজ্জনক এক ক্রস করেছিলেন হামজা মোহাম্মদ। লক্ষ্য ছিল আলী ফাসির। বল ফাসিরের পায়ে অবধি পৌঁছানোর আগেই বল বিপদমুক্ত করে দলকে বাঁচান অভিষিক্ত ডিফেন্ডার শাকিল হোসেন। 

পুরো ম্যাচে হালি খানেক সুযোগ নষ্ট করা ফাহিম ৭০ মিনিটে আবারও হতাশ করলেন বাংলাদেশকে। ডান প্রান্ত ধরে রাকিব হোসেনের ক্রস ধরে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেই গোল পেতেন ফাহিম, কিন্তু চলতি বলে শট নিতে গিয়ে বল বাইরে পাঠালেন ক্রসবারের ওপর দিয়ে। সুযোগ নষ্টের খেসারত হিসেবে ফাহিমকে পরের মিনিটেই তুলে নিয়ে মুজিবর রহমান জনিকে নামান বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তুলে নেওয়া জামাল ভূঁইয়াকেও। তাঁর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রবিউল হাসান। 

রবিউল মাঠে নেমেই তৈরি করেন সুযোগ। ৭৪ মিনিটে নেন দারুণ এক শট। তবে সেই শট ফিস্ট করে এবারও লাল-সবুজদের হতাশায় ডোবান মালদ্বীপ গোলরক্ষক হুসেইন শরীফ। 

 ৭৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে মালদ্বীপ। এবারও বিপদ ঘটাতে পারতেন আলী ফাসির। বাংলাদেশের গোল মুখে ফাঁকায় বল পান মালদ্বীপ অধিনায়ক। তার শট মিতুল মারমার মাথায় লেগে দিক পাল্টে চলে যায় বাইরে। 

নিজেরা সুযোগ নষ্ট করে ৮৭ মিনিটে মালদ্বীপকে উল্টো গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। বদলি ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম হুসেনের ক্রস ঠেকাতে গিয়ে নিজ সতীর্থ শাকিলের গায়ে হেড নেন ডিফেন্ডার তারিক কাজী। বল শাকিলের গায়ে প্রতিহত হয়ে পড়ে আরেক বদলি ফরোয়ার্ড হাসান নাজিমের পায়ে। এমন উপহার পাওয়া সুযোগ একদমই নষ্ট করেননি নাজিম। মিতুলকে পরাস্ত করে এগিয়ে দেন মালদ্বীপকে। 

পিছিয়ে পড়ার পরই মরিয়া হয়ে উঠল বাংলাদেশ। তাতে এড়ানো হলো হার। অতিরিক্ত সময়ে বাঁ প্রান্ত থেকে রাকিবের ক্রস থেকে মালদ্বীপ গোলরক্ষকের পায়ের মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়িয়ে বাংলাদেশের হার এড়ান বদলি ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত