Ajker Patrika

৫০ বছরে কোথায় দাঁড়িয়ে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন

তানভীর মাজহার ইসলাম তান্না
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৫৯
৫০ বছরে কোথায় দাঁড়িয়ে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন

তানভীর মাজহার ইসলাম তান্না স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার ছিলেন। পরে দেশের ক্রিকেট-ফুটবলের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম বিশ্বকাপ যাত্রায়ও ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন তিনি। সব্যসাচী এই ক্রীড়া সংগঠক ফিরে দেখলেন, গত ৫০ বছরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য-ব্যর্থতা এবং চোখ রাখলেন ভবিষ্যতেও। 

৫০ বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। শুরুতে সবকিছু ভালোভাবে চললেও এখন কিছুটা মন্থর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ক্রিকেটে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। অন্য খেলায় খুব বেশি যদিও এগোতে পারিনি। খেলাগুলো অবশ্য হচ্ছে। এখন হকির টুর্নামেন্ট হচ্ছে। তবে এগুলো মাঝেমধ্যে হচ্ছে। খেলাধুলায় কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা লাগে। কিন্তু এখানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পরেও কিছু হচ্ছে না। 

আমি যখন ক্রিকেট বোর্ডে ছিলাম, আমাদের পরিকল্পনা বিভাগ ছিল। আমরা লম্বা সময়ের জন্য পরিকল্পনা করতাম। আমরা স্কুল ও কলেজকে টার্গেট করেছিলাম। এর বাইরে ঢাকা লিগ, চট্টগ্রাম লিগও ছিল। এমন নয় যে আমরা শুধু খেলোয়াড়দের ওপরই মনোযোগ দিয়েছি, আমরা আম্পায়ারদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এমনকি জাতীয় দলের খেলোয়াড়দেরও আম্পায়ারিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। মনি (এনামুল হক), নাদির শাহ এরা পরে ভালো আম্পায়ার হয়েছে। এসব করতে লম্বা সময়ের পরিকল্পনা লাগে। খেলাটা যেভাবে চলছে, সেটা যথেষ্ট ভালো নয়। এখন সেখানে চুরি চলে এসেছে। এখানে যে লিগের খেলা হয়, সেটা ক্রিকেট বলেন কিংবা ফুটবল, আমার কাছে যে খবর আসে তাতে বলা হয় বেশির ভাগ ম্যাচই পাতানো। আমি নিশ্চিতভাবে বলছি না, তবে এ রকম শুনেছি। এখন প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগের খেলা যদি এ রকম পাতানো হয়, তবে সেই মানের খেলোয়াড় কখনো পাবেন না। 

এখানে ক্রিকেট বোর্ডের দোষ আছে। বোর্ড বিষয়টাকে ভালোভাবে দেখভাল করছে না। শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তাদের আরও কঠোর হওয়া উচিত। তাদের আরও দৃঢ়চেতা লোক দরকার সিদ্ধান্ত নিতে, যারা স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারবে। নিচের স্তরে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, তবে ওপরের স্তর কখনো ভালো হবে না। যেমন একজন খেলোয়াড় আজ সেঞ্চুরি করল, আমি সেটা পত্রিকায় দেখছি কিন্তু খেলার মধ্যে তো দেখছি না। খেলার মধ্যে এলবিডব্লু দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, রানআউট দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, ক্যাচ আউট দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, আমরা দেখছি না। খেলার মাঠে এ রকম অনেক কিছুই ঘটছে। আমরা টেস্ট মর্যাদা পেয়েছি আরও অনেক আগে—এই বিষয়গুলো আরও স্বচ্ছ হওয়া জরুরি ছিল। 

আপনি ভারত বা ইংল্যান্ডের দিকে তাকান, সেখানে যে লিগ খেলা হয় তা কিন্তু খুব সুন্দরভাবে খেলা হয়। এগুলো এমনই হওয়া উচিত। এখানে কেউ চুরির ভেতর নেই! কেউ কাউকে চুরি করে চ্যাম্পিয়ন বানাচ্ছে না। এগুলো খুব বাজে জিনিস। 
সবকিছু বিবেচনা করে আমার মনে হয় পরের ১০ বছর কী হবে এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এটা করতে হলে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে ফেডারেশনকে করতে হবে। কীভাবে আম্পায়ার বের করবেন, কীভাবে কোচ বের করবেন যোগ্য লোককে সঙ্গে নিয়ে, এগুলো ঠিক করতে হবে। এই ভিত্তিগুলো যদি না থাকে তবে আপনি কখনোই ওপরে যেতে পারবেন না। 

ফুটবলে আন্তস্কুল খেলা নিয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে। কিছু কিছু স্কুল বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে বল ধরতে হবে, কীভাবে বল ছাড়তে হবে এগুলো শেখাতে হবে। এভাবেই সঠিক ছেলেটিকে খুঁজে বের করতে হবে। আপনার তো রেফারিও দরকার। তাদেরও অনুশীলন দরকার। কোচদেরও প্রশিক্ষণ দরকার। এগুলো হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। এগুলো কিন্তু মুখে মুখে বললে হবে না। পরিকল্পনা করে করতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে করলেও হবে না। 

আলাদাভাবে খেলাগুলোকে শিক্ষা ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই কাজগুলো করতে হবে। অ্যাথলেটিক, শুটিং, আর্চারি সবগুলো খেলা এভাবে চলবে। সবাইকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। ঠিকঠাক বাজেটও করতে হবে। নির্দিষ্ট কাঠামো মেনেই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। একবার করে ভুলে গেলে হবে না। এটা নিয়মিতভাবেই চালিয়ে যেতে হবে। আগামী ১০ বছরে কী করবেন, ২০ বছরের কী করবেন, ৩০ বছরে কী করবেন, সেটা ঠিক করতে হবে। এভাবে না করলে এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই সব চলবে। কখনো হয়তো ভালো করবে, আবার কিছুদিন খারাপ করবে। কোনো বিকল্প তৈরি হবে না। হঠাৎ একটা মোস্তাফিজ বেরোবে, হঠাৎ সাকিব আল হাসান বেরোবে—সে জন্য আপনাকে অপেক্ষা করে থাকতে হবে। কিন্তু সেটাতে কোনো লাভ হবে না। সামগ্রিকভাবে কোনো লাভ হবে না। পরিকল্পনা নেই বলেই আমরা এগোতে পারছি না। আপনাকে মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক করতে হবে। 

তানভীর মাজহার ইসলাম তান্নাপূর্ব পাকিস্তানের সময় ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে তখন তিন-চারটা ক্লাব ছিল। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স—এই ক্লাবগুলো এশিয়ান পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করত। ইরানের সঙ্গে তখন একটা প্রতিযোগিতা হতো, তাদেরও হারানোর মতো দল ছিলাম। 

আমাদের খুব ভালো দল ছিল। যুদ্ধের পরও সেটা থেকে গিয়েছিল। এরপর তো স্বাধীন বাংলা দল হলো। ওই সময় আমাদের পাঁচ-ছয়টা খেলোয়াড় ছিল, যারা পাকিস্তান দলে খেলত। পরে আবার সালাউদ্দিন ভাই, এনায়েত ভাই, তসলিম ভাইয়েরা আসল। এরা সবাই অসাধারণ খেলোয়াড় ছিল। সমর্থকদেরও অনেক সমর্থন ছিল। 

২০০০ সালের পর আবার ক্রিকেটের সঙ্গে বেশি যুক্ত হই। আমার যেটা মনে হয়, পরে যারা ফুটবলে এসেছে তারা ঠিক করে নেয় যে, ফুটবলারদের নির্দিষ্ট টাকার বেশি দেব না। আমি শেষবার ২০০০ সালে মুন্নাকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। অন্য অনেককে ১২ লাখ, ১৩ লাখ টাকা করে দিয়েছি। বেতন বাড়ছিল, এখানে জনসমর্থনও ছিল। পরে যারা আসল তারা এটা কমাতে শুরু করে। পাঁচ-ছয় বছর পর সেটা ২ লাখ টাকায় নেমে আসে। এরপর বিএনপির সময় খেলাই বন্ধ ছিল। সে সময় আমি ক্রিকেটেই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। 

বিপরীতে এই সময়ের মধ্যে ক্রিকেটে আমরা শক্তি অর্জন করলাম। আইসিসিও আমাদের নিয়ে ইতিবাচকভাবে ভাবতে শুরু করে। কোচিংয়ের দিকে আমরা মনোযোগ দিলাম। লিগ ম্যাচেও আমরা বাইরে থেকে ভালো খেলোয়াড়দের নিয়ে আসা শুরু করি। লিগ ম্যাচেও ঢাকা স্টেডিয়াম দর্শকে ভর্তি ছিল। আইসিসি ট্রফিতে ভালো করলাম। তারপর টেস্ট স্ট্যাটাস পেলাম। স্বীকৃতি পাওয়ার আগে আমরা তিন, চার দিন বা পাঁচ দিনের ম্যাচ নিয়মিত করতাম। কিন্তু এরপর যারা এল তারা এদিকটায় মনোযোগ দিল না। এখন ভালো করতে হলে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতেই হবে। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে বেশি জোর দিতে হবে। নয়তো হবে না। ১০-২০ জন খেলোয়াড় দিয়ে তো হবে না, অনেক খেলোয়াড় বের করে আনতে হবে। কিন্তু এগুলো কিছুই হচ্ছে না। টেস্ট ম্যাচে জোর দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এটাই আসল খেলা। পরিকল্পনা তাই খুব দরকার। 

অন্য ফেডারেশনগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। আমাকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ফেডারেশন চালাতে বলবেন, সেটা হয় না। সবকিছুর জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও কোচিং দরকার। সঠিক বাজেট নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘বাংলাদেশের ক্রিকেটটাকে এভাবে নষ্ট করবেন না প্লিজ’

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩৩
মিরপুরের উইকেট নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন রুবেল হোসেন। ছবি: ফেসবুক
মিরপুরের উইকেট নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন রুবেল হোসেন। ছবি: ফেসবুক

প্রতিপক্ষের জন্য ফাঁদ পেতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এমন ফাঁদে পড়েছে অসংখ্যবার। এই তো গত জুলাইয়েও মিরপুরের উইকেট নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সালমান আলী আঘা ও সাদা বলের প্রধান কোচ মাইক হেসন। তিন মাস পর সেই মিরপুরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পাতা হয়েছে মরণফাঁদ।

বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০ হচ্ছে হরহামেশাই। ৩০০-৩৫০ রান তাড়া করে জয়ের ঘটনা ঘটছে অহরহ। কিন্তু মিরপুরে ৪০০ তো বহুদূর, এখানে আগে ব্যাটিং করে কোনোমতে ২০০ পেরোলেই সেটা জয়সূচক রান হয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মিরপুরের শেরেবাংলায় ২০৭ রান করে বাংলাদেশ জিতেছে ৭৪ রানে। একই মাঠে গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুই দলই করেছে সমান ২১৩ রান। শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে এক ওভারে।

ব্যাটারদের বধ্যভূমি মিরপুরের উইকেট নিয়ে গতকাল রুবেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ শেষে নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ৩৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি পেসার লিখেছেন, ‘আমার ১২-১৩ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এমন কালো, অদ্ভুত ফাটা উইকেট কখনো দেখিনি। আপনি এমন উইকেট বানিয়ে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পারফরম্যান্স আশা করছেন। এটা আসলে অনেক বড় বোকামি। বাংলাদেশের ক্রিকেটটাকে নষ্ট করবেন না প্লিজ। এই দেশের কোটি মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে। তাদের সেই ভালোবাসাটাকে বাঁচিয়ে রাখুন।’

বাংলাদেশ গতকাল টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে ৪৮ ওভার পর্যন্ত স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ১৭৯ রান। ৩.৭৯ রানরেট। শেষের দিকে রিশাদ হোসেনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়েই তো বাংলাদেশ ২১৩ রান পর্যন্ত তুলতে পেরেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটা সুপার ওভারে নিয়ে গেলেও ব্যাটিংয়ে নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা হয়েছে তাদেরও। আর মিরপুরের কালো মাটির উইকেটে খেলে বৈশ্বিক মঞ্চে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ভরাডুবি হচ্ছে নিয়মিত। মিরপুরের উইকেটের সমালোচনায় রুবেল গতকাল লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে মিরপুর উইকেটে যুদ্ধ চলছে। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। কিছুই বদলায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা। কিন্তু এত বাজে উইকেটে ক্রিকেট খেলা সত্যিই ভীষণ কষ্টকর।’

টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮১৪ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে গতকালের ম্যাচটাই তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সুপার ওভারের ম্যাচ।বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেটা এখন সিরিজ নির্ধারণী হয়ে গেছে। মিরপুরে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় শুরু হবে তৃতীয় ওয়ানডে। এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৭, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামে হবে সিরিজের তিন টি-টোয়েন্টি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আট মাস পর ফিরে আবার বাদ পড়ার শঙ্কায় সৌম্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৪০
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৯ বলে ৪৫ রান করেছেন সৌম্য সরকার। ছবি: ক্রিকইনফো
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৯ বলে ৪৫ রান করেছেন সৌম্য সরকার। ছবি: ক্রিকইনফো

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্য সরকারের শুরুটা স্বপ্নের মতো হলেও সেটা ধরে রাখতে পারেননি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পাওয়ার প্লের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঝোড়ো শুরু এনে দেওয়ার পাশাপাশি রানের বন্যা বইয়ে দিলেও হঠাৎই তাঁর ছন্দপতন। ১১ বছর ধরে বাংলাদেশ দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন।

বাংলাদেশের জার্সিতেই সৌম্য যে রানখড়ায় ভুগছেন, তেমনটা নয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)—ঘরোয়া ক্রিকেটের কোথাও বলার মতো কিছু নেই। ক্যারিয়ারসেরা ১৬৯ রানের ইনিংস ২০২৩-এর ডিসেম্বরে নেলসনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেললেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে আট মাস পর ফিরেছেন। প্রথম ওয়ানডেতে ৪ রানে আউট হলেও গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮৯ বলে করেছেন ৪৫ রান। যেখানে মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে থিতু হওয়ার পর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। সুপার ওভারে ফ্রি হিটের সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি।

পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সুপার ওভারে ১ রানে জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে এসে সৌম্য জানালেন, দীর্ঘদিন পর দলে ফিরলে একটা মানসিক চাপ কাজ করে। ৩২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, ‘অনেক দিন পর দলে এসে আসলে একটু নতুনত্ব লাগেই। আবার খাপ খাইয়ে নিতে একটু সময়ও লাগে। মানসিক চাপও থাকে। কিন্তু যেহেতু খেলোয়াড় আমরা, এসেই খেলাটা আমাদের কাজ।যখনই সুযোগ পাই, নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করি। কারণ, প্রমাণ না করতে পারলে আবার দলের বাইরে চলে যেতে হবে।’

সুপার ওভারে দলকে জিতিয়ে নায়ক হওয়ার সুযোগ এসেছিল সৌম্যর সামনে। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন সৌম্য। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বলেন, ‘এটা বলতে পারেন, আমার জায়গায় আমি ব্যর্থ। আমারও আত্মবিশ্বাস ছিল এখান থেকে একটা বাউন্ডারি আদায় করতে পারব। উইকেট সহজে ছয় বা চার মারার মতো নয়। এটা ঠিক যে আজ (গতকাল) তিনটা ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারিনি। সুপার ওভারে যে বলগুলো খেলেছি, প্রায় সবই ফ্রি হিট ছিল। ছয় বা বাউন্ডরি মারার লক্ষ্য ছিল। হ্যাঁ, এটা আমি পারিনি। আমার এখানে ঘাটতি ছিল।’

টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৮১৪ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে গতকালের ম্যাচটাই তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সুপার ওভারের ম্যাচ।বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয় ওয়ানডেটা এখন সিরিজ নির্ধারণী হয়ে গেছে। মিরপুরে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় শুরু হবে তৃতীয় ওয়ানডে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলেও ডাক পেয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগান সিরিজ না খেলে তখন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে খেলেছিলেন। উইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে সুযোগ পান কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। ২৭, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর হবে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের তিন টি-টোয়েন্টি।

আরও পড়ুন: সুপার ওভারে রিশাদ না নামায় হতভম্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কী বলছেন সৌম্য

সোহানের ক্যাচ মিসকে দায়ী করছেন মিরাজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিরপুরের পিচ নাকি টিভি—কোথায় সমস্যা, ধরতেই পারেননি উইন্ডিজ ক্রিকেটার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১১
মিরপুরের উইকেট নিয়ে মজা করেছেন আকিল হোসেন। ছবি: ক্রিকইনফো
মিরপুরের উইকেট নিয়ে মজা করেছেন আকিল হোসেন। ছবি: ক্রিকইনফো

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল অনেক পুরোনো। ঘরের মাঠের লো-স্কোরিং উইকেটে খেলে বৈশ্বিক মঞ্চে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে। মিরপুরের বোলিং বান্ধব উইকেট নিয়ে অনেক সমালোচনা যেমন হয়, তেমনি নানারকম ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তাও শোনা যায়।

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও মিরপুরের উইকেট বরাবরের মতোই ব্যাটারদের জন্যই বধ্যভূমি। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০-৩৫০ হরহামেশা হলেও শেরেবাংলায় ২০০ রান তুলতেই জান বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রথম দুই ওয়ানডের স্কোরকার্ড দেখলেই সেটা স্পষ্ট। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করেছে ও স্কোরবোর্ডে তুলেছে ২০৭ রান ও ২১৩ রান। যার মধ্যে প্রথম ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ৭৪ রানে জিতলেও গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে সুপার ওভারে হেরে গেছে।

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষেও আলোচনায় মিরপুরের সেই উইকেট। মূল ম্যাচে ১০ ওভারে ৪১ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। সুপার ওভারে ওয়াইড, নো বল করে ৩ বল বাড়তি করলেও তাঁর ঘূর্ণির কাছে হার মেনে বাংলাদেশ থেমে গেছে ৯ রানে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিরপুরের কালো মাটির উইকেটের প্রসঙ্গ এলে আকিল বেশ মজাই করেছেন। ক্যারিবীয় এই বাঁহাতি স্পিনার বলেছেন,‘যখন টিভি চালু করলাম, প্রথম যে কাজটি করলাম, সেটা হলো টিভি পরীক্ষা করে দেখছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, টিভিতেই হয়তোবা সমস্যা। কারণ, স্ক্রিন একদম কালো। হয়তো রঙ চলে গেছে বা কিছু উল্টাপাল্টা মনে হচ্ছিল। পরে বুঝতে পারলাম, পিচটাই এমন কালো।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে থাকলেও ওয়ানডে দলে ছিল না আকিলের নাম। শামার জোসেফ ও জেদিয়া ব্লেডস ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছিটকে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সুযোগ পান আকিল। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বাংলাদেশ সময় গতকাল ভোর চারটায় ঢাকায় পৌঁছান তিনি। ভ্রমণক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেড়টায় খেলতে নেমে গেছেন মিরপুরে। দেখালেন তাঁর জাদু। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিবীয় বাঁহাতি স্পিনার বলেন, ‘রাত চারটায় হোটেলে পৌঁছেছি। তবে এটা কাজেরই অংশ। একবার যখন কোনো কিছুর প্রতি প্রতিশ্রুতির ব্যাপার চলে আসে, তখন নিজের শতভাগ দিতে হয়। প্রায় হাতছাড়া হতে যাওয়া ম্যাচে দলকে জেতাতে পেরেছি। এটাই অনেক বড় স্বস্তি।’

মিরপুরের ঘূর্ণি উইকেটে গতকাল দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খারি পিয়ের, গুড়াকেশ মতি, আকিল হোসেন, রস্টন চেজ-এই চার স্বীকৃত স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন খন্ডকালীন স্পিনার আলিক আথানাজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই পাঁচ স্পিনারের প্রত্যেকেই ১০ ওভার করে বোলিং করেছেন। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে পুরো ৫০ ওভার স্পিনারদের দিয়ে বোলিংয়ের ঘটনা এবারই প্রথমবার ঘটল। বিরল রেকর্ডের এই ম্যাচে সুপার ওভারে ১ রানে জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ সমতা করেছে ক্যারিবীয়রা। মিরপুরে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে।

আরও পড়ুন:

মিরপুরে সুপার ওভারের রোমাঞ্চে সিরিজে ফিরল উইন্ডিজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুপার ওভারে রিশাদ না নামায় হতভম্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কী বলছেন সৌম্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩৯
সুপার ওভারে রিশাদ হোসেনকে ব্যাটিংয়েই নামানো হয়নি। ছবি: এএফপি
সুপার ওভারে রিশাদ হোসেনকে ব্যাটিংয়েই নামানো হয়নি। ছবি: এএফপি

মিরপুরের ঘূর্ণি উইকেটে সাইফ হাসান-নাজমুল হোসেন শান্তদের যখন লেজেগোবরে অবস্থা, বাংলাদেশের ইনিংস ২০০ পেরোনো নিয়েই শঙ্কা, তখনই রিশাদ হোসেনের ক্যামিও। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ঘটেছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যাঁর ব্যাটে চড়ে উদ্ধার হলো বাংলাদেশ, তাঁকেই কিনা নামানো হলো না সুপার ওভারে।

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই রিশাদ এখন এক ‘প্যাকেজ’। লেগ স্পিনের ঘূর্ণির জাদু তো রয়েছেই; এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নজর কেড়েছে তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিং। মিরপুরে গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৪ বলে তিনটি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। অথচ ম্যাচটা যখন সুপার ওভারে গড়াল, তখন ব্যাটিংয়ে নেমেছেন সৌম্য, সাইফ হাসান ও শান্ত। সুপার ওভারে ১১ রানের লক্ষ্যও পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ওয়ানডে সুপার ওভারে ১ রানে জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ শেষে ক্যারিবীয়দের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে আকিল হোসেন সুপার ওভারে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। উইন্ডিজ এই বাঁহাতি স্পিনার বলেন, ‘হ্যাঁ। আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। যে ম্যাচে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, ১৪ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিল, সে নামলই না সুপার ওভারে। ছোট দিকের সীমানার দিকে যে দুটি ছক্কা মেরেছিল, সেখানেই সে ফের মারতে পারত।’

রিশাদ কেন সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে নামেননি, এটা নিয়ে গতকাল তুমুল সমালোচনা হয়েছে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সৌম্য সরকারের কাছে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর কাছেও ছিল না এর কোনো উত্তর। ৩২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, ‘এটা সবাই চিন্তা করিনি। কোচ ও অধিনায়ক চিন্তা করেছে। এখানে আমরা কিন্তু জানতাম না আকিল বোলিং করবে। আমরা যদি দুজন বাঁহাতি নেমে যেতাম, তখন যদি কোনো অফ স্পিনার থাকত, তাহলে আমাদের বিপদ হতে পারত। এ জন্য ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয় ছিল। তাদের ক্ষেত্রেও দেখবেন একই অবস্থা।’

সুপার ওভারে রিশাদ না নামাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে স্বস্তির ব্যাপার ছিল মনে করেন আকিল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্যারিবীয় এই বাঁহাতি স্পিনার বলেন, ‘সে না নামায় তা আমাদের পক্ষে কাজ করেছে। সে এমন এক ক্রিকেটার, যার অনেক শক্তি ও লম্বা। সব মিলিয়ে সে সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটারদের একজন ছিল। তারা তাকে না পাঠানোর কারণে কৃতজ্ঞ।’ বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। মিরপুরে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত