প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম
টক জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় স্বাভাবিক মুখভঙ্গি ধরে রাখা কঠিন! তেঁতুল বা লেবু খেলে চোখ মুখ কুঁচকে থাকি আমরা। বিশেষ করে শিশুরা যখন প্রথমবার টক স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হয়, তখন তারা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে।
টক খাওয়ার সঙ্গে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করার কী সম্পর্ক, তা স্পষ্টভাবে জানেন না বিজ্ঞানীরা। তবে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর পেছনে তিনটি বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। সেগুলো হলো—প্রোটন, ভিটামিন সি ও পূর্বপুরুষদের ফলের ওপর নির্ভরতা।
অ্যাসিডিটির সঙ্গে ‘টক’ স্বাদের সরাসরি সম্পর্ক। টক খাবার মুখে দেওয়ার পর জিহ্বার স্বাদ গ্রন্থি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে, আপনার মুখে অনেকগুলো মুক্ত প্রোটন রয়েছে। প্রোটন কিন্তু নিজেই টক নয়। তবে মানবদেহ প্রোটনকে টক হিসেবে বিবেচনা করে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়।
বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দেহে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একে ভিটামিন সি–ও বলা হয়।
মানবদেহের কোষ ও টিস্যুর স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য এই ভিটামিন সি অপরিহার্য। দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি–এর সরবরাহ না থাকলে স্কার্ভির মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
বেশির ভাগ প্রাণী প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি নিজেরাই তৈরি করতে পারে, কিন্তু মানুষ তা পারে না। ২০১১ সালে ‘জেনেটিকা’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, ৬ কোটি ১০ লাখ বছর আগে ভিটামিন সি সংশ্লেষের জন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জিনগুলোতে পরিবর্তন আসে। সেসময় মানুষের খাদ্যতালিকায় এত পরিমাণ ভিটামিন সি ছিল যে, মানুষের এই জিন পরিবর্তনের আর প্রয়োজন হয়নি।
নিউ জার্সির রুটগার্স ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পল ব্রেসলিন বলেন, ‘মানুষ নিজের শরীরে ভিটামিন সি তৈরি করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। কারণ আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার সব সময়ই গ্রহণ করত। সেসময় মানুষ এত ফল খেত যে, দেহে এই ভিটামিনের অভাব হয়নি কখনো।’
আধুনিক মানুষ টক খাবার বেশ পছন্দ করে। আপেল ও কমলার মতো ফল টক–মিষ্টি স্বাদের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করে। টক খাবার পছন্দ করা আসলে পূর্বপুরুষের খাদ্যাভ্যাসেরই প্রতিফলন। টক স্বাদের সঙ্গে ফারমেন্টেশন বা গাঁজনের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার নজির রয়েছে।
তাহলে টক স্বাদ মজাদার ও মানবদেহের জন্য উপকারী হলেও এই ধরনের খাবার খাওয়ার সময় মানুষ কেন মুখ ও চোখ কুচকে অস্বস্তিভাব দেখায়? এর উত্তর দিয়েছেন অধ্যাপক পল ব্রেসলিন। ব্রেসলিন বলেন, ‘টক খাবার খাওয়ার সময় চোখ মুখ কুঁচকে যাওয়া একধরনের প্রত্যাখ্যানের প্রকাশ যা অন্যদের সংকেত দেওয়ার কৌশল। অর্থাৎ খাবারটি টক তা অন্যদের জানাতে অবচেতন ভাবে মুখের এই ভঙ্গি করে মানুষ।’
যখন সাইট্রিক অ্যাসিড বা ভিনেগারের মতো টক পদার্থ জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণকারী কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে, তখন মানুষের মুখ একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এসব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে মুখের পেশি শক্ত হওয়ার মতো বিষয়ও থাকতে পারে। হুট করে উজ্জ্বল আলো চোখে পড়লে চোখ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বা কোনো কিছু চমকে দিলে মানবদেহ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বিষয়টি তেমনই।
খাবারের হাইড্রোজেন আয়ন জিহ্বার লালার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করলে টক স্বাদ পাওয়া যায়। যখন এই অম্লীয় নির্দেশককে জিহ্বা শনাক্ত করে তখন মস্তিষ্ক সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাঠায়। জিহ্বার স্বাদ রিসেপ্টরগুলো উদ্দীপিত হয় ও প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ মুখ কুঁচকে ফেলে। এটি মূলত প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়া (রিজেকশন রেসপন্স) হিসেবে পরিচিত। তিতা ও ঝালযুক্ত খাবারের ক্ষেত্রেও মানুষের মুখ ‘রিজেকশন রেসপন্স’ দেখায়।
বেশির ভাগ বিষাক্ত খাবার টক স্বাদযুক্ত হয়। বিষাক্ত খাবার থেকে বাঁচতে মানুষের দেহ এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। টক ফল ও অন্যান্য টক জাতীয় খাবার প্রায়শই খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত অসুস্থতার সতর্কতা সংকেত হিসেবে কাজ করে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ফল ও দুগ্ধজাত খাবারে অ্যাসিড থাকে, ফলে খাবারগুলো টক স্বাদের হয়।
কোনো খাবারের সামান্য টক স্বাদও উপেক্ষা করা কঠিন। স্বাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যায়। কেউ বিষাক্ত আপেল খাওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া আশপাশের মানুষদের রক্ষা করতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা দল বেঁধে খাবার খুঁজতে বের হতেন। তাঁদের মুখে নেওয়া খাবারটি নিরাপদ নয়, তা এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যরা বুঝে ফেলতেন।
পচা ও বাসী খাবার থেকে পূর্বপুরুষেরা এভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারতেন। এভাবে তাঁরা খাদ্যজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে পারতেন। তবে আধুনিক যুগে মানুষ অনেক বেশি টক স্বাদ উপভোগ করে। এ জন্য টক স্বাদযুক্ত চকলেটও বাজারে পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স ও মিডিয়াম
টক জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় স্বাভাবিক মুখভঙ্গি ধরে রাখা কঠিন! তেঁতুল বা লেবু খেলে চোখ মুখ কুঁচকে থাকি আমরা। বিশেষ করে শিশুরা যখন প্রথমবার টক স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হয়, তখন তারা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে।
টক খাওয়ার সঙ্গে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করার কী সম্পর্ক, তা স্পষ্টভাবে জানেন না বিজ্ঞানীরা। তবে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর পেছনে তিনটি বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। সেগুলো হলো—প্রোটন, ভিটামিন সি ও পূর্বপুরুষদের ফলের ওপর নির্ভরতা।
অ্যাসিডিটির সঙ্গে ‘টক’ স্বাদের সরাসরি সম্পর্ক। টক খাবার মুখে দেওয়ার পর জিহ্বার স্বাদ গ্রন্থি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় যে, আপনার মুখে অনেকগুলো মুক্ত প্রোটন রয়েছে। প্রোটন কিন্তু নিজেই টক নয়। তবে মানবদেহ প্রোটনকে টক হিসেবে বিবেচনা করে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়।
বেঁচে থাকার জন্য মানুষের দেহে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একে ভিটামিন সি–ও বলা হয়।
মানবদেহের কোষ ও টিস্যুর স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য এই ভিটামিন সি অপরিহার্য। দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি–এর সরবরাহ না থাকলে স্কার্ভির মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।
বেশির ভাগ প্রাণী প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি নিজেরাই তৈরি করতে পারে, কিন্তু মানুষ তা পারে না। ২০১১ সালে ‘জেনেটিকা’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, ৬ কোটি ১০ লাখ বছর আগে ভিটামিন সি সংশ্লেষের জন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর জিনগুলোতে পরিবর্তন আসে। সেসময় মানুষের খাদ্যতালিকায় এত পরিমাণ ভিটামিন সি ছিল যে, মানুষের এই জিন পরিবর্তনের আর প্রয়োজন হয়নি।
নিউ জার্সির রুটগার্স ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পল ব্রেসলিন বলেন, ‘মানুষ নিজের শরীরে ভিটামিন সি তৈরি করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। কারণ আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার সব সময়ই গ্রহণ করত। সেসময় মানুষ এত ফল খেত যে, দেহে এই ভিটামিনের অভাব হয়নি কখনো।’
আধুনিক মানুষ টক খাবার বেশ পছন্দ করে। আপেল ও কমলার মতো ফল টক–মিষ্টি স্বাদের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করে। টক খাবার পছন্দ করা আসলে পূর্বপুরুষের খাদ্যাভ্যাসেরই প্রতিফলন। টক স্বাদের সঙ্গে ফারমেন্টেশন বা গাঁজনের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ মানব সভ্যতার ইতিহাসে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার নজির রয়েছে।
তাহলে টক স্বাদ মজাদার ও মানবদেহের জন্য উপকারী হলেও এই ধরনের খাবার খাওয়ার সময় মানুষ কেন মুখ ও চোখ কুচকে অস্বস্তিভাব দেখায়? এর উত্তর দিয়েছেন অধ্যাপক পল ব্রেসলিন। ব্রেসলিন বলেন, ‘টক খাবার খাওয়ার সময় চোখ মুখ কুঁচকে যাওয়া একধরনের প্রত্যাখ্যানের প্রকাশ যা অন্যদের সংকেত দেওয়ার কৌশল। অর্থাৎ খাবারটি টক তা অন্যদের জানাতে অবচেতন ভাবে মুখের এই ভঙ্গি করে মানুষ।’
যখন সাইট্রিক অ্যাসিড বা ভিনেগারের মতো টক পদার্থ জিহ্বায় স্বাদ গ্রহণকারী কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে, তখন মানুষের মুখ একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এসব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে মুখের পেশি শক্ত হওয়ার মতো বিষয়ও থাকতে পারে। হুট করে উজ্জ্বল আলো চোখে পড়লে চোখ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বা কোনো কিছু চমকে দিলে মানবদেহ যেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় বিষয়টি তেমনই।
খাবারের হাইড্রোজেন আয়ন জিহ্বার লালার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করলে টক স্বাদ পাওয়া যায়। যখন এই অম্লীয় নির্দেশককে জিহ্বা শনাক্ত করে তখন মস্তিষ্ক সঙ্গে সঙ্গে সংকেত পাঠায়। জিহ্বার স্বাদ রিসেপ্টরগুলো উদ্দীপিত হয় ও প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ মুখ কুঁচকে ফেলে। এটি মূলত প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়া (রিজেকশন রেসপন্স) হিসেবে পরিচিত। তিতা ও ঝালযুক্ত খাবারের ক্ষেত্রেও মানুষের মুখ ‘রিজেকশন রেসপন্স’ দেখায়।
বেশির ভাগ বিষাক্ত খাবার টক স্বাদযুক্ত হয়। বিষাক্ত খাবার থেকে বাঁচতে মানুষের দেহ এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। টক ফল ও অন্যান্য টক জাতীয় খাবার প্রায়শই খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত অসুস্থতার সতর্কতা সংকেত হিসেবে কাজ করে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ফল ও দুগ্ধজাত খাবারে অ্যাসিড থাকে, ফলে খাবারগুলো টক স্বাদের হয়।
কোনো খাবারের সামান্য টক স্বাদও উপেক্ষা করা কঠিন। স্বাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মুখের অভিব্যক্তি পাল্টে যায়। কেউ বিষাক্ত আপেল খাওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া আশপাশের মানুষদের রক্ষা করতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা দল বেঁধে খাবার খুঁজতে বের হতেন। তাঁদের মুখে নেওয়া খাবারটি নিরাপদ নয়, তা এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যরা বুঝে ফেলতেন।
পচা ও বাসী খাবার থেকে পূর্বপুরুষেরা এভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারতেন। এভাবে তাঁরা খাদ্যজনিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচতে পারতেন। তবে আধুনিক যুগে মানুষ অনেক বেশি টক স্বাদ উপভোগ করে। এ জন্য টক স্বাদযুক্ত চকলেটও বাজারে পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স ও মিডিয়াম
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিভা ও বিতর্কিত কর্মজীবনের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার করেছিলেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় আজও উপেক্ষিত।
৮ ঘণ্টা আগেরঙের জগতে নতুন চমক নিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তারা এমন একটি রং আবিষ্কার করেছেন, যা সাধারণ চোখে আগে কখনো দেখা যায়নি। এই রঙের নাম রাখা হয়েছে ‘ওলো’, যা দেখতে একধরনের গাড় সবুজাভ নীল।
১৫ ঘণ্টা আগেআইনস্টাইনের কথা উঠলেই চলে আসে আরও একজনের নাম। তিনি হলের এমি নোয়েথার। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই নারী। তিনি ছিলেন জার্মান গণিতবিদ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান এই নারী। কিন্তু এই অল্প কিছুদিনেই গণিতে তাঁর অবদান অসামান্য।
১ দিন আগেজলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর ধানে আর্সেনিকের উপস্থিতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে