Ajker Patrika

মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দূরে পাওয়া গেল পৃথিবী সদৃশ গ্রহ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পৃথিবীসদৃশ গ্রহ হতে পারে ট্র্যাপিস্ট–১ ই। ছবি: নাসা
এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পৃথিবীসদৃশ গ্রহ হতে পারে ট্র্যাপিস্ট–১ ই। ছবি: নাসা

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অনুসন্ধানে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ট্র্যাপিস্ট–১ই (TRAPPIST-1 e) গ্রহে পৃথিবীর মতো প্রাণের বিকাশ সহায়ক বায়ুমণ্ডল থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটি ট্র্যাপিস্ট ১ (TRAPPIST-1) লাল বামনের চারপাশে ঘুরতে থাকা সাতটি গ্রহের একটি।

বিশ্বখ্যাত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের (জেডব্লিউএসটি) মাধ্যমে পাওয়া এই তথ্য যদি নিশ্চিত হয়, তাহলে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পৃথিবীসদৃশ গ্রহ হতে পারে ট্র্যাপিস্ট-১ই।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) জ্যোতির্বিদ ও গবেষণা সহলেখক সারা সিগার বলেন, ‘ট্র্যাপিস্ট-১ই এখনো আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বসবাসযোগ্য গ্রহগুলোর একটি। নতুন এই ফলাফল এই গ্রহ আসলে কেমন তা বুঝতে আরও সাহায্য করবে।’

পৃথিবীর সঙ্গে ট্র্যাপিস্ট-১ই-এর কী মিল রয়েছে—

বিজ্ঞানীরা এখনো একমাত্র পৃথিবীকেই এমন একটি গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে প্রাণ বিকশিত হয়েছে। তাই পৃথিবীই তাদের অনুসন্ধানের মানদণ্ড।

প্রাণের জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান তরল পানি। আর এই পানি ধরে রাখার জন্য দরকার একটি স্থিতিশীল তাপমাত্রা এবং একটি ঘন বায়ুমণ্ডল।

ট্র্যাপিস্ট-১ নামের একটি লাল বামন নক্ষত্র ২০১৬ সালে আবিষ্কৃত হয়। এটি সাতটি পাথুরে গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, যার মধ্যে কয়েকটি ‘হ্যাবিটেবল জোনে’ অবস্থান করছে—মানে এমন দূরত্বে, যেখানে পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে।

লাল বামন নক্ষত্রগুলো সূর্যের মতো নক্ষত্রের তুলনায় অনেক ঠান্ডা, ফলে এদের বাসযোগ্য অঞ্চল (habitable zone) অনেক কাছাকাছি থাকে। তবে, এ ধরনের নক্ষত্র অত্যন্ত সক্রিয়। এদের মধ্যে শক্তিশালী রশ্মির বিকিরণ বা বিস্ফোরণ ঘন ঘন ঘটে, যা এতটাই প্রবল যে, বিজ্ঞানীদের ধারণা, এসব রশ্মির কারণে নিকটবর্তী গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল পুরোপুরি উড়ে যেতে পারে।

ট্র্যাপিস্ট-১ডি নামে একই ব্যবস্থার আরেকটি গ্রহে এর প্রমাণ মিলেছে। সেখানে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। তবে ট্র্যাপিস্ট-১ই একটু দূরে অবস্থান করায়, সেখানে বায়ুমণ্ডল টিকে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

নেস্টর এসপিনোজা (স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউট) এবং নাটালি অ্যালেন (জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি) নেতৃত্বাধীন একটি দল জেডব্লিউএসটির মাধ্যমে ট্র্যাপিস্ট-১ই গ্রহের ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ করে। অর্থাৎ, গ্রহটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এর আলো কীভাবে পরিবর্তন হয়, তা বিশ্লেষণ করে।

এমআইটিরর আনা গ্লিডেনের নেতৃত্বে আরেকটি দল সেই ডেটা ব্যাখ্যা করে। তারা চারটি ট্রানজিট থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে, যদিও এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, কারণ নক্ষত্রের নিজস্ব কার্যকলাপও ডেটাকে প্রভাবিত করে।

সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রায়ান ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘আমরা দুটি সম্ভাবনা দেখছি। সবচেয়ে রোমানঞ্চকর হলো, ট্র্যাপিস্ট-১ ই-এর একটি দ্বিতীয় বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে, যেখানে নাইট্রোজেনের মতো ভারী গ্যাস রয়েছে। তবে এটি একেবারে বায়ুমণ্ডলবিহীন পাথুরে গ্রহও হতে পারে।

সেই বায়ুমণ্ডলে যা আছে

ট্র্যাপিস্ট-১ই-এর আলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এটি কার্বন ডাই-অক্সাইডে ভরপুর শুক্র বা মঙ্গলের মতো নয়। আবার ডিউটেরিয়াম (হাইড্রোজেন আইসোটোপ), কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলের সম্ভাবনাও কম।

তবে গবেষণার ফলাফল নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে মিল পাচ্ছে, যার সঙ্গে কিছু পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ প্রায় ৭৮ শতাংশ। তাই যদি এটি নিশ্চিত হয়, তবে ট্র্যাপিস্ট-১ই হতে পারে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পৃথিবীসদৃশ গ্রহ।

তবে সেই গ্রহে প্রাণ রয়েছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে জেডব্লিউএসটি দিয়ে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ চলছে। নতুন ডেটা এলে জানা যাবে, সত্যিই ট্র্যাপিস্ট-১ই-এ বায়ুমণ্ডল আছে কি না।

গবেষক আনা গ্লিডেন বলেন, ‘আমরা এখনো জানার শুরুতেই আছি। ৪০ আলোকবর্ষ দূরের একটি পৃথিবীসদৃশ গ্রহের আলো বিশ্লেষণ করে জানার চেষ্টা করছি—সেখানে প্রাণ সম্ভব কি না। এটি এক নতুন যুগের সূচনা, যেখানে আমরা আক্ষরিক অর্থেই মহাবিশ্বে নতুন পৃথিবী খুঁজছি।’

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত