Ajker Patrika

চীনের কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ প্রযুক্তি, মহাকাশে তৈরি করল অক্সিজেন ও রকেটের জ্বালানি

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
চীনের নভোচারীরা হাইড্রোকার্বন ইথিলিন তৈরি করেছেন, যা রকেট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ছবি: জেএমই সায়েন্স

মহাকাশ গবেষণায় একের পর এক অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে চীন। এবার কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাকাশেই অক্সিজেন ও রকেটের জ্বালানি তৈরিকে সাফল্য পেলেন চীনের বিজ্ঞানীরা। বেশ সাধারণ সরঞ্জাম এবং ন্যূনতম শক্তি ব্যবহার করে কাজ করেছে এই প্রযুক্তিটি তৈরি করেছে। এটি চীনের প্রস্তাবিত চাঁদভিত্তিক স্টেশন নির্মাণে কাজে লাগানো হতে পারে এই প্রযুক্তিটি, যা এক দশকের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো চালিয়েছেন শেনঝৌ-১৯ মিশনের নভোচারীরা। চীনের তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে তারা অবস্থান করছেন। এই স্টেশনটি ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে পৃথিবীর কাছে কক্ষপথে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়েছে এবং বর্তমানে সেখানেই এই উদ্ভাবনী গবেষণার কাজ চলছে।

বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক খবরের প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ প্রযুক্তি উন্নয়নের চেষ্টা করছে চীন। এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি ব্যবহার করে অক্সিজেন এবং রকেটের জ্বালানি তৈরি করতে পারে। এই প্রযুক্তিটি একটি সাধারণ ‘ড্রয়ারের মতো’ যন্ত্রপাতি এবং ‘সেমিকন্ডাক্টর অনুঘটক’ ব্যবহার করে কাজ করে। এটি প্রাকৃতিক সালোকসংশ্লেষের মতো। যেখানে গাছপালা গ্লুকোজ উৎপাদন করে, তবে এখানে রকেটের জ্বালানি তৈরি হয়।

এই ক্ষেত্রে, নভোচারীরা হাইড্রোকার্বন ইথিলিন তৈরি করেছেন, যা রকেট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে গবেষকেরা বিশ্বাস করেন যে, বিভিন্ন অনুঘটক ব্যবহার করে তারা মিথেনও উৎপাদন করতে পারবেন। এটিও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এ ছাড়া, ফর্মিক অ্যাসিডও তৈরি করা সম্ভব, যা ব্যাকটেরিয়া নাশক বা চিনির উৎপাদনের পূর্বসূরি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই প্রযুক্তিটি ভবিষ্যতে নানা ধরনের কাজের ব্যবহার করা যেতে পারে।

গত ১৯ জানুয়ারি চীনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভি বলছে, এই প্রযুক্তিটি সবুজ গাছপালার প্রাকৃতিক সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে, যেখানে ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎসকে ব্যবহার করে অক্সিজেন এবং কার্বনভিত্তিক জ্বালানি উৎপন্ন করা হয়। সংকীর্ণ স্থান বা বাইরের মহাকাশের পরিবেশে মানব জীবন ও মহাকাশে অনুসন্ধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে এই প্রযুক্তি।

গবেষকেরা এই প্রযুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। তবে, ধারণা করা হচ্ছে যে, এই কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পানির মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত ইলেকট্রোলাইসিস প্রযুক্তির তুলনায় অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ইলেকট্রোলাইসিস প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (আইএসএস) উৎপাদিত মোট শক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত খরচ করে।

এর আগেও মহাকাশে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় চীন। যেমন—লেটুস ও টমেটো চাষ এবং প্রথমবারের মতো মহাকাশে ম্যাচ জ্বালানো।

নতুন এই প্রযুক্তি চীনের প্রস্তাবিত চাঁদভিত্তিক স্টেশনে নভোচারীদের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে চীন। চাঁদে ভবিষ্যতে বসবাসকারী মানুষদের জন্য অক্সিজেনযুক্ত বাতাস এবং পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য উড়োজাহাজের জ্বালানি উৎপাদন করতে সক্ষম করবে চীনের নতুন প্রযুক্তিটি। এটি চাঁদে থাকা পানির মাধ্যমে সম্ভব হবে। ফলে এতে চাঁদে এসব উপকরণ নিয়ে যেতে হবে না, যা মহাকাশ অভিযানকে আরও সাশ্রয়ী এবং সহজতর করতে সাহায্য করবে।

২০২৪ সালের মার্চে চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনসিএ) ঘোষণা করেছে, তারা একটি ছোট পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য রোবট ব্যবহার করবে, যা চাঁদভিত্তিক স্টেশনটির শক্তির চাহিদা পূরণ করবে। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। চীনের সঙ্গে চাঁদভিত্তিক স্টেশনটি ভাগাভাগি করবে রাশিয়া এবং নির্মাণেও সাহায্য করবে।

চাঁদভিত্তিক স্টেশন নির্মাণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে নভোচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে, চীন। অপর দিকে আর্টেমিস মিশনের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যে মানুষকে আবার চাঁদে নিয়ে যাবে নাসা। তবে, আর্টেমিস মিশনগুলো বারবার বিলম্বিত হচ্ছে, ফলে চীনের পরিকল্পনা এর আগে বাস্তবায়িত হতে পারে।

চীন একটি নতুন ধরনের বৃহৎ পুনরায় ব্যবহৃত রকেটও উন্নয়ন করেছে, যা চাঁদভিত্তিক স্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পরিবহন করবে। এই রকেটটি প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালের শেষের দিকে উৎক্ষেপণ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রযুক্তি চীনের মহাকাশ অভিযানকে আরও আত্মনির্ভরশীল এবং দক্ষ করে তুলবে।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত