Ajker Patrika

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা মাপা হয় কীভাবে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুন ২০২৪, ০৮: ১৪
Thumbnail image

বিশ্বের সব মহাসাগর একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সবখানে সমান নয়। তাই একেক অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আলাদা করে বের করতে হয় বিজ্ঞানীদের। এটি কোনো সহজ প্রক্রিয়া নয়। কারণ সমুদ্র অনেক গভীর। 

পৃথিবীর মহাসাগরগুলোতে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন বা ৩৩ কোটি ঘন মাইল পানি রয়েছে, যা পৃথিবীর সমস্ত পানির ৯৭ শতাংশ। আর বাকি পানি বরফ হিসেবে রয়েছে। উপকূলের অবস্থান, মহাসাগরের মোট পানির পরিমাণ ও জলবায়ুর সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতারও পরিবর্তন হয়। 

পৃথিবীর ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৩৫০ কোটি বছরের ইতিহাসে দেখা যায়, জলবায়ু ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়েছে ও এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বরফ গলে যায় ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ে। 

মানুষ প্রায় ২০০ বছর ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করছে। কিছুদিন আগেই এটি পরিমাপ করার জন্য শুধু ‘টাইড গজ’ বা জোয়ার পরিমাপক ব্যবহার করা হতো। এগুলো এক ধরনের পরিমাপক যা পানির উপকূলরেখা বরাবর কোনো কিছুতে বেঁধে রাখা হয়। এটি কোনো ঘাট, কংক্রিটের স্থাপনা বা কোনো শক্ত স্থিতিশীল কাঠামোর সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। 

বিশ্বের প্রাচীনতম টাইড গজ যন্ত্রটি পোল্যান্ডের উপকূলে অবস্থিত। এটি ১৮০৮ সালে স্থাপন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুটি টাইড গজ যন্ত্র রয়েছে, যা ১৮৫৬ সাল থেকে চালু রয়েছে। এর মধ্যে একটি নিউইয়র্কে ও অপরটি সান ফ্রান্সিসকোতে। এ ছাড়া আরও অনেক জায়গায় এই যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই অনেক নতুন; অনেকগুলো ৫০ থেকে ৭৫ বছর আগে স্থাপন করা হয়। 

টাইড গজ সাধারণ একটি বড় পাইপ, যার বেশির ভাগ অংশ সমুদ্রের পানিতে ডোবানো থাকে। এতে ভেসে থাকার মতো একটি বস্তু থাকে যা সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের সঙ্গে ওঠা–নামা করে। প্রতিদিন পানির স্তর ওঠা–নামা করে, তখন যন্ত্রটি এর রেকর্ড রাখে। এভাবে বছরের পর বছর সমুদ্রের পানির স্তর মাপে যন্ত্রটি। 

পরিমাপক যন্ত্রটি একটি নির্দিষ্ট উপকূলীয় অবস্থানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিমাপ করে। তবে অনেক উপকূলীয় এলাকা স্থিতিশীল নয়। কিছু এলাকা ডুবে যাচ্ছে (যেমন নিউ অরলিন্স বা ভেনিস) ও কিছু ওপরের দিকে উঠছে (উদাহরণস্বরূপ: আলাস্কা এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া)। প্রতিটি টাইড গজ নির্ধারণ করে যে, কীভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ নির্দিষ্ট সময় আগে স্থলে নোঙর করেছিল এবং সেটির সাপেক্ষে কতটা পরিবর্তন হচ্ছে। 

গত শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর প্রায় ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার হারে (প্রতি শতাব্দীতে প্রায় সাত ইঞ্চি) বাড়লেও, কিছু স্থানে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমতে দেখা গেছে। তবে আলাস্কার কিছু অংশের ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে উঁচু হচ্ছে। এই যন্ত্র ভূমির সাপেক্ষে সমুদ্রপৃষ্ঠের এই উচ্চতা কমে যাওয়া রেকর্ড করেছে। 

তবে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত যন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল পাওয়ার সমস্যার সমাধান করা হয় ১৯৯৩ সালে। মহাকাশ থেকে রাডার ব্যবহার করে সুনির্দিষ্টভাবে সমুদ্রের স্তর পরিমাপ করার জন্য দুটি উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয়। ভূপৃষ্ঠের গতিবিধি পরিবর্তনের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিমাপে যে সমস্যা দেখা যায় তা এই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায়, গত ২২ বছরে বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ৩ দশমিক ২ মিলিমিটার হারে বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতি শতাব্দীতে ১২ ইঞ্চির মতো বেড়েছে। 

পানির তাপমাত্রা, স্রোত, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও বাতাসের গতি ও চাপের পার্থক্যের কারণে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা একই থাকে না। তাই এটি পরিমাপ করাও জটিল। 

নর্থ আমেরিকান ভার্টিক্যাল ডেটামের (এনএভিডি) মতো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্থানে উচ্চতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন পরিমাপের জন্য মানদণ্ড নির্ধারণ করে। এটি দীর্ঘ সময় পরিমাপক যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্যগুলো গড় করে একটি মানচিত্র তৈরি করে। 

অবকাঠামো পরিকল্পনা, বন্যা ঝুঁকি মূল্যায়ন ও পরিবেশগত ঝুঁকি পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সংক্রান্ত তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত