Ajker Patrika

রেকর্ড করা নিজের কণ্ঠস্বর কেন অচেনা লাগে

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪, ০৮: ৪২
Thumbnail image

নিজের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে তো আলাদা করে পরিচিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু নিজের কথা বা গান রেকর্ড করে শোনার পর নিজের কাছেই কেন অচেনা লাগে! এমনকি কেউ কেউ রেকর্ড করা নিজের কণ্ঠ শুনে অস্বস্তিবোধও করতে পারেন। তবে আপনার কণ্ঠ কিন্তু আসলেই অত খারাপ না! এই ঘটনার পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। 

আমরা যখন কথা বলি তখন শব্দের তরঙ্গ বাতাসের মধ্যে দিয়ে নিজের ও আশপাশে থাকা ব্যক্তিদের কানে প্রবেশ করে। একে ‘এয়ার কনডাকশন’ বা বায়ু সঞ্চালন বলে। রেকর্ডারের মাইক্রোফোনেও কণ্ঠস্বর এভাবেই পৌঁছে। কিন্তু আমরা নিজেদের কথা শুধু কানের বাইরের অংশ দিয়ে শুনি না, ভেতরের অংশ দিয়েও শুনি। ভোকাল কর্ডের কম্পনের মাধ্যমে তৈরি শব্দগুলোর কিছু কম্পন মাথার খুলির হাড়ের মধ্য দিয়ে কানের পর্দায় গিয়ে আঘাত করে। এই প্রক্রিয়াকে ‘বোন কনডাকশন’ বা হাড়ের মধ্য দিয়ে শব্দ তরঙ্গ সঞ্চালন বলে। 

বাতাসের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয় বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ। আর হাড়ের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয় কম কম্পাঙ্কের শব্দ। কারণ হাড় বা কঠিন বস্তু শব্দ তরঙ্গের ভালো পরিবাহক। অর্থাৎ নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গও বেশ ভালো সঞ্চালিত হয়। এ কারণে মাধ্যম ভেদে (কঠিন, তরল বা বায়বীয়) শব্দের গতিও কমবেশি হয়।  কথা বলার সময় নিজের কণ্ঠস্বর বাতাস ও হাড় উভয় মাধ্যমে কানে পৌঁছায়। তাই নিজের কণ্ঠস্বর ভারী শোনায়। অপরদিকে রেকর্ডারে শুধু বাতাসের মধ্য দিয়ে শব্দতরঙ্গ পৌঁছায়। তাই নিজের কণ্ঠস্বর রেকর্ডারে উচ্চ স্বরের ও তীক্ষ্ণ লাগে। 

মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও এখানে প্রভাব ফেলে। নিজের কণ্ঠ কেমন হবে তা নিয়ে আমরা একটা ‘মানসিক চিত্র’ তৈরি করি। সারা জীবন হাড় ও বাতাসের মাধ্যমে শব্দ শুনতে আমরা অভ্যস্ত। তাই প্রথমবারের মতো রেকর্ডকৃত কণ্ঠস্বর শুনলে অচেনা লাগে, অবাক হই অথবা অস্তিত্ববোধ করি। 

রেকর্ড করা নিজের কণ্ঠ অপরিচিত ও শ্রুতিমধুর লাগে না বলে শোনার পর অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন। ২০১৩ সালে এক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন রেকর্ড করা কণ্ঠস্বরকে তাঁদের শ্রুতিমধুরতা ও আকর্ষণের ভিত্তিতে নম্বর দিতে বলা হয়। এসব রেকর্ডিংয়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের কণ্ঠও ছিল। দেখা গেছে, না চিনতে পারলেও তাঁরা নিজের কণ্ঠস্বরকে তুলনামূলক ভালো নম্বর দিয়েছেন। 

মূলত কানের ভেতরের গঠনের কারণেই রেকর্ড করা কণ্ঠস্বর অন্যরকম লাগে। কানের ভেতরের অংশ ২ থেকে ৫ হাজার হার্টজ পরিসরের কম্পাঙ্কের ওপর গুরুত্ব দেয়। তবে কাকতালীয়ভাবে বেশির ভাগ মানুষের কথাও এই সীমার মধ্যে থাকে। এই ঘটনাটি ‘কানের অনুরণন’ হিসেবে পরিচিত। এ জন্য রেকর্ড করা কণ্ঠস্বর নিজের কাছে অন্যরকম বলে মনে হয়। 

নিজের গলার স্বর শুনতে অন্যরকম লাগলেও অন্যদের কাছে কিন্তু ভিন্ন লাগে না। তাই এটি নিয়ে বিব্রত বা অস্বস্তিবোধ করার কোনো কারণ নেই!

তথ্যসূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, দা গার্ডিয়ান, মিরাজ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত