প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা
রাতের বেলা অনেক সমুদ্র দূরবর্তী নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আসলে প্রকৃতির এক বিশেষ ঘটনা। তবে এই আলো সব সময় ও সব জায়গায় দেখা যায় না। এর ব্যাখ্যা জানতে প্রথমে ‘বায়োলুমিনেসেন্স’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে।
সমুদ্রের ভাবগতি বুঝতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো বায়োলুমিনেসেন্স। শিকারি–শিকারের মিথস্ক্রিয়া বোঝার জন্য এটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। সমুদ্রের গভীরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না, কিন্তু অন্য এক ধরনের আলো দেখা যায়, যার কোনো উত্তাপ নেই। একে বলে বায়োলুমিনেসেন্স। এই ধরনের আলো তৈরি করতে পারে এমন প্রাণীর মধ্যে একটি সাধারণ উদাহরণ হলো জোনাকি পোকা।
জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ঘটানোর মাধ্যমে আলো উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বায়োলুমিনেসেন্স বলা হয়। সমুদ্রের ২০০ থেকে ১ হাজার মিটার গভীরে কিছু জীবের দেখা মেলে, যারা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের দেহে আলো তৈরি করতে পারে। এরা হলো বায়োলুমিনেসেন্ট জীব। এর মধ্যে অন্যতম শৈবাল।
বায়োলুমিনেসেন্স কেবল শৈবালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অন্যান্য সামুদ্রিক জীবেও দেখা যায়। যেমন: কিছু প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, জেলিফিশ, কেঁচো, ক্রাস্টেসিয়ান, কাঁকড়া প্রজাতির প্রাণী এবং মাছে এই অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে, কিছু সামুদ্রিক প্রাণী ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য বায়োলুমিনেসেন্ট জীবকে গিলে ফেলার মাধ্যমে আলোকিত হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। হাওয়াইয়ান ববটেইল স্কুইড–এর একটি উদাহরণ।
এই সমস্ত জীবের দেহে থাকা লুসিফেরিন ও লুসিফারেজ নামক দুই রাসায়নিক পদার্থ (এনজাইম) অক্সিজেনের উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তিকে আলোকশক্তিতে রূপান্তর করে। তৈরি হয় শীতল আলো বা বায়োলুমিনেসেন্স। বায়োলুমিনেসেন্সে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো– রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জীবন্ত দেহে আলো তৈরি হলেও এটি ‘শীতল আলো’। এ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত আলোর ২০ শতাংশেরও কম তাপ তৈরি করে।
আলোক বিচ্ছুরণের বৈশিষ্ট্য সাধারণত বহুকোষী জীবের মধ্যে দেখা যায়। তবে এককোষী জীব যেমন ডিনোফ্ল্যাগেলেটসও বায়োলুমিনেসেন্ট। এরা মূলত সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন।
এককোষী শৈবাল Noctiluca scintillans, যা ডিনোফ্ল্যাগেলেটস প্রজাতির অন্তর্গত। এটি সমুদ্রের আভা বা ‘সি স্পার্কল’ নামেও পরিচিত। কোনো কারণে এই শৈবাল আন্দোলিত হলে বায়োলুমিনেসেন্স প্রদর্শন করে। বায়োলুমিনেসেন্স শিকারিদের ভয় দেখানোর জন্য একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও।
অনেক প্রাণী আলোকিত হয়ে শিকারিদের প্রতিরোধ করার বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ভ্যাম্পায়ার স্কুইড এর একটি উদাহরণ। এই স্কুইডের কালি (কালো রাসায়নিক তরল যা বিপদের সময় ছুড়ে দেয়) কম থাকলে এর একটি আঠালো বায়োলুমিনেসেন্ট তরল নির্গত করে যা সম্ভাব্য শিকারিদের চমকে দেয় ও বিভ্রান্ত করে।
ব্রিটল স্টারফিশ আরেকটি সামুদ্রিক প্রাণী যা বায়োলুমিনেসেন্ট ব্যবহার করে শিকারিদের বিভ্রান্ত করে। এরা দেহের একটি অংশ আলোকিত করতে সক্ষম এবং একটি বাহু শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। এই বিচ্ছিন্ন বাহুটি শিকারিকে অনুসরণ করে, এই ফাঁকে সেটি পালিয়ে যায়।
আবার কিছু সামুদ্রিক প্রাণী শিকার আকর্ষণের জন্য নিজেদের আলোকিত করে। অ্যাঙ্গলার ফিশ এর মধ্যে অন্যতম। এরা বায়োলুমিনেসেন্স ব্যবহার করে শিকার আকর্ষণ করে। এই মাছের মাথা বেশ বড়, বিশাল হা, আর দাঁতগুলো তীক্ষ্ণ ও লম্বা। এদের মাথার ওপর থাকে লণ্ঠন। একটি অ্যানটেনার মতো অংশের প্রান্তে ঝোলানো থাকে বাল্ব। বাল্ব জ্বলতে দেখে ছোট মাছ কৌতূহলের বশে কাছে আসে, আর অ্যাঙ্গলার ফিশ তাকে ধরে ফেলে। সামনে উজ্জ্বল আলো থাকার কারণে বিশাল আকৃতির মাছটি দৃষ্টির আড়ালে থাকে।
এসব জীব নিজে জ্বলে ওঠে অথবা বায়োলুমিনেসেন্স পদার্থ নিঃসরণ করে সমুদ্র আলোকিত করে।
এই প্রাকৃতিক ঘটনা মানুষ দেখতে পায় যখন সমুদ্রে বায়োলুমিনেসেন্স জীব বেশি থাকে। এ ছাড়া প্ল্যাঙ্কটন বা জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব সৈকতে আছড়ে পড়ে বা কেউ সমুদ্রে পাথর ছুড়ে দিলে এরা অশান্ত হয়। তখন এদের দেহে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় আলো উৎপন্ন হয়। ফলে সমুদ্রে নীল বা সবুজ আলোয় আলোকিত হতে দেখা যায়।
তথ্যসূত্র: এবিসি সায়েন্স, সায়েন্স কানেক্টেড ম্যাগাজিন ও গুড লিভিং
রাতের বেলা অনেক সমুদ্র দূরবর্তী নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আসলে প্রকৃতির এক বিশেষ ঘটনা। তবে এই আলো সব সময় ও সব জায়গায় দেখা যায় না। এর ব্যাখ্যা জানতে প্রথমে ‘বায়োলুমিনেসেন্স’ শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে।
সমুদ্রের ভাবগতি বুঝতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো বায়োলুমিনেসেন্স। শিকারি–শিকারের মিথস্ক্রিয়া বোঝার জন্য এটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। সমুদ্রের গভীরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না, কিন্তু অন্য এক ধরনের আলো দেখা যায়, যার কোনো উত্তাপ নেই। একে বলে বায়োলুমিনেসেন্স। এই ধরনের আলো তৈরি করতে পারে এমন প্রাণীর মধ্যে একটি সাধারণ উদাহরণ হলো জোনাকি পোকা।
জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে একটি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ঘটানোর মাধ্যমে আলো উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বায়োলুমিনেসেন্স বলা হয়। সমুদ্রের ২০০ থেকে ১ হাজার মিটার গভীরে কিছু জীবের দেখা মেলে, যারা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের দেহে আলো তৈরি করতে পারে। এরা হলো বায়োলুমিনেসেন্ট জীব। এর মধ্যে অন্যতম শৈবাল।
বায়োলুমিনেসেন্স কেবল শৈবালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অন্যান্য সামুদ্রিক জীবেও দেখা যায়। যেমন: কিছু প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, জেলিফিশ, কেঁচো, ক্রাস্টেসিয়ান, কাঁকড়া প্রজাতির প্রাণী এবং মাছে এই অনন্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে, কিছু সামুদ্রিক প্রাণী ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য বায়োলুমিনেসেন্ট জীবকে গিলে ফেলার মাধ্যমে আলোকিত হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। হাওয়াইয়ান ববটেইল স্কুইড–এর একটি উদাহরণ।
এই সমস্ত জীবের দেহে থাকা লুসিফেরিন ও লুসিফারেজ নামক দুই রাসায়নিক পদার্থ (এনজাইম) অক্সিজেনের উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তিকে আলোকশক্তিতে রূপান্তর করে। তৈরি হয় শীতল আলো বা বায়োলুমিনেসেন্স। বায়োলুমিনেসেন্সে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো– রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জীবন্ত দেহে আলো তৈরি হলেও এটি ‘শীতল আলো’। এ ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপাদিত আলোর ২০ শতাংশেরও কম তাপ তৈরি করে।
আলোক বিচ্ছুরণের বৈশিষ্ট্য সাধারণত বহুকোষী জীবের মধ্যে দেখা যায়। তবে এককোষী জীব যেমন ডিনোফ্ল্যাগেলেটসও বায়োলুমিনেসেন্ট। এরা মূলত সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন।
এককোষী শৈবাল Noctiluca scintillans, যা ডিনোফ্ল্যাগেলেটস প্রজাতির অন্তর্গত। এটি সমুদ্রের আভা বা ‘সি স্পার্কল’ নামেও পরিচিত। কোনো কারণে এই শৈবাল আন্দোলিত হলে বায়োলুমিনেসেন্স প্রদর্শন করে। বায়োলুমিনেসেন্স শিকারিদের ভয় দেখানোর জন্য একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও।
অনেক প্রাণী আলোকিত হয়ে শিকারিদের প্রতিরোধ করার বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ভ্যাম্পায়ার স্কুইড এর একটি উদাহরণ। এই স্কুইডের কালি (কালো রাসায়নিক তরল যা বিপদের সময় ছুড়ে দেয়) কম থাকলে এর একটি আঠালো বায়োলুমিনেসেন্ট তরল নির্গত করে যা সম্ভাব্য শিকারিদের চমকে দেয় ও বিভ্রান্ত করে।
ব্রিটল স্টারফিশ আরেকটি সামুদ্রিক প্রাণী যা বায়োলুমিনেসেন্ট ব্যবহার করে শিকারিদের বিভ্রান্ত করে। এরা দেহের একটি অংশ আলোকিত করতে সক্ষম এবং একটি বাহু শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে। এই বিচ্ছিন্ন বাহুটি শিকারিকে অনুসরণ করে, এই ফাঁকে সেটি পালিয়ে যায়।
আবার কিছু সামুদ্রিক প্রাণী শিকার আকর্ষণের জন্য নিজেদের আলোকিত করে। অ্যাঙ্গলার ফিশ এর মধ্যে অন্যতম। এরা বায়োলুমিনেসেন্স ব্যবহার করে শিকার আকর্ষণ করে। এই মাছের মাথা বেশ বড়, বিশাল হা, আর দাঁতগুলো তীক্ষ্ণ ও লম্বা। এদের মাথার ওপর থাকে লণ্ঠন। একটি অ্যানটেনার মতো অংশের প্রান্তে ঝোলানো থাকে বাল্ব। বাল্ব জ্বলতে দেখে ছোট মাছ কৌতূহলের বশে কাছে আসে, আর অ্যাঙ্গলার ফিশ তাকে ধরে ফেলে। সামনে উজ্জ্বল আলো থাকার কারণে বিশাল আকৃতির মাছটি দৃষ্টির আড়ালে থাকে।
এসব জীব নিজে জ্বলে ওঠে অথবা বায়োলুমিনেসেন্স পদার্থ নিঃসরণ করে সমুদ্র আলোকিত করে।
এই প্রাকৃতিক ঘটনা মানুষ দেখতে পায় যখন সমুদ্রে বায়োলুমিনেসেন্স জীব বেশি থাকে। এ ছাড়া প্ল্যাঙ্কটন বা জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব সৈকতে আছড়ে পড়ে বা কেউ সমুদ্রে পাথর ছুড়ে দিলে এরা অশান্ত হয়। তখন এদের দেহে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় আলো উৎপন্ন হয়। ফলে সমুদ্রে নীল বা সবুজ আলোয় আলোকিত হতে দেখা যায়।
তথ্যসূত্র: এবিসি সায়েন্স, সায়েন্স কানেক্টেড ম্যাগাজিন ও গুড লিভিং
আইনস্টাইনের কথা উঠলেই চলে আসে আরও একজনের নাম। তিনি হলের এমি নোয়েথার। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন এই নারী। তিনি ছিলেন জার্মান গণিতবিদ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান এই নারী। কিন্তু এই অল্প কিছুদিনেই গণিতে তাঁর অবদান অসামান্য।
১৪ ঘণ্টা আগেজলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কৃষিপ্রধান দেশগুলোর ধানে আর্সেনিকের উপস্থিতির আশঙ্কা বেড়ে গেছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগেডলফিনেরা পৃথিবীর অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী, যাদের জটিল সামাজিক আচরণ ও শিসের মাধ্যমে নিজস্ব সাংকেতিক নাম রয়েছে। তারা ঘনঘন শব্দ, ক্লিক ও স্কোয়াক ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রহস্যময় এই যোগাযোগব্যবস্থা ভেদ করার পথেই এগোচ্ছে বিজ্ঞান।
২ দিন আগেপৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিগত কয়েক দশক ধরে গবেষণা পরিচালনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই উত্তরের খোঁজে আরেক ধাপ এগোল মানবজাতি। নাসার জ্যোতির্বিদরা দাবি করেছেন, পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে ‘কে২–১৮ বি’ নামের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে...
২ দিন আগে