Ajker Patrika

হিসাব কষে ভোটের প্রস্তুতি সেরে রাখছে বিএনপি

  • স্থানীয় ইউনিটের সম্মেলন দ্রুত শেষ করার নির্দেশ
  • ভোটের আগে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও ভাবনা
  • আ.লীগ ও ছাত্র আন্দোলন ভোটে এলে কৌশল ভিন্ন
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা 
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে থেকেই টানা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সেই অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার তাগিদ আছে প্রায় সব মহল থেকে। তবে আগামী নির্বাচন কেমন হবে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে। দুই প্রধান দলের একটি বিএনপি মনে করছে, এবার দলের জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে আছে, এমনটা অনেকে মনে করলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক নানামুখী টানাপোড়েনের কারণে নির্বাচনের সময় ও ভোটের পর দলকে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে।

এ কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য দলকে সাংগঠনিকভাবে তৈরি রাখার পাশাপাশি ভোটের প্রস্তুতিও সেরে রাখার দিকে মনোযোগী হয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি কী চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, প্রশ্নটি তোলা হয় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক নেতার কাছে। তাঁরা বলছেন, আগামী নির্বাচন কখন হবে, ভোটের পর নতুন সরকারব্যবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো ভূমিকা রাখতে চাইবেন কি না, এ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও আওয়ামী লীগ কী পদক্ষেপ নেবে, আর নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখন কী কৌশল নেয়, তার ওপর বিএনপির ভোটের কৌশল, প্রার্থী মনোনয়ন ও অন্যান্য প্রস্তুতি অনেকটা নির্ভর করবে।

এ বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশ এলোমেলো অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়লেও এর সুবিধাভোগীরা প্রশাসনে রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও প্রতিনিধিত্বমূলক করাটা গুরুত্ব পাবে সবার কাছে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছে, সেগুলো বিএনপির জন্যও চ্যালেঞ্জ।’

অন্তর্বর্তী সরকার যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছে, সেগুলো বিএনপির জন্যও চ্যালেঞ্জ।সেলিমা রহমানবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

অন্যদিকে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ের দুর্নীতি ও টাকা পাচারের বিষয়গুলো সামনে আসতে থাকায় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিন্তাভাবনা বেশ আলোচিত বিষয় হওয়ায় সামনের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়েও সতর্ক থাকতে হবে, এমনটাই মনে করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। সেলিমা রহমান বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ভালো হওয়া দরকার। তাঁরা জনগণের পাশে থাকেন কি না, সেটাও দেখা দরকার।

এর বাইরে নতুন রাজনৈতিক ঢেউয়ের সুযোগে অনেকে দলে ঢুকে বিএনপিতে ঝামেলা তৈরি করতে পারে, এমন ঝুঁকিও আছে, এমনটা মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রী।

বিএনপির কয়েক প্রবীণ নেতা বলেন, তাঁরা মনে করেন, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা দেশটির কাছে ততটা গুরুত্ব না-ও পেতে পারে। তবে ভারত চাইবে আগামী নির্বাচনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অংশ নিক। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোটে দলটি সুবিধা করতে পারবে না, এমনটা ধরে নিলেও তাঁরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ভোটে এলে বিএনপিসহ প্রায় সব দলের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হতে পারে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলে এবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির ভোটের জোট বাঁধার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেন দলের অধিকাংশ নেতা।

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ও দল দাঁড় করাচ্ছে, তার ওপরও নজর রাখছেন বিএনপির ওপরের দিককার নেতারা। বিএনপির মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলে স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিতি ও জনভিত্তি আছে এমন কোনো কোনো নেতাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিজেদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে, এমন আশঙ্কাও দেখছেন দলের নেতারা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, এমনটা উল্লেখ করে বিএনপির এক নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নেয়, তার ওপরও ভোটের পরিস্থিতি অনেকটা নির্ভর করতে পারে।

এমন অবস্থায় দলকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে সারা দেশে তৃণমূল থেকে ওপরের দিকে সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে মনোযোগী হয়েছে বিএনপি। ঢাকা ছাড়া অন্য আটটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিভাগের অধীন মহানগর ও জেলাগুলোর সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশ এসেছে শীর্ষ পর্যায় থেকে। এসব সম্মেলন কীভাবে করতে হবে, সে বিষয়েও দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। গত ২৫ নভেম্বর থেকে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নামে চিঠি দেওয়া শুরু হয়েছে।

এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, জেলা ও মহানগর ইউনিটের সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে।

প্রতিটি বিভাগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের জন্য দলের একজন করে ঊর্ধ্বতন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ফরিদপুর (রাজনৈতিক) বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, রংপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরিশাল বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, কুমিল্লা (রাজনৈতিক) বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, চট্টগ্রাম বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, রাজশাহী বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, খুলনা বিভাগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও ময়মনসিংহ বিভাগে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল।

এই ৯ নেতাকে তাঁদের দায়িত্বের আওতাধীন বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক, ক্ষেত্রভেদে মহানগর ও জেলার সভাপতি, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, সদস্যসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে অতিসত্বর সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে।

ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান রিপন গত বৃহস্পতিবার বলেন, স্থানীয় ইউনিটগুলোয় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাঁরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করবেন, যাতে কমিটিগুলো প্রতিনিধিত্বমূলক হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগে দায়িত্ব পাওয়া আহমেদ আজম খান গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি জানান, এ বৈঠকে আগামী ৮০ দিনের ভেতর ছয় জেলার তৃণমূল থেকে অর্থাৎ ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, ওয়ার্ড থেকে পৌরসভা, উপজেলা ও পৌরসভা থেকে জেলা কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাসীর পাটওয়ারীর পদত্যাগের গুঞ্জন, ‘সঠিক নয়’ বলছে এনসিপি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৫১
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সংবাদের সত্যতা অস্বীকার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাদের সাথেই আছেন। তিনি কিছুদিন আগেও নির্বাচন কমিশনে পার্টি নিবন্ধন-সংক্রান্ত কাজে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বিভিন্ন উইংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তার পদত্যাগের বিষয়টি কিংবা দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’

এর আগে রাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে দুই সপ্তাহ আগে এনসিপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন পাটওয়ারী। যদিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনো সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদসংক্রান্ত জটিলতার কারণেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দলে এসে নির্বাচন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। বর্তমানে ওই পদে আছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আসিফের এই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনানুষ্ঠানিক সমর্থন থাকায় নাসীরুদ্দীন মনঃক্ষুণ্ন হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: জি এম কাদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ২৫
জি এম কাদের। ফাইল ছবি
জি এম কাদের। ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে এ সরকার নির্বাচন করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘এখন নির্বাচন করতে গেলে কী হবে? কোনো নির্বাচন হবে না। যে নির্বাচনের জন্য আমরা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ বলি, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম। এই সরকার একই কাজ করছে এবং মনে হয়, একটা ঐকমত্য কমিশন করেছে। যেখানে দেশের অর্ধেক লোককে বাদ দিয়ে ঐক্য করার চেষ্টা চলছে।’

আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বাদ দিতে পারে না বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিতে হলে তাদের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। যারা খারাপ করেছে, তাদেরকে বাদ দিতে পারেন। কিন্তু দলকে কীভাবে বাদ দিতে পারেন বিচার ছাড়া?’

সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে জাপাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে দাবি করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, দেশের মানুষ তাদেরকে ক্ষমা করবে না। শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান সমর্থন দিয়েছিল। সমস্ত প্রতিষ্ঠান নিজের কবজায় করেও রাখতে পারেনি। দেশের মানুষ তাদেরকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ না দাবি করে জি এম কাদের বলেন, তাদের একটা দল আছে। এই সরকার দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চায় দাবি করে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে কখনো এত খারাপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল না।

জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের দাবিতে জামায়াতের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, তারা বলছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জাতীয় পার্টি থাকলে তো তারা থার্ড পার্টি হতে পারবে না। সেই কারণে জাতীয় পার্টিকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে।

বাংলাদেশে আজ গভীর সংকটে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, আজকে দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। যাঁরা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বেকার হচ্ছেন।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো এত খারাপ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। মানুষের জীবনের যেমন নিরাপত্তা নেই, তেমনি বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। মানুষের বাড়িঘর লুটপাট করে নিচ্ছে। মহিলাদের অসম্মান করা হচ্ছে। আমরা যা খবর পাচ্ছি, প্রতিদিন খুন হচ্ছে মানুষ।’

দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলেও দাবি করেন জাপার এ নেতা। তিনি বলেন, টিসিবির ট্রাকে যতজনের মালামাল থাকে, তারচেয়ে ১০ গুণ বেশি মানুষ সেখানে বসে থাকছেন।

জাপা মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের অভাব দেশে বিভাজন তৈরি করছে। বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য দরকার নির্দলীয় বা সর্বদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

এ সময় জাতীয় পার্টিকে ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেন মহাসচিব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নাম পাল্টে হলো জাতীয় ছাত্রশক্তি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নাম বদলে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আদর্শিক ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে ছাত্রশক্তি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জাতীয় সমন্বয় সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। আর যেন কেউ গণরুম-গেস্টরুম বানাতে না পারে, সে জন্য ছাত্রসংসদকে সোচ্চার থাকতে হবে।

এ সময় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে দলীয় অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা পেলে তবেই স্বাক্ষর করবে এনসিপি।

আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদে ‎স্বাক্ষর করার পর দুটা পক্ষ হয়ে গেছে। এক পক্ষ স্বাক্ষর প্রত্যাহার করতে চায়, আরেক পক্ষ কালি দিয়ে গেড়ে দিতে চায়।

আওয়ামী লীগ নানা শক্তির মধ্য দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন আখতার।

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, যে আওয়ামী লীগ চব্বিশে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গুলি করেছে, ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে গুম করেছে, আয়নাঘর তৈরি করেছে; তাদের বাংলাদেশে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। কেউ যদি পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, জীবন দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।

সভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর সংস্কার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, আমাদের কনভেনশনাল (প্রথাগত) রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আমরা আনতে পারিনি। সেই সংস্কারকাজকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এই ছাত্রদের।’

দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশের জেলা ও মহানগরে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া শুরু হবে।

এ সময় দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সারজিস বলেন, যাঁরা লোভ সংবরণ করতে পারেননি, তাঁদের এনসিপির মতো সংগঠনের প্রয়োজন নেই। এনসিপি ‘মাই ম্যানের’ পলিটিকস করবে না। যোগ্য ও পার্টির প্রতি বিশ্বস্তদের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে দল।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের অনেকে এখন স্বাক্ষর প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন।’

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা কেন রাজনৈতিক দল গঠন করল—এর কারণ সম্পর্কে তুষার বলেন, যেহেতু অতীতে ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ‘বিট্রে’ (প্রতারণা) করেছে, সে জন্য ছাত্ররা এখন নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন।

নাম উল্লেখ না করে তুষার বলেন, ‘বাপ-ছেলে’ নিয়ে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ‘অশ্লীল ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত’।

এনসিপির কাছ থেকে তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সভায় জাতীয় ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আট মাসে আহ্বায়ক হিসেবে আমার অনেক ব্যর্থতা থাকতে পারে। কিন্তু আমি এই সময়ে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) করি নাই। কোনো অপকর্মে থাকি নাই। এনসিপি গঠনের দুদিন আগে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি গঠনের পর আমাদের যেমন সফলতা আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। একটা সংগঠন পরিচালনার জন্য নিয়মিত ফান্ডিংয়ের প্রয়োজন হয়। আমি মাথা নিচু করে ক্ষমা চাচ্ছি, আমাদের যেসব জায়গায় কার্যক্রম চলছে, নিয়মিত ফান্ড সেখানে দিতে পারি নাই।’

ছাত্রশক্তি এনসিপির সহযোগী আদর্শিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে জানিয়ে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমরা একটি স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করব। পরবর্তী নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানানো হবে।’

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

রাকিব বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আমরা নাকি গেস্টরুম বা গণরুম করব। এটা ছিল নিছক মিথ্যাচার। গত এক বছরে একটি সংগঠন এসব মিথ্যাচার করে পার পেয়ে গেছে। আগামী ২০২৬-২৭ সালে আমরা প্রমাণ করব, ছাত্রদল নতুন ধারার ছাত্ররাজনীতির পথ তৈরি করেছে। ছাত্রদল গেস্টরুম বা গণরুম সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। একদিন অবশ্যই ছাত্রসমাজ এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।’

এ সময় ছাত্রশক্তির নেতাদের উদ্দেশে রাকিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে আপনারা ছাড় দেবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে নেদারল্যান্ডসের এনআইএমডি প্রতিনিধিদল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বৈঠকে অংশ নেন।

অন্যদিকে এনআইএমডির প্রোগ্রাম ও নলেজ অ্যাডভাইজার তাইউহ নেঙ্গে, হেড অব পজিশনিং হেলিন শ্রোয়েন প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা কিশোরগঞ্জের আইনজীবীর, ফেসবুকে ঝড়

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়ার তেল কেনা স্থগিত করল চীন

‘বিএনপি করি, শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’: সেই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির ক্ষমতা পাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট

চীনের সহায়তায় বিদ্রোহীদের কাছে হারানো অঞ্চল আবার দখলে নিচ্ছে মিয়ানমার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত