Ajker Patrika

বিএনপির নজর নির্বাচনে, পা ফেলছে সাবধানে

  • ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে ধরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি।
  • ভোটেও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে রাখার আলোচনা।
  • প্রার্থী বাছাইয়ে খুবই কঠোর অবস্থানে থাকবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
রেজা করিম, ঢাকা 
বিএনপির নজর নির্বাচনে, পা ফেলছে সাবধানে

লন্ডন বৈঠকের পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আপাতত কোনো সংশয় দেখছে না বিএনপি। দলটির বিশ্বাস, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কথা রাখবেন এবং যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন। তারপরও রাজনীতির মাঠে সব ইস্যুতে সাবধানে পা ফেলছে বিএনপি। পরিবর্তিত সময় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চায় দলটি।

দলীয় সূত্র বলছে, ১৬ বছর পর ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি। তবে এ জন্য দরকার দ্রুত একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ যাতে কোনোভাবে হাতছাড়া না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও যত্ন নিয়ে নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে ইশতেহার রচনা, প্রচারসহ সব ক্ষেত্রেই সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নিতে চান তাঁরা। এর অংশ হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে নাকি জোটগতভাবে নির্বাচন করবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়েই নির্বাচনী যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নতুন করে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে। তবে সেটা কোন কাঠামোতে হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। বিএনপির সঙ্গে বিগত দিনে যুগপৎ আন্দোলন করেছে এমন দলগুলোকে নিয়ে জোট হবে, নাকি তাদের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

লন্ডন বৈঠকের আভাস অনুযায়ী যথাসময়েই জাতীয় নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি যেটা চলছে, এটা চলবে। প্রস্তুতি সব সময়ই চলমান।’

গত বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠক শেষে শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখনো তো আমরা এই প্রক্রিয়ায় আসিনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলে তখন এই প্রক্রিয়া হবে। আমরা সেই জায়গায় এখনো আসিনি। যখনই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে, তখন এই আলোচনা হবে। এ বিষয়ে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে।’

বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। কিন্তু সেটার জন্য নির্বাচনী জোট হবে, নাকি মোর্চা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে সমঝোতার ভিত্তিতেই কিছু একটা হবে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে যে দলগুলো একাত্ম হয়ে বিগত দিনে আন্দোলন করেছে, নির্বাচন বর্জন করেছে, তাদের অবদানের প্রতিদান দিতে চায় বিএনপি। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার রচনার ক্ষেত্রেও বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মতামত ও পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ৩১ দফার আলোকেই নির্বাচনী ইশতেহারও করা হবে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি দল গোছানো, শৃঙ্খলা আনয়নসহ বিএনপিতে বিভিন্ন প্রস্তুতি চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এবার খুবই কঠোর অবস্থানে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন না, আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ছিলেন কিংবা গা বাঁচিয়ে বা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আপস করে চলেছেন, এমন নেতাদের প্রার্থী করা হবে না এবার। একই সঙ্গে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যাঁরা অপকর্মে জড়িয়েছেন, যাঁদের কর্মকাণ্ডে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁরাও প্রার্থী হতে পারবেন না।

দলের প্রভাবশালী নেতাদের পরিবারকেন্দ্রিক আসন বণ্টনের বিষয়েও এবার আগের চেয়ে কঠোর রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, এমন আভাসও পাওয়া গেছে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বক্তব্যে। তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচন ‘কঠিন হবে’ ধরে নিয়েই প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে যাঁরা এগিয়ে থাকবেন, তাঁরাই শেষ বিচারে দলের মনোনয়ন পাবেন।

এদিকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারেও ভিন্নতা ও নতুনত্ব আনার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে বিএনপির মিডিয়া সেল প্রচারের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছে। সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রচারের কৌশলে থাকবে নতুনত্ব। আধুনিক প্রযুক্তি এবং সনাতন পদ্ধতির সমন্বয়ে নির্বাচনী প্রচারে এবার বিশেষ কিছু থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনী প্রচারের জন্য এক্সপার্ট নিয়োগ করা হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নির্বাচনী প্রচার অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বিএনপির নির্বাচন ভাবনা ও প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নির্বাচনের ঘোষণার পর বিএনপির নির্বাচনী কর্মযজ্ঞও দৃশ্যমান হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, এমন ইঙ্গিত এরই মধ্যে অনেকেই পেয়েছেন। এই ইঙ্গিত পেয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজও শুরু করেছেন। যদিও ইঙ্গিতই চূড়ান্ত নয় বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

বংশরক্ষায় মৃত ছেলের শুক্রাণু চান মা, সংরক্ষণের নির্দেশ মুম্বাই হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত