Ajker Patrika

যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি, আলাপচারিতায় ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘যেকোনো সময়েই নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের এপ্রিলের সময়সূচির ‘অনুপযোগিতা’র কথা আবারও উল্লেখ করেন ফখরুল। পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘...আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালকেই রেডি। ...কারণ এটা (বিএনপি) নির্বাচনের দল, নির্বাচন করেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। যখন সবাই চাইবে, একমত হবে, তখন নির্বাচন হবে... অসুবিধা নাই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব এবং এটা খুবই সম্ভব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন এই কথা। আমি বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব।’

জামায়াতে ইসলামী এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছে—এ কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ফখরুল ‘ভিন্নমত’-কে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘ডেমোক্রেসির মূল কথা হচ্ছে...আপনি আমার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবেন, আমি আপনার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করব। কিন্তু তাই বলে আমি মনে করব না যে আপনি আমার শত্রু...।’

এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অসুবিধার কথা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এপ্রিল রোজার মাস, রোজা শেষ হবে, ঈদ শেষ হবে...এর কয়েক দিন পরে নির্বাচন। আপনি ভাবেন, রোজার মাসটা প্রার্থীদের কী অবস্থা হবে...রাজনৈতিক কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত যে প্রত্যেক দিন আমাকে ইফতার পার্টি করতে হবে। প্রার্থীদের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ওই সময়ে প্রচণ্ড গরম থাকবে আবহাওয়া। ঝড়-বৃষ্টি আছে।...জনসভায় লোকজন আনাটাই মুশকিল হবে...রৌদ্রের মধ্যে কে আসবে? রাত্রিবেলা মিটিং করতে হবে।’

দেশের বেশির ভাগ নির্বাচন ডিসেম্বর-নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘দুবার বোধ হয় হয়েছে ভিন্ন সময়ে... দুই ইলেকশনেই ঝামেলা ছিল।’

প্রধান উপদেষ্টার চলতি লন্ডন সফরে তাঁর সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কি না, প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি খুবই ইতিবাচক মানুষ এবং আমি সব সময়ে পজিটিভ (ইতিবাচক) দিকটাই দেখতে চাই, ব্রাইট (উজ্জ্বল) দিকটা দেখতে চাই।... তাতে করে আমি মনে করি, এই একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে। সেই সুযোগগুলো তৈরি করার সময় এসেছে আমাদের এই দুই নেতার। দিস ইজ এ প্রোপার টাইম, প্রোপার ভেন্যু (এটা একটা যথাযথ সময়, যথাযথ স্থান), যেটাতে নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে আর কি।’

‘সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই’ বলে এ সময় মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘একটা বিশেষ মুহূর্তে এসে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। ...কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়... তাঁরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ, পণ্ডিত লোক, উইজডম সব আছে, কিন্তু পলিটিক্যাল উইজডম যে পুরোপুরি আছে সেটা বলা যাবে না। কিন্তু তাঁদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।’

বিএনপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘কেমন জানি একটা নেগেটিভ (নেতিবাচক) প্রচারণা বিএনপির বিরুদ্ধে চলছে। কিন্তু কারণটা কী? ...কিছু কিছু মানুষ বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলেই যাচ্ছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি এমন একটা দল একে যত কিছুই বলুক সহজে শেষ করা যায় না, কখনোই যায়নি।’

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে জাতিকে ‘বিভক্ত না করার’ জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটা বিষয়ে জাতি ইউনাইটেড (ঐক্যবদ্ধ) যে আমরা গণতন্ত্র চাই... ভোট দিয়ে আমার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চাই। সংস্কার চাই। অযথা ডিভিশনটা (বিভক্তি) করবেন না।’

নির্বাচনের সময় চলে আসায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ‘কেয়ারটেকার সরকারের’ (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) ব্যবস্থায় চলে যাওয়া উচিত কি না–প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম কথাটা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো কি থাকবে না থাকবে... নির্বাচনটা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।’

বিএনপি ১/১১ আনতে চায়–এ মর্মে সেই সময়ে কিছু রাজনৈতিক দলের সমালোচনার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এটা হয়েছে অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে। আমি যে কথাগুলো বলেছি, অভিজ্ঞতার আলোকে। আপনাদের মনে আছে, ৫ আগস্টের পরে আমরা নয়াপল্টনে একটা জনসমাবেশে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিলাম। এটা নিয়ে আমাকে যথেষ্ট সমালোচনা ফেস করতে হয়েছে, এখন বিএনপি নির্বাচন চায়, অমুক চায়-তমুক চায়। এটা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ওই নির্বাচনটা আমরা দ্রুত চাই কী কারণে? একটা নির্বাচিত সরকার দরকার।’

শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সংসদীয় রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিক, এটা ন্যাচারাল, এটা হওয়া উচিত। আমরা আগে থেকে কমিটেড (অঙ্গীকারবদ্ধ) যে নির্বাচনের পর একটা জাতীয় সরকার করব।’

তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন—জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শিগগির ফিরবেন।’ তবে তিনি নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলেননি।

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার পর বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন ‘আগের চেয়ে অনেক ভালো’ আছেন বলেও

সাংবাদিকদের জানান বিএনপির মহাসচিব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাচারের অর্থে দুবাইয়ে মেয়ের ৪৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট—অভিযোগ নিয়ে যা বললেন গভর্নর

সুধা সদন এখন কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীর আখড়া

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের শতকোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এখন বৈঠকে রাজি নন

নেছারাবাদে রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে মৎস্যজীবী নেতাকে কুপিয়ে জখম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত