Ajker Patrika

আল-বদর ও আল-শামস নয়, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে পার্শ্ববর্তী দেশ— জামায়াতের বুলি বিএনপি নেতার মুখে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

‘একটি রাজনৈতিক দলকে’ বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী করা হলেও তা ‘সঠিক ইতিহাস নয়’ নয় বলে তাঁর ভাষ্য। ওই রাজনৈতিক দলটি যাতে বর্তমান সরকারের কাছে ‘ইতিহাস সংশোধনের দাবি’ জানান, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।

গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা চলছে।

একই দিন রাজধানীর ফার্মগেইটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে দাবি করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বামপন্থি ও কলকাতাকেন্দ্রিক কিছু বুদ্ধিজীবী এবং ভারতপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নাম জড়িয়ে আসছেন। তবে ইতিহাসের নানা তথ্য ও সত্য সামনে আসায় প্রমাণ হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। কারণ, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের একই সুরে বিএনপি নেতা ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘আজকেও পত্রিকা পড়লাম। পত্রিকার পাতার সম্পাদকীয় কলাম ও বিভিন্ন জায়াগায় লিখেছে যে, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে আল-বদর, আল-শামস। আমাদের ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বিএনপিরে দোষারোপ করে (আপনারা) অনেক কথা বলেন। যখন আপনাদের দোষারোপ করে ইতিহাস লেখা হয়, আপনারা কেন সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন না?’

তিনি আরো বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর তো কোনো আল-বদর, আল-শামস আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন নাই। হত্যা করেছিল (তারা), যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হবে কি হবে না বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল। যারা দেশ স্বাধীন হতে দেবে কি দেবে না...! সেদিন পার্শ্ববর্তী কোনো এক দেশের লোকেরা পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ বেঁধেছিল, সেটাকে টার্গেট করে আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।’

জামায়াতকে উদ্দেশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক দলগুলো যাদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন বাম সংগঠন, বাম-মনা সাংবাদিক এখনো আপনাদেরকে টার্গেট করে কথা বলেন, আর ইতিহাসের পাতায় আপনাদেরকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। কেন আপনারা এটা সংশোধন করেন না, কেন আপনারা দাবি জানান না? শুধু কোনো জায়গায় স্টেজে উঠলেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে (কথা) বলেন, কিন্তু কোনোটা প্রমাণ করতে পারেন না। অতএব রাজনৈতিক ইসলামিক দল, এখানে কাদেরকে বলছি, উনারা ভালো করে বুঝতেছেন।’

টিপু আরো বলেন, ‘ইতিহাসটাকে সঠিক করে তুলে ধরার জন্য আপনারা সরকারের কাছে দাবি জানান। আগামী প্রজন্মের কাছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আপনারাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন। অতএব ইতিহাস সঠিক যেন লেখা হয়, কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন লেখা হয়।’

বক্তব্যের শুরুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

ওই সভায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

সভায় জামায়াতের মহানগর কমিটির আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার বিএনপি নেতা টিপুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগামী সরকারের কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনার দাবি জানাই।’

এ সময় জামায়াত নেতাকে থামিয়ে দিয়ে টিপু বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর বা এর আগে স্বাধীনতার পর অনেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল...অতএব সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্যই আমি আহ্বান করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্যে কারও যদি গাত্রদাহ হয়, তাহলে আগামীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় আপনারাও বিএনপির যাতে গাত্রদাহ না হয়, সেইদিকে খেয়াল করে বক্তব্য দেবেন।’

এ সময় আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধির কথাও বলেন টিপু।

বক্তব্যের শেষ দিকে আবারও বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার দাবি জানিয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আবারও বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস ডিসি সাহেবের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস, বিজয় দিবসের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস যেন সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়। ৫ অগাস্ট হয়ে গেল, অনেকে অনেক কথা বলি, কিন্তু এখনো স্বাধীনতার ঘোষকের যে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস, বুদ্ধিজীবীর ইতিহাস- এখনো কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় নাই।’

আগামী বছরেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, এনসিপির জেলা কমিটির সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং গণঅধিকার পরিষদ জেলা সভাপতি মো. নাহিদ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় তাৎক্ষণিক বিএনপি নেতা টিপুর বক্তব্য নিয়ে কেউ প্রতিবাদ বা বিরুদ্ধমত প্রকাশ না করলেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানান।

অথচ গতকাল তাঁর বিকালেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা।

‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ