Ajker Patrika

নির্বাচনের আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় আবরার-সাঈদের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে করার পাশাপাশি জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত তৈরির দাবি জানান তাঁরা।

আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এসব দাবি তুলে ধরেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, ইমাম হোসেনের ভাই রবিউল ইসলাম, শাহরিয়ার হাসান আলভীরের বাবা আবুল হাসান।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহও সমাবেশে অংশ নেন।

তিনি বলেন, ‘ছয় বছর হয়ে গেছে, এখনো আমি আমার ছেলে আবরার হত্যার বিচার পাইনি। আমি চাই, দ্রুত যেন আমার ছেলে হত্যার বিচার করা হয়। দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য নির্মমভাবে নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, ‘১৬ জুলাই যখন আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের সামনে জীবন দিয়েছিল, যে কারণে জীবন দিয়েছিল, সেই কারণের বাস্তবতা কি আমরা আজ পেয়েছি? যদি সেই শহীদ ভাইয়ের বাস্তবতা আমরা না পাই, তবে এই বাস্তবতা আমরা ফেরত চাই। না হলে আমরা আমাদের শহীদ ভাইদের ফেরত চাই। শহীদ ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ পেয়েছি।

‘আমরা গত ১৭ বছর কি এমন সমাবেশ করতে পেরেছি? যদি না পেরে থাকি, তবে আমাদের ভাইয়ের অধিকার, সেই অধিকার আমরা ফেরত চাই। যদি ফিরিয়ে না পাই, তাহলে আমাদের ভাইদের ফিরিয়ে দেন।’

তিনি বলেন, ‘আজ দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আমরা একজন শহীদ ভাইয়ের হত্যার বিচার পাইনি। আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচারের দরকার আছে কি নাই? আমি মনে করি, নির্বাচনের আগে এই শহীদ ভাইদের হত্যার বিচারের রায় প্রয়োজন। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদীরা ঘাপটি মেরে আছে, তারা পাঁয়তারা করছে। ফ্যাসিবাদী দোসরদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকার যে কয়টা নির্বাচন করেছিল, একটাতেও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে, তা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে সক্ষম।’

অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে পা হারানো শ্রমিক শাহ আলম অভিযোগ করেন, ‘ভোট নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত, তখন জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের কথা কেউ ভাবছে না। একটা গুলি লেগে আমার পা চলে যায়। কিন্তু আমি সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। আমার বউ আছে, দুইটা বাচ্চা আছে। একটা বছর ধরে কী মানবেতর অবস্থায় চলছি, কোনো সরকার আমার খোঁজখবর নেয়নি। আমার এই খোঁজখবর এবং সাহায্য জামায়াত ছাড়া আর কেউ করেনি।’

তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও জুলাই যোদ্ধা জুনায়েদুর রহমান বলেন, ‘সংস্কারের নামে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন এখনো চালু রয়েছে। ফ্যাসিবাদের শিকড় যতই গভীরে থাকুক, তার মূলোৎপাটন না করা অবধি আমাদের লড়াই চলমান থাকবে।’

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। কোনো পক্ষপাতিত্ব থাকবে না, সব দলের সমান সুযোগ ও অংশগ্রহণ থাকবে। এভাবেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’

সমাবেশে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন নেজামে ইসলামি পার্টির মহাসচিব মুসা বিন এজহার।

তিনি বলেন, ‘আজকে গোপালগঞ্জে আবারও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত কবর রচনা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে আমরা আরেকটি আগস্ট ঘটাব। যারা এ দেশে ভারতের স্লোগান আমদানি করতে চান, তাদের বলতে চাই, এখনো জুলাই যোদ্ধারা জীবিত আছেন।’

সমাবেশে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ প্রামাণিক জামায়াতে ইসলামীকে শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি ‘ইউনিভার্সাল ইউনিভার্সিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনারা এখানে আসেন, শিক্ষা লাভ করেন। নীতি শিক্ষা দেন, আদর্শ শিক্ষা নেন এবং কীভাবে ধর্ম অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা ও দেশ পরিচালনা করা যায়, আপনারা সেই শিক্ষা লাভ করেন।’

বাংলার মাটিতে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসন মেনে নেওয়া হবে না জানিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ‘গত বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা একটা সুর তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন রাজাকার। সেই এক আন্দোলন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বাংলা ছেড়ে দিল্লি পালিয়ে যেতে করেছিল। নতুন করে আবার রাজাকার শব্দটা উত্থাপন করা হচ্ছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। ভুল করবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা–ভাঙচুর

শিবরাত্রিতে মাংস খাওয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করল দিল্লির সার্ক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত