ডয়চে ভেলে
চলতি মাসে পর্যটকদের তিন পার্বত্য জেলায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। সম্মিলিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় এবার কঠিন চীবরদান হবে না৷ প্রশাসনের ‘রহস্যজনক’ ভূমিকা শঙ্কা বাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা৷
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—এই তিন পার্বত্য জেলায় ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিন পর্যটকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দেশি ও বিদেশি সব ধরনের পর্যটকের ওপর এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এসএমএস বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত পর্যটকদের ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। এর আগে ৩ অক্টোবর রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সাজেকে পর্যটকদের না যেতে পরামর্শ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বার্তায় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছেন। একই নির্দেশনা জারি করা হয় বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকেও।
রবিবার একই দিনে রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলন করে পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে এ বছর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবরদান উদ্যাপন না করার ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। সংবাদ সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলার ১৫টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাঙামাটি বৌদ্ধ বিহারে এর মূল অনুষ্ঠান হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে প্রশাসনের আচরণ ছিল রহস্যজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এভাবে বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এ ধরনের ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও প্রশাসনের আচরণ রহস্যজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট।’
তাঁরা বলেন, ‘এরকম চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ আসন্ন পবিত্র ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে কোনো উৎসাহ বোধ না করায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরের কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেও য়া হয়েছে।’
পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথেরো ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের মনে যে বেদনা ও ক্ষোভের জন্ম হয়েছে, তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওই অনুষ্ঠান করতে পারি না। সব জায়গা থেকে অনুষ্ঠানে ভক্তরা আসবেন। তাঁরা যদি নিরাপত্তা না পান, তাঁদের ওপর যদি কোনোভাবে হামলা হয়, তাহলে তার দায় কে নেবে? আমরা তো এই পরিস্থিতির মধ্যে উৎসব করতে পারি না। পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এখনো আশ্বস্ত হতে পারছি না। আমরা নিরাপদ বোধ করছি না।’
তার কথা, ‘পাহাড়ে বাড়ি-ঘর, মন্দিরে হামলা হলো, পুড়িয়ে দেয়া হলো। পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলা হলো। ছয় জনকে হত্যা করা হলো। গুলি করে মারা হলো। তার বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। আমরা এর বিচার চাই। এই পরিস্থিতিতে আমরা কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চীবর মানে হলো ভিক্ষুদের পরিধেয় কাপড়। আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে এক মাসের জন্য কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। এক মাস ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ২০০ বিহারে ধারাবাহিকভাবে কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে চীবর তৈরি করা হয়। এই অনুষ্ঠান ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক মাস ধরে উৎসব পালিত হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে। এ বছর ১৮ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
তিন পার্বত্য জেলার বর্তমান পরিস্থিতি
নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের তৎপরতার কারণে ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির দুর্গম এলাকায় প্রথম পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে রুমা ও থানচি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও রোয়াংছড়িতে বহাল ছিল। এরপর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে দুই দফা সহিংসতার কারণে রাঙামাটির সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছিল প্রশাসন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে আরও চারজন আদিবাসী নিহত হন। তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। এরপর খাগড়াছড়িতে এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর সহিংসতা ঠেকাতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। তিন জেলায় পরিস্থিতি শান্ত হলেও স্বাভাবিক হয়নি।
লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান বলেন, ‘আসলে আমাদের এখানে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এই আস্থার সংকট দূর না করলে পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে তেমন কোনো কাজ হবে না।’
তার কথা, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রশাসনই তো প্রমাণ করল যে, তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি কেমন। এখানে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, তা তো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায়ই প্রমাণিত হয়। তারা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তাহলে আমাদের নিরাপত্তার কী অবস্থা?’
তিনি বলেন, ‘কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান শুরু হয় গভীর রাতে। এরপর মাসব্যাপী চলে। তাদের নিরাপত্তা কে দেবে?’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান, ‘তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু আমরা বলতে পারি না যে, কোনো ঘটনা ঘটবে না। তাই দেশি-বিদেশি সব ধরনের পর্যটককে এই তিন জেলা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এর মানে হলো, আসলে এই সময়ে পর্যটকেরা ভ্রমণ করতে পারবেন না। আপনারা পরিস্থিতি তো জানেন। ফলে এর বাইরে আর কিছু এখন করণীয় নেই।’
কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান না করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা ভিক্ষুদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনবাহিনী সবাই ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও ছিলেন। আমরা তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি তারা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান করবেন।’
আর বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কাওসার বলেন, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা। তাঁরাই বলতে পারবেন এর কারণ। তবে আমার জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
চলতি মাসে পর্যটকদের তিন পার্বত্য জেলায় না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। সম্মিলিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘ জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় এবার কঠিন চীবরদান হবে না৷ প্রশাসনের ‘রহস্যজনক’ ভূমিকা শঙ্কা বাড়িয়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা৷
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—এই তিন পার্বত্য জেলায় ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিন পর্যটকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দেশি ও বিদেশি সব ধরনের পর্যটকের ওপর এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এসএমএস বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত পর্যটকদের ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। এর আগে ৩ অক্টোবর রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের সাজেকে পর্যটকদের না যেতে পরামর্শ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বার্তায় বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছেন। একই নির্দেশনা জারি করা হয় বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকেও।
রবিবার একই দিনে রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলন করে পাহাড়ে চলমান অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে এ বছর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবরদান উদ্যাপন না করার ঘোষণা দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ। সংবাদ সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলার ১৫টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। রাঙামাটি বৌদ্ধ বিহারে এর মূল অনুষ্ঠান হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে প্রশাসনের আচরণ ছিল রহস্যজনক। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এভাবে বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এ ধরনের ঘটনা বারবার সংঘটিত হলেও প্রশাসনের আচরণ রহস্যজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট।’
তাঁরা বলেন, ‘এরকম চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ আসন্ন পবিত্র ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে কোনো উৎসাহ বোধ না করায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরের কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেও য়া হয়েছে।’
পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথেরো ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের মনে যে বেদনা ও ক্ষোভের জন্ম হয়েছে, তা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওই অনুষ্ঠান করতে পারি না। সব জায়গা থেকে অনুষ্ঠানে ভক্তরা আসবেন। তাঁরা যদি নিরাপত্তা না পান, তাঁদের ওপর যদি কোনোভাবে হামলা হয়, তাহলে তার দায় কে নেবে? আমরা তো এই পরিস্থিতির মধ্যে উৎসব করতে পারি না। পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এখনো আশ্বস্ত হতে পারছি না। আমরা নিরাপদ বোধ করছি না।’
তার কথা, ‘পাহাড়ে বাড়ি-ঘর, মন্দিরে হামলা হলো, পুড়িয়ে দেয়া হলো। পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলা হলো। ছয় জনকে হত্যা করা হলো। গুলি করে মারা হলো। তার বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। আমরা এর বিচার চাই। এই পরিস্থিতিতে আমরা কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চীবর মানে হলো ভিক্ষুদের পরিধেয় কাপড়। আশ্বিনী পূর্ণিমাকে প্রবারণা পূর্ণিমা বলা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে এক মাসের জন্য কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। এক মাস ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ২০০ বিহারে ধারাবাহিকভাবে কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে চীবর তৈরি করা হয়। এই অনুষ্ঠান ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক মাস ধরে উৎসব পালিত হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে। এ বছর ১৮ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।
তিন পার্বত্য জেলার বর্তমান পরিস্থিতি
নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের তৎপরতার কারণে ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির দুর্গম এলাকায় প্রথম পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে রুমা ও থানচি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও রোয়াংছড়িতে বহাল ছিল। এরপর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে দুই দফা সহিংসতার কারণে রাঙামাটির সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছিল প্রশাসন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে আরও চারজন আদিবাসী নিহত হন। তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। এরপর খাগড়াছড়িতে এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর সহিংসতা ঠেকাতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। তিন জেলায় পরিস্থিতি শান্ত হলেও স্বাভাবিক হয়নি।
লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান বলেন, ‘আসলে আমাদের এখানে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এই আস্থার সংকট দূর না করলে পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে তেমন কোনো কাজ হবে না।’
তার কথা, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রশাসনই তো প্রমাণ করল যে, তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি কেমন। এখানে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, তা তো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায়ই প্রমাণিত হয়। তারা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তাহলে আমাদের নিরাপত্তার কী অবস্থা?’
তিনি বলেন, ‘কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান শুরু হয় গভীর রাতে। এরপর মাসব্যাপী চলে। তাদের নিরাপত্তা কে দেবে?’
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান, ‘তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু আমরা বলতে পারি না যে, কোনো ঘটনা ঘটবে না। তাই দেশি-বিদেশি সব ধরনের পর্যটককে এই তিন জেলা ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এর মানে হলো, আসলে এই সময়ে পর্যটকেরা ভ্রমণ করতে পারবেন না। আপনারা পরিস্থিতি তো জানেন। ফলে এর বাইরে আর কিছু এখন করণীয় নেই।’
কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান না করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা ভিক্ষুদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনবাহিনী সবাই ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও ছিলেন। আমরা তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছি। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি তারা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান করবেন।’
আর বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কাওসার বলেন, ‘ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা। তাঁরাই বলতে পারবেন এর কারণ। তবে আমার জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত বিচারের অভিপ্রায়ে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার পাশাপ
৪ ঘণ্টা আগেজনভোগান্তি লাঘব এবং দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবিতে চলতি মাসেই মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা বিএনপির। দেশব্যাপী এসব কর্মসূচি পালন করতে গেলে শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক অটুট রাখা জরুরি বলে মনে করছে দলটি। এ লক্ষ্যে শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তাদের সঙ্গে
৫ ঘণ্টা আগেওমরাহ পালনের উদ্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলেসহ রওনা হন বাবর। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফ্লাইটটি দুবাইতে পৌঁছায়। ফ্লাইটে থাকা অবস্থাতেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন বাবর। পরে বিমানবন্দরে নামার পর তাঁকে...
১৬ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আগামী নির্বাচনে আনুপাতিক (প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চান বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝালকাঠি প্রেসক্লাব চত্বরে ইসলামী আন্দোলনের ঝালকাঠি...
১ দিন আগে