নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে। এখন তিনি জনগণ থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন বদরুদ্দীন উমর। প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই রোববার সকালে মারা যান তিনি। তাঁর সাক্ষ্যের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯(২) ধারা অনুযায়ী কোনো সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়ে মারা গেলে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করতে পারেন।
বদরুদ্দীন উমর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড়ালে কর্তৃত্ববাদী শাসন আর লুটপাট। এই যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলা হয়, সেটি নিয়ে আমি নিজেও নিশ্চিত না—এই কথাটি আসলে কী বোঝায়। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলে সবাই বলে যাচ্ছে, কিন্তু এই চেতনার প্রকৃত অর্থ কী, তা কখনো স্পষ্ট করা হয়নি। যদি চেতনা বলতে বোঝানো হয়, ১৯৭১ সালে মানুষ কী স্বপ্ন দেখেছিল, কী পেতে চেয়েছিল, তাহলে বলা যায়—সাধারণ মানুষের চেতনা আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চেতনার মধ্যে কোনো মিল ছিল না। সাধারণ মানুষ চেয়েছিল দু’বেলা খেতে, নিরাপদ জীবন, একটা সম্মানজনক চাকরি, আর একটু নিরাপত্তা। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন ভাবছিল, কীভাবে তারা সুযোগ নিয়ে সম্পদ বানাবে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা বাস্তবে লড়াই করেছিল, তারা ছিল সাধারণ ছাত্র, কৃষক-শ্রমিকের সন্তান, মধ্যবিত্ত তরুণেরা। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী বা ছাত্রনেতাদের কারও যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। তাদের মধ্যে অনেকেই তখন পলায়নপর ছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো—‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে কার চেতনার কথা বোঝানো হচ্ছে? শেখ হাসিনা যখন এটি উচ্চারণ করেন, তখন তিনি এমনভাবে বলেন যেন তাঁর চেতনা আর জনগণের চেতনা একই। কিন্তু বাস্তবে তাঁর ‘চেতনা’ জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না। বরং এটা এক ধরনের দলীয় রেটোরিক, যার মাধ্যমে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো সুযোগ দেননি। শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে শেখ মুজিবুর রহমানই মুক্তির একমাত্র পুরুষ, একমাত্র নেতা—এইরকম একটা ‘ঐতিহাসিক মিথ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ শেখ মুজিব রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়েন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন এবং সেই নয় মাস যুদ্ধ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতেন না।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, যদি একটি সত্যিকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন পেত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শেখ হাসিনা ‘চেতনা’ দিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক জমিদারি কায়েম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে কংক্রিটাইজ বা বাস্তবায়িত করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। তার জন্য এটি শুধু একটি রেটোরিকাল অস্ত্র। এত বেপরোয়া হয়ে তো বাংলাদেশে আর কাউকে এইভাবে কাজ করতে দেখা যায় না। শেখ মুজিব বেপরোয়া ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার শাসন শৈলী ও শেখ হাসিনার শাসন শৈলীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। কারণ হাজার হলেও, শেখ মুজিব জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিপক্বতা তাঁর ছিল। আর শেখ হাসিনা যেন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’। তিনি শুধু শেখ মুজিবের কন্যা হওয়াতেই ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁর নিজের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি বা ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল না। তিনি ‘বাপের বেটি’ হিসেবে নেতৃত্বে এসেছেন, কিন্তু শেখ মুজিবের চিন্তা-চেতনার কিছুই তিনি ধারণ করেননি। বরং হাসিনা দেশের রাজনৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছেন।
বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, যখন শেখ হাসিনা বলেন—তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখন সেটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিকৃতি বলে মনে হয়। কিন্তু তাঁর শাসনামলে এই মিথ্যার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি। যেসব তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’ তার শাসনামলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তারাই এই বিকৃত ইতিহাসের বাহক। তা ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন একটা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাঠ্যবই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস পর্যন্ত এককভাবে উপস্থাপন করা হয়। স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষা ও গবেষণায় শেখ মুজিবকে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ইতিহাস। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা—সে ইতিহাস হোক, মতামত হোক, গবেষণা হোক—সবই দমন করা হয়েছে। কেউ ভিন্ন কিছু বললে, তাঁর চাকরি যায়, উন্নতি বন্ধ হয়, হয়রানি হয়—কখনো কখনো জীবন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বর্ণনায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ একটি দলীয়, ক্ষমতাকেন্দ্রিক, একমুখী বয়ানে পরিণত হয়েছে—যা গণতন্ত্র, সত্য ও ইতিহাসের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।
সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে বদরুদ্দীন উমর বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের আরেকটি দমনমূলক কৌশল ছিল সাম্প্রদায়িকতার বয়ানকে ব্যবহার করা। আওয়ামী লীগ সরাসরি ধর্মীয় বৈষম্যের রাজনীতি খুব বেশি করেনি বটে, কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, সম্পত্তি লুটপাট শুরু হয়েছে এবং এসব কাজ করেছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই। জামায়াতে ইসলামীর বা বিএনপির লোকজন এভাবে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেনি, যতটা করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। পাকিস্তানি আমলে যে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ ছিল, স্বাধীনতার পর সেটি বাতিল করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে, আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ নামে রূপান্তর করে বহাল রাখে। যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি লুটপাট অব্যাহত থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতা দাবি করলেও অর্থনৈতিক স্তরে আওয়ামী লীগ ছিল চরম সাম্প্রদায়িক—হিন্দুদের অর্থ-সম্পদ দখল করাকে তারা একটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাগত প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতা খুব বেশি ব্যবহার না করলেও, অর্থনৈতিক লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে এটি ব্যবহার করেছে। সমাজের প্রভাবশালী এলিট, সিভিল সোসাইটি, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়ী মহল—সবাইকে দমন ও পুরস্কারের নীতিতে নিয়ন্ত্রণ করেছে। যারা সরকারের অনুগত তাঁদের দেওয়া হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। যারা বিরোধিতা করেছে, তাঁদের করা হয়েছে বরখাস্ত, বঞ্চিত, এমনকি কারাবন্দী। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি সাংগঠনিক নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় নেতা কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে—যার স্কেল ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি। এর ফলে প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো যে ধ্বংস হয়ে গেছে, তার প্রমাণ ২০২৪ সালে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি আগস্টের শুরুতে সামরিক বাহিনী পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়—কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল যে, এই সরকারের দিন শেষ।
তিনি আরও বলেন, এখনো প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহলে আওয়ামী লীগের অনুগতরা রয়ে গেছে। তারা খোলাখুলি না বললেও নীরবভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ ‘কোনো দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয়’ বললেও বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ এখন আর একটি সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়। এটি একপ্রকার ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিক এজেন্টের মতো কাজ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের শাসন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। শেখ মুজিব ভারতপন্থী হলেও তিনি ভারতের নির্দেশে চলতেন না। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণভাবে ভারতের নকশায় নির্মিত। এই অবস্থায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক নীতির প্রশ্ন নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। এ দলটির কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে। এটি একটি ‘ভারত ঘেঁষা’ কাঠামোগত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, যার ফলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে। এখন তিনি জনগণ থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন বদরুদ্দীন উমর। প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই রোববার সকালে মারা যান তিনি। তাঁর সাক্ষ্যের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯(২) ধারা অনুযায়ী কোনো সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়ে মারা গেলে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করতে পারেন।
বদরুদ্দীন উমর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড়ালে কর্তৃত্ববাদী শাসন আর লুটপাট। এই যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলা হয়, সেটি নিয়ে আমি নিজেও নিশ্চিত না—এই কথাটি আসলে কী বোঝায়। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলে সবাই বলে যাচ্ছে, কিন্তু এই চেতনার প্রকৃত অর্থ কী, তা কখনো স্পষ্ট করা হয়নি। যদি চেতনা বলতে বোঝানো হয়, ১৯৭১ সালে মানুষ কী স্বপ্ন দেখেছিল, কী পেতে চেয়েছিল, তাহলে বলা যায়—সাধারণ মানুষের চেতনা আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চেতনার মধ্যে কোনো মিল ছিল না। সাধারণ মানুষ চেয়েছিল দু’বেলা খেতে, নিরাপদ জীবন, একটা সম্মানজনক চাকরি, আর একটু নিরাপত্তা। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন ভাবছিল, কীভাবে তারা সুযোগ নিয়ে সম্পদ বানাবে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা বাস্তবে লড়াই করেছিল, তারা ছিল সাধারণ ছাত্র, কৃষক-শ্রমিকের সন্তান, মধ্যবিত্ত তরুণেরা। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী বা ছাত্রনেতাদের কারও যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। তাদের মধ্যে অনেকেই তখন পলায়নপর ছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো—‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে কার চেতনার কথা বোঝানো হচ্ছে? শেখ হাসিনা যখন এটি উচ্চারণ করেন, তখন তিনি এমনভাবে বলেন যেন তাঁর চেতনা আর জনগণের চেতনা একই। কিন্তু বাস্তবে তাঁর ‘চেতনা’ জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না। বরং এটা এক ধরনের দলীয় রেটোরিক, যার মাধ্যমে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো সুযোগ দেননি। শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে শেখ মুজিবুর রহমানই মুক্তির একমাত্র পুরুষ, একমাত্র নেতা—এইরকম একটা ‘ঐতিহাসিক মিথ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ শেখ মুজিব রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়েন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন এবং সেই নয় মাস যুদ্ধ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতেন না।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, যদি একটি সত্যিকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন পেত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শেখ হাসিনা ‘চেতনা’ দিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক জমিদারি কায়েম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে কংক্রিটাইজ বা বাস্তবায়িত করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। তার জন্য এটি শুধু একটি রেটোরিকাল অস্ত্র। এত বেপরোয়া হয়ে তো বাংলাদেশে আর কাউকে এইভাবে কাজ করতে দেখা যায় না। শেখ মুজিব বেপরোয়া ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার শাসন শৈলী ও শেখ হাসিনার শাসন শৈলীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। কারণ হাজার হলেও, শেখ মুজিব জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিপক্বতা তাঁর ছিল। আর শেখ হাসিনা যেন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’। তিনি শুধু শেখ মুজিবের কন্যা হওয়াতেই ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁর নিজের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি বা ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল না। তিনি ‘বাপের বেটি’ হিসেবে নেতৃত্বে এসেছেন, কিন্তু শেখ মুজিবের চিন্তা-চেতনার কিছুই তিনি ধারণ করেননি। বরং হাসিনা দেশের রাজনৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছেন।
বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, যখন শেখ হাসিনা বলেন—তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখন সেটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিকৃতি বলে মনে হয়। কিন্তু তাঁর শাসনামলে এই মিথ্যার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি। যেসব তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’ তার শাসনামলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তারাই এই বিকৃত ইতিহাসের বাহক। তা ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন একটা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাঠ্যবই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস পর্যন্ত এককভাবে উপস্থাপন করা হয়। স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষা ও গবেষণায় শেখ মুজিবকে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ইতিহাস। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা—সে ইতিহাস হোক, মতামত হোক, গবেষণা হোক—সবই দমন করা হয়েছে। কেউ ভিন্ন কিছু বললে, তাঁর চাকরি যায়, উন্নতি বন্ধ হয়, হয়রানি হয়—কখনো কখনো জীবন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বর্ণনায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ একটি দলীয়, ক্ষমতাকেন্দ্রিক, একমুখী বয়ানে পরিণত হয়েছে—যা গণতন্ত্র, সত্য ও ইতিহাসের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।
সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে বদরুদ্দীন উমর বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের আরেকটি দমনমূলক কৌশল ছিল সাম্প্রদায়িকতার বয়ানকে ব্যবহার করা। আওয়ামী লীগ সরাসরি ধর্মীয় বৈষম্যের রাজনীতি খুব বেশি করেনি বটে, কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, সম্পত্তি লুটপাট শুরু হয়েছে এবং এসব কাজ করেছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই। জামায়াতে ইসলামীর বা বিএনপির লোকজন এভাবে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেনি, যতটা করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। পাকিস্তানি আমলে যে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ ছিল, স্বাধীনতার পর সেটি বাতিল করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে, আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ নামে রূপান্তর করে বহাল রাখে। যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি লুটপাট অব্যাহত থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতা দাবি করলেও অর্থনৈতিক স্তরে আওয়ামী লীগ ছিল চরম সাম্প্রদায়িক—হিন্দুদের অর্থ-সম্পদ দখল করাকে তারা একটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাগত প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতা খুব বেশি ব্যবহার না করলেও, অর্থনৈতিক লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে এটি ব্যবহার করেছে। সমাজের প্রভাবশালী এলিট, সিভিল সোসাইটি, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়ী মহল—সবাইকে দমন ও পুরস্কারের নীতিতে নিয়ন্ত্রণ করেছে। যারা সরকারের অনুগত তাঁদের দেওয়া হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। যারা বিরোধিতা করেছে, তাঁদের করা হয়েছে বরখাস্ত, বঞ্চিত, এমনকি কারাবন্দী। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি সাংগঠনিক নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় নেতা কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে—যার স্কেল ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি। এর ফলে প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো যে ধ্বংস হয়ে গেছে, তার প্রমাণ ২০২৪ সালে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি আগস্টের শুরুতে সামরিক বাহিনী পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়—কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল যে, এই সরকারের দিন শেষ।
তিনি আরও বলেন, এখনো প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহলে আওয়ামী লীগের অনুগতরা রয়ে গেছে। তারা খোলাখুলি না বললেও নীরবভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ ‘কোনো দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয়’ বললেও বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ এখন আর একটি সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়। এটি একপ্রকার ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিক এজেন্টের মতো কাজ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের শাসন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। শেখ মুজিব ভারতপন্থী হলেও তিনি ভারতের নির্দেশে চলতেন না। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণভাবে ভারতের নকশায় নির্মিত। এই অবস্থায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক নীতির প্রশ্ন নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। এ দলটির কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে। এটি একটি ‘ভারত ঘেঁষা’ কাঠামোগত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, যার ফলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে। এখন তিনি জনগণ থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন বদরুদ্দীন উমর। প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই রোববার সকালে মারা যান তিনি। তাঁর সাক্ষ্যের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯(২) ধারা অনুযায়ী কোনো সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়ে মারা গেলে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করতে পারেন।
বদরুদ্দীন উমর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড়ালে কর্তৃত্ববাদী শাসন আর লুটপাট। এই যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলা হয়, সেটি নিয়ে আমি নিজেও নিশ্চিত না—এই কথাটি আসলে কী বোঝায়। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলে সবাই বলে যাচ্ছে, কিন্তু এই চেতনার প্রকৃত অর্থ কী, তা কখনো স্পষ্ট করা হয়নি। যদি চেতনা বলতে বোঝানো হয়, ১৯৭১ সালে মানুষ কী স্বপ্ন দেখেছিল, কী পেতে চেয়েছিল, তাহলে বলা যায়—সাধারণ মানুষের চেতনা আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চেতনার মধ্যে কোনো মিল ছিল না। সাধারণ মানুষ চেয়েছিল দু’বেলা খেতে, নিরাপদ জীবন, একটা সম্মানজনক চাকরি, আর একটু নিরাপত্তা। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন ভাবছিল, কীভাবে তারা সুযোগ নিয়ে সম্পদ বানাবে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা বাস্তবে লড়াই করেছিল, তারা ছিল সাধারণ ছাত্র, কৃষক-শ্রমিকের সন্তান, মধ্যবিত্ত তরুণেরা। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী বা ছাত্রনেতাদের কারও যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। তাদের মধ্যে অনেকেই তখন পলায়নপর ছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো—‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে কার চেতনার কথা বোঝানো হচ্ছে? শেখ হাসিনা যখন এটি উচ্চারণ করেন, তখন তিনি এমনভাবে বলেন যেন তাঁর চেতনা আর জনগণের চেতনা একই। কিন্তু বাস্তবে তাঁর ‘চেতনা’ জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না। বরং এটা এক ধরনের দলীয় রেটোরিক, যার মাধ্যমে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো সুযোগ দেননি। শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে শেখ মুজিবুর রহমানই মুক্তির একমাত্র পুরুষ, একমাত্র নেতা—এইরকম একটা ‘ঐতিহাসিক মিথ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ শেখ মুজিব রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়েন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন এবং সেই নয় মাস যুদ্ধ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতেন না।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, যদি একটি সত্যিকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন পেত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শেখ হাসিনা ‘চেতনা’ দিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক জমিদারি কায়েম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে কংক্রিটাইজ বা বাস্তবায়িত করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। তার জন্য এটি শুধু একটি রেটোরিকাল অস্ত্র। এত বেপরোয়া হয়ে তো বাংলাদেশে আর কাউকে এইভাবে কাজ করতে দেখা যায় না। শেখ মুজিব বেপরোয়া ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার শাসন শৈলী ও শেখ হাসিনার শাসন শৈলীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। কারণ হাজার হলেও, শেখ মুজিব জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিপক্বতা তাঁর ছিল। আর শেখ হাসিনা যেন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’। তিনি শুধু শেখ মুজিবের কন্যা হওয়াতেই ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁর নিজের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি বা ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল না। তিনি ‘বাপের বেটি’ হিসেবে নেতৃত্বে এসেছেন, কিন্তু শেখ মুজিবের চিন্তা-চেতনার কিছুই তিনি ধারণ করেননি। বরং হাসিনা দেশের রাজনৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছেন।
বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, যখন শেখ হাসিনা বলেন—তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখন সেটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিকৃতি বলে মনে হয়। কিন্তু তাঁর শাসনামলে এই মিথ্যার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি। যেসব তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’ তার শাসনামলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তারাই এই বিকৃত ইতিহাসের বাহক। তা ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন একটা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাঠ্যবই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস পর্যন্ত এককভাবে উপস্থাপন করা হয়। স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষা ও গবেষণায় শেখ মুজিবকে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ইতিহাস। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা—সে ইতিহাস হোক, মতামত হোক, গবেষণা হোক—সবই দমন করা হয়েছে। কেউ ভিন্ন কিছু বললে, তাঁর চাকরি যায়, উন্নতি বন্ধ হয়, হয়রানি হয়—কখনো কখনো জীবন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বর্ণনায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ একটি দলীয়, ক্ষমতাকেন্দ্রিক, একমুখী বয়ানে পরিণত হয়েছে—যা গণতন্ত্র, সত্য ও ইতিহাসের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।
সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে বদরুদ্দীন উমর বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের আরেকটি দমনমূলক কৌশল ছিল সাম্প্রদায়িকতার বয়ানকে ব্যবহার করা। আওয়ামী লীগ সরাসরি ধর্মীয় বৈষম্যের রাজনীতি খুব বেশি করেনি বটে, কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, সম্পত্তি লুটপাট শুরু হয়েছে এবং এসব কাজ করেছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই। জামায়াতে ইসলামীর বা বিএনপির লোকজন এভাবে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেনি, যতটা করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। পাকিস্তানি আমলে যে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ ছিল, স্বাধীনতার পর সেটি বাতিল করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে, আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ নামে রূপান্তর করে বহাল রাখে। যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি লুটপাট অব্যাহত থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতা দাবি করলেও অর্থনৈতিক স্তরে আওয়ামী লীগ ছিল চরম সাম্প্রদায়িক—হিন্দুদের অর্থ-সম্পদ দখল করাকে তারা একটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাগত প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতা খুব বেশি ব্যবহার না করলেও, অর্থনৈতিক লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে এটি ব্যবহার করেছে। সমাজের প্রভাবশালী এলিট, সিভিল সোসাইটি, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়ী মহল—সবাইকে দমন ও পুরস্কারের নীতিতে নিয়ন্ত্রণ করেছে। যারা সরকারের অনুগত তাঁদের দেওয়া হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। যারা বিরোধিতা করেছে, তাঁদের করা হয়েছে বরখাস্ত, বঞ্চিত, এমনকি কারাবন্দী। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি সাংগঠনিক নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় নেতা কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে—যার স্কেল ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি। এর ফলে প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো যে ধ্বংস হয়ে গেছে, তার প্রমাণ ২০২৪ সালে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি আগস্টের শুরুতে সামরিক বাহিনী পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়—কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল যে, এই সরকারের দিন শেষ।
তিনি আরও বলেন, এখনো প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহলে আওয়ামী লীগের অনুগতরা রয়ে গেছে। তারা খোলাখুলি না বললেও নীরবভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ ‘কোনো দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয়’ বললেও বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ এখন আর একটি সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়। এটি একপ্রকার ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিক এজেন্টের মতো কাজ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের শাসন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। শেখ মুজিব ভারতপন্থী হলেও তিনি ভারতের নির্দেশে চলতেন না। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণভাবে ভারতের নকশায় নির্মিত। এই অবস্থায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক নীতির প্রশ্ন নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। এ দলটির কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে। এটি একটি ‘ভারত ঘেঁষা’ কাঠামোগত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, যার ফলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে। এখন তিনি জনগণ থেকে শতভাগ বিচ্ছিন্ন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন বদরুদ্দীন উমর। প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার আগেই রোববার সকালে মারা যান তিনি। তাঁর সাক্ষ্যের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৯(২) ধারা অনুযায়ী কোনো সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিয়ে মারা গেলে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করতে পারেন।
বদরুদ্দীন উমর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দিতে বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড়ালে কর্তৃত্ববাদী শাসন আর লুটপাট। এই যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলা হয়, সেটি নিয়ে আমি নিজেও নিশ্চিত না—এই কথাটি আসলে কী বোঝায়। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলে সবাই বলে যাচ্ছে, কিন্তু এই চেতনার প্রকৃত অর্থ কী, তা কখনো স্পষ্ট করা হয়নি। যদি চেতনা বলতে বোঝানো হয়, ১৯৭১ সালে মানুষ কী স্বপ্ন দেখেছিল, কী পেতে চেয়েছিল, তাহলে বলা যায়—সাধারণ মানুষের চেতনা আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চেতনার মধ্যে কোনো মিল ছিল না। সাধারণ মানুষ চেয়েছিল দু’বেলা খেতে, নিরাপদ জীবন, একটা সম্মানজনক চাকরি, আর একটু নিরাপত্তা। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন ভাবছিল, কীভাবে তারা সুযোগ নিয়ে সম্পদ বানাবে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা বাস্তবে লড়াই করেছিল, তারা ছিল সাধারণ ছাত্র, কৃষক-শ্রমিকের সন্তান, মধ্যবিত্ত তরুণেরা। আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী বা ছাত্রনেতাদের কারও যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। তাদের মধ্যে অনেকেই তখন পলায়নপর ছিল। তাহলে প্রশ্ন হলো—‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলতে কার চেতনার কথা বোঝানো হচ্ছে? শেখ হাসিনা যখন এটি উচ্চারণ করেন, তখন তিনি এমনভাবে বলেন যেন তাঁর চেতনা আর জনগণের চেতনা একই। কিন্তু বাস্তবে তাঁর ‘চেতনা’ জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখে না। বরং এটা এক ধরনের দলীয় রেটোরিক, যার মাধ্যমে তিনি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো সুযোগ দেননি। শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে শেখ মুজিবুর রহমানই মুক্তির একমাত্র পুরুষ, একমাত্র নেতা—এইরকম একটা ‘ঐতিহাসিক মিথ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ শেখ মুজিব রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে পড়েন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন এবং সেই নয় মাস যুদ্ধ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতেন না।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, যদি একটি সত্যিকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন পেত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শেখ হাসিনা ‘চেতনা’ দিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক জমিদারি কায়েম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকে কংক্রিটাইজ বা বাস্তবায়িত করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। তার জন্য এটি শুধু একটি রেটোরিকাল অস্ত্র। এত বেপরোয়া হয়ে তো বাংলাদেশে আর কাউকে এইভাবে কাজ করতে দেখা যায় না। শেখ মুজিব বেপরোয়া ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার শাসন শৈলী ও শেখ হাসিনার শাসন শৈলীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। কারণ হাজার হলেও, শেখ মুজিব জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরিপক্বতা তাঁর ছিল। আর শেখ হাসিনা যেন ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’। তিনি শুধু শেখ মুজিবের কন্যা হওয়াতেই ক্ষমতায় এসেছেন। তাঁর নিজের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি বা ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল না। তিনি ‘বাপের বেটি’ হিসেবে নেতৃত্বে এসেছেন, কিন্তু শেখ মুজিবের চিন্তা-চেতনার কিছুই তিনি ধারণ করেননি। বরং হাসিনা দেশের রাজনৈতিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছেন।
বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, যখন শেখ হাসিনা বলেন—তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখন সেটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিকৃতি বলে মনে হয়। কিন্তু তাঁর শাসনামলে এই মিথ্যার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেনি। যেসব তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’ তার শাসনামলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তারাই এই বিকৃত ইতিহাসের বাহক। তা ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন একটা ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাঠ্যবই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস পর্যন্ত এককভাবে উপস্থাপন করা হয়। স্কুলের পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষা ও গবেষণায় শেখ মুজিবকে এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেন তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ইতিহাস। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো গণতান্ত্রিক চর্চা—সে ইতিহাস হোক, মতামত হোক, গবেষণা হোক—সবই দমন করা হয়েছে। কেউ ভিন্ন কিছু বললে, তাঁর চাকরি যায়, উন্নতি বন্ধ হয়, হয়রানি হয়—কখনো কখনো জীবন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সব মিলিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের বর্ণনায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ একটি দলীয়, ক্ষমতাকেন্দ্রিক, একমুখী বয়ানে পরিণত হয়েছে—যা গণতন্ত্র, সত্য ও ইতিহাসের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।
সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়ে বদরুদ্দীন উমর বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের আরেকটি দমনমূলক কৌশল ছিল সাম্প্রদায়িকতার বয়ানকে ব্যবহার করা। আওয়ামী লীগ সরাসরি ধর্মীয় বৈষম্যের রাজনীতি খুব বেশি করেনি বটে, কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, সম্পত্তি লুটপাট শুরু হয়েছে এবং এসব কাজ করেছে মূলত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই। জামায়াতে ইসলামীর বা বিএনপির লোকজন এভাবে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেনি, যতটা করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। পাকিস্তানি আমলে যে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ ছিল, স্বাধীনতার পর সেটি বাতিল করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে, আওয়ামী লীগ সরকার এটিকে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ নামে রূপান্তর করে বহাল রাখে। যার ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি লুটপাট অব্যাহত থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতা দাবি করলেও অর্থনৈতিক স্তরে আওয়ামী লীগ ছিল চরম সাম্প্রদায়িক—হিন্দুদের অর্থ-সম্পদ দখল করাকে তারা একটি কাঠামোগত ও ব্যবস্থাগত প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িকতা খুব বেশি ব্যবহার না করলেও, অর্থনৈতিক লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে এটি ব্যবহার করেছে। সমাজের প্রভাবশালী এলিট, সিভিল সোসাইটি, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়ী মহল—সবাইকে দমন ও পুরস্কারের নীতিতে নিয়ন্ত্রণ করেছে। যারা সরকারের অনুগত তাঁদের দেওয়া হয়েছে সুযোগ-সুবিধা। যারা বিরোধিতা করেছে, তাঁদের করা হয়েছে বরখাস্ত, বঞ্চিত, এমনকি কারাবন্দী। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে দুর্নীতি সাংগঠনিক নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় নেতা কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে—যার স্কেল ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলেও দেখা যায়নি। এর ফলে প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো যে ধ্বংস হয়ে গেছে, তার প্রমাণ ২০২৪ সালে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি আগস্টের শুরুতে সামরিক বাহিনী পর্যন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়—কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল যে, এই সরকারের দিন শেষ।
তিনি আরও বলেন, এখনো প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী মহলে আওয়ামী লীগের অনুগতরা রয়ে গেছে। তারা খোলাখুলি না বললেও নীরবভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ ‘কোনো দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয়’ বললেও বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ এখন আর একটি সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়। এটি একপ্রকার ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিক এজেন্টের মতো কাজ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের শাসন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। শেখ মুজিব ভারতপন্থী হলেও তিনি ভারতের নির্দেশে চলতেন না। কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণভাবে ভারতের নকশায় নির্মিত। এই অবস্থায়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক নীতির প্রশ্ন নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। এ দলটির কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে। এটি একটি ‘ভারত ঘেঁষা’ কাঠামোগত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে, যার ফলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।
৪ ঘণ্টা আগে
জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।
১৩ ঘণ্টা আগে
ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সংবাদের সত্যতা অস্বীকার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাদের সাথেই আছেন। তিনি কিছুদিন আগেও নির্বাচন কমিশনে পার্টি নিবন্ধন-সংক্রান্ত কাজে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বিভিন্ন উইংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তার পদত্যাগের বিষয়টি কিংবা দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’
এর আগে রাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে দুই সপ্তাহ আগে এনসিপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন পাটওয়ারী। যদিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনো সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদসংক্রান্ত জটিলতার কারণেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দলে এসে নির্বাচন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। বর্তমানে ওই পদে আছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আসিফের এই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনানুষ্ঠানিক সমর্থন থাকায় নাসীরুদ্দীন মনঃক্ষুণ্ন হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সংবাদের সত্যতা অস্বীকার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আমাদের সাথেই আছেন। তিনি কিছুদিন আগেও নির্বাচন কমিশনে পার্টি নিবন্ধন-সংক্রান্ত কাজে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বিভিন্ন উইংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তার পদত্যাগের বিষয়টি কিংবা দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’
এর আগে রাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে দুই সপ্তাহ আগে এনসিপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন পাটওয়ারী। যদিও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনো সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদসংক্রান্ত জটিলতার কারণেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দলে এসে নির্বাচন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। বর্তমানে ওই পদে আছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আসিফের এই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনানুষ্ঠানিক সমর্থন থাকায় নাসীরুদ্দীন মনঃক্ষুণ্ন হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।
১৩ ঘণ্টা আগে
ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৯ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে এ সরকার নির্বাচন করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘এখন নির্বাচন করতে গেলে কী হবে? কোনো নির্বাচন হবে না। যে নির্বাচনের জন্য আমরা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ বলি, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম। এই সরকার একই কাজ করছে এবং মনে হয়, একটা ঐকমত্য কমিশন করেছে। যেখানে দেশের অর্ধেক লোককে বাদ দিয়ে ঐক্য করার চেষ্টা চলছে।’
আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বাদ দিতে পারে না বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিতে হলে তাদের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। যারা খারাপ করেছে, তাদেরকে বাদ দিতে পারেন। কিন্তু দলকে কীভাবে বাদ দিতে পারেন বিচার ছাড়া?’
সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে জাপাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে দাবি করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, দেশের মানুষ তাদেরকে ক্ষমা করবে না। শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান সমর্থন দিয়েছিল। সমস্ত প্রতিষ্ঠান নিজের কবজায় করেও রাখতে পারেনি। দেশের মানুষ তাদেরকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ না দাবি করে জি এম কাদের বলেন, তাদের একটা দল আছে। এই সরকার দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চায় দাবি করে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে কখনো এত খারাপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল না।
জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের দাবিতে জামায়াতের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, তারা বলছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জাতীয় পার্টি থাকলে তো তারা থার্ড পার্টি হতে পারবে না। সেই কারণে জাতীয় পার্টিকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে।
বাংলাদেশে আজ গভীর সংকটে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, আজকে দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। যাঁরা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বেকার হচ্ছেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো এত খারাপ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। মানুষের জীবনের যেমন নিরাপত্তা নেই, তেমনি বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। মানুষের বাড়িঘর লুটপাট করে নিচ্ছে। মহিলাদের অসম্মান করা হচ্ছে। আমরা যা খবর পাচ্ছি, প্রতিদিন খুন হচ্ছে মানুষ।’
দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলেও দাবি করেন জাপার এ নেতা। তিনি বলেন, টিসিবির ট্রাকে যতজনের মালামাল থাকে, তারচেয়ে ১০ গুণ বেশি মানুষ সেখানে বসে থাকছেন।
জাপা মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের অভাব দেশে বিভাজন তৈরি করছে। বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য দরকার নির্দলীয় বা সর্বদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
এ সময় জাতীয় পার্টিকে ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেন মহাসচিব।

জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে এ সরকার নির্বাচন করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘এখন নির্বাচন করতে গেলে কী হবে? কোনো নির্বাচন হবে না। যে নির্বাচনের জন্য আমরা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদ বলি, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম। এই সরকার একই কাজ করছে এবং মনে হয়, একটা ঐকমত্য কমিশন করেছে। যেখানে দেশের অর্ধেক লোককে বাদ দিয়ে ঐক্য করার চেষ্টা চলছে।’
আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বাদ দিতে পারে না বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিতে হলে তাদের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। যারা খারাপ করেছে, তাদেরকে বাদ দিতে পারেন। কিন্তু দলকে কীভাবে বাদ দিতে পারেন বিচার ছাড়া?’
সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললে জাপাকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে দাবি করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, দেশের মানুষ তাদেরকে ক্ষমা করবে না। শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান সমর্থন দিয়েছিল। সমস্ত প্রতিষ্ঠান নিজের কবজায় করেও রাখতে পারেনি। দেশের মানুষ তাদেরকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ না দাবি করে জি এম কাদের বলেন, তাদের একটা দল আছে। এই সরকার দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাতে চায় দাবি করে তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে কখনো এত খারাপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল না।
জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের দাবিতে জামায়াতের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে কাদের বলেন, তারা বলছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জাতীয় পার্টি থাকলে তো তারা থার্ড পার্টি হতে পারবে না। সেই কারণে জাতীয় পার্টিকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে।
বাংলাদেশে আজ গভীর সংকটে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, আজকে দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। যাঁরা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন, সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বেকার হচ্ছেন।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো এত খারাপ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। মানুষের জীবনের যেমন নিরাপত্তা নেই, তেমনি বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। মানুষের বাড়িঘর লুটপাট করে নিচ্ছে। মহিলাদের অসম্মান করা হচ্ছে। আমরা যা খবর পাচ্ছি, প্রতিদিন খুন হচ্ছে মানুষ।’
দেশ দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলেও দাবি করেন জাপার এ নেতা। তিনি বলেন, টিসিবির ট্রাকে যতজনের মালামাল থাকে, তারচেয়ে ১০ গুণ বেশি মানুষ সেখানে বসে থাকছেন।
জাপা মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের অভাব দেশে বিভাজন তৈরি করছে। বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী আরও বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য দরকার নির্দলীয় বা সর্বদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
এ সময় জাতীয় পার্টিকে ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহতের ঘোষণা দেন মহাসচিব।

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।
৪ ঘণ্টা আগে
ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৯ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নাম বদলে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আদর্শিক ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে ছাত্রশক্তি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জাতীয় সমন্বয় সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। আর যেন কেউ গণরুম-গেস্টরুম বানাতে না পারে, সে জন্য ছাত্রসংসদকে সোচ্চার থাকতে হবে।
এ সময় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে দলীয় অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা পেলে তবেই স্বাক্ষর করবে এনসিপি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার পর দুটা পক্ষ হয়ে গেছে। এক পক্ষ স্বাক্ষর প্রত্যাহার করতে চায়, আরেক পক্ষ কালি দিয়ে গেড়ে দিতে চায়।
আওয়ামী লীগ নানা শক্তির মধ্য দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন আখতার।
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, যে আওয়ামী লীগ চব্বিশে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গুলি করেছে, ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে গুম করেছে, আয়নাঘর তৈরি করেছে; তাদের বাংলাদেশে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। কেউ যদি পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, জীবন দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।
সভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর সংস্কার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, আমাদের কনভেনশনাল (প্রথাগত) রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আমরা আনতে পারিনি। সেই সংস্কারকাজকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এই ছাত্রদের।’
দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশের জেলা ও মহানগরে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া শুরু হবে।
এ সময় দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সারজিস বলেন, যাঁরা লোভ সংবরণ করতে পারেননি, তাঁদের এনসিপির মতো সংগঠনের প্রয়োজন নেই। এনসিপি ‘মাই ম্যানের’ পলিটিকস করবে না। যোগ্য ও পার্টির প্রতি বিশ্বস্তদের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে দল।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের অনেকে এখন স্বাক্ষর প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন।’
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা কেন রাজনৈতিক দল গঠন করল—এর কারণ সম্পর্কে তুষার বলেন, যেহেতু অতীতে ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ‘বিট্রে’ (প্রতারণা) করেছে, সে জন্য ছাত্ররা এখন নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন।
নাম উল্লেখ না করে তুষার বলেন, ‘বাপ-ছেলে’ নিয়ে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ‘অশ্লীল ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত’।
এনসিপির কাছ থেকে তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সভায় জাতীয় ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আট মাসে আহ্বায়ক হিসেবে আমার অনেক ব্যর্থতা থাকতে পারে। কিন্তু আমি এই সময়ে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) করি নাই। কোনো অপকর্মে থাকি নাই। এনসিপি গঠনের দুদিন আগে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি গঠনের পর আমাদের যেমন সফলতা আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। একটা সংগঠন পরিচালনার জন্য নিয়মিত ফান্ডিংয়ের প্রয়োজন হয়। আমি মাথা নিচু করে ক্ষমা চাচ্ছি, আমাদের যেসব জায়গায় কার্যক্রম চলছে, নিয়মিত ফান্ড সেখানে দিতে পারি নাই।’
ছাত্রশক্তি এনসিপির সহযোগী আদর্শিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে জানিয়ে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমরা একটি স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করব। পরবর্তী নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানানো হবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
রাকিব বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আমরা নাকি গেস্টরুম বা গণরুম করব। এটা ছিল নিছক মিথ্যাচার। গত এক বছরে একটি সংগঠন এসব মিথ্যাচার করে পার পেয়ে গেছে। আগামী ২০২৬-২৭ সালে আমরা প্রমাণ করব, ছাত্রদল নতুন ধারার ছাত্ররাজনীতির পথ তৈরি করেছে। ছাত্রদল গেস্টরুম বা গণরুম সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। একদিন অবশ্যই ছাত্রসমাজ এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।’
এ সময় ছাত্রশক্তির নেতাদের উদ্দেশে রাকিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে আপনারা ছাড় দেবেন না।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নাম বদলে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আদর্শিক ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে ছাত্রশক্তি।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জাতীয় সমন্বয় সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। আর যেন কেউ গণরুম-গেস্টরুম বানাতে না পারে, সে জন্য ছাত্রসংসদকে সোচ্চার থাকতে হবে।
এ সময় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে দলীয় অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা পেলে তবেই স্বাক্ষর করবে এনসিপি।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার পর দুটা পক্ষ হয়ে গেছে। এক পক্ষ স্বাক্ষর প্রত্যাহার করতে চায়, আরেক পক্ষ কালি দিয়ে গেড়ে দিতে চায়।
আওয়ামী লীগ নানা শক্তির মধ্য দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন আখতার।
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, যে আওয়ামী লীগ চব্বিশে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গুলি করেছে, ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে গুম করেছে, আয়নাঘর তৈরি করেছে; তাদের বাংলাদেশে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। কেউ যদি পুনর্বাসনের চেষ্টা করে, জীবন দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।
সভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর সংস্কার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, আমাদের কনভেনশনাল (প্রথাগত) রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আমরা আনতে পারিনি। সেই সংস্কারকাজকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এই ছাত্রদের।’
দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশের জেলা ও মহানগরে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া শুরু হবে।
এ সময় দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সারজিস বলেন, যাঁরা লোভ সংবরণ করতে পারেননি, তাঁদের এনসিপির মতো সংগঠনের প্রয়োজন নেই। এনসিপি ‘মাই ম্যানের’ পলিটিকস করবে না। যোগ্য ও পার্টির প্রতি বিশ্বস্তদের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে দল।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের অনেকে এখন স্বাক্ষর প্রত্যাহারের চেষ্টা করছেন।’
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা কেন রাজনৈতিক দল গঠন করল—এর কারণ সম্পর্কে তুষার বলেন, যেহেতু অতীতে ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ‘বিট্রে’ (প্রতারণা) করেছে, সে জন্য ছাত্ররা এখন নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন।
নাম উল্লেখ না করে তুষার বলেন, ‘বাপ-ছেলে’ নিয়ে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ‘অশ্লীল ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত’।
এনসিপির কাছ থেকে তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সভায় জাতীয় ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আট মাসে আহ্বায়ক হিসেবে আমার অনেক ব্যর্থতা থাকতে পারে। কিন্তু আমি এই সময়ে কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) করি নাই। কোনো অপকর্মে থাকি নাই। এনসিপি গঠনের দুদিন আগে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি গঠনের পর আমাদের যেমন সফলতা আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। একটা সংগঠন পরিচালনার জন্য নিয়মিত ফান্ডিংয়ের প্রয়োজন হয়। আমি মাথা নিচু করে ক্ষমা চাচ্ছি, আমাদের যেসব জায়গায় কার্যক্রম চলছে, নিয়মিত ফান্ড সেখানে দিতে পারি নাই।’
ছাত্রশক্তি এনসিপির সহযোগী আদর্শিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে জানিয়ে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমরা একটি স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করব। পরবর্তী নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা জানানো হবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
রাকিব বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের বিরুদ্ধে নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আমরা নাকি গেস্টরুম বা গণরুম করব। এটা ছিল নিছক মিথ্যাচার। গত এক বছরে একটি সংগঠন এসব মিথ্যাচার করে পার পেয়ে গেছে। আগামী ২০২৬-২৭ সালে আমরা প্রমাণ করব, ছাত্রদল নতুন ধারার ছাত্ররাজনীতির পথ তৈরি করেছে। ছাত্রদল গেস্টরুম বা গণরুম সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। একদিন অবশ্যই ছাত্রসমাজ এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।’
এ সময় ছাত্রশক্তির নেতাদের উদ্দেশে রাকিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে আপনারা ছাড় দেবেন না।’

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।
৪ ঘণ্টা আগে
জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।
১৩ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
১৯ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বৈঠকে অংশ নেন।
অন্যদিকে এনআইএমডির প্রোগ্রাম ও নলেজ অ্যাডভাইজার তাইউহ নেঙ্গে, হেড অব পজিশনিং হেলিন শ্রোয়েন প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।

ঢাকায় সফররত নেদারল্যান্ডস ইনস্টিটিউট ফর মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসির (এনআইএমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বৈঠকে অংশ নেন।
অন্যদিকে এনআইএমডির প্রোগ্রাম ও নলেজ অ্যাডভাইজার তাইউহ নেঙ্গে, হেড অব পজিশনিং হেলিন শ্রোয়েন প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন।

সদ্য প্রয়াত লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এমনভাবে ব্যবহার করেছেন, যেন সেটি তার পারিবারিক সম্পত্তি। এই চেতনা একসময় কাজ করেছে—মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে, আবেগে ভেসেছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে, তার দমননীতি ও নির্যাতনের ফলে এই চেতনা ধরা পড়ে গেছে।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তিনি দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এসব প্রতিবেদনে এনসিপির ‘একটি সূত্রের’ বরাতও দেওয়া হয়।
৪ ঘণ্টা আগে
জাতীয় পার্টি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন জি এম কাদের।
১৩ ঘণ্টা আগে
ছাত্রসংগঠনটির নতুন নাম ঘোষণা করেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী। সভায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ ঘণ্টা আগে