Ajker Patrika

শচীনের জন্য ভালোবাসা

সম্পাদকীয়
শচীনের জন্য ভালোবাসা

দেশের মধ্যে নানা নেতিবাচক সংবাদের ভিড়ে কিছু সংবাদ আসলেই মন ভালো করে দেয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে ভারতবর্ষের কিংবদন্তি গায়ক শচীন দেববর্মনের পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শচীনের জন্মভিটা কুমিল্লার চর্থায় অবস্থিত প্রায় ৬০ একর জমির ওপর একটি বড় প্রাসাদ ছিল। এরপর ভিটেবাড়ি দখল, অবহেলা ও ধ্বংসের শিকার হয়। রাজবাড়ির অনেক অংশ ভেঙে যায়, স্মৃতিচিহ্ন মুছে যেতে থাকে।

১৯০৫ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার চর্থায় জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেববর্মন। তাঁর পিতা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন ছিলেন ত্রিপুরা রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবার কুমিল্লায় চলে আসে এবং এখানেই শচীনের শৈশব কাটে। স্কুল ও কলেজে এখানেই তিনি পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গান গেয়ে পরিচিতি পাওয়া এবং ১৯৩০ সালে অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে অংশ নিয়ে কলকাতা বেতারে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, এরপর মুম্বাই চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হওয়া ছিল তাঁর সফলতার সিঁড়ি।

সেই শচীনের বাড়ি আজ ভগ্নদশায় পরিণত। পুরোনো দালানটি শুধু একটি বাড়ি নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। কারণ, এখানেই কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীতশিল্পী শচীন দেববর্মনের শৈশব, কৈশোর কেটেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শচীন দেববর্মনের জীবন, তাঁর সৃষ্টিকর্ম এবং বাংলা ও হিন্দি সংগীতে অবিস্মরণীয় অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশেও এই ঐতিহাসিক স্থানটি অবহেলা আর দখলের শিকার হয়েছে। রাজবাড়ির অনেক অংশ ভেঙে গেছে, স্মৃতিচিহ্ন প্রায় মুছে গেছে। তবে ১৯৯০-এর দশক থেকে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং আন্দোলনের ফলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জায়গার একটি অংশ উদ্ধার হয়। এরপর ২০১৮ সাল থেকে ‘শচীন মেলা’র মতো উদ্যোগগুলোও তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধিদল যখন শচীনের জন্মভিটা পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে, তখন এটি কেবল কুমিল্লা নয়, পুরো দেশের সাংস্কৃতিক মহলের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। এই কমপ্লেক্সে থাকবে শচীনের জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন তথ্যচিত্র, তাঁর সুর করা গানের আর্কাইভ, গবেষণাকেন্দ্র, একটি মুক্তমঞ্চ এবং সংগীত শিক্ষাকেন্দ্র। এমন একটি কেন্দ্র তৈরি হলে তা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠবে।

শচীন দেববর্মনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ এবং পাবনার আরেক কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বাড়িগুলো জাদুঘরে রূপান্তর করা হলে তা কেবল পর্যটন নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, এই উদ্যোগ দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে এবং শচীন দেববর্মনের জন্মভিটা তার প্রাপ্য সম্মান ফিরে পাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত