Ajker Patrika

বাঁশিওয়ালাকেই খুঁজুন

সম্পাদকীয়
বাঁশিওয়ালাকেই খুঁজুন

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে চালানো অরাজকতার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছে বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। একজন অপ্রকৃতিস্থ মানুষকে পবিত্র কোরআন হাতে মণ্ডপে ঢুকতে দেখা গেছে, এবং গদা হাতে বের হতে দেখা গেছে। এই লোকটির নাম ইকবাল। কক্সবাজার থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যাওয়ার পর থেকেই সবাই ধন্য ধন্য করছেন। অনেকেই বলছেন, ‘আগে থেকেই তো জানতাম, এ রকমই একটা কিছু হয়েছে!’

আমরা এ ব্যাপারে সরাসরি বলতে চাই, জঘন্য এই কাণ্ডের শেষ দেখতে হবে। এটা যে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় এবং কুমিল্লায় ছড়ানো আগুন সারা দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও যে কাকতালীয় নয়, সে কথা উপলব্ধি করতে হবে। এই ঘটনার কঠোর শাস্তিবিধান করা না হলে জাতিগতভাবেই একটা ফার্স বা পরিহাসের মধ্যে পড়ে যাব আমরা।

কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান বা হিন্দু যে অন্য ধর্মের অবমাননা করবেন না, সে কথা সবাই জানেন। কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে পরিচালিত হলে পারস্পরিক সংঘাত নয়, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকেই মানুষ জীবনে স্থান দেয়। কিন্তু দেশে দেশে বিভিন্ন কাঠামোর মধ্যে ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করা হয় বলেই কুযুক্তি দিয়ে নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে উসকে দেওয়া যায় মানুষকে। উত্তেজিত করা যায়। ধর্ম খুবই স্পর্শকাতর। এই সুযোগটাই নেয় বদমাশেরা।

পূজার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে নানাভাবে অপমান করার এই প্রক্রিয়া তো নতুন নয়। বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে ‘মুসলমান’ বলে দাবিদার কিছু বদমায়েশ দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটাচ্ছে দিনের পর দিন।

রাজনৈতিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দেখানো এবং জমিজমা, সহায়সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করাই এ ধরনের সহিংসতার একটা প্রধান কারণ। আরেকটি কারণ হচ্ছে, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করার লোভ। দীর্ঘদিন ধরে এই দুটো ব্যাপারেরই কুচর্চা চলছে দেশে।

ইকবাল নামের মানুষটি নাকি অপ্রকৃতিস্থ। তাই খেয়াল রাখতে হবে, যেন শুধু ইকবালকে ঘিরেই তদন্ত না চলে। যাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অরাজকতা চালানোর চিত্রনাট্যটি তৈরি করেছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো হিন্দু ‘অপ্রকৃতিস্থ’ মানুষকেও খুঁজে নিতে পারবেন। আবার তৈরি করতে পারবেন এ রকম পরিস্থিতি। পুড়িয়ে দেবে বাড়িঘর, হত্যা করবে মানুষ। প্রশ্নটি তো হিন্দু বা মুসলমান অপ্রকৃতিস্থ মানুষকে নিয়ে নয়, যাঁরা চকচকে একটি কোরআন শরিফ এই অপ্রকৃতিস্থ মানুষের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদেরই খুঁজে বের করতে হবে। কারা এই বাঁশিওয়ালা? এই বাঁশিওয়ালাদের খুঁজে বের করে দিতে হবে কঠোর শাস্তি। এমন শাস্তি, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন অরাজকতা ঘটানোর কথা কেউ ভাবতেও না পারে।

ধর্মের নানা অপব্যাখ্যায় মানুষ বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্তিকে কাজে লাগিয়েই ধর্মব্যবসায়ীরা আখের গুছিয়ে নেন। অন্য ধর্মাবলম্বীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদেরও শাস্তির আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত