Ajker Patrika

ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা কোথায়

সম্পাদকীয়
ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা কোথায়

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিতকরণ এবং তাঁদের তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে যে দীর্ঘসূত্রতা দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যাংক আইন সংশোধন করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার বিধান করা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আজকের পত্রিকায় ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করেনি। এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব দেখা যাচ্ছে, যা ঋণ আদায়ে শৃঙ্খলা ভাঙার আশঙ্কাকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সমস্যা অনেক পুরোনো। আগের সরকারগুলো ঋণখেলাপিদের অন্যায্য সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু সেসব কোনো কাজে আসেনি। বরং খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। আর একটা উদ্বেগের বিষয় হলো, আগের সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে ব্যাংকগুলোকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের তালিকা করার নির্দেশ দিলেও গত ১১ মাসে তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। শুধু বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করেনি।

যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই ব্যাংকিং খাত হলো অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু বাংলাদেশে এ খাত পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ের সরকারগুলোর বিরুদ্ধে দলীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শাসনামলে এ খাতকে ধ্বংসের কিনারে পৌঁছে দেয়। দলীয় লোকজনকে উদার হস্তে ব্যাংকঋণ দিয়ে এ খাতকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়। বেশ কিছু ব্যাংক বন্ধের উপক্রম হয়। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণের কারণে সেই ব্যাংকগুলো কিছুটা রক্ষা পায়। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায় করা না গেলে এই ব্যাংকগুলো আবারও দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঋণখেলাপিদের যোগসাজশের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আবার ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও অদক্ষতাও এ ক্ষেত্রে কাজ করে।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা প্রকাশে এই দীর্ঘসূত্রতার কারণে আর্থিক খাতে একাধিক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ঋণশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে। সৎ ঋণগ্রহীতারা ঋণ পেতে সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের কারণে নতুন ঋণ দিতে উৎসাহিত হবে না। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও কার্যকর করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং তাদের মধ্যে পেশাদারত্ব ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো তৈরি করা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত