Ajker Patrika

শিক্ষায় দুর্নীতি

সম্পাদকীয়
শিক্ষায় দুর্নীতি

যাঁর কাছে শিক্ষাব্যবস্থা সুরক্ষিত থাকার কথা, তিনি যদি দুর্নীতিকে বাড়তি আয়ের উৎস মনে করে দায়িত্বকে অবহেলা করেন, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থা তিমিরে থেকে যাবে, সেটা স্পষ্ট। নৈতিকতা, মূল্যবোধ-বিবর্জিত এ ধরনের অসৎ শিক্ষা কর্মকর্তার কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা রসাতলে যাচ্ছে। আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি আগে থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে তিনি এত বেপরোয়া হতে পারতেন না।

বলা হচ্ছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হুদা তালুকদারের কথা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, বেতন-ভাতা সমতার অজুহাতে টাইম স্কেল সংযোজনের জন্য প্রাইমারি শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়েছেন। নিজে ঘুমানোর জন্য একজন শিক্ষকনেতার কাছ থেকে মূল্যবান খাট ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ ছাড়া পিআরএল (অবসর-উত্তর ছুটি), পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা উত্তোলনের সময় মোটা অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া ফাইলে স্বাক্ষর না করা এবং সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কারের জন্য স্কুল থেকে চাঁদা আদায় করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। অনলাইন বদলির আবেদন থেকে শুরু করে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে রাজকীয় খাবারের আবদার এবং বিজয় দিবসে ইউএনওর নাম ভাঙিয়ে কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের কাছে চাঁদা দাবি করার মতো ঘটনাগুলো স্পষ্টতই তালুকদার সাহেবের ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। তিনি আবার এসব অপকর্ম করছেন শিক্ষকদের নিয়ে তাঁরই তৈরি করা সিন্ডিকেট দিয়ে, যা শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে। এই শিক্ষকেরা প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেবেন, সেটাও গুরুতর প্রশ্ন।

এ ধরনের দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, বরং শিক্ষকদের মনোবল ভেঙে দেয়। যখন একজন শিক্ষা কর্মকর্তাই দুর্নীতিতে লিপ্ত হন, তখন তিনি কীভাবে শিক্ষকদের নৈতিকতা শেখাবেন? কীভাবে শিক্ষকেরা নির্ভয়ে এবং সম্মানের সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন? এই প্রশ্নগুলো নৈতিক দিক বিবেচনায় ভাবা জরুরি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এই তদন্ত যেন কেবল নামমাত্র না হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাঁর সহযোগীদের এখনই যদি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় না আনা যায়, তাহলে এমন দুর্নীতি অন্য জায়গাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ সৃষ্টি করা খুবই জরুরি। শিক্ষকদের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাঁদের নির্ভয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার যেকোনো পর্যায়ে এ ধরনের অসৎ মানুষকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও যে তদারকি এবং দায়িত্বে অবহেলা আছে, সেটা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা সচেতন কোনো মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ছাত্রদল কর্মী ইপ্সিতার, ধর্ষণের অভিযোগ আসে ৯৯৯ থেকে

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

নূরুল হুদাকে হেনস্তা: বিচারের দাবিতে ৩৪ বীর মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতি

চ্যাটজিপিটিকে যেভাবে প্রশ্ন করবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত