আব্দুর রাজ্জাক
গত কয়েক দশকের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের আচার-আচরণ মোটের ওপর বিশ্লেষণ করলে মোটা দাগে বলা যায়, গত শতাব্দীর রাজনীতিবিদদের চেয়ে তাঁরা আলাদা বৈশিষ্ট্যের। রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের এই পরিবর্তনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা দরকার।
রাজনীতিবিদেরাই রাজনীতি করবেন। রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে, রাজনীতি কোনো ব্যবসা না। বলতে পারেন রাজনীতি সমাজসেবা, জনসেবা অথবা রাষ্ট্রসেবাও বটে। লোভ-লালসা, নিজের স্বার্থ, পরিবারের স্বার্থ—সবকিছু বিসর্জন দিয়েই রাজনীতিবিদদের উচিত রাজনীতি করা। রাজনীতির ব্যাকরণও তা-ই বলে। গত শতাব্দী ও তার আগে থেকে, রাজনীতিবিদদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নিঃস্বার্থভাবে সমাজ বা রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের চিন্তা-চেতনায়, মনোজগতে কাজ করত দেশসেবা, জনসেবা অথবা সমাজসেবা। শত বছরের ঐতিহ্য বিশ্লেষণ করলে আমাদের দেশের, আমি বলতে চাইছি এই উপমহাদেশের বহু রাজনীতিবিদ আছেন ডাকসাইটে, তাঁদের মেধা-প্রজ্ঞা-জ্ঞান-গরিমা ছিল প্রশ্নাতীত। এইসব রাজনীতিবিদ সম্পর্কে বহু গবেষণা হয়েছে, যুগ যুগ ধরে গবেষণা চলছে তাঁদের কৃতকর্ম নিয়ে, তাঁদের আদর্শ নিয়ে। তাঁদের আদর্শ, কৃতকর্ম বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে তাঁদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ, জাতি ও দেশকে ভালোবাসার গল্প।
মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ এই উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের সবকিছু বিশ্লেষণ করলে তাঁদের সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দাঁড়াবে, সেটা হলো তাঁদের কৃতকর্মের চিন্তা-চেতনার ফসল বর্তমান সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও আমাদের স্বাধীন দেশমাতৃকা। যাঁদের নাম বললাম তাঁরা যে খুব একটা অর্থসম্পদ রেখে গেছেন, তা কিন্তু বলা যাবে না। মহাত্মা গান্ধী বা জিন্নাহর ক্ষেত্রে এর তেমন কোনো প্রমাণ নেই। আমরা দেখেছি, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এত বড় আইনজীবী ছিলেন, বাংলার প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পদে ৫০ বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন; মৃত্যুর পরে তাঁর সম্পদের মধ্যে ছিল সেই সময়ের গোপীবাগের জরাজীর্ণ দোতলা বাড়ি।
বিগত শতকের রাজনীতিবিদদের পোশাক-আশাক, চলন-বলন, ভ্রমণ, খাদ্য গ্রহণ—সবকিছুই ছিল অনুকরণীয়। তাঁরা সব মানুষকে সম্মান করে কথা বলতেন, অন্য দলের রাজনীতিবিদদেরও তাঁরা সম্মান করতেন। দ্বিমতের কারণে কোনো দিনই কারও ওপর চড়াও হতেন না। ভিন্নমতের ভিন্ন দলের লোকজনের সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। সেই উদাহরণ আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যেও দেখেছি।
মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, কমরেড মণি সিংহ, প্রফেসর মোজাফফর আহমদ, জিয়াউর রহমান—এইসব মহান রাজনীতিবিদদের কিছু কর্ম বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে তাঁদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা; চিন্তা-চেতনায়, মননে সব সময় ছিল দেশমাতৃকার কথা; সমাজের উন্নতি, সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। নিজের সম্পত্তি কত আছে, কত ছিল আর কত সম্পত্তি করতে হবে, এসবের কোনো ভাবনা ছিল না তাঁদের। একেবারেই সাদামাটা জীবন ছিল এইসব জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির। দল-মতনির্বিশেষে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গকে আমরা শ্রদ্ধা করি আজীবন। মনে হয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও তাঁদের ইতিহাস জেনে শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত করে।
আমাদের দেশে জাতীয় পর্যায়, এমনকি জেলা পর্যায়েও বহু রাজনীতিবিদ ছিলেন—দুই-তিন দশক আগেও—যাঁদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে একই রকম ফলাফল পাওয়া যাবে। তাঁরা কোনো সম্পদ অর্জনের জন্য, নিজের ব্যক্তিগত লোভ-লালসার জন্য, পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করেননি। এখনো সে রকম রাজনীতিবিদ জাতীয় পর্যায়ে এবং মফস্বল পর্যায়ে আছে, তবে তাঁদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলেই আজকের এই লেখার অবতারণা।
দুই-তিন দশক ধরে প্রায়ই শোনা যায়, কোন দল থেকে আপনি নমিনেশন পাবেন, সেই দল থেকে আপনাকে নমিনেশনটি কিনে আনতে হবে। বাস্তবে এটা কতটা সত্য জানি না, তবে বেশির ভাগ মানুষই মনে করে, নমিনেশন বেচাকেনার ব্যাপার, যিনি অধিক দাম দেবেন তাঁর কপালেই জুটবে নির্দিষ্ট দলের প্রতীক! সব ক্ষেত্রে না হলেও উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। আবার যাঁরা এইসব প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হন, তাঁরা নাকি বলেন, এই পদে তাঁর পূর্বসূরি কী পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছে, তাঁকে তার চেয়ে একটু বেশি সম্পদ অর্জন করতে হবে!
জাতীয় পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপি মহোদয়দের ক্ষেত্রে এ কথা এখন সবার কাছেই মোটামুটি একটি বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়েও একই রকম অবস্থা। সেখানেও নমিনেশনটা একই রকম পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা মনোনীত হবেন, পরিশেষে নির্বাচিত হবেন জনগণের দ্বারা, তাঁরা খাতা-কলম নিয়ে বসেন হিসাব করতে—নির্বাচনে কত ব্যয় করবেন, নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁর খরচ ওঠার পরে কত লাভ করতে পারবেন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য কী পরিমাণ ব্যয় করতে পারবেন। এই রকম চিন্তাধারা নিয়েই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদেরা নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সব ক্ষেত্রে না হলেও যদি এই রকম মনোবৃত্তির মানুষ ৫০ ভাগের কাছাকাছি হয়, তাহলেও সর্বনাশের দিকে ধাবিত হবে সমাজ-রাষ্ট্র।
আমরা শুধু সমাজ-রাষ্ট্রকে কলুষিত করছি না, রাজনীতি যে একটা মহৎ পেশা, এই পেশাকে আমরা কলুষিত করছি। রাজনীতিবিদদের প্রথম থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমি রাজনীতি করে কোনো অসৎ আয় করব না, আমার জীবন চলার জন্য যত সামান্য সম্পদ বা অর্থের দরকার, সেটুকুই আমাকে অর্জন করতে হবে। সব সময় ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
কেউ যদি তাঁর নিজস্ব উপার্জিত অর্থ, যেমন আইন পেশা, ডাক্তারি পেশাসহ অন্যান্য পেশা ও পারিবারিক সম্পদ দিয়ে নিজের সংসার, কর্মজীবন পরিচালনা করতে পারেন, তাহলেই তাঁর রাজনীতি করা উচিত। তাহলে তিনি শুধু রাজনীতি দিয়েই সমাজের সেবা করতে পারবেন। যা কিছুই বলি না কেন, নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার মানসিকতা রক্ত, মাংসে, মস্তিষ্কে ও মনোজগতে থাকতে হয়। নিঃস্বার্থভাবে দেশসেবা, সমাজসেবা, সমাজ সংস্কার সবাই করতে পারে না। যাঁরা লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নিজের সময়-সম্পদ ব্যয় করে অপরের উপকারের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন—তাঁরাই আসুক রাজনীতি করতে।
রাজনীতিবিদদের অনেক মেধাবী হতে হয়। অর্থনীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, বহির্বিশ্বের পরিবর্তন—সবকিছুর ওপরই তাঁদের সম্যক জ্ঞান থাকতে হয়। শুধু রাজনীতি না, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। যা কিছু সবার জন্য মঙ্গল, সেটা নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তা করতে হয়। রাজনীতিবিদের চরিত্র, আচার-আচরণ দেখে যেন সমাজ ভালো কিছু শেখে, তাহলেই রাজনীতি সার্থক হয়। যদি রাজনীতিবিদদের দেখে সমাজের মানুষ তাঁদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলেই মনে করতে হবে সেইসব রাজনীতিকের সবকিছু ব্যর্থ, তাঁদের রাজনীতিবিদ হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই; তাঁদের রাজনীতি মিথ্যার বেসাতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
এ দেশে গত কয়েক দশকে যা কিছু ঘটে গেল, সবকিছুর শীর্ষেই ছিল রাজনীতিবিদদের চরিত্র, তাঁদের জ্ঞান-বিদ্যাবুদ্ধি, আচার-আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এই প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিকস’ ঢুকে গেছে। অর্থাৎ, পেশিশক্তি, জোরজবরদস্তি, চোখ রাঙানি, ভয়ভীতি দেখানো, যা কিছু মন্দ সবকিছুই ঢুকে গেছে এই রাজনীতির মধ্যে।
কলুষিত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আসতেই হবে। নইলে কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হবে দেশ ও জাতি; ভবিষ্যৎ শুধু অন্ধকার হবে। এখন থেকেই আমরা চরিত্রবান, সৎ, মেধাবী মানুষদেরই রাজনীতিতে স্থান করে দিতে চাই। আমাদের দেশে এখনো সৎ, মেধাবী রাজনীতিবিদ আছেন। তাঁদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাঁদের পথ অনুসরণ করে নতুন প্রজন্ম সেই রকমভাবে তৈরি হবে। গত এক দশকে যেসব তরুণ রাজনীতিতে এসেছেন বা আসার চেষ্টা করছেন, তাঁদের এটা জানা উচিত—রাজনীতি কোনো ব্যবসার জায়গা না, কোনো সম্পদ অর্জনের জায়গা না; শুধুই ত্যাগ, জনসেবা, সমাজসেবা ও রাষ্ট্রসেবার জায়গা। আবারও বলছি—‘রাজনীতি ত্যাগের জায়গা, ভোগের নয়’—এই কথা যেন তরুণসমাজ মনে রাখে।
লেখক: প্রকৌশলী
গত কয়েক দশকের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের আচার-আচরণ মোটের ওপর বিশ্লেষণ করলে মোটা দাগে বলা যায়, গত শতাব্দীর রাজনীতিবিদদের চেয়ে তাঁরা আলাদা বৈশিষ্ট্যের। রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের এই পরিবর্তনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা দরকার।
রাজনীতিবিদেরাই রাজনীতি করবেন। রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে, রাজনীতি কোনো ব্যবসা না। বলতে পারেন রাজনীতি সমাজসেবা, জনসেবা অথবা রাষ্ট্রসেবাও বটে। লোভ-লালসা, নিজের স্বার্থ, পরিবারের স্বার্থ—সবকিছু বিসর্জন দিয়েই রাজনীতিবিদদের উচিত রাজনীতি করা। রাজনীতির ব্যাকরণও তা-ই বলে। গত শতাব্দী ও তার আগে থেকে, রাজনীতিবিদদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নিঃস্বার্থভাবে সমাজ বা রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের চিন্তা-চেতনায়, মনোজগতে কাজ করত দেশসেবা, জনসেবা অথবা সমাজসেবা। শত বছরের ঐতিহ্য বিশ্লেষণ করলে আমাদের দেশের, আমি বলতে চাইছি এই উপমহাদেশের বহু রাজনীতিবিদ আছেন ডাকসাইটে, তাঁদের মেধা-প্রজ্ঞা-জ্ঞান-গরিমা ছিল প্রশ্নাতীত। এইসব রাজনীতিবিদ সম্পর্কে বহু গবেষণা হয়েছে, যুগ যুগ ধরে গবেষণা চলছে তাঁদের কৃতকর্ম নিয়ে, তাঁদের আদর্শ নিয়ে। তাঁদের আদর্শ, কৃতকর্ম বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে তাঁদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ, জাতি ও দেশকে ভালোবাসার গল্প।
মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ এই উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের সবকিছু বিশ্লেষণ করলে তাঁদের সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দাঁড়াবে, সেটা হলো তাঁদের কৃতকর্মের চিন্তা-চেতনার ফসল বর্তমান সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও আমাদের স্বাধীন দেশমাতৃকা। যাঁদের নাম বললাম তাঁরা যে খুব একটা অর্থসম্পদ রেখে গেছেন, তা কিন্তু বলা যাবে না। মহাত্মা গান্ধী বা জিন্নাহর ক্ষেত্রে এর তেমন কোনো প্রমাণ নেই। আমরা দেখেছি, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এত বড় আইনজীবী ছিলেন, বাংলার প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পদে ৫০ বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন; মৃত্যুর পরে তাঁর সম্পদের মধ্যে ছিল সেই সময়ের গোপীবাগের জরাজীর্ণ দোতলা বাড়ি।
বিগত শতকের রাজনীতিবিদদের পোশাক-আশাক, চলন-বলন, ভ্রমণ, খাদ্য গ্রহণ—সবকিছুই ছিল অনুকরণীয়। তাঁরা সব মানুষকে সম্মান করে কথা বলতেন, অন্য দলের রাজনীতিবিদদেরও তাঁরা সম্মান করতেন। দ্বিমতের কারণে কোনো দিনই কারও ওপর চড়াও হতেন না। ভিন্নমতের ভিন্ন দলের লোকজনের সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। সেই উদাহরণ আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যেও দেখেছি।
মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, কমরেড মণি সিংহ, প্রফেসর মোজাফফর আহমদ, জিয়াউর রহমান—এইসব মহান রাজনীতিবিদদের কিছু কর্ম বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে তাঁদের ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা; চিন্তা-চেতনায়, মননে সব সময় ছিল দেশমাতৃকার কথা; সমাজের উন্নতি, সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। নিজের সম্পত্তি কত আছে, কত ছিল আর কত সম্পত্তি করতে হবে, এসবের কোনো ভাবনা ছিল না তাঁদের। একেবারেই সাদামাটা জীবন ছিল এইসব জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির। দল-মতনির্বিশেষে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গকে আমরা শ্রদ্ধা করি আজীবন। মনে হয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও তাঁদের ইতিহাস জেনে শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত করে।
আমাদের দেশে জাতীয় পর্যায়, এমনকি জেলা পর্যায়েও বহু রাজনীতিবিদ ছিলেন—দুই-তিন দশক আগেও—যাঁদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে একই রকম ফলাফল পাওয়া যাবে। তাঁরা কোনো সম্পদ অর্জনের জন্য, নিজের ব্যক্তিগত লোভ-লালসার জন্য, পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতি করেননি। এখনো সে রকম রাজনীতিবিদ জাতীয় পর্যায়ে এবং মফস্বল পর্যায়ে আছে, তবে তাঁদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলেই আজকের এই লেখার অবতারণা।
দুই-তিন দশক ধরে প্রায়ই শোনা যায়, কোন দল থেকে আপনি নমিনেশন পাবেন, সেই দল থেকে আপনাকে নমিনেশনটি কিনে আনতে হবে। বাস্তবে এটা কতটা সত্য জানি না, তবে বেশির ভাগ মানুষই মনে করে, নমিনেশন বেচাকেনার ব্যাপার, যিনি অধিক দাম দেবেন তাঁর কপালেই জুটবে নির্দিষ্ট দলের প্রতীক! সব ক্ষেত্রে না হলেও উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। আবার যাঁরা এইসব প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হন, তাঁরা নাকি বলেন, এই পদে তাঁর পূর্বসূরি কী পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছে, তাঁকে তার চেয়ে একটু বেশি সম্পদ অর্জন করতে হবে!
জাতীয় পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপি মহোদয়দের ক্ষেত্রে এ কথা এখন সবার কাছেই মোটামুটি একটি বিশ্বাসযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়েও একই রকম অবস্থা। সেখানেও নমিনেশনটা একই রকম পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা মনোনীত হবেন, পরিশেষে নির্বাচিত হবেন জনগণের দ্বারা, তাঁরা খাতা-কলম নিয়ে বসেন হিসাব করতে—নির্বাচনে কত ব্যয় করবেন, নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁর খরচ ওঠার পরে কত লাভ করতে পারবেন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য কী পরিমাণ ব্যয় করতে পারবেন। এই রকম চিন্তাধারা নিয়েই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদেরা নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সব ক্ষেত্রে না হলেও যদি এই রকম মনোবৃত্তির মানুষ ৫০ ভাগের কাছাকাছি হয়, তাহলেও সর্বনাশের দিকে ধাবিত হবে সমাজ-রাষ্ট্র।
আমরা শুধু সমাজ-রাষ্ট্রকে কলুষিত করছি না, রাজনীতি যে একটা মহৎ পেশা, এই পেশাকে আমরা কলুষিত করছি। রাজনীতিবিদদের প্রথম থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমি রাজনীতি করে কোনো অসৎ আয় করব না, আমার জীবন চলার জন্য যত সামান্য সম্পদ বা অর্থের দরকার, সেটুকুই আমাকে অর্জন করতে হবে। সব সময় ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে হবে।
কেউ যদি তাঁর নিজস্ব উপার্জিত অর্থ, যেমন আইন পেশা, ডাক্তারি পেশাসহ অন্যান্য পেশা ও পারিবারিক সম্পদ দিয়ে নিজের সংসার, কর্মজীবন পরিচালনা করতে পারেন, তাহলেই তাঁর রাজনীতি করা উচিত। তাহলে তিনি শুধু রাজনীতি দিয়েই সমাজের সেবা করতে পারবেন। যা কিছুই বলি না কেন, নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার মানসিকতা রক্ত, মাংসে, মস্তিষ্কে ও মনোজগতে থাকতে হয়। নিঃস্বার্থভাবে দেশসেবা, সমাজসেবা, সমাজ সংস্কার সবাই করতে পারে না। যাঁরা লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নিজের সময়-সম্পদ ব্যয় করে অপরের উপকারের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন—তাঁরাই আসুক রাজনীতি করতে।
রাজনীতিবিদদের অনেক মেধাবী হতে হয়। অর্থনীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, বহির্বিশ্বের পরিবর্তন—সবকিছুর ওপরই তাঁদের সম্যক জ্ঞান থাকতে হয়। শুধু রাজনীতি না, প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। যা কিছু সবার জন্য মঙ্গল, সেটা নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তা করতে হয়। রাজনীতিবিদের চরিত্র, আচার-আচরণ দেখে যেন সমাজ ভালো কিছু শেখে, তাহলেই রাজনীতি সার্থক হয়। যদি রাজনীতিবিদদের দেখে সমাজের মানুষ তাঁদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলেই মনে করতে হবে সেইসব রাজনীতিকের সবকিছু ব্যর্থ, তাঁদের রাজনীতিবিদ হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই; তাঁদের রাজনীতি মিথ্যার বেসাতির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
এ দেশে গত কয়েক দশকে যা কিছু ঘটে গেল, সবকিছুর শীর্ষেই ছিল রাজনীতিবিদদের চরিত্র, তাঁদের জ্ঞান-বিদ্যাবুদ্ধি, আচার-আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এই প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিকস’ ঢুকে গেছে। অর্থাৎ, পেশিশক্তি, জোরজবরদস্তি, চোখ রাঙানি, ভয়ভীতি দেখানো, যা কিছু মন্দ সবকিছুই ঢুকে গেছে এই রাজনীতির মধ্যে।
কলুষিত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আসতেই হবে। নইলে কৃষ্ণগহ্বরে পতিত হবে দেশ ও জাতি; ভবিষ্যৎ শুধু অন্ধকার হবে। এখন থেকেই আমরা চরিত্রবান, সৎ, মেধাবী মানুষদেরই রাজনীতিতে স্থান করে দিতে চাই। আমাদের দেশে এখনো সৎ, মেধাবী রাজনীতিবিদ আছেন। তাঁদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাঁদের পথ অনুসরণ করে নতুন প্রজন্ম সেই রকমভাবে তৈরি হবে। গত এক দশকে যেসব তরুণ রাজনীতিতে এসেছেন বা আসার চেষ্টা করছেন, তাঁদের এটা জানা উচিত—রাজনীতি কোনো ব্যবসার জায়গা না, কোনো সম্পদ অর্জনের জায়গা না; শুধুই ত্যাগ, জনসেবা, সমাজসেবা ও রাষ্ট্রসেবার জায়গা। আবারও বলছি—‘রাজনীতি ত্যাগের জায়গা, ভোগের নয়’—এই কথা যেন তরুণসমাজ মনে রাখে।
লেখক: প্রকৌশলী
পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরের লালপুর এলাকা দুটি লাগোয়া। এই দুই এলাকার দুটি হাসপাতালে দিন দিন ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ কেন ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে, তা এখনো অজানা। তবে ব্যাপারটি দুশ্চিন্তার বটে। এ নিয়ে ২ জুন আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ৭-এর পাতায়।
২১ ঘণ্টা আগেবাজেট নিয়ে এখন আর আগের মতো শোরগোল হয় না। কেউ মাথায় ছাতা রেখে টিভির সামনে বসে থাকেন না। সামাজিক মাধ্যমে দু-একটি চটকদার পোস্ট হয়, তারপর সেটিও থেমে যায়। অথচ বাজেট তো একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নকশা—কে কতটা পাবে, কে কতটা দেবে, কার ঘাড়ে কতটা চাপ বাড়বে, কার ঘরে ভাত-তরকারি থাকবে, কে থাকবে না খেয়ে।
২১ ঘণ্টা আগেচার দিনব্যাপী পাকিস্তান-ভারত সামরিক সংঘাতে পাকিস্তান শুধু নিজেকে সফলভাবে রক্ষা করতেই সক্ষম হয়নি, বরং পেহেলগামে সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার ভারতের উদ্দেশ্যকেও ব্যর্থ করে দিয়েছে। পারমাণবিক যুদ্ধের সীমার নিচে প্রচলিত যুদ্ধের পরিসর বাড়ানোর ভারতীয় অপচেষ্টা সফল হয়নি।
২১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ যেন পরিণত হয়েছে এক অলিখিত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে—যেখান থেকে বিরোধ, অভিযোগ আর অস্থিরতার যেন শেষ নেই। নাজমুল হাসান পাপনের দীর্ঘ শাসনের পর এলেন ফারুক আহমেদ, আর এবার আলোচনার কেন্দ্রে আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি এই পদ মানুষকে বিগড়ে দেয়? নাকি এ
২ দিন আগে