মামুনুর রশীদ
শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা দেয় সুর, লেখায় নতুন কথা, অভিনয়ে নতুন পথ, হাতের তুলিতে এক নতুন ছবি, দেহ দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব নৃত্যভঙ্গিমা।
এই মানুষগুলো কোথাও অবহেলার পাত্র আবার কোথাও জনবন্দনা, ভালো লাগার একটা বিষয়ে পরিণত হন। সেই শিল্পীদের আবার প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। কতটুকু স্বাধীনতার প্রয়োজন? সমাজভেদে সেই স্বাধীনতার মাত্রাও নির্ধারিত হয়। তবে দেখা যায়, যে সমাজে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই, সেই সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাও সংকুচিত। পরিবার থেকেই তাঁরা বুঝতে শেখেন, সবকিছু বলা যাবে না, সবকিছু করা যাবে না। করতে গেলেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এভাবেই তাঁরা বড় হতে তাকেন।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা শাস্তির ভয় করেন না, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা সব সময়ই এই দুরন্ত সাহসের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পরিবার, সমর্থক সবাই মিলে নানা ব্যবস্থা করে শুধু শিল্পীদের নয়, বিরুদ্ধবাদীদের জন্যও রেখে দিয়েছে নানা শাস্তি। আধুনিক কালে কারাগার ছাড়াও নানা ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ, শিল্পীর প্রকাশের নানা পথ রুদ্ধ করার আয়োজন। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসলে সবই—যেমন গণমাধ্যম, নানা কালাকানুন, বিচারব্যবস্থাসহ বিরুদ্ধবাদীদের সব ধরনের কণ্ঠরোধের কৌশল।
আমাদের মতো দেশে প্রথমেই দেখা যায়, জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গণমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার—যাঁরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ভিন্নমতের কারণে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। যেসব সরকারি প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেখানেও তাঁরা নিষিদ্ধ হয়ে যান। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁদের লেখা প্রকাশিত হলেও বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আছে। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বের বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও ওই সব শিল্পীর কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েই থাকে। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও শিল্পী স্বাধীন হন না।
আজকের দিনে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, সংগীতের রেকর্ডিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চায় না কেউ। তাই তাদের চারণক্ষেত্রটাও কালে কালে সংকুচিত হতে থাকে। শিল্প সৃষ্টির আরেকটি বড় ব্যাপার হলো প্রকাশ করা। প্রকাশের পথটাই যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন শিল্পী বিমর্ষ হন, হতাশ হন এবং একসময় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে থাকেন। এমনি করে গণতন্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বের অনেক জায়গায়ই অসংখ্য শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন।
কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে সরকার ভিন্নমুখী বিষয়কেও প্রয়োজনীয় মনে করে। এই যে ভিন্নতা, তাতে সমাজের তো নয়ই, ক্ষমতাবানদেরও কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা একমুখী প্রচার বা মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা বন্ধুত্ববাদেও বিশ্বাস করে না। তাই সংকীর্ণতার এক গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্ষমতাটাও হারায়। নানা মতবাদ দর্শন থেকে শিল্পীরাও একটা রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এই বিশ্বাসের ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই বিশ্বাস কখনো জলাবদ্ধতার জন্ম দেয়। তাই নিজের বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে মানতে চায় না। আর অন্যের বিশ্বাসকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে আর বাধা দেয় না, বরং সমর্থন করতে থাকে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের শিল্পীরা বিরোধী দলের কোনো শিল্পীকে যদি গণমাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। এটা যে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। একজন ভালো চিকিৎসক যদি অন্য মতের হন, তাঁকেও যথাযোগ্য জায়গায় স্থান দেওয়া হয় না। আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। তাই সরকারের চারপাশ ভরে যায় তাঁবেদারে। এই প্রবণতা যে শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই ঘটে তা নয়, সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা-ই ঘটেছে। এই ঘটে যাওয়ার ফলাফলে সমাজে শুধু আলোচনা যে রুদ্ধ হয়েছে, তা-ই নয়, সব জায়গায়ই একটা সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সামষ্টিক প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে কিন্তু মানবিক শক্তি ক্রমেই কমে এসেছে। প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, কিন্তু তার ব্যবহারের জন্য যে সংস্কৃতিটা প্রয়োজন, তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যদি সংস্কৃতিতে উন্নত না হয়, তাহলে এসবের সুফল সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। পরমতসহিষ্ণুতার কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও যদি সামাজিক চর্চায় স্থান না পায়, তাহলে তার লাভ দেখা যায় না। বরং এসবের অভাবে মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমরা দেখতে পেয়েছি দুটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মারমুখী হয়ে অন্য কলেজের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এটি একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। ওই শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতির শিক্ষা পায়নি। শিক্ষকেরাও তাঁদের আচরণ ও শিক্ষাপদ্ধতি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাবিত করতে পারেননি। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রচার যেমন হচ্ছে না, তেমনি অনুষ্ঠানে নানা মত, নানা জনের শিল্পীদের আমন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের ইশারার দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।
আমরা সব সময়ই একটা পরিবর্তনের আশায় থাকি। এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকে মূলত কিছু আদর্শিক পরিবর্তন, যা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু যদি সংস্কারকাজটি সমাজে যথার্থ মূল্যবোধের সৃষ্টি না করে, তাহলে তা অর্থহীন প্রচেষ্টাতেই বিলীন হয়ে যাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ এখন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিনটিরও পৃথক সত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা কিন্তু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে স্পষ্ট গুরুত্ব দেবেন কি?
শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা দেয় সুর, লেখায় নতুন কথা, অভিনয়ে নতুন পথ, হাতের তুলিতে এক নতুন ছবি, দেহ দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব নৃত্যভঙ্গিমা।
এই মানুষগুলো কোথাও অবহেলার পাত্র আবার কোথাও জনবন্দনা, ভালো লাগার একটা বিষয়ে পরিণত হন। সেই শিল্পীদের আবার প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। কতটুকু স্বাধীনতার প্রয়োজন? সমাজভেদে সেই স্বাধীনতার মাত্রাও নির্ধারিত হয়। তবে দেখা যায়, যে সমাজে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই, সেই সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাও সংকুচিত। পরিবার থেকেই তাঁরা বুঝতে শেখেন, সবকিছু বলা যাবে না, সবকিছু করা যাবে না। করতে গেলেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এভাবেই তাঁরা বড় হতে তাকেন।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা শাস্তির ভয় করেন না, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা সব সময়ই এই দুরন্ত সাহসের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পরিবার, সমর্থক সবাই মিলে নানা ব্যবস্থা করে শুধু শিল্পীদের নয়, বিরুদ্ধবাদীদের জন্যও রেখে দিয়েছে নানা শাস্তি। আধুনিক কালে কারাগার ছাড়াও নানা ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ, শিল্পীর প্রকাশের নানা পথ রুদ্ধ করার আয়োজন। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসলে সবই—যেমন গণমাধ্যম, নানা কালাকানুন, বিচারব্যবস্থাসহ বিরুদ্ধবাদীদের সব ধরনের কণ্ঠরোধের কৌশল।
আমাদের মতো দেশে প্রথমেই দেখা যায়, জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গণমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার—যাঁরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ভিন্নমতের কারণে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। যেসব সরকারি প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেখানেও তাঁরা নিষিদ্ধ হয়ে যান। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁদের লেখা প্রকাশিত হলেও বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আছে। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বের বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও ওই সব শিল্পীর কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েই থাকে। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও শিল্পী স্বাধীন হন না।
আজকের দিনে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, সংগীতের রেকর্ডিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চায় না কেউ। তাই তাদের চারণক্ষেত্রটাও কালে কালে সংকুচিত হতে থাকে। শিল্প সৃষ্টির আরেকটি বড় ব্যাপার হলো প্রকাশ করা। প্রকাশের পথটাই যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন শিল্পী বিমর্ষ হন, হতাশ হন এবং একসময় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে থাকেন। এমনি করে গণতন্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বের অনেক জায়গায়ই অসংখ্য শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন।
কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে সরকার ভিন্নমুখী বিষয়কেও প্রয়োজনীয় মনে করে। এই যে ভিন্নতা, তাতে সমাজের তো নয়ই, ক্ষমতাবানদেরও কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা একমুখী প্রচার বা মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা বন্ধুত্ববাদেও বিশ্বাস করে না। তাই সংকীর্ণতার এক গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্ষমতাটাও হারায়। নানা মতবাদ দর্শন থেকে শিল্পীরাও একটা রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এই বিশ্বাসের ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই বিশ্বাস কখনো জলাবদ্ধতার জন্ম দেয়। তাই নিজের বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে মানতে চায় না। আর অন্যের বিশ্বাসকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে আর বাধা দেয় না, বরং সমর্থন করতে থাকে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের শিল্পীরা বিরোধী দলের কোনো শিল্পীকে যদি গণমাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। এটা যে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। একজন ভালো চিকিৎসক যদি অন্য মতের হন, তাঁকেও যথাযোগ্য জায়গায় স্থান দেওয়া হয় না। আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। তাই সরকারের চারপাশ ভরে যায় তাঁবেদারে। এই প্রবণতা যে শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই ঘটে তা নয়, সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা-ই ঘটেছে। এই ঘটে যাওয়ার ফলাফলে সমাজে শুধু আলোচনা যে রুদ্ধ হয়েছে, তা-ই নয়, সব জায়গায়ই একটা সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সামষ্টিক প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে কিন্তু মানবিক শক্তি ক্রমেই কমে এসেছে। প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, কিন্তু তার ব্যবহারের জন্য যে সংস্কৃতিটা প্রয়োজন, তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যদি সংস্কৃতিতে উন্নত না হয়, তাহলে এসবের সুফল সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। পরমতসহিষ্ণুতার কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও যদি সামাজিক চর্চায় স্থান না পায়, তাহলে তার লাভ দেখা যায় না। বরং এসবের অভাবে মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমরা দেখতে পেয়েছি দুটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মারমুখী হয়ে অন্য কলেজের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এটি একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। ওই শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতির শিক্ষা পায়নি। শিক্ষকেরাও তাঁদের আচরণ ও শিক্ষাপদ্ধতি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাবিত করতে পারেননি। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রচার যেমন হচ্ছে না, তেমনি অনুষ্ঠানে নানা মত, নানা জনের শিল্পীদের আমন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের ইশারার দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।
আমরা সব সময়ই একটা পরিবর্তনের আশায় থাকি। এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকে মূলত কিছু আদর্শিক পরিবর্তন, যা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু যদি সংস্কারকাজটি সমাজে যথার্থ মূল্যবোধের সৃষ্টি না করে, তাহলে তা অর্থহীন প্রচেষ্টাতেই বিলীন হয়ে যাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ এখন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিনটিরও পৃথক সত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা কিন্তু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে স্পষ্ট গুরুত্ব দেবেন কি?
সম্পর্ক তৈরি হয় পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে। এই বোঝাপড়া হতে হয় একে অন্যকে বুঝতে পারা, নিজের সমস্যাকে অন্যে যেন অনুভব করতে পারে বা বুঝতে পারে, আবার অপরের সমস্যাও আমি যেন হৃদয়ঙ্গম করতে পারি, এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে সম্পর্ক তৈরি হয়। এটা যেমন ব্যক্তিজীবনে, তেমন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও একই ব্যাপার।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো নেপথ্য। আমাদের যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটির প্রয়োগ করেছি। ঘটনার নেপথ্যে কে বা নেপথ্যে থেকে কেউ কোনো ঘটনার কলকাঠি নাড়ছে কি না তা উদ্ঘাটনে আমরা নেপথ্য শব্দটির বহুল ব্যবহার লক্ষ করি। কিন্তু নেপথ্যে শব্দটির মূল অর্থ কী? আমরা কি নেপথ্য শব্দের মূল অর্থ ছাপিয়ে...
৫ ঘণ্টা আগেএকটি ব্যাটারির ক্ষমতা সম্পর্কে সবারই কম-বেশি ধারণা আছে। ব্যাটারিতে টর্চ জ্বলে, ব্যাটারিতে জেনারেটর চলে, আবার চলে রিকশাও। ইদানীং আবার দেখা যাচ্ছে এই ব্যাটারির ক্ষমতায় রিকশাচালকেরাও দাপটে চলছেন! পাঠক, আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকেন তাহলে এর নমুনা দেখতে পাবেন ছবি ও ভিডিওর কল্যাণে।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে মৌলবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এক দিক দিয়ে এটা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। কেননা বাংলাদেশের অভ্যুদয় ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান ও পরাভূত করে। কিন্তু পরাভূত শক্তি আবার ফিরে এসেছে। তার পরাজয়টা কেবল যে সশস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ঘটেছিল তা নয়, ঘটেছিল আদর্শিকভাবেও। তাহলে কেন তার পুনরুত্থান?
১ দিন আগে