মিশকাতুল ইসলাম মুমু
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিজিপিএ (কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) প্রতিযোগিতা যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ। সেখানে এখন গ্রেডই হয়ে উঠেছে সাফল্যের একমাত্র মানদণ্ড। যাদের সিজিপিএ উচ্চ, তাদের মেধাবী হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু শুধু ভালো ফলাফলই মেধাবী হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে ভালো ফলাফল না-ও করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে সিজিপিএ হয়ে উঠেছে মেধা মূল্যায়নের একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ভালো ফল না করার কারণে মানসিক চাপে ভুগছে।
কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাবাদী মানসিকতার শিক্ষক বিশেষ শিক্ষার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে প্রকৃত মেধাবীরা ভালো ফল করতে পারে না। কারণ শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের বদৌলতে তারা ভালো নম্বর পেয়ে থাকে। আর প্রকৃত মেধাবীরা কম নম্বর পায় শিক্ষকের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে। আবার ভালো ফলাফলের জন্য অনেক শিক্ষার্থী নির্ভর করছে কোচিং, গাইড বই, মুখস্থ নির্ভরতা এবং সিনিয়রদের তৈরি করা নোটের ওপর। এতে তাদের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। আর্থিক কারণে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালানোর কারণে অনেকে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। তবে বেশি আতঙ্কে থাকে মাঝামাঝি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। একটু কিছু হলেই বুঝি রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে আর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী নিজেকে ব্যর্থ ভেবে নিজের জীবনকে শেষ করে দিচ্ছে, আর যারা বা বেঁচেও যায়, তারা না বাঁচার মতোই বেঁচে থাকে। সমাজের চোখে, পরিবারের কাছে, আত্মীয়স্বজনের কাছে বোঝা হয়ে যায়। তাই অনেক শিক্ষার্থী ভালো গ্রেড পেতে নিরুপায় হয়ে নকল, প্ল্যাজারিজম এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নির্মাণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অস্বাস্থ্যকর সংস্কৃতি শুধু মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে না, একই সঙ্গে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যকেও ধ্বংস করছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শুধু সিজিপিএর জন্যই পড়াশোনা করছে—এমন চিত্র ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে তৈরি নিচ্ছে মানসিক চাপ, হীনম্মন্যতা ও হতাশা। অনেক সময় এই হতাশা আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কখনোই শুধু সিজিপিএ দিয়ে নির্ধারিত হতে পারে না—আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই সত্যটি দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু একাডেমিক ফল নয়, বরং গবেষণা, প্রেজেন্টেশন, গ্রুপ প্রজেক্ট, কমিউনিটি সার্ভিস ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়, তেমনি আমাদের দেশেও এমন একটি বহুমাত্রিক ও মানবিক মূল্যায়ন পদ্ধতির বিকাশ জরুরি হয়ে পড়েছে। কোর্স কারিকুলামে গবেষণাভিত্তিক ও সমস্যা সমাধানমূলক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের মানবিক শিক্ষাদানে উৎসাহিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং পরামর্শ সেবার ব্যবস্থা করা দরকার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ, ভালো সিজিপিএ অর্জন করতে না পারলে কারও জীবন ধ্বংস হতে পারে না—এই বোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত করা জরুরি। ভালো সিজিপিএর জন্য কেউ যেন নিজেকে শেষ করে না দেয়, সে দায়িত্ব ব্যক্তি ও সমাজ—দুই পক্ষেরই। সিজিপিএ মূল্যায়নের একটি মাধ্যম—তবে একমাত্র নয়।
আশার কথা, দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখন সিজিপিএর পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল স্কিল, নেতৃত্বগুণ ও যোগাযোগ দক্ষতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। সব জায়গায় এটা কার্যকর করা গেলে প্রকৃত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে, সেটাই প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিজিপিএ (কিউমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) প্রতিযোগিতা যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। উচ্চশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো গবেষণা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ। সেখানে এখন গ্রেডই হয়ে উঠেছে সাফল্যের একমাত্র মানদণ্ড। যাদের সিজিপিএ উচ্চ, তাদের মেধাবী হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু শুধু ভালো ফলাফলই মেধাবী হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে ভালো ফলাফল না-ও করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে সিজিপিএ হয়ে উঠেছে মেধা মূল্যায়নের একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ভালো ফল না করার কারণে মানসিক চাপে ভুগছে।
কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাবাদী মানসিকতার শিক্ষক বিশেষ শিক্ষার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে প্রকৃত মেধাবীরা ভালো ফল করতে পারে না। কারণ শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের বদৌলতে তারা ভালো নম্বর পেয়ে থাকে। আর প্রকৃত মেধাবীরা কম নম্বর পায় শিক্ষকের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণে। আবার ভালো ফলাফলের জন্য অনেক শিক্ষার্থী নির্ভর করছে কোচিং, গাইড বই, মুখস্থ নির্ভরতা এবং সিনিয়রদের তৈরি করা নোটের ওপর। এতে তাদের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। আর্থিক কারণে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালানোর কারণে অনেকে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। তবে বেশি আতঙ্কে থাকে মাঝামাঝি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। একটু কিছু হলেই বুঝি রেজাল্ট খারাপ হয়ে যাবে আর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী নিজেকে ব্যর্থ ভেবে নিজের জীবনকে শেষ করে দিচ্ছে, আর যারা বা বেঁচেও যায়, তারা না বাঁচার মতোই বেঁচে থাকে। সমাজের চোখে, পরিবারের কাছে, আত্মীয়স্বজনের কাছে বোঝা হয়ে যায়। তাই অনেক শিক্ষার্থী ভালো গ্রেড পেতে নিরুপায় হয়ে নকল, প্ল্যাজারিজম এমনকি শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নির্মাণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অস্বাস্থ্যকর সংস্কৃতি শুধু মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে না, একই সঙ্গে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যকেও ধ্বংস করছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শুধু সিজিপিএর জন্যই পড়াশোনা করছে—এমন চিত্র ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে তৈরি নিচ্ছে মানসিক চাপ, হীনম্মন্যতা ও হতাশা। অনেক সময় এই হতাশা আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কখনোই শুধু সিজিপিএ দিয়ে নির্ধারিত হতে পারে না—আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই সত্যটি দিন দিন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু একাডেমিক ফল নয়, বরং গবেষণা, প্রেজেন্টেশন, গ্রুপ প্রজেক্ট, কমিউনিটি সার্ভিস ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়, তেমনি আমাদের দেশেও এমন একটি বহুমাত্রিক ও মানবিক মূল্যায়ন পদ্ধতির বিকাশ জরুরি হয়ে পড়েছে। কোর্স কারিকুলামে গবেষণাভিত্তিক ও সমস্যা সমাধানমূলক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের মানবিক শিক্ষাদানে উৎসাহিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং পরামর্শ সেবার ব্যবস্থা করা দরকার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ, ভালো সিজিপিএ অর্জন করতে না পারলে কারও জীবন ধ্বংস হতে পারে না—এই বোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত করা জরুরি। ভালো সিজিপিএর জন্য কেউ যেন নিজেকে শেষ করে না দেয়, সে দায়িত্ব ব্যক্তি ও সমাজ—দুই পক্ষেরই। সিজিপিএ মূল্যায়নের একটি মাধ্যম—তবে একমাত্র নয়।
আশার কথা, দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখন সিজিপিএর পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল স্কিল, নেতৃত্বগুণ ও যোগাযোগ দক্ষতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। সব জায়গায় এটা কার্যকর করা গেলে প্রকৃত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে, সেটাই প্রত্যাশা।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ডিসেম্বর আর জুন নিয়ে যে বচসা (বচসা বলাই শ্রেয়, এটাকে সুস্থ মস্তিষ্কের আলোচনা বলার কোনো সুযোগ নেই) শুরু হয়েছে, তার অন্তর্নিহিত কারণ বোঝা দায়। অনেক ইউটিউবারই এই প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং তাঁদের মতো করে আলোচনা করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন...
১৮ ঘণ্টা আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক আধার। ৭০০ একর বেষ্টিত এই প্রতিষ্ঠানে প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে প্রগাঢ় বন্ধন, তা উচ্চশিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ নিশ্চিত করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত...
১৮ ঘণ্টা আগেএকসময় যাকে কেবল বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভাবা হতো, সেই ফেসবুক এখন আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন হয়ে উঠেছে। বিশেষত, সংবাদ ও তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকা দিন দিন শুধু শক্তিশালীই হচ্ছে না, বরং প্রশ্ন উঠছে, মূলধারার গণমাধ্যম কি ক্রমেই...
১৮ ঘণ্টা আগেরাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তাহলে সেই সাধারণ জনগণকে প্রতিদিন ভোগান্তির ভেতর যারা ফেলে, তারা কি আদৌ রাজনৈতিক দল? নাকি মুখে মুখে জনগণের কথা বলা সুবিধাবাদী দল? এই প্রশ্নটি রইল অতি ডান, মধ্যপন্থী ও বাম—সব দলের প্রতি। অন্য দেশেও মানুষ আন্দোলন করে, বিশেষ করে যদি ইউরোপের কথা বলি, সেখানে রাজপথের মাঝে খোলা
২ দিন আগে