মফিদুল হক
নীলোৎপল সাধ্যের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১৭ মার্চ। তিনি তাঁর সংগীতজীবনের মধ্য গগনে খসে পড়েছিলেন শিল্পচর্চা ও শিল্পসাধনায় ব্রতী অনুগামী অনুজ পরম্পরা তৈরির কর্মযজ্ঞ পালন থেকে। হালে শিল্পপ্রসারে প্রযুক্তি অনেক সুযোগ ও সংযোগ তৈরি করেছে, সে কারণে শিল্পে স্নাত হওয়ার অনেক দরজা খুলে গেছে, শিল্পচর্চায় যুক্ত হওয়ার পরিসরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও অধরা রয়ে যায় বিশাল আরেক ব্যাপ্তি, যেখানে পৌঁছাতে লাগে অন্য পন্থা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগের বাস্তব প্রক্রিয়া, যার কোনো বিকল্প নেই। সংগীত তেমনই এক শিল্পমাধ্যম, ভারতীয় সংগীত উদ্ভবকাল থেকে বহমান রয়েছে গুরু-শিষ্য পরম্পরা ধারণা করে। ভজন-সাধন পদ্ধতি ধারণ করে সংগীতের পথচলা, যেখানে সদ্গুরুর ভূমিকা অসীম এবং গুরু-শিষ্য পরম্পরাতেই চলে এর বহমান ধারা। গুরু পথ দেখাবেন বটে, তবে শিষ্য যখন সাধক হয়ে উঠবেন তিনি তখন হবেন নতুন পথের অভিযাত্রী, ছাপিয়ে যাবেন গুরুকে, কিংবা পরিশীলিতভাবে বলা যায় গুরুর কাছ থেকে অর্জিত বিদ্যা অন্তরে ধারণ করে খুলে দেবেন আরেক পরিসর। সামাজিক সংযোগের প্রযুক্তি এখানে সহায়ক বটে, তবে পরম্পরার সাধনা কোনোভাবে উপেক্ষা করবার নয়।
সংগীতগুণী নীলোৎপল সাধ্যের (১৯৫৫-২০২০) অবদান স্মরণকালে এমন অবতরণিকা তাঁর সংগীতজীবন থেকে উঠে আসে। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা দূর ধোবাউড়ায় তাঁর জন্ম ও প্রাথমিক বিকাশ। যেখানে সমতল এসে আনত হয়েছে পাহাড়ের কাছে, আর পাহাড় মিশেছে সমভূমিতে, সেই দুর্গম বঙ্গভিটায় আনুষ্ঠানিক সংগীতের চর্চা বা পরিচয় লাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তারপরও গান পৌঁছেছিল ধোবাউড়ায় ট্রানজিস্টার রেডিওতে ঝংকৃত আকাশবাণীর সংগীতশিক্ষার আসরের সুবাদে, পঙ্কজ মল্লিক শেখাতেন গান রোববার সকালের ছুটির দিনের আসরে, সেই গানে আলোড়িত হয়েছিলেন নীলোৎপল। স্কুলের পাঠ শেষ করে ময়মনসিংহে অধ্যয়নকালে পেলেন দুই সংগীতগুণীর সান্নিধ্য, আলোকময় নাহা এবং নূরুল আনোয়ার, ময়মনসিংহের সমৃদ্ধ সংগীত-ঐতিহ্যের দুই কৃতিমান পুরুষ। তাঁরাই নবীন নীলোৎপলকে সুরের মায়াজালে জড়িয়েছিলেন, দিয়েছিলেন গানের দীক্ষা। আরেক দিক থেকে তাঁরা ছিলেন ব্যতিক্রমী, পেশাগত ও সামাজিক নানা কাজে যুক্ত, আলোকময় নাহা বামপন্থী রাজনীতিবিদ, উদীচীর অন্যতম কান্ডারি, স্বাধীনতার পর ময়মনসিংহবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন শহরের মেয়র। নূরুল আনোয়ার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ক্রিকেটপ্রেমী ও বিশ্লেষক, আরও নানা কাজের কাজি। তাঁদের মাধ্যমে গানের পরিব্রাজক ওয়াহিদুল হকের সান্নিধ্যে আসা নীলোৎপলের, হয়ে উঠলেন তাঁর অনুরাগী ও ভক্ত এবং গুরুর একান্ত প্রিয় শিষ্য। গানের বিশেষভাবে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ও প্রসারে ওয়াহিদুল হকের চেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ হলো শান্তিনিকেতনের সংগীতগুরু রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে ঢাকায় নিয়ে আসা এবং ঝলমলে এক সাধনক্ষেত্র তৈরি করে তোলায়। সেই থেকে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে শুরু হয় নীলোৎপল সাধ্যের যুগলবন্দি, বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ও প্রসারে গুরু-শিষ্যের অবদান দৃষ্টির বাইরে রয়ে গেছে, তবে তার সুফলভোগী গোটা সমাজ। ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা শহরে দুইয়ের সংগীতপ্রব্রজ্যা কতভাবে কত নবীন-নবীনার জীবন যে ছুঁয়ে গেছে, কে তার পরিমাপ করেছে!
২০০৭ সালে ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণের পর বাংলা গানের ফেরিওয়ালার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন নীলোৎপল সাধ্য, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের দেশব্যাপী শাখা সংগঠন অবলম্বন করে নিরন্তর গানের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নির্বাহ করেছেন তিনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে, বিশেষভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন গৃহবিবাগীর মতো স্বেচ্ছায় স্ব-তাগিদেই যেন তিনি গান নিয়ে পৌঁছে গেছেন জনপদ থেকে জনপদে, ছোট-বড় কত শহরে কত ছেলেমেয়ের অন্তরে তিনি যে সুরের বীজ রোপণ করে দিয়েছেন, ধরে ধরে শিখিয়েছেন গান, দেখিয়েছেন কীভাবে গানের গভীরে পৌঁছাতে হয়, যেমন সুরের দোলায় অবগাহনে, তেমনি গানের বাণীরূপের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীদের সামনে মেলে ধরেছেন পঞ্চকবির গান, বাংলা গানের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। ১৯৮১ সালে ময়মনসিংহে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজনে প্রথম যোগ দেন নীলোৎপল সাধ্য, শিক্ষার্থী প্রতিযোগী হিসেবে সবার নজর কাড়েন, তারপর ক্রমে তিনি বিকশিত করে তোলেন তাঁর শিল্পীসত্তা এবং একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন সম্মেলনের কর্মী ও সংগীত প্রসারে সর্বকাজে একান্ত নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। সম্মিলন পরিষদকে ঘিরে দেশব্যাপী যে প্রশিক্ষণ, সেখানে যুক্ত হন নীলোৎপল, হলেন ওয়াহিদুল হকের ছায়াসঙ্গী, তারপর বলা যায় একাই এক শ। শেষ দিকে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক হয়েও অনেক কাজ করেছেন, তবে সম্মিলন পরিষদই ছিল তাঁর সাধনকেন্দ্র।
অনেক স্বপ্ন ছিল নীলোৎপল সাধ্যের, অনেক বাসনা, চাকরি থেকে অবসরের পর গান নিয়ে তিনি মেতে থাকবেন সার্বক্ষণিক, এমনই ছিল তাঁর আকাঙ্ক্ষা। এই মেতে থাকা অর্থ নিজের শিল্পীসত্তার প্রচার নয়, বিশিষ্ট শিল্পী হয়ে ওঠার সব যোগ্যতা ও সামর্থ্য তাঁর ছিল, কিন্তু স্বয়ং শিল্পী হওয়ার বদলে দশজনকে শিল্পী করে তুলতেই তিনি নিজেকে নিবেদন করেছেন বেশি। কোনো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বেতনভুক কর্মী হিসেবে নয়, গানকে ভালোবেসে, গানের ভেতর দিয়ে বাঙালি সত্তার প্রকাশ, সুরের মায়াজালে বিচরণের আনন্দ এবং জনে জনে সংগীতের সেই বোধ ও সাধনমার্গ তৈরি করা—এসবেই ছিল তাঁর প্রাণের স্ফূর্তি। শিল্পী রয়েছেন অনেক, কিন্তু শিল্পসাধক খুব বেশি নয়। শিল্পের আনন্দরসে সমাজকে স্নাত ও দীক্ষিত করবার মতো যোগ্য সংগীতমানব তো মিলবে আরও কম। নীলোৎপল সাধ্যের চলে যাওয়া তাই সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, তবে তাঁর রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়েই সেই ক্ষতি পূরণের কাজ করতে হবে অন্যদের।
সংগীতশিক্ষণে নিজেকে পুরোপরি সমর্পণ করেছিলেন নীলোৎপল সাধ্য, গুরু ওয়াহিদুল হকের যোগ্য সাধনসঙ্গী ও উত্তরসূরি। সর্বভাবে গান-অন্তঃপ্রাণ ছিলেন নীলোৎপল সাধ্য, গানই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। আর সব ছাপিয়ে ছিল অপরের কণ্ঠে গান তুলে দেওয়ার আনন্দ। বাংলার কত জনপদে কত কিশোর-কিশোরী, নবীন-নবীনাকে তিনি যে সুরের দীক্ষা দিয়েছেন, সে এক বিশাল গোষ্ঠী। সবাই সমভাবে গান নিয়ে জীবনপথে চলতে পারবে না সত্য, তবে তাদের অন্তরে সব সময়ের জন্য গাঁথা রয়ে যাবে সুরের দীক্ষা, সুরের গুরুর কাছ থেকে পাওয়া পরম দান। সেখানেই আমরা ভরসা খুঁজি, বহু মানুষের অন্তরে জেগে আছেন অসাধারণ এক সংগীতসাধক, পরম্পরাতেই বেঁচে থাকবেন তিনি, যেমন বেঁচে রইবে বাংলা গান।
নীলোৎপল সাধ্যের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১৭ মার্চ। তিনি তাঁর সংগীতজীবনের মধ্য গগনে খসে পড়েছিলেন শিল্পচর্চা ও শিল্পসাধনায় ব্রতী অনুগামী অনুজ পরম্পরা তৈরির কর্মযজ্ঞ পালন থেকে। হালে শিল্পপ্রসারে প্রযুক্তি অনেক সুযোগ ও সংযোগ তৈরি করেছে, সে কারণে শিল্পে স্নাত হওয়ার অনেক দরজা খুলে গেছে, শিল্পচর্চায় যুক্ত হওয়ার পরিসরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও অধরা রয়ে যায় বিশাল আরেক ব্যাপ্তি, যেখানে পৌঁছাতে লাগে অন্য পন্থা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগের বাস্তব প্রক্রিয়া, যার কোনো বিকল্প নেই। সংগীত তেমনই এক শিল্পমাধ্যম, ভারতীয় সংগীত উদ্ভবকাল থেকে বহমান রয়েছে গুরু-শিষ্য পরম্পরা ধারণা করে। ভজন-সাধন পদ্ধতি ধারণ করে সংগীতের পথচলা, যেখানে সদ্গুরুর ভূমিকা অসীম এবং গুরু-শিষ্য পরম্পরাতেই চলে এর বহমান ধারা। গুরু পথ দেখাবেন বটে, তবে শিষ্য যখন সাধক হয়ে উঠবেন তিনি তখন হবেন নতুন পথের অভিযাত্রী, ছাপিয়ে যাবেন গুরুকে, কিংবা পরিশীলিতভাবে বলা যায় গুরুর কাছ থেকে অর্জিত বিদ্যা অন্তরে ধারণ করে খুলে দেবেন আরেক পরিসর। সামাজিক সংযোগের প্রযুক্তি এখানে সহায়ক বটে, তবে পরম্পরার সাধনা কোনোভাবে উপেক্ষা করবার নয়।
সংগীতগুণী নীলোৎপল সাধ্যের (১৯৫৫-২০২০) অবদান স্মরণকালে এমন অবতরণিকা তাঁর সংগীতজীবন থেকে উঠে আসে। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা দূর ধোবাউড়ায় তাঁর জন্ম ও প্রাথমিক বিকাশ। যেখানে সমতল এসে আনত হয়েছে পাহাড়ের কাছে, আর পাহাড় মিশেছে সমভূমিতে, সেই দুর্গম বঙ্গভিটায় আনুষ্ঠানিক সংগীতের চর্চা বা পরিচয় লাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তারপরও গান পৌঁছেছিল ধোবাউড়ায় ট্রানজিস্টার রেডিওতে ঝংকৃত আকাশবাণীর সংগীতশিক্ষার আসরের সুবাদে, পঙ্কজ মল্লিক শেখাতেন গান রোববার সকালের ছুটির দিনের আসরে, সেই গানে আলোড়িত হয়েছিলেন নীলোৎপল। স্কুলের পাঠ শেষ করে ময়মনসিংহে অধ্যয়নকালে পেলেন দুই সংগীতগুণীর সান্নিধ্য, আলোকময় নাহা এবং নূরুল আনোয়ার, ময়মনসিংহের সমৃদ্ধ সংগীত-ঐতিহ্যের দুই কৃতিমান পুরুষ। তাঁরাই নবীন নীলোৎপলকে সুরের মায়াজালে জড়িয়েছিলেন, দিয়েছিলেন গানের দীক্ষা। আরেক দিক থেকে তাঁরা ছিলেন ব্যতিক্রমী, পেশাগত ও সামাজিক নানা কাজে যুক্ত, আলোকময় নাহা বামপন্থী রাজনীতিবিদ, উদীচীর অন্যতম কান্ডারি, স্বাধীনতার পর ময়মনসিংহবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন শহরের মেয়র। নূরুল আনোয়ার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ক্রিকেটপ্রেমী ও বিশ্লেষক, আরও নানা কাজের কাজি। তাঁদের মাধ্যমে গানের পরিব্রাজক ওয়াহিদুল হকের সান্নিধ্যে আসা নীলোৎপলের, হয়ে উঠলেন তাঁর অনুরাগী ও ভক্ত এবং গুরুর একান্ত প্রিয় শিষ্য। গানের বিশেষভাবে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ও প্রসারে ওয়াহিদুল হকের চেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ হলো শান্তিনিকেতনের সংগীতগুরু রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে ঢাকায় নিয়ে আসা এবং ঝলমলে এক সাধনক্ষেত্র তৈরি করে তোলায়। সেই থেকে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে শুরু হয় নীলোৎপল সাধ্যের যুগলবন্দি, বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ও প্রসারে গুরু-শিষ্যের অবদান দৃষ্টির বাইরে রয়ে গেছে, তবে তার সুফলভোগী গোটা সমাজ। ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা শহরে দুইয়ের সংগীতপ্রব্রজ্যা কতভাবে কত নবীন-নবীনার জীবন যে ছুঁয়ে গেছে, কে তার পরিমাপ করেছে!
২০০৭ সালে ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণের পর বাংলা গানের ফেরিওয়ালার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন নীলোৎপল সাধ্য, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের দেশব্যাপী শাখা সংগঠন অবলম্বন করে নিরন্তর গানের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নির্বাহ করেছেন তিনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে, বিশেষভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন গৃহবিবাগীর মতো স্বেচ্ছায় স্ব-তাগিদেই যেন তিনি গান নিয়ে পৌঁছে গেছেন জনপদ থেকে জনপদে, ছোট-বড় কত শহরে কত ছেলেমেয়ের অন্তরে তিনি যে সুরের বীজ রোপণ করে দিয়েছেন, ধরে ধরে শিখিয়েছেন গান, দেখিয়েছেন কীভাবে গানের গভীরে পৌঁছাতে হয়, যেমন সুরের দোলায় অবগাহনে, তেমনি গানের বাণীরূপের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীদের সামনে মেলে ধরেছেন পঞ্চকবির গান, বাংলা গানের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। ১৯৮১ সালে ময়মনসিংহে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজনে প্রথম যোগ দেন নীলোৎপল সাধ্য, শিক্ষার্থী প্রতিযোগী হিসেবে সবার নজর কাড়েন, তারপর ক্রমে তিনি বিকশিত করে তোলেন তাঁর শিল্পীসত্তা এবং একপর্যায়ে হয়ে ওঠেন সম্মেলনের কর্মী ও সংগীত প্রসারে সর্বকাজে একান্ত নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। সম্মিলন পরিষদকে ঘিরে দেশব্যাপী যে প্রশিক্ষণ, সেখানে যুক্ত হন নীলোৎপল, হলেন ওয়াহিদুল হকের ছায়াসঙ্গী, তারপর বলা যায় একাই এক শ। শেষ দিকে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক হয়েও অনেক কাজ করেছেন, তবে সম্মিলন পরিষদই ছিল তাঁর সাধনকেন্দ্র।
অনেক স্বপ্ন ছিল নীলোৎপল সাধ্যের, অনেক বাসনা, চাকরি থেকে অবসরের পর গান নিয়ে তিনি মেতে থাকবেন সার্বক্ষণিক, এমনই ছিল তাঁর আকাঙ্ক্ষা। এই মেতে থাকা অর্থ নিজের শিল্পীসত্তার প্রচার নয়, বিশিষ্ট শিল্পী হয়ে ওঠার সব যোগ্যতা ও সামর্থ্য তাঁর ছিল, কিন্তু স্বয়ং শিল্পী হওয়ার বদলে দশজনকে শিল্পী করে তুলতেই তিনি নিজেকে নিবেদন করেছেন বেশি। কোনো পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বেতনভুক কর্মী হিসেবে নয়, গানকে ভালোবেসে, গানের ভেতর দিয়ে বাঙালি সত্তার প্রকাশ, সুরের মায়াজালে বিচরণের আনন্দ এবং জনে জনে সংগীতের সেই বোধ ও সাধনমার্গ তৈরি করা—এসবেই ছিল তাঁর প্রাণের স্ফূর্তি। শিল্পী রয়েছেন অনেক, কিন্তু শিল্পসাধক খুব বেশি নয়। শিল্পের আনন্দরসে সমাজকে স্নাত ও দীক্ষিত করবার মতো যোগ্য সংগীতমানব তো মিলবে আরও কম। নীলোৎপল সাধ্যের চলে যাওয়া তাই সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, তবে তাঁর রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়েই সেই ক্ষতি পূরণের কাজ করতে হবে অন্যদের।
সংগীতশিক্ষণে নিজেকে পুরোপরি সমর্পণ করেছিলেন নীলোৎপল সাধ্য, গুরু ওয়াহিদুল হকের যোগ্য সাধনসঙ্গী ও উত্তরসূরি। সর্বভাবে গান-অন্তঃপ্রাণ ছিলেন নীলোৎপল সাধ্য, গানই ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। আর সব ছাপিয়ে ছিল অপরের কণ্ঠে গান তুলে দেওয়ার আনন্দ। বাংলার কত জনপদে কত কিশোর-কিশোরী, নবীন-নবীনাকে তিনি যে সুরের দীক্ষা দিয়েছেন, সে এক বিশাল গোষ্ঠী। সবাই সমভাবে গান নিয়ে জীবনপথে চলতে পারবে না সত্য, তবে তাদের অন্তরে সব সময়ের জন্য গাঁথা রয়ে যাবে সুরের দীক্ষা, সুরের গুরুর কাছ থেকে পাওয়া পরম দান। সেখানেই আমরা ভরসা খুঁজি, বহু মানুষের অন্তরে জেগে আছেন অসাধারণ এক সংগীতসাধক, পরম্পরাতেই বেঁচে থাকবেন তিনি, যেমন বেঁচে রইবে বাংলা গান।
কৃষিকে ঘিরেই নেদারল্যান্ডসের যত কাজকারবার। কৃষি গবেষণা, কৃষি প্রযুক্তির বিকাশ থেকে শুরু করে কৃষি কর্মকাণ্ড ও কৃষি-বাণিজ্যের এক সূতিকাগার নেদারল্যান্ডস। কাজের সূত্রে বেশ কয়েকবার নেদারল্যান্ডস যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার।
২০ ঘণ্টা আগে-গল্পটা এমন—লেনিনকে ঈশ্বরের মুখোমুখি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, তিনি স্বর্গে যাবেন না নরকে যাবেন, তা নির্ধারণ করা। ঈশ্বরের দূত খুব জোর গলায় বলছিলেন, লেনিন একজন পাপী। তাঁর মতে, লেনিন সারা জীবন ঈশ্বরের বদনাম করেছেন।
২০ ঘণ্টা আগেবরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১৬ মার্চ আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ মাদ্রাসার কোনো অস্তিত্ব নেই।
২১ ঘণ্টা আগেআমার এই লেখা যেদিন ছাপা হবে, সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
২ দিন আগে