সেলিম জাহান
‘অতি যত্নের সঙ্গে, প্রভূত সম্মানের সঙ্গে এবং অনেক ভালোবাসায় মানুষটিকে আমরা এইখানেই সমাহিত করেছি। আপনাদের দেশের ছেলেটি আমাদের দেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত’, বলতে বলতে বৃদ্ধের গলা ধরে আসে। আমি সমাধির শ্বেতপাথরের ফলকের দিকে তাকাই। ঠাস বুনোনো লেখা, অনেক অক্ষরের কালো অংশ উঠে গেছে, তবু পড়া যায়।
বড় মমতার সঙ্গে সেখানে লেখা, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর করপোরাল আবদুল আজিজ কর্তব্যরত অবস্থায় ডিলি সমুদ্র-উপকূলে একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে ২০০০ সালের ৩ আগস্টে জীবন দিয়েছেন। তাঁর জন্ম ঢাকায়। করপোরাল আবদুল আজিজের আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক।’
আমার মনে পড়ে যায়, গত কয়েক দিন বিকেলে বেশ কয়েকবার ডিলির সমুদ্রতটে গিয়েছি। সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে ছোট ছোট ছাউনি দেওয়া দোকানের সামনে বসে সমুদ্র থেকে সদ্যধৃত গরম মাছভাজা খেয়েছি। খেতে খেতে চোখ গেছে ঠিক ব্রাজিলের রিওর মতো অনতিদূরের পাহাডের মাথায় যিশুখ্রিষ্টের শ্বেতমূর্তির দিকে—যার উল্লেখ সমাধিফলকে আছে।
সমাধির পাশে গ্রামবাসীর লাগানো সাদা কফিফুলের দিকে তাকাই। ফলকের কাছের বেগুনি বাগানবিলাস হাওয়ায় দুলে যেন প্রয়াত বাংলাদেশি তরুণটিকে আদর করছে। ডান দিকের বিরাট গাছটার মাথায় অচেনা এক পাখি ডেকে ওঠে। আমি সে পাখিকে খুঁজি। তারপর মুখ উঁচিয়ে নীল আকাশের দিকে চোখ মেলে রাখি। না, না, আকাশ দেখতে নয়, চোখের উদ্গত অশ্রু চাপতে। আবেগে আমার কণ্ঠ বুজে আসে। পাশে দাঁড়ানো আমার বন্ধু পূর্ব তিমুরে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এলিজাবেথ সে আবেগ টের পায়। আস্তে করে সে আমার হাত ধরে।
এলিজাবেথই এ সমাধিস্থলে আমাকে নিয়ে এসেছে। পূর্ব তিমুরের রাজধানী ডিলি থেকে একটি প্রাদেশিক শহরের দিকে যাচ্ছিলাম। তখনই এলিজাবেথ মিয়া আবদুল আজিজের গল্প বলে। সেটা ২০০৪ সাল। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পূর্ব তিমুরের সরকারকে তাদের পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ-বিশ্বব্যাংক যৌথ বিশেষজ্ঞ দলের দলনেতা হিসেবে ডিলিতে গিয়েছিলাম দুই সপ্তাহের জন্য। ডিলি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত তখন। হোটেল বলতে কিছু নেই। থাকছিলাম সমুদ্রে, এক জাহাজে।
আমাদের আশপাশে তখন ভিড় জমে গেছে। শান্ত গ্রামটির নানা কোণ থেকে সাধারণ আবালবৃদ্ধবনিতা এসেছে আমাদের আগমনের খবর পেয়ে। চার বছর আগের এ ঘটনার কথা নানান জন বলছেন নানানভাবে। আমি প্রয়াত আবদুল আজিজের দেশের লোক জেনে কী তাঁদের কৃতজ্ঞতা, কত আপ্লুত তাঁরা! দু-একজন আমার হাত ধরল, কয়েকজন আমার গায়ে হাত রাখল, তাঁদের ভাষায় জানাল আজিজের বীরত্বগাথা।
একপর্যায়ে একটি কিশোরী সামনে এগিয়ে এল—বড় কমনীয় সে মুখ। পিঠের ওপরে সাপের মতো দুটি মোটা বেণি ঝুলছে। সে কিছু বলল তার ভাষায়, একজন অনুবাদ করে দিল সে কথাগুলো। মেয়েটি বলল, ‘করপোরাল আজিজ যখন শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন, তখন আমি তাঁর পাশে ছিলাম। ওর মুখে শেষ জলটুকু আমিই দিয়েছি’, মেয়েটির গলা ধরে আসে। ‘আপনি ওর পরিবারকে বলবেন, কোনো অযত্নে, কোনো অসম্মানে এবং কোনো ভালোবাসাহীনতার মাঝ দিয়ে করপোরাল আজিজ পৃথিবী ত্যাগ করে যাননি। আমরা ওই সবকিছু নিয়েই তাঁকে ঘিরে ছিলাম।’ বলতে বলতে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, জলধারা নামে তার দুই গণ্ড বেয়ে। আমি উঠে মেয়েটির মাথায় হাত রাখি, আদর করে দিই।
আমি যখন করপোরাল আজিজের সমাধিস্থল ছেড়ে আসি, তখন আমার মনের মধ্যে একদিকে যেমন একটি দুঃখবোধ ছিল, তেমনি অন্যদিকে একটি গর্ববোধ ছিল। একজন তরুণ অসময়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন—এটা ভেবেই আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল। সারাটা জীবন তাঁর সামনে পড়ে ছিল। সেই সঙ্গে আজিজের সাহসিকতা এবং সে সাহসিকতা যে বিস্মৃত হয়নি, সেটা ভেবে আমার গর্ববোধ হচ্ছিল। আমার জেনে ভালো লাগছিল যে তাঁর স্মৃতি বড় গর্বের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ হৃদয়ে ধরে রেখেছেন ও অভূতপূর্ব একটি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে তাঁরা আজিজকে স্মরণ করেন। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার আর কী চাওয়ার আছে?
২০০০ সালের ৭ মার্চ যখন করপোরাল আবদুল আজিজের মৃত্যুসংবাদ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এসে পৌঁছায়, তখন অভাবনীয় একটি ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তদানীন্তন সভাপতি মালয়েশিয়ার হাসামি আগাম একটি শোকবার্তা গ্রহণ করেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি সে শোকবার্তা পাঠ করেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ করপোরাল মিয়া মোহাম্মদ আবদুল আজিজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্য করপোরাল আজিজ পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘ ক্রান্তিকালীন সরকারে কর্মরত অবস্থায় শান্তির জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বাংলাদেশি সদস্যরা সব সময়ই সম্মান, পেশাগত দক্ষতা এবং অঙ্গীকার নিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশি ভূখণ্ডে অজানা শত্রুসম্পৃক্ত যেসব বিপদ হতে পারে, তার মোকাবিলায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা কখনো পিছপা হননি। বহু ক্ষেত্রে মিয়া মোহাম্মদ আবদুল আজিজের মতো তাঁদেরও চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ২০২২ সাল নাগাদ বিভিন্ন শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করার সময় ১৬৫ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন দিয়েছেন এবং ২৫৮ জন আহত হয়েছেন। বিশ্বের সংঘাত-বিক্ষুব্ধ ও যুদ্ধাক্রান্ত দেশগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তাঁরা কর্মরত ছিলেন।
এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের ৬০টির বেশি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। ২০২২ সাল অবধি ১০টির বেশি মিশনে ৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁরা কাজের দ্বারা শুধু নিজেদের জন্য সুনাম ও স্বীকৃতি বয়ে আনেননি; বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষের জন্যও গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছেন।
প্রতিবছরের ২৯ মে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়। এদিন যেসব বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সম্মান জানাই এবং যেসব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মানবতার জন্য কাজ করতে গিয়ে জীবন দান করেছেন, তাঁদের স্মরণ করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি, কারণ শান্তির জন্য আত্মাহুতি দেওয়া একজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর গল্পগাথা শোনার বিশেষ সুযোগ আমার হয়েছিল। করপোরাল মিয়া আবদুল আজিজ নামের সেই মানুষটি তাঁর স্বদেশ ভূমি থেকে বহু দূরের একটি দেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
‘অতি যত্নের সঙ্গে, প্রভূত সম্মানের সঙ্গে এবং অনেক ভালোবাসায় মানুষটিকে আমরা এইখানেই সমাহিত করেছি। আপনাদের দেশের ছেলেটি আমাদের দেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত’, বলতে বলতে বৃদ্ধের গলা ধরে আসে। আমি সমাধির শ্বেতপাথরের ফলকের দিকে তাকাই। ঠাস বুনোনো লেখা, অনেক অক্ষরের কালো অংশ উঠে গেছে, তবু পড়া যায়।
বড় মমতার সঙ্গে সেখানে লেখা, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর করপোরাল আবদুল আজিজ কর্তব্যরত অবস্থায় ডিলি সমুদ্র-উপকূলে একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে ২০০০ সালের ৩ আগস্টে জীবন দিয়েছেন। তাঁর জন্ম ঢাকায়। করপোরাল আবদুল আজিজের আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক।’
আমার মনে পড়ে যায়, গত কয়েক দিন বিকেলে বেশ কয়েকবার ডিলির সমুদ্রতটে গিয়েছি। সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে ছোট ছোট ছাউনি দেওয়া দোকানের সামনে বসে সমুদ্র থেকে সদ্যধৃত গরম মাছভাজা খেয়েছি। খেতে খেতে চোখ গেছে ঠিক ব্রাজিলের রিওর মতো অনতিদূরের পাহাডের মাথায় যিশুখ্রিষ্টের শ্বেতমূর্তির দিকে—যার উল্লেখ সমাধিফলকে আছে।
সমাধির পাশে গ্রামবাসীর লাগানো সাদা কফিফুলের দিকে তাকাই। ফলকের কাছের বেগুনি বাগানবিলাস হাওয়ায় দুলে যেন প্রয়াত বাংলাদেশি তরুণটিকে আদর করছে। ডান দিকের বিরাট গাছটার মাথায় অচেনা এক পাখি ডেকে ওঠে। আমি সে পাখিকে খুঁজি। তারপর মুখ উঁচিয়ে নীল আকাশের দিকে চোখ মেলে রাখি। না, না, আকাশ দেখতে নয়, চোখের উদ্গত অশ্রু চাপতে। আবেগে আমার কণ্ঠ বুজে আসে। পাশে দাঁড়ানো আমার বন্ধু পূর্ব তিমুরে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এলিজাবেথ সে আবেগ টের পায়। আস্তে করে সে আমার হাত ধরে।
এলিজাবেথই এ সমাধিস্থলে আমাকে নিয়ে এসেছে। পূর্ব তিমুরের রাজধানী ডিলি থেকে একটি প্রাদেশিক শহরের দিকে যাচ্ছিলাম। তখনই এলিজাবেথ মিয়া আবদুল আজিজের গল্প বলে। সেটা ২০০৪ সাল। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পূর্ব তিমুরের সরকারকে তাদের পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ায় পরামর্শ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ-বিশ্বব্যাংক যৌথ বিশেষজ্ঞ দলের দলনেতা হিসেবে ডিলিতে গিয়েছিলাম দুই সপ্তাহের জন্য। ডিলি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত তখন। হোটেল বলতে কিছু নেই। থাকছিলাম সমুদ্রে, এক জাহাজে।
আমাদের আশপাশে তখন ভিড় জমে গেছে। শান্ত গ্রামটির নানা কোণ থেকে সাধারণ আবালবৃদ্ধবনিতা এসেছে আমাদের আগমনের খবর পেয়ে। চার বছর আগের এ ঘটনার কথা নানান জন বলছেন নানানভাবে। আমি প্রয়াত আবদুল আজিজের দেশের লোক জেনে কী তাঁদের কৃতজ্ঞতা, কত আপ্লুত তাঁরা! দু-একজন আমার হাত ধরল, কয়েকজন আমার গায়ে হাত রাখল, তাঁদের ভাষায় জানাল আজিজের বীরত্বগাথা।
একপর্যায়ে একটি কিশোরী সামনে এগিয়ে এল—বড় কমনীয় সে মুখ। পিঠের ওপরে সাপের মতো দুটি মোটা বেণি ঝুলছে। সে কিছু বলল তার ভাষায়, একজন অনুবাদ করে দিল সে কথাগুলো। মেয়েটি বলল, ‘করপোরাল আজিজ যখন শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন, তখন আমি তাঁর পাশে ছিলাম। ওর মুখে শেষ জলটুকু আমিই দিয়েছি’, মেয়েটির গলা ধরে আসে। ‘আপনি ওর পরিবারকে বলবেন, কোনো অযত্নে, কোনো অসম্মানে এবং কোনো ভালোবাসাহীনতার মাঝ দিয়ে করপোরাল আজিজ পৃথিবী ত্যাগ করে যাননি। আমরা ওই সবকিছু নিয়েই তাঁকে ঘিরে ছিলাম।’ বলতে বলতে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, জলধারা নামে তার দুই গণ্ড বেয়ে। আমি উঠে মেয়েটির মাথায় হাত রাখি, আদর করে দিই।
আমি যখন করপোরাল আজিজের সমাধিস্থল ছেড়ে আসি, তখন আমার মনের মধ্যে একদিকে যেমন একটি দুঃখবোধ ছিল, তেমনি অন্যদিকে একটি গর্ববোধ ছিল। একজন তরুণ অসময়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন—এটা ভেবেই আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল। সারাটা জীবন তাঁর সামনে পড়ে ছিল। সেই সঙ্গে আজিজের সাহসিকতা এবং সে সাহসিকতা যে বিস্মৃত হয়নি, সেটা ভেবে আমার গর্ববোধ হচ্ছিল। আমার জেনে ভালো লাগছিল যে তাঁর স্মৃতি বড় গর্বের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ হৃদয়ে ধরে রেখেছেন ও অভূতপূর্ব একটি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে তাঁরা আজিজকে স্মরণ করেন। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার আর কী চাওয়ার আছে?
২০০০ সালের ৭ মার্চ যখন করপোরাল আবদুল আজিজের মৃত্যুসংবাদ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এসে পৌঁছায়, তখন অভাবনীয় একটি ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তদানীন্তন সভাপতি মালয়েশিয়ার হাসামি আগাম একটি শোকবার্তা গ্রহণ করেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি সে শোকবার্তা পাঠ করেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ করপোরাল মিয়া মোহাম্মদ আবদুল আজিজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্য করপোরাল আজিজ পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘ ক্রান্তিকালীন সরকারে কর্মরত অবস্থায় শান্তির জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বাংলাদেশি সদস্যরা সব সময়ই সম্মান, পেশাগত দক্ষতা এবং অঙ্গীকার নিয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদেশি ভূখণ্ডে অজানা শত্রুসম্পৃক্ত যেসব বিপদ হতে পারে, তার মোকাবিলায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা কখনো পিছপা হননি। বহু ক্ষেত্রে মিয়া মোহাম্মদ আবদুল আজিজের মতো তাঁদেরও চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ২০২২ সাল নাগাদ বিভিন্ন শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করার সময় ১৬৫ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন দিয়েছেন এবং ২৫৮ জন আহত হয়েছেন। বিশ্বের সংঘাত-বিক্ষুব্ধ ও যুদ্ধাক্রান্ত দেশগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তাঁরা কর্মরত ছিলেন।
এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের ৬০টির বেশি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন। ২০২২ সাল অবধি ১০টির বেশি মিশনে ৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁরা কাজের দ্বারা শুধু নিজেদের জন্য সুনাম ও স্বীকৃতি বয়ে আনেননি; বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষের জন্যও গৌরব বয়ে নিয়ে এসেছেন।
প্রতিবছরের ২৯ মে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়। এদিন যেসব বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সম্মান জানাই এবং যেসব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মানবতার জন্য কাজ করতে গিয়ে জীবন দান করেছেন, তাঁদের স্মরণ করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি, কারণ শান্তির জন্য আত্মাহুতি দেওয়া একজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর গল্পগাথা শোনার বিশেষ সুযোগ আমার হয়েছিল। করপোরাল মিয়া আবদুল আজিজ নামের সেই মানুষটি তাঁর স্বদেশ ভূমি থেকে বহু দূরের একটি দেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
৬ ঘণ্টা আগেঢুলিভিটা থেকে ধামরাই উপজেলার একটি গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যাব সীতি গ্রামের আলাদিন পার্কে। হঠাৎ নাকে একটা উৎকট গন্ধ এসে লাগল। যতই এগোচ্ছি গন্ধটা তত বেশি উগ্র হয়ে উঠছে। নাক দিয়ে ঢুকছে দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস, পেটের ভেতরটা যেন ঘুলঘুল করে উঠছে। কারণটা কী? একটু এগিয়ে যেতেই ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে গেল। রাস্তার
৬ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের সিদ্ধান্তে অনেকের মধ্যে যেমন স্বস্তি দেখা যাচ্ছে, তেমনি কারও কারও মধ্যে অস্বস্তি নেই, তা-ও নয়। দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে একটি পক্ষ এটিকে অর্জন বলে বিবেচনা
৬ ঘণ্টা আগেএকটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাত্র এক বছরের মধ্যে প্রশ্নটি সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। কারণ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক দেশ এবং ‘দায় ও দরদের সমাজ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল, গত এক বছরের চলার পথ তার ধারেকাছেও নেই। বরং এক বছর ধরে দেশবাসী দেখে...
১ দিন আগে