কামরুল হাসান
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সীমান্ত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের সফর ও মতবিনিময় মানবিক করিডর নিয়ে নতুন প্রশ্ন ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই করিডরের প্রস্তাবকে মানবিক প্রয়াস হিসেবে তুলে ধরা হলেও বাস্তবে এর আড়ালে ‘ভিন্নমুখী কৌশলগত’ উদ্দেশ্য বিদ্যমান বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
তাঁদের মতে, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্সকে গোপনে সমর্থন দিয়ে চীনের প্রভাব কমাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আরাকান অঞ্চলের ভেতরে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগ যেমন— কিউকফিউ গভীর সমুদ্র বন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইনসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে প্রতিযোগিতামূলক এবং উদ্বেগজনক। এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইনে ‘হিউম্যানিটারিয়ান করিডর’ বা মানবিক করিডর বাস্তবায়নের নামে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে চাপে ফেলতে চাইতে পারে ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে এই অঞ্চলে চীন, ভারত, রাশিয়া— এই তিন প্রভাবশালী রাষ্ট্রের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। সুতরাং রাখাইন অভিমুখে কোনো মানবিক করিডর বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, করিডরের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো পরাশক্তি আরাকান আর্মি কিংবা পিডিএফকে গোপনে অস্ত্র বা রসদ সরবরাহ করে, তাহলে বাংলাদেশ পরোক্ষভাবে প্রক্সি যুদ্ধের অংশে পরিণত হতে পারে। এটি কেবল সীমান্ত নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
করিডর খোলার পর এর ওপর বাংলাদেশ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে না পারলে এটি অস্ত্রপাচার, জঙ্গি অনুপ্রবেশ, মানবপাচার ও সীমান্ত উত্তেজনার উৎস হতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, এমন দুর্বল ব্যবস্থাপনা একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, যেমনটি ঘটেছিল সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়। ১৯৮০ সালে ওই যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ব্যবহৃত তথাকথিত মানবিক করিডর পরে তালেবান ও আল-কায়েদার উত্থানের উর্বর জমিন হয়েছিল।
সার্বভৌমত্বের দৃষ্টিকোণ থেকেও করিডরটি জটিল প্রশ্নের জন্ম দেয়। কারণ, মিয়ানমার সরকার করিডরকে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, যা সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ উসকে দিতে পারে। ভারত বা চীন এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মিয়ানমারকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের উপর কৌশলগত চাপপ্রয়োগ করতে পারে। বিশেষত অতীতে সেন্টমার্টিনকে ঘিরে যেসব পরিকল্পনার আভাস পাওয়া গেছে, তা থেকে এই ধারণা করা একেবারে অমূলক হবে না যে, এমন পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের কৌশল এগিয়ে নিতে পারে।
এই করিডর দীর্ঘমেয়াদে চলমান থাকলে বাংলাদেশ এমন রাজনৈতিক ও সামরিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পদ ব্যয় হবে। এই প্রক্রিয়ায় দেশ আরও বেশি বিদেশ নির্ভরতা ও চাপের মধ্যে পড়তে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়লে চীন ও ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ বৈরী অবস্থানে চলে যেতে পারে। এতে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, বিনিয়োগ ও কৌশলগত সহযোগিতা ঝুঁকিতে পড়বে।
অন্যদিকে, করিডর ব্যবহার করে আরাকান আর্মি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। পাশাপাশি করিডরকে ঘিরে মাদক পাচার, জঙ্গিবাদ ও অস্ত্র সরবরাহের মত অবৈধ কার্যক্রমও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
এই প্রেক্ষাপটে মানবিক করিডর বাস্তবায়নে যেকোনো দুর্বলতা বা ব্যর্থতা বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কাছে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। অতীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনার যে নজির দেখা গেছে, করিডর ইস্যুতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
সব মিলিয়ে, ‘মানবিক করিডর’ মানবিক প্রয়াস হলেও এর ভূ-রাজনৈতিক অভিঘাত ও নিরাপত্তা ঝুঁকি এতটাই সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত কৌশলী ও বাস্তববাদী অবস্থান গ্রহণ করা। রাজনৈতিক আবেগ নয়, প্রয়োজন বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে পূর্ণ সক্ষমতা নিশ্চিত করা।
লেখক: সাংবাদিক ও গল্পকার
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সীমান্ত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের সফর ও মতবিনিময় মানবিক করিডর নিয়ে নতুন প্রশ্ন ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এই করিডরের প্রস্তাবকে মানবিক প্রয়াস হিসেবে তুলে ধরা হলেও বাস্তবে এর আড়ালে ‘ভিন্নমুখী কৌশলগত’ উদ্দেশ্য বিদ্যমান বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
তাঁদের মতে, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্সকে গোপনে সমর্থন দিয়ে চীনের প্রভাব কমাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আরাকান অঞ্চলের ভেতরে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগ যেমন— কিউকফিউ গভীর সমুদ্র বন্দর ও তেল-গ্যাস পাইপলাইনসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে প্রতিযোগিতামূলক এবং উদ্বেগজনক। এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইনে ‘হিউম্যানিটারিয়ান করিডর’ বা মানবিক করিডর বাস্তবায়নের নামে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে চাপে ফেলতে চাইতে পারে ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে এই অঞ্চলে চীন, ভারত, রাশিয়া— এই তিন প্রভাবশালী রাষ্ট্রের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। সুতরাং রাখাইন অভিমুখে কোনো মানবিক করিডর বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তে সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, করিডরের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো পরাশক্তি আরাকান আর্মি কিংবা পিডিএফকে গোপনে অস্ত্র বা রসদ সরবরাহ করে, তাহলে বাংলাদেশ পরোক্ষভাবে প্রক্সি যুদ্ধের অংশে পরিণত হতে পারে। এটি কেবল সীমান্ত নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
করিডর খোলার পর এর ওপর বাংলাদেশ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে না পারলে এটি অস্ত্রপাচার, জঙ্গি অনুপ্রবেশ, মানবপাচার ও সীমান্ত উত্তেজনার উৎস হতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, এমন দুর্বল ব্যবস্থাপনা একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, যেমনটি ঘটেছিল সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়। ১৯৮০ সালে ওই যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ব্যবহৃত তথাকথিত মানবিক করিডর পরে তালেবান ও আল-কায়েদার উত্থানের উর্বর জমিন হয়েছিল।
সার্বভৌমত্বের দৃষ্টিকোণ থেকেও করিডরটি জটিল প্রশ্নের জন্ম দেয়। কারণ, মিয়ানমার সরকার করিডরকে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, যা সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ উসকে দিতে পারে। ভারত বা চীন এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মিয়ানমারকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের উপর কৌশলগত চাপপ্রয়োগ করতে পারে। বিশেষত অতীতে সেন্টমার্টিনকে ঘিরে যেসব পরিকল্পনার আভাস পাওয়া গেছে, তা থেকে এই ধারণা করা একেবারে অমূলক হবে না যে, এমন পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের কৌশল এগিয়ে নিতে পারে।
এই করিডর দীর্ঘমেয়াদে চলমান থাকলে বাংলাদেশ এমন রাজনৈতিক ও সামরিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পদ ব্যয় হবে। এই প্রক্রিয়ায় দেশ আরও বেশি বিদেশ নির্ভরতা ও চাপের মধ্যে পড়তে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়লে চীন ও ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ বৈরী অবস্থানে চলে যেতে পারে। এতে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব, বিনিয়োগ ও কৌশলগত সহযোগিতা ঝুঁকিতে পড়বে।
অন্যদিকে, করিডর ব্যবহার করে আরাকান আর্মি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। পাশাপাশি করিডরকে ঘিরে মাদক পাচার, জঙ্গিবাদ ও অস্ত্র সরবরাহের মত অবৈধ কার্যক্রমও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
এই প্রেক্ষাপটে মানবিক করিডর বাস্তবায়নে যেকোনো দুর্বলতা বা ব্যর্থতা বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কাছে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। অতীতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনার যে নজির দেখা গেছে, করিডর ইস্যুতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
সব মিলিয়ে, ‘মানবিক করিডর’ মানবিক প্রয়াস হলেও এর ভূ-রাজনৈতিক অভিঘাত ও নিরাপত্তা ঝুঁকি এতটাই সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত কৌশলী ও বাস্তববাদী অবস্থান গ্রহণ করা। রাজনৈতিক আবেগ নয়, প্রয়োজন বাস্তবসম্মত কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে পূর্ণ সক্ষমতা নিশ্চিত করা।
লেখক: সাংবাদিক ও গল্পকার
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ সরগরম। একাধিক প্যানেল, অসংখ্য পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগানে মুখরিত ক্যাম্পাস। দীর্ঘদিন অবহেলিত এই কেন্দ্রীয় সংসদকে শিক্ষার্থীরা আবার আলোচনায় টেনে এনেছেন, আবারও সামনে এসেছে জাতীয় রাজনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব। আসলে ডাকসুর নাম এলেই চোখে ভেসে ওঠে এর গৌরবোজ্জ্বল..
১৪ ঘণ্টা আগেযে বিষয়ে আজ লিখব বলে ভাবছি, সে সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি সামান্য, প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। তবু দুই দিন যাবৎ মনটা খুবই খারাপ হয়ে আছে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে। বলে রাখা ভালো, ক্লাস থ্রি পর্যন্ত আমি মাদ্রাসায় পড়েছি। আমার বড় চাচা ছিলেন একজন ইসলামিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ।
১৪ ঘণ্টা আগেভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে, চুল কেটে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। আর এই অপকর্মে নেতৃত্ব দিয়েছেন এক বিএনপি নেতা!
১৪ ঘণ্টা আগেমুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বললেই আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্টের ‘দোসর’ তকমা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তা তো বটেই, কখনো কখনো ব্যক্তি বা জনসমষ্টির ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনাও ঘটানো হচ্ছে। একই রকমভাবে আক্রান্ত হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বিশেষ মতবাদের বিপক্ষের ব্যক্তি-গোষ্ঠী এবং নারীসমাজসহ ধর্মীয়...
২ দিন আগে