রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো গামছা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ গামছা। যাপিত জীবনের বিবিধ জীবনাচার, সামাজিকতা, উৎসব-পার্বণ, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বহু ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। কালের পরিক্রমায় গামছা ভিন্ন মাত্রা এবং আকৃতি পেলেও বাঙালি জীবনে গামছার চাহিদা এখনো হ্রাস পায়নি। কিন্তু কীভাবে এল গামছা শব্দটি? গামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অপরিহার্য নিত্য-উপকরণ হয়ে উঠল, চলুন জানি এর আদ্যোপান্ত।
গামছা শব্দটি এসেছে ‘গা মোছা’ শব্দ থেকে। এটি দেশি শব্দ ও বিশেষ্য পদ। গামছা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো গা মোছার কাপড়। সংস্কৃত ‘গাত্রমুঞ্চন’ থেকে ‘গা মোছা’ হয়ে গামছা শব্দের ব্যুৎপত্তি। গামছাকে হিন্দিতে ‘আঙ্গোছা’ও বলা হয়। এটি এসেছে ‘অঙ্গমোছা’ শব্দ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের মালদহতে গামছা অর্থে ‘পানছা’ শব্দটি চালু রয়েছে। এটি এসেছে ‘পানিমোছা’ শব্দ থেকে। গামছা সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় গজ লম্বা আর ৪.৩ থেকে ১.৫ গজ চওড়া হয়ে থাকে। এই বস্ত্রে রীতিমতো রঙের ছড়াছড়ি—লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আর চেকের বাহারি নকশা। এর সৌন্দর্য এবং প্রয়োজনীয়তা এমন যে, নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সবাই এটি ব্যবহার করতে পারেন।
কোনো এককালে গামছাকে ‘শাঙালি’ বলা হতো। অঞ্চল ও জাতিভেদে গামছার নামেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন: গামোছা, আঙ্গছা, গাত্রমুঞ্চন, গাত্রমার্জনী, কাছলা, খাড়ু গামছা, তঙ্গালী, সেঁওয়ালি, উড়ান গামছা, সামষলী গামছা প্রভৃতি। গামছা সম্পর্কে ‘ঢাকাই মসলিন’ গ্রন্থে লেখক ড. আবদুল করিম বলেন, ‘গা মোছা থেকেই গামছা শব্দের উৎপত্তি।’
গামছার ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে ইতিহাস অনেকটাই অকর্ষিত। ধারণা করা হয়, যখন থেকে মানুষ কাপড়ের ব্যবহার করতে শিখেছে, তখন থেকেই গামছার প্রচলন শুরু। তবে, এখনকার মতো এত বহুবিচিত্র রঙের কারুকাজ করা গামছা ছিল না। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িষ্যায় গামছার বহুল প্রচলন দেখা যায়। সাধারণত গামছা সেলাইবিহীন হলেও, ভারতের ওড়িষ্যায় সেলাই করা গামছার প্রচলন রয়েছে। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ লীলা গগৈ গামছার প্রচলন সম্পর্কে বলেন, ‘অহোম রাজার আমল (একাদশ শতক) থেকেই আসামে গামোচার প্রচলন শুরু হয়।’ আসামে গামছাকে বলা হয় ‘গামোচা’। সেখানকার গামছার জমিন সাদা এবং চারপাশে লাল সুতার কাজ করা থাকে। আসামের ইতিহাসবিষয়ক গবেষণায় এডওয়ার্ড গেইট রচিত ‘এ হিস্ট্রি অব আসাম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আকরগ্রন্থ। উক্ত গ্রন্থে গেইট বলেন, ‘১৭৩৯ সালে একটি গামোচার দাম ছিল ছয় পয়সা। সেখানকার বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় আচারাদি এবং উৎসবে গামোচার ব্যবহার দেখা যায়। বিশেষ করে বিহু উৎসবে যুবকেরা মাথায় গামোচা বেঁধে তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে অংশ নিত।’
এই বাংলায় আবহাওয়া বরাবরই উষ্ণ। তাই অত্র অঞ্চলের মানুষের পোশাক ছিল হালকা সুতিবস্ত্র। গামছার জন্ম বাংলার গরম ও উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। আমাদের গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজে পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল ধুতি, লুঙ্গি, চাদর, ফতুয়া, গামছা প্রভৃতি। সাধারণত গামছা পরিধান করেই তারা বিবিধ কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হতো। এককথায় গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে রয়েছে গামছা। গামছা কেবল গ্রামীণ জনপদেই নয়, একই সঙ্গে শহরেও গামছার বহুল প্রচলন রয়েছে। সাধারণত গামছা বোনা হয় তাঁতে। অধুনা মেশিনে তৈরি হলেও হাতে তৈরি গামছাই বেশি জনপ্রিয়। গামছা বোনার ক্ষেত্রে কেবল আমাদের দেশীয় তাঁতিরাই নয়, পাশাপাশি মণিপুরি, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, গারো প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা তাঁদের কল্পনার রং ও মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করে চলেছেন। এসব গামছার ভাঁজে ভাঁজে ফুটে থাকে একেকটি জনপদের সহস্র বছরের সঞ্চিত ঐতিহ্য, আবেগ ও স্মৃতিরাশি।
বাঙালির প্রবাদ-প্রবচন, ভাষা ও সাহিত্যেও গামছার ব্যবহার নিতান্ত কম নয়। যেমন: ‘গলায় গামছা দেওয়া’। এর অর্থ কাউকে লাঞ্ছিত, অপমান ও জবরদস্তি করে কোনো কিছুতে বাধ্য করা। ‘গামছা ডলা’র অর্থ গামছা দিয়ে মর্দন বা গোসলের সময় গামছা দিয়ে গা পরিষ্কার করা। ‘গামছা বাঁধা’র অর্থ গামছায় বাঁধা বা গামছা দিয়ে বাঁধা। বাংলা ভাষার বাগধারার আলোচনায় এমন আরও উদাহরণ রয়েছে। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে গামছা ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। আনুমানিক ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের রচনায় আমরা গামছা শব্দের দেখা পাই। তিনি লিখেছেন, ‘সীঙলি গামছা দিব ভূষিত কস্তরি।’ এ ছাড়া ফরাসি দোভাষী ওগুস্তে ওঁসার শব্দসংকলনে আমরা ‘গামচা’ শব্দটি পাই। পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের কবিতায় ‘গামছা-বাঁধা দই’-এর কথা পাই—‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর/বসতে দিব পিঁড়ে.../বাড়ির গাছের কবরি কলা/গামছা-বাঁধা দই।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘তীরে তীরে ছেলেমেয়ে নাহিবার কালে/গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।’
একসময় গামছা তৈরি হতো খটখটি তাঁত দিয়ে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাঁত কারখানা এখন অনেক বদলে গেছে। খটখটি তাঁতের সেই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবে প্রক্রিয়া যাই হোক, গামছার মূল উপাদান সুতা আর রং অপরিবর্তিত রয়েছে। গামছা তৈরির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সমাজে ‘কারিগর’ সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তবে তাচ্ছিল্য করে অনেকে তাঁদের ‘জোলা’ বলে ডাকেন। ‘জো’ তুলে, অর্থাৎ সুতায় সুতায় জোড়া দিয়ে যাঁরা মানুষের জন্য পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করেন, তাঁরাই এই জোলা। তাঁদের শ্রমে তৈরি গামছা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলেও, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রায়ই অগ্রাহ্য থাকে।
সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী নাকি একবার গামছা পরে জল তুলছিলেন। এক ভদ্রমহিলা তাচ্ছিল্য করে বললেন, ‘আপনি এত বড় বংশের ছেলে, আপনার বাবা এত বড়লোক, আপনি কি না একটা গামছা পরে এভাবে জল তুলছেন?’ শিবরাম হেসে বললেন, ‘বাপ তুললেন, বংশ তুললেন, তাতেও হলো না শেষে গামছা তুলে অপমান করলেন?’ কী কাণ্ড!
সাম্প্রতিক সময়ে বিবি রাসেলের উদ্যোগে ফ্যাশনের একটি শক্তিশালী প্রতীকে পরিণত হয়েছে গামছা। গামছার আরাম, স্থায়িত্ব আর বৈচিত্র্যময় ব্যবহার এটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় করেছে। গামছা এখন শুধু বাংলাদেশের ঐতিহ্য নয়, ফ্যাশনের একটি নতুন ভাষাও বটে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো গামছা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ গামছা। যাপিত জীবনের বিবিধ জীবনাচার, সামাজিকতা, উৎসব-পার্বণ, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বহু ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। কালের পরিক্রমায় গামছা ভিন্ন মাত্রা এবং আকৃতি পেলেও বাঙালি জীবনে গামছার চাহিদা এখনো হ্রাস পায়নি। কিন্তু কীভাবে এল গামছা শব্দটি? গামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অপরিহার্য নিত্য-উপকরণ হয়ে উঠল, চলুন জানি এর আদ্যোপান্ত।
গামছা শব্দটি এসেছে ‘গা মোছা’ শব্দ থেকে। এটি দেশি শব্দ ও বিশেষ্য পদ। গামছা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো গা মোছার কাপড়। সংস্কৃত ‘গাত্রমুঞ্চন’ থেকে ‘গা মোছা’ হয়ে গামছা শব্দের ব্যুৎপত্তি। গামছাকে হিন্দিতে ‘আঙ্গোছা’ও বলা হয়। এটি এসেছে ‘অঙ্গমোছা’ শব্দ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের মালদহতে গামছা অর্থে ‘পানছা’ শব্দটি চালু রয়েছে। এটি এসেছে ‘পানিমোছা’ শব্দ থেকে। গামছা সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় গজ লম্বা আর ৪.৩ থেকে ১.৫ গজ চওড়া হয়ে থাকে। এই বস্ত্রে রীতিমতো রঙের ছড়াছড়ি—লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আর চেকের বাহারি নকশা। এর সৌন্দর্য এবং প্রয়োজনীয়তা এমন যে, নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সবাই এটি ব্যবহার করতে পারেন।
কোনো এককালে গামছাকে ‘শাঙালি’ বলা হতো। অঞ্চল ও জাতিভেদে গামছার নামেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন: গামোছা, আঙ্গছা, গাত্রমুঞ্চন, গাত্রমার্জনী, কাছলা, খাড়ু গামছা, তঙ্গালী, সেঁওয়ালি, উড়ান গামছা, সামষলী গামছা প্রভৃতি। গামছা সম্পর্কে ‘ঢাকাই মসলিন’ গ্রন্থে লেখক ড. আবদুল করিম বলেন, ‘গা মোছা থেকেই গামছা শব্দের উৎপত্তি।’
গামছার ব্যবহার ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে ইতিহাস অনেকটাই অকর্ষিত। ধারণা করা হয়, যখন থেকে মানুষ কাপড়ের ব্যবহার করতে শিখেছে, তখন থেকেই গামছার প্রচলন শুরু। তবে, এখনকার মতো এত বহুবিচিত্র রঙের কারুকাজ করা গামছা ছিল না। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িষ্যায় গামছার বহুল প্রচলন দেখা যায়। সাধারণত গামছা সেলাইবিহীন হলেও, ভারতের ওড়িষ্যায় সেলাই করা গামছার প্রচলন রয়েছে। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ লীলা গগৈ গামছার প্রচলন সম্পর্কে বলেন, ‘অহোম রাজার আমল (একাদশ শতক) থেকেই আসামে গামোচার প্রচলন শুরু হয়।’ আসামে গামছাকে বলা হয় ‘গামোচা’। সেখানকার গামছার জমিন সাদা এবং চারপাশে লাল সুতার কাজ করা থাকে। আসামের ইতিহাসবিষয়ক গবেষণায় এডওয়ার্ড গেইট রচিত ‘এ হিস্ট্রি অব আসাম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আকরগ্রন্থ। উক্ত গ্রন্থে গেইট বলেন, ‘১৭৩৯ সালে একটি গামোচার দাম ছিল ছয় পয়সা। সেখানকার বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় আচারাদি এবং উৎসবে গামোচার ব্যবহার দেখা যায়। বিশেষ করে বিহু উৎসবে যুবকেরা মাথায় গামোচা বেঁধে তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে অংশ নিত।’
এই বাংলায় আবহাওয়া বরাবরই উষ্ণ। তাই অত্র অঞ্চলের মানুষের পোশাক ছিল হালকা সুতিবস্ত্র। গামছার জন্ম বাংলার গরম ও উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। আমাদের গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজে পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল ধুতি, লুঙ্গি, চাদর, ফতুয়া, গামছা প্রভৃতি। সাধারণত গামছা পরিধান করেই তারা বিবিধ কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হতো। এককথায় গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হয়ে রয়েছে গামছা। গামছা কেবল গ্রামীণ জনপদেই নয়, একই সঙ্গে শহরেও গামছার বহুল প্রচলন রয়েছে। সাধারণত গামছা বোনা হয় তাঁতে। অধুনা মেশিনে তৈরি হলেও হাতে তৈরি গামছাই বেশি জনপ্রিয়। গামছা বোনার ক্ষেত্রে কেবল আমাদের দেশীয় তাঁতিরাই নয়, পাশাপাশি মণিপুরি, সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, গারো প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যরা তাঁদের কল্পনার রং ও মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করে চলেছেন। এসব গামছার ভাঁজে ভাঁজে ফুটে থাকে একেকটি জনপদের সহস্র বছরের সঞ্চিত ঐতিহ্য, আবেগ ও স্মৃতিরাশি।
বাঙালির প্রবাদ-প্রবচন, ভাষা ও সাহিত্যেও গামছার ব্যবহার নিতান্ত কম নয়। যেমন: ‘গলায় গামছা দেওয়া’। এর অর্থ কাউকে লাঞ্ছিত, অপমান ও জবরদস্তি করে কোনো কিছুতে বাধ্য করা। ‘গামছা ডলা’র অর্থ গামছা দিয়ে মর্দন বা গোসলের সময় গামছা দিয়ে গা পরিষ্কার করা। ‘গামছা বাঁধা’র অর্থ গামছায় বাঁধা বা গামছা দিয়ে বাঁধা। বাংলা ভাষার বাগধারার আলোচনায় এমন আরও উদাহরণ রয়েছে। ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে গামছা ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। আনুমানিক ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের রচনায় আমরা গামছা শব্দের দেখা পাই। তিনি লিখেছেন, ‘সীঙলি গামছা দিব ভূষিত কস্তরি।’ এ ছাড়া ফরাসি দোভাষী ওগুস্তে ওঁসার শব্দসংকলনে আমরা ‘গামচা’ শব্দটি পাই। পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের কবিতায় ‘গামছা-বাঁধা দই’-এর কথা পাই—‘আমার বাড়ি যাইও ভ্রমর/বসতে দিব পিঁড়ে.../বাড়ির গাছের কবরি কলা/গামছা-বাঁধা দই।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘তীরে তীরে ছেলেমেয়ে নাহিবার কালে/গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।’
একসময় গামছা তৈরি হতো খটখটি তাঁত দিয়ে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাঁত কারখানা এখন অনেক বদলে গেছে। খটখটি তাঁতের সেই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবে প্রক্রিয়া যাই হোক, গামছার মূল উপাদান সুতা আর রং অপরিবর্তিত রয়েছে। গামছা তৈরির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সমাজে ‘কারিগর’ সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তবে তাচ্ছিল্য করে অনেকে তাঁদের ‘জোলা’ বলে ডাকেন। ‘জো’ তুলে, অর্থাৎ সুতায় সুতায় জোড়া দিয়ে যাঁরা মানুষের জন্য পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করেন, তাঁরাই এই জোলা। তাঁদের শ্রমে তৈরি গামছা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলেও, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রায়ই অগ্রাহ্য থাকে।
সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী নাকি একবার গামছা পরে জল তুলছিলেন। এক ভদ্রমহিলা তাচ্ছিল্য করে বললেন, ‘আপনি এত বড় বংশের ছেলে, আপনার বাবা এত বড়লোক, আপনি কি না একটা গামছা পরে এভাবে জল তুলছেন?’ শিবরাম হেসে বললেন, ‘বাপ তুললেন, বংশ তুললেন, তাতেও হলো না শেষে গামছা তুলে অপমান করলেন?’ কী কাণ্ড!
সাম্প্রতিক সময়ে বিবি রাসেলের উদ্যোগে ফ্যাশনের একটি শক্তিশালী প্রতীকে পরিণত হয়েছে গামছা। গামছার আরাম, স্থায়িত্ব আর বৈচিত্র্যময় ব্যবহার এটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় করেছে। গামছা এখন শুধু বাংলাদেশের ঐতিহ্য নয়, ফ্যাশনের একটি নতুন ভাষাও বটে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই দেখা যায়— করোনা, লকডাউন বা কোয়ারেন্টিন নিয়ে নানা রকমের কৌতুক, মিম। কেউ বলে, ‘আবার যদি লকডাউন আসে, ঘরে বসে টিকটকে ক্যারিয়ার বানিয়ে ফেলব।’ কেউ আবার ব্যঙ্গ করে করোনাকে বলে—‘পুরোনো প্রেমের মতো, নাম শুনলেই বিরক্ত লাগে!’ তাহলে আমরা ভুলে গেছি—এই করোনাই কেড়ে নিয়েছে লাখো মানুষকে।
৩ ঘণ্টা আগেনব্বই বছরে পা দেওয়া একজন তরুণ পরিব্রাজকের জন্মদিন অতিক্রম করলাম আমরা। সুদীর্ঘ জীবনে তেমন কোনো ব্যাধি এসে তাঁকে জরাগ্রস্ত করেনি, শারীরিক কোনো কারণ এবং মানসিক পীড়া ভারাক্রান্ত করেনি, কখনোই বয়সের ভার এসে চিন্তার তারুণ্যকে অবসাদগ্রস্ত করেনি। বাঙালি অসুস্থতাপরায়ণ, ছোট-বড় অসুখ এসে একবার শয্যাশায়ী করতে পার
১০ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের একটানা শাসন এক যুগ পেরিয়ে দেড় দশকে পৌঁছালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে এমন এক বাস্তবতা গড়ে ওঠে—যেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করাই হয়ে ওঠে একমাত্র সাফল্যের মানদণ্ড।
১১ ঘণ্টা আগেযুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ১২ দিনের ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই ভাবিয়ে তুলছে—বাড়ছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা। আমাদের দেশেও এই সংঘাতের প্রভাব যে পড়বে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
১১ ঘণ্টা আগে