আহমেদ শমসের, সাংবাদিক
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কার ও সংলাপ—এই দুটি বিষয় বরাবরই আলোচিত। বিশেষ করে যখন কোনো সরকার বা প্রশাসন বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চায়, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সামনে আসে। বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই সংলাপ ও সংস্কারের উদ্যোগ কি বাস্তবিক অর্থে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করতে পারবে?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যে ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে এবং দলগুলোকে মতামত জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে সংলাপ শুরু হবে এবং বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত তা চলবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আংশিকভাবে একমত, সেগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হবে। আর যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকছে। তবে এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, সংলাপ কখনোই খুব সহজ বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে শঙ্কা সব সময়ই সংলাপকে কঠিন করে তোলে। অতীতে দেখা গেছে, সংলাপের টেবিলে বসলেও দলগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে খুব একটা সরে আসতে চায় না। বরং নিজেদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা সামনে রেখে সংলাপকে ব্যবহার করার প্রবণতাই বেশি লক্ষ করা যায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ যদি সত্যিকার অর্থে দলগুলোর মতপার্থক্য দূর করতে চায়, তবে কেবল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংস্কারের প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য? সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার—এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, সরকার নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সংস্কারের বিষয়টি সামনে আনছে। আবার জামায়াত সংস্কারে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি সংস্কার ও শেখ হাসিনার বিচার শেষে নির্বাচন চায়। অন্য দলগুলোর মধ্যেও এসব প্রশ্নে মতভিন্নতা আছে।
সংস্কারের বাস্তবায়ন পদ্ধতিতেও মতপার্থক্য রয়েছে। কিছু দল চাইছে, নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার করা হোক। কেউ চাইছে, গণভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাই করা হোক। আবার কেউ বলছে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংস্কার হওয়া উচিত। এই মতপার্থক্যের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কতটা সম্ভব? অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, সংলাপ ও সংস্কারের উদ্যোগ প্রায়ই রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে ব্যর্থ হয়। কেউই তালগাছের ভাগ ছাড়তে চায় না।
তবে এবার একটি ইতিবাচক দিক হলো, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তত আলোচনায় আসতে রাজি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেশির ভাগ দল সংস্কারের সুপারিশগুলোর প্রতি পুরোপুরি বিরোধিতা করেনি। বরং কিছু বিষয়ে আংশিক একমত হয়েছে। এটি একটি ভালো সূচনা হতে পারে, যদি দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু সংলাপকে সফল করতে হলে সরকার ও কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং দলগুলোর যৌক্তিক মতামত গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কতটা বাস্তবসম্মত সংস্কার করা সম্ভব? কারণ কোনো সংস্কার যদি কেবল একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে সুবিধা দেয়, তাহলে তা কখনোই টেকসই হবে না। সংলাপ কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করবে না। বরং দলগুলোর মধ্যে আরও অবিশ্বাস বাড়বে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সংলাপকে ফলপ্রসূ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। কমিশনকেও অবশ্যই এমন কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যা কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হয়। যদি সংলাপ সফল হয়, তাহলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অন্যথায়, এটি কেবল আরেকটি ব্যর্থ সংলাপের অধ্যায় হিসেবেই ইতিহাসে লেখা থাকবে। নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে যে অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে সাত মাস আগে, তার মেজাজ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারেন কি না, দেখার বিষয় সেটাই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কার ও সংলাপ—এই দুটি বিষয় বরাবরই আলোচিত। বিশেষ করে যখন কোনো সরকার বা প্রশাসন বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটতে চায়, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সামনে আসে। বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই সংলাপ ও সংস্কারের উদ্যোগ কি বাস্তবিক অর্থে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করতে পারবে?
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যে ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে এবং দলগুলোকে মতামত জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে সংলাপ শুরু হবে এবং বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত তা চলবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আংশিকভাবে একমত, সেগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হবে। আর যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকছে। তবে এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, সংলাপ কখনোই খুব সহজ বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে শঙ্কা সব সময়ই সংলাপকে কঠিন করে তোলে। অতীতে দেখা গেছে, সংলাপের টেবিলে বসলেও দলগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে খুব একটা সরে আসতে চায় না। বরং নিজেদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা সামনে রেখে সংলাপকে ব্যবহার করার প্রবণতাই বেশি লক্ষ করা যায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ যদি সত্যিকার অর্থে দলগুলোর মতপার্থক্য দূর করতে চায়, তবে কেবল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংস্কারের প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য? সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার—এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, সরকার নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সংস্কারের বিষয়টি সামনে আনছে। আবার জামায়াত সংস্কারে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি সংস্কার ও শেখ হাসিনার বিচার শেষে নির্বাচন চায়। অন্য দলগুলোর মধ্যেও এসব প্রশ্নে মতভিন্নতা আছে।
সংস্কারের বাস্তবায়ন পদ্ধতিতেও মতপার্থক্য রয়েছে। কিছু দল চাইছে, নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার করা হোক। কেউ চাইছে, গণভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাই করা হোক। আবার কেউ বলছে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংস্কার হওয়া উচিত। এই মতপার্থক্যের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কতটা সম্ভব? অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, সংলাপ ও সংস্কারের উদ্যোগ প্রায়ই রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে ব্যর্থ হয়। কেউই তালগাছের ভাগ ছাড়তে চায় না।
তবে এবার একটি ইতিবাচক দিক হলো, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তত আলোচনায় আসতে রাজি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেশির ভাগ দল সংস্কারের সুপারিশগুলোর প্রতি পুরোপুরি বিরোধিতা করেনি। বরং কিছু বিষয়ে আংশিক একমত হয়েছে। এটি একটি ভালো সূচনা হতে পারে, যদি দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু সংলাপকে সফল করতে হলে সরকার ও কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে এবং দলগুলোর যৌক্তিক মতামত গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কতটা বাস্তবসম্মত সংস্কার করা সম্ভব? কারণ কোনো সংস্কার যদি কেবল একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে সুবিধা দেয়, তাহলে তা কখনোই টেকসই হবে না। সংলাপ কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করবে না। বরং দলগুলোর মধ্যে আরও অবিশ্বাস বাড়বে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সংলাপকে ফলপ্রসূ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা ভাবতে হবে। কমিশনকেও অবশ্যই এমন কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যা কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হয়। যদি সংলাপ সফল হয়, তাহলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অন্যথায়, এটি কেবল আরেকটি ব্যর্থ সংলাপের অধ্যায় হিসেবেই ইতিহাসে লেখা থাকবে। নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে যে অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে সাত মাস আগে, তার মেজাজ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারেন কি না, দেখার বিষয় সেটাই।
আমার এই লেখা যেদিন ছাপা হবে, সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
৫ ঘণ্টা আগেকয়েক দিন আগে সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর বাজারে গিয়েছি কিছু সবজি কেনার জন্য, তখন পেলাম তার ফোন।
৬ ঘণ্টা আগেএকটি দেশ তখনই প্রকৃত উন্নয়নের পথে এগোয়, যখন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সব স্তরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে যে প্রবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছে, তার বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আজকের পত্রিকায় ১৪ মার্চ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, মাত্র তিন মাসে ব্যাংক হিসাবধারী কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে...
৬ ঘণ্টা আগেড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে