রাজু নুরুল

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে এমন আচরণ রীতিমতো বিস্ময়ের। টানা দুই মেয়াদ নির্ভেজাল কাটিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর মোদি ও তাঁর অনুসারীদের জন্য এটি বিরল এক অভিজ্ঞতা। এর আগে কোভিড সামলাতে ব্যর্থ হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
গত শুক্রবারের (১৯ নভেম্বর) ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘তপস্যায় নিশ্চয় কিঞ্চিৎ ঘাটতি ছিল, তাই সব কৃষককে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। স্বচ্ছ হৃদয়ে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের খেত-খামারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মোদির এ ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, অবশেষে হার মানলেন নরেন্দ্র মোদি। কেউ বলছেন, এ জয় কৃষকের। বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, ‘বিলম্বিত বোধোদয়। অহংকারের পতন হলো।’ তবে আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) প্রধান রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, বিতর্কিত কৃষি আইন দেশের পার্লামেন্টে বাতিল হলেই শুধু তাঁরা চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২৯ নভেম্বর।
কী ছিল বিতর্কিত কৃষি আইনে?
সরকার শুরু থেকে বলে আসছিল—তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করা হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে ফড়িয়া বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাজ্যগুলোয় চুক্তিভিত্তিক চাষের ব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।
এখন দেখা যাক, আইন তিনটিতে কী বলা আছে এবং কেনই-বা এর বিরোধিতা করা হচ্ছিল। প্রথম আইনটি ছিল অত্যাবশ্যক পণ্য সংশোধনী আইন। এ আইনের মাধ্যমে কোনো দালাল বা ফড়িয়া ছাড়া কৃষক সরাসরি বড় ব্যবসায়ীর কাছে তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষক প্রকৃত দাম পাবেন ও আয় বাড়বে। কিন্তু কৃষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের কথা হলো, অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইনের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কিনে মজুত ও বিক্রির অধিকার দেওয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে সরকার কৃষিপণ্যে যে সহায়ক মূল্য দেয়, তা তুলে নিতে চায়। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনার দায় সরকার নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যবসায়ীদের কাছে দিতে চায়। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমা না রাখায় সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চলে যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
দ্বিতীয় আইনটি কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন। সরকার বলছে, এ আইনের ফলে কৃষক তাঁর এলাকার মান্ডির বাইরেও ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এখন কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মান্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন হাত ঘুরে বড় ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায়। নতুন আইনের ফলে বড় ব্যবসায়ী বা বেসরকারি কোনো সংস্থা চাইলে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনে নিতে পারবেন। কৃষকদের দাবি, তাঁরা এতে আপাতত লাভবান হবেন সত্য; কিন্তু এতে মান্ডিব্যবস্থার বিলোপ ঘটবে। ফলে কৃষকের সুরক্ষাকবচ থাকবে না এবং সেই সুযোগে বড় সংস্থাগুলো কৃষকদের ক্রমাগত ঠকানোর সুযোগ পাবে।
তৃতীয়টিকে বলা হচ্ছিল কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত কৃষক চুক্তি আইন। এ আইনের মাধ্যমে কৃষক চুক্তিনির্ভর চাষ করতে পারবেন। কৃষক আগে থেকেই বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে শস্যের দাম নির্ধারণ করে নিতে পারবেন। কোনো বেসরকারি বাণিজ্য সংস্থা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা চাইলে কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সেই জমিতে কৃষিজ পণ্য ফলাতে পারবেন। জমির চুক্তি অনুযায়ী কৃষক দাম পেয়ে যাবেন। কৃষক নিজের জমিতে কাজ করতে চাইলে তার জন্য দৈনিক পারিশ্রমিকও মিলবে। সরকারের যুক্তি, এতে দেশীয় কৃষিজ পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কৃষিপণ্য রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু কৃষকদের আশঙ্কা ছিল, চুক্তির খেলাপ হলে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে টেকার সামর্থ্য কৃষকদের নেই। তখন কৃষকেরা নিজ জমি লিজ দিতে বাধ্য হবেন। ফলে নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবেন।
মোটকথা, নতুন তিনটি আইন মূলত কৃষকের কাছ থেকে সরকারি সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিত, যা কয়েক দশক ধরে ভারতের কৃষকদের মুক্তবাজার থেকে রক্ষা করেছে।
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল সবখানে
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তড়িঘড়ি করে সংসদের অধিবেশনে বিনা আলোচনায় বিল তিনটি আইনে রূপান্তরিত হয়। বিলের ওপর আলোচনার দাবি না মেনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও বিলগুলো পাঠাতে অস্বীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ততক্ষণে দেশজুড়ে কৃষকেরা ফুঁসে উঠেছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কৃষকেরা দিল্লি অবরোধ শুরু করেন। তত দিনে ৪০টির বেশি সংগঠন এক ছাতার নিচে এসে গেছে। গড়ে তুলেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। ভারতে সংঘবদ্ধ কৃষক সংগঠনের পালে হাওয়া লাগল। ধারাবাহিক মিছিল, সভা-সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশসহ ভারতের কৃষিপ্রধান বড় বড় অঞ্চলে রাস্তাঘাট দখল করে রেখেছিলেন তাঁরা। আন্দোলনের মধ্যে শিখ ও জাটরা সংখ্যায় বেশি ছিলেন। গত দেড় বছর বর্ষা, শীত, গরম—কোনো দুর্যোগেই মাঠ ছাড়েননি তাঁরা। আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করতে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে কৃষি আন্দোলনকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, কৃষকদের আন্দোলন আইনানুগ এবং আন্দোলন করার অধিকার সংবিধানেই আছে। উল্টো পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত।
গণমানুষের লাগাতার আন্দোলন
প্রথমে পাঞ্জাব-হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা দিল্লির সীমান্তে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা ট্রাক, ট্রাক্টর আর সঙ্গে গোটা পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রাজধানী অচল করে দিয়েছিলেন। এক বছর ধরে অবরোধস্থানে থেকেছেন কৃষকেরা। সেসব স্থানেই শিশুদের পড়াশোনা করাতে স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করে কৃষকদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে দিনের পর দিন। নারীদের জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। একসময় সেই আন্দোলন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস ও বাম দল ছাড়াও রাজ্যভিত্তিক দলগুলো আন্দোলনে সমর্থন দেয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছেন কৃষকদের এই ক্যাম্পে। শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। পরিবারের বাধা, সরকারের চোখরাঙানিকে গ্রাহ্য করেননি।
এ বছরের অক্টোবরে ‘রেল রোকা’ কর্মসূচির ডাক দিলে গোটা রেলব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ‘ভারত বন্ধ’-এ সারা ভারত স্তব্ধ হয়ে যায়। কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে সুমিত নামে এক বর তাঁর ট্রাক্টরে কৃষকদের ঝান্ডা ঝুলিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন। পাঞ্জাবের ফরিদকোট জেলার কোট কপুরা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মনি গিল তাঁর করপোরেট চাকরি ছেড়ে কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখানে আমাদের কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানাতে এসেছি। এই আইনগুলো দ্বারা শুধু কৃষকদের ক্ষতি হবে মনে হলেও আসলে এতে লোকসান হবে সব মানুষের। আমি নিশ্চিত যে আমরা জিতব। দিল্লিতে একটা ছোট পাঞ্জাব তৈরি হয়ে গেছে, দেখতে বেশ লাগছে।’ এভাবেই কৃষকদের আন্দোলন হয়ে পড়ে সর্বস্তরের আন্দোলন।
শুধু ভারতে নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরেও। প্রবাসী ভারতীয়দের পাশাপাশি জাতিসংঘ কৃষকদের আন্দোলন বিবেচনা করতে চিঠি দেয়। দেশ হিসেবে ব্রিটেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র; ব্যক্তি হিসেবে গায়িকা রিয়ানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আইনজীবী ও তাঁর বোনঝি মিনা হ্যারিস; মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কৃষক আন্দোলন নিয়ে মোদি সরকারকে সতর্ক করে।
দমন-পীড়ন-নিগ্রহ, তবু অটল
মোদি সরকার এসব আন্দোলন গ্রাহ্য করেনি। ফলে দেড় বছরের আন্দোলনে সাত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছরের জুন পর্যন্ত শুধু পাঞ্জাবে মারা গেছেন ২২০ জন কৃষক। আন্দোলনকারীদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে। কৃষকদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। মারা গেছেন কয়েকজন কিষানি। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ। কৃষকদের মনোবল ও ঐক্য ভাঙতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি শাসক বিজেপি।
একদিকে প্রশাসনিক দমন-পীড়ন, অকথ্য পুলিশি অত্যাচার; অন্যদিকে বিভিন্ন ধারায় মামলা করে কৃষক ঐক্যে ভাঙনের চেষ্টা চলেছে। একদল কৃষককে ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দিল্লির লাগোয়া বলে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকেরা অবরোধে শামিল হওয়ায় তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘খলিস্তানি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: গত বছরের ২০ ডিসেম্বরের ঘটনা। বিমলা দেবী নামের ৬২ বছর বয়সী এক নারী সিংঘু আন্দোলনমঞ্চে এসেছিলেন। সেখানে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ওই মঞ্চে আন্দোলন করছে তাঁর ছেলে এবং ভাইয়েরা। তাঁরা কেউ সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী নন। হরিয়ানার সোনিপত জেলার সেহরি গ্রামে তাঁর পরিবার দুই একর জমিতে গম, জোয়ার ও আখের চাষ করে। অথচ দূরদর্শনে শোনা গেল, ‘আমাদের ছেলেদের গুন্ডা বলা হচ্ছে। ওরা চাষি, গুন্ডা নয়। এসব শুনে আমি কাঁদছিলাম। কারণ, ওরা জানে না, কৃষকদের চেয়ে বড় মানুষ নেই।’
এত সব দমন-পীড়নের পরেও কৃষকেরা ছিলেন অনড়। অবশেষে দেড় বছর পর এল তাঁদের মধুর জয়।
কৃষি আইন বাতিল কি রাজনৈতিক কারণে?
সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোয় বিজেপির ফল হয়েছে হতাশাজনক। হিমাচল প্রদেশের চারটি আসনেই তারা কংগ্রেসের কাছে হেরেছে। হরিয়ানায় উপনির্বাচনে হয়েছে তৃতীয়। রাজস্থানে দুটি আসন হারিয়েছে কংগ্রেসের কাছে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে একটি করে আসন কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস। দাদরা-নগর হাভেলিতে হেরেছে শিবসেনার কাছে। পশ্চিমবঙ্গের সাত আসনের উপনির্বাচনে সাতটিতেই ধরাশায়ী হয়েছে। উত্তর প্রদেশের ৪০৪টি বিধানসভার মধ্যে ৩১২টি বিজেপির দখলে, সেই রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন দলীয় নেতারা। কৃষক আন্দোলনের ঢেউ সবচেয়ে বেশি উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে। এখানে ১০৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপির দখলে ৭৫টির মতো আসন। তা সম্ভব হয়েছিল জাট ও মুসলমান কৃষকদের জোটে ভাঙন ধরানোর কারণে। সেই ভাঙন জোড়া লাগিয়েছে কৃষক আন্দোলন।
২০২২ সালে যে রাজ্যগুলোয় বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে অন্যতম পাঞ্জাব। ভারতের এ রাজ্য একমাত্র শিখপ্রধান। কৃষি আইন বাতিলে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এ রাজ্যের শিখ কৃষকেরা। তাঁদের কথা মাথায় রেখে মোদি এমন দিনে কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিলেন যে, ১৯ নভেম্বর ছিল শিখ ধর্মাবলম্বীদের গুরু নানক দেবের জন্মবার্ষিকী। ভারতের এই দুই বড় রাজ্য ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, মনিপুর, গোয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছরের শুরুর দিকে। আর বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হবে হিমাচল ও গুজরাটে। তাই সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃষকদের স্বার্থ নয়, আইন বাতিলের পেছনে প্রধান প্রভাবক ভোটের হিসাব-নিকাশ।
ভারত-বাংলাদেশের কৃষিতে মিল-অমিল ও ভবিষ্যৎ
ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এখনো ৪৩ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ভারতে এ হার আরও বেশি—৫২ শতাংশ। তবে ভারতের কৃষি আমাদের চেয়ে বহুগুণ বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারিকেল, চা, পাট, আম, গবাদি পশুসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে ষষ্ঠ, তামাকে তৃতীয়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারত একা উৎপাদন করে। বাংলাদেশও কৃষির নানা শাখায় বিশ্বদরবারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। ইলিশে প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাটে দ্বিতীয়, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ।
কিন্তু কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে অবস্থা যে যথেষ্ট নাজুক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষকেরা যোজন-যোজন দূরে। কৃষকের মাঠে যখন এক কেজি আলু ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়, সেটিই ঢাকার মতো বড় শহরে কখনো ২০ টাকার নিচে নামে না। ২০ টাকা কেজি দরের ধান যখন চাল হয়ে যায়, সেটার দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকায়। এই উদাহরণ প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রে সত্য।
বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে করপোরেট মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে চলে গেছে। ওদিকে দফায় দফায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, বীজের সংকট, সারের অভাব তো নিয়মিত ঘটনা। কৃষকের কাছ থেকে সস্তায় কিনে ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মজুত করে মাঝখান থেকে একদল লুটে নিচ্ছে অস্বাভাবিক মুনাফা। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষক সংঘবদ্ধ নয়, নেই সচেতনতা। তিনটি আইন বাতিলের জন্য ভারতের লাখো কৃষক যেভাবে একটানা দেড় বছর মাঠঘাটে আন্দোলন করে বেড়াল, সংগঠনের সেই শক্তি অনুপস্থিত তো বটেই; বরং বাংলাদেশের কোনো একটা কৃষি আইন প্রণয়নের সময় কি আদৌ কোনো কৃষকের মন্তব্য চাওয়া হয়, নাকি কৃষকেরা জানে যে, আইন দিয়ে আসলে কী হয়? এখানেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের কৃষকদের মূল তফাত।
গণতন্ত্রের টালমাটাল সময়ে গর্ব করার মতো যে অহিংস আন্দোলন ভারতের কিষান দেখাল, সেখান থেকে কি আমরা শিখব যে, আন্দোলন কীভাবে করতে হয়? গত বছর তীব্র শীতের গভীর রাতে উন্মুক্ত রাজপথে বৃদ্ধ শিখ কৃষকদের নির্জীব হয়ে বসে থাকার মাহাত্ম্যকে ধারণ করার যোগ্যতা কি অর্জন করতে পারব কখনো? আর যদি না পারি, তবে আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ আর কৃষকের হাতে থাকবে না।
লেখক: উন্নয়নকর্মী

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে এমন আচরণ রীতিমতো বিস্ময়ের। টানা দুই মেয়াদ নির্ভেজাল কাটিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর মোদি ও তাঁর অনুসারীদের জন্য এটি বিরল এক অভিজ্ঞতা। এর আগে কোভিড সামলাতে ব্যর্থ হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
গত শুক্রবারের (১৯ নভেম্বর) ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘তপস্যায় নিশ্চয় কিঞ্চিৎ ঘাটতি ছিল, তাই সব কৃষককে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। স্বচ্ছ হৃদয়ে ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’ আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আন্দোলনকারী কৃষকদের খেত-খামারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মোদির এ ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন, অবশেষে হার মানলেন নরেন্দ্র মোদি। কেউ বলছেন, এ জয় কৃষকের। বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, ‘বিলম্বিত বোধোদয়। অহংকারের পতন হলো।’ তবে আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) প্রধান রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, বিতর্কিত কৃষি আইন দেশের পার্লামেন্টে বাতিল হলেই শুধু তাঁরা চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে ২৯ নভেম্বর।
কী ছিল বিতর্কিত কৃষি আইনে?
সরকার শুরু থেকে বলে আসছিল—তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করা হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে ফড়িয়া বা দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাজ্যগুলোয় চুক্তিভিত্তিক চাষের ব্যবস্থা আইনসিদ্ধ করা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে, কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন রয়েছে, তা দূর করে আন্তঃরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের রাস্তা খুলে দেওয়া।
এখন দেখা যাক, আইন তিনটিতে কী বলা আছে এবং কেনই-বা এর বিরোধিতা করা হচ্ছিল। প্রথম আইনটি ছিল অত্যাবশ্যক পণ্য সংশোধনী আইন। এ আইনের মাধ্যমে কোনো দালাল বা ফড়িয়া ছাড়া কৃষক সরাসরি বড় ব্যবসায়ীর কাছে তাঁর পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষক প্রকৃত দাম পাবেন ও আয় বাড়বে। কিন্তু কৃষকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের কথা হলো, অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইনের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য কিনে মজুত ও বিক্রির অধিকার দেওয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে সরকার কৃষিপণ্যে যে সহায়ক মূল্য দেয়, তা তুলে নিতে চায়। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনার দায় সরকার নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে বেসরকারি সংস্থা বা ব্যবসায়ীদের কাছে দিতে চায়। ফলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমা না রাখায় সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা চলে যাবে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
দ্বিতীয় আইনটি কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন। সরকার বলছে, এ আইনের ফলে কৃষক তাঁর এলাকার মান্ডির বাইরেও ফসল বিক্রি করতে পারবেন। এখন কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মান্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন হাত ঘুরে বড় ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায়। নতুন আইনের ফলে বড় ব্যবসায়ী বা বেসরকারি কোনো সংস্থা চাইলে সরাসরি চাষির কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনে নিতে পারবেন। কৃষকদের দাবি, তাঁরা এতে আপাতত লাভবান হবেন সত্য; কিন্তু এতে মান্ডিব্যবস্থার বিলোপ ঘটবে। ফলে কৃষকের সুরক্ষাকবচ থাকবে না এবং সেই সুযোগে বড় সংস্থাগুলো কৃষকদের ক্রমাগত ঠকানোর সুযোগ পাবে।
তৃতীয়টিকে বলা হচ্ছিল কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত কৃষক চুক্তি আইন। এ আইনের মাধ্যমে কৃষক চুক্তিনির্ভর চাষ করতে পারবেন। কৃষক আগে থেকেই বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে শস্যের দাম নির্ধারণ করে নিতে পারবেন। কোনো বেসরকারি বাণিজ্য সংস্থা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা চাইলে কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সেই জমিতে কৃষিজ পণ্য ফলাতে পারবেন। জমির চুক্তি অনুযায়ী কৃষক দাম পেয়ে যাবেন। কৃষক নিজের জমিতে কাজ করতে চাইলে তার জন্য দৈনিক পারিশ্রমিকও মিলবে। সরকারের যুক্তি, এতে দেশীয় কৃষিজ পণ্যের চাহিদা বাড়বে। কৃষিপণ্য রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু কৃষকদের আশঙ্কা ছিল, চুক্তির খেলাপ হলে প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নেই। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে টেকার সামর্থ্য কৃষকদের নেই। তখন কৃষকেরা নিজ জমি লিজ দিতে বাধ্য হবেন। ফলে নিজের জমিতে ক্রীতদাস হয়ে যাবেন।
মোটকথা, নতুন তিনটি আইন মূলত কৃষকের কাছ থেকে সরকারি সংরক্ষণের সুবিধা কেড়ে নিত, যা কয়েক দশক ধরে ভারতের কৃষকদের মুক্তবাজার থেকে রক্ষা করেছে।
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল সবখানে
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তড়িঘড়ি করে সংসদের অধিবেশনে বিনা আলোচনায় বিল তিনটি আইনে রূপান্তরিত হয়। বিলের ওপর আলোচনার দাবি না মেনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও বিলগুলো পাঠাতে অস্বীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ততক্ষণে দেশজুড়ে কৃষকেরা ফুঁসে উঠেছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে কৃষকেরা দিল্লি অবরোধ শুরু করেন। তত দিনে ৪০টির বেশি সংগঠন এক ছাতার নিচে এসে গেছে। গড়ে তুলেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। ভারতে সংঘবদ্ধ কৃষক সংগঠনের পালে হাওয়া লাগল। ধারাবাহিক মিছিল, সভা-সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশসহ ভারতের কৃষিপ্রধান বড় বড় অঞ্চলে রাস্তাঘাট দখল করে রেখেছিলেন তাঁরা। আন্দোলনের মধ্যে শিখ ও জাটরা সংখ্যায় বেশি ছিলেন। গত দেড় বছর বর্ষা, শীত, গরম—কোনো দুর্যোগেই মাঠ ছাড়েননি তাঁরা। আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করতে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে কৃষি আন্দোলনকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, কৃষকদের আন্দোলন আইনানুগ এবং আন্দোলন করার অধিকার সংবিধানেই আছে। উল্টো পুলিশ প্রশাসন ও সরকারকে আন্দোলনে বাধা না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত।
গণমানুষের লাগাতার আন্দোলন
প্রথমে পাঞ্জাব-হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা দিল্লির সীমান্তে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁরা ট্রাক, ট্রাক্টর আর সঙ্গে গোটা পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রাজধানী অচল করে দিয়েছিলেন। এক বছর ধরে অবরোধস্থানে থেকেছেন কৃষকেরা। সেসব স্থানেই শিশুদের পড়াশোনা করাতে স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। কমিউনিটি কিচেন পরিচালনা করে কৃষকদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে দিনের পর দিন। নারীদের জন্য ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। একসময় সেই আন্দোলন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস ও বাম দল ছাড়াও রাজ্যভিত্তিক দলগুলো আন্দোলনে সমর্থন দেয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যোগ দিয়েছেন কৃষকদের এই ক্যাম্পে। শিশুদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। পরিবারের বাধা, সরকারের চোখরাঙানিকে গ্রাহ্য করেননি।
এ বছরের অক্টোবরে ‘রেল রোকা’ কর্মসূচির ডাক দিলে গোটা রেলব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ‘ভারত বন্ধ’-এ সারা ভারত স্তব্ধ হয়ে যায়। কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে সুমিত নামে এক বর তাঁর ট্রাক্টরে কৃষকদের ঝান্ডা ঝুলিয়ে বিয়ের আসরে হাজির হন। পাঞ্জাবের ফরিদকোট জেলার কোট কপুরা গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মনি গিল তাঁর করপোরেট চাকরি ছেড়ে কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এখানে আমাদের কৃষকদের প্রতি সমর্থন জানাতে এসেছি। এই আইনগুলো দ্বারা শুধু কৃষকদের ক্ষতি হবে মনে হলেও আসলে এতে লোকসান হবে সব মানুষের। আমি নিশ্চিত যে আমরা জিতব। দিল্লিতে একটা ছোট পাঞ্জাব তৈরি হয়ে গেছে, দেখতে বেশ লাগছে।’ এভাবেই কৃষকদের আন্দোলন হয়ে পড়ে সর্বস্তরের আন্দোলন।
শুধু ভারতে নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের বাইরেও। প্রবাসী ভারতীয়দের পাশাপাশি জাতিসংঘ কৃষকদের আন্দোলন বিবেচনা করতে চিঠি দেয়। দেশ হিসেবে ব্রিটেন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র; ব্যক্তি হিসেবে গায়িকা রিয়ানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আইনজীবী ও তাঁর বোনঝি মিনা হ্যারিস; মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কৃষক আন্দোলন নিয়ে মোদি সরকারকে সতর্ক করে।
দমন-পীড়ন-নিগ্রহ, তবু অটল
মোদি সরকার এসব আন্দোলন গ্রাহ্য করেনি। ফলে দেড় বছরের আন্দোলনে সাত শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বছরের জুন পর্যন্ত শুধু পাঞ্জাবে মারা গেছেন ২২০ জন কৃষক। আন্দোলনকারীদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে। কৃষকদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। মারা গেছেন কয়েকজন কিষানি। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ। কৃষকদের মনোবল ও ঐক্য ভাঙতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি শাসক বিজেপি।
একদিকে প্রশাসনিক দমন-পীড়ন, অকথ্য পুলিশি অত্যাচার; অন্যদিকে বিভিন্ন ধারায় মামলা করে কৃষক ঐক্যে ভাঙনের চেষ্টা চলেছে। একদল কৃষককে ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দিল্লির লাগোয়া বলে পাঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকেরা অবরোধে শামিল হওয়ায় তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘খলিস্তানি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: গত বছরের ২০ ডিসেম্বরের ঘটনা। বিমলা দেবী নামের ৬২ বছর বয়সী এক নারী সিংঘু আন্দোলনমঞ্চে এসেছিলেন। সেখানে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ওই মঞ্চে আন্দোলন করছে তাঁর ছেলে এবং ভাইয়েরা। তাঁরা কেউ সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী নন। হরিয়ানার সোনিপত জেলার সেহরি গ্রামে তাঁর পরিবার দুই একর জমিতে গম, জোয়ার ও আখের চাষ করে। অথচ দূরদর্শনে শোনা গেল, ‘আমাদের ছেলেদের গুন্ডা বলা হচ্ছে। ওরা চাষি, গুন্ডা নয়। এসব শুনে আমি কাঁদছিলাম। কারণ, ওরা জানে না, কৃষকদের চেয়ে বড় মানুষ নেই।’
এত সব দমন-পীড়নের পরেও কৃষকেরা ছিলেন অনড়। অবশেষে দেড় বছর পর এল তাঁদের মধুর জয়।
কৃষি আইন বাতিল কি রাজনৈতিক কারণে?
সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলোয় বিজেপির ফল হয়েছে হতাশাজনক। হিমাচল প্রদেশের চারটি আসনেই তারা কংগ্রেসের কাছে হেরেছে। হরিয়ানায় উপনির্বাচনে হয়েছে তৃতীয়। রাজস্থানে দুটি আসন হারিয়েছে কংগ্রেসের কাছে। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে একটি করে আসন কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস। দাদরা-নগর হাভেলিতে হেরেছে শিবসেনার কাছে। পশ্চিমবঙ্গের সাত আসনের উপনির্বাচনে সাতটিতেই ধরাশায়ী হয়েছে। উত্তর প্রদেশের ৪০৪টি বিধানসভার মধ্যে ৩১২টি বিজেপির দখলে, সেই রাজ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আসন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন দলীয় নেতারা। কৃষক আন্দোলনের ঢেউ সবচেয়ে বেশি উত্তর প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে। এখানে ১০৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপির দখলে ৭৫টির মতো আসন। তা সম্ভব হয়েছিল জাট ও মুসলমান কৃষকদের জোটে ভাঙন ধরানোর কারণে। সেই ভাঙন জোড়া লাগিয়েছে কৃষক আন্দোলন।
২০২২ সালে যে রাজ্যগুলোয় বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে অন্যতম পাঞ্জাব। ভারতের এ রাজ্য একমাত্র শিখপ্রধান। কৃষি আইন বাতিলে যাঁরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এ রাজ্যের শিখ কৃষকেরা। তাঁদের কথা মাথায় রেখে মোদি এমন দিনে কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিলেন যে, ১৯ নভেম্বর ছিল শিখ ধর্মাবলম্বীদের গুরু নানক দেবের জন্মবার্ষিকী। ভারতের এই দুই বড় রাজ্য ছাড়াও উত্তরাখণ্ড, মনিপুর, গোয়ায় নির্বাচন হবে আগামী বছরের শুরুর দিকে। আর বছরের শেষ দিকে নির্বাচন হবে হিমাচল ও গুজরাটে। তাই সব মিলিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কৃষকদের স্বার্থ নয়, আইন বাতিলের পেছনে প্রধান প্রভাবক ভোটের হিসাব-নিকাশ।
ভারত-বাংলাদেশের কৃষিতে মিল-অমিল ও ভবিষ্যৎ
ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে এখনো ৪৩ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যেখানে ভারতে এ হার আরও বেশি—৫২ শতাংশ। তবে ভারতের কৃষি আমাদের চেয়ে বহুগুণ বড় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। দুগ্ধ, কাজুবাদাম, নারিকেল, চা, পাট, আম, গবাদি পশুসহ নানা কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভারত বিশ্বে প্রথম। কফি উৎপাদনে সারা বিশ্বে ষষ্ঠ, তামাকে তৃতীয়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ফলের ১০ শতাংশ ভারত একা উৎপাদন করে। বাংলাদেশও কৃষির নানা শাখায় বিশ্বদরবারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে। ইলিশে প্রথম, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাটে দ্বিতীয়, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ।
কিন্তু কৃষকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে অবস্থা যে যথেষ্ট নাজুক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষকেরা যোজন-যোজন দূরে। কৃষকের মাঠে যখন এক কেজি আলু ৫ টাকা দরে বিক্রি হয়, সেটিই ঢাকার মতো বড় শহরে কখনো ২০ টাকার নিচে নামে না। ২০ টাকা কেজি দরের ধান যখন চাল হয়ে যায়, সেটার দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকায়। এই উদাহরণ প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রে সত্য।
বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে করপোরেট মধ্যস্বত্বভোগীদের দখলে চলে গেছে। ওদিকে দফায় দফায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, বীজের সংকট, সারের অভাব তো নিয়মিত ঘটনা। কৃষকের কাছ থেকে সস্তায় কিনে ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মজুত করে মাঝখান থেকে একদল লুটে নিচ্ছে অস্বাভাবিক মুনাফা। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশের কৃষক সংঘবদ্ধ নয়, নেই সচেতনতা। তিনটি আইন বাতিলের জন্য ভারতের লাখো কৃষক যেভাবে একটানা দেড় বছর মাঠঘাটে আন্দোলন করে বেড়াল, সংগঠনের সেই শক্তি অনুপস্থিত তো বটেই; বরং বাংলাদেশের কোনো একটা কৃষি আইন প্রণয়নের সময় কি আদৌ কোনো কৃষকের মন্তব্য চাওয়া হয়, নাকি কৃষকেরা জানে যে, আইন দিয়ে আসলে কী হয়? এখানেই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের কৃষকদের মূল তফাত।
গণতন্ত্রের টালমাটাল সময়ে গর্ব করার মতো যে অহিংস আন্দোলন ভারতের কিষান দেখাল, সেখান থেকে কি আমরা শিখব যে, আন্দোলন কীভাবে করতে হয়? গত বছর তীব্র শীতের গভীর রাতে উন্মুক্ত রাজপথে বৃদ্ধ শিখ কৃষকদের নির্জীব হয়ে বসে থাকার মাহাত্ম্যকে ধারণ করার যোগ্যতা কি অর্জন করতে পারব কখনো? আর যদি না পারি, তবে আমাদের কৃষির ভবিষ্যৎ আর কৃষকের হাতে থাকবে না।
লেখক: উন্নয়নকর্মী

বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১৪ ঘণ্টা আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১৫ ঘণ্টা আগেরাজিউল হাসান

বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এ ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে পশ্চিম আফ্রিকার আরেক দেশ গিনি-বিসাউয়ে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই দুই দেশসহ আফ্রিকার ৯টি দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, একটি মহাদেশে মাত্র পাঁচ বছরে এতগুলো অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা কেন ঘটল? কেন গণতন্ত্র এভাবে মার খাচ্ছে আফ্রিকায়?
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কস গ্রুপের বিশ্লেষক বেভারলি ওচিয়েং মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলোয় যে অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টাগুলো ঘটছে, তার পেছনে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দুর্বল প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় বেসামরিক সরকারকে নিয়ে নাগরিকদের হতাশাসহ নানা কারণ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় এসব সমস্যা বেশি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো হলো নাইজার, বেনিন, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, ঘানা, বুরকিনা ফাসো, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি, মালি, আইভরি কোস্ট, টোগো, সিয়েরা লিওন, গিনি-বিসাউ, কেপ ভার্দে, মৌরিতানিয়া ও চাদ। এই দেশগুলো বিশেষভাবে পরিচিত সহিংস ঘটনার জন্য। এর মধ্যে আটলান্টিক সাগর-তীরবর্তী সেনেগাল, গিনি-বিসাউ, সিয়েরা লিওন এবং ভূখণ্ডবেষ্টিত মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারে সহিংসতার খবর বেশি আসে।
নিবিড়ভাবে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, পশ্চিম আফ্রিকার সহিংসতা-প্রবণ এই দেশগুলোয় সামরিক বাহিনী আর রাজনীতি একাকার হয়ে আছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাশাপাশি কোনো কোনো দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতাও বেশ ভালোভাবে রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যা।
কেবল যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতেই অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে, তা কিন্তু নয়। গত অক্টোবরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোলিনার পদত্যাগের দাবিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। এই সুযোগে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। পরে প্রেসিডেন্ট প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালান, পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসিত করে। ২০২৩ সালে মধ্য আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ গ্যাবনে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অভ্যুত্থানের নেতা ছিলেন আলী বঙ্গোরই চাচাতো ভাই ব্রাইস অলিগুই। এই অভ্যুত্থান ঘটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলী বঙ্গোকে বিজয়ী ঘোষণার পরপরই। অভ্যুত্থানের পর ব্রাইস অলিগুইকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে চাদে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল মাহামাত ইদ্রিস দেবি। তিনি ক্ষমতা দখলের আগে দেশটির নেতা ছিলেন তাঁরই বাবা। তিনি অবশ্য বাবাকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেননি। বাবার মৃত্যুর পরপরই তিনি ক্ষমতা দখল করেন। আর এর মাধ্যমে তিনি নিজ পরিবারের তিন দশকের শাসন দখলে রেখেছেন। চাদের ওই ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গিনিতে মামাদি দৌমবুয়ার নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য প্রেসিডেন্ট আলফা কনডেকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এর কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট আলফা কনডে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে সুদানে জেনারেল আবদেল-ফাত্তাহ বুরহানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সরকারপ্রধান ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর আগে ওমর ২৬ বছর দেশটি শাসন করেছেন। মালিতে ২০২০ সাল ও ২০২১ সালে দুই দফা সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। বুরকিনা ফাসোয় ২০২২ সালে এবং নাইজারে ২০২৩ সালে অভ্যুত্থান ঘটেছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আফ্রিকার দেশগুলোয় এমন সহিংসতা, অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা, দারিদ্র্য, আর্থসামাজিক বঞ্চনার মূল কারণ ব্যাপক হারে দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতা। ঘানাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আফ্রোব্যারোমিটার নেটওয়ার্কের একটি জরিপের তথ্য বলছে, আফ্রিকা মহাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার তুলনায় গণতন্ত্রকে বেশি পছন্দ করে। তবে তাদের দেশগুলোয় যেভাবে গণতন্ত্রের চর্চা চলে, সেই পদ্ধতি তাদের পছন্দ নয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত ব্যাপক হারে দুর্নীতি। সমাজে দুর্নীতি গেড়ে বসলে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা ব্যাহত হয়। শাসনযন্ত্র যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ব্যর্থতার সুযোগে এমনটা হয়। এ কথা শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই এটি প্রযোজ্য।
সমাজকে যদি আমরা একটি পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তার একেবারে নিচের স্তরে থাকে সাধারণ মানুষ। পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের এই অংশটিই সবচেয়ে বড়। শাসনযন্ত্রের যত ওপরে ওঠা হয়, পিরামিড বা ত্রিভুজ তত সরু হতে থাকে। একেবারে চূড়ায় থাকেন শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে পিরামিড বা ত্রিভুজের একেবারে নিচের বৃহৎ স্তরের সদস্যদের, অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা যেখানে নেই, সেখানেও সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে উচ্চ স্বরে ঘোষণা করা হয়। বলা হয় জনগণই ঠিক করবে রাষ্ট্রে কী ঘটবে। কিন্তু আদতে জনগণের হাতে কিছু থাকে না। তারা কেবল ভোটের দিন নিজের ভোটটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর বেশি কিছু করতে পারে না। যে দেশগুলোয় ভোট কারচুপির বা ভোট জালিয়াতির অবাধ চর্চা রয়েছে, সেসব দেশে তো ভোটের দিনও জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হতে পারে না। ভোট দিতে গিয়ে ভোটার দেখেন, তাঁর ভোটটি অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন।
কিংবা ভোটার ভোট দেন ঠিকই, কিন্তু ব্যালট বাক্স ভরে থাকে আগেই।
এমন ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশগুলোয়ই শাসনযন্ত্র কুক্ষিগত করতে, ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকেরা নানা কৌশল আঁটেন, হাঁটেন দমন-পীড়নের পথে। এই উপসর্গগুলো আফ্রিকার দেশগুলোর রয়েছে। সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী কিংবা জঙ্গিগোষ্ঠী। দুর্বৃত্তগোষ্ঠীও সক্রিয় এসব দেশে। ফলে সাধারণ মানুষ একেবারেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রভাব সরাসরি জনগণের দৈনন্দিন জীবনে পড়ে। এ কারণে বেসামরিক সরকারের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারায়। সে সুযোগ নেন ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেল।
কিন্তু এমন হওয়া উচিত নয়। গণতান্ত্রিক চর্চায় শীর্ষে থাকা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর গণতন্ত্রও কিন্তু শতভাগ ত্রুটিহীন নয়। তারপরও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার চেষ্টা এসব দেশে রয়েছে। ইউরোপের কোনো কোনো দেশ তো কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টায় রয়েছে। তারা যদি পারে, তাহলে আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার দেশগুলো কেন পারবে না? আমরা সবাই তো একই গ্রহের মানুষ। দুর্নীতি নামক এ রোগের চিকিৎসা অতীতে সাধারণ মানুষকেই করতে হয়েছে, আজ এবং আগামীতেও সাধারণ মানুষকেই করতে হবে।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক আজকের পত্রিকা

বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এ ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে পশ্চিম আফ্রিকার আরেক দেশ গিনি-বিসাউয়ে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই দুই দেশসহ আফ্রিকার ৯টি দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, একটি মহাদেশে মাত্র পাঁচ বছরে এতগুলো অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা কেন ঘটল? কেন গণতন্ত্র এভাবে মার খাচ্ছে আফ্রিকায়?
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কস গ্রুপের বিশ্লেষক বেভারলি ওচিয়েং মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলোয় যে অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টাগুলো ঘটছে, তার পেছনে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দুর্বল প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় বেসামরিক সরকারকে নিয়ে নাগরিকদের হতাশাসহ নানা কারণ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় এসব সমস্যা বেশি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো হলো নাইজার, বেনিন, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, ঘানা, বুরকিনা ফাসো, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি, মালি, আইভরি কোস্ট, টোগো, সিয়েরা লিওন, গিনি-বিসাউ, কেপ ভার্দে, মৌরিতানিয়া ও চাদ। এই দেশগুলো বিশেষভাবে পরিচিত সহিংস ঘটনার জন্য। এর মধ্যে আটলান্টিক সাগর-তীরবর্তী সেনেগাল, গিনি-বিসাউ, সিয়েরা লিওন এবং ভূখণ্ডবেষ্টিত মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারে সহিংসতার খবর বেশি আসে।
নিবিড়ভাবে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, পশ্চিম আফ্রিকার সহিংসতা-প্রবণ এই দেশগুলোয় সামরিক বাহিনী আর রাজনীতি একাকার হয়ে আছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাশাপাশি কোনো কোনো দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতাও বেশ ভালোভাবে রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যা।
কেবল যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতেই অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে, তা কিন্তু নয়। গত অক্টোবরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোলিনার পদত্যাগের দাবিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। এই সুযোগে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। পরে প্রেসিডেন্ট প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালান, পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসিত করে। ২০২৩ সালে মধ্য আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ গ্যাবনে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অভ্যুত্থানের নেতা ছিলেন আলী বঙ্গোরই চাচাতো ভাই ব্রাইস অলিগুই। এই অভ্যুত্থান ঘটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলী বঙ্গোকে বিজয়ী ঘোষণার পরপরই। অভ্যুত্থানের পর ব্রাইস অলিগুইকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে চাদে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল মাহামাত ইদ্রিস দেবি। তিনি ক্ষমতা দখলের আগে দেশটির নেতা ছিলেন তাঁরই বাবা। তিনি অবশ্য বাবাকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেননি। বাবার মৃত্যুর পরপরই তিনি ক্ষমতা দখল করেন। আর এর মাধ্যমে তিনি নিজ পরিবারের তিন দশকের শাসন দখলে রেখেছেন। চাদের ওই ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গিনিতে মামাদি দৌমবুয়ার নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য প্রেসিডেন্ট আলফা কনডেকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এর কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট আলফা কনডে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে সুদানে জেনারেল আবদেল-ফাত্তাহ বুরহানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সরকারপ্রধান ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর আগে ওমর ২৬ বছর দেশটি শাসন করেছেন। মালিতে ২০২০ সাল ও ২০২১ সালে দুই দফা সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। বুরকিনা ফাসোয় ২০২২ সালে এবং নাইজারে ২০২৩ সালে অভ্যুত্থান ঘটেছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আফ্রিকার দেশগুলোয় এমন সহিংসতা, অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা, দারিদ্র্য, আর্থসামাজিক বঞ্চনার মূল কারণ ব্যাপক হারে দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতা। ঘানাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আফ্রোব্যারোমিটার নেটওয়ার্কের একটি জরিপের তথ্য বলছে, আফ্রিকা মহাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার তুলনায় গণতন্ত্রকে বেশি পছন্দ করে। তবে তাদের দেশগুলোয় যেভাবে গণতন্ত্রের চর্চা চলে, সেই পদ্ধতি তাদের পছন্দ নয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত ব্যাপক হারে দুর্নীতি। সমাজে দুর্নীতি গেড়ে বসলে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা ব্যাহত হয়। শাসনযন্ত্র যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ব্যর্থতার সুযোগে এমনটা হয়। এ কথা শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই এটি প্রযোজ্য।
সমাজকে যদি আমরা একটি পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তার একেবারে নিচের স্তরে থাকে সাধারণ মানুষ। পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের এই অংশটিই সবচেয়ে বড়। শাসনযন্ত্রের যত ওপরে ওঠা হয়, পিরামিড বা ত্রিভুজ তত সরু হতে থাকে। একেবারে চূড়ায় থাকেন শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে পিরামিড বা ত্রিভুজের একেবারে নিচের বৃহৎ স্তরের সদস্যদের, অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা যেখানে নেই, সেখানেও সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে উচ্চ স্বরে ঘোষণা করা হয়। বলা হয় জনগণই ঠিক করবে রাষ্ট্রে কী ঘটবে। কিন্তু আদতে জনগণের হাতে কিছু থাকে না। তারা কেবল ভোটের দিন নিজের ভোটটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর বেশি কিছু করতে পারে না। যে দেশগুলোয় ভোট কারচুপির বা ভোট জালিয়াতির অবাধ চর্চা রয়েছে, সেসব দেশে তো ভোটের দিনও জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হতে পারে না। ভোট দিতে গিয়ে ভোটার দেখেন, তাঁর ভোটটি অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন।
কিংবা ভোটার ভোট দেন ঠিকই, কিন্তু ব্যালট বাক্স ভরে থাকে আগেই।
এমন ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশগুলোয়ই শাসনযন্ত্র কুক্ষিগত করতে, ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকেরা নানা কৌশল আঁটেন, হাঁটেন দমন-পীড়নের পথে। এই উপসর্গগুলো আফ্রিকার দেশগুলোর রয়েছে। সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী কিংবা জঙ্গিগোষ্ঠী। দুর্বৃত্তগোষ্ঠীও সক্রিয় এসব দেশে। ফলে সাধারণ মানুষ একেবারেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রভাব সরাসরি জনগণের দৈনন্দিন জীবনে পড়ে। এ কারণে বেসামরিক সরকারের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারায়। সে সুযোগ নেন ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেল।
কিন্তু এমন হওয়া উচিত নয়। গণতান্ত্রিক চর্চায় শীর্ষে থাকা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর গণতন্ত্রও কিন্তু শতভাগ ত্রুটিহীন নয়। তারপরও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার চেষ্টা এসব দেশে রয়েছে। ইউরোপের কোনো কোনো দেশ তো কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টায় রয়েছে। তারা যদি পারে, তাহলে আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার দেশগুলো কেন পারবে না? আমরা সবাই তো একই গ্রহের মানুষ। দুর্নীতি নামক এ রোগের চিকিৎসা অতীতে সাধারণ মানুষকেই করতে হয়েছে, আজ এবং আগামীতেও সাধারণ মানুষকেই করতে হবে।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক আজকের পত্রিকা

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১৪ ঘণ্টা আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১৫ ঘণ্টা আগেআব্দুর রহমান

একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা। আর সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে।
দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে, তারা এখন চীন ও রাশিয়াকে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। এ জন্য তারা বিকল্প হিসেবে পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত এগিয়ে নিতে তৎপর। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে সামরিক তৎপরতা তারই ইঙ্গিত।
দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন নিজেকে বিশ্বের দায়িত্বশীল অভিভাবক বলে দাবি করলেও, সেই পুরোনো চরিত্র এবার ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে, তাদের এখনকার জাতীয় স্বার্থ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে একধাপ কম ‘শান্তির প্রতিষ্ঠাতা’, তবে একধাপ বেশি ‘শক্তির স্থপতি’ হয়ে উঠছে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধ তথা পুরো আমেরিকা মহাদেশে ‘মার্কিন প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করতে চাইছে। এটি করতে গিয়ে তারা মনরো মতবাদকে (Monroe Doctrine) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছে। মনরো মতবাদ হলো, ‘১৮০০ সালের দিকের এক মার্কিন নীতি, যা আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপন ও হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছিল।’ এই নীতি অনুযায়ী, তারা এখন বিদেশি প্রভাব ঠেকানো ছাড়াও, মাদক ব্যবসা ও অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করার ওপর জোর দেবে এবং ‘বেসরকারীকরণ’কে উৎসাহিত করবে।
‘আমরা এই অঞ্চলের সরকার, রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনগুলোকে পুরস্কৃত এবং উৎসাহিত করব, যারা আমাদের নীতি ও কৌশলের সঙ্গে ব্যাপক অর্থে সংগতিপূর্ণ থাকবে।’ ট্রাম্প ইতিমধ্যেই লাতিন আমেরিকায় রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে এবং ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের অধীনে আর্জেন্টাইন অর্থনীতিকে ৪০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে উদ্ধার করে এই কৌশল কার্যকর করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ‘এই-গোলার্ধের বাইরের প্রতিযোগীদের’ পশ্চিম গোলার্ধে ‘সামরিক বা অন্যান্য হুমকিমূলক সক্ষমতা স্থাপন করা কিংবা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো নিজেদের দখলে নেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অস্বীকার’ করবে। সোজা কথায়, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো শক্তিকেই প্রভাব বিস্তার করতে স্বাগত জানাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পদ পশ্চিম গোলার্ধের দিকে সরিয়ে আনা হবে। এ জন্য আমেরিকান জাতীয় সুরক্ষার কাছে যেসব রণাঙ্গনের আপেক্ষিক গুরুত্ব সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কমে এসেছে, সে সবকে সরিয়ে আনা হবে। এই ধারাবাহিকতায় যেন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মনোযোগ কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে।
কারণ, মধ্যপ্রাচ্য এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশলগত অগ্রাধিকার নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের শক্তি উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওপর মনোযোগ দেওয়ার আমেরিকার ঐতিহাসিক কারণ কমে আসবে।’ কারণ এই অঞ্চলে সংঘাত ও সহিংসতাও কমছে। যদিও বলা হয়েছে, ‘সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।’ এই অবস্থাতেও মার্কিন প্রশাসন এই অঞ্চলের জন্য সোনালি ভবিষ্যতের কল্পনা করছে। ওয়াশিংটনের স্বার্থে আধিপত্য বজায় রাখার পরিবর্তে, মধ্যপ্রাচ্য ‘ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উৎস এবং গন্তব্যে পরিণত হবে’, যার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তর্ভুক্ত। এটি এই অঞ্চলকে ‘অংশীদারত্ব, বন্ধুত্ব এবং বিনিয়োগের স্থান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সহিংসতায় জর্জরিত। গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সেটেলার ও সেনাদের মারাত্মক অভিযান বাড়ছে। ইসরায়েল লেবাননেও বিমান হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা দুর্বল হিজবুল্লাহকে বলপূর্বক নিরস্ত্র করতে দেশটির বিরুদ্ধে আরেকটি সর্বাত্মক হামলার ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের এক বছর পরেও, ইসরায়েলের দক্ষিণে অধিকৃত গোলান মালভূমির বাইরে সামরিক আধিপত্য বিস্তার করার জন্য অনুপ্রবেশ এবং হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থান আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। এই নথি স্বীকার করে যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এখনো রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ইসরায়েল যেন সুরক্ষিত থাকে’ তা নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি সরবরাহ ও শিপিং লেনগুলো রক্ষা করা।
ট্রাম্পের নতুন নিরাপত্তা কৌশলে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে রাখা হয়নি। এই নথিতে এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতা এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চীনকে মোকাবিলায় ভারসাম্য তৈরির জন্য এশীয় মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক (ও অন্যান্য) সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।’ এর মধ্য দিয়ে একটি ইঙ্গিত স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র যদি দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় সেটি হলো ভারত। আর এ কারণে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ান নিয়ে সংঘাত ঠেকানো’কে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে। আর এটি করতে তারা ‘আদর্শগতভাবে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার’ পক্ষে। এটি নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের মার্কিন অংশীদারদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
এ কৌশল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চায়। ওয়াশিংটন ‘ইউরোপকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং এক সারিতে থাকা সার্বভৌম জাতিগুলোর একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে সক্ষম করাকে’ অগ্রাধিকার দেবে।
বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎসও। তিনি বলেছেন, ইউরোপকে এখন নিজের নিরাপত্তা নীতি ও প্রতিরক্ষায় আরও আত্মনির্ভর হতে হবে; যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা রাখা চলবে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিরাপত্তা কৌশলে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ এবং ‘আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ’কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই নিরাপত্তা কৌশল দেশটিকে ইরাক-আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার পরিসর তৈরি করলেও, মাদক, অভিবাসন এবং অপরাধ ইস্যুতে সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর সম্ভাব্যতা খুলে রেখেছে। যার প্রথম শিকার হতে পারে ভেনেজুয়েলা।
লেখক: সাংবাদিক

একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা। আর সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে।
দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে, তারা এখন চীন ও রাশিয়াকে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। এ জন্য তারা বিকল্প হিসেবে পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত এগিয়ে নিতে তৎপর। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে সামরিক তৎপরতা তারই ইঙ্গিত।
দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন নিজেকে বিশ্বের দায়িত্বশীল অভিভাবক বলে দাবি করলেও, সেই পুরোনো চরিত্র এবার ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে, তাদের এখনকার জাতীয় স্বার্থ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে একধাপ কম ‘শান্তির প্রতিষ্ঠাতা’, তবে একধাপ বেশি ‘শক্তির স্থপতি’ হয়ে উঠছে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধ তথা পুরো আমেরিকা মহাদেশে ‘মার্কিন প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করতে চাইছে। এটি করতে গিয়ে তারা মনরো মতবাদকে (Monroe Doctrine) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছে। মনরো মতবাদ হলো, ‘১৮০০ সালের দিকের এক মার্কিন নীতি, যা আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপন ও হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছিল।’ এই নীতি অনুযায়ী, তারা এখন বিদেশি প্রভাব ঠেকানো ছাড়াও, মাদক ব্যবসা ও অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করার ওপর জোর দেবে এবং ‘বেসরকারীকরণ’কে উৎসাহিত করবে।
‘আমরা এই অঞ্চলের সরকার, রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনগুলোকে পুরস্কৃত এবং উৎসাহিত করব, যারা আমাদের নীতি ও কৌশলের সঙ্গে ব্যাপক অর্থে সংগতিপূর্ণ থাকবে।’ ট্রাম্প ইতিমধ্যেই লাতিন আমেরিকায় রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে এবং ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের অধীনে আর্জেন্টাইন অর্থনীতিকে ৪০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে উদ্ধার করে এই কৌশল কার্যকর করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ‘এই-গোলার্ধের বাইরের প্রতিযোগীদের’ পশ্চিম গোলার্ধে ‘সামরিক বা অন্যান্য হুমকিমূলক সক্ষমতা স্থাপন করা কিংবা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো নিজেদের দখলে নেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অস্বীকার’ করবে। সোজা কথায়, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো শক্তিকেই প্রভাব বিস্তার করতে স্বাগত জানাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পদ পশ্চিম গোলার্ধের দিকে সরিয়ে আনা হবে। এ জন্য আমেরিকান জাতীয় সুরক্ষার কাছে যেসব রণাঙ্গনের আপেক্ষিক গুরুত্ব সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কমে এসেছে, সে সবকে সরিয়ে আনা হবে। এই ধারাবাহিকতায় যেন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মনোযোগ কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে।
কারণ, মধ্যপ্রাচ্য এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশলগত অগ্রাধিকার নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের শক্তি উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওপর মনোযোগ দেওয়ার আমেরিকার ঐতিহাসিক কারণ কমে আসবে।’ কারণ এই অঞ্চলে সংঘাত ও সহিংসতাও কমছে। যদিও বলা হয়েছে, ‘সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।’ এই অবস্থাতেও মার্কিন প্রশাসন এই অঞ্চলের জন্য সোনালি ভবিষ্যতের কল্পনা করছে। ওয়াশিংটনের স্বার্থে আধিপত্য বজায় রাখার পরিবর্তে, মধ্যপ্রাচ্য ‘ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উৎস এবং গন্তব্যে পরিণত হবে’, যার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তর্ভুক্ত। এটি এই অঞ্চলকে ‘অংশীদারত্ব, বন্ধুত্ব এবং বিনিয়োগের স্থান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সহিংসতায় জর্জরিত। গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সেটেলার ও সেনাদের মারাত্মক অভিযান বাড়ছে। ইসরায়েল লেবাননেও বিমান হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা দুর্বল হিজবুল্লাহকে বলপূর্বক নিরস্ত্র করতে দেশটির বিরুদ্ধে আরেকটি সর্বাত্মক হামলার ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের এক বছর পরেও, ইসরায়েলের দক্ষিণে অধিকৃত গোলান মালভূমির বাইরে সামরিক আধিপত্য বিস্তার করার জন্য অনুপ্রবেশ এবং হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থান আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। এই নথি স্বীকার করে যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এখনো রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ইসরায়েল যেন সুরক্ষিত থাকে’ তা নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি সরবরাহ ও শিপিং লেনগুলো রক্ষা করা।
ট্রাম্পের নতুন নিরাপত্তা কৌশলে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে রাখা হয়নি। এই নথিতে এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতা এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চীনকে মোকাবিলায় ভারসাম্য তৈরির জন্য এশীয় মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক (ও অন্যান্য) সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।’ এর মধ্য দিয়ে একটি ইঙ্গিত স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র যদি দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় সেটি হলো ভারত। আর এ কারণে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ান নিয়ে সংঘাত ঠেকানো’কে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে। আর এটি করতে তারা ‘আদর্শগতভাবে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার’ পক্ষে। এটি নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের মার্কিন অংশীদারদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
এ কৌশল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চায়। ওয়াশিংটন ‘ইউরোপকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং এক সারিতে থাকা সার্বভৌম জাতিগুলোর একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে সক্ষম করাকে’ অগ্রাধিকার দেবে।
বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎসও। তিনি বলেছেন, ইউরোপকে এখন নিজের নিরাপত্তা নীতি ও প্রতিরক্ষায় আরও আত্মনির্ভর হতে হবে; যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা রাখা চলবে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিরাপত্তা কৌশলে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ এবং ‘আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ’কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই নিরাপত্তা কৌশল দেশটিকে ইরাক-আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার পরিসর তৈরি করলেও, মাদক, অভিবাসন এবং অপরাধ ইস্যুতে সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর সম্ভাব্যতা খুলে রেখেছে। যার প্রথম শিকার হতে পারে ভেনেজুয়েলা।
লেখক: সাংবাদিক

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১৪ ঘণ্টা আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১৫ ঘণ্টা আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের ছায়া। ১৯৫২ সালে লাহোরের সম্ভ্রান্ত পশতুন পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই মানুষটি নিজের প্রতিভা, দৃঢ়সংকল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে ক্রীড়া জগতের যে উচ্চশিখর স্পর্শ করেছিলেন, তা চোখে পড়ার মতোই। কিন্তু শুধু মাঠের সীমাবদ্ধতায় তাঁকে বন্দী রাখা সম্ভব হয়নি। ক্রিকেটের পরিপূর্ণতা ছাড়িয়ে তিনি প্রবেশ করলেন রাজনীতির জটিল রাজপথে—যেখানে স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সংকল্পের সঙ্গে মিশে থাকে গণমানুষের আশা। খেলাধুলায় অর্জিত বিজয়ী মনোভাব এবং সাফল্যের জ্যোতি তাঁকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি শুধু একজন নেতা নন; তিনি হলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, সংস্কারক এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক—যিনি বিশ্বাস করতেন যে গণমানুষের শক্তিই সমাজের মূলচাকা। তাঁর জন্মভূমির ঐতিহ্য, শিক্ষা এবং সংগ্রামের প্রভাব তাঁকে এমন এক চরিত্রে গড়ে তুলেছিল, যেখানে খেলাধুলার তীক্ষ্ণ প্রতিযোগিতা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের অস্থিরতাকে একসঙ্গে বহন করা সম্ভব হয়।
ইমরানের জীবন যেন এক জীবন্ত গল্প—মাঠের উচ্ছ্বাস এবং সাফল্যের উজ্জ্বলতা থেকে রাজনৈতিক নিপীড়নের করুণতম অধ্যায়। এই দ্বৈত পরিসরেই তিনি থাকলেন সংগ্রামের প্রতি অদম্য ধৈর্য ধারণ করে। ইমরান খানের ক্রীড়াজীবনের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। তিনি তখন ছিলেন এক যুবক, যাঁর প্রতিভা, উৎসাহ ও অদম্য মনোবল তাঁকে ক্রিকেট জগতের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। মাঠে তাঁর উপস্থিতি শুধু বল ও ব্যাটের কৌশলের সমষ্টি ছিল না; এটি ছিল নেতৃত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ। ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বিজয় এনে দেওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত। সেই জয়ের মাধ্যমে ইমরান শুধু জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেননি, তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবেও অভিষিক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বের শৈলী, দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামলানোর দক্ষতা সমকালীন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে অমর হয়ে থাকবে। কিন্তু ক্রিকেটের উৎকর্ষই তাঁর জীবনের একমাত্র পরিমাপ নয়। খেলার পরিপূর্ণতা ছেড়ে তিনি মনোনিবেশ করেন মানবসেবায়। তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত শওকত খানুম মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার কেন্দ্র নয়; এটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর গভীর সংযোগের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মূলত সাধারণ মানুষের অনুদানের মাধ্যমে, আর এটি তাঁর সহানুভূতি, মানবিকতা এবং নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে ওঠে।
ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় যখন তিনি রাজনীতির জটিল পথে পা রাখেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি ছিল রাজনৈতিক মঞ্চের এক প্রান্তিক দল, কিন্তু ২০১০-এর দশকে হঠাৎ করেই এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুর্নীতির বিরোধিতা, জাতীয় মর্যাদা এবং ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র—এই তিনটি মূল স্লোগান নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মানুষের মনে নতুন আশা, নতুন বিশ্বাস এবং ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দেন, তিনি ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়বেন। কিন্তু শাসনকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সামনে আসে চ্যালেঞ্জের একটি বিশাল পাহাড়—অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, ঋণ এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের চাপ। কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা সহজ ছিল না। সেনা এবং ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে ওঠে অনিবার্য এবং এই দ্বন্দ্ব ক্রমে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাকে আরও জটিল করে তোলে।
২০২২ সাল থেকে শুরু হয় ইমরানের পতন। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অবনতি, একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তার এবং শেষ পর্যন্ত কারাগারে বন্দিত্ব—সবই একটি কঠোর রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। অনেকের কাছে মনে হয়, এসব ঘটনা শুধু আইনের প্রয়োগ নয়; বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক সূক্ষ্ম কিন্তু গভীর প্রমাণ। এমন অবস্থায়, ইমরান খানের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইমরান খান একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক নেতা হলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল গভীর, বিশ্লেষণধর্মী ও মানবিক। তিনি শুধু ক্ষমতা বা জনপ্রিয়তার পেছনে দৌড়াননি; বরং প্রতিটি বিষয়কে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং আলোচনায় যুক্তি ও সংবেদনশীলতার সমন্বয় ঘটাতেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁকে সাধারণ রাজনীতিকের চেয়ে আলাদা করত—একজন মানুষ যিনি চিন্তা, অনুভূতি এবং নৈতিক দৃঢ়তার সঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়াতে পারতেন। ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবনের এক অধ্যায়কে গভীর দ্বন্দ্ব ও বিরোধের গল্প বলা যায়। অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তনের চ্যালেঞ্জ, ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তির আকাঙ্ক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান—সবকিছুর মাঝেও তিনি ক্রমেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই দ্বন্দ্ব ছিল শুধু রাজনৈতিক কৌশল বা ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি ছিল রাষ্ট্রের শাসনকাঠামোর সঙ্গে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও নৈতিক দৃঢ়তার সংঘর্ষ।
২০২৩ সালে তিনি কারাগারে বন্দী হন। তখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা বন্ধ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন—সবকিছু এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে যেন তিনি সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় বলা যেতে পারে।
ইমরানের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেয় জুলফিকার আলী ভুট্টোর কথা—যিনি সেনা ও ক্ষমতার শক্তিশালী ছায়ার ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল্য দিতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ইমরানও সেই ইতিহাসের ছায়ায়, সেই একই চক্রের শিকার হয়েছেন বলে মনে হয়। কিন্তু এখানেই এক গভীর পাঠ নিহিত—যে সাহস, ন্যায় ও বিশ্বাসের জন্য সংগ্রাম করা যায়, তা কখনো ম্লান হয় না। ইমরান খানের জীবন তাই শুধু রাজনৈতিক বিবরণ নয়; এটি আমাদের সবার জন্য এক সাহসের, নৈতিকতার এবং অনমনীয় বিশ্বাসের অমর শিক্ষা হতে পারে।
এটি আমাদের আগামী প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয়, তবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসই চিরকাল গৌরবময়। ইমরানের জীবন তাই শুধুই ইতিহাস নয়; এটি সতর্কতা, প্রেরণা এবং অবিচল বিশ্বাসের এক অমর উদাহরণ।
লেখক: আইনজীবী ও গবেষক

ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের ছায়া। ১৯৫২ সালে লাহোরের সম্ভ্রান্ত পশতুন পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই মানুষটি নিজের প্রতিভা, দৃঢ়সংকল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে ক্রীড়া জগতের যে উচ্চশিখর স্পর্শ করেছিলেন, তা চোখে পড়ার মতোই। কিন্তু শুধু মাঠের সীমাবদ্ধতায় তাঁকে বন্দী রাখা সম্ভব হয়নি। ক্রিকেটের পরিপূর্ণতা ছাড়িয়ে তিনি প্রবেশ করলেন রাজনীতির জটিল রাজপথে—যেখানে স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সংকল্পের সঙ্গে মিশে থাকে গণমানুষের আশা। খেলাধুলায় অর্জিত বিজয়ী মনোভাব এবং সাফল্যের জ্যোতি তাঁকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি শুধু একজন নেতা নন; তিনি হলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, সংস্কারক এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক—যিনি বিশ্বাস করতেন যে গণমানুষের শক্তিই সমাজের মূলচাকা। তাঁর জন্মভূমির ঐতিহ্য, শিক্ষা এবং সংগ্রামের প্রভাব তাঁকে এমন এক চরিত্রে গড়ে তুলেছিল, যেখানে খেলাধুলার তীক্ষ্ণ প্রতিযোগিতা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের অস্থিরতাকে একসঙ্গে বহন করা সম্ভব হয়।
ইমরানের জীবন যেন এক জীবন্ত গল্প—মাঠের উচ্ছ্বাস এবং সাফল্যের উজ্জ্বলতা থেকে রাজনৈতিক নিপীড়নের করুণতম অধ্যায়। এই দ্বৈত পরিসরেই তিনি থাকলেন সংগ্রামের প্রতি অদম্য ধৈর্য ধারণ করে। ইমরান খানের ক্রীড়াজীবনের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। তিনি তখন ছিলেন এক যুবক, যাঁর প্রতিভা, উৎসাহ ও অদম্য মনোবল তাঁকে ক্রিকেট জগতের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। মাঠে তাঁর উপস্থিতি শুধু বল ও ব্যাটের কৌশলের সমষ্টি ছিল না; এটি ছিল নেতৃত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ। ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বিজয় এনে দেওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত। সেই জয়ের মাধ্যমে ইমরান শুধু জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেননি, তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবেও অভিষিক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বের শৈলী, দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামলানোর দক্ষতা সমকালীন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে অমর হয়ে থাকবে। কিন্তু ক্রিকেটের উৎকর্ষই তাঁর জীবনের একমাত্র পরিমাপ নয়। খেলার পরিপূর্ণতা ছেড়ে তিনি মনোনিবেশ করেন মানবসেবায়। তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত শওকত খানুম মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার কেন্দ্র নয়; এটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর গভীর সংযোগের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মূলত সাধারণ মানুষের অনুদানের মাধ্যমে, আর এটি তাঁর সহানুভূতি, মানবিকতা এবং নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে ওঠে।
ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় যখন তিনি রাজনীতির জটিল পথে পা রাখেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি ছিল রাজনৈতিক মঞ্চের এক প্রান্তিক দল, কিন্তু ২০১০-এর দশকে হঠাৎ করেই এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুর্নীতির বিরোধিতা, জাতীয় মর্যাদা এবং ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র—এই তিনটি মূল স্লোগান নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মানুষের মনে নতুন আশা, নতুন বিশ্বাস এবং ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দেন, তিনি ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়বেন। কিন্তু শাসনকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সামনে আসে চ্যালেঞ্জের একটি বিশাল পাহাড়—অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, ঋণ এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের চাপ। কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা সহজ ছিল না। সেনা এবং ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে ওঠে অনিবার্য এবং এই দ্বন্দ্ব ক্রমে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাকে আরও জটিল করে তোলে।
২০২২ সাল থেকে শুরু হয় ইমরানের পতন। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অবনতি, একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তার এবং শেষ পর্যন্ত কারাগারে বন্দিত্ব—সবই একটি কঠোর রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। অনেকের কাছে মনে হয়, এসব ঘটনা শুধু আইনের প্রয়োগ নয়; বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক সূক্ষ্ম কিন্তু গভীর প্রমাণ। এমন অবস্থায়, ইমরান খানের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইমরান খান একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক নেতা হলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল গভীর, বিশ্লেষণধর্মী ও মানবিক। তিনি শুধু ক্ষমতা বা জনপ্রিয়তার পেছনে দৌড়াননি; বরং প্রতিটি বিষয়কে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং আলোচনায় যুক্তি ও সংবেদনশীলতার সমন্বয় ঘটাতেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁকে সাধারণ রাজনীতিকের চেয়ে আলাদা করত—একজন মানুষ যিনি চিন্তা, অনুভূতি এবং নৈতিক দৃঢ়তার সঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়াতে পারতেন। ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবনের এক অধ্যায়কে গভীর দ্বন্দ্ব ও বিরোধের গল্প বলা যায়। অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তনের চ্যালেঞ্জ, ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তির আকাঙ্ক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান—সবকিছুর মাঝেও তিনি ক্রমেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই দ্বন্দ্ব ছিল শুধু রাজনৈতিক কৌশল বা ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি ছিল রাষ্ট্রের শাসনকাঠামোর সঙ্গে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও নৈতিক দৃঢ়তার সংঘর্ষ।
২০২৩ সালে তিনি কারাগারে বন্দী হন। তখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা বন্ধ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন—সবকিছু এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে যেন তিনি সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় বলা যেতে পারে।
ইমরানের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেয় জুলফিকার আলী ভুট্টোর কথা—যিনি সেনা ও ক্ষমতার শক্তিশালী ছায়ার ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল্য দিতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ইমরানও সেই ইতিহাসের ছায়ায়, সেই একই চক্রের শিকার হয়েছেন বলে মনে হয়। কিন্তু এখানেই এক গভীর পাঠ নিহিত—যে সাহস, ন্যায় ও বিশ্বাসের জন্য সংগ্রাম করা যায়, তা কখনো ম্লান হয় না। ইমরান খানের জীবন তাই শুধু রাজনৈতিক বিবরণ নয়; এটি আমাদের সবার জন্য এক সাহসের, নৈতিকতার এবং অনমনীয় বিশ্বাসের অমর শিক্ষা হতে পারে।
এটি আমাদের আগামী প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয়, তবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসই চিরকাল গৌরবময়। ইমরানের জীবন তাই শুধুই ইতিহাস নয়; এটি সতর্কতা, প্রেরণা এবং অবিচল বিশ্বাসের এক অমর উদাহরণ।
লেখক: আইনজীবী ও গবেষক

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১৪ ঘণ্টা আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। তিনি যে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে একেবারেই শ্রদ্ধা করেন না, এবং নারীর মর্যাদা রক্ষা করার ব্যাপারে তাঁর অবস্থান যে ধোঁয়াশায় ঘেরা, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পাওয়া মানুষেরা আজকাল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে, নারী মুক্তি নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করে চলেছেন, তাতে দেশের গতি উল্টো দিকে বহমান কি না, সে প্রশ্ন মনে জাগতে বাধ্য।
চেষ্টা হয়েছে আগেও, কিন্তু বিজয়ের মাসে এসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা যেন বেড়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে টকশোর মধ্যে এমন কাউকে কাউকে এমন কিছু কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের স্বাধীনতা-ভাবনাটিকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কেন এইসব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রমাণহীন কটাক্ষ করা মানুষদের জায়গা করে দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার। স্বাধীনতা মানে স্ব অধীনতা, স্বাধীনতা মানে সত্য-মিথ্যা সবকিছু সেরদরে বলার স্বাধীনতা নয়—এ কথা যারা বুঝতে অক্ষম, তাদেরই আস্ফালন দেখা যাচ্ছে বেশি। এখনই সতর্ক না হলে এই ভণ্ড-প্রতারকের দল গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারে সয়লাব করে দিতে পারে দেশ।
কারও চাপিয়ে দেওয়া বয়ানে স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না। কিন্তু দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নানা তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করেই স্বাধীনতার ইতিহাস লিখিত হবে। কে কোথায় কার নামে কটাক্ষ করল, আর সেটাই হয়ে উঠল স্বাধীনতার ইতিহাস—এ কথা যারা ভাবে, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্যই। এমন একটি দেশ গড়ে উঠবে, যে দেশে শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না। নিজের হাতেই থাকবে নিজের নির্ভরতার চাবি। স্বাধীনতার পর সে আশা পূরণ হয়নি বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুর্গন্ধযুক্ত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানি মনোভাব পোষণ করে, তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কী-ইবা করার আছে?
আর বেগম রোকেয়া? নারী মুক্তির বিপক্ষে যারা দাঁড়ায়, তারা এই মহীয়সী নারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতেই থাকে। এটা আজকের ব্যাপার নয়। নারীকে যারা পুরুষের সম্পত্তি বলে মনে করে থাকে, তারা উদার দৃষ্টিতে মানুষের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে অপারগ। কথা বলার স্বাধীনতা থাকায় এরা মুক্তকচ্ছ শব্দাবলি উচ্চারণ করে যাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে, নারী মুক্তি প্রসঙ্গে কেউ যদি কটাক্ষ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
এসব উদ্ভট প্রসঙ্গ তুলে এনে যারা নিজেদের লাইমলাইটে আনতে চায়, তাদের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা কী, সেটা প্রকাশ করা জরুরি। কারণ, সরকার যদি এ ধরনের অন্যায্য, প্রতিক্রিয়াশীল আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে না দাঁড়ায়, তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারি ভাষ্য জানা দরকার।

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। তিনি যে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে একেবারেই শ্রদ্ধা করেন না, এবং নারীর মর্যাদা রক্ষা করার ব্যাপারে তাঁর অবস্থান যে ধোঁয়াশায় ঘেরা, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পাওয়া মানুষেরা আজকাল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে, নারী মুক্তি নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করে চলেছেন, তাতে দেশের গতি উল্টো দিকে বহমান কি না, সে প্রশ্ন মনে জাগতে বাধ্য।
চেষ্টা হয়েছে আগেও, কিন্তু বিজয়ের মাসে এসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা যেন বেড়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে টকশোর মধ্যে এমন কাউকে কাউকে এমন কিছু কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের স্বাধীনতা-ভাবনাটিকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কেন এইসব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রমাণহীন কটাক্ষ করা মানুষদের জায়গা করে দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার। স্বাধীনতা মানে স্ব অধীনতা, স্বাধীনতা মানে সত্য-মিথ্যা সবকিছু সেরদরে বলার স্বাধীনতা নয়—এ কথা যারা বুঝতে অক্ষম, তাদেরই আস্ফালন দেখা যাচ্ছে বেশি। এখনই সতর্ক না হলে এই ভণ্ড-প্রতারকের দল গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারে সয়লাব করে দিতে পারে দেশ।
কারও চাপিয়ে দেওয়া বয়ানে স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না। কিন্তু দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নানা তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করেই স্বাধীনতার ইতিহাস লিখিত হবে। কে কোথায় কার নামে কটাক্ষ করল, আর সেটাই হয়ে উঠল স্বাধীনতার ইতিহাস—এ কথা যারা ভাবে, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্যই। এমন একটি দেশ গড়ে উঠবে, যে দেশে শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না। নিজের হাতেই থাকবে নিজের নির্ভরতার চাবি। স্বাধীনতার পর সে আশা পূরণ হয়নি বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুর্গন্ধযুক্ত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানি মনোভাব পোষণ করে, তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কী-ইবা করার আছে?
আর বেগম রোকেয়া? নারী মুক্তির বিপক্ষে যারা দাঁড়ায়, তারা এই মহীয়সী নারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতেই থাকে। এটা আজকের ব্যাপার নয়। নারীকে যারা পুরুষের সম্পত্তি বলে মনে করে থাকে, তারা উদার দৃষ্টিতে মানুষের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে অপারগ। কথা বলার স্বাধীনতা থাকায় এরা মুক্তকচ্ছ শব্দাবলি উচ্চারণ করে যাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে, নারী মুক্তি প্রসঙ্গে কেউ যদি কটাক্ষ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
এসব উদ্ভট প্রসঙ্গ তুলে এনে যারা নিজেদের লাইমলাইটে আনতে চায়, তাদের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা কী, সেটা প্রকাশ করা জরুরি। কারণ, সরকার যদি এ ধরনের অন্যায্য, প্রতিক্রিয়াশীল আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে না দাঁড়ায়, তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারি ভাষ্য জানা দরকার।

নভেম্বরের ১৯ তারিখ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এদিন ভারতের মহাপরাক্রমশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তাঁর সরকারের করা তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সঙ্গে দেশবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত মুখ হয়ে ওঠ
২৩ নভেম্বর ২০২১
বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১৪ ঘণ্টা আগে
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১৪ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১৪ ঘণ্টা আগে