আহমেদ শমসের, সাংবাদিক
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন উদ্যোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকীর্ণতাকে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই দলটি গঠিত হয়েছে। এই দলটি মূলত বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে একত্র করে একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ নতুন কিছু নয়। অতীতেও বহু বিকল্প রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকতে পারেনি। এনসিপি কি আদৌ পারবে টিকে থাকতে, নাকি এটি শুধুই আরেকটি স্বল্পস্থায়ী রাজনৈতিক উদ্যোগ হয়ে থাকবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
প্রথমেই, এনসিপির ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এটি নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক ভাষা নির্মাণের চেষ্টা করছে। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে দুটি প্রধান শিবিরের বাইরে কার্যকর কোনো মধ্যপন্থী বা তৃতীয় শক্তির উপস্থিতি নেই। একদিকে আওয়ামী লীগ আর অন্যদিকে বিএনপি। এ-দল ক্ষমতায় থাকলে ও-দল বিরোধী দলের ভূমিকায়। এই দ্বিদলীয় বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, সফল হয়নি। সাধারণ মানুষও কেন যেন এই দুই ধারার বাইরে আস্থা রাখতে চায়নি। বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান হলেও তা হালে পানি পায়নি। এবার মূলত তরুণসমাজ এগিয়ে এসেছে এনসিপি গঠনে। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারা সেই বিকল্প হতে চায়। তারা বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের বাইরে এসে নতুন ধরনের রাজনীতির ভাষা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে দলীয় আনুগত্যের বাইরে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষ করে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের বাইরে থেকে একটি মধ্যপন্থী ও গণমুখী রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে তোলার কথা বলছে। এটি যদি বাস্তবে কার্যকর করা যায়, তবে এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন এক ধারার সূচনা করলেও করতে পারে।
এনসিপির আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো তাদের গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সংবিধান অনেকবার সংশোধন করা হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। এনসিপি বলছে, তারা গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চায়, যাতে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকবে। এটি একটি বড় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়ন করা সহজ নয়, তবে এটি দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করতে পারে। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়।
নতুন দল হিসেবে এনসিপির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। প্রথমত, এই দলের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক ভাষা তৈরির চেষ্টা যতই মহৎ হোক না কেন, বাস্তব রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বেশ কঠিন, যেখানে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করা, প্রশাসনিক জটিলতা সামলানো এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা সহজ কাজ নয়। এনসিপির নেতারা এই বাস্তবতাকে কতটা উপলব্ধিতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন, তা আমরা জানি না। সব সময় গায়ের জোরে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় না। নমনীয়তা রাজনীতির একটি উত্তম কৌশল। নীতির প্রশ্নে আপসহীন হয়ে কৌশলে নমনীয় হওয়া রাজনীতির ক্লাসিকস বৈশিষ্ট্য। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায় কৌশলে অনমনীয় হয়ে নীতিতে আপসকামিতা। এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা এই বিষয়টি মনে রাখলে ভালো করবেন। চকচক করলেই সোনা হয় না।
দ্বিতীয়ত, এনসিপির আদর্শিক ও সাংগঠনিক ঐক্য নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। দলটি সাবেক বামপন্থী, ডানপন্থী এবং মধ্যপন্থীদের একত্র করে গঠিত হয়েছে। ফলে, আদর্শিক বিভাজনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ইতিহাস সাক্ষী, এমন
বহু দল গঠিত হয়েছে যেখানে আদর্শিক মতবিরোধের কারণে দলটি বেশি দিন টেকেনি। এনসিপিকে যদি আদর্শিকভাবে সুসংহত হতে হয়, তাহলে তাদের স্পষ্টভাবে নিজেদের রাজনৈতিক দর্শন নির্ধারণ করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন এড়াতে হবে।
তৃতীয়ত, এনসিপির বিরুদ্ধে ‘কিংস পার্টি’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে একাধিকবার নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে
সরকারি মদদ থাকার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে নতুন দল গঠন করে বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এনসিপির নেতারা দাবি করছেন যে তাঁদের দল কোনোভাবেই সরকারি আনুকূল্যে গঠিত হয়নি এবং তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান। তবে এই অভিযোগ একবার উঠলে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে যায়। জনগণ যদি মনে করে যে এই দলটি আসলে বিদ্যমান ক্ষমতার খেলার একটি অংশ, তাহলে তারা এটিকে গুরুত্ব দেবে না।
অর্থায়নের প্রশ্নেও এনসিপি কিছুটা চাপের মুখে পড়তে পারে। দলটির নেতারা বলছেন যে তাঁদের অর্থায়ন সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে হচ্ছে, তবে একটি রাজনৈতিক দল চালাতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি থাকা অপরিহার্য। এনসিপির অর্থ কোথা থেকে আসছে, কারা এই দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং এর পেছনে কোনো করপোরেট বা বিদেশি স্বার্থ জড়িত আছে কি না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অতীতে অনেক রাজনৈতিক দল করপোরেট স্বার্থের কারণে নীতিগতভাবে আপস করেছে। এনসিপিকে যদি সত্যিই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হয়, তবে তাদের অর্থায়নের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, বিকল্প শক্তি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া নতুন কিছু নয়। অতীতে অনেক দলই বিকল্প হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে, কিন্তু বেশির ভাগই টিকে থাকতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিকল্পধারা বাংলাদেশ কিংবা গণফোরামের মতো দলগুলো প্রথম দিকে আলোচনায় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রভাব হারিয়েছে। এই দলগুলোর ব্যর্থতার কারণ ছিল নেতৃত্বের অভাব, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনগণের আস্থার সংকট। এনসিপি যদি টিকে থাকতে চায়, তাহলে তাদের এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন এক রাজনৈতিক উদ্যোগ হলেও এটি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা কঠিন। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন দল গঠনের পথ কখনোই সহজ নয়। একদিকে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক আক্রমণ, অন্যদিকে জনসমর্থন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলে এনসিপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। যদি তারা সত্যিই একটি সুসংগঠিত, আদর্শিকভাবে সুসংহত এবং গণমুখী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে, তাহলে এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। সূচনালগ্নে আমরা ভালোটাই আশা করি। কারণ, আশাই জীবন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন উদ্যোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকীর্ণতাকে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই দলটি গঠিত হয়েছে। এই দলটি মূলত বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে একত্র করে একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ নতুন কিছু নয়। অতীতেও বহু বিকল্প রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকতে পারেনি। এনসিপি কি আদৌ পারবে টিকে থাকতে, নাকি এটি শুধুই আরেকটি স্বল্পস্থায়ী রাজনৈতিক উদ্যোগ হয়ে থাকবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
প্রথমেই, এনসিপির ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এটি নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক ভাষা নির্মাণের চেষ্টা করছে। বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে দুটি প্রধান শিবিরের বাইরে কার্যকর কোনো মধ্যপন্থী বা তৃতীয় শক্তির উপস্থিতি নেই। একদিকে আওয়ামী লীগ আর অন্যদিকে বিএনপি। এ-দল ক্ষমতায় থাকলে ও-দল বিরোধী দলের ভূমিকায়। এই দ্বিদলীয় বৃত্ত ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, সফল হয়নি। সাধারণ মানুষও কেন যেন এই দুই ধারার বাইরে আস্থা রাখতে চায়নি। বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান হলেও তা হালে পানি পায়নি। এবার মূলত তরুণসমাজ এগিয়ে এসেছে এনসিপি গঠনে। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারা সেই বিকল্প হতে চায়। তারা বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের বাইরে এসে নতুন ধরনের রাজনীতির ভাষা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে দলীয় আনুগত্যের বাইরে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষ করে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদের বাইরে থেকে একটি মধ্যপন্থী ও গণমুখী রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে তোলার কথা বলছে। এটি যদি বাস্তবে কার্যকর করা যায়, তবে এটি দেশের রাজনীতিতে নতুন এক ধারার সূচনা করলেও করতে পারে।
এনসিপির আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো তাদের গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সংবিধান অনেকবার সংশোধন করা হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। এনসিপি বলছে, তারা গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চায়, যাতে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকবে। এটি একটি বড় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়ন করা সহজ নয়, তবে এটি দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করতে পারে। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়।
নতুন দল হিসেবে এনসিপির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। প্রথমত, এই দলের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। নতুন নেতৃত্ব এবং নতুন রাজনৈতিক ভাষা তৈরির চেষ্টা যতই মহৎ হোক না কেন, বাস্তব রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা বেশ কঠিন, যেখানে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করা, প্রশাসনিক জটিলতা সামলানো এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা সহজ কাজ নয়। এনসিপির নেতারা এই বাস্তবতাকে কতটা উপলব্ধিতে নিয়ে মাঠে নেমেছেন, তা আমরা জানি না। সব সময় গায়ের জোরে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায় না। নমনীয়তা রাজনীতির একটি উত্তম কৌশল। নীতির প্রশ্নে আপসহীন হয়ে কৌশলে নমনীয় হওয়া রাজনীতির ক্লাসিকস বৈশিষ্ট্য। অথচ আমাদের দেশে দেখা যায় কৌশলে অনমনীয় হয়ে নীতিতে আপসকামিতা। এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা এই বিষয়টি মনে রাখলে ভালো করবেন। চকচক করলেই সোনা হয় না।
দ্বিতীয়ত, এনসিপির আদর্শিক ও সাংগঠনিক ঐক্য নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। দলটি সাবেক বামপন্থী, ডানপন্থী এবং মধ্যপন্থীদের একত্র করে গঠিত হয়েছে। ফলে, আদর্শিক বিভাজনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ইতিহাস সাক্ষী, এমন
বহু দল গঠিত হয়েছে যেখানে আদর্শিক মতবিরোধের কারণে দলটি বেশি দিন টেকেনি। এনসিপিকে যদি আদর্শিকভাবে সুসংহত হতে হয়, তাহলে তাদের স্পষ্টভাবে নিজেদের রাজনৈতিক দর্শন নির্ধারণ করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন এড়াতে হবে।
তৃতীয়ত, এনসিপির বিরুদ্ধে ‘কিংস পার্টি’ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে একাধিকবার নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে
সরকারি মদদ থাকার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে নতুন দল গঠন করে বিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এনসিপির নেতারা দাবি করছেন যে তাঁদের দল কোনোভাবেই সরকারি আনুকূল্যে গঠিত হয়নি এবং তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান। তবে এই অভিযোগ একবার উঠলে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে যায়। জনগণ যদি মনে করে যে এই দলটি আসলে বিদ্যমান ক্ষমতার খেলার একটি অংশ, তাহলে তারা এটিকে গুরুত্ব দেবে না।
অর্থায়নের প্রশ্নেও এনসিপি কিছুটা চাপের মুখে পড়তে পারে। দলটির নেতারা বলছেন যে তাঁদের অর্থায়ন সদস্যদের চাঁদার মাধ্যমে হচ্ছে, তবে একটি রাজনৈতিক দল চালাতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি থাকা অপরিহার্য। এনসিপির অর্থ কোথা থেকে আসছে, কারা এই দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং এর পেছনে কোনো করপোরেট বা বিদেশি স্বার্থ জড়িত আছে কি না, সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অতীতে অনেক রাজনৈতিক দল করপোরেট স্বার্থের কারণে নীতিগতভাবে আপস করেছে। এনসিপিকে যদি সত্যিই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হয়, তবে তাদের অর্থায়নের বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, বিকল্প শক্তি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া নতুন কিছু নয়। অতীতে অনেক দলই বিকল্প হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে, কিন্তু বেশির ভাগই টিকে থাকতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিকল্পধারা বাংলাদেশ কিংবা গণফোরামের মতো দলগুলো প্রথম দিকে আলোচনায় থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রভাব হারিয়েছে। এই দলগুলোর ব্যর্থতার কারণ ছিল নেতৃত্বের অভাব, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জনগণের আস্থার সংকট। এনসিপি যদি টিকে থাকতে চায়, তাহলে তাদের এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন এক রাজনৈতিক উদ্যোগ হলেও এটি কতটা কার্যকর হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা কঠিন। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন দল গঠনের পথ কখনোই সহজ নয়। একদিকে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক আক্রমণ, অন্যদিকে জনসমর্থন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ—এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলে এনসিপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। যদি তারা সত্যিই একটি সুসংগঠিত, আদর্শিকভাবে সুসংহত এবং গণমুখী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারে, তাহলে এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। সূচনালগ্নে আমরা ভালোটাই আশা করি। কারণ, আশাই জীবন।
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগেজুলাই অভ্যুত্থানের নায়কেরা নতুন দল গঠনের মাধ্যমে নবযাত্রার ঘোষণা দেওয়ার আগমুহূর্তে একটি খবর পুরোনো আলোচনাকেই আবার সামনে এনেছে। খবরটি হলো: বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সূচকে এক বছরে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে।
১ দিন আগেএকাত্তরের যুদ্ধকালের মতো সমষ্টিগত দুঃসময় আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি। যুদ্ধটা ছিল রাজনৈতিক এবং তাতে জাতীয়তাবাদ নানাভাবে ও বিভিন্ন দিক দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তি সে সময়ে বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, তার দুর্বলতাও যে ধরা পড়েনি এমন নয়। বাঙালির জাতীয়তাবাদের শক্তি ছিল ঐক্যে...
২ দিন আগেনতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাবের ওপর আয়োজিত এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক গণশুনানি সব শ্রেণির গ্রাহক প্রতিনিধিদের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারেনি। গত বুধবার ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই গণশুনানির আয়োজন করেছিল বিইআরসি।
২ দিন আগে