Ajker Patrika

কোন প্রবীণ বিরক্তিকর

হাসান আলী 
হাসান আলী
হাসান আলী

প্রবীণ বয়সে অনেকের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসে এবং গুরুত্ব কমতে থাকে। দীর্ঘ জীবনলাভের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে ভালো লাগে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের চোখের সামনে দেখলে জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের কথা মনে পড়ে। জীবনে পাওয়া না-পাওয়ার বেদনা সামনে এসে হাজির হয়। অনেকেই আফসোস করেন দেশের রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার দুরবস্থার কথা ভেবে। কিন্তু এসব আলোচনা করতে গিয়ে প্রবীণ হিসেবে আপনি অন্যকে বিরক্ত করছেন না তো?

সবার আলোচনা করার ঢং কিংবা আচার-আচরণ এক রকম নয়। কেউ কেউ অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারেন। যেসব প্রবীণ সঙ্গীকে সন্দেহের চোখে দেখেন, সঙ্গীর প্রতিটি কাজ-কথাকে নেতিবাচকভাবে নেন, তারা বিরক্তিকর। প্রবীণদের কেউ কেউ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চান, কোনো কিছুর দায়-দায়িত্ব নিতে চান না, নিজের দায়ভার অন্যের কাঁধে চাপাতে পছন্দ করেন, প্রশংসা শুনতে আকুল হয়ে ওঠেন, স্বীকৃতি পেতে মরিয়া হয়ে যান, টাকাপয়সা খরচ করে পুরস্কার নেন, অন্যের সমালোচনা-চরিত্র হননে-বিশ্লেষণে আনন্দ পান, কথা চালাচালি করে ঝগড়াঝাঁটি তৈরি করেন, ক্রমাগত নেতিবাচক চর্চা চালু রাখার কারণে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারেন!

কিছু কিছু প্রবীণ রয়েছেন, যাঁরা কোনো অর্জন বা কৃতিত্বকে নিজের বলে চালিয়ে দেন, কথা ও কাজ দিয়ে অন্যকে ছোট বা অসম্মান করেন। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল না হলে, পরশ্রীকাতরতা বেড়ে গেলে, ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকলে, হতাশা ছড়িয়ে দিলে অবশ্যই আপনি একজন বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কোনো কোনো প্রবীণ আছেন, যাঁরা ফোন রিসিভ করেন না বা কথা শেষ না হতেই লাইন কেটে দেন। ধারকর্জ করেন, কিন্তু সময়মতো পরিশোধ করতে গড়িমসি করেন, কেউ দাওয়াত দিলে অবজ্ঞা করেন, আবার দাওয়াত না পেলে বকাবকি করেন, কাউকে ছাড় দিতে চান না, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন, কাউকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে খোঁটা দেন। অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলে জানতে চান কে কে আসবেন, অতিথি পছন্দ না হলে চুপচাপ থাকেন অথবা যেতে অস্বীকার করেন, দাওয়াত গ্রহণ করেন অথচ আসেন না, অনুষ্ঠানে বিলম্ব করে আসেন—এঁরা বিরক্তিকর মানুষ।

উচ্চশিক্ষিত কিছু প্রবীণ রয়েছেন, যাঁরা মাইক হাতে পেলে কথা বলতেই থাকেন, কথা বলতে না দিলে কিংবা সংক্ষিপ্ত করতে বললে রেগে যান, কেউ কেউ অতিমাত্রায় নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে থাকেন, হোক সেটা প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয়। শ্রোতারা বক্তব্য শুনছে, নাকি নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলিতে ব্যস্ত, সেটুকু বিবেচনা করতে অক্ষম প্রবীণও রয়েছেন। বক্তৃতা করার সময় বারবার হাততালি বক্তৃতা শেষ করার তাগিদ কি না, তা বিবেচনা না করলে এবং শ্রোতারা বক্তব্য শুনতে রাজি কি না, তা বিবেচনায় না নিলে আপনি একজন বিরক্তিকর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার সময় অপর পক্ষ ঘন ঘন হালকা জবাব দিলে বুঝতে হবে তিনি বিরক্ত এবং কথা শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন। কথা বলার সময় কেউ ব্যাঘাত সৃষ্টি করার অর্থ এই নয় যে, তিনি আপনার কথা শুনতে চান না। যদি তিনি আপনাকে বিষয়বস্তুর বাইরে নিয়ে যেতে চান, তবে বুঝতে হবে কথা থামানোর সময় হয়ে এসেছে। আপনার কথা অপর পক্ষ চুপচাপ শুনে যাচ্ছে, এর মানে তাঁর আগ্রহ নেই অথবা তিনি বিরক্ত। আপনার কথা অপর পক্ষ শুনছে, নাকি বিরক্ত হচ্ছে, তা দেহের অবস্থান থেকে বোঝা যাবে। যদি কাছাকাছি এসে শুনতে চায় তবে ঠিক আছে। আর দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বুঝতে হবে পরিস্থিতি প্রতিকূল।

গায়ে পড়ে জ্ঞান বিতরণ বা উপকার করার চেষ্টা অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারে। নারীদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করার নামে অশ্লীল যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা অথবা আদর করার নাম করে স্পর্শকাতর স্থানে হাত রাখা চরম বিরক্তিকর বিষয়।

যেসব প্রবীণ কথায় কথায় বলেন—কিছু ভালো লাগে না, ভালো দিন শেষ হয়েছে, খারাপ দিনগুলো সামনে, ভালো লোক মুখে মুখে, এ দেশের উন্নতি অসম্ভব, আমরা চোরের খনি পেয়েছি, রাজনীতি এখন অনেক কঠিন, কোনো আশা দেখি না, ভরসা পাই না, আছে জালিয়াতি-প্রতারণা আর ঠগবাজি, আমি একদম হতাশ, আমার সব দেখা শেষ—এ রকম বলা মানুষ বিরক্তিকর হতে পারেন।

যেসব প্রবীণ অভিযোগ, নালিশ, ক্ষোভ প্রকাশে একদম সময় নেন না, নিজের ভাগ্য মন্দ বলে বিলাপ করেন, ভালো কিছু করতে না পারার জন্য অন্যকে দায়ী করেন, পুরোনো প্রমোশন-পোস্টিং নিয়ে অভিশাপ দেন, ব্যবসায় লাভ-লোকসানের দায়ভার সরকারের ওপর চাপিয়ে দেন, অনেকেই তাঁদের বিরক্তিকর মনে করেন।

একজন প্রবীণের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা না থাকলে, ভালো গল্প করার ক্ষমতা না থাকলে, নিজস্ব মতামত দেওয়ার যোগ্যতা না থাকলে, অন্যের ইশারা-ইঙ্গিত বুঝতে না পারলে, কথাবার্তায় সংযত না হলে, একই কাজ বারবার করলে বিরক্তির কারণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আপনার আচার-আচরণ ও উপস্থিতি যদি অন্যদের আনন্দ না দেয়, শুধু ব্যর্থ অসুখী মানুষের উদাহরণ সামনে তুলে ধরলে, আত্মবিশ্বাস কমে গেলে, দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হলে, সামাজিক জীবনকে তাচ্ছিল্য করলে নিঃসন্দেহে আপনি বিরক্তিকর একজন মানুষ।

যা কিছু ভালো লাগে, তা নিয়ে মনের আনন্দ প্রকাশ করুন, মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন, মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীল কাজে লাগান। দুঃখ-দুর্দশাকে বিলাপ করে কিংবা ইনিয়ে-বিনিয়ে বললে কমে না, বরং সম্মানহানি হয়। মনে রাখতে হবে, বিরক্তিকর মানুষের উন্নয়নদক্ষতা কম।

হাসান আলী, প্রবীণ বিষয়ে লেখক গবেষক ও সংগঠক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত