জাহীদ রেজা নূর

১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। পুনর্গঠন এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহির প্রশ্নটি সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে বাইরের পৃথিবী বুঝে উঠতে পারেনি। সোভিয়েত শাসনব্যবস্থায় এত সব জঞ্জাল জমেছিল, যা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে সাফ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল, কারণ সেই জঞ্জাল সৃষ্টির মূল দায়ভার ছিল তাদেরই। তারা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সবখানে পার্টি-কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তারা রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ ও সংস্কৃতি জগৎকে আত্মীকৃত করে ফেলেছিল। বিরুদ্ধমত সহ্য করা হতো না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ বইটি পড়লে সে সময়ের বাস্তবতা বোঝা সহজ হয়। তিনি সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলোয় সমাজতন্ত্র পতনের নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য চিত্র এঁকেছেন। আমি শুধু ১৯৮৯ সালের কিছু ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৮৯ সালের জুন মাসে পোল্যান্ডে আংশিকভাবে মুক্ত নির্বাচন হয়েছিল, কমিউনিস্টবিরোধী সলিডারিটি সরকার এসেছিল ক্ষমতায়। হাঙ্গেরি খুলে দিয়েছিল তাদের সীমান্ত, সে দেশে পতন ঘটেছিল কমিউনিস্ট শাসনের। সে বছর ৯ নভেম্বর ভেঙে পড়েছিল বার্লিন প্রাচীর। সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দুই জার্মানির মিলনদৃশ্য দেখেছিল। চেকোস্লোভাকিয়ায় ঘটেছিল ভেলভেট রেভল্যুশন, শান্তিপূর্ণভাবেই পতন হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসনের, আর এ ক্ষেত্রে রোমানিয়ার কথা তো আলাদা করে বলতেই হয়। চসেস্কুর পতন ও তাঁকে হত্যা করার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক ব্লক একেবারেই ভেঙে পড়ে। বাদ থাকল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে।
সে সময় কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল মানুষ, সে কথা মনে করিয়ে দিতে চাই পরবর্তী বিষয়টিতে প্রবেশ করার উপলক্ষ হিসেবে।
মনে করিয়ে দিতে চাই, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মূল নেতা লেনিনের ভাস্কর্যও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছিল, ভূমিসাৎ করা হয়েছিল—সে দৃশ্যও দেখেছিল পৃথিবীর মানুষ।
২. ‘রোডস মাস্ট ফল’ আন্দোলনটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের ২৪ বছর পর। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ইউনিভার্সিটি অব কেপটাউন’-এ ২০১৫ সালের ৯ মার্চ শুরু হয়েছিল এ আন্দোলন। ছাত্রনেতা চুমা ম্যাকুয়ে (ইংরেজিতে Chumani Maxwele) সেসিল জন রোডসের মূর্তির ওপর মানববর্জ্য নিক্ষেপ করেছিলেন। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
রোডস ছিলেন একজন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী, যাঁকে আফ্রিকা দখলের মূল স্থপতি বলা হয়ে থাকে। আফ্রিকার সম্পদ দখল ও শোষণের প্রতীক হিসেবেই তাঁকে বিবেচনা করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, রোডসের ভাস্কর্য এখানে থাকার অর্থ হচ্ছে, তা উপনিবেশবাদেরই জয়গান গাইবে। সুতরাং এই ভাস্কর্য সরিয়ে বি-উপনিবেশকরণের দিকে জোর দিতে হবে। ‘রোডস মাস্ট ফল’ হলো রোডসের ভাস্কর্য অপসারণ করার আন্দোলন। আন্দোলন শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়। এরপর শিক্ষাক্ষেত্রে, পাঠ্যক্রমে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে, যা অন্য এক আলোচনার বিষয়।
আমরা এখান থেকে সরাসরি চলে যাব ব্রিটেনে, কারণ এই আন্দোলনের আঁচ লেগেছিল ব্রিটেনেও। অক্সফোর্ডের ওরিয়েল কলেজের সামনে থাকা রোডসের ভাস্কর্য অপসারণ নিয়েও সোচ্চার হয়ে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভাস্কর্য এখনো পুরোপুরি অপসারিত হয়নি যদিও, তবে পাঠ্যক্রমে বি-উপনিবেশকরণ প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্ব পায়। পুঁজিবাদ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ভাষা, রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়-কাঠামোতে বৈষম্য নিয়ে তর্ক-বিতর্কের পথ প্রশস্ত হয়।
৩. আরেকটি আন্দোলনের কথা বলে মূল আলোচনায় প্রবেশ করব। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালে আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোর ট্রেভন মার্টিনকে গুলি করে হত্যা করেছিল শ্বেতাঙ্গ জর্জ জিমারম্যান। কিন্তু আদালতের রায়ে তিনি বেকসুর খালাস পান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বাক্য ঘুরতে থাকে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’।
তবে এ আন্দোলনটি বিস্ফোরিত হয়েছে ২০২০ সালের মে মাসে। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে প্রায় ৯ মিনিট চেপে ধরে ছিলেন। ফ্লয়েডের শেষ কথা ছিল, ‘আই কান্ট ব্রিথ’ (আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না)। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। ৫০টি রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শহরে বিক্ষোভ হয়। ৬০টির বেশি দেশে প্রতিবাদ হয়। পুলিশের জবাবদিহি নিয়ে নতুন আইন করার দাবি ওঠে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের একটি বড় মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে এই ঘটনা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এ সময় কনফেডারেট ভাস্কর্যগুলো অপসারণের দাবি ওঠে। কনফেডারেট বলতে বোঝায় তাদের কথা, যারা দাসপ্রথা বজায় রাখার জন্য যুদ্ধ করেছিল।
তারই রেশ ধরে ব্রিটেনেও উঠেছিল কলস্টনের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি। এডওয়ার্ড কলস্টন ব্রিটেনের ইতিহাসে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। দাতব্য কর্ম করেছেন অনেক। কিন্তু তাঁর একটি নেতিবাচক পরিচয় হলো, তিনি দাস-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান অংশীদার। ব্রিটেনের কুখ্যাত ট্রান্স-আটলান্টিক দাস-ব্যবসার সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর সম্পৃক্ততা।
৪. এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। ভাস্কর্য বা স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙার কাজটি আসলে কীভাবে দেখে মানুষ? ব্রিটিশ সংবাদ ও মতামত ওয়েবসাইট ‘আনহার্ড’ মূলত রক্ষণশীল ও বামপন্থী উভয় দৃষ্টিভঙ্গির লেখাই প্রকাশ করে থাকে। সেখানে এই ভাস্কর্য ভাঙাভাঙির মনস্তত্ত্ব নিয়ে একটি ভালো লেখা লিখেছেন জোয়েল ডে। লেখাটিতে সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ও ব্রিটেনে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ব্যাপারে দুই বিপরীত মতবাদ নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ রয়েছে। তারই আলোকে কিছু কথা বলা যায়।
‘রোডস মাস্ট ফল’ আর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সরাসরি প্রভাব পড়েছিল ব্রিটেনজুড়ে। আর তাতে ছিল উপনিবেশবিরোধী ভাবনার স্ফুরণ। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের যে স্মৃতিস্তম্ভগুলো ছিল, সেই ব্যক্তিদের বিবেচনা করা হচ্ছিল বর্ণবাদের উসকানিদাতা হিসেবে। কলস্টনের ভাস্কর্য উচ্ছেদের পাশাপাশি রবার্ট দ্য ব্রুস থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিস্তম্ভও পড়েছে ভাঙচুরের তালিকায়। ২০২০ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্রিটনই এসব মূর্তি অপসারণের পক্ষে।
ব্রিটনরা কেন এ রকম করে ভাবছে, তা বোঝা শক্ত নয়। কেউই এমন ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে চান না, যিনি অসংখ্য মানুষের জীবন ধ্বংস করে অর্থ উপার্জন করেছেন। তাই ব্রিটেনের তরুণেরা তাদের ঔপনিবেশিক অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করছে বলে মনে হয়।
২০২০ সালে সরকারি জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, ১৬ থেকে ২৪ বছরের মাত্র ১৬ শতাংশ তরুণ ইতিহাস বিষয় নিয়ে আগ্রহী। আরেক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটিশদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব ১০ বছরে ৮৬ থেকে ৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এই অবনতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত পুলিশ ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস।
অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, এই সমস্যার উদ্ভবের কারণ সম্ভবত ঐতিহাসিক জ্ঞানের অভাব অথবা জ্ঞান অর্জনে অনীহা। তরুণেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন তথ্য নেয় ইউটিউব, পডকাস্ট ইত্যাদি থেকে, যেগুলো সব সময় নির্ভরযোগ্য সূত্র না-ও হতে পারে।
ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয়। এখানেও রয়েছে বিস্মিত হওয়ার মতো বহু উপাদান।
৫. সোভিয়েত ইউনিয়নে যে প্রজাতন্ত্রগুলো ছিল, তার একটি হলো কাজাখস্তান। আলমাতি দীর্ঘ সময় ধরে ছিল কাজাখস্তানের রাজধানী। যানবাহনের ধোঁয়ায় ঘেরা শহরটির কেন্দ্রস্থলে ‘আরমান’ সিনেমা হলের পাশেই রয়েছে একটি বারেলিফ ভাস্কর্য। বারেলিফ হলো এমন এক শিল্পকর্ম, যা দেয়াল বা পাথর থেকে বেরিয়ে আসে কিন্তু তার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আরমান সিনেমা হলের পাশের এই বিশাল শিল্পকর্মটিতে দেখা যাচ্ছে, মধ্যযুগীয় বর্ম পরিহিত সাহসী কাজাখ অশ্বারোহীদের সারি—হাতে বর্শা ও পতাকা—যেন যাযাবর বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক নারী, যিনি মাতৃরূপী মাতৃভূমিকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করেন। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের স্মরণে তৈরি এই ভাস্কর্য আধুনিক আলমাতির মাঝে এক বিস্ময়কর স্মারক।
‘অক্টোবর’ শিরোনামের এই সোভিয়েত যুগের বিশাল শিল্পকর্মটি নরম ধূসর পাথরে খোদাই করা হয়েছিল লেনিনের অভ্যুত্থানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে, তাতে এই ভাস্কর্যটি ধূলিসাৎ করে দিতে পারত এই শহরের উত্তেজিত জনগণ। কিন্তু সেটা তারা করেনি। স্থানীয় জনগণ এই ভাস্কর্যের জন্য গর্বিত। তাদেরই একজন বলেছে, ‘এটি খারাপ সময়ের প্রতীক, কিন্তু সে সময় কেটে গেছে। এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ এটি শিল্প। আর শিল্প মানেই সুন্দর।’
কমিউনিস্ট শিল্প রাজনৈতিক প্রতীক থেকে পরিণত হয়েছে নন্দনচর্চার এক ধারায়। রাজনৈতিক বার্তা বিলীন হওয়ায় স্ট্যালিন-পরবর্তী সেই ইউটোপিয়ান মোজাইক ও ফ্রেস্কোগুলো আজ নিছক শিল্প, যা সবাই বিনা মূল্যে উপভোগ করতে পারে।
বহু উদাহরণের মধ্যে আর একটিমাত্র উদাহরণ দেব। বুলগেরিয়ার বুজলার্জা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। পাহাড়ের চূড়া ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে সমতল করে এর ভিত্তি তৈরি করা হয়। ভেতরে ৯৩৭ বর্গমিটারজুড়ে ৬০ জন শিল্পীর তৈরি কোবাল্ট মোজাইক। প্যানেলগুলোর বিষয়—বুলগেরীয় কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস, মার্ক্স, লেনিন, কৃষক-শ্রমিক-গেরিলা—সব মিলিয়ে এক বিশাল শিল্পজগৎ। ১৯৮৯ সালে সমাজতন্ত্রের পতন হলে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু স্থপতি দোরা ইভানোভা ২০১৫ সালে ‘বুজলার্জা প্রজেক্ট ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন। ইন্টারনেটে ছবি দেখে তিনি বুঝলেন—ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকিয়ে আছে এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। তাঁর লক্ষ্য ছিল এটিকে পুনরায় জীবন্ত করা। তাঁর ভাষায়—‘এটি সংরক্ষণ জরুরি, কারণ এটি এক স্থাপত্য-শিল্প-নির্মাণের মহার্ঘ সৃষ্টি; এবং আরও জরুরি—আমাদের অতীতকে মনে রাখতে হবে, বিশেষত যখন তা বেদনাদায়ক।’
এই অনুভূতি শুধু শিল্পীসমাজেই নয়। স্থানীয়রাও চায় এটি সংরক্ষিত হোক। ট্যাক্সিচালকেরাও বলেন, ‘এটি একটি জাদুঘর হলে চমৎকার হতো!’
৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ব্যাখ্যা ও অর্ধসত্যের কেন্দ্র। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এ প্রভাবিত অনেক তরুণ মনে করে, ব্রিটেন কেবল দাসত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ধনী হয়েছে। আংশিক সত্য হলেও, তারা উপেক্ষা করে—প্রাকৃতিক সম্পদ, উদ্যোগী সংস্কৃতি, শিল্পবিপ্লব—এসবও ব্রিটেনকে শক্তিশালী করেছিল। ইতিহাসকে এক চোখে দেখলে চিত্র বিকৃতই হয়।
পোলিশ সাংবাদিক আগাতা পিজিকের একটি কথা স্মরণ করা দরকার। তিনি বলেছেন, ‘এভাবে মানুষ আধুনিক রাজনীতির ক্ষোভকে ইতিহাসের স্মৃতিস্তম্ভে চাপিয়ে দিচ্ছে, যা বিপজ্জনক সরলীকরণ।’
স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙা সহজ; সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধান কঠিন—এই কথা বোঝার জন্য তো ব্রিটেন বা বুলগেরিয়ার কাছে যেতে হবে না। খোদ আমাদের দেশেই কি তার উদাহরণ পাওয়া যাবে না?
লেখক: উপসম্পাদক,
আজকের পত্রিকা

১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল। পুনর্গঠন এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহির প্রশ্নটি সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে বাইরের পৃথিবী বুঝে উঠতে পারেনি। সোভিয়েত শাসনব্যবস্থায় এত সব জঞ্জাল জমেছিল, যা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে সাফ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছিল, কারণ সেই জঞ্জাল সৃষ্টির মূল দায়ভার ছিল তাদেরই। তারা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সবখানে পার্টি-কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তারা রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ ও সংস্কৃতি জগৎকে আত্মীকৃত করে ফেলেছিল। বিরুদ্ধমত সহ্য করা হতো না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ’ বইটি পড়লে সে সময়ের বাস্তবতা বোঝা সহজ হয়। তিনি সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলোয় সমাজতন্ত্র পতনের নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য চিত্র এঁকেছেন। আমি শুধু ১৯৮৯ সালের কিছু ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৮৯ সালের জুন মাসে পোল্যান্ডে আংশিকভাবে মুক্ত নির্বাচন হয়েছিল, কমিউনিস্টবিরোধী সলিডারিটি সরকার এসেছিল ক্ষমতায়। হাঙ্গেরি খুলে দিয়েছিল তাদের সীমান্ত, সে দেশে পতন ঘটেছিল কমিউনিস্ট শাসনের। সে বছর ৯ নভেম্বর ভেঙে পড়েছিল বার্লিন প্রাচীর। সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দুই জার্মানির মিলনদৃশ্য দেখেছিল। চেকোস্লোভাকিয়ায় ঘটেছিল ভেলভেট রেভল্যুশন, শান্তিপূর্ণভাবেই পতন হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসনের, আর এ ক্ষেত্রে রোমানিয়ার কথা তো আলাদা করে বলতেই হয়। চসেস্কুর পতন ও তাঁকে হত্যা করার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক ব্লক একেবারেই ভেঙে পড়ে। বাদ থাকল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে।
সে সময় কীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল মানুষ, সে কথা মনে করিয়ে দিতে চাই পরবর্তী বিষয়টিতে প্রবেশ করার উপলক্ষ হিসেবে।
মনে করিয়ে দিতে চাই, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মূল নেতা লেনিনের ভাস্কর্যও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছিল, ভূমিসাৎ করা হয়েছিল—সে দৃশ্যও দেখেছিল পৃথিবীর মানুষ।
২. ‘রোডস মাস্ট ফল’ আন্দোলনটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের ২৪ বছর পর। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ইউনিভার্সিটি অব কেপটাউন’-এ ২০১৫ সালের ৯ মার্চ শুরু হয়েছিল এ আন্দোলন। ছাত্রনেতা চুমা ম্যাকুয়ে (ইংরেজিতে Chumani Maxwele) সেসিল জন রোডসের মূর্তির ওপর মানববর্জ্য নিক্ষেপ করেছিলেন। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল।
রোডস ছিলেন একজন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী, যাঁকে আফ্রিকা দখলের মূল স্থপতি বলা হয়ে থাকে। আফ্রিকার সম্পদ দখল ও শোষণের প্রতীক হিসেবেই তাঁকে বিবেচনা করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, রোডসের ভাস্কর্য এখানে থাকার অর্থ হচ্ছে, তা উপনিবেশবাদেরই জয়গান গাইবে। সুতরাং এই ভাস্কর্য সরিয়ে বি-উপনিবেশকরণের দিকে জোর দিতে হবে। ‘রোডস মাস্ট ফল’ হলো রোডসের ভাস্কর্য অপসারণ করার আন্দোলন। আন্দোলন শুরু হওয়ার এক মাসের মধ্যেই ৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়। এরপর শিক্ষাক্ষেত্রে, পাঠ্যক্রমে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে, যা অন্য এক আলোচনার বিষয়।
আমরা এখান থেকে সরাসরি চলে যাব ব্রিটেনে, কারণ এই আন্দোলনের আঁচ লেগেছিল ব্রিটেনেও। অক্সফোর্ডের ওরিয়েল কলেজের সামনে থাকা রোডসের ভাস্কর্য অপসারণ নিয়েও সোচ্চার হয়ে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভাস্কর্য এখনো পুরোপুরি অপসারিত হয়নি যদিও, তবে পাঠ্যক্রমে বি-উপনিবেশকরণ প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্ব পায়। পুঁজিবাদ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য, ভাষা, রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়-কাঠামোতে বৈষম্য নিয়ে তর্ক-বিতর্কের পথ প্রশস্ত হয়।
৩. আরেকটি আন্দোলনের কথা বলে মূল আলোচনায় প্রবেশ করব। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ সালে আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোর ট্রেভন মার্টিনকে গুলি করে হত্যা করেছিল শ্বেতাঙ্গ জর্জ জিমারম্যান। কিন্তু আদালতের রায়ে তিনি বেকসুর খালাস পান। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বাক্য ঘুরতে থাকে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’।
তবে এ আন্দোলনটি বিস্ফোরিত হয়েছে ২০২০ সালের মে মাসে। শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে প্রায় ৯ মিনিট চেপে ধরে ছিলেন। ফ্লয়েডের শেষ কথা ছিল, ‘আই কান্ট ব্রিথ’ (আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না)। এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। ৫০টি রাজ্যের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শহরে বিক্ষোভ হয়। ৬০টির বেশি দেশে প্রতিবাদ হয়। পুলিশের জবাবদিহি নিয়ে নতুন আইন করার দাবি ওঠে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের একটি বড় মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠে এই ঘটনা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এ সময় কনফেডারেট ভাস্কর্যগুলো অপসারণের দাবি ওঠে। কনফেডারেট বলতে বোঝায় তাদের কথা, যারা দাসপ্রথা বজায় রাখার জন্য যুদ্ধ করেছিল।
তারই রেশ ধরে ব্রিটেনেও উঠেছিল কলস্টনের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি। এডওয়ার্ড কলস্টন ব্রিটেনের ইতিহাসে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। দাতব্য কর্ম করেছেন অনেক। কিন্তু তাঁর একটি নেতিবাচক পরিচয় হলো, তিনি দাস-বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান অংশীদার। ব্রিটেনের কুখ্যাত ট্রান্স-আটলান্টিক দাস-ব্যবসার সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর সম্পৃক্ততা।
৪. এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। ভাস্কর্য বা স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙার কাজটি আসলে কীভাবে দেখে মানুষ? ব্রিটিশ সংবাদ ও মতামত ওয়েবসাইট ‘আনহার্ড’ মূলত রক্ষণশীল ও বামপন্থী উভয় দৃষ্টিভঙ্গির লেখাই প্রকাশ করে থাকে। সেখানে এই ভাস্কর্য ভাঙাভাঙির মনস্তত্ত্ব নিয়ে একটি ভালো লেখা লিখেছেন জোয়েল ডে। লেখাটিতে সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ও ব্রিটেনে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ব্যাপারে দুই বিপরীত মতবাদ নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণ রয়েছে। তারই আলোকে কিছু কথা বলা যায়।
‘রোডস মাস্ট ফল’ আর ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সরাসরি প্রভাব পড়েছিল ব্রিটেনজুড়ে। আর তাতে ছিল উপনিবেশবিরোধী ভাবনার স্ফুরণ। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের যে স্মৃতিস্তম্ভগুলো ছিল, সেই ব্যক্তিদের বিবেচনা করা হচ্ছিল বর্ণবাদের উসকানিদাতা হিসেবে। কলস্টনের ভাস্কর্য উচ্ছেদের পাশাপাশি রবার্ট দ্য ব্রুস থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিস্তম্ভও পড়েছে ভাঙচুরের তালিকায়। ২০২০ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্রিটনই এসব মূর্তি অপসারণের পক্ষে।
ব্রিটনরা কেন এ রকম করে ভাবছে, তা বোঝা শক্ত নয়। কেউই এমন ব্যক্তিকে সম্মান জানাতে চান না, যিনি অসংখ্য মানুষের জীবন ধ্বংস করে অর্থ উপার্জন করেছেন। তাই ব্রিটেনের তরুণেরা তাদের ঔপনিবেশিক অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করছে বলে মনে হয়।
২০২০ সালে সরকারি জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, ১৬ থেকে ২৪ বছরের মাত্র ১৬ শতাংশ তরুণ ইতিহাস বিষয় নিয়ে আগ্রহী। আরেক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটিশদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব ১০ বছরে ৮৬ থেকে ৬৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এই অবনতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশেষত পুলিশ ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস।
অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, এই সমস্যার উদ্ভবের কারণ সম্ভবত ঐতিহাসিক জ্ঞানের অভাব অথবা জ্ঞান অর্জনে অনীহা। তরুণেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন তথ্য নেয় ইউটিউব, পডকাস্ট ইত্যাদি থেকে, যেগুলো সব সময় নির্ভরযোগ্য সূত্র না-ও হতে পারে।
ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয়। এখানেও রয়েছে বিস্মিত হওয়ার মতো বহু উপাদান।
৫. সোভিয়েত ইউনিয়নে যে প্রজাতন্ত্রগুলো ছিল, তার একটি হলো কাজাখস্তান। আলমাতি দীর্ঘ সময় ধরে ছিল কাজাখস্তানের রাজধানী। যানবাহনের ধোঁয়ায় ঘেরা শহরটির কেন্দ্রস্থলে ‘আরমান’ সিনেমা হলের পাশেই রয়েছে একটি বারেলিফ ভাস্কর্য। বারেলিফ হলো এমন এক শিল্পকর্ম, যা দেয়াল বা পাথর থেকে বেরিয়ে আসে কিন্তু তার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আরমান সিনেমা হলের পাশের এই বিশাল শিল্পকর্মটিতে দেখা যাচ্ছে, মধ্যযুগীয় বর্ম পরিহিত সাহসী কাজাখ অশ্বারোহীদের সারি—হাতে বর্শা ও পতাকা—যেন যাযাবর বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক নারী, যিনি মাতৃরূপী মাতৃভূমিকে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করেন। ১৯১৭ সালের বিপ্লবের স্মরণে তৈরি এই ভাস্কর্য আধুনিক আলমাতির মাঝে এক বিস্ময়কর স্মারক।
‘অক্টোবর’ শিরোনামের এই সোভিয়েত যুগের বিশাল শিল্পকর্মটি নরম ধূসর পাথরে খোদাই করা হয়েছিল লেনিনের অভ্যুত্থানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে, তাতে এই ভাস্কর্যটি ধূলিসাৎ করে দিতে পারত এই শহরের উত্তেজিত জনগণ। কিন্তু সেটা তারা করেনি। স্থানীয় জনগণ এই ভাস্কর্যের জন্য গর্বিত। তাদেরই একজন বলেছে, ‘এটি খারাপ সময়ের প্রতীক, কিন্তু সে সময় কেটে গেছে। এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ এটি শিল্প। আর শিল্প মানেই সুন্দর।’
কমিউনিস্ট শিল্প রাজনৈতিক প্রতীক থেকে পরিণত হয়েছে নন্দনচর্চার এক ধারায়। রাজনৈতিক বার্তা বিলীন হওয়ায় স্ট্যালিন-পরবর্তী সেই ইউটোপিয়ান মোজাইক ও ফ্রেস্কোগুলো আজ নিছক শিল্প, যা সবাই বিনা মূল্যে উপভোগ করতে পারে।
বহু উদাহরণের মধ্যে আর একটিমাত্র উদাহরণ দেব। বুলগেরিয়ার বুজলার্জা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। পাহাড়ের চূড়া ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে সমতল করে এর ভিত্তি তৈরি করা হয়। ভেতরে ৯৩৭ বর্গমিটারজুড়ে ৬০ জন শিল্পীর তৈরি কোবাল্ট মোজাইক। প্যানেলগুলোর বিষয়—বুলগেরীয় কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস, মার্ক্স, লেনিন, কৃষক-শ্রমিক-গেরিলা—সব মিলিয়ে এক বিশাল শিল্পজগৎ। ১৯৮৯ সালে সমাজতন্ত্রের পতন হলে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু স্থপতি দোরা ইভানোভা ২০১৫ সালে ‘বুজলার্জা প্রজেক্ট ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন। ইন্টারনেটে ছবি দেখে তিনি বুঝলেন—ধ্বংসস্তূপের নিচে লুকিয়ে আছে এক অপূর্ব শিল্পকর্ম। তাঁর লক্ষ্য ছিল এটিকে পুনরায় জীবন্ত করা। তাঁর ভাষায়—‘এটি সংরক্ষণ জরুরি, কারণ এটি এক স্থাপত্য-শিল্প-নির্মাণের মহার্ঘ সৃষ্টি; এবং আরও জরুরি—আমাদের অতীতকে মনে রাখতে হবে, বিশেষত যখন তা বেদনাদায়ক।’
এই অনুভূতি শুধু শিল্পীসমাজেই নয়। স্থানীয়রাও চায় এটি সংরক্ষিত হোক। ট্যাক্সিচালকেরাও বলেন, ‘এটি একটি জাদুঘর হলে চমৎকার হতো!’
৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ব্যাখ্যা ও অর্ধসত্যের কেন্দ্র। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এ প্রভাবিত অনেক তরুণ মনে করে, ব্রিটেন কেবল দাসত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ধনী হয়েছে। আংশিক সত্য হলেও, তারা উপেক্ষা করে—প্রাকৃতিক সম্পদ, উদ্যোগী সংস্কৃতি, শিল্পবিপ্লব—এসবও ব্রিটেনকে শক্তিশালী করেছিল। ইতিহাসকে এক চোখে দেখলে চিত্র বিকৃতই হয়।
পোলিশ সাংবাদিক আগাতা পিজিকের একটি কথা স্মরণ করা দরকার। তিনি বলেছেন, ‘এভাবে মানুষ আধুনিক রাজনীতির ক্ষোভকে ইতিহাসের স্মৃতিস্তম্ভে চাপিয়ে দিচ্ছে, যা বিপজ্জনক সরলীকরণ।’
স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙা সহজ; সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধান কঠিন—এই কথা বোঝার জন্য তো ব্রিটেন বা বুলগেরিয়ার কাছে যেতে হবে না। খোদ আমাদের দেশেই কি তার উদাহরণ পাওয়া যাবে না?
লেখক: উপসম্পাদক,
আজকের পত্রিকা

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৭ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৭ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৮ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।
গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।
এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?
বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল।
১৫ দিন আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৭ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৭ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৮ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে বা পিছিয়ে দিতে হবে? কিন্তু তেমনই একটি প্রসঙ্গ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এমন সময়ে সংকট উত্তরণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি।
ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যখন আসবে তখন তফসিল দেওয়া হলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন তফসিল পেছাতে চাইব? আমরা চাই সংকট সমাধান করে তফসিল দেওয়া হোক।’ রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গটি এনসিপি নেতারা এমন সময় জনসমক্ষে আনলেন যখন পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তো তফসিল ঘোষণার কথা কমিশন বলেছিল। এখন এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংকটের প্রসঙ্গটি জনপরিসরে এসেছে এবং বহুল আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
সিইসির সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই তাঁরা রাজনীতিতে সংকটময় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো কথা শোনা যায়নি। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা যে অত্যন্ত সংকটময়, যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি সে কথা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। একই সঙ্গে বিএনপির দলীয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও চলেছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকটের তো কিছু নেই। এই কারণে রাজনীতিতে নতুন করে কিছু অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
হ্যাঁ, খালেদা জিয়ার সংকটময় স্বাস্থ্য পরিস্থিতির খবরে দেশবাসীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একটা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। কারণ, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন। সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিকদের একজন। তাঁর জন্য সারা দেশের মানুষ তাই প্রার্থনা করেছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং মানুষের প্রার্থনা ও ভালোবাসায় তিনি লন্ডনে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি এবার হাসপাতালে ভর্তির আগের অবস্থায় কিংবা তার চেয়েও সুস্থ হয়ে স্বস্থানে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি দলের চেয়ারপারসন হয়েও এই দীর্ঘ অসুস্থতার সময়ে কি দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পেরেছেন? কিংবা এবারও তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর কি দল এবং দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন? এমনকি তিনি যে তিনটি আসনে প্রার্থী হবেন বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে তিনি কি সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন? দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গের অসুস্থতা, সঙ্গে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী একজন মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব? সম্ভব নয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন, সবগুলোতে বিজয়ী হবেন। এমনকি লন্ডনের হাসপাতালে বসে নির্বাচন করলেও। তা ছাড়া এমন সম্ভাবনাও আছে যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন অন্য কোনো দল সেই আসনগুলোতে প্রার্থীই দেবে না। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে রাজনীতির সংকটময় এবং অস্থিতিশীল বলা যেতে পারে আমরা জানি না।
তবে দেশের রাজনীতিতে সংকট আছে। অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক আছে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না তা নিয়ে মানুষ নিঃশঙ্ক নয়। এটা একটা বড় সংকট। মানুষের আস্থার সংকট। আরও সংকট আছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের সিদ্ধান্ত জামায়াতসহ যে দলগুলো বা যে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মানতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। এটা আরেকটা বড় সংকট। আরও সংকট আছে। নির্বাচনের মাঠে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে এনসিপির যে উদ্বেগ সেটাও একটা বড় সংকট। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘এখন যে ডিসি-এসপিদের নিয়োগ-বদলি করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়ে যেন ইসি ব্যবস্থা নেয় এবং নিরপেক্ষ লোক যেন নিয়োগ হয়।’ এর আগে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তুলেছিলেন। সেই পুনর্গঠন তো হয়নি। এই যে নানা ধরনের ক্ষতগুলো রাজনীতিতে রয়েছে, সেগুলোই সংকট। যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান পেলে এর যেকোনো একটি ক্ষত ক্যানসারের মতো গুরুতর সংকট হয়ে উঠতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি তো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম বন্ধ করে বসে নেই! গত বৃহস্পতিবারও তো বিএনপি ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি চলেছে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া-প্রস্তুতিও। এখানে তো কোনো সংকট দেখা যাচ্ছে না।
সংকট আরও অনেক রকম আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। আগামীকাল রোববারই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে। এই রিট আবেদনে সংসদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। যুক্তি হলো, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এই কাজে নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়। নির্বাহী বিভাগ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়। অত্যন্ত জোরালো যুক্তি। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রশ্ন ছিল। নিরসন হয়নি। ফলে এগুলোও রয়ে গেছে সংকট হিসেবে। এসবের মীমাংসা হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে বা পিছিয়ে দিতে হবে? কিন্তু তেমনই একটি প্রসঙ্গ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এমন সময়ে সংকট উত্তরণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি।
ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যখন আসবে তখন তফসিল দেওয়া হলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন তফসিল পেছাতে চাইব? আমরা চাই সংকট সমাধান করে তফসিল দেওয়া হোক।’ রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গটি এনসিপি নেতারা এমন সময় জনসমক্ষে আনলেন যখন পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তো তফসিল ঘোষণার কথা কমিশন বলেছিল। এখন এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংকটের প্রসঙ্গটি জনপরিসরে এসেছে এবং বহুল আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
সিইসির সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই তাঁরা রাজনীতিতে সংকটময় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো কথা শোনা যায়নি। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা যে অত্যন্ত সংকটময়, যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি সে কথা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। একই সঙ্গে বিএনপির দলীয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও চলেছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকটের তো কিছু নেই। এই কারণে রাজনীতিতে নতুন করে কিছু অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
হ্যাঁ, খালেদা জিয়ার সংকটময় স্বাস্থ্য পরিস্থিতির খবরে দেশবাসীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একটা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। কারণ, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন। সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিকদের একজন। তাঁর জন্য সারা দেশের মানুষ তাই প্রার্থনা করেছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং মানুষের প্রার্থনা ও ভালোবাসায় তিনি লন্ডনে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি এবার হাসপাতালে ভর্তির আগের অবস্থায় কিংবা তার চেয়েও সুস্থ হয়ে স্বস্থানে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি দলের চেয়ারপারসন হয়েও এই দীর্ঘ অসুস্থতার সময়ে কি দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পেরেছেন? কিংবা এবারও তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর কি দল এবং দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন? এমনকি তিনি যে তিনটি আসনে প্রার্থী হবেন বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে তিনি কি সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন? দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গের অসুস্থতা, সঙ্গে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী একজন মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব? সম্ভব নয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন, সবগুলোতে বিজয়ী হবেন। এমনকি লন্ডনের হাসপাতালে বসে নির্বাচন করলেও। তা ছাড়া এমন সম্ভাবনাও আছে যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন অন্য কোনো দল সেই আসনগুলোতে প্রার্থীই দেবে না। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে রাজনীতির সংকটময় এবং অস্থিতিশীল বলা যেতে পারে আমরা জানি না।
তবে দেশের রাজনীতিতে সংকট আছে। অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক আছে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না তা নিয়ে মানুষ নিঃশঙ্ক নয়। এটা একটা বড় সংকট। মানুষের আস্থার সংকট। আরও সংকট আছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের সিদ্ধান্ত জামায়াতসহ যে দলগুলো বা যে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মানতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। এটা আরেকটা বড় সংকট। আরও সংকট আছে। নির্বাচনের মাঠে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে এনসিপির যে উদ্বেগ সেটাও একটা বড় সংকট। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘এখন যে ডিসি-এসপিদের নিয়োগ-বদলি করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়ে যেন ইসি ব্যবস্থা নেয় এবং নিরপেক্ষ লোক যেন নিয়োগ হয়।’ এর আগে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তুলেছিলেন। সেই পুনর্গঠন তো হয়নি। এই যে নানা ধরনের ক্ষতগুলো রাজনীতিতে রয়েছে, সেগুলোই সংকট। যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান পেলে এর যেকোনো একটি ক্ষত ক্যানসারের মতো গুরুতর সংকট হয়ে উঠতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি তো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম বন্ধ করে বসে নেই! গত বৃহস্পতিবারও তো বিএনপি ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি চলেছে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া-প্রস্তুতিও। এখানে তো কোনো সংকট দেখা যাচ্ছে না।
সংকট আরও অনেক রকম আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। আগামীকাল রোববারই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে। এই রিট আবেদনে সংসদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। যুক্তি হলো, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এই কাজে নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়। নির্বাহী বিভাগ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়। অত্যন্ত জোরালো যুক্তি। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রশ্ন ছিল। নিরসন হয়নি। ফলে এগুলোও রয়ে গেছে সংকট হিসেবে। এসবের মীমাংসা হওয়া জরুরি।

১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল।
১৫ দিন আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৭ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৮ ঘণ্টা আগেফারিহা জামান নাবিলা

যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। তারা এমন এক পৃথিবীর দিকে হাঁটছে, যেখানে নির্মল বাতাস বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহর এখন বায়ুদূষণের চরম ঝুঁকিতে। বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। শিশুদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের রাজধানী শহর প্রায়ই বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় উঠে আসছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও বিকাশকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
শহরের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও কাশির হার বাড়ছে। ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে শহরজুড়ে বাতাস প্রায় ধোঁয়াটে হয়ে থাকে, যা শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। বায়ুদূষণ শুধু আজকের নয়, এটি সরাসরি আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আঘাত করছে।
বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটা মানুষের স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকট। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বায়ুদূষণের কারণে। দেশে শিল্প এলাকা, ইটভাটা, কারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাস, ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ নানা দূষণ উপাদান মিশে যাচ্ছে। শিশুরা এসব দূষণের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, দুর্বল ফুসফুস নিয়ে বড় হচ্ছে। শহরে প্রায় সারা বছরই নির্মাণকাজ চলে। এসব কারণে যে ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের। ধুলাবালুর ছোট কণা ফুসফুসে সরাসরি গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে।
বাতাস বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো গাছ। সবুজ কমে যাওয়ায় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকে এবং পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ পায় না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আগামী প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্রে। শিল্প-কারখানার মালিক, যানবাহনের মালিকদের অসতর্কতার জন্য বায়ুদূষণ দেখা দেয়। পরিবেশ আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল হওয়ায় দূষণ কমানোর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয় না। প্রাপ্তবয়স্কর তুলনায় শিশুর শ্বাসযন্ত্র বেশি নাজুক। তারা বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়, ফুসফুসের বৃদ্ধি চলমান থাকে ফলে দূষিত বাতাস তাদের দেহে আরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই কারণেই বায়ুতে থাকা বিষাক্ত কণা তাদের ভবিষ্যৎকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। পুরোনো বাস, ট্রাক ও লেগুনার ধোঁয়াই শহরের বড় দূষণকারী। অনুমোদনহীন ও পুরোনো প্রযুক্তির ইটভাটা বিপুল ক্ষতিকর ধোঁয়া ছাড়ে। ফলে বায়ুদূষণ দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।
বায়ুদূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা এবং পুরোনো গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো। ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।
সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ধোঁয়া পরিশোধক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ইটভাটা তৈরি করা এবং ক্ষতিকর পুরোনো ভাটা বন্ধ করা। শহর ও গ্রামে গাছ লাগানো, রাস্তার পাশে সবুজ বেল্ট তৈরি করা, যাতে ধুলাবালু কমে ও বাতাস পরিষ্কার থাকে।
মানুষ বুঝে আর না বুঝে বায়ুদূষণ করে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করছে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে গাড়ি না চালানো এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দূষণের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা আপডেট করা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
বায়ুদূষণ এক দিনে তৈরি হওয়া সমস্যা নয়। তাই সমাধানও এক দিনে হবে না। তবে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ দেশ দিতে হলে আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—উন্নয়ন হবে, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিষ্কার বাতাস আমাদের প্রাপ্য অধিকার এবং তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। তারা এমন এক পৃথিবীর দিকে হাঁটছে, যেখানে নির্মল বাতাস বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহর এখন বায়ুদূষণের চরম ঝুঁকিতে। বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। শিশুদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের রাজধানী শহর প্রায়ই বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় উঠে আসছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও বিকাশকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
শহরের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও কাশির হার বাড়ছে। ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে শহরজুড়ে বাতাস প্রায় ধোঁয়াটে হয়ে থাকে, যা শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। বায়ুদূষণ শুধু আজকের নয়, এটি সরাসরি আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আঘাত করছে।
বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটা মানুষের স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকট। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বায়ুদূষণের কারণে। দেশে শিল্প এলাকা, ইটভাটা, কারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাস, ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ নানা দূষণ উপাদান মিশে যাচ্ছে। শিশুরা এসব দূষণের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, দুর্বল ফুসফুস নিয়ে বড় হচ্ছে। শহরে প্রায় সারা বছরই নির্মাণকাজ চলে। এসব কারণে যে ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের। ধুলাবালুর ছোট কণা ফুসফুসে সরাসরি গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে।
বাতাস বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো গাছ। সবুজ কমে যাওয়ায় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকে এবং পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ পায় না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আগামী প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্রে। শিল্প-কারখানার মালিক, যানবাহনের মালিকদের অসতর্কতার জন্য বায়ুদূষণ দেখা দেয়। পরিবেশ আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল হওয়ায় দূষণ কমানোর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয় না। প্রাপ্তবয়স্কর তুলনায় শিশুর শ্বাসযন্ত্র বেশি নাজুক। তারা বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়, ফুসফুসের বৃদ্ধি চলমান থাকে ফলে দূষিত বাতাস তাদের দেহে আরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই কারণেই বায়ুতে থাকা বিষাক্ত কণা তাদের ভবিষ্যৎকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। পুরোনো বাস, ট্রাক ও লেগুনার ধোঁয়াই শহরের বড় দূষণকারী। অনুমোদনহীন ও পুরোনো প্রযুক্তির ইটভাটা বিপুল ক্ষতিকর ধোঁয়া ছাড়ে। ফলে বায়ুদূষণ দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।
বায়ুদূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা এবং পুরোনো গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো। ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।
সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ধোঁয়া পরিশোধক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ইটভাটা তৈরি করা এবং ক্ষতিকর পুরোনো ভাটা বন্ধ করা। শহর ও গ্রামে গাছ লাগানো, রাস্তার পাশে সবুজ বেল্ট তৈরি করা, যাতে ধুলাবালু কমে ও বাতাস পরিষ্কার থাকে।
মানুষ বুঝে আর না বুঝে বায়ুদূষণ করে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করছে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে গাড়ি না চালানো এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দূষণের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা আপডেট করা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
বায়ুদূষণ এক দিনে তৈরি হওয়া সমস্যা নয়। তাই সমাধানও এক দিনে হবে না। তবে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ দেশ দিতে হলে আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—উন্নয়ন হবে, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিষ্কার বাতাস আমাদের প্রাপ্য অধিকার এবং তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল।
১৫ দিন আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৭ ঘণ্টা আগে
দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়।
৮ ঘণ্টা আগেনুসরাত রুষা

দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়। এই বৈপরীত্যই বলে দেয়—আইনের চোখ সবার জন্য সমান নয়; ক্ষমতা যাদের হাতে, দেশও যেন তাদেরই।
এক সপ্তাহে কয়েকটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। নোয়াখালীর বজরা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, সংস্কৃতির অংশ। সেখানে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা, গালাগাল করে ‘বেপর্দা নারী’ বলে কটূক্তি করার একটা ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী যখন বললেন, ‘মক্কা-মদিনাতেও তো নারীরা মসজিদে যায়’—তখন পুরো এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যেন যুক্তি ও বাস্তবতা তাদের কাছে অপরাধ, আর নারী হওয়া আরও বড় অপরাধ।
একই সপ্তাহে নরসিংদীতে ঘটেছে আরেকটা ঘটনা। অটোতে একটি ইসলামি দলের দুইজন কর্মী অপরিচিত মানুষ, তাঁরা আমার বন্ধুদের জোর করে ধর্ম গ্রহণের উপদেশ দিতে লাগলেন। বললেন, হিন্দু মেয়ে হলে বাড়তি দুঃখ হয় তাঁদের। তাই ইসলাম গ্রহণ করাই উত্তম! ধর্মের নামে কি এভাবে ঠেলেঠুলে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়? এসব কি স্পষ্ট ধর্মীয় জবরদস্তির পর্যায়ে পড়ে না?
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়—শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু হিজাব–বোরকা পরিহিত তরুণী অন্য মেয়েদের অপমান করছে শুধু তারা হিজাব পরে না বলে। নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার সামাজিক কাঠামোয় মেয়েদেরই অংশগ্রহণ—এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। পিতৃতন্ত্র শুধু পুরুষদের হাতে থাকে না; নারীর হাত ধরেও সে বাড়ে, শক্তি পায়।
দেশজুড়ে যে অনানুষ্ঠানিক ‘মোরাল পুলিশিং’ চলছে—এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সংগঠিত একটি মানসিকতা, যা নারীর পোশাক, চলাফেরা, মতপ্রকাশ—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারও হাতে লাঠি নেই, কিন্তু সবার কাছে আইন-শাসনের মতো রায় দেওয়ার মতো ক্ষমতা চর্চার বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনকে উপেক্ষা করে কেউ নিজেকে আইন রক্ষক সাজাচ্ছে, কেউ ধর্মের নামে অভিভাবক আবার কেউ সমাজের নামে বিচারক সাজছে।
এই দেশে মেয়েরা কি নাগরিক? নাকি শুধু নজরদারির বস্তু? যদি বাউলের গান ‘অপমান’ হয়, তবে ওয়াজে নারী বিদ্বেষ অপমান নয় কেন? যদি একজন নারী মসজিদে ঢুকতে না পারা অপরাধ না হয়, তবে তাঁকে গালাগাল করা অপরাধ নয় কেন? যদি হিজাব না পরা ‘অপরাধ’ হয়, তবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা অপরাধ নয় কেন?
এই দ্বৈত মানদণ্ডের নামই পিতৃতন্ত্র—যেখানে আইন নয়, চলে তাদের ইচ্ছায়; মানবতা নয়, চলে নিয়ন্ত্রণের নেশায়।
বাংলাদেশ কোনো একদল মানুষের নয়। নারীকে ভয় দেখিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করে, অসম্মান করে যে সমাজ টিকিয়ে রাখা যায়—এ ধারণা ভ্রান্ত। উন্নত সমাজে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বাধীন চলাফেরা—এগুলো মৌলিক বিষয়। আমাদের এখানে এগুলো যেন ক্রমেই বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।
সময় এসেছে এই অঘোষিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। প্রশ্ন করার—কারা আপনাদের এই অধিকার দিল? ধর্মের নামে অপমান, সমাজের নামে গালিগালাজ, নৈতিকতার নামে নিপীড়ন—এসব মানবতা নয়, ক্ষমতার প্রদর্শন।
বাংলাদেশের নারীরা আর কারও অনুমতির অপেক্ষায় নেই। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে, মসজিদে, রিকশায়—সব জায়গায় তারা সমান নাগরিক অধিকার পাবে, সেটাই রাষ্ট্রীয় নিয়ম হওয়ার কথা ছিল। অধিকার নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে, ভয়হীনভাবে বাঁচার জন্য রাষ্ট্রে যে জায়গা তাদের, সেটা ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়। এই বৈপরীত্যই বলে দেয়—আইনের চোখ সবার জন্য সমান নয়; ক্ষমতা যাদের হাতে, দেশও যেন তাদেরই।
এক সপ্তাহে কয়েকটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। নোয়াখালীর বজরা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, সংস্কৃতির অংশ। সেখানে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা, গালাগাল করে ‘বেপর্দা নারী’ বলে কটূক্তি করার একটা ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী যখন বললেন, ‘মক্কা-মদিনাতেও তো নারীরা মসজিদে যায়’—তখন পুরো এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যেন যুক্তি ও বাস্তবতা তাদের কাছে অপরাধ, আর নারী হওয়া আরও বড় অপরাধ।
একই সপ্তাহে নরসিংদীতে ঘটেছে আরেকটা ঘটনা। অটোতে একটি ইসলামি দলের দুইজন কর্মী অপরিচিত মানুষ, তাঁরা আমার বন্ধুদের জোর করে ধর্ম গ্রহণের উপদেশ দিতে লাগলেন। বললেন, হিন্দু মেয়ে হলে বাড়তি দুঃখ হয় তাঁদের। তাই ইসলাম গ্রহণ করাই উত্তম! ধর্মের নামে কি এভাবে ঠেলেঠুলে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়? এসব কি স্পষ্ট ধর্মীয় জবরদস্তির পর্যায়ে পড়ে না?
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়—শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু হিজাব–বোরকা পরিহিত তরুণী অন্য মেয়েদের অপমান করছে শুধু তারা হিজাব পরে না বলে। নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার সামাজিক কাঠামোয় মেয়েদেরই অংশগ্রহণ—এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। পিতৃতন্ত্র শুধু পুরুষদের হাতে থাকে না; নারীর হাত ধরেও সে বাড়ে, শক্তি পায়।
দেশজুড়ে যে অনানুষ্ঠানিক ‘মোরাল পুলিশিং’ চলছে—এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সংগঠিত একটি মানসিকতা, যা নারীর পোশাক, চলাফেরা, মতপ্রকাশ—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারও হাতে লাঠি নেই, কিন্তু সবার কাছে আইন-শাসনের মতো রায় দেওয়ার মতো ক্ষমতা চর্চার বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনকে উপেক্ষা করে কেউ নিজেকে আইন রক্ষক সাজাচ্ছে, কেউ ধর্মের নামে অভিভাবক আবার কেউ সমাজের নামে বিচারক সাজছে।
এই দেশে মেয়েরা কি নাগরিক? নাকি শুধু নজরদারির বস্তু? যদি বাউলের গান ‘অপমান’ হয়, তবে ওয়াজে নারী বিদ্বেষ অপমান নয় কেন? যদি একজন নারী মসজিদে ঢুকতে না পারা অপরাধ না হয়, তবে তাঁকে গালাগাল করা অপরাধ নয় কেন? যদি হিজাব না পরা ‘অপরাধ’ হয়, তবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা অপরাধ নয় কেন?
এই দ্বৈত মানদণ্ডের নামই পিতৃতন্ত্র—যেখানে আইন নয়, চলে তাদের ইচ্ছায়; মানবতা নয়, চলে নিয়ন্ত্রণের নেশায়।
বাংলাদেশ কোনো একদল মানুষের নয়। নারীকে ভয় দেখিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করে, অসম্মান করে যে সমাজ টিকিয়ে রাখা যায়—এ ধারণা ভ্রান্ত। উন্নত সমাজে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বাধীন চলাফেরা—এগুলো মৌলিক বিষয়। আমাদের এখানে এগুলো যেন ক্রমেই বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।
সময় এসেছে এই অঘোষিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। প্রশ্ন করার—কারা আপনাদের এই অধিকার দিল? ধর্মের নামে অপমান, সমাজের নামে গালিগালাজ, নৈতিকতার নামে নিপীড়ন—এসব মানবতা নয়, ক্ষমতার প্রদর্শন।
বাংলাদেশের নারীরা আর কারও অনুমতির অপেক্ষায় নেই। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে, মসজিদে, রিকশায়—সব জায়গায় তারা সমান নাগরিক অধিকার পাবে, সেটাই রাষ্ট্রীয় নিয়ম হওয়ার কথা ছিল। অধিকার নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে, ভয়হীনভাবে বাঁচার জন্য রাষ্ট্রে যে জায়গা তাদের, সেটা ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৮৯ সালে আমরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলাম, তখন পৃথিবীর ইতিহাস এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, মিখাইল গরবাচেভের পিরিস্ত্রোইকা আর গ্লাসনস্তের আহ্বানে পুরো সমাজতান্ত্রিক ব্লক আশান্বিত হয়ে উঠেছিল।
১৫ দিন আগে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে...
৭ ঘণ্টা আগে
যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের...
৭ ঘণ্টা আগে