Ajker Patrika

আমরা কি ‘ফাঁপা’ অর্থনীতিতেই আস্থা রাখছি?

তাপস বড়ুয়া
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১৫: ৩৮
আমরা কি ‘ফাঁপা’ অর্থনীতিতেই আস্থা রাখছি?

তেলের দাম বাড়তি, চালের দাম বাড়তি, বিদ্যুতের দাম বাড়তি, গ্যাসের দাম বাড়তি, রিকশা ও বাসভাড়া বাড়তি, বাড়িভাড়া বাড়তি, ডাক্তারের ফি বাড়তি ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবনের সব ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। ওদিকে আয় কমছে। করোনার ধাক্কায় চাকরি হারিয়েছেন অনেকে। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়া যারপরনাই কঠিন হয়ে পড়েছে। 

সাময়িক বেকার যেসব মানুষ নতুন করে চাকরি পাচ্ছেন, তার একটা বড় অংশই যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্যের চেয়ে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ চাকরির বাজারে যোগ্য, কিন্তু চাকরিহীন মানুষের জোগান এখন বেশি। সব মিলিয়ে নাকাল মানুষের জীবন। ঘরে ঘরে নিত্যদিন হাঁসফাঁস অবস্থা। 

এর মধ্যে এল বাজেট নামের ঘটনাটি। প্রতিবছরের বাজেটের পর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এবার বাজেটের আকার ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি। বড় বাজেট বড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে আসবে—এমন ভয় অমূলক নয়। বাজেটে ঘাটতি থাকবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার। এই অর্থ সরকার ঋণ করবে। 

ঋণের একটা বড় খাত সরকারি বন্ড বা সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ব্যাংকে রাখা যেকোনো ধরনের আমানতের সুদ গেছে কমে। ফলে মানুষ তার সঞ্চয় সরকারকে ঋণ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে উৎসাহিত হবে। সরকার দিয়েছে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমিয়ে। মূল্যস্ফীতিকে হিসাবে ধরলে সঞ্চয়পত্র থেকে আসা লাভ আসলে পিঁপড়েয় খেয়ে যাওয়ার মতো। 

ঘাটতি বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণ করে হলেও সরকারকে খরচ করতে হবে। তাহলে বাজারে টাকার লেনদেন হবে। অর্থনীতির গতি সচল থাকবে। এই যে অর্থনীতির গতি সচল থাকা, সেটা কি মূল্যস্ফীতির দামে? এটা কতকটা শ্রমিকের ঘামে মালিকের লাভ বাড়ার মতো। কারণ মূল্যস্ফীতির ঝড়টা যাবে সাধারণ মানুষের ওপর দিয়ে। লাভ করবে ধনিক শ্রেণি। বাজারের বর্তমান অবস্থায় এটা বুঝে নিতে অর্থনীতির জটিল তত্ত্ব বোঝার দরকার হয় না। 

ব্যাংকিং খাত থেকেও সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা বাজেট আলোচনায় এসেছে। ঋণ করে ঘি খাওয়া আখেরে কতটা ভালো হবে, সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ, আমরা এ বছরই ঋণ শোধ বাবদ খরচ করব একটা বিশাল অঙ্ক (সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা)। 

হাতে পয়সা নেই, তবু খরচ করতে হচ্ছে। এই শহরে যারা একবার এসে পড়েছেন, দায়ে পড়ে অথবা স্বপ্নের মোহে তাঁদের মান্না দের গানের মতো ‘পিছনের পথে উঠেছে ধূলির ঝড়, সমুখে অন্ধকার’। শোনা যায়, করোনার পরে পোশাক কারখানায় নাকি এখন প্রচুর অর্ডার। কিন্তু মালিকেরা নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছেন না। অজুহাত, আবার যদি অর্ডার কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন কী হবে? অথচ এই পোশাকশিল্প করোনার মধ্যে সরকারি প্রণোদনা পেয়েছে জনগণের টাকায়। 

দেড় শ বছর আগে কার্ল মার্ক্স এক অদ্ভুত সমীকরণের কথা বলেছিলেন। যদিও অর্থনৈতিক-সামাজিক সম্পর্কসমূহ আজ আরও বেশি জটিল, সরাসরি দাগ টেনে শ্রমিকে আর মালিকে, বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েতে ভাগ করা যায় না সমাজকে, তবু মার্কসের সমীকরণটি এই অবস্থায় মনে করে নেওয়াটা কাজের হবে। 

মার্কস বলেছিলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূলে আছে লাভ। মালিক লাভ করতে চায়। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ লাভ যে মালিক তুলে নিতে পারবে না, সে প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। তাকে বাজার থেকে সরে যেতে হবে। সে যদি লাভ বেশি করে, তাহলেই সে শ্রমিককে বেশি বেতন দিতে পারবে। আবার শ্রমিককে বেশি বেতন দিলে সেই অঙ্কটা তার লাভ থেকে কমবে। শ্রমিকের সংখ্যা বা জোগান কম থাকলে শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে, মালিকেরা বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করতে বাধ্য হবে। ফলে তার লাভ কম হবে। অর্থনীতিজুড়ে এই অবস্থা চলতে থাকলে মালিকেরা অনেকে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। ফলে শ্রমিকের চাহিদা কমবে। তখন যেসব মালিক ব্যবসায় টিকে থাকবে, তারা কম বেতনে শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ পাবে। বিষয়টি যখন খুব খারাপ অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে, বেকারত্ব যখন খুব বেড়ে যাবে, তখন কম দামে শ্রমিক নিয়োগের সুবিধা নিয়ে মালিকেরা আবার ব্যবসায় ফিরবে। কিন্তু শ্রমিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে সে বিপ্লবে শামিল হবে। কম বেতন পাওয়া শ্রমিকের হাতে খরচ করার মতো যথেষ্ট টাকা থাকবে না। যথেষ্ট টাকা খরচ না করলে অর্থনীতি নিম্নমুখী টার্ন নেবে। ফলে মালিকের লাভ কমতে শুরু করবে। আবার তার পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য দরকার হবে বেশি বেতন দেওয়া। এভাবে একসময় পুঁজিবাদ ভেঙে পড়বে। কারণ, শ্রমিকেরা এই শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে। 

কিন্তু পুঁজিবাদ অত সহজে দমবার পাত্র নয়। সে বের করেছে এক বিকল্প, যাতে কম আয় করেও মানুষ বেশি খরচ করা চালিয়ে যেতে পারে। সেই পথটি হচ্ছে ক্রেডিট, যার একটা বড় বাহক হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। এতে সমস্যার আপাতত সমাধান হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মোক্ষ যে লাভ, সেটা হতে থাকে। কিন্তু এই সমাধান একেবারেই আপাতত। 

সত্তরের দশকে পাশ্চাত্যে শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের জন্য বেতন কমানো কঠিন ছিল। আশির দশকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার মালিকের পক্ষে শক্ত করে নেমে গেলেন। এবং মালিকের পক্ষ নিয়ে শ্রমিক শোষণের ব্যবস্থা করে দিলেন। ফল হয়েছে, সমাজের উঁচুতলার কয়েকজনের আয় ও সম্পদ আকাশ ছুঁয়েছে। বেশির ভাগের আয় সমানুপাতিক বাড়েনি, খরচ বেড়েছে। ফলত তারা নেট হিসেবে গরিব হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বাদ দিলে সাধারণ মানুষের আয় গত কুড়ি বছরে বাড়েনি। বরং ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে কমেছে। কিন্তু বড়লোকদের সম্পদ বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বহুগুণ। রিগ্যান, থ্যাচারের প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে, বিশেষত বাংলাদেশের মতো দেশে প্রকট। 

পুঁজি ও লাভ আর শ্রম একদিকে হাত ধরাধরি করে চলে। অন্যদিকে আবার পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। এই যুগপৎ দ্বৈরথকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে রাষ্ট্রীয় নীতির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। 

এদিকে বড়লোকদের পুঁজির জোগান দিয়েছে রাষ্ট্র। মানে জনগণের টাকায়। ব্যবসায় লাভ হলে তারা নিয়েছে। ব্যবসায় ক্ষতি হলে সেই দায় ঋণখেলাপি হয়ে আবার রাষ্ট্রের তথা জনগণের ঘাড়ে এসে চেপেছে। তার মানে, গরিবের টাকা নিয়েই বড়লোকের সম্পদ বাড়ছে। 

কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়ার দিকে ঝুঁকেছে বিশ্ব। বিশ্বায়নের ফলে আমেরিকায় বিক্রির পণ্য বাংলাদেশ বা ইথিওপিয়ায় তৈরি হচ্ছে। ফলে লাভ বাড়ছে শ্রমিক তথা কর্মীদের কম টাকা দেওয়ার ফলাফল হিসেবে। প্রযুক্তি আরও সুযোগ করে দিয়েছে ১০ জনের কাজ এক মেশিনে করে। ব্যবসাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথা অনুযায়ী দক্ষ করে তুলছে প্রযুক্তি। কিন্তু এটিই মানুষের চাকরির সুযোগ কমিয়েছে। ফলে প্রযুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির সুবিধা কমবে। মানুষের হাতে টাকা কমবে। এই সংকট মিটছে না। মানুষের হাতে অর্থ না থাকলেও তাকে খরচ বাড়াতে হবে। তা না হলে পণ্য বিক্রি হবে না। মালিকের লাভ হবে না। 

ক্রেডিটের অর্থনীতি চলতে থাকে। কিন্তু কতক্ষণ? কয়েক বছর আগের বিশ্বমন্দা পাশ্চাত্যের হাউজিং সেক্টরে মর্টগেজ ঋণের প্রত্যক্ষ অবদান। ক্রেডিটের মাধ্যমে বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে দাম বাড়াকে সহনীয় করা হচ্ছে। মানুষ খরচ করা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা সময় এই ফাঁপা অর্থনীতি পড়ে যেতে বাধ্য। অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া চলিয়ে গেলে ব্যাংকও একসময় ধসে যেতে বাধ্য। আমরা কি সেদিকে যাচ্ছি? কারণ আমরা প্রবৃদ্ধি চাই। প্রবৃদ্ধির গল্প করা সম্মানের, কৃতিত্বের! 

Tapos-Boruaদাস ক্যাপিটালে কার্ল মার্ক্স পুঁজি ও শ্রমের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, লাভের এবং উৎপাদনশীলতার দৌড় স্বাভাবিকভাবেই কম শ্রমিক নিয়োগ করে বেশি কাজ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করবে, যাতে করে দরিদ্র ও বেকার কর্মীর সংখ্যা বাড়বে। মার্কস যাদের বলেছেন ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিজার্ভ আর্মি’। সুতরাং এক মেরুতে সম্পদের সঞ্চয়ন হওয়াটা আসলে একই সঙ্গে অন্য জায়গায় দুর্দশার সঞ্চয়নও। 

তাই জনগণের কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ব্যবসায় প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে বাজেটে। কিন্তু ব্যবসায় প্রণোদনা যেন জনগণের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে, লাভের গুড় যেন ব্যবসায়ীরা এককভাবে খেয়ে না ফেলে, সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা একই সঙ্গে কর্মীবান্ধব বা বৃহত্তর অর্থে জনবান্ধবও হতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের যেকোনো ব্যবহার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিতেই শুধু খরচ করার ব্যবস্থা বাজেটের মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে প্রণোদনাগুলো, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য বিনিয়োগগুলো রাষ্ট্র থেকে বা জনগণ থেকে গুটি কয়েক মানুষের পকেটে যাবে, যা কখনোই কাম্য নয়। 

কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মতো প্রকল্পগুলোসহ বড় প্রকল্পগুলোর খরচে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মতো গতানুগতিক প্রকল্পগুলো আশু সমাধান দেয়। বড় প্রকল্পগুলো সরাসরি এবং ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিঙ্কেজ ব্যবসা ও শিল্পগুলোর মাধ্যমে বড় আকারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ থাকে। বড় প্রকল্প হাতে নিয়ে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ফ্রেডরিখ হায়েক আমেরিকার মন্দার সময় দিয়েছিলেন। তার একটা উদাহরণ আমেরিকার বিখ্যাত হুভার ড্যাম। ত্রাণমুখী সমাধান, খোলাবাজারে নিত্যপণ্য বিক্রির মতো কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি, বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্যের সরবরাহও নিশ্চিত করা। 

জর্জ ম্যাগনাস তাঁর ‘গিভ কার্ল মার্ক্স আ চান্স টু সেভ দি ওয়ার্ল্ড ইকোনমি’ নিবন্ধে (২৯ আগস্ট ২০১১; ব্লুমবার্গ) বলেছেন, ‘গতানুগতিক চর্চার বাইরে গিয়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টিকে নীতিনির্ধারকদের অ্যাজেন্ডার শীর্ষে রাখতে হবে।’ এই সমস্যা সাময়িক না এবং গতানুগতিক সমাধান এতে কাজে আসবে না। 

জর্জ ম্যাগনাস বলেছেন, চাহিদা ও আয়ের বৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। তা না হলে ঋণের ফাঁদে পড়ে সমাজ গুরুতর পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে পলিসির জন্য লিটমাস টেস্ট হিসেবে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। 

পিপিআরসি-বিআইজিডির গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার এক বছরে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে আড়াই কোটি মানুষ। গবেষণা বাদ দিয়েও পরিচিত ৫০ বা ১০০ জনের দিকে তাকিয়ে দেখলে আমরা ঠিকই দেখতে পাই বেকারত্ব ও প্রচ্ছন্ন দারিদ্র্য এখন কতটা প্রকট। 

ম্যাগনাস এমনকি চাকরিদাতাদের পে-রোল ট্যাক্স কমিয়ে এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে হলেও বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগকে উৎসাহিত করার কথা বলেছিলেন আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানির মতো দেশগুলোকে। 

বলা বাহুল্য, মানুষের আয় কমলে সরকারের রাজস্বও কমবে। ট্যাক্স-ভ্যাটে ভাটা পড়বে। সেটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য কোনো ভালো খবর হবে না। বাজেটে এসবকে ব্যালেন্স করার কী কী পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির কী কী পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়, সেদিকেই নজর জনগণের। 

পত্রিকান্তরে সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এবারের বাজেটের মূল নজর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। মানুষ এই কথার প্রতিফলন দেখতে চায় বাজেট বক্তৃতায় এবং বাজেট বাস্তবায়নের পুরো সময়জুড়ে। 

লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

আবদুল বাছেদ, ঢাকা
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২: ২০
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল রহমান। ফাইল ছবি
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল রহমান। ফাইল ছবি

মানুষ সহজ সমাধান পছন্দ করে, বিশেষ করে, যখন সেটিতে অল্প পরিশ্রমে বা বিনিয়োগে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। ধরুন, একটি দেশে ব্যাপক বেকারত্বের সমস্যা, সে দেশের যুবকদের দ্রুত ধনবান হওয়ার উপায় বাতলে দিয়ে আপনি নিজ স্বার্থ হাসিল করতে পারেন। বাংলাদেশেও অবশ্য পেরেছেন অনেকেই—ডেসটিনি, ইভ্যালি থেকে শুরু করে সমুদ্রপথে বিদেশযাত্রার মধ্যস্থতাকারী বা দালালেরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান নারীদের জন্য স্বল্প পরিশ্রমে অর্থ উপার্জনের এক লোভনীয় প্রস্তাব হাজির করেছেন, সঙ্গে দিয়েছেন কিছু মায়া-মমতার প্রলেপ। তিনি বলেছেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে অফিস-আদালতে নারীদের কর্মদিবস পাঁচ ঘণ্টার হবে। এটি ইশতেহার নাকি সুপারশপের সুপার ডিসকাউন্ট, তা ঠাহর করা মুশকিল।

জামায়াত আমিরের কথা শুনে অনেকে হয়তো ভাবছেন, আহা, কী মানবিক প্রস্তাব! নারীরা সন্তান ও সংসারের জন্য বেশি সময় পাবেন। কিন্তু এই ‘সহমর্মিতা’ আসলে এক চোরাবালি, যা নারীর কর্মজীবন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে গ্রাস করবে; তাঁকে বন্দী করে ফেলবে গায়েবি এক শিকলে।

কর্মসংস্থানের দুনিয়া আবেগে চলে না, এটি চলে সময়, শ্রম, দক্ষতা ও মুনাফার মাপকাঠিতে। যদি রাষ্ট্রই ঘোষণা দেয়, নারীরা দিনে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করবেন, তাহলে নিয়োগকর্তার চোখে তাঁরা ‘কম দায়বদ্ধ’ কর্মী হয়ে যাবেন। ফলে ভালো চাকরির সুযোগ, পদোন্নতি, এমনকি কর্মস্থলে সম্মান—সবকিছু থেকে ধীরে ধীরে নারীরা বাদ পড়বেন।

সমাজবিজ্ঞানী শেলি কর্নেল বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘মাদারহুড পেনালটি’ বা ‘মাতৃত্বের শাস্তি’ নামে। তত্ত্বটি বলে, একজন নারী যখন মা হন, তখন কর্মক্ষেত্রে তাঁকে একধরনের অদৃশ্য জরিমানা গুনতে হয়। একই যোগ্যতা থাকার পরেও শুধু ‘মা’ হওয়ার কারণে তাঁর বেতন কমে যায়, পদোন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয় এবং তাঁকে কম দায়িত্বপূর্ণ কাজের উপযোগী মনে করা হয়। সমান যোগ্যতার দুই আবেদনকারীর মধ্যে ‘মা’ পরিচয়ধারী নারী প্রায়ই প্রত্যাখ্যাত হন। কারণ, নিয়োগকর্তার মনে এ ধারণা কাজ করে যে, ‘মা কর্মী’ সন্তানের কারণে কাজে পুরোপুরি মন দিতে পারবেন না।

এখন যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে মা বা নারী কর্মীদের কর্মঘণ্টা কমানো হয়, এই অদৃশ্য শাস্তিটি তখন আইনি রূপ পাবে। নিয়োগকর্তা তখন আর দ্বিধায় ভুগবেন না। একজন আট ঘণ্টা কর্মক্ষম কর্মীর সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার ‘নারী’ কর্মীকে তিনি কেন সমান গুরুত্ব দেবেন? যে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে দীর্ঘ সময় আর নিবিড় মনোযোগ দরকার, সেখান থেকে মায়েরা স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়ে যাবেন। এই নীতি তখন উল্টো এক বড় প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে। যে ‘সহমর্মিতা’ দেখিয়ে তাঁদের কর্মঘণ্টা কমানোর কথা বলা হচ্ছে, সেই সহমর্মিতাই তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করে দেবে।

বিষয়টি বুঝতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনের অধ্যাপক জোয়ান সি উইলিয়ামসের ‘ম্যাটারনাল ওয়াল’ ধারণা আমাদের আরও সাহায্য করবে। এটি সেই অদৃশ্য দেয়ালকে বোঝায়, যেটি মা বা নারী কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে ‘আদার’ বা ‘অপর’-এ পরিণত করে। পাঁচ ঘণ্টার নীতি এ দেয়ালকে আরও ইস্পাতকঠিন করে তুলবে। অফিসের কর্মীরা তখন ভাগ হয়ে যাবেন দুই দলে—একদিকে নারী ও অপর দিকে অন্যরা। নারীদের জন্য তৈরি হবে এক ধীরগতির ক্যারিয়ারপথ বা মমি ট্র্যাক। এই পথে হয়তো সাময়িক স্বস্তি আছে, কিন্তু পদোন্নতি, নেতৃত্ব, প্রভাব ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বের মতো বিষয়গুলো তাঁদের জন্য একরকম নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

এখানে অর্থনৈতিক বাস্তবতাটি ভয়াবহ! ২০২২ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪৩ শতাংশ নারী দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে কর্মরত রয়েছেন। যদি তাঁদের কর্মঘণ্টা আট থেকে পাঁচে নেমে আসে, বেতনও কি আনুপাতিক হারে কমবে না? যদি কমে, নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কমে যাবে। তাই এটি আসলে নারীকে অর্থনৈতিকভাবে পরাধীন করে আবারও গৃহবন্দী করার ফাঁদ। আর যদি সরকার বলে, বেতন কমবে না, তখন নিয়োগকর্তারা বলবেন, ‘আমরা আট ঘণ্টা কাজের সমান বেতন দিয়ে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করাব কেন?’ ফলে অলিখিতভাবে নারী নিয়োগ বন্ধের নীতি প্রতিষ্ঠা পাবে।

অর্থনীতিবিদ এডমুন্ড ফেল্পস ও কেনেথ অ্যারো এ ধরনের আচরণকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘স্ট্যাটিসটিক্যাল ডিসক্রিমিনেশন’ নামে; যেখানে কোনো গোষ্ঠীর গড় আচরণের ওপর ভিত্তি করে বৈষম্য করা হয়। পাঁচ ঘণ্টার নীতি এই বৈষম্যকে বৈধতা দেবে। নিয়োগকর্তা তখন যুক্তি দেখাবেন, রাষ্ট্রই বলেছে, নারীরা কম কাজ করেন, তাই তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া নিরাপদ নয়।

রাজনীতির দিক থেকেও এই প্রস্তাব গভীর সংকেত দেয়। বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর ভূমিকাকে সব সময় খাটো করে দেখা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করলেও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পরে তাঁরা আর গুরুত্ব পাচ্ছেন না। জুলাই জাতীয় সনদ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামো—সব জায়গায় নারীদের অবস্থান প্রান্তিকই রয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর অফার আসলে তাঁকে ঘরবন্দী করার নতুন কৌশলমাত্র।

জামায়াত আমির অফিস-আদালতে নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর বদলে বরং নারীর পাশাপাশি পুরুষকে ঘরের কাজে সমান সহযোগী হওয়ার উপদেশ দিতে পারতেন। আরও বলতে পারতেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে মানসম্মত ডে-কেয়ার সেন্টার বাড়াবে, বাধ্যতামূলক পিতৃত্বকালীন ছুটি দেবে এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পেশা ও পরিবারিক ভারসাম্যপূর্ণ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করবে।

সর্বোপরি, নারীর ক্ষমতায়ন মানে তাঁকে ‘কম কাজ’ করার কথা বলা নয়, বরং তাঁর নিজের সময় ও জীবনের ওপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া। একটি সত্যিকারের অগ্রসরমাণ সমাজ নারীর কাজের ঘণ্টা কমায় না, তাঁর সম্ভাবনার পরিধি বাড়ায়। তাই পাঁচ ঘণ্টার সহমর্মিতা নয়, আমাদের দরকার সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিকাশের সমান সুযোগ ও অধিকার।

লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রশ্ন যখন নিরপেক্ষতা নিয়ে

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের যে দাবি বিগত হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল করে আসছিল, তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যটা কী? সেই দাবির অর্থ হচ্ছে—নির্বাচনের সময়টায় দেশে এমন একটা সরকার থাকবে, নির্বাচনে যাদের কোনো প্রার্থী থাকবে না, কোনো দল থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে এখন আমরা কী দেখছি?

মাসুদ কামাল
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কয়েক দিন আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। নানা কথার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপির পক্ষ থেকে ড. ইউনূসকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে দেশ পরিচালনার। এ নিয়ে নানা কথা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ মুহূর্তে হঠাৎ করে বিএনপির মনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি এল কেন? হাসিনা সরকার সংবিধান যে সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতিটি বাতিল করে দিয়েছিল, সেটা নিয়ে হয়তো দু-এক দিনের মধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত আসবে। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই কি তারা প্রসঙ্গটি তুলেছে? হতে পারে।

আবার এমনও হতে পারে, বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে তারা হতাশ। তারা হয়তো মনে করছে সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা রয়েছেন, যাঁরা বিএনপির প্রতি বিরূপ আচরণ করছেন। আগামী নির্বাচনের সময়ও যদি তাঁরা দায়িত্বে থাকেন, তাহলে সেটা নির্বাচনকে আর পক্ষপাতমুক্ত থাকতে দেবে না। বিষয়টি বিএনপি গোপন রাখেনি। সরাসরি প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে। কয়েকজন উপদেষ্টার বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা বলেছে। একই রকম অভিযোগ জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপিও করেছে। এই তিনটি দল আবার উপদেষ্টাদের বাইরে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়েও তাদের রিজার্ভেশনের কথা বলেছে।

একটা মজার বিষয় হচ্ছে, উপদেষ্টা ও আমলাদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এই যে অভিযোগ, এর কোথাও কিন্তু সরাসরি কোনো নাম উচ্চারিত হয়নি। কেউ কোনো একজন উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করে বলেননি, তিনি পক্ষপাতদুষ্ট। সবই বলা হয়েছে আকারে-ইঙ্গিতে, আড়ে-ঠারে। নাম বলতে কী সমস্যা সেটা আমি বুঝি না। তাহলে কি রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ তেমন একটা তথ্যভিত্তিক নয়? নিছকই বলার জন্য বলা? নাকি নাম বলে তারা ব্যক্তিগত শত্রুতা সৃষ্টি করতে চায় না? এটাও হতে পারে। আমার বিবেচনায়, নাম না বলে দলগুলো বরং ড. ইউনূসকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে। ড. ইউনূস এখন কোনো উপদেষ্টার বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেবেন না, কাউকে বাদও দেবেন না।

চলুন একটা হিসাব করি। বিএনপি অনেক আগে, ১৫ জুন তাদের নেতার সঙ্গে লন্ডনে ড. ইউনূসের বৈঠকের আগে, সরাসরি তিনজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। তাঁদেরকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বেশ কিছুটা চাপও প্রয়োগ করেছিল। সেই তিনজন হলেন ড. খলিলুর রহমান, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। রাজধানীতে তখন বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে শপথ নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল একাধিক আদালতের রায়। বিপরীত দিকে তরুণ অথচ ক্ষমতাধর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অবস্থান নিয়েছিলেন কোনোভাবেই ইশরাককে শপথ নিতে দেবেন না। এই উপদেষ্টার সঙ্গে ছিল নিজের যুক্তি ও জেদ আর ড. ইউনূসের আশীর্বাদ। এমন পরিস্থিতিতেই বিএনপির ওই তিনজনকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি। ১৫ জুনের ‘সফল’ বৈঠকের পর হঠাৎ করেই সবকিছু পাল্টে গেল। বিএনপি অনুগত বালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো। ইশরাককে কোরবানি দেওয়া হলো। দৃশ্যত কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তিন উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি থেকে সরে এল বিএনপি। সাধারণ মানুষ আবারও বুঝতে পারল, রাজনৈতিক দলগুলো যখন কোনো দাবি তোলে, আন্দোলন করে, সেটা আসলে যতটা না জনগণের কথা ভেবে, তার চেয়ে অনেক বেশি নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থে।

বেশ কিছুদিন নীরব থাকার পর এবার যখন বিএনপি আবারও কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলল, বোঝা গেল এবারও সেই দলীয় স্বার্থের কথাই তারা ভাবছে। নাম না বললেও তাদের আপত্তি এবার কমপক্ষে তিনজনের বিরুদ্ধে। কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশিও হতে পারে। একই ধরনের দাবি জামায়াত ও এনসিপিরও আছে। তাদের আপত্তির তালিকায়ও নিশ্চয়ই তিন-চারজন করে থাকতে পারে। তাহলে সব মিলিয়ে দাঁড়াল কত? নয়-দশজন। উপদেষ্টামণ্ডলীর মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তিন দলের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে গেল তো অর্ধেক উপদেষ্টাকেই বাদ দিতে হয়!

এখানে আরও একটা প্রশ্ন রয়েছে। সেটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। দেশে কি রাজনৈতিক দল মাত্র এই তিনটাই? জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে যখন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক হতো, সেখানে ৩০-৩২টা দল দেখতাম। এই তিনটা বাদে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোকে কি হিসাবে নেওয়ার দরকার নেই? যখন কোনো ক্রাইসিস দেখেন, আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এই তিনটি দলকে ডাকেন। যখন যুক্তরাষ্ট্রে যান, এই তিন দলের ছয়জনকে নিয়ে যান। প্রতি দলের দুজন করে না নিয়ে যদি একজন করে নিতেন, তাহলেও তো ছয়টি দলের প্রতিনিধি নিতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। না করে প্রমাণ করেছেন, তাঁর কাছে এই তিনটি দলই যথেষ্ট। বাকিগুলোর কোনো দাম নেই? নির্বাচনে কি এই তিনটি দলই থাকবে? দেশে এ মুহূর্তে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে ৫৬টি। যে সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই সরকারকে নিরপেক্ষ বিবেচিত হতে হলে এই ৫৬টির মধ্যে মাত্র তিনটিকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে চলবে কি?

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের নিরপেক্ষতার গুরুত্ব নিয়ে আমি শুরু থেকেই কথা বলে আসছি। আমার ধারণা, ১৫ জুনের আগে বিএনপি ড. ইউনূসকে নিরপেক্ষ মনে করত না। ১৫ জুনের পর জামায়াতও মনে করে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের যে দাবি বিগত হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল করে আসছিল, তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যটা কী? সেই দাবির অর্থ হচ্ছে—নির্বাচনের সময়টায় দেশে এমন একটা সরকার থাকবে, নির্বাচনে যাদের কোনো প্রার্থী থাকবে না, কোনো দল থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে এখন আমরা কী দেখছি? এনসিপি হচ্ছে জুলাই আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা তরুণদের দল। আর এই দল করার উৎসাহটা এসেছে খোদ ড. ইউনূসের কাছ থেকে। তিনিই এই ছাত্রদের বলেছেন, ‘তোমরা একটা দল করো।’ এই যে কথাটা বলেছেন, সেটা আমরা শুনেছি ইংল্যান্ডের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের পডকাস্টে দেওয়া ইউনূস সাহেবের সাক্ষাৎকার থেকেই। তিনি নিজেই সেখানে সেটা বলেছেন।

একটা নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান হিসেবে তিনি কি ৫৬টি দলের মধ্যে থেকে ৪৭টিকে অবজ্ঞার চোখে দেখতে পারেন? এই যে সামনে নির্বাচন হবে, সেখানে ব্যালট পেপারে কি এই তিনটি দলের প্রতীক বড় করে থাকবে? এসব প্রশ্ন মানুষের মনে উঠতেই পারে। কিন্তু জবাব কি দেবে কেউ?

আমার কেন যেন মনে হয়, বিএনপি যখন তত্ত্বাবধায়ক আদলে সরকার পরিচালনার পরামর্শ ড. ইউনূসকে দিয়েছে, তখন তাদের মনে ওই ৪৭টি দলের বঞ্চনার বিষয়টি ছিল না। তারা কেবল নিজেদের অসুবিধার কথা ভেবে কাতর হয়েছে, আর বিপরীত দিকে জামায়াত ও এনসিপির বাড়তি সুবিধাপ্রাপ্তির কথা ভেবে ঈর্ষায় আক্রান্ত হয়েছে। তারা নিশ্চিতভাবেই ‘ছোট’ দলগুলোর বেদনার কথা ভাবেনি। সে সঙ্গে ‘এক চোখে নুন, আরেক চোখে তেল’ বিক্রির অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ দেখে দেশের সাধারণ মানুষ যে হতাশ হয়েছে, সে বিষয়টিও ভাববার মতো সময় পায়নি।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংঘাতের আশঙ্কা নিয়ে কিছু কথা

মাসুদ রানা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। তিনি কথাটি আরও বিস্তৃত করে বলেছেন, ‘সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন এবং আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’ প্রশ্ন হলো, দেশে সংঘাত ও সহিষ্ণুতা কি চলমান নেই? আমরা একটু পেছনের দিকে তাকালেই বুঝতে পারব, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগেও যেমন, তেমনি পরবর্তী সময়েও সংঘাত চলমান রয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর বিগত সময়ের মতো করে সংঘাত হওয়াটা দেশের মানুষ স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে চায়নি। কিন্তু আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর একের পর এক ঘটনা সংঘটিত হতে। সরকার পুলিশ সক্রিয় নয় বলে অজুহাত দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। একটি ঘটনার রেশ শেষ না হতেই আরেকটি ঘটনা মঞ্চস্থ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল দেশের মানুষ।

প্রথমে নারীদের পোশাক নিয়ে কথা বলা শুরু হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে পোশাক নিয়ে কটূক্তি করলেন সেখানকার একজন কর্মচারী। আমরা দেখেছি জুলাই আন্দোলনের সময় উত্তাল রাজপথে নারী-পুরুষ-নবীন-প্রবীণনির্বিশেষে সবাই শামিল ছিলেন। সেই সময়কার পোশাক কেমন, তা নিয়ে কারও মনে কোনো প্রশ্ন জাগেনি। সবাই ছিলেন সবার সহযোদ্ধা।

এর আগে-পরে আরও নানা ঘটনা ঘটেছে। যেমন দেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙা, মাজার ভাঙা, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ অজস্র ঐতিহাসিক নিদর্শন ভাঙা হয়েছে। এসব ঘটনা কি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল না?

এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ও বাঙালিদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। এ ঘটনাটিও সরকার ভালোভাবে সমাধান করতে পারেনি। এতে দুই পক্ষের কয়েকজন মানুষের আহত-নিহত এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনমন কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

জুলাই আন্দোলনে যাঁরা সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং সমর্থন করেছিলেন, তাঁদের সবার প্রত্যাশা ছিল, এবার বুঝি বাংলাদেশের মানুষ নতুন এক দেশের ছবি দেখতে পাবে। সবার কাঙ্ক্ষিত চাওয়া মলিন হতে দেখতে বেশি সময় লাগেনি। কথায় আছে, সকালের সূর্যোদয় দেখে বলা যায় দিনটি কেমন যাবে? তেমনি দেশের অধিকাংশ মানুষও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আমাদের নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা এবারও অধরা থেকে যাবে। একের পর এক ঘটনাগুলো ঘটার মধ্য দিয়ে সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশে নানা ধরনের অপতৎপরতা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তথ্য উপদেষ্টা বুঝি সেই আলামতের জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বর্তমান সরকার বিগত সময়ের ঘটনা প্রতিরোধ করতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের সংঘাত এড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটা দেশবাসীর দেখার বিষয়।

একটি বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্রে শত মত ও শত পথ থাকাটাই স্বাভাবিক। সবাই নিজ নিজ মত, পথ, চিন্তা নিয়ে চলবে—এটাই বাস্তবতা। সমাজের সবাই এক ও অভিন্ন মতের হতে পারে একমাত্র রোবটের সমাজে। বৈচিত্র্যময় সমাজ ও রাষ্ট্রই হলো সুন্দর। কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে কথাটি ভুলে যাই। এই বৈচিত্র্যের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করাই হলো সুসভ্য সমাজের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।

তেমনি একটা রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু হিসেবে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থানের ফলে। রাজনৈতিক বিভিন্ন মত ও পথও থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন মত ও পথকে শ্রদ্ধা করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থাকবে, কিন্তু সেটা যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলতে না পারে, সেটার দিকে সবার মনোনিবেশ করা দরকার। অস্বীকার করা যাবে না, বাংলাদেশে যুক্তির চেয়ে উগ্রতা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি প্রকাশ পায়। আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় যুক্তির গুরুত্ব নেই বললেই চলে। এ জায়গায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উগ্রতার প্রাবল্য বেশি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই রয়েছে কিছু অন্ধ এবং প্রশ্নহীন আনুগত্য ধরনের অনুসারী, যাঁরা সামান্য বিষয়েই অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটান। যুক্তির কোনো কিছুর ধার না ধেরে, অন্য পক্ষের কোনো কথা না শুনেই অথবা নিজের বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে আক্রমণের পথ বেছে নেন। তাঁরা কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করতে রাজি থাকেন না। পক্ষে না থাকলেই তাঁরা আগ্রাসী আচরণ করে থাকেন। প্রতিটি দলের মধ্যে এ উগ্র, অসহিষ্ণু চরিত্রের মানুষেরা পরিস্থিতি বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। যখনই রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিবেশ দেখা যায়, তখনই তাঁরা তাঁদের স্বচেহারা নিয়ে হাজির হন।

যখন কোনো দল বা ব্যক্তি সুসভ্য সমাজের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসে, তখনই নানা রূপ অসভ্যতা ও অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেখা দিতে থাকে নানা রূপ বিকৃতি ও অনাচার। তখনই মানুষ ও সমাজে বৃদ্ধি পায় বিপদ ও উদ্বেগ। মানুষের স্বাভাবিক, শান্তিপূর্ণ জীবনধারা বিঘ্নিত হয়। আতঙ্ক এসে ভর করে মানুষের মনে আর সমাজেও স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করে না। রাজনীতির সব কার্যক্রমেও দেখা যায় সংঘাত, সন্ত্রাস, রক্তপাত ও প্রাণহানির মতো উদ্বেগজনক ঘটনা। তাই সামনে জাতীয় নির্বাচনের সময় এ ধরনের লোকজনের কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সেটা নিয়ে আগাম ভাবনা জরুরি।

এরপর সংঘাতের পরিবেশ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য দরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে নিদর্লীয় পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। রাষ্ট্রের প্রশাসন, বিচারব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব না হলে সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে না। গত সরকারের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ ছিল, তারা রাষ্ট্রীয় সব সেক্টরে দলীয় আনুগত্যের লোকে ভরিয়ে তুলেছিল। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে ভিন্ন কোনো পরিবেশ কি বিরাজ করছে? এখনো যে সেটা করা সম্ভব হয়নি, সেটা বোঝা যায় বিভিন্ন দলের নেতৃত্বের পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে।

সংঘাত কি নির্বাচনের সময়ই হবে? একটা আশঙ্কা থেকে যায়, অতীত অভিজ্ঞতা বলে, আমাদের দেশে নির্বাচনের সময়ের চেয়ে সংঘাত-সহিষ্ণুতার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে নির্বাচনের পরে। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো যদি এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হবে বলে ধরে নেবেন। কারণ, এত বড় অভ্যুত্থানের পর মানুষ সেটা মেনে নেবে না।

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেধা পাচার

সম্পাদকীয়
মেধা পাচার

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ক্রমেই বিদেশমুখীনতার প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু মেধা পাচার রোধের জন্য কোনো সরকারকেই বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না। শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ দিয়ে লাভ হবে না। কারণ, আমরা দেশের মধ্যে শিক্ষার তেমন পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। সমস্যার সমাধানের জন্য বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি আছে বলে আমরা সেটা রোধ করতে পারছি না।

জানা যায়, মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের ঘাটতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি; রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা; উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানি এবং নিরাপদ ও আধুনিক জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা—মূলত এ পাঁচটি কারণে শিক্ষার্থীরা বিদেশ যাচ্ছেন।

দেশে যখন প্রকৃত মেধার কদর থাকে না, তখন এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশাসহ দেশের মধ্যে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় তদবিরে লোক নিয়োগের অভিযোগ আছে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবীরা মেধা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের হতাশা গ্রাস করছে। নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা যখন বাবার কষ্টের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পান না, তখন তাঁরা দেশে থাকার যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পান না। একই সঙ্গে শিক্ষকেরা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারছেন না, তাঁদের সামনে কোনো আইডল না থাকায় সহজেই শিক্ষা লাভের লক্ষ্য সম্পর্কে হতাশ হয়ে যান।

দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এ দায় ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী রাজনৈতিক দলগুলো এড়িয়ে যেতে পারে না। রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতার ফল সামাজিক ও অর্থনীতিকেও জটিল করে তোলে। তার প্রভাব পড়ে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনেও। বৈশ্বিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের শিক্ষার মান ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার মতো আয়োজন না থাকা নিয়ে অভিযোগ আছে। যেখানে আমরা উচ্চশিক্ষা স্তরের মান বৃদ্ধি করতে পারছি না, সেখানে দিন দিন আরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিকে ঝুঁকছি। একদিকে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্য দিকে তাঁদের অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়ার জন্য নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার মানের দিকে কোনো দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার মানও বাড়বে না, কিন্তু শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা গাণিতিক হারে বাড়তে থাকবে। ফলে শিক্ষিত বেকারের বিদেশমুখীনতা রোধ করা সম্ভব হবে না।

শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী প্রবণতার কারণে শুধু দেশের মেধার পাচার হচ্ছে না, একই সঙ্গে দেশের টাকা বৈধ-অবৈধ পথে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতিও হচ্ছে।

এখন মেধা পাচার রোধ করার জন্য জরুরি দরকার উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা, গবেষণার সুযোগ বাড়ানো এবং শিক্ষার সর্বস্তরে গুণগত মান নিশ্চিত করা। এরপর দক্ষতা অনুযায়ী সম্মানজনক চাকরির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তার চেয়েও জরুরি, মেধাবীদের দেশের মধ্যে আটকে রাখার সব ধরনের আয়োজন করা, তাহলে মেধা পাচার রোধ করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

মামলা করলেন মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত আবুল কালামের স্ত্রী

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

জামায়াত আমিরের পাঁচ ঘণ্টার কর্মদিবস আদতে নারীর গায়েবি শিকল

ফেসবুকে জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য, তোপের মুখে ওসি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত