মাসুদ উর রহমান
বাংলা ভাষার সঙ্গে ইংরেজি বা অন্য ভাষার সংমিশ্রণ, যা আজ আধুনিকতায় পরিণত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষা বিপর্যয়ের প্রধান কারণ। ভাষা হলো মানুষের মনের ভাব প্রকাশক মৌলিক একক। প্রত্যেক জাতির ভান্ডারে তার স্বতন্ত্র মাতৃভাষা রয়েছে। যে মাতৃভাষায় ভাব প্রকাশ করে সেই জাতির প্রতিটি মানুষ। ভাষার প্রতি ভালোবাসা বা টান দেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। একটি দেশের মাতৃভাষা যত বেশি সমৃদ্ধ, সে দেশ সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ততই উন্নত।
বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা অর্জনের পেছনে রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস, যা আর অন্য কোনো জাতির নেই। ভাষার জন্য প্রাণদানের ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে একমাত্র বাঙালি জাতিরই ভাষার জন্য রাজপথে নিজের দেহ বুলেটের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের সবারই জানা। কিন্তু আধুনিক যুগে আমরা নিজেদের মাতৃভাষার এই গৌরব সমুন্নত রাখার পরিবর্তে তাকে অপমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি, যা আমাদের জন্য নিষ্ঠুর একটি সত্য। এই কৃতকর্ম আমাদের দ্বারাই সংঘটিত হচ্ছে এবং দিন শেষে আমাদেরই এর জন্য পস্তাতে হবে।
ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষার প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। থাকা উচিতও নয় বটে। আমি শুধু আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে বিচার করতে চাই। ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগে বিশ্বনাগরিক হওয়াটা যেন প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে। তার জন্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব আর বিশ্লেষণ করার অপেক্ষা রাখে না। ইংরেজি ভাষাটা কেবল দরকার পৃথ্বীর অপর প্রান্তের ব্যক্তির সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য। কিন্তু আপনি যখন নিজ দেশে থেকে, নিজ ভূখণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে, নিজ জাতির কোনো মানুষের সঙ্গে শুধু নিজেকে আধুনিক হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ইংরেজিতে বা অন্য ভাষায় কথা বলেন, তখন তা মাতৃভাষার অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি এমন নয় যে ওই ব্যক্তি বাংলা জানেন না। বাঙালির ঘরে জন্মগ্রহণ করে বাংলা জানেন না, এমন মানুষ এ দেশে আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে আমার বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। মাতৃভাষার প্রতি এ ধরনের অবমাননা সত্যিই লজ্জাজনক বিষয়। অবশ্য আপনি যদি ইংরেজি চর্চার জন্য তা করে থাকেন তাহলে তা বিবেচনাযোগ্য। তবে ওই যে বললাম আধুনিক হওয়ার চেষ্টা, তা করলে আপনি বাংলা ভাষার চোখে এক নির্লজ্জ বিশ্বাসঘাতক হিসেবে গণ্য হবেন।
এ যুগে বিত্তবান মানুষের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যদিও কেউ কেউ ব্যতিক্রম রয়েছেন। তবে সে সংখ্যা অতি নগণ্য। বিত্তবান মানুষকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের তুলে ধরতে হয়। যার কারণে ইংরেজিতে ভাববিনিময় করতে করতে ইংরেজিটাই একসময় তাঁদের কাছে বোধগম্য ভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়। তখন তাঁদের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে থাকে বাংলা শব্দগুলো। ফলে তাঁরা যেকোনো স্থানে বাংলায় বক্তৃতা রাখতে গিয়ে ইংরেজি-বাংলার সংমিশ্রণ করে জগাখিচুড়ি তৈরি করে ফেলেন। তখন তাঁরা অতি সহজ বাংলা বাক্য বা শব্দগুলোও ইংরেজিতে তর্জমা করে বক্তব্যে ব্যবহার করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মাঝেও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন আমরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, গুগলের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নিজেকে বিশ্বনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। এই মাধ্যমগুলোতে ইংরেজি শব্দ-বাক্যের সঙ্গে মিশে মিশে আমাদের স্মৃতি থেকেও হারিয়ে যেতে থাকে সুন্দর-সুমধুর বাংলা শব্দগুলো। যার কারণে আমরাও কথা বলতে গিয়ে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে শ্রুতিকটু ‘বাংলিশ’ ভাষা ব্যবহার করি। এ সবই আমাদের ভাষাচর্চার স্বল্পতার ফল।
বর্তমানে বিনোদন অঙ্গনে যে নতুন নতুন তরুণ-তরুণীর অভিষেক হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। বিশেষ করে নাটক-সিনেমার নবীন অভিনয়শিল্পীরা ওই শ্রেণির বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁরা যেহেতু খ্যাতিমান ব্যক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, তাই অনবরত ‘বাংলিশ’ ভাষা ব্যবহার করে নিজেকে আধুনিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই অনুধাবন করতে পারেন না যে এই কর্মের মাধ্যমে তাঁরা নিজ মাতৃভাষার কত বড় অবমাননা করছেন।
ভাষার এই বিপর্যয়ের পেছনে অনেকাংশে ভূমিকা রাখছেন আমাদের অভিভাবকেরা। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুকে থালার খাবার মুখে পুরে দেওয়ার জন্য হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন নন যে মোবাইল ফোন তাঁদের সন্তানদের মানসিকতায় এবং ভাষা শিক্ষায় কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইউটিউবে বাংলা ভাষার তেমন আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি হয় না বলে অধিকাংশ শিশুই ইংরেজি কনটেন্টে বুঁদ হয়ে থাকে। ফলে যে বয়সে তার মাতৃভাষা শেখার কথা, সে বয়সে সে শিখছে বিদেশি ভাষা। অভিভাবকেরাও প্রথম প্রথম তাতে খুশি হলেও পরবর্তী সময়ে সেই বাচ্চাকে বাংলা শেখাতে তাঁদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
বর্তমান সময়ের অভিভাবকেরা বিশেষ করে দেশের বড় শহরগুলোতে বসবাসরত অভিভাবকেরা বিদ্যালয় হিসেবে ইংরেজি মাধ্যমকে পছন্দ করে থাকেন। এটা অবশ্য মন্দ না। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার ফলে একজন শিশু ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে সক্ষম হয়। ফলে সে বিশ্বনাগরিক হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই না যে সে বাংলা চর্চা করবে না। সেটা অবশ্যই করতে হবে দিন শেষে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে চাইলে।
এই আধুনিক যুগে, কথা বলার চেয়ে অক্ষরের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠানো অনেক জনপ্রিয়। যাকে আমরা ‘চ্যাটিং’ বলে থাকি। এই চ্যাটিং করতে গিয়েই ব্যবহারকারীরা নিজের অজান্তে প্রতিনিয়ত বাংলার অবমাননা করে যাচ্ছেন। তাঁদের দোষটা হচ্ছে তাঁরা ইংরেজি অক্ষরের মাধ্যমে বাংলা লিখে তা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছে পাঠান। অনেকেই বলবেন যে এই কাজটি তাঁরা সময় বাঁচানোর জন্য করে থাকেন। যেহেতু বাংলার চেয়ে ইংরেজি লিখন তুলনামূলক সহজ, তাই অধিকাংশ মানুষই এই কাজটি করে থাকেন। তাঁদের মোবাইল ফোনে কিন্তু বাংলা কি-বোর্ডও থাকে। একটু অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে বাংলা লিখনটা শিখে নিলেই কিন্তু এই ঘৃণিত কাজটি করতে হয় না। আবার যেহেতু ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখাটা একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, তাই অনেকেই আধুনিকতা প্রদর্শনের নিমিত্তে এই কাজ করে থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই প্রশ্ন করবেন, এতে ভাষার অবমাননা হচ্ছে কী করে? এতে যদি ভাষার অবমাননা না হতো তাহলে ভাষা আন্দোলনের পূর্ববর্তী সময়ে যখন আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন কেউ প্রতিবাদ করত না। অন্য কোনো ভাষার অক্ষরে বাংলা লেখা আমার মতে ভাষার নিকৃষ্টতম অপমান। কিন্তু আফসোস, আমরা তা প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছি!
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
বাংলা ভাষার সঙ্গে ইংরেজি বা অন্য ভাষার সংমিশ্রণ, যা আজ আধুনিকতায় পরিণত হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষা বিপর্যয়ের প্রধান কারণ। ভাষা হলো মানুষের মনের ভাব প্রকাশক মৌলিক একক। প্রত্যেক জাতির ভান্ডারে তার স্বতন্ত্র মাতৃভাষা রয়েছে। যে মাতৃভাষায় ভাব প্রকাশ করে সেই জাতির প্রতিটি মানুষ। ভাষার প্রতি ভালোবাসা বা টান দেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। একটি দেশের মাতৃভাষা যত বেশি সমৃদ্ধ, সে দেশ সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ততই উন্নত।
বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা অর্জনের পেছনে রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস, যা আর অন্য কোনো জাতির নেই। ভাষার জন্য প্রাণদানের ঘটনা পৃথিবীতে বিরল। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে একমাত্র বাঙালি জাতিরই ভাষার জন্য রাজপথে নিজের দেহ বুলেটের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের সবারই জানা। কিন্তু আধুনিক যুগে আমরা নিজেদের মাতৃভাষার এই গৌরব সমুন্নত রাখার পরিবর্তে তাকে অপমৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি, যা আমাদের জন্য নিষ্ঠুর একটি সত্য। এই কৃতকর্ম আমাদের দ্বারাই সংঘটিত হচ্ছে এবং দিন শেষে আমাদেরই এর জন্য পস্তাতে হবে।
ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষার প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। থাকা উচিতও নয় বটে। আমি শুধু আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে বিচার করতে চাই। ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগে বিশ্বনাগরিক হওয়াটা যেন প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে। তার জন্য ইংরেজি ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব আর বিশ্লেষণ করার অপেক্ষা রাখে না। ইংরেজি ভাষাটা কেবল দরকার পৃথ্বীর অপর প্রান্তের ব্যক্তির সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্য। কিন্তু আপনি যখন নিজ দেশে থেকে, নিজ ভূখণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে, নিজ জাতির কোনো মানুষের সঙ্গে শুধু নিজেকে আধুনিক হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ইংরেজিতে বা অন্য ভাষায় কথা বলেন, তখন তা মাতৃভাষার অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি এমন নয় যে ওই ব্যক্তি বাংলা জানেন না। বাঙালির ঘরে জন্মগ্রহণ করে বাংলা জানেন না, এমন মানুষ এ দেশে আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে আমার বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। মাতৃভাষার প্রতি এ ধরনের অবমাননা সত্যিই লজ্জাজনক বিষয়। অবশ্য আপনি যদি ইংরেজি চর্চার জন্য তা করে থাকেন তাহলে তা বিবেচনাযোগ্য। তবে ওই যে বললাম আধুনিক হওয়ার চেষ্টা, তা করলে আপনি বাংলা ভাষার চোখে এক নির্লজ্জ বিশ্বাসঘাতক হিসেবে গণ্য হবেন।
এ যুগে বিত্তবান মানুষের ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যদিও কেউ কেউ ব্যতিক্রম রয়েছেন। তবে সে সংখ্যা অতি নগণ্য। বিত্তবান মানুষকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের তুলে ধরতে হয়। যার কারণে ইংরেজিতে ভাববিনিময় করতে করতে ইংরেজিটাই একসময় তাঁদের কাছে বোধগম্য ভাষা হিসেবে পরিগণিত হয়। তখন তাঁদের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে থাকে বাংলা শব্দগুলো। ফলে তাঁরা যেকোনো স্থানে বাংলায় বক্তৃতা রাখতে গিয়ে ইংরেজি-বাংলার সংমিশ্রণ করে জগাখিচুড়ি তৈরি করে ফেলেন। তখন তাঁরা অতি সহজ বাংলা বাক্য বা শব্দগুলোও ইংরেজিতে তর্জমা করে বক্তব্যে ব্যবহার করেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মাঝেও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন আমরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, গুগলের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নিজেকে বিশ্বনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। এই মাধ্যমগুলোতে ইংরেজি শব্দ-বাক্যের সঙ্গে মিশে মিশে আমাদের স্মৃতি থেকেও হারিয়ে যেতে থাকে সুন্দর-সুমধুর বাংলা শব্দগুলো। যার কারণে আমরাও কথা বলতে গিয়ে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে শ্রুতিকটু ‘বাংলিশ’ ভাষা ব্যবহার করি। এ সবই আমাদের ভাষাচর্চার স্বল্পতার ফল।
বর্তমানে বিনোদন অঙ্গনে যে নতুন নতুন তরুণ-তরুণীর অভিষেক হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। বিশেষ করে নাটক-সিনেমার নবীন অভিনয়শিল্পীরা ওই শ্রেণির বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁরা যেহেতু খ্যাতিমান ব্যক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, তাই অনবরত ‘বাংলিশ’ ভাষা ব্যবহার করে নিজেকে আধুনিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই অনুধাবন করতে পারেন না যে এই কর্মের মাধ্যমে তাঁরা নিজ মাতৃভাষার কত বড় অবমাননা করছেন।
ভাষার এই বিপর্যয়ের পেছনে অনেকাংশে ভূমিকা রাখছেন আমাদের অভিভাবকেরা। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুকে থালার খাবার মুখে পুরে দেওয়ার জন্য হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে সচেতন নন যে মোবাইল ফোন তাঁদের সন্তানদের মানসিকতায় এবং ভাষা শিক্ষায় কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইউটিউবে বাংলা ভাষার তেমন আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি হয় না বলে অধিকাংশ শিশুই ইংরেজি কনটেন্টে বুঁদ হয়ে থাকে। ফলে যে বয়সে তার মাতৃভাষা শেখার কথা, সে বয়সে সে শিখছে বিদেশি ভাষা। অভিভাবকেরাও প্রথম প্রথম তাতে খুশি হলেও পরবর্তী সময়ে সেই বাচ্চাকে বাংলা শেখাতে তাঁদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
বর্তমান সময়ের অভিভাবকেরা বিশেষ করে দেশের বড় শহরগুলোতে বসবাসরত অভিভাবকেরা বিদ্যালয় হিসেবে ইংরেজি মাধ্যমকে পছন্দ করে থাকেন। এটা অবশ্য মন্দ না। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার ফলে একজন শিশু ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে সক্ষম হয়। ফলে সে বিশ্বনাগরিক হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই না যে সে বাংলা চর্চা করবে না। সেটা অবশ্যই করতে হবে দিন শেষে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে চাইলে।
এই আধুনিক যুগে, কথা বলার চেয়ে অক্ষরের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠানো অনেক জনপ্রিয়। যাকে আমরা ‘চ্যাটিং’ বলে থাকি। এই চ্যাটিং করতে গিয়েই ব্যবহারকারীরা নিজের অজান্তে প্রতিনিয়ত বাংলার অবমাননা করে যাচ্ছেন। তাঁদের দোষটা হচ্ছে তাঁরা ইংরেজি অক্ষরের মাধ্যমে বাংলা লিখে তা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছে পাঠান। অনেকেই বলবেন যে এই কাজটি তাঁরা সময় বাঁচানোর জন্য করে থাকেন। যেহেতু বাংলার চেয়ে ইংরেজি লিখন তুলনামূলক সহজ, তাই অধিকাংশ মানুষই এই কাজটি করে থাকেন। তাঁদের মোবাইল ফোনে কিন্তু বাংলা কি-বোর্ডও থাকে। একটু অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে বাংলা লিখনটা শিখে নিলেই কিন্তু এই ঘৃণিত কাজটি করতে হয় না। আবার যেহেতু ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখাটা একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, তাই অনেকেই আধুনিকতা প্রদর্শনের নিমিত্তে এই কাজ করে থাকেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই প্রশ্ন করবেন, এতে ভাষার অবমাননা হচ্ছে কী করে? এতে যদি ভাষার অবমাননা না হতো তাহলে ভাষা আন্দোলনের পূর্ববর্তী সময়ে যখন আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন কেউ প্রতিবাদ করত না। অন্য কোনো ভাষার অক্ষরে বাংলা লেখা আমার মতে ভাষার নিকৃষ্টতম অপমান। কিন্তু আফসোস, আমরা তা প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছি!
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১ দিন আগেদেশে প্রতিবছর বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবায়নের সময় মাঝে মাঝে সংবাদ চোখে পড়ে যে প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছ কাটা পড়ছে, বনভূমি উজাড় হচ্ছে, খাল ও জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, নির্মাণস্থলে নির্মাণকাজের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এমনকি কোনো কোনো প্রকল্প গ্রহণের ফলে পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব...
১ দিন আগেপাহাড় রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, তখন সে পাহাড় কেটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনছে একদল দুর্বৃত্ত। খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন।
১ দিন আগে১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২ দিন আগে