আজাদুর রহমান চন্দন
পৃথিবী নামের এই গ্রহের ‘উন্নত জীবন-বিলাসী’ বাসিন্দারা নিজেদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই মূলত প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে কার্বন নিঃসরণ। তাতে তাপমাত্রা বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, যা গ্রহটির অস্তিত্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সিথ্রিএস) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা নথিভুক্তি শুরু করার পর থেকে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। গত বছর হঠাৎ করেই বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বছর বছর বাড়ছে এই তাপমাত্রা। সিথ্রিএসের গবেষণামতে, আগের ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। হয়তো সামনের বছরগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাই বিশ্বজুড়ে এখন রব উঠেছে গ্রিনহাউস গ্যাস তথা কার্বন নিঃসরণ কমানোর। গবেষক ও জলবায়ুসচেতন মানুষেরা চাইছেন বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে। না হলে যে আমাদের প্রিয় পৃথিবী মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের দায় খুব সামান্য। বাংলাদেশ মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব এখানেই সবচেয়ে বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় দেশে অন্তত পরিবেশ রক্ষায় বড় অগ্রগতির আশা জেগেছিল কারও কারও মনে। কারণ, মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর যে তিন শূন্য তত্ত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত, সেগুলো হচ্ছে—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদে একাধিক পরিবেশবাদী তারকা ঠাঁই পাওয়ায় পরিবেশ রক্ষায় অগ্রগতির আশা আরও দৃঢ় হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ১০ মাসে এ ক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতির আভাসও কি মেলে? পদক্ষেপ বলতে আছে কেবল বিকল্প ব্যবস্থা না করেই বিপণিবিতানে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার আর সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ। সেন্ট মার্টিন নিয়ে যদিও অন্য রকমের গুঞ্জন-সন্দেহ সবখানে।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রধান উপায় হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো। বাংলাদেশ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপরই নির্ভরশীল। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে সৌরশক্তি। বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে ৪ দশমিক ৫ কিলোওয়াট আওয়ার/বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। কিন্তু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে খুব সামান্যই। যেটুকু বিদ্যুৎ মিলছে তার বেশির ভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অফগ্রিড (জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগবিহীন) এলাকায় স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেম থেকে, যা ব্যাটারিসর্বস্ব আইপিএসের মতোই। প্রতি মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিন একরের বেশি ভূমির প্রয়োজন হওয়ায় বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে গ্রিডে সংযুক্ত বিভিন্ন স্থাপনা যেমন বহুতল বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্পকারখানার অব্যবহৃত ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক গবেষণামতে, দেশের কারখানা ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ছাদে ২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানোর মাধ্যমে বছরে এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব। ছাদে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বাড়বে। কিন্তু সোলার প্যানেল সাশ্রয়ী না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এই কয় মাসে দেশে সোলার প্যানেল তৈরির বড় আকারের অন্তত একটি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিতেই পারত। প্রধান উপদেষ্টা চাইলে নিজ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই সামাজিক ব্যবসার আওতায় এমন একটি কারখানা স্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু হয়নি কিছুই। এমনকি স্থানীয়ভাবে স্বল্প ব্যয়ে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক যানবাহন দেদার তৈরি হলেও সেগুলো বৈধভাবে চালানোর জন্য কোনো আইনিকাঠামো বানানো হয়নি।
এ দেশেরই একজন বিজ্ঞানী পাট থেকে এমন একধরনের পলিমার উদ্ভাবন করেছেন, যেটি পলিথিনের মতো হলেও সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এই পলিমারের তৈরি ব্যাগ ফেলে দিলে পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। এই পলিমার দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি ব্যাগের নাম দেওয়া হয় ‘সোনালি ব্যাগ’, যা বিশ্বব্যাপী সবার নজর কাড়ে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক হারে এই ব্যাগ তৈরি করা হলে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই পলিথিনমুক্ত দেশ গড়া অসম্ভব নয়। এ নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোর পর জরুরি করণীয় ছিল দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জনমুখী জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা; জনবান্ধব বাজারব্যবস্থা চালু; সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে মনোযোগ দেওয়া। কিন্তু প্রশাসনে চেহারা বদল হলেও ব্যবস্থা বদলাচ্ছে না। জনমুখী বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা তো চিন্তায়ও নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ন্যায়বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়া-সংক্রান্ত রায় সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কতটা খাপ খায়? এই রায়ের প্রতিবাদে প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রশিবিরের ন্যক্কারজনক হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেই। বিগত বছরগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ যেভাবে হামলা করত, ছাত্রশিবির তেমনটিই করছে। যদিও ছাত্রলীগের হেলমেটের আড়ালে তখনো তারা তৎপর ছিল। এখন নারী শিক্ষার্থীদেরও আক্রমণ করা হচ্ছে টার্গেট করে। দাবিদাওয়ার কথা বলতে যাওয়ায় সিলেটের এক নারী শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাসের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাতও থেমে নেই। এই মব সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেট একাত্তর, বায়ান্ন, বাঙালিয়ানা ও অসাম্প্রদায়িকতা। গাজী-কালু-চম্পাবতীর যে মেলা একসময় ছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁপাইগাছি গ্রামের প্রাণের স্পন্দন, এখন সেখানে যেন শুধুই শূন্যতায় শোকসভা। অসাম্প্রদায়িকতা ও লোকজ ঐতিহ্যের উদাহরণ হয়ে থাকা গাজী, কালু ও চম্পাবতীর নামে প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে এই মেলা। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সোমবার মেলাটি শুরু হয়। কিন্তু এবার এই মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে আপত্তি তোলে জামায়াতে ইসলামী। ফলে ঐতিহ্যবাহী মেলাটির অনুমোদন মেলেনি। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জগদীশচন্দ্র বসু, জীবনানন্দ দাশ, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়ার মতো মনীষীদের নাম বাদ দেওয়ার তো হিড়িক পড়েছে বেশ আগেই। ইদানীং সংস্কার নামের মুলাটিকে নির্বাচনের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের জোর দাবির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব দল নয়, শুধু একটি দলই চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। গত বৃহস্পতিবার জাপানের টোকিওতে নিক্কেই ফোরামে তিনি এ কথা বলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সেদিনই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সিপিবি, বাম জোটসহ ৫০টির বেশি দল চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন মাত্র একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। পরদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের এক ব্যক্তিই চান না এবং সেই ব্যক্তি মুহাম্মদ ইউনূস। কেউ কেউ বলতে চাইছেন, ডিসেম্বর আর জুনের মধ্যে সময়ের ফারাক তো সামান্যই। তাহলে সেটি নিয়ে কেন এত জেদাজেদি? আসলে প্রাকৃতিক কারণেই জুন মাসটা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অনুকূল নয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটের মাঠে অন্য কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে—এমন ধারণা বিএনপির বাইরেরও অনেক মানুষের। কিন্তু নতুন একটি দলের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাত দেখে অনেকের সন্দেহ, নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করার প্রধান কারণ হতে পারে নতুন দলটিকে ক্ষমতায় যাওয়ার উপযোগী হওয়ার সুযোগ দেওয়া। বন্দর, করিডর নিয়ে সরকারের অতি উৎসাহের কথা আজ আর না-ইবা বললাম। প্রশ্ন শুধু, নীতিনির্ধারকদের নানা কূটচিন্তার কারণেই কি প্রত্যাশিত পরিবর্তন বেপথু?
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
পৃথিবী নামের এই গ্রহের ‘উন্নত জীবন-বিলাসী’ বাসিন্দারা নিজেদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই মূলত প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে কার্বন নিঃসরণ। তাতে তাপমাত্রা বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, যা গ্রহটির অস্তিত্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সিথ্রিএস) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রা নথিভুক্তি শুরু করার পর থেকে ২০২৪ সালটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। গত বছর হঠাৎ করেই বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। বছর বছর বাড়ছে এই তাপমাত্রা। সিথ্রিএসের গবেষণামতে, আগের ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি বছরই বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০ উষ্ণতম বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। হয়তো সামনের বছরগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়বে। তাই বিশ্বজুড়ে এখন রব উঠেছে গ্রিনহাউস গ্যাস তথা কার্বন নিঃসরণ কমানোর। গবেষক ও জলবায়ুসচেতন মানুষেরা চাইছেন বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে। না হলে যে আমাদের প্রিয় পৃথিবী মহাবিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের দায় খুব সামান্য। বাংলাদেশ মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব এখানেই সবচেয়ে বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় দেশে অন্তত পরিবেশ রক্ষায় বড় অগ্রগতির আশা জেগেছিল কারও কারও মনে। কারণ, মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর যে তিন শূন্য তত্ত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত, সেগুলো হচ্ছে—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদে একাধিক পরিবেশবাদী তারকা ঠাঁই পাওয়ায় পরিবেশ রক্ষায় অগ্রগতির আশা আরও দৃঢ় হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ১০ মাসে এ ক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতির আভাসও কি মেলে? পদক্ষেপ বলতে আছে কেবল বিকল্প ব্যবস্থা না করেই বিপণিবিতানে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার আর সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ। সেন্ট মার্টিন নিয়ে যদিও অন্য রকমের গুঞ্জন-সন্দেহ সবখানে।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রধান উপায় হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো। বাংলাদেশ এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপরই নির্ভরশীল। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে সৌরশক্তি। বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে ৪ দশমিক ৫ কিলোওয়াট আওয়ার/বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। কিন্তু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে দেশে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে খুব সামান্যই। যেটুকু বিদ্যুৎ মিলছে তার বেশির ভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে অফগ্রিড (জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগবিহীন) এলাকায় স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেম থেকে, যা ব্যাটারিসর্বস্ব আইপিএসের মতোই। প্রতি মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তিন একরের বেশি ভূমির প্রয়োজন হওয়ায় বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে গ্রিডে সংযুক্ত বিভিন্ন স্থাপনা যেমন বহুতল বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্পকারখানার অব্যবহৃত ছাদে সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক গবেষণামতে, দেশের কারখানা ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোর ছাদে ২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানোর মাধ্যমে বছরে এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব। ছাদে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বাড়বে। কিন্তু সোলার প্যানেল সাশ্রয়ী না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এই কয় মাসে দেশে সোলার প্যানেল তৈরির বড় আকারের অন্তত একটি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিতেই পারত। প্রধান উপদেষ্টা চাইলে নিজ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই সামাজিক ব্যবসার আওতায় এমন একটি কারখানা স্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু হয়নি কিছুই। এমনকি স্থানীয়ভাবে স্বল্প ব্যয়ে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক যানবাহন দেদার তৈরি হলেও সেগুলো বৈধভাবে চালানোর জন্য কোনো আইনিকাঠামো বানানো হয়নি।
এ দেশেরই একজন বিজ্ঞানী পাট থেকে এমন একধরনের পলিমার উদ্ভাবন করেছেন, যেটি পলিথিনের মতো হলেও সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এই পলিমারের তৈরি ব্যাগ ফেলে দিলে পচে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। এই পলিমার দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি ব্যাগের নাম দেওয়া হয় ‘সোনালি ব্যাগ’, যা বিশ্বব্যাপী সবার নজর কাড়ে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক হারে এই ব্যাগ তৈরি করা হলে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই পলিথিনমুক্ত দেশ গড়া অসম্ভব নয়। এ নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
হাসিনা সরকারের পতন ঘটানোর পর জরুরি করণীয় ছিল দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জনমুখী জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা; জনবান্ধব বাজারব্যবস্থা চালু; সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগসহ নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে মনোযোগ দেওয়া। কিন্তু প্রশাসনে চেহারা বদল হলেও ব্যবস্থা বদলাচ্ছে না। জনমুখী বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা তো চিন্তায়ও নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ন্যায়বিচার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দেওয়া-সংক্রান্ত রায় সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে কতটা খাপ খায়? এই রায়ের প্রতিবাদে প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রশিবিরের ন্যক্কারজনক হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেই। বিগত বছরগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ যেভাবে হামলা করত, ছাত্রশিবির তেমনটিই করছে। যদিও ছাত্রলীগের হেলমেটের আড়ালে তখনো তারা তৎপর ছিল। এখন নারী শিক্ষার্থীদেরও আক্রমণ করা হচ্ছে টার্গেট করে। দাবিদাওয়ার কথা বলতে যাওয়ায় সিলেটের এক নারী শিক্ষার্থীকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাসের পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাতও থেমে নেই। এই মব সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেট একাত্তর, বায়ান্ন, বাঙালিয়ানা ও অসাম্প্রদায়িকতা। গাজী-কালু-চম্পাবতীর যে মেলা একসময় ছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁপাইগাছি গ্রামের প্রাণের স্পন্দন, এখন সেখানে যেন শুধুই শূন্যতায় শোকসভা। অসাম্প্রদায়িকতা ও লোকজ ঐতিহ্যের উদাহরণ হয়ে থাকা গাজী, কালু ও চম্পাবতীর নামে প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসছে এই মেলা। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সোমবার মেলাটি শুরু হয়। কিন্তু এবার এই মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে আপত্তি তোলে জামায়াতে ইসলামী। ফলে ঐতিহ্যবাহী মেলাটির অনুমোদন মেলেনি। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জগদীশচন্দ্র বসু, জীবনানন্দ দাশ, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়ার মতো মনীষীদের নাম বাদ দেওয়ার তো হিড়িক পড়েছে বেশ আগেই। ইদানীং সংস্কার নামের মুলাটিকে নির্বাচনের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের জোর দাবির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব দল নয়, শুধু একটি দলই চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। গত বৃহস্পতিবার জাপানের টোকিওতে নিক্কেই ফোরামে তিনি এ কথা বলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সেদিনই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সিপিবি, বাম জোটসহ ৫০টির বেশি দল চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন মাত্র একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। পরদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের এক ব্যক্তিই চান না এবং সেই ব্যক্তি মুহাম্মদ ইউনূস। কেউ কেউ বলতে চাইছেন, ডিসেম্বর আর জুনের মধ্যে সময়ের ফারাক তো সামান্যই। তাহলে সেটি নিয়ে কেন এত জেদাজেদি? আসলে প্রাকৃতিক কারণেই জুন মাসটা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অনুকূল নয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে ভোটের মাঠে অন্য কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে—এমন ধারণা বিএনপির বাইরেরও অনেক মানুষের। কিন্তু নতুন একটি দলের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাত দেখে অনেকের সন্দেহ, নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি করার প্রধান কারণ হতে পারে নতুন দলটিকে ক্ষমতায় যাওয়ার উপযোগী হওয়ার সুযোগ দেওয়া। বন্দর, করিডর নিয়ে সরকারের অতি উৎসাহের কথা আজ আর না-ইবা বললাম। প্রশ্ন শুধু, নীতিনির্ধারকদের নানা কূটচিন্তার কারণেই কি প্রত্যাশিত পরিবর্তন বেপথু?
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ যেন পরিণত হয়েছে এক অলিখিত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে—যেখান থেকে বিরোধ, অভিযোগ আর অস্থিরতার যেন শেষ নেই। নাজমুল হাসান পাপনের দীর্ঘ শাসনের পর এলেন ফারুক আহমেদ, আর এবার আলোচনার কেন্দ্রে আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি এই পদ মানুষকে বিগড়ে দেয়? নাকি এ
১৮ ঘণ্টা আগেগত কয়েক দশকের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের আচার-আচরণ মোটের ওপর বিশ্লেষণ করলে মোটা দাগে বলা যায়, গত শতাব্দীর রাজনীতিবিদদের চেয়ে তাঁরা আলাদা বৈশিষ্ট্যের। রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের এই পরিবর্তনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা দরকার।
১৮ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশের খামারিরা কোরবানি সামনে রেখে সারা বছর পশুপালন করে থাকেন। এ সময় তাঁরা খামারের অধিকাংশ পশু বিক্রি করে দেন। এতে একদিকে যেমন তাঁরা লাভবান হন, অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতিও সচল হয়। কিন্তু কোরবানির সময় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাই পথে গরু আসার কারণে সত্যিকার অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশীয় খামারিরা। তাঁ
১৮ ঘণ্টা আগেসুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল জেলার স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হলেও বর্তমানে এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। ১ জুন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ‘চিকিৎসকের অনুপস্থিতিই যেন নিয়ম’ শিরোনামটিই হাসপাতালের বর্তমান দুরবস্থার এক করুণ চিত্র তুলে ধরছে। রোগীদের অভিযোগ হলো, প্রতিদিন আউটডোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলে না
১৮ ঘণ্টা আগে