ড. মিল্টন বিশ্বাস

আবার এসেছে ১১ জুন। জুন মাসটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। ৭ জুন ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। সবগুলো দিবসের কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। বিশেষত ২৫ জুনের ঐতিহাসিক ক্ষণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের জন্য যেমন, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বাঁক বদলের দিন হিসেবে স্মরণীয় হতে যাচ্ছে। আর এই অনন্য সাহসী কাজটি সম্পন্ন হওয়ার জন্য জননেত্রীর দূরদৃষ্টিময় নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই নেতৃত্ব দ্রুত সাফল্য নিয়ে এসেছে ১১ জুনের ঘটনার পর। আসলে ২০০৮ সালের ১১ জুন রাজবন্দী শেখ হাসিনার কারামুক্তি এ দেশের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে সেনাসমর্থিত মেয়াদোত্তীর্ণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর এই দিন সাবজেলের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হন তিনি। কারাগারের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী করা হলেও শেখ হাসিনার ২০০৭ সালের ৭ মে আমেরিকা থেকে প্রত্যাবর্তন ছিল আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ওই বছরের ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু তাঁকে রাজবন্দী করার পর সে সময় গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল; দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্ত স্পষ্ট হয়েছিল। তাঁর সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেপ্তারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে বিহ্বল ও বিক্ষুব্ধ করে তোলে। কারণ সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্য কথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ। আসলে ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক নাটকীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে। সে সময় ‘দুদকের’ দৌড়ঝাঁপ, ‘মাইনাস টু’র কুশীলবদের উচ্চ স্বর ও দাম্ভিকতা, বিচারকদের অসহায়ত্ব আর শেখ হাসিনার জন্য জনগণের বেদনাবোধ অন্যান্য দেশের মানুষকে আলোড়িত করেছিল। শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য দেশ-বিদেশে যে জোরালো দাবি উঠেছিল, তা ছিল অভূতপূর্ব। অন্যদিকে দলের সভাপতিকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানসহ অন্য নেতারা বিভিন্নভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে স্লো পয়জনিংয়ের কারণে ওই সময় কারাগারের অভ্যন্তরে নেত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান ববি বিদেশি আইনজীবীদের সহায়তায় মামলা লড়েন এবং নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে জনমত গঠন করেন। আওয়ামী লীগের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করা হয়। অবসান ঘটে বিএনপি-জামায়াত ও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসন কালের। এ কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভার গৌরবান্বিত রাষ্ট্র, যার রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, যিনি একটানা সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় আসীন।
এই ইতিহাস সবার জানা যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে খুন করার সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার সংগ্রামী জীবনে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে দুঃখের কষ্টিপাথরে সহিষ্ণুতার দীক্ষায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন ২০০৭ সালে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়ে। পঁচাত্তর থেকে পঁচানব্বই—দীর্ঘ ২১ বছর পর সম্ভাবনার বাংলাদেশে তিনি হন প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অমানিশার দুর্যোগে প্রাণ বাঁচানোর দুঃসহ স্মৃতি; অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া জীবন নিয়ে আবার নির্যাতিত জনগণের জন্য রাতদিনের পরিশ্রম—কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর সময় হঠাৎ করে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী হলেন; শুরু হলো আরেক জীবন। সেই জীবনের স্মৃতি আছে তাঁর রচনায়, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ গ্রন্থে।
কারাগারে বন্দী শেখ হাসিনার অন্তর অপমান ও কষ্টে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তিনি কখনো মনোবল হারাননি। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাঁকে বন্দীকরে সংসদ ভবনের একটি বাড়িকে সাবজেলে পরিণত করা হয়। ওই সাবজেলের ভবনটি ছিল অত্যন্ত ময়লা ও নোংরা। পুরোনো গদি, ছেঁড়া কাপড়-চোপড়, পুরোনো কাগজপত্র সব ছড়ানো। খাটখানা ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল না। খাবার আসত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। মাঝে মাঝে খাবার আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতো। আর খাবারের মেনুও সস্তা জিনিসে ঠাসা ছিল। দুঃখের দিনে কষ্টের মাঝে পড়ে তিনি জাতির পিতার কথা স্মরণ করতেন। কারণ নিঃসঙ্গ কারাগারে তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল স্মৃতি। অনেক কথাই তাঁর মনে পড়ত।
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাঁকে জেলখানায় সেলের ভেতরে রাখা হতো। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন আর দিবস-রজনী কষ্ট সহ্য করে গেছেন। ১৯৭১ সালে বন্দী করে তাঁকে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি জেলে নেওয়া হয়, সেখানে গ্রীষ্মকালে যেমন প্রচণ্ড গরম, তেমনি শীতের সময় তীব্র শীত। রুটি-ডাল ছাড়া কিছুই পেতেন না খেতে। অথচ ওই খাবার তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। তার পরেও তাঁর মুখ থেকে কোনো দিন কোনো কষ্টের কথা কেউ শোনেননি। নিজের কষ্টের কথা তিনি সব সময় চেপেই রাখতেন। শেখ হাসিনাও সেরকম একজন রাজনীতিবিদ, যিনি অপরের দুঃখে সব সময় কাতর হন।
সাবজেলের ওই বাড়ির উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গণভবন দেখা যেত। কষ্টের মধ্যেই কারাগারে জানালায় সকাল-বিকেল দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে গণভবন দেখতেন, যেখানে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবস্থান করেছিলেন। সবুজ মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় জনগণের চলাফেরা অবলোকন করতেন। ইচ্ছে হলেই বের হতে পারতেন না। কারণ তিনি তো বন্দী, দোতলায় একদম একা। বাইরে বের হওয়ার স্বাধীনতা নেই। কিন্তু তাঁর মনটা স্বাধীন ছিল, মনের কল্পনায়ই তিনি সবুজ মাঠ পেরিয়ে চলে যেতেন স্বপ্নরাজ্যে। ওই বাড়ির চারদিকে অনেক গাছ ছিল। সেই প্রকৃতির প্রাণময়তা তাঁকে তৃপ্তি দিত। মানসিক চাপ আর দেশ ও জনতার চিন্তার মাঝে স্বস্তি খুঁজে নিতেন।
২০০৭ সালে সংসদ ভবনের অন্যান্য বাড়িতে স্পেশাল কোর্ট বসানো হয়েছিল। তারপর একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে শেখ হাসিনাকে। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আবিষ্কার হলো, সব চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ তিনি। তাই প্রথমে দেশের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে বিনা ওয়ারেন্টে টেনে হিঁচড়ে কোর্টে নিয়ে গিয়ে তারপর সাবজেলে ১১ মাস বন্দী করে রাখে। সম্পূর্ণ একাকী নিঃসঙ্গ বন্দিখানায় ছিলেন তিনি।
তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিচারের নামে প্রহসন চলে। তখন বিচারকেরা তাঁদের বিবেক, চিন্তা, জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে বিচার করতে পারেননি। উচ্চ আদালতে শপথ মোতাবেক বিচারকেরা কাজও করেননি। বিচারকদের ওপর গোয়েন্দাদের চাপ অব্যাহতভাবে ছিল। এ জন্য তাঁকে জামিন দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। ওপরের নির্দেশে মামলার রায় হতো তখন। তিনি তখনকার ক্ষমতাবানদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, যারা আজ ক্ষমতায় তাদেরও ভবিষ্যতে কারাগারে থাকতে হবে না, এই গ্যারান্টি কি পেয়েছে? ক্ষমতার মসনদ ও কারাগার খুব কাছাকাছি।
সরকার প্রথমে চাঁদাবাজির মামলা দেয় ৩ কোটি টাকার। যাঁরা চাপে পড়ে মামলা করেছিলেন, তাঁরা ভালো করেই জানতেন তাঁদের কাছে শেখ হাসিনা কোনো দিন চাঁদা চাননি। ওদের তিনি চেনেনও না। তিনি তাঁর জীবনে কোনো দিন কারও কাছে কোনো টাকা চাননি। অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করার জন্যই যাকে খুশি তাকে দিয়েই যা খুশি তা বলানো হতো। একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল সেই সময়ের প্রশাসন। কারণ তারা জানত নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। তারা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। শেখ হাসিনার এসব ভাবনা বাস্তব হয়ে উঠেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে।
শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসকদের দ্বারা মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও কারাযন্ত্রণার শিকার হয়েছিলেন দুর্ভাগ্যবশত। কারণ স্বাধীন দেশে পাকিস্তানের মতো নিপীড়ক শাসক থাকার কথা ছিল না, দেশও গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হচ্ছিল। অথচ দেশ-বিদেশে টিকে থাকা বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা তখনো সক্রিয়। তা ছাড়া শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের একাধিকবার চেষ্টা চলেছে ১৯৮১ সালের ১৭ মের পর থেকেই, যা ২০২০ পর্যন্ত ২১ বার হিসাবে তথ্য-প্রমাণ সাক্ষ্য দেয়। আগেই বলেছি, সাবজেলে থাকার সময় স্লো পয়জনিংয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চাঁদাবাজির। অথচ ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতাকালে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হলেও কখনো চাঁদাবাজির মামলা করা হয়নি। এ জন্য শেখ হাসিনার মনে হয়েছে, মামলাবাজ জোট সরকার থেকেও বড় আবিষ্কারক ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার জন্য তিনি আন্দোলন করেছিলেন। ৬৮ জন জীবন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর হাতে। সেই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যে নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। চারদলীয় জোটের ভোট কারচুপির নীলনকশা প্রতিহত করার জন্যই আন্দোলন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করাও তাঁর মূল টার্গেট ছিল। নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘আন্দোলন করে দাবি পূরণ করলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠন করলাম। যেই দ্রুত নির্বাচনের কথা বললাম, সেই আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেলাম, দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম। আমার স্থান হলো কারাগারে। পাঁচটি বছর চারদলীয় জোট তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, আমার ও আমার পরিবারের দুর্নীতির কোনো কিছু পায় কিনা, পায় নাই। পেয়েছে ফখরুদ্দীন সরকার।’
দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ শেখ হাসিনা জেলে থাকার কারণে তাঁর সন্তান পুতুল-জয়ের পাশে সব সময় থাকতে পারেননি। এই বেদনা তিনি তুলে ধরেছেন নিজের লেখায়। রাজনীতির জন্য পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা বঙ্গবন্ধুর লেখনীতেও আছে। অনুরূপভাবে একজন বন্দী মা কতটা অসহায়, তার বর্ণনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। তার একমাত্র কন্যা পুতুল মা হবেন; থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মা হিসেবে মেয়ের কাছে থাকাটা খুব দরকার। যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও যেতে দেওয়া হয়নি। সেই সময়ের প্রশাসন আটকে দিয়েছিল তাঁর বিদেশভ্রমণ।
‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ গ্রন্থে এভাবেই তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন কারান্তরালে যাপিত জীবন-যাপন করার মুহূর্তে। তিনি ওই গ্রন্থে তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের চুলচেরা ব্যবচ্ছেদ করেছেন। সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপে চাঁদাবাজির মামলাগুলো কীভাবে করা হয়েছিল, তা-ও তিনি জানতেন। গণতন্ত্রকে সুসংহত করা এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টাকে চিরতরে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল যারা, তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে মানুষকে সামরিক শাসন উপহার দিতে চেয়েছিল। ২০০৭ সালে প্রথমে সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল ঠিকই, কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেয়। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে দুই বছর পর নির্বাচন হবে। সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। অথচ তখন নতুন নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। ‘মাইনাস টু’ অনুসারে তৃতীয় শক্তির উত্থান প্রত্যাশা করছে শাসকগোষ্ঠী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সুদখোর, কালোটাকার মালিকেরা টাকা সাদা করে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে। অন্যদিকে ‘দুদক’কে দিয়ে রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে বিতর্কিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার, একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ৯টি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৬টি—মোট ১৫টি মামলা করা হয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে ‘দুদক’কে ব্যবহার করে। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিদেশি প্রতিষ্ঠান নাইকোকে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে ‘দুদক’। ২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে হাইকোর্টে বাতিল আবেদন করলে ৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত মামলাটি বাতিল ঘোষণা করেন। এভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা সব মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উদ্ঘাটিত হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাগুলো করা হয়েছিল। এ জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিধিমালার অসংগতি দূর করতে তা সংশোধনেরও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়ার সময় শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে অভিব্যক্ত শেখ হাসিনার সাহসী ও প্রজ্ঞামণ্ডিত উচ্চারণগুলো তখনকার নেতা–কর্মীরা অনুসরণ করেছিলেন। কারণ গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সারা জীবন সংগ্রাম করা একজন কর্মঠ নেতার জন্যই অন্যরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। আর জনগণের দাবির কারণেই ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্ত হন।
১১ জুনের প্রভাবে এবং তাঁর সৎ নেতৃত্বের কারণেই নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অতীতের জেল-জুলুম, হত্যার প্রচেষ্টা এবং হুমকি আর বর্তমানের অপপ্রচারের মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ২০৪১ সালেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে এটা নিশ্চিত। ২০২২ সালে তাঁর কারামুক্তি দিবস উন্নয়ন-বিপ্লবের বিস্ময়কর জয়যাত্রায় পরিপূর্ণ।
লেখক: অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আবার এসেছে ১১ জুন। জুন মাসটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। ৭ জুন ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। সবগুলো দিবসের কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। বিশেষত ২৫ জুনের ঐতিহাসিক ক্ষণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের জন্য যেমন, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বাঁক বদলের দিন হিসেবে স্মরণীয় হতে যাচ্ছে। আর এই অনন্য সাহসী কাজটি সম্পন্ন হওয়ার জন্য জননেত্রীর দূরদৃষ্টিময় নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই নেতৃত্ব দ্রুত সাফল্য নিয়ে এসেছে ১১ জুনের ঘটনার পর। আসলে ২০০৮ সালের ১১ জুন রাজবন্দী শেখ হাসিনার কারামুক্তি এ দেশের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে সেনাসমর্থিত মেয়াদোত্তীর্ণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর এই দিন সাবজেলের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হন তিনি। কারাগারের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী করা হলেও শেখ হাসিনার ২০০৭ সালের ৭ মে আমেরিকা থেকে প্রত্যাবর্তন ছিল আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ওই বছরের ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু তাঁকে রাজবন্দী করার পর সে সময় গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিল; দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্ত স্পষ্ট হয়েছিল। তাঁর সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেপ্তারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে বিহ্বল ও বিক্ষুব্ধ করে তোলে। কারণ সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্য কথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ। আসলে ২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক নাটকীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে। সে সময় ‘দুদকের’ দৌড়ঝাঁপ, ‘মাইনাস টু’র কুশীলবদের উচ্চ স্বর ও দাম্ভিকতা, বিচারকদের অসহায়ত্ব আর শেখ হাসিনার জন্য জনগণের বেদনাবোধ অন্যান্য দেশের মানুষকে আলোড়িত করেছিল। শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য দেশ-বিদেশে যে জোরালো দাবি উঠেছিল, তা ছিল অভূতপূর্ব। অন্যদিকে দলের সভাপতিকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানসহ অন্য নেতারা বিভিন্নভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে স্লো পয়জনিংয়ের কারণে ওই সময় কারাগারের অভ্যন্তরে নেত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান ববি বিদেশি আইনজীবীদের সহায়তায় মামলা লড়েন এবং নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে জনমত গঠন করেন। আওয়ামী লীগের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করা হয়। অবসান ঘটে বিএনপি-জামায়াত ও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসন কালের। এ কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভার গৌরবান্বিত রাষ্ট্র, যার রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, যিনি একটানা সাড়ে ১৩ বছর ক্ষমতায় আসীন।
এই ইতিহাস সবার জানা যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে খুন করার সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া দুই কন্যার সংগ্রামী জীবনে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে দুঃখের কষ্টিপাথরে সহিষ্ণুতার দীক্ষায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন ২০০৭ সালে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়ে। পঁচাত্তর থেকে পঁচানব্বই—দীর্ঘ ২১ বছর পর সম্ভাবনার বাংলাদেশে তিনি হন প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অমানিশার দুর্যোগে প্রাণ বাঁচানোর দুঃসহ স্মৃতি; অর্থাৎ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া জীবন নিয়ে আবার নির্যাতিত জনগণের জন্য রাতদিনের পরিশ্রম—কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর সময় হঠাৎ করে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী হলেন; শুরু হলো আরেক জীবন। সেই জীবনের স্মৃতি আছে তাঁর রচনায়, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ গ্রন্থে।
কারাগারে বন্দী শেখ হাসিনার অন্তর অপমান ও কষ্টে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তিনি কখনো মনোবল হারাননি। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাঁকে বন্দীকরে সংসদ ভবনের একটি বাড়িকে সাবজেলে পরিণত করা হয়। ওই সাবজেলের ভবনটি ছিল অত্যন্ত ময়লা ও নোংরা। পুরোনো গদি, ছেঁড়া কাপড়-চোপড়, পুরোনো কাগজপত্র সব ছড়ানো। খাটখানা ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল না। খাবার আসত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। মাঝে মাঝে খাবার আসতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতো। আর খাবারের মেনুও সস্তা জিনিসে ঠাসা ছিল। দুঃখের দিনে কষ্টের মাঝে পড়ে তিনি জাতির পিতার কথা স্মরণ করতেন। কারণ নিঃসঙ্গ কারাগারে তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল স্মৃতি। অনেক কথাই তাঁর মনে পড়ত।
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাঁকে জেলখানায় সেলের ভেতরে রাখা হতো। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন আর দিবস-রজনী কষ্ট সহ্য করে গেছেন। ১৯৭১ সালে বন্দী করে তাঁকে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি জেলে নেওয়া হয়, সেখানে গ্রীষ্মকালে যেমন প্রচণ্ড গরম, তেমনি শীতের সময় তীব্র শীত। রুটি-ডাল ছাড়া কিছুই পেতেন না খেতে। অথচ ওই খাবার তিনি কখনোই পছন্দ করতেন না। তার পরেও তাঁর মুখ থেকে কোনো দিন কোনো কষ্টের কথা কেউ শোনেননি। নিজের কষ্টের কথা তিনি সব সময় চেপেই রাখতেন। শেখ হাসিনাও সেরকম একজন রাজনীতিবিদ, যিনি অপরের দুঃখে সব সময় কাতর হন।
সাবজেলের ওই বাড়ির উত্তর দিকের জানালা দিয়ে গণভবন দেখা যেত। কষ্টের মধ্যেই কারাগারে জানালায় সকাল-বিকেল দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে গণভবন দেখতেন, যেখানে তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবস্থান করেছিলেন। সবুজ মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় জনগণের চলাফেরা অবলোকন করতেন। ইচ্ছে হলেই বের হতে পারতেন না। কারণ তিনি তো বন্দী, দোতলায় একদম একা। বাইরে বের হওয়ার স্বাধীনতা নেই। কিন্তু তাঁর মনটা স্বাধীন ছিল, মনের কল্পনায়ই তিনি সবুজ মাঠ পেরিয়ে চলে যেতেন স্বপ্নরাজ্যে। ওই বাড়ির চারদিকে অনেক গাছ ছিল। সেই প্রকৃতির প্রাণময়তা তাঁকে তৃপ্তি দিত। মানসিক চাপ আর দেশ ও জনতার চিন্তার মাঝে স্বস্তি খুঁজে নিতেন।
২০০৭ সালে সংসদ ভবনের অন্যান্য বাড়িতে স্পেশাল কোর্ট বসানো হয়েছিল। তারপর একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে শেখ হাসিনাকে। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আবিষ্কার হলো, সব চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ তিনি। তাই প্রথমে দেশের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে বিনা ওয়ারেন্টে টেনে হিঁচড়ে কোর্টে নিয়ে গিয়ে তারপর সাবজেলে ১১ মাস বন্দী করে রাখে। সম্পূর্ণ একাকী নিঃসঙ্গ বন্দিখানায় ছিলেন তিনি।
তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিচারের নামে প্রহসন চলে। তখন বিচারকেরা তাঁদের বিবেক, চিন্তা, জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে বিচার করতে পারেননি। উচ্চ আদালতে শপথ মোতাবেক বিচারকেরা কাজও করেননি। বিচারকদের ওপর গোয়েন্দাদের চাপ অব্যাহতভাবে ছিল। এ জন্য তাঁকে জামিন দিতে নিষেধ করা হয়েছিল। ওপরের নির্দেশে মামলার রায় হতো তখন। তিনি তখনকার ক্ষমতাবানদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, যারা আজ ক্ষমতায় তাদেরও ভবিষ্যতে কারাগারে থাকতে হবে না, এই গ্যারান্টি কি পেয়েছে? ক্ষমতার মসনদ ও কারাগার খুব কাছাকাছি।
সরকার প্রথমে চাঁদাবাজির মামলা দেয় ৩ কোটি টাকার। যাঁরা চাপে পড়ে মামলা করেছিলেন, তাঁরা ভালো করেই জানতেন তাঁদের কাছে শেখ হাসিনা কোনো দিন চাঁদা চাননি। ওদের তিনি চেনেনও না। তিনি তাঁর জীবনে কোনো দিন কারও কাছে কোনো টাকা চাননি। অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করার জন্যই যাকে খুশি তাকে দিয়েই যা খুশি তা বলানো হতো। একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল সেই সময়ের প্রশাসন। কারণ তারা জানত নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। তারা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। শেখ হাসিনার এসব ভাবনা বাস্তব হয়ে উঠেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে।
শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসকদের দ্বারা মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও কারাযন্ত্রণার শিকার হয়েছিলেন দুর্ভাগ্যবশত। কারণ স্বাধীন দেশে পাকিস্তানের মতো নিপীড়ক শাসক থাকার কথা ছিল না, দেশও গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হচ্ছিল। অথচ দেশ-বিদেশে টিকে থাকা বঙ্গবন্ধুবিরোধীরা তখনো সক্রিয়। তা ছাড়া শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের একাধিকবার চেষ্টা চলেছে ১৯৮১ সালের ১৭ মের পর থেকেই, যা ২০২০ পর্যন্ত ২১ বার হিসাবে তথ্য-প্রমাণ সাক্ষ্য দেয়। আগেই বলেছি, সাবজেলে থাকার সময় স্লো পয়জনিংয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চাঁদাবাজির। অথচ ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতাকালে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হলেও কখনো চাঁদাবাজির মামলা করা হয়নি। এ জন্য শেখ হাসিনার মনে হয়েছে, মামলাবাজ জোট সরকার থেকেও বড় আবিষ্কারক ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার জন্য তিনি আন্দোলন করেছিলেন। ৬৮ জন জীবন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনীর হাতে। সেই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যে নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। চারদলীয় জোটের ভোট কারচুপির নীলনকশা প্রতিহত করার জন্যই আন্দোলন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করাও তাঁর মূল টার্গেট ছিল। নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘আন্দোলন করে দাবি পূরণ করলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্গঠন করলাম। যেই দ্রুত নির্বাচনের কথা বললাম, সেই আমি চাঁদাবাজ হয়ে গেলাম, দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলাম। আমার স্থান হলো কারাগারে। পাঁচটি বছর চারদলীয় জোট তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, আমার ও আমার পরিবারের দুর্নীতির কোনো কিছু পায় কিনা, পায় নাই। পেয়েছে ফখরুদ্দীন সরকার।’
দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ শেখ হাসিনা জেলে থাকার কারণে তাঁর সন্তান পুতুল-জয়ের পাশে সব সময় থাকতে পারেননি। এই বেদনা তিনি তুলে ধরেছেন নিজের লেখায়। রাজনীতির জন্য পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা বঙ্গবন্ধুর লেখনীতেও আছে। অনুরূপভাবে একজন বন্দী মা কতটা অসহায়, তার বর্ণনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। তার একমাত্র কন্যা পুতুল মা হবেন; থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মা হিসেবে মেয়ের কাছে থাকাটা খুব দরকার। যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও যেতে দেওয়া হয়নি। সেই সময়ের প্রশাসন আটকে দিয়েছিল তাঁর বিদেশভ্রমণ।
‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ গ্রন্থে এভাবেই তিনি নিজেকে মেলে ধরেছেন কারান্তরালে যাপিত জীবন-যাপন করার মুহূর্তে। তিনি ওই গ্রন্থে তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের চুলচেরা ব্যবচ্ছেদ করেছেন। সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপে চাঁদাবাজির মামলাগুলো কীভাবে করা হয়েছিল, তা-ও তিনি জানতেন। গণতন্ত্রকে সুসংহত করা এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টাকে চিরতরে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল যারা, তারা গোপনে ষড়যন্ত্র করে মানুষকে সামরিক শাসন উপহার দিতে চেয়েছিল। ২০০৭ সালে প্রথমে সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল ঠিকই, কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেয়। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে দুই বছর পর নির্বাচন হবে। সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। অথচ তখন নতুন নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। ‘মাইনাস টু’ অনুসারে তৃতীয় শক্তির উত্থান প্রত্যাশা করছে শাসকগোষ্ঠী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সুদখোর, কালোটাকার মালিকেরা টাকা সাদা করে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে। অন্যদিকে ‘দুদক’কে দিয়ে রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছে বিতর্কিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার, একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে সিনিয়র রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ৯টি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৬টি—মোট ১৫টি মামলা করা হয়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এবং তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে ‘দুদক’কে ব্যবহার করে। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিদেশি প্রতিষ্ঠান নাইকোকে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে ‘দুদক’। ২০০৮ সালের ৫ মে এই মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার দায় থেকে অব্যাহতির জন্য শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে হাইকোর্টে বাতিল আবেদন করলে ৭ জুলাই হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। এই রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত মামলাটি বাতিল ঘোষণা করেন। এভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা সব মামলার পরিসমাপ্তি ঘটে। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উদ্ঘাটিত হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাগুলো করা হয়েছিল। এ জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিধিমালার অসংগতি দূর করতে তা সংশোধনেরও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়ার সময় শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক একটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে অভিব্যক্ত শেখ হাসিনার সাহসী ও প্রজ্ঞামণ্ডিত উচ্চারণগুলো তখনকার নেতা–কর্মীরা অনুসরণ করেছিলেন। কারণ গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সারা জীবন সংগ্রাম করা একজন কর্মঠ নেতার জন্যই অন্যরা ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল। আর জনগণের দাবির কারণেই ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্ত হন।
১১ জুনের প্রভাবে এবং তাঁর সৎ নেতৃত্বের কারণেই নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আজ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অতীতের জেল-জুলুম, হত্যার প্রচেষ্টা এবং হুমকি আর বর্তমানের অপপ্রচারের মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে ২০৪১ সালেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে এটা নিশ্চিত। ২০২২ সালে তাঁর কারামুক্তি দিবস উন্নয়ন-বিপ্লবের বিস্ময়কর জয়যাত্রায় পরিপূর্ণ।
লেখক: অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে।
২০ ঘণ্টা আগে
হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’
২০ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ...
২০ ঘণ্টা আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
২ দিন আগেদেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার কাজে ব্যয় করা হলেও বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কর আহরণ করা হয় না। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি দিয়েই উৎপাদন ও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।
আজাদুর রহমান চন্দন

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে। কোনো কোনো দলের নেতারা তো ইদানীং রাখঢাক না করেই বলে দিচ্ছেন, নির্বাচন না-ও হতে পারে, কিংবা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলেও গণভোট হতেই হবে। কোনো কোনো মহল থেকে আবার তাদের পছন্দমাফিক কাজ না হলে নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকি আসছে আগে থেকেই। কখনো কখনো মান-অভিমানের খেলা শেষে তাদের সব চাওয়াই পূরণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদে সই করেছে বামপন্থী চারটি দল ছাড়া অন্যান্য দল। গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু শর্ত আরোপ করে সনদে সই করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে। পরে সনদ বাস্তবায়নের দলিল প্রণয়ন করা হয়। তবে এই সনদে সই করে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি যে এখন বিপাকে পড়েছে, তা ধরে নেওয়া যায়।
কয়েক মাস ধরে বিএনপির নেতারা মুক্তিযুদ্ধ ও বাহাত্তরের সংবিধানের মূলভিত্তির পক্ষে মনভোলানো কথাবার্তা বলে এলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় সনদে সই করেছে। অনেকে মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে যাতে নির্বাচনটা হয়ে যায়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুকূলে রাখতেই দলটি সনদে সই করেছে। ফাঁদে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে এখন সুর পাল্টেছে। বিএনপি যে ফাঁদে পড়েছে, তার আভাস মেলে দলীয় কোনো কোনো নেতার বক্তব্যেও। দলটির চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা গত শনিবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘বিএনপি এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, যাদের প্রয়োজন হয়, তারা নিজেদের স্বার্থে এ দলকে ব্যবহার করে নিচ্ছে। বিএনপি আজ অর্জুনগাছের ছালের মতো—যার দরকার পড়ে, কেটে নেয়।’
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আলোচনাকালে এবং সনদে সই করার সময় বলা হয়েছিল, সব রাজনৈতিক দল যেসব বিষয়ে একমত, সেগুলো সই হয়ে গেল। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত নয়, তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা জোরালো আপত্তি আছে, সেগুলোও লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে উত্থাপন করেছে, তাতে নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই। কমিশন আবার নতুন করে কিছু বিষয় জুড়ে দিয়েছে। এটাকে অন্যায় এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জুলাই সনদে আমরা যে অংশে সই করেছি, তার দায়দায়িত্ব আমরা নেব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায় আমরা নেব না।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ তো আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু কিছু ব্যক্তি, যাঁরা এখানে উপদেষ্টা হয়েছেন, যাঁরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে অনেক পর্যায়ের সম্মুখীন হবেন, তাঁদের জন্য হয়তো জুলাই সনদের প্রয়োজন আছে।’
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠানের এবং সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে করার দাবিতে মাঠ গরম করছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও জাতীয় নির্বাচনের আগে অথবা একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছে। জুলাই সনদে এত এত প্রস্তাবের ওপর কীভাবে গণভোট হবে। ধরা যাক, কোনো নাগরিক কোনো বিষয় পুরোটা, কোনো বিষয়ের অর্ধেকটা, আবার কোনোটার সিকিভাগ মানেন। তার পক্ষে কি এককথায় ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলে রায় দেওয়া সম্ভব? গণভোট ও পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, ‘পিআর হবে কি না, ওটা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোট প্রসঙ্গে আমরা রাজি হয়েছি। আলাদা করে গণভোটের প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করা হোক, এতে খরচ কমবে। কারণ, আলাদা গণভোটে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই নির্বাচনের ব্যালটে দুটি বিষয় থাকবে—
একটি সংসদ নির্বাচন, অন্যটি গণভোট। এটা ছিল একটি যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত। এটা না করে এখন আবার তাঁরা গণভোট আগে হতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে—এটা বলছেন।’ জুলাই সনদ, গণভোট, পিআর পদ্ধতি, ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।
চলছে পারস্পরিক দোষারোপের খেলা। জামায়াতের নেতারা খোলামেলাভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এতে বাড়ছে দুই পক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। বিএনপির মহাসচিব বলছেন, ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন চব্বিশের জুলাই আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায়। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তো জামায়াতে ইসলামীর ‘সাংগঠনিক িষিদ্ধকরণ’ এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতির পুনরুত্থান রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসবের ফলে জনমনে শুধু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাই নয়, আতঙ্কও বাড়ছে।
এমনিতেই এক বছরের বেশি সময়েও উদ্ধার হয়নি পুলিশের লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক অস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ। বলা হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে তরুণদের প্রশিক্ষিত করার জন্য এটি পাইলট প্রকল্প। ভবিষ্যতে এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাগরিকেরা দেশের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং দেশের সংকটকালে প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে।
দেশের সামরিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতায় এটি নাকি অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রচলন থাকলেও তা পরিচালিত হয় সে দেশের জাতীয় নীতি-কৌশলের আলোকে। বাংলাদেশে আলোচিত প্রকল্পে সে রকম কোনো জাতীয় কৌশল বা নীতি অনুপস্থিত। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের কোনো প্রকল্প যদি নেওয়া হয়, তাহলে তা প্রতিরক্ষা কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
যে সনদ নিয়ে এত জল ঘোলা করা হচ্ছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে কি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান বৈষম্য আদৌ দূর হবে বা কমবে? কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় যে সিন্ডিকেট, তার কি বিলোপ ঘটবে? সর্বশেষ গত শনিবার সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে মদদ দেওয়ার অভিযোগে সিপিবি ও বাসদের ২৩ নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।
দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার কাজে ব্যয় করা হলেও বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কর আহরণ করা হয় না। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি দিয়ে উৎপাদন ও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন। কর্মস্থলের নিরাপত্তার পেছনেও যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে তাঁরা নারাজ। উল্টো তাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা আমদানি-রপ্তানির নামে লুটপাট ও অর্থ পাচার করেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বদলানো জরুরি। এ বিষয়ে জুলাই সনদে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ নব্বইয়ে এরশাদ পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত টাস্কফোর্স তিন মাসের মধ্যে যে দলিল প্রণয়ন করেছিল, তাতে আত্মনির্ভর উন্নয়নের রূপরেখা ছিল স্পষ্ট। বৈষম্য কমানোরও নানা পদক্ষেপের প্রস্তাব ছিল।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে। কোনো কোনো দলের নেতারা তো ইদানীং রাখঢাক না করেই বলে দিচ্ছেন, নির্বাচন না-ও হতে পারে, কিংবা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলেও গণভোট হতেই হবে। কোনো কোনো মহল থেকে আবার তাদের পছন্দমাফিক কাজ না হলে নির্বাচন হতে না দেওয়ার হুমকি আসছে আগে থেকেই। কখনো কখনো মান-অভিমানের খেলা শেষে তাদের সব চাওয়াই পূরণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদে সই করেছে বামপন্থী চারটি দল ছাড়া অন্যান্য দল। গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু শর্ত আরোপ করে সনদে সই করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে। পরে সনদ বাস্তবায়নের দলিল প্রণয়ন করা হয়। তবে এই সনদে সই করে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি যে এখন বিপাকে পড়েছে, তা ধরে নেওয়া যায়।
কয়েক মাস ধরে বিএনপির নেতারা মুক্তিযুদ্ধ ও বাহাত্তরের সংবিধানের মূলভিত্তির পক্ষে মনভোলানো কথাবার্তা বলে এলেও শেষ পর্যন্ত জাতীয় সনদে সই করেছে। অনেকে মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে যাতে নির্বাচনটা হয়ে যায়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুকূলে রাখতেই দলটি সনদে সই করেছে। ফাঁদে পড়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে এখন সুর পাল্টেছে। বিএনপি যে ফাঁদে পড়েছে, তার আভাস মেলে দলীয় কোনো কোনো নেতার বক্তব্যেও। দলটির চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা গত শনিবার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ‘বিএনপি এখন এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, যাদের প্রয়োজন হয়, তারা নিজেদের স্বার্থে এ দলকে ব্যবহার করে নিচ্ছে। বিএনপি আজ অর্জুনগাছের ছালের মতো—যার দরকার পড়ে, কেটে নেয়।’
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আলোচনাকালে এবং সনদে সই করার সময় বলা হয়েছিল, সব রাজনৈতিক দল যেসব বিষয়ে একমত, সেগুলো সই হয়ে গেল। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত নয়, তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা জোরালো আপত্তি আছে, সেগুলোও লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে উত্থাপন করেছে, তাতে নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই। কমিশন আবার নতুন করে কিছু বিষয় জুড়ে দিয়েছে। এটাকে অন্যায় এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জুলাই সনদে আমরা যে অংশে সই করেছি, তার দায়দায়িত্ব আমরা নেব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায় আমরা নেব না।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ তো আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী হিসেবে মনে করি, জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু কিছু ব্যক্তি, যাঁরা এখানে উপদেষ্টা হয়েছেন, যাঁরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে অনেক পর্যায়ের সম্মুখীন হবেন, তাঁদের জন্য হয়তো জুলাই সনদের প্রয়োজন আছে।’
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠানের এবং সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে করার দাবিতে মাঠ গরম করছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও জাতীয় নির্বাচনের আগে অথবা একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছে। জুলাই সনদে এত এত প্রস্তাবের ওপর কীভাবে গণভোট হবে। ধরা যাক, কোনো নাগরিক কোনো বিষয় পুরোটা, কোনো বিষয়ের অর্ধেকটা, আবার কোনোটার সিকিভাগ মানেন। তার পক্ষে কি এককথায় ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলে রায় দেওয়া সম্ভব? গণভোট ও পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, ‘পিআর হবে কি না, ওটা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোট প্রসঙ্গে আমরা রাজি হয়েছি। আলাদা করে গণভোটের প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করা হোক, এতে খরচ কমবে। কারণ, আলাদা গণভোটে হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই নির্বাচনের ব্যালটে দুটি বিষয় থাকবে—
একটি সংসদ নির্বাচন, অন্যটি গণভোট। এটা ছিল একটি যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত। এটা না করে এখন আবার তাঁরা গণভোট আগে হতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে—এটা বলছেন।’ জুলাই সনদ, গণভোট, পিআর পদ্ধতি, ইত্যাদি নিয়ে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।
চলছে পারস্পরিক দোষারোপের খেলা। জামায়াতের নেতারা খোলামেলাভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এতে বাড়ছে দুই পক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। বিএনপির মহাসচিব বলছেন, ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন চব্বিশের জুলাই আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায়। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তো জামায়াতে ইসলামীর ‘সাংগঠনিক িষিদ্ধকরণ’ এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতির পুনরুত্থান রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এসবের ফলে জনমনে শুধু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাই নয়, আতঙ্কও বাড়ছে।
এমনিতেই এক বছরের বেশি সময়েও উদ্ধার হয়নি পুলিশের লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক অস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ। বলা হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে তরুণদের প্রশিক্ষিত করার জন্য এটি পাইলট প্রকল্প। ভবিষ্যতে এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাগরিকেরা দেশের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং দেশের সংকটকালে প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে।
দেশের সামরিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতায় এটি নাকি অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রচলন থাকলেও তা পরিচালিত হয় সে দেশের জাতীয় নীতি-কৌশলের আলোকে। বাংলাদেশে আলোচিত প্রকল্পে সে রকম কোনো জাতীয় কৌশল বা নীতি অনুপস্থিত। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের কোনো প্রকল্প যদি নেওয়া হয়, তাহলে তা প্রতিরক্ষা কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
যে সনদ নিয়ে এত জল ঘোলা করা হচ্ছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে কি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিদ্যমান বৈষম্য আদৌ দূর হবে বা কমবে? কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় যে সিন্ডিকেট, তার কি বিলোপ ঘটবে? সর্বশেষ গত শনিবার সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে মদদ দেওয়ার অভিযোগে সিপিবি ও বাসদের ২৩ নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।
দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন অবকাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ার কাজে ব্যয় করা হলেও বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে যথাযথভাবে প্রত্যক্ষ কর আহরণ করা হয় না। শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের স্বল্প মজুরি দিয়ে উৎপাদন ও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন। কর্মস্থলের নিরাপত্তার পেছনেও যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে তাঁরা নারাজ। উল্টো তাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা আমদানি-রপ্তানির নামে লুটপাট ও অর্থ পাচার করেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে হলে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বদলানো জরুরি। এ বিষয়ে জুলাই সনদে কোনো দিকনির্দেশনা কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ নব্বইয়ে এরশাদ পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত টাস্কফোর্স তিন মাসের মধ্যে যে দলিল প্রণয়ন করেছিল, তাতে আত্মনির্ভর উন্নয়নের রূপরেখা ছিল স্পষ্ট। বৈষম্য কমানোরও নানা পদক্ষেপের প্রস্তাব ছিল।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

আবার এসেছে ১১ জুন। জুন মাসটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। ৭ জুন ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। সবগুলো দিবসের কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। বিশেষত ২৫ জুনের ঐতিহাসিক ক্ষণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের জন্য যেমন, তেমনি বাংলা
১১ জুন ২০২২
হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’
২০ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ...
২০ ঘণ্টা আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
২ দিন আগেঅজয় দাশগুপ্ত

হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’ যেই কথা, সেই কাজ। ছোট ভাই ভাবল, ‘দাদা যে বলল গোল্লায় যেতে, তা সেখানে যাব কী করে?’ ভাবতে ভাবতে একসময় ঠান্ডা পানি পান করার জন্য ফ্রিজ খুলতেই দেখল, একটা পাত্রে বেশ কয়েকটা রসে জবজবে রসগোল্লা। সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন বা মগজ খুলে গেল তার। ‘আহা! বড় ভাই বলে কথা! ভাই তো আমাকে এই গোল্লাতেই যেতে বলেছে।’ ভাবল, ‘আমি যেতে না পারি, গোল্লা আমার ভেতর গেলেই তো কেল্লা ফতে!’ টপাটপ সব কটা রসগোল্লা মুখে পুরে নিয়েছিল গোবর্ধন। কাজ শেষে বড় ভাই যখন তার আগত বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে রসগোল্লা আনতে ফ্রিজের দুয়ার খুলেছিল এবং তারপরের ঘটনা লেখার চেয়ে অনুমান করে নেওয়াই ভালো।
গল্পটা মনে পড়ল এই কারণে, আমাদের এখন প্রায় সবকিছুই গোল্লায় গেছে অথবা গোল্লা আমাদের ভেতরে চলে গেছে। যেমন ধরুন রাজনীতি। এর কোন দিকটা গোল্লায় আর কোন দিকটা গোল্লার বাইরে, তা নির্ণয় করা খুব কঠিন। আমরা যারা দেশে থাকি না, দেশের বাইরে বসবাস করি, আমাদেরও এই রাজনীতি ছাড় দেয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, এখন দেশের চেয়ে দেশের বাইরেই রাজনীতির বাজার জমজমাট। হবে নাই-বা কেন? ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ চালাবেন বা চালাতে পারবেন বলে ধারণা করা হয়, চব্বিশের গণজাগরণের বাইরে যেসব নেতা, তাঁদের বেশির ভাগ কিন্তু দেশের বাইরে থাকেন। কেউ লন্ডনে, কেউ আমেরিকায়, কেউবা দিল্লিতে। তাঁদের জনপ্রিয়তাও সে রকম। সবচেয়ে বড় কথা, চব্বিশের তরুণ তুর্কি নামে পরিচিতরা অতি অল্প সময়ে তাঁদের ইমেজ ফিকে করে ফেললেও বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা টিকে আছেন। শুধু টিকে থাকা কেন বলছি, মাঝে মাঝে তাঁরা অনলাইনে এমন সব ভাষণ-বিবৃতি বা আদেশ-উপদেশ দিয়ে থাকেন, যা দেখে-শুনে-পড়ে জাতি নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়।
দেশে কি মেধা আর প্রজ্ঞার এতটা আকাল? এ রকম নানা কথা নানা জনে বলে। অত গভীর আলাপে না গিয়েও বলা যায়, এটাও আমাদের গোল্লায় যাওয়ার এক তরিকা। খুব স্বাভাবিকভাবে দেশের ভেতরে থেকে যাঁরা লড়াই করেন বা রাজনীতি করেন, তাঁরা জানেন কত ধানে কত চাল। তাঁদের যা যা বাধাবিপত্তি বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তার আলোকেই পথ ঠিক করেন তাঁরা। যত মেধাবী আর যত বড় লবিস্টই হন না কেন, উড়ে গিয়ে জুড়ে বসা মানুষ রসগোল্লার রস খাবেন ঠিকই, কিন্তু শেষতক কারও জন্য আর কিছু থাকবে কি না, তার গ্যারান্টি নেই।
বেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। এটা বললে আবার অনেকে না বুঝে ‘ফ্যাসিস্ট’ নামের এক গোল্লার ভেতরে ঠেলে দিতে চায়। তা দিক। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণগুলো তো আছে। সে যাত্রা স্থগিত বা বন্ধ করার পেছনে যে অপশক্তি বা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, সেটার দায় স্বীকার করতেই হবে অপরাধীদের। আগের আমলের যাবতীয় ভালো দিক খারাপ করার জন্য তাঁদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন একাই এক শ! অথচ তাঁর ভেতরেও কোনো অনুশোচনা নেই। কোনো এক অজানা গর্ত থেকে বেরিয়ে মাথা উঁচু করে বলেন, ‘তোমাদের আমি আবার গোল্লায় নিলেও তোমরা আমাকে মনে রেখো।’ অর্থনীতির কথা বলতে গেলে গোল্লাগুলো শূন্য মনে হবে। তখন তত্ত্ব আর তথ্য বলবে, সব শূন্য যোগ করলেও যোগফলে কোনো সংখ্যার পয়দা করা যায় না।
সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। খবরে দেখলাম, সে-ও এখন গোল্লায় যাওয়ার পথে। কী ঘটছে জানুন:
‘নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে ১ নভেম্বর থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও কক্সবাজার থেকে একটিও জাহাজ ছাড়েনি। সকালজুড়ে শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ছিল সুনসান নীরবতা, পর্যটকের আনাগোনাও ছিল না বললেই চলে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সকালে মাত্র চারজন যাত্রী ঘাটে এসেছিলেন, পরে তাঁরাও ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে এত দীর্ঘ সমুদ্রপথে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার সিদ্ধান্তে পর্যটক পাওয়া যাবে না। এই বাস্তবতায় জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’
সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাহাজমালিকেরা। বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা; আসা-যাওয়ায় মোট ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। ফলে দ্বীপে এক ঘণ্টা অবস্থানের সুযোগে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী পর্যটক প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন। কিন্তু একটি জাহাজ চালু রাখতে অন্তত ৩৫০ যাত্রী দরকার। একবার যাত্রায় খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাই কম যাত্রী নিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’
যা! এবার পর্যটন, তা-ও কি না দেশীয় পর্যটন, সে-ও যাওয়ার পথে। ওই যে গল্পটা—এক ভাই রসগোল্লা এনে রাখবে আর এক ভাই বুঝে বা না বুঝে তা সাবাড় করবে, এটাই আমাদের বাঙালিদের নিয়তি।
তবু আমাদের আশা নিয়েই বাঁচতে হয়। দেশের বাইরে যারা, তারা যেমন আশায় দিন গোনে; দেশের ভেতরের লোকজন আশাতেই বেঁচে আছে। রসগোল্লা শেষ হলেও রস তো থাকুক। রসেবশেই বেঁচে থাকে বাঙালি। সেটা যেন ভুলে না যায় কেউ।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’ যেই কথা, সেই কাজ। ছোট ভাই ভাবল, ‘দাদা যে বলল গোল্লায় যেতে, তা সেখানে যাব কী করে?’ ভাবতে ভাবতে একসময় ঠান্ডা পানি পান করার জন্য ফ্রিজ খুলতেই দেখল, একটা পাত্রে বেশ কয়েকটা রসে জবজবে রসগোল্লা। সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন বা মগজ খুলে গেল তার। ‘আহা! বড় ভাই বলে কথা! ভাই তো আমাকে এই গোল্লাতেই যেতে বলেছে।’ ভাবল, ‘আমি যেতে না পারি, গোল্লা আমার ভেতর গেলেই তো কেল্লা ফতে!’ টপাটপ সব কটা রসগোল্লা মুখে পুরে নিয়েছিল গোবর্ধন। কাজ শেষে বড় ভাই যখন তার আগত বন্ধুদের আপ্যায়ন করতে রসগোল্লা আনতে ফ্রিজের দুয়ার খুলেছিল এবং তারপরের ঘটনা লেখার চেয়ে অনুমান করে নেওয়াই ভালো।
গল্পটা মনে পড়ল এই কারণে, আমাদের এখন প্রায় সবকিছুই গোল্লায় গেছে অথবা গোল্লা আমাদের ভেতরে চলে গেছে। যেমন ধরুন রাজনীতি। এর কোন দিকটা গোল্লায় আর কোন দিকটা গোল্লার বাইরে, তা নির্ণয় করা খুব কঠিন। আমরা যারা দেশে থাকি না, দেশের বাইরে বসবাস করি, আমাদেরও এই রাজনীতি ছাড় দেয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, এখন দেশের চেয়ে দেশের বাইরেই রাজনীতির বাজার জমজমাট। হবে নাই-বা কেন? ভবিষ্যতে যাঁরা দেশ চালাবেন বা চালাতে পারবেন বলে ধারণা করা হয়, চব্বিশের গণজাগরণের বাইরে যেসব নেতা, তাঁদের বেশির ভাগ কিন্তু দেশের বাইরে থাকেন। কেউ লন্ডনে, কেউ আমেরিকায়, কেউবা দিল্লিতে। তাঁদের জনপ্রিয়তাও সে রকম। সবচেয়ে বড় কথা, চব্বিশের তরুণ তুর্কি নামে পরিচিতরা অতি অল্প সময়ে তাঁদের ইমেজ ফিকে করে ফেললেও বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা টিকে আছেন। শুধু টিকে থাকা কেন বলছি, মাঝে মাঝে তাঁরা অনলাইনে এমন সব ভাষণ-বিবৃতি বা আদেশ-উপদেশ দিয়ে থাকেন, যা দেখে-শুনে-পড়ে জাতি নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়।
দেশে কি মেধা আর প্রজ্ঞার এতটা আকাল? এ রকম নানা কথা নানা জনে বলে। অত গভীর আলাপে না গিয়েও বলা যায়, এটাও আমাদের গোল্লায় যাওয়ার এক তরিকা। খুব স্বাভাবিকভাবে দেশের ভেতরে থেকে যাঁরা লড়াই করেন বা রাজনীতি করেন, তাঁরা জানেন কত ধানে কত চাল। তাঁদের যা যা বাধাবিপত্তি বা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তার আলোকেই পথ ঠিক করেন তাঁরা। যত মেধাবী আর যত বড় লবিস্টই হন না কেন, উড়ে গিয়ে জুড়ে বসা মানুষ রসগোল্লার রস খাবেন ঠিকই, কিন্তু শেষতক কারও জন্য আর কিছু থাকবে কি না, তার গ্যারান্টি নেই।
বেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। এটা বললে আবার অনেকে না বুঝে ‘ফ্যাসিস্ট’ নামের এক গোল্লার ভেতরে ঠেলে দিতে চায়। তা দিক। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণগুলো তো আছে। সে যাত্রা স্থগিত বা বন্ধ করার পেছনে যে অপশক্তি বা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, সেটার দায় স্বীকার করতেই হবে অপরাধীদের। আগের আমলের যাবতীয় ভালো দিক খারাপ করার জন্য তাঁদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন একাই এক শ! অথচ তাঁর ভেতরেও কোনো অনুশোচনা নেই। কোনো এক অজানা গর্ত থেকে বেরিয়ে মাথা উঁচু করে বলেন, ‘তোমাদের আমি আবার গোল্লায় নিলেও তোমরা আমাকে মনে রেখো।’ অর্থনীতির কথা বলতে গেলে গোল্লাগুলো শূন্য মনে হবে। তখন তত্ত্ব আর তথ্য বলবে, সব শূন্য যোগ করলেও যোগফলে কোনো সংখ্যার পয়দা করা যায় না।
সেন্ট মার্টিন আমাদের আশার দ্বীপ। অর্থনৈতিক আর পর্যটনের ভরসার দ্বীপ। খবরে দেখলাম, সে-ও এখন গোল্লায় যাওয়ার পথে। কী ঘটছে জানুন:
‘নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে ১ নভেম্বর থেকে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও কক্সবাজার থেকে একটিও জাহাজ ছাড়েনি। সকালজুড়ে শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে ছিল সুনসান নীরবতা, পর্যটকের আনাগোনাও ছিল না বললেই চলে।
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সকালে মাত্র চারজন যাত্রী ঘাটে এসেছিলেন, পরে তাঁরাও ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে এত দীর্ঘ সমুদ্রপথে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার সিদ্ধান্তে পর্যটক পাওয়া যাবে না। এই বাস্তবতায় জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’
সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাহাজমালিকেরা। বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা; আসা-যাওয়ায় মোট ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। ফলে দ্বীপে এক ঘণ্টা অবস্থানের সুযোগে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরতে আগ্রহী পর্যটক প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন। কিন্তু একটি জাহাজ চালু রাখতে অন্তত ৩৫০ যাত্রী দরকার। একবার যাত্রায় খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাই কম যাত্রী নিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।’
যা! এবার পর্যটন, তা-ও কি না দেশীয় পর্যটন, সে-ও যাওয়ার পথে। ওই যে গল্পটা—এক ভাই রসগোল্লা এনে রাখবে আর এক ভাই বুঝে বা না বুঝে তা সাবাড় করবে, এটাই আমাদের বাঙালিদের নিয়তি।
তবু আমাদের আশা নিয়েই বাঁচতে হয়। দেশের বাইরে যারা, তারা যেমন আশায় দিন গোনে; দেশের ভেতরের লোকজন আশাতেই বেঁচে আছে। রসগোল্লা শেষ হলেও রস তো থাকুক। রসেবশেই বেঁচে থাকে বাঙালি। সেটা যেন ভুলে না যায় কেউ।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট

আবার এসেছে ১১ জুন। জুন মাসটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। ৭ জুন ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। সবগুলো দিবসের কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। বিশেষত ২৫ জুনের ঐতিহাসিক ক্ষণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের জন্য যেমন, তেমনি বাংলা
১১ জুন ২০২২
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে।
২০ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ...
২০ ঘণ্টা আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ, রাষ্ট্রে যখন নানা নেতিবাচকতায় অস্থিরতা বিরাজ করছে, সে সময়ে বাংলাদেশের জন্য একটা সুখবর কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের পক্ষে জার্মান বহুজাতিক প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিঙ্গারের পরিবেশবিষয়ক সাময়িকী অ্যাম্বিওতে প্রকাশিত একটি গবেষণামতে, বিশ্বের ৬১টি দেশের মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। নেপাল তালিকার শীর্ষে আর ইউরোপের স্পেন ও কানাডা, জাপান, ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশ রয়েছে একেবারে তলানিতে। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রিয়ার একদল বিজ্ঞানীর পরিচালিত এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আধুনিকতার ভিড়েও প্রকৃতির প্রতি আমাদের সহজাত টান আজও অমলিন রয়েছে।
৬১টি দেশের ৫৭ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই গবেষণায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে, তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি হচ্ছে বিশ্বে এ বিষয়ের প্রথম গবেষণা।
গবেষণার তথ্যমতে, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যেসব দেশের মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক বেশি নিবিড়, তাদের সুস্থ থাকার হারও বেশি। এসব দেশের মানুষ কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব উপায়গুলো অনুসরণে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, যে দেশগুলোর মানুষ এ সম্পর্কে কম নিবিড়, সেসব দেশে জীববৈচিত্র্য বেশি ঝুঁকিতে।
প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক পরিবেশ সুরক্ষার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের জন্য এই সফলতা ইঙ্গিত দেয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডামাডোলে স্বীকৃতির মর্যাদা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আগামীতে অবশ্যই এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষার পাঠ্যক্রমে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বিষয় যুক্ত করাও একান্ত জরুরি। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে, যার মধ্য দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যগত পরিবেশপ্রীতি টেকসই উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারে।
যদিও আমরা পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বিগত সময়ে নানা উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্প নিয়েছি। নীতিনির্ধারকেরা এখনো সেসবের ক্ষতির দিকগুলো বুঝতে পারছেন না।
এই গবেষণা থেকে শিক্ষণীয় হলো, উচ্চ মাথাপিছু আয় এবং শিল্পায়নের চরম শিখরে পৌঁছানোই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক বিনির্মাণের একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না; বরং
এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, যা দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য ভবিষ্যতে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে ভূমিকা নিতে হবে। এখন দরকার এই অর্জনকে আরও উঁচুতে নেওয়ার জন্য সব ধরনের করণীয় ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ, রাষ্ট্রে যখন নানা নেতিবাচকতায় অস্থিরতা বিরাজ করছে, সে সময়ে বাংলাদেশের জন্য একটা সুখবর কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের পক্ষে জার্মান বহুজাতিক প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিঙ্গারের পরিবেশবিষয়ক সাময়িকী অ্যাম্বিওতে প্রকাশিত একটি গবেষণামতে, বিশ্বের ৬১টি দেশের মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। নেপাল তালিকার শীর্ষে আর ইউরোপের স্পেন ও কানাডা, জাপান, ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশ রয়েছে একেবারে তলানিতে। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রিয়ার একদল বিজ্ঞানীর পরিচালিত এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং আধুনিকতার ভিড়েও প্রকৃতির প্রতি আমাদের সহজাত টান আজও অমলিন রয়েছে।
৬১টি দেশের ৫৭ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই গবেষণায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করে, তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি হচ্ছে বিশ্বে এ বিষয়ের প্রথম গবেষণা।
গবেষণার তথ্যমতে, প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক শুধু মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যেসব দেশের মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক বেশি নিবিড়, তাদের সুস্থ থাকার হারও বেশি। এসব দেশের মানুষ কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব উপায়গুলো অনুসরণে বেশি আগ্রহী। অন্যদিকে, যে দেশগুলোর মানুষ এ সম্পর্কে কম নিবিড়, সেসব দেশে জীববৈচিত্র্য বেশি ঝুঁকিতে।
প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক পরিবেশ সুরক্ষার একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের জন্য এই সফলতা ইঙ্গিত দেয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডামাডোলে স্বীকৃতির মর্যাদা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় আগামীতে অবশ্যই এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
শিক্ষার পাঠ্যক্রমে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বিষয় যুক্ত করাও একান্ত জরুরি। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে, যার মধ্য দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যগত পরিবেশপ্রীতি টেকসই উন্নয়নের চালিকাশক্তি হতে পারে।
যদিও আমরা পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বিগত সময়ে নানা উন্নয়নমূলক মেগা প্রকল্প নিয়েছি। নীতিনির্ধারকেরা এখনো সেসবের ক্ষতির দিকগুলো বুঝতে পারছেন না।
এই গবেষণা থেকে শিক্ষণীয় হলো, উচ্চ মাথাপিছু আয় এবং শিল্পায়নের চরম শিখরে পৌঁছানোই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক বিনির্মাণের একমাত্র মানদণ্ড হতে পারে না; বরং
এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, যা দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য ভবিষ্যতে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে ভূমিকা নিতে হবে। এখন দরকার এই অর্জনকে আরও উঁচুতে নেওয়ার জন্য সব ধরনের করণীয় ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

আবার এসেছে ১১ জুন। জুন মাসটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। ৭ জুন ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। সবগুলো দিবসের কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। বিশেষত ২৫ জুনের ঐতিহাসিক ক্ষণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের জন্য যেমন, তেমনি বাংলা
১১ জুন ২০২২
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে।
২০ ঘণ্টা আগে
হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’
২০ ঘণ্টা আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
২ দিন আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।
মাসুদ রানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

আবার এসেছে ১১ জুন। জুন মাসটি নানা কারণে ঐতিহাসিক। ৭ জুন ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২৫ জুন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। সবগুলো দিবসের কেন্দ্রে আছেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। বিশেষত ২৫ জুনের ঐতিহাসিক ক্ষণটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনের জন্য যেমন, তেমনি বাংলা
১১ জুন ২০২২
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাটা যখন দেওয়া হয়েছিল, তখন থেকে অনেক মানুষকে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে দেখা যাচ্ছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমা যত এগোচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা যেন ততই বাড়ছে।
২০ ঘণ্টা আগে
হাসির রাজা শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁর একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এক যে ছিল দুই ভাই। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন। তিন কুলে কেউ নাই তাদের। হর্ষবর্ধন বড় ভাই হলেও পিতৃতুল্য। একদিন কী একটা কাজে ব্যস্ত বড় ভাই। তাকে খুব বিরক্ত করছিল ছোট ভাই গোবর্ধন। বিরক্ত হয়ে বড় ভাই বললেন, ‘তুই এখান থেকে ভাগ, এবার গোল্লায় যা।’
২০ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে এখন রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা যাচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেখানেও হতাশা বিরাজমান। ঘুষ, দুর্নীতি, অপকর্ম, সংঘাত— কোনোটিই যখন স্বস্তি দিচ্ছে না—সমাজ...
২০ ঘণ্টা আগে