Ajker Patrika

আড়ালে সন্তর্পণে সাপলুডু খেলা

আজাদুর রহমান চন্দন
আড়ালে সন্তর্পণে সাপলুডু খেলা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান একটি মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণা ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। বিদেশে অবস্থানরত এক নেতা ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করলেও আগের দিন থেকে কোথাও কোথাও কিছু যানবাহনে আগুন দেওয়া আর ককটেলের বিস্ফোরণ ছাড়া রাজধানীতে আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়। যে কারণে আগের রাত থেকে রাজধানীর সড়কে যানবাহন কমে যায়। গণপরিবহন চলেছে তুলনামূলক কম। ১৩ নভেম্বর এর সংখ্যা ছিল আরও কম। রাস্তায় যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের কোনো সিগন্যালেই থেমে থাকতে হয়নি।

‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে এক নারীকে পিটিয়েছেন এনসিপির এক নারী কর্মী। লাঞ্ছিত নারীকে জুলাই হত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। একই রকম সন্দেহে এক রিকশাচালককেও মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়াবাড়ির প্রকাশ ঘটে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে আটক করার ঘটনায়। গাজীপুর থেকে আসা ওই শিক্ষার্থীর অপরাধ—তার ব্যাগে ছিল মুক্তিযুদ্ধের বই এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে সংগ্রহ করা একটি ইট। ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশ্য ওই কিশোরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। চারটি প্রস্তাবের ওপর একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিতে হবে ভোটারদের। একই দিনে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশও জারি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এই আদেশ জারি করলেন। জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপন করা প্রশ্নও নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে প্রস্তাবগুলোর উল্লেখ ছিল। একটি প্রস্তাবে উল্লেখ থাকছে, আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির ফলে মনে হতে পারে, সরকার বুঝি সাপও মারল, আবার লাঠিও ভাঙল না! কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলা বাহাস থামেনি। জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণাটি বিএনপির পক্ষে গেলেও সংসদের উচ্চকক্ষসহ কিছু বিষয়ে দলটি নাখোশ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে জুলাই জাতীয় সনদ ‘লঙ্ঘিত’ হয়েছে। রাতে অবশ্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। বিএনপি আগে থেকে এমনটি চেয়ে আসছিল। অন্যদিকে, জামায়াত, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে সোচ্চার। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলেও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আবার প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে আদেশ জারির অবাস্তব চাওয়া পূরণ হয়নি।

গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দ্বিমত জানিয়েছে জামায়াতসহ আটটি দল। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, পুরো ভাষণ বিশ্লেষণ করলে জাতির স্বস্তি ও মুক্তির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, এটা বলা যায় না। ওই সময় পাঁচটি দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আটটি ইসলামি দলের নেতারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বিএনপির সমালোচনা করে তাহের বলেন, জুলাই সনদে সই করার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কার ইস্যুতে নানামুখী কথা বলা শুরু হয়েছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোটের কাঠামো এবং সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার আগে এনসিপি এতে সই করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গত শুক্রবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোট এবং সংস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান সংস্কার বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং এই উদ্দেশ্যে গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার করার আবশ্যকতা রয়েছে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন রাজনীতিকের প্রশ্ন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ কোথা থেকে এল। এটা নিয়ে তো কোনো আলোচনাই হয়নি।’ এ ছাড়া এতগুলো প্রস্তাবের বিষয়ে একটিমাত্র ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মরিয়ম আক্তার নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী এ প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমি যদি দুটি বিষয়ে “হ্যাঁ” মনে করি, আর দুটি বিষয়ে “না”, তখন আমি কী করব?’

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে মনে হতে পারে, রাজনীতির আকাশে সব মেঘ কেটে গেছে এবং যথাসময়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। যেসব দল প্রকাশ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করছে, আড়ালে তারাই দলটির কাছে সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আসন ছাড় এবং পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিত্ব নিয়ে দর-কষাকষিতে লিপ্ত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, দৃশ্যের আড়ালে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নিয়ে পরাশক্তিগুলোর টানাটানি। রাজনীতি, সংস্কার, নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে দলগুলোর বাহাস মূলত মেকি ও লোকদেখানো। সেই সঙ্গে মানুষকে মোহিত করারও প্রয়াস। আসল খেলা তো চলছে আড়ালে, সন্তর্পণে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে তার ইন্দো-প্যাসিফিক (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে টানার। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্রতিরক্ষা চুক্তির রূপরেখায় সই করায় বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা খুবই কম। ওই রূপরেখায় সই করার দিন (৩১ অক্টোবর) ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তির লক্ষ্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করা।

এ ছাড়া এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্নির্ধারণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ওই চুক্তির পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় কোনোভাবে বাংলাদেশেরও জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কি তাহলে বাড়েনি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি থাকছে

রাজিউল হাসান
সিসিটিভি ক্যামেরা ও ক্যামেরাযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস শুধু নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে, তা কিন্তু নয়। ঝুঁকিও তৈরি করছে, হুমকিতে ফেলছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। ছবি: সংগৃহীত
সিসিটিভি ক্যামেরা ও ক্যামেরাযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস শুধু নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে, তা কিন্তু নয়। ঝুঁকিও তৈরি করছে, হুমকিতে ফেলছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা গত ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পে বেশ জোরেশোরে কেঁপে উঠেছিল। তারপর এক সপ্তাহের মধ্যে সাতবার কেঁপেছে দেশ। বাস্তবজীবনের এই কম্পনের ধাক্কা লেগেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয়ও। অনেকেই নিজের বাসা-অফিসের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ শেয়ার করেছেন। কে কীভাবে দৌড়েছেন, কার পোষা প্রাণী (কুকুর-বিড়াল) কেমন আচরণ করেছে, কার বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে বাইরের কেমন দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেসব ছবি-ভিডিওর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল সামাজিকমাধ্যমগুলো।

শুধু ভূমিকম্পের পরপরই নয়, আমরা ছবি-ভিডিওর নেশায় এমন মেতে উঠেছি যে কোথাও একটু ভালো কিছু দেখলে, ভালো কিছু খেলে কিংবা ভালো কিছু ঘটলে চট করে তার ছবি-ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছি। এটা হয়তো আমাদের সবার সঙ্গে খুশি-আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সহজাত প্রবণতা। কিন্তু সেই প্রবণতাই দিনে দিনে হয়তো বিপদ ডেকে আনছে।

আধুনিক এই যুগে প্রায় সবার বাসায়ই সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, ক্যামেরাযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস আছে। এসব যে কেবল নিরাপত্তাই নিশ্চিত করছে, তা কিন্তু নয়। ঝুঁকিও তৈরি করছে, হুমকিতে ফেলছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে। এই প্রেক্ষাপটে ১ ডিসেম্বর বিবিসিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ না করলেই নয়। ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ২০ হাজার ক্যামেরা হ্যাকড হয়েছে। সেসব ক্যামেরায় চোখ রেখে ছবি-ভিডিও ধারণ করছিল দুষ্ট চক্র। চক্রটি এসব ছবি-ভিডিও ব্যবহার করে বিদেশি একটি ওয়েবসাইটের জন্য যৌন নিগ্রহমূলক (সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেটিভ) কনটেন্ট তৈরি করত।

তবে চক্রটি পার পায়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলেছে, ইন্টারনেটে যুক্ত ক্যামেরাগুলোর দুর্বল পাসওয়ার্ডসহ নানা ধরনের দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েছিল হ্যাকাররা।

দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ আরও বলেছে, যে চারজনকে তারা গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরা কিন্তু একে অপরের সহযোগী নন। তাঁরা কেউই কাউকে আগে থেকে চেনেন না। একেবারে নিজের মতো করে কাজ করতেন তাঁরা। তাঁদের একজন ৬৩ হাজার ক্যামেরা হ্যাক করে ৫৪৫টি আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করেছেন। সেসব ভিডিও তিনি সাড়ে ৩ কোটি উওন (১২ হাজার ২৩৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার কিছু বেশি) বিক্রি করেছেন। গ্রেপ্তার আরেকজন ৭০ হাজার ক্যামেরা হ্যাক করে ৬৪৮টি ভিডিও তৈরি করেছেন। তিনি এসব ভিডিও ১ কোটি ৮০ লাখ উওনে বিক্রি করেছেন। তাঁরা দুজনে মিলে যে ওয়েবসাইটের কাছে ভিডিওগুলো বিক্রি করেছেন, সেটি আইপি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ প্রকাশ করে। ওই ওয়েবসাইটে গত বছর প্রকাশিত মোট ভিডিওর ৬২ শতাংশই সরবরাহ করেছেন এই দুজন।

মানুষ বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে মূলত নিরাপত্তা জোরদারের জন্য। এসব আইপি ক্যামেরা বাসাবাড়ির কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে। কিন্তু সে ক্যামেরাই এখন নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে জর্জ অরওয়েলের নাইনটিন এইটিফোর উপন্যাসের একটি লাইন উল্লেখ না করলেই নয়—‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ’ (অর্থাৎ বড় ভাই আপনাকে দেখছেন)। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু অবশ্য কাল্পনিক স্বৈরতান্ত্রিক একটি দেশ। তবে যেভাবে সাইবার জগতে আমাদের নিরাপত্তাজনিত হুমকি বাড়ছে, তাতে এ ক্ষেত্রেও উপন্যাসের ওই কথার সঙ্গে মিলিয়ে বলাই যায়—‘সামওয়ান ইজ ওয়াচিং ইউ (কেউ আপনাকে দেখছে)। এবং সেই দেখার সুযোগটা আমরাই করে দিচ্ছি নানাভাবে।

প্রথমত, আমরা যেসব ডিভাইস কিংবা সেবা ব্যবহার করি সেগুলোর টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন (শর্তাবলি) না পড়েই গ্রহণ করি। আপনার-আমার মুঠোফোনে এমনও অ্যাপ্লিকেশন থাকতে পারে, যে চুপিসারে আমাদের কললিস্ট, ফোনবুকে চোখ রাখছে। কিছুদিন আগে ফেসবুক নিয়ে একটি সংবাদ হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ব্যবহারকারীর ফোনের ক্যামেরা ও গ্যালারি দেখতে চায় ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি তাও বলে-কয়ে, ঘোষণা দিয়ে আমাদের অন্দরমহলে ঢুকতে চাইছে। কিন্তু অনেক অ্যাপ আছে, যারা কিছু না বলেই আমাদের ফোনে চোখ-কান দুটোই পাতছে।

আমাদের অনেকের আরেকটি বড় সমস্যা হলো, দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি। পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝামেলা এড়াতে এই কাজ করি আমরা। কিন্তু এতে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়ার ওই সিসিটিভি ক্যামেরা হ্যাকের ঘটনা। তা ছাড়া ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যাপেও হ্যাকের ঘটনা অহরহ ঘটে। আবার কেউ কেউ প্রলোভনে পড়ে কিংবা কথার মারপ্যাঁচে পড়ে অন্যকে পাসওয়ার্ড দিয়ে বিপদে পড়ি।

পাশাপাশি আমরা অনেকেই সামাজিকমাধ্যমে প্রচুর ছবি-ভিডিও প্রকাশ করি। আপাতদৃশ্যে নির্দোষ এই কাজের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। প্রতিটা ছবি ও ভিডিওর ভেতরে লুকানো থাকে কিছু মেটাডেটা। সেসব মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দুর্বৃত্তরা সহজেই আমাদের অবস্থান, ছবি তোলার স্থান-কাল বের করে ফেলতে পারে। আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুলটি প্রায়ই করি, তা হলো কোনো চিন্তাভাবনা না করেই শিশুদের ছবি-ভিডিও প্রকাশ করে দিই। এতে শিশুটির জন্য যে কী বিপদ আসতে পারে, তা কখনোই ভাবি না আমরা। ইন্টারনেটে আমরা যেটুকু ঘুরে বেড়াতে পারি, ইন্টারনেট তার চেয়ে অনেক বড়। আর সেই বড় জায়গাটার বিশাল অংশই হলো ডার্কওয়েব।

সেখানে নাগরিকের তথ্য থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা বিক্রি হয় না। অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা শিশুদের ছবি-ভিডিও চুরি করে আপত্তিকর ভিডিও বানায়। আগে এমন কাজ কঠিন হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে সবকিছুই এখন সহজ হয়ে গেছে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি আমরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করব না? আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাব না? সারা বিশ্ব যেখানে চোখের ইশারায় সবকিছু করে ফেলার প্রযুক্তি নিয়ে খেলতে শুরু করেছে, সেখানে আমরা কি এখনো ‘গুহাবাসী’ থেকে যাব? না, আমরাও এগিয়ে যাব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে শিক্ষিত হয়ে। আমাদের বাসায় কিংবা অফিসে অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, তার পাসওয়ার্ডসহ নিরাপত্তার বিষয়গুলো এমনভাবে নিশ্চিত করব যেন হ্যাকড না হয়। আমরা আমাদের মুঠোফোনসহ স্মার্ট ডিভাইসগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করব। হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমরা সামাজিকমাধ্যমে ছবি-ভিডিও শেয়ার করব, তবে সচেতন থাকব। বিশেষ করে শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা থাকব স্পর্শকাতর। মুঠোফোনে কোনো অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার আগে তার শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে দেখব সেই অ্যাপ্লিকেশন আমাদের ফোনের কোন কোন জিনিসগুলোয় চোখ রাখতে চায়। নির্ভরযোগ্য না হলে অ্যাপ ব্যবহার করব না। পাশাপাশি প্রযুক্তি দুনিয়ার অগ্রগতি ও হুমকির বিষয়ে সব সময় নিজেকে হালনাগাদ রাখব। তাহলেই কেবল আমরা আমাদের ও আমাদের সন্তানদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে পারব।

লেখক: সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীন-আমিরাত সামরিক সখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

ড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার
চীন-আমিরাত সামরিক সখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

মধ্যপ্রাচ্যের বালিয়াড়ি কখনো হুংকার তুলে ইতিহাস বদলায় না; বরং নীরবে, ধুলা উড়িয়ে, দিগন্তে রেখা টেনে নতুন শক্তির সমীকরণ গড়ে তোলে। শক্তির ঘূর্ণাবর্তে উপসাগরের রাজনীতি এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—যেখানে পুরোনো বন্ধু, পুরোনো জোট, আর পুরোনো হিসাবের ওপর নতুন ছায়া ফেলছে চীন-আমিরাত সামরিক ঘনিষ্ঠতা। দৃশ্যত সম্পর্কটি অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সহযোগিতার হলেও ভেতরে জমেছে আরেকটি গল্প—এক অদৃশ্য সামরিক অক্ষ, যা ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক টেবিলে চিন্তার রেখা টেনে দিচ্ছে। চীনের সামরিক বা প্রযুক্তিগত উপস্থিতি একসময় আফ্রিকা বা পূর্ব এশিয়ার কৌশলগত পরিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার তা উপসাগরের বুকে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদারের ভূখণ্ডে। এই পরিবর্তনের সুরই আজ বিশ্বরাজনীতিকে নতুন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে—শক্তির পালাবদল কি সত্যিই শুরু হয়ে গেছে?

জায়েদ মিলিটারি সিটির রহস্য: ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল একটি অস্বাভাবিক ঘটনার মাধ্যমে। আবুধাবির জায়েদ মিলিটারি সিটির এক অংশে প্রবেশাধিকার চাইলে তা নাকচ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে—যে আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ও তত্ত্বাবধানকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখে এসেছে। দুই সাবেক উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা পরে মিডল ইস্ট আইকে জানান, সেই অংশটিতে অবস্থান করছিলেন চীনের গণমুক্তি ফৌজের সদস্যরা। এই সন্দেহটি যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য করে ঘাঁটিসংক্রান্ত অতিরিক্ত অনুসন্ধানে যেতে। ২০২১ সালের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য প্রকাশ করে আরও অস্বস্তিকর সত্য—আবুধাবির কাছে একটি সামরিক বন্দর নির্মাণ করছিল চীন। চাপে পড়ে আমিরাত প্রকল্পটি স্থগিত করলেও পরে ডিসকর্ডে ফাঁস হওয়া নথি জানায়, চীন আবারও সেখানে কাজ শুরু করেছে। যেন দুই পরাশক্তির মধ্যপ্রাচ্য—দাবা বোর্ডে নতুন করে ঘুঁটি সাজানোর প্রচেষ্টা।

আমিরাতের দ্বিমুখী কৌশল: আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ছাতার অংশ। আল-ধাফরায় মার্কিন ৩৮০তম এক্সপেডিশনারি ফোর্সের মোতায়েন এবং সোমালিয়ার আইএসবিরোধী অভিযানে আমিরাতের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি—সবই প্রমাণ করে উপসাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির এক কেন্দ্রীয় স্তম্ভ আমিরাত। কিন্তু সমান্তরালে আরেকটি স্রোত প্রবাহিত হচ্ছিল—চীনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা। ২০২৪ সালে শিনজিয়াংয়ে আমিরাত-চীন যৌথ বিমান মহড়া এই পরিবর্তনকে আরও স্পষ্ট করে। বার্তা একটাই—আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গ ছাড়ছে না, তবে কৌশলগত বাস্তবতায় চীনের দিকেও দৃঢ় পদক্ষেপ ফেলছে।

প্রযুক্তি-কূটনীতি: বিষয়টির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা প্রযুক্তি-ব্যবসা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, আমিরাতের রাষ্ট্রীয় এআই কোম্পানি জি-৪২ চীনের হুয়াওয়েকে সেই প্রযুক্তি দিয়েছে, যা পিএলএ তাদের আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করেছে। এটি সরল বাণিজ্য নয়—সামরিক সক্ষমতার গভীর স্তরে চীনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সেতুবন্ধন। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে জি-৪২ ও সৌদি প্রতিষ্ঠান হিউমেইনের কাছে উন্নত এআই চিপস রপ্তানি অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। এনভিডিয়ার মতো কোম্পানি লাভবান হতে চাইলেও মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায় অস্বস্তি চেপে রাখেনি। এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা তাই কড়া ভাষায় বলেন, ‘আমি মনে করি না, আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে।’

এফ-৩৫ চুক্তি স্থগিত: ২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ডস-এর মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে আমিরাত পেতে যাচ্ছিল অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। কিন্তু চীনের সঙ্গে সামরিক ও প্রযুক্তিগত ঘনিষ্ঠতার কারণে বাইডেন প্রশাসন অনিশ্চয়তার হাত তুলল। হোয়াইট হাউস সরাসরি জানায়, চীনের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্ক ‘এফ-৩৫ চুক্তির প্রধান বাধা’। মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ কূটনীতিক বারবারা লিফ সেনেট শুনানিতে বলেন, ‘চীন এই অঞ্চলে যা খুশি তাই করে পার পেয়ে যাচ্ছে।’ ওয়াশিংটনের অস্বস্তি এখানেই—তারা দেখছে, আমিরাত শুধু মিত্র নয়, এখন একাধিক শক্তির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রাখার খেলায় নেমেছে।

কেন আমিরাত চীনের দিকে ঝুঁকছে?

১. বহুপক্ষীয় নিরাপত্তাকাঠামোর প্রয়োজন অর্থাৎ ইরান, ইয়েমেন, সিরিয়া উপসাগরের অস্থিরতা আমিরাতকে বুঝিয়েছে, একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর নীতি নিরাপদ নয়। বিকল্প শক্তি দরকার।

২. চীনের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক আধিপত্য অর্থাৎ এআই, সাইবার নিরাপত্তা, স্মার্ট সিটি, নজরদারি প্রযুক্তি—এসব ক্ষেত্রে চীন এখন অপরিহার্য অংশীদার।

৩.আঞ্চলিক নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা অর্থাৎ সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা টিকিয়ে রাখতে আমিরাত চীনকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখতে শুরু করেছে।

ওয়াশিংটনের অস্বস্তি: প্রভাবক্ষয়ের ইঙ্গিত

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের পেছনে রয়েছে কিছু কঠিন বাস্তবতা—চীনা পিএলএ-এর সম্ভাব্য উপস্থিতি মার্কিন ঘাঁটি থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে; প্রযুক্তি ফাঁস ও সামরিক আধুনিকীকরণে অবদান রাখার ঝুঁকি এবং আমিরাতের বহুদিনের নির্ভরতা কমে আসার সংকেত। এ যেন সেই মুহূর্ত, যখন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করছে উপসাগর আর আগের মতো তাদের একচ্ছত্র প্রভাবমণ্ডল নয়। চীন ধীর ও কৌশলগত যাত্রায় অধিকার তৈরি করছে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি কখনোই হঠাৎ কোনো বিস্ফোরণে পাল্টে যায় না; তার পরিবর্তন ঘটে বালুর মতো নরম, ধীরে ধীরে সরতে থাকা শক্তির স্তরে—যার শব্দ শুধু ইতিহাসই শোনে। চীন-আমিরাত সামরিক ঘনিষ্ঠতা সেই নীরব ভূমি রূপান্তরেরই সর্বশেষ অধ্যায়। আজ প্রশ্নটি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে স্পষ্ট—আরব আমিরাত কি সত্যিই দুই পরাশক্তির মাঝখানে দাঁড়িয়ে সমান দূরত্বে ভারসাম্য রাখার সেই সূক্ষ্ম, প্রায় অসম্ভব খেলায় সফল হবে? নাকি উপসাগরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বেইজিংকেন্দ্রিক এক নতুন অক্ষ, যার সামনে ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের প্রভাব ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাবে?

ইতিহাসের পুরোনো নিয়মটি আজও সত্য—শক্তির স্রোত যখন দিক বদলায়, তখন ভূ-রাজনীতির মানচিত্রও নতুন রেখায় আঁকা হয়। এখন সেই কলম দুটি হাতের মাঝে—চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কোন হাতটি শেষ পর্যন্ত মোটা, স্থায়ী এবং সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকা সেই চূড়ান্ত রেখাটি টানবে তা-ই নির্ধারণ করবে উপসাগরের আগামী দশকের রাজনীতি, নিরাপত্তা, এবং হয়তো বিশ্বশক্তির ভারসাম্যও। উপসাগরের ভবিষ্যৎ তাই আজ এক অনিশ্চিত নীরবতার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে, যার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাব সময়ের গহিন দেয়ালে।

লেখক: আইনজীবী ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শাপলাপাতা মাছ

সম্পাদকীয়
শাপলাপাতা মাছ

সাড়ে ১২ মণ শাপলাপাতা মাছ জব্দ করা হয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলে। একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে পাঁচ বস্তা শাপলাপাতা মাছ জব্দ করা হয়। মাছ তো জব্দ হলো, কিন্তু যারা শাপলাপাতা মাছ নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের কি হদিস মিলল? না, মিলল না—তারা পগারপার!

সাগরে বসবাসকারী শাপলাপাতা মাছ খুবই নিরীহ। এদের প্রজনন খুব সহজ নয়। এরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। তাই এদের ধরা, মারা, বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কিন্তু কে শোনে কার কথা? নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ—ও তো চিরন্তন এক সমস্যা। সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে না জেলেরা। সমুদ্রে শাপলাপাতা মাছ ধরতে পারলেই তাদের পোয়াবারো। লুকিয়ে বিক্রি করতে পারলে পকেট ভরে।

বাউফলে শাপলাপাতা মাছভর্তি যে বস্তাগুলো পাওয়া গেল, সেগুলো জব্দ করা হয়েছে, এটা খুব ভালো কথা। প্রশ্ন হলো, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে যদি এই মাছ জব্দ করে থাকে বন বিভাগ, তাহলে যারা এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের কেন ধরতে পারল না? গোপন তথ্য থাকলে তো তারা সেভাবেই পদক্ষেপ নেবে। অপরাধীরা যেন কোনোভাবেই পালিয়ে যেতে না পারে, সেটা নিশ্চিত না হয়ে শুধু মাছগুলো জব্দ করেই খুশি থাকল বন বিভাগ?

শাপলাপাতা মাছ সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিলুপ্তপ্রায় এই মাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্য জেলেদের মধ্যে প্রচারণা চালানো দরকার। যারা জেনেশুনেই শাপলাপাতা মাছ ধরছে, বিক্রি করছে, খাচ্ছে, তাদের সবারই দায় আছে। এই অন্যায়ের সঙ্গে এরা সবাই যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু মাছ আটক করলেই চলবে?

খোদ রাজধানীতেও কখনো কখনো কোথাও কোথাও শাপলাপাতা মাছ বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রকাশ্যেই তা বিক্রি হয়। কেউ এসে সেই বিক্রেতাদের ধরেছে, এমন কথা খুব একটা শোনা যায় না। তাহলে এই মাছ ধরা কমবে কীভাবে?

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ সবাই পড়বে, এ রকম ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিরল বা বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলোর ছবি দিয়ে তা ধরা নিষিদ্ধ—এ রকম তথ্যসংবলিত প্রচারণা চালানো খুব প্রয়োজন। আর প্রয়োজন, যারা এই মাছ ধরছে আর বিক্রি করছে, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশে আইন ও আইন মানার মধ্যে একটা বিরোধ রয়েছে। আইন ভঙ্গ করার যে আনন্দ, তা পুরোপুরি ‘এনজয়’ করে আমাদের দেশের একশ্রেণির মানুষ। তারা বোধ হয় সত্যিই বিশ্বাস করে—আইনের জন্ম হয়েছে আইন ভঙ্গ করার জন্যই। আমরা জনজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রমাণ কি পাচ্ছি না? বড় বড় ব্যাপারেই আইন যেখানে অসহায়, সেখানে শাপলাপাতা মাছ বাঁচানোর আইন ভাঙা তো যে কারও কাছে নস্যি! তাই আইন থাকা ও তা রক্ষা করার অভ্যাস না হলে শাপলাপাতা মাছ নিয়ে অযথা কান্নাকাটির কোনো কারণ নেই। আইন ভাঙার ক্ষেত্রে যে রকম ‘সৃজনশীল’ হয়ে উঠছি আমরা, তাতে শাপলাপাতা মাছ অতি দ্রুতই হয়তো শুধু ছবি হয়ে টিকে থাকবে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভেতর-বাহির

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
যুদ্ধের দিনগুলোতে নারীরাই ছিলেন সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। তাঁদের দুর্ভোগ ছিল সর্বাধিক। ছবি: সংগৃহীত
যুদ্ধের দিনগুলোতে নারীরাই ছিলেন সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। তাঁদের দুর্ভোগ ছিল সর্বাধিক। ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কিছু ইতিমধ্যে লেখা হয়েছে, আরও লেখা হবে, লেখার দরকার পড়বে। এই রকমের ঘটনা আমাদের জীবনে আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি, হয়তো আর ঘটবেও না। এর ইতিহাস লেখা দরকার, নিজেদের জানবার ও বুঝবার জন্য এবং অগ্রগতির পথে পাথেয় সংগ্রহের জন্যও। এ ক্ষেত্রে কথক কোনো একজন নন, অনেক কজন। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে লেখকদের যে অভিজ্ঞতা, তা ছিল মর্মান্তিক। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা বড়াই করেননি। করুণা আকর্ষণের চেষ্টা করেননি, বেদনার সঙ্গে সেই অতিদুঃসহ দিনগুলো স্মরণে রেখেছেন, যেগুলো তাঁরা ভুলতে পারলে খুশি হতেন, কিন্তু সেগুলো এমনই গভীরভাবে স্মৃতিতে প্রোথিত যে ভুলবার কোনো উপায় নেই। তাঁরা দেখেছেন, জেনেছেন, বুঝেছেন এবং সহ্য করেছেন। তাঁদের স্মৃতিকথনে অনাড়ম্বর নেই, অতিকথন নেই, আভরণ নেই, বক্তব্য একেবারে সাদামাটা এবং সে জন্যই সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য।

পাকিস্তানি হানাদাররা যা করেছে, তা অবিশ্বাস্য।

কিন্তু সেটা ঘটেছে। বাস্তবতা ছাড়িয়ে গেছে কল্পনার ধারণক্ষমতাকে। হানাদারদের বংশধরেরাও কল্পনা করতে পারবে না, তাদের পরমাত্মীয় নরাধমেরা কী করেছে।

তারা বিস্মিত হবে কেবল বর্বরতা দেখে নয়, মূর্খতা দেখেও। ওই মূর্খরা কী করে ভাবল যে হাজার মাইলের ব্যবধান থেকে উড়ে গিয়ে একটি জনগোষ্ঠীকে তারা অধীনে রাখবে, যাদের সংখ্যা তাদের তুলনায় বেশি এবং দুই অঞ্চলের মাঝখানে তাদেরই শত্রুভাবাপন্ন একটি বিশাল রাষ্ট্র বিদ্যমান। বংশধরদের লজ্জা পাবার কথা।

মূর্খ বর্বরেরা ছিল কাণ্ডজ্ঞানহীন ও হতাশাগ্রস্ত। তারা কেবল মারবেই ভেবেছিল, কিন্তু যখন তারা দেখল মার খাচ্ছে, তখন হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে বদ্ধ উন্মাদের মতো আচরণ করেছে। হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সম্ভব-অসম্ভব সবকিছু করেছে। সর্বাধিক বর্বরতা ঘটেছে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে। অন্য কিছুর বিবরণ না দিয়ে কেবল যদি ধর্ষণের কাহিনিগুলো স্মরণ করা যায়, তাহলেই বোঝা যাবে কেমন অধঃপতিত ছিল এই দুর্বৃত্তরা। মার খাওয়া হানাদাররা ধর্ষণকে তাদের বিনোদন ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিল। জবাবদিহির দায় ছিল না। পালের গোদা শার্দূলবেশী মেষ জেনারেল নিয়াজি থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি হানাদারই ছিল একেকটি ধর্ষণলোলুপ নারকীয় কীট। জবাব দেওয়া দূরের কথা, তারা পরস্পরকে উৎসাহিত করেছে ওই কাজে।

যুদ্ধের দিনগুলোতে নারীরাই ছিলেন সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে। তাঁদের দুর্ভোগ ছিল সর্বাধিক। একে তাঁরা বাঙালি, তদুপরি নারী। পুরুষেরা অনেকে পালিয়ে যেতে পেরেছেন। প্রাণভয়ে তাঁরা নারীদের ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যাঁরা যুদ্ধে গেছেন, তাঁদের বাড়ির নারীরা বিপদে পড়েছেন, অন্তঃসত্ত্বারা সন্তান প্রসব করেছেন বনে-জঙ্গলে। কারণ, নারীদের পক্ষে পলায়ন ছিল দুঃসাধ্য। দেহের গঠন, জামাকাপড় ও নারীত্ব—সবই ছিল তাঁদের বিপক্ষে। সর্বোপরি হানাদাররা ওত পেতে থাকত তাঁদের অপহরণের জন্য। পুরুষকে তবু কখনো ছেড়ে দিয়েছে, নারীকে ছাড় দিয়েছে এমন দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। নারীরা কেউ কেউ ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা, সে অবস্থাতেই তাঁরা ধর্ষিত হয়েছেন। ধর্ষণের পরে তাঁদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে, অনেকে আত্মহত্যা করেছেন, কেউ কেউ কোথায় হারিয়ে গেছেন, কেউ জানে না। লজ্জায় অনেকে স্বীকার করেননি যে তাঁদের সম্ভ্রমহানি ঘটেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীদের এই যন্ত্রণার কথা আসবেই। এসেছেও। সর্বাধিক মর্মন্তুদ কাহিনি পাওয়া যায় বীরাঙ্গনা মমতাজ বেগমের জবানিতে। তাঁর ওপর যে নির্যাতন ঘটেছে, সেটা আমাদের সবার জন্য লজ্জা। অচেতন অবস্থায় তাঁকে আখখেত থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। তাঁর স্বামী জমিজিরাত বিক্রি করে তাঁর চিকিৎসা করান। মমতাজ বেগমকে বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়েছিল। নির্যাতিত নারীদের ওই উপাধি যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁরা জানতেন না যে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো মলিন হওয়ার সঙ্গে সংগতি রেখে তাঁদের ওই পুরুষমন্য সম্মান প্রদর্শন অসহায় মেয়েদের জন্য দুঃসহ বোঝায় পরিণত হবে। মমতাজ বেগম সে নিয়ে কোনো অভিযোগ করেছেন কি না জানি না। কারণ, তাঁর যন্ত্রণাগুলো ছিল অসম্মানের চেয়ে কঠিন। তাঁর দুটি মেয়ে। মেয়েদের তিনি ভালোভাবে বিয়ে দিতে পারেননি। অসত্য নয়, বীরাঙ্গনার মেয়েকে কে বিয়ে করতে চায়? তাঁর শারীরিক ক্ষত সারেনি। তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি স্বাভাবিক জীবন যাপন করা। দীর্ঘ বছর ধরে এই নির্মম কষ্ট ভোগ করেছেন এবং বীরাঙ্গনা নাম নিয়ে জীবনের শেষ দিনটির প্রহর গুনেছেন। এটাই কি প্রাপ্তি; তাঁর এবং তাঁদের মতো অসংখ্য নারী; যাঁরা তাঁদের কথা বলতে পারেননি লোকলজ্জায়।

লাঞ্ছিত নারীদের একটি ধ্বনি আছে, সেটি আর্তনাদের। মুক্তিযুদ্ধকে আমরা নানা বিশেষণে ভূষিত করে থাকি। বলি, এ যুদ্ধ ছিল মহান। তা ছিল বৈকি। অত্যন্ত বড় মাপের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, সাহস ও উদ্ভাবনশক্তির প্রকাশ ঘটেছে যুদ্ধে। সেসবের পরিচয় তো রয়েছে। তবে আর্তনাদ ছিল মস্ত বড় সত্য। প্রাণভয়ে মানুষ পালিয়েছে। আত্মীয়স্বজন, আপনজন, বিষয়সম্পত্তি, সবকিছু ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছে। তবে আর্তনাদের পাশাপাশি নীরব একটা ধিক্কার ধ্বনিও রয়েছে। ধিক্কার শুধু পাকিস্তানিদের নয়, ধিক্কার আমাদের নিজেদেরকেও। ওরা ছিল অল্প কিছু দস্যু, লাখখানেক হবে সব মিলিয়ে, আমরা ছিলাম সাড়ে সাত কোটি। আমরা কেন এভাবে মার খেলাম ওদের হাতে? হ্যাঁ, ওদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র ছিল। কিন্তু তার সুযোগ তো আমরাই করে দিয়েছি। ওদের হাতে বোমারু বিমান পর্যন্ত ছিল, কিন্তু বিমানগুলো তো ছিল আমাদের ভূমিতে, সেগুলোকে বিকল করে দেওয়ার সুযোগ তো আমাদের ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মরক্ষা; আমরা আক্রমণ করতে পারিনি। আমাদের দিক থেকে কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না। যোগাযোগ ছিল না পারস্পরিক। জনমত সৃষ্টি করা হয়নি আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে। যুদ্ধের প্রস্তুতি যুদ্ধে যাওয়ার আগে নয়, পরে নেওয়া হয়েছে। পলিটিক্যাল মোটিভেশন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন, তাঁরা ওই দায়িত্ব আগে পাননি, পেয়েছেন যখন শত্রু তাঁদের গণহত্যা শুরু করে দিয়েছে, তারপর। গণহত্যা

যে শুরু হয়েছে, সে খবরটি পর্যন্ত পাওয়া গেছে বিদেশি রেডিও থেকে এবং তার প্রকোপ টের পাওয়া গেছে হানাদাররা যখন একেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে, তখন। বস্তুত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতো প্রস্তুতিহীন, অসংগঠিত এবং রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি আধুনিক ইতিহাসে কমই পাওয়া যাবে।

লজ্জা আমাদেরই। কিন্তু সেই লজ্জা ব্যক্তির নয়, সমষ্টির; এবং সমষ্টি যেহেতু চলে নেতৃত্বের পরিচালনায়, লজ্জাটা তাই শেষ বিচারে নেতৃত্বের। একাত্তরে নীরব ধিক্কার ধ্বনিটি ছিল আসলে ওই নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই। প্রধান নেতাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাকিস্তানে, অন্য নেতারা চলে গেছেন ভারতে। অনেকে যুদ্ধ করতে যাননি, গেছেন আশ্রয়ের খোঁজে। এবং সবাইকেই নির্ভর করতে হয়েছে ভারতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। শুরুতে আন্দোলন ছিল স্বায়ত্তশাসনের জন্য, পরে দাবি উঠেছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের; তারপরে স্বাধীনতার। এই রূপান্তর নেতৃত্বের পরিকল্পনায় ঘটেনি, ঘটেছে ঘটনাপ্রবাহে। ওই প্রবাহে দুটি বিপরীত স্রোত ছিল। একটি হলো ক্ষমতা হস্তান্তরে পাঞ্জাবি সেনাপতিদের অসম্মতি, অপরটি হলো আপসের বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গবাসীর অনড় অবস্থান। দুই স্রোতের সংঘাতে ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়েছিল। যার ভুক্তভোগী হয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রত্যেকে—কোনো না কোনোভাবে। কেউই নিরাপদে ছিল না। মীরজাফরেরা ছিল, ভালোভাবেই ছিল; কিন্তু তারাও যে নিশ্চিত ছিল, তা নয়।

ব্যর্থতা নেতৃত্বেরই। যদি কর্তব্য ও প্রস্তুতির নির্দেশ পাওয়া যেত, তাহলে যুদ্ধের প্রকৃতিটা দাঁড়াত সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। শুরুতেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যেত। কারণ, হানাদাররা ক্যান্টনমেন্টগুলোতে আটকা পড়ে যেত। তারা ভাতে মরত, পানিতে মরত, মরত অস্ত্রাঘাতেও। কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছাড়াও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহ ঘটেছে। ঘটেছে প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে এবং প্রস্তুতিহীন অবস্থাতেই প্রাথমিকভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঙালি সেনারা অবাঙালিদের কোণঠাসা করে ফেলেছিল। সংঘবদ্ধ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সেটা ঘটলে হানাদারদের পরিকল্পনা বিনষ্ট হয়ে যেত অনায়াসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত