অরুণ কর্মকার
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংশয় যেন কাটছেই না। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল বিএনপি বড় ধরনের সংশয়ের মধ্যে আছে। বিভিন্ন সময় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে যে আভাস পাওয়া যায়, তাকে অবিশ্বাসও বলা যেতে পারে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলে আসছেন যে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। প্রধান উপদেষ্টার সেই কথার ওপরও যে বিএনপি ভরসা করতে পারছে না, তা তাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট।
এই সংশয় কিংবা অবিশ্বাসের পাশাপাশি বিএনপির মধ্যে একটা অস্থিরতাও লক্ষ করা যায়। দলটির নেতারা অনেক সময়ই চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছেন। আবার কখনো কখনো আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলেও বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। গত বুধবারও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় নিয়ে সোচ্চার নয়। এমনকি গত বছরের জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এবং তার পরেও যে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে পাশাপাশি থেকে ভূমিকা রেখেছে, সেই দলগুলোর নেতাদের মুখেও আজকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তেমন একটা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে না।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের অবশ্য করণীয় হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে যে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তা হলো সংস্কার। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন প্রভৃতি সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই প্রশ্ন ওঠে এসব সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং নির্বাচনের সময় নিয়ে। যদি সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করতে হয় তাহলে সেটা হয়তো এক-দুই বছরে করা সম্ভব হবে না। সেই পরিস্থিতিতে বিএনপির বক্তব্য ছিল—একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম যেটুকু সংস্কার করা দরকার সেটুকু করে নির্বাচনের আয়োজন করা হোক। অবশিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব আকারে থাকবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে।
এ ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়ে ওঠে সংশয়। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার যে অবশিষ্ট সব সংস্কার সম্পন্ন করবে, তার নিশ্চয়তা আছে কি? নব্বই সালের গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমিতে রচিত হয়েছিল যে তিন জোটের রূপরেখা, তা-ও তো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করেনি। আমাদের জাতীয় অভিজ্ঞতা তো ভালো কিছু না। তাই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদারদের মধ্যে বিএনপি ছাড়া অন্য প্রায় সবাই সংস্কার সম্পন্ন করেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষ নেয়। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে।
এর মধ্যে শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া। গণ-অভ্যুত্থানের মূল সংগঠক এবং ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ ছাত্ররা প্রথমে যে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করেছিল, তা বিলুপ্ত করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং ইতিমধ্যে সেই দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বাস্তবতা। আসলে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সংশয় বলি আর অবিশ্বাস বলি কিংবা যে অস্থিরতা দেখা যায়, তার প্রধান কারণ এই নতুন রাজনৈতিক দল, যা গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়েছে। শুরুতে বিএনপি নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়াকে কিংস পার্টি গঠনের প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু খুব একটা সফল হয়নি। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন দলের প্রধানের পদ গ্রহণের আগে যখন পদত্যাগ করলেন, তখন কিংস পার্টির বিষয়টি দৃশ্যত চাপা পড়ে যায়। তবে বাস্তবে চাপা পড়েনি। কারণ বলা হয়ে থাকে, বিষয়টি এমন হতে পারে না যে হঠাৎ করেই নাহিদ ইসলাম নতুন দলের প্রধান পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং সরকার থেকে পদত্যাগ করে সেই পদ গ্রহণ করেছেন। বরং এটাই স্বাভাবিক যে তিনি উপদেষ্টা থাকা অবস্থায়ই দল গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এসব বিতর্কের মধ্যে না গিয়েও একটা কথা বলা যায় যে বৃহত্তর জনপরিসরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান থেকে জাত এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থনপুষ্ট বলেই দেখা হচ্ছে। কারণ এই দল গঠিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকেই ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা এবং যৌক্তিকতার কথা বলেছেন। সুতরাং এই দলের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের আনুকূল্য কেবল অনুমানের বিষয় নয়, বাস্তব এবং যৌক্তিকও। এমন একটি রাজনৈতিক দলকে আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবাই তো বিএনপির পক্ষে স্বাভাবিক। কাজেই নতুন দলটির নিবন্ধন এবং নির্বাচনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার আগেই বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দেবে এটাও স্বাভাবিক।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিএনপির এই চাপ কতটা ফলপ্রসূ হবে? এ প্রশ্ন ওঠার কারণ, বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অতটা সোচ্চার নয়। তাদের অনেকেই বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরই নির্বাচনে আগ্রহী। তবে এরপরও কোনো কোনো বিষয় হয়তো অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করবে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে। দ্রুত মানে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং হয়তো একই সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে পারে। ওই বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর হচ্ছে দেশের বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকারের যত দিন যাচ্ছে, দেশে সামাজিক অস্থিরতা ততই বাড়ছে। খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্য-সম্পদ দখল এর আগে কবে এখনকার মতো ছিল, কেউ মনে করতে পারবে বলে মনে হয় না। সামাজিক অস্থিরতা চরমে উঠেছে। একটা গণ-অভ্যুত্থানজাত সরকার, যারা গণমানুষের সমর্থন নিয়ে সরকারে বসেছে, তাদের কাছে মানুষ দীর্ঘদিন এ কথা বিশ্বাস করবে না যে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এসব করছে।
এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো হচ্ছে না। তত্ত্বগত হিসাব-নিকাশ দিয়ে যতই বলা হোক যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাস্তবতা ভিন্নতর। গত মাস ছয়েকের মধ্যে দেশের অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। লক্ষাধিক শ্রমজীবী-পেশাজীবী মানুষ কর্মহীন হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বোধ হয় এতদিনে ঋণাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসবের সামাজিক প্রতিক্রিয়া আরও কিছুদিন পরে প্রকট হবে। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য তার মেয়াদ দীর্ঘতর করার ঝুঁকি না-ও নিতে পারে। এর অর্থই হলো দ্রুত নির্বাচন। তবে দ্রুত মানে আগামী জুন-জুলাই নয়। সম্ভবত আগামী বছরের মার্চের মধ্যে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সংশয় যেন কাটছেই না। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল বিএনপি বড় ধরনের সংশয়ের মধ্যে আছে। বিভিন্ন সময় এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে যে আভাস পাওয়া যায়, তাকে অবিশ্বাসও বলা যেতে পারে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলে আসছেন যে এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। প্রধান উপদেষ্টার সেই কথার ওপরও যে বিএনপি ভরসা করতে পারছে না, তা তাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট।
এই সংশয় কিংবা অবিশ্বাসের পাশাপাশি বিএনপির মধ্যে একটা অস্থিরতাও লক্ষ করা যায়। দলটির নেতারা অনেক সময়ই চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করে আসছেন। আবার কখনো কখনো আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলেও বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। গত বুধবারও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় একটি বিষয় হলো দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় নিয়ে সোচ্চার নয়। এমনকি গত বছরের জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এবং তার পরেও যে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির সঙ্গে পাশাপাশি থেকে ভূমিকা রেখেছে, সেই দলগুলোর নেতাদের মুখেও আজকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তেমন একটা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে না।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের অবশ্য করণীয় হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধে যে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেছে, তা হলো সংস্কার। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন প্রভৃতি সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই প্রশ্ন ওঠে এসব সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং নির্বাচনের সময় নিয়ে। যদি সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন করতে হয় তাহলে সেটা হয়তো এক-দুই বছরে করা সম্ভব হবে না। সেই পরিস্থিতিতে বিএনপির বক্তব্য ছিল—একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম যেটুকু সংস্কার করা দরকার সেটুকু করে নির্বাচনের আয়োজন করা হোক। অবশিষ্ট সংস্কার প্রস্তাব আকারে থাকবে এবং পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে।
এ ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়ে ওঠে সংশয়। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার যে অবশিষ্ট সব সংস্কার সম্পন্ন করবে, তার নিশ্চয়তা আছে কি? নব্বই সালের গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমিতে রচিত হয়েছিল যে তিন জোটের রূপরেখা, তা-ও তো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করেনি। আমাদের জাতীয় অভিজ্ঞতা তো ভালো কিছু না। তাই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের অংশীদারদের মধ্যে বিএনপি ছাড়া অন্য প্রায় সবাই সংস্কার সম্পন্ন করেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষ নেয়। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে।
এর মধ্যে শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া। গণ-অভ্যুত্থানের মূল সংগঠক এবং ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ ছাত্ররা প্রথমে যে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করেছিল, তা বিলুপ্ত করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং ইতিমধ্যে সেই দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বাস্তবতা। আসলে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সংশয় বলি আর অবিশ্বাস বলি কিংবা যে অস্থিরতা দেখা যায়, তার প্রধান কারণ এই নতুন রাজনৈতিক দল, যা গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হয়েছে। শুরুতে বিএনপি নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়াকে কিংস পার্টি গঠনের প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু খুব একটা সফল হয়নি। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন দলের প্রধানের পদ গ্রহণের আগে যখন পদত্যাগ করলেন, তখন কিংস পার্টির বিষয়টি দৃশ্যত চাপা পড়ে যায়। তবে বাস্তবে চাপা পড়েনি। কারণ বলা হয়ে থাকে, বিষয়টি এমন হতে পারে না যে হঠাৎ করেই নাহিদ ইসলাম নতুন দলের প্রধান পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং সরকার থেকে পদত্যাগ করে সেই পদ গ্রহণ করেছেন। বরং এটাই স্বাভাবিক যে তিনি উপদেষ্টা থাকা অবস্থায়ই দল গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এসব বিতর্কের মধ্যে না গিয়েও একটা কথা বলা যায় যে বৃহত্তর জনপরিসরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান থেকে জাত এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থনপুষ্ট বলেই দেখা হচ্ছে। কারণ এই দল গঠিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকেই ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা এবং যৌক্তিকতার কথা বলেছেন। সুতরাং এই দলের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের আনুকূল্য কেবল অনুমানের বিষয় নয়, বাস্তব এবং যৌক্তিকও। এমন একটি রাজনৈতিক দলকে আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবাই তো বিএনপির পক্ষে স্বাভাবিক। কাজেই নতুন দলটির নিবন্ধন এবং নির্বাচনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার আগেই বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দেবে এটাও স্বাভাবিক।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিএনপির এই চাপ কতটা ফলপ্রসূ হবে? এ প্রশ্ন ওঠার কারণ, বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অতটা সোচ্চার নয়। তাদের অনেকেই বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরই নির্বাচনে আগ্রহী। তবে এরপরও কোনো কোনো বিষয় হয়তো অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করবে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে। দ্রুত মানে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং হয়তো একই সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হতে পারে। ওই বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর হচ্ছে দেশের বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকারের যত দিন যাচ্ছে, দেশে সামাজিক অস্থিরতা ততই বাড়ছে। খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্য-সম্পদ দখল এর আগে কবে এখনকার মতো ছিল, কেউ মনে করতে পারবে বলে মনে হয় না। সামাজিক অস্থিরতা চরমে উঠেছে। একটা গণ-অভ্যুত্থানজাত সরকার, যারা গণমানুষের সমর্থন নিয়ে সরকারে বসেছে, তাদের কাছে মানুষ দীর্ঘদিন এ কথা বিশ্বাস করবে না যে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা এসব করছে।
এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো হচ্ছে না। তত্ত্বগত হিসাব-নিকাশ দিয়ে যতই বলা হোক যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বাস্তবতা ভিন্নতর। গত মাস ছয়েকের মধ্যে দেশের অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। লক্ষাধিক শ্রমজীবী-পেশাজীবী মানুষ কর্মহীন হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বোধ হয় এতদিনে ঋণাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসবের সামাজিক প্রতিক্রিয়া আরও কিছুদিন পরে প্রকট হবে। এসব কারণে অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য তার মেয়াদ দীর্ঘতর করার ঝুঁকি না-ও নিতে পারে। এর অর্থই হলো দ্রুত নির্বাচন। তবে দ্রুত মানে আগামী জুন-জুলাই নয়। সম্ভবত আগামী বছরের মার্চের মধ্যে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেজাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যে ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে এবং দলগুলোকে মতামত জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে সংলাপ শুরু হবে এবং বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত তা চলবে।
২ ঘণ্টা আগেরাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি যেন দখলবাজদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য! চিকিৎসাসেবার চেয়ে এখানে দখলদারিতেই বেশি গতি। সাততলা বস্তি, দোকানপাট, কাঁচাবাজার, এমনকি মাদক ও জুয়ার আড্ডার জন্য হাসপাতালের চেয়ে ভালো জায়গা আর কী-ইবা হতে পারে...
২ ঘণ্টা আগে৭ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালের একটি বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দুমুখো নীতির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে ভারতীয় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক...
১ দিন আগে