Ajker Patrika

যে ছবি কাঁদায়, ভাবায়

শাফায়াত স্বচ্ছ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরাট হওয়া সুইজারল্যান্ড লেক। ছবি: লেখক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরাট হওয়া সুইজারল্যান্ড লেক। ছবি: লেখক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক আধার। ৭০০ একর বেষ্টিত এই প্রতিষ্ঠানে প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে প্রগাঢ় বন্ধন, তা উচ্চশিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ নিশ্চিত করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত এ লেকের ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, জলাশয় হলেও লেকটি ভরাট হয়ে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। লেকভর্তি সবুজ ঘাস, দুই পাশের জারুলবাগানে বেগুনি জারুল নুয়ে পড়ছে লেকের ওপর। নেটিজেনদের ভালোবাসা কুড়িয়েছে ছবিটি।

কিন্তু এই একটি ছবিই বস্তুত বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর নির্মম উন্নয়ন-করাঘাতের প্রতীকী চিত্র। জাহাঙ্গীরনগর এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বছর কুড়ি আগেও ক্যাম্পাসটি ছিল প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষায়তনের দৃষ্টান্ত। পরিবেশের সঙ্গে মিশে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান ছিল দেশের যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয়। বিগত সরকারের আমলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিরল তক্ষক, শিয়াল, গুইসাপ, কাঠবিড়ালিসহ শত শত পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য এই ক্যাম্পাসটিতে রয়েছে প্রায় ৪০টির মতো লেক। অপ্রয়োজনীয় উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেসব লেকের অনেকগুলোই ভরাট করা হয়েছে বা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় লেকের বিশাল অংশ ভরাট করে গড়া হয়েছে নতুন কলাভবন। টারজান এলাকায়ও ভবন নির্মাণের নামে লেক ভরাটের অভিযোগ আছে। বনাঞ্চলবেষ্টিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের নামে গত দুই-তিন বছরে কাটা হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি গাছ। গাছ কাটার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব ছিল।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার প্রধান সড়ক থেকে শহীদ মিনার দেখা যায় না—এই অজুহাতে এক কিলোমিটার প্রবেশপথটির সব গাছ কাটিয়েছিলেন সাবেক উপাচার্য। সমাজবিজ্ঞান সংযুক্ত ভবন, ক্রীড়া কমপ্লেক্স, নতুন কলা সংযুক্ত ভবন, স্থানান্তরিত আইবিএ ভবনসহ একাধিক পরিকল্পনাহীন অবকাঠামো নির্মাণের নামে একের পর এক উজাড় করা হয়েছে বনাঞ্চল ও বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য।

এত সাজানো-গোছানো প্রাকৃতিক ক্যাম্পাস এ দেশে একেবারেই নগণ্য। যে ক্যাম্পাসের যেখানে পরিচর্যা, দেখভালের কথা স্বায়ত্তশাসিত জাবি প্রশাসনের, সেখানে খোদ তারাই উদ্যোগ নিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করছে। এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তাঁরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন। এর উদ্দেশ্য অবকাঠামোগত বিকাশকে বাধা দেওয়া নয়, বরং যৌক্তিক করে তোলা। অথচ এ নিয়ে এত আন্দোলন, দাবিদাওয়া, মিছিল-সমাবেশ কি তাঁদের করার কথা ছিল? শিক্ষার্থীরা যে প্রকৃতির হত্যা চান না, তাঁদের স্বার্থের অছিলা করে প্রশাসন সে প্রকৃতির ওপর কুঠারাঘাত করেই-বা কী করে? জাহাঙ্গীরনগরের মতো এই ভয়াবহ পরিবেশ হত্যা করার ঘটনা সারা দেশেই চলছে।

ভরাট হওয়া সুইজারল্যান্ড লেকের ছবি আর দেখতে চাই না। মনে রাখতে হবে, দিন শেষে এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, করপোরেট এলাকা নয়। কাজেই জাবির প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই নির্মাণ-ম্যানিয়া থেকে মুক্ত হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা: উত্তপ্ত রংপুর, সেনা জিজ্ঞাসাবাদে নেতারা

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত