অরুণ কর্মকার
সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে টানাপোড়েন আগে থেকেই চলে এসেছে। তারপর যত দিন যাচ্ছে ততই এই বিষয় নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন একটি মেরুকরণের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নতুন এই মেরুকরণের এক মেরুতে বিএনপি। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে শতভাগ সহমত পোষণ করে অন্য কোন কোন দল তাদের সঙ্গে থাকবে, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। অন্য মেরুতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী। তাদের সঙ্গেও শতভাগ সহমত পোষণ করে শেষ পর্যন্ত কোন কোন দল থাকবে, তা-ও অস্পষ্ট। এসব দলের জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সংস্কার ও নির্বাচনের প্রসঙ্গই হবে নতুন এই মেরুকরণের কেন্দ্রবিন্দু।
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লক্ষ্য সম্পর্কে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং তাঁদের লক্ষ্য হলো একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা। এই গণপরিষদের মাধ্যমে তাঁরা নতুন একটি সংবিধান প্রবর্তন করে ক্ষমতার ধরনে পরিবর্তন আনতে চান। এনসিপির ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ ধরন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সেকেন্ড রিপাবলিকের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাথমিক দাবি হলো একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন। এর জন্য গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। নতুন সেই সংবিধান হবে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে। ওই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সীমাহীন ক্ষমতা প্রত্যাহারসহ ক্ষমতার একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ রচনার পক্ষে তাঁরা সোচ্চার থাকবেন।
আমরা জানি যে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল বিএনপি এই গণপরিষদ গঠন এবং সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। আবার জুলাই অভ্যুত্থানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার জামায়াতে ইসলামী এর সঙ্গে সহমত পোষণ করে। অন্যদিকে বিএনপির দাবি দ্রুত জাতীয় সংসদের সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। সেই লক্ষ্যে তারা এই বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করছে। সে ক্ষেত্রে, বিএনপির অভিমত হলো, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকার শুধু সেটুকুই করবে। সংবিধান সংশোধনের মতো রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, জাতীয় সংসদের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের মৌলিক সংস্কারের কাজে হাত দিলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হবে। আর জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে—এমন কোনো সংস্কারকে বিএনপি সমর্থন করবে না।
জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে এনসিপির ভাবনা কী? তারা কখন জাতীয় নির্বাচন চায়? এ ক্ষেত্রেও বিএনপির সঙ্গে এনসিপির অমিল এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অভিন্ন মত লক্ষ করা যায়। দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তাঁদের কাছে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পূর্ববর্তী সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে একটি স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ গঠন করা। তাঁরা সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের পক্ষে, যাতে ফ্যাসিবাদী শাসন আবার ফিরে আসতে না পারে। একটি নির্বাচন এনসিপির তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। তাই নির্বাচনের জন্য তাঁরা কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিচ্ছেন না। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায়। তাই জামায়াতও জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচির জন্য সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না।
এই যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে নীতিগত অভিন্নতা, তার ফলে অনেকের ধারণা হতে পারে যে এই দুটি দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা কিংবা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। প্রকৃতই কি তাই? দ্য ডিপ্লোম্যাটের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম দল দুটির মধ্যে সমঝোতা কিংবা ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী পুরোপুরি ভিন্ন দল, যাদের পৃথক পৃথক অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামী আমাদের ঘনিষ্ঠ নয়। আমাদের কিছু দাবি (তাদের সঙ্গে) মিলে যেতে পারে, যেমন আমরা সংস্কার আগে করার, গণপরিষদ প্রতিষ্ঠার এবং বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু মৌলবাদের বিষয়ে (জামায়াতের সঙ্গে) আমাদের মিল রয়েছে—এমন দাবি হলো মিথ্যা একটি বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।’ নাহিদ ইসলামের কথাই আমরা সত্য বলে ধরে নিতে পারি। কিন্তু এনসিপি এবং জামায়াতের মধ্যে যে মৌলিক নীতিগত অভিন্নতা দৃশ্যমান, বৃহত্তর জনপরিসরে কতটা প্রশ্নহীন হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময় দেওয়া বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও সন্দেহজনক বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা। তাঁদের সামনে নতুন করে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে সংস্কারের সংক্ষিপ্ত ও বৃহৎ প্যাকেজের ধারণা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্সের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে জুলাই সনদ। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারের ব্যাপারে বড় রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে তারা জুলাই সনদে সই করবে। রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কারে রাজি হলে সরকার আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে দলগুলো যদি সরকারের কাছ থেকে সংস্কারের আরও বড় প্যাকেজ চায়, তাহলে কয়েক মাস পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের মধ্যভাগে।
একটা বিষয় সবার কাছেই স্পষ্ট যে সংস্কার কমিশনগুলোর সব প্রস্তাবের সঙ্গে সবগুলো বড় রাজনৈতিক দলই একমত পোষণ করবে, তেমনটা বলা যায় না। তা ছাড়া, সংস্কারের বৃহৎ প্যাকেজ চাইলেও নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়াটা কোনো কোনো বড় দল না-ও চাইতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী হবে তা নিয়ে বড় দলগুলোর সন্দেহ পোষণের অবকাশ আছে। তার নিরসন কীভাবে হবে তা এখনই বলা যায় না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা যায়, তাঁরা কতগুলো বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে থাকবেন।
যেমন, সংবিধান সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত প্রকাশ করবে। তবে সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার যে নির্বাচিত সংসদের সে বিষয়েও কোনো আপস করবে না। নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারই বাস্তবায়ন করুক, তেমনটাই চাইবে বিএনপি। তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ও প্রাদেশিক সরকারের ফর্মুলায় তারা সম্মত হবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও বিরুদ্ধে থাকবে বিএনপি। সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিষয়েও বিএনপির আপত্তি থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
বিএনপি যেসব সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবে, এনসিপি এবং জামায়াত হয়তো সেসব প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত পোষণ করবে না। সে ক্ষেত্রে জুলাই সনদে সই করা এবং সংস্কারের সংক্ষিপ্ত ও বৃহৎ প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে নিশ্চয়ই নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও খবর পড়ুন:
সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে টানাপোড়েন আগে থেকেই চলে এসেছে। তারপর যত দিন যাচ্ছে ততই এই বিষয় নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন একটি মেরুকরণের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নতুন এই মেরুকরণের এক মেরুতে বিএনপি। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে শতভাগ সহমত পোষণ করে অন্য কোন কোন দল তাদের সঙ্গে থাকবে, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। অন্য মেরুতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী। তাদের সঙ্গেও শতভাগ সহমত পোষণ করে শেষ পর্যন্ত কোন কোন দল থাকবে, তা-ও অস্পষ্ট। এসব দলের জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সংস্কার ও নির্বাচনের প্রসঙ্গই হবে নতুন এই মেরুকরণের কেন্দ্রবিন্দু।
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লক্ষ্য সম্পর্কে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং তাঁদের লক্ষ্য হলো একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা। এই গণপরিষদের মাধ্যমে তাঁরা নতুন একটি সংবিধান প্রবর্তন করে ক্ষমতার ধরনে পরিবর্তন আনতে চান। এনসিপির ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ ধরন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সেকেন্ড রিপাবলিকের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাথমিক দাবি হলো একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন। এর জন্য গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। নতুন সেই সংবিধান হবে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে। ওই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সীমাহীন ক্ষমতা প্রত্যাহারসহ ক্ষমতার একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ রচনার পক্ষে তাঁরা সোচ্চার থাকবেন।
আমরা জানি যে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং দেশের সবচেয়ে বড় ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল বিএনপি এই গণপরিষদ গঠন এবং সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। আবার জুলাই অভ্যুত্থানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার জামায়াতে ইসলামী এর সঙ্গে সহমত পোষণ করে। অন্যদিকে বিএনপির দাবি দ্রুত জাতীয় সংসদের সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। সেই লক্ষ্যে তারা এই বছরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করছে। সে ক্ষেত্রে, বিএনপির অভিমত হলো, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকার শুধু সেটুকুই করবে। সংবিধান সংশোধনের মতো রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, জাতীয় সংসদের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তা ছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের মৌলিক সংস্কারের কাজে হাত দিলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হবে। আর জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে—এমন কোনো সংস্কারকে বিএনপি সমর্থন করবে না।
জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে এনসিপির ভাবনা কী? তারা কখন জাতীয় নির্বাচন চায়? এ ক্ষেত্রেও বিএনপির সঙ্গে এনসিপির অমিল এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অভিন্ন মত লক্ষ করা যায়। দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তাঁদের কাছে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পূর্ববর্তী সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে একটি স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ গঠন করা। তাঁরা সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের পক্ষে, যাতে ফ্যাসিবাদী শাসন আবার ফিরে আসতে না পারে। একটি নির্বাচন এনসিপির তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। তাই নির্বাচনের জন্য তাঁরা কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিচ্ছেন না। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে চায়। তাই জামায়াতও জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সূচির জন্য সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না।
এই যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে নীতিগত অভিন্নতা, তার ফলে অনেকের ধারণা হতে পারে যে এই দুটি দলের মধ্যে কোনো সমঝোতা কিংবা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। প্রকৃতই কি তাই? দ্য ডিপ্লোম্যাটের এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম দল দুটির মধ্যে সমঝোতা কিংবা ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী পুরোপুরি ভিন্ন দল, যাদের পৃথক পৃথক অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামী আমাদের ঘনিষ্ঠ নয়। আমাদের কিছু দাবি (তাদের সঙ্গে) মিলে যেতে পারে, যেমন আমরা সংস্কার আগে করার, গণপরিষদ প্রতিষ্ঠার এবং বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু মৌলবাদের বিষয়ে (জামায়াতের সঙ্গে) আমাদের মিল রয়েছে—এমন দাবি হলো মিথ্যা একটি বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।’ নাহিদ ইসলামের কথাই আমরা সত্য বলে ধরে নিতে পারি। কিন্তু এনসিপি এবং জামায়াতের মধ্যে যে মৌলিক নীতিগত অভিন্নতা দৃশ্যমান, বৃহত্তর জনপরিসরে কতটা প্রশ্নহীন হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময় দেওয়া বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও সন্দেহজনক বলে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা। তাঁদের সামনে নতুন করে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে সংস্কারের সংক্ষিপ্ত ও বৃহৎ প্যাকেজের ধারণা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্সের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে জুলাই সনদ। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবিত সংস্কারের ব্যাপারে বড় রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে তারা জুলাই সনদে সই করবে। রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কারে রাজি হলে সরকার আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে দলগুলো যদি সরকারের কাছ থেকে সংস্কারের আরও বড় প্যাকেজ চায়, তাহলে কয়েক মাস পর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের মধ্যভাগে।
একটা বিষয় সবার কাছেই স্পষ্ট যে সংস্কার কমিশনগুলোর সব প্রস্তাবের সঙ্গে সবগুলো বড় রাজনৈতিক দলই একমত পোষণ করবে, তেমনটা বলা যায় না। তা ছাড়া, সংস্কারের বৃহৎ প্যাকেজ চাইলেও নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়াটা কোনো কোনো বড় দল না-ও চাইতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী হবে তা নিয়ে বড় দলগুলোর সন্দেহ পোষণের অবকাশ আছে। তার নিরসন কীভাবে হবে তা এখনই বলা যায় না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা যায়, তাঁরা কতগুলো বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে থাকবেন।
যেমন, সংবিধান সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত প্রকাশ করবে। তবে সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার যে নির্বাচিত সংসদের সে বিষয়েও কোনো আপস করবে না। নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারই বাস্তবায়ন করুক, তেমনটাই চাইবে বিএনপি। তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ও প্রাদেশিক সরকারের ফর্মুলায় তারা সম্মত হবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও বিরুদ্ধে থাকবে বিএনপি। সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিষয়েও বিএনপির আপত্তি থাকবে বলে ধারণা করা যায়।
বিএনপি যেসব সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবে, এনসিপি এবং জামায়াত হয়তো সেসব প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত পোষণ করবে না। সে ক্ষেত্রে জুলাই সনদে সই করা এবং সংস্কারের সংক্ষিপ্ত ও বৃহৎ প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে নিশ্চয়ই নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও খবর পড়ুন:
ড. জোবাইদা নাসরীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। জাপানের হিরোশিমা ইউনিভার্সিটি থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠনসহ নানা বিষয় নিয়ে...
৬ ঘণ্টা আগেশিশু থেকে বুড়ো—কে না পছন্দ করে কোমল পানীয় খেতে? গরমের মধ্যে এক বোতল কোকা-কোলা—আহা কী প্রশান্তিই না দেয়! কিন্তু এ প্রশান্তিটুকু পাওয়ার জন্য আমাদের যে কী পরিমাণ মূল্য দিতে হচ্ছে, সে কথা আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি? না, আমি ওই এক বোতল কোমল পানীয়র মূল্যের কথা বলছি না।
৬ ঘণ্টা আগেহঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। যে পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্য, সে পরিস্থিতিতে মাথা গরম করা রাজনীতি কোনো দেশকে স্বস্তি দিতে পারে না।
৬ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট ২০২৪ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর সংবিধান সংস্কারের জন্য যে কমিশন গঠন করেছিল, তারা গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটে তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন...
১ দিন আগে