স্বপ্না রেজা
কজন হাসতে পারে? হাসি এখন অনেকটা বিরল বলা যায়। দিন দিন হাসি বিরল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানবজাতির টিকে থাকার যে সংগ্রাম, ছোটাছুটি তাতে বিরহ-বেদনা, রাগ, ক্ষোভ, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার ঘটনাপ্রবাহই বেশি দৃশ্যমান এবং মুখ্য হয়ে ওঠে। এটা না বললেই নয় যে আধুনিকতা ও বিজ্ঞানসভ্যতা মানুষের জীবনযাত্রা, জীবনধারাকে যেমন সহজ ও অতি আধুনিক পিয়াসী করে তুলেছে, ঠিক তেমনি পাশাপাশি স্বার্থপর করে তুলেছে ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে। তাদের প্রচণ্ড স্বার্থপর হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার জন্ম দিয়েছে নিবিড়ভাবে। সামাজিকতা, সৌহার্দ্যমূলক আচরণ, সুসম্পর্ক, আন্তরিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য, পরোপকারিতা উধাও হয়েছে, একেবারে নেই বললেই চলে। সোজা কথা, বিশ্বজুড়ে স্বার্থপরতার কঠিন আবাদ চলছে, আর তারই ফলে যুদ্ধ, হানাহানি, দখলদারত্ব, প্রতিহিংসা, মানবতার চরম লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দিকে তাকালে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আর শিশুদের করুণ কান্নাটাই দেখে থাকে সারা বিশ্বের মানবিক মানুষ। এই কান্না সহ্য করতে পারা শুধু মুসলিম জাতিই নয়, অন্য ধর্মানুসারীদের পক্ষেও সম্ভব না। সবাই এর বিরোধিতা করে আসছে, আজ গোটা মানবতাবাদী বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই গাজার পক্ষে প্রতিবাদী হয়েছে। শোডাউন করছে। বিশ্ববাসী জেনেছে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট মানবিক। পাশাপাশি এ-ও জেনেছে মানবতার চূড়ান্ত পরিচয় দিতে এই জনগণের একটা অংশ জুতা চুরি করেছে।
যাহোক, বিশ্বের কোথাও কোথাও আবার দেখা যায় জীর্ণ, শীর্ণকায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ। আবার যে ও যারা গোটা বিশ্বকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আধিপত্য বিস্তারের দৌড়ে অতিব্যস্ত, মারণাস্ত্র নিয়ে অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করছে, তাদের মুখে হাসি নয়, স্বার্থপরতার ভয়ংকর অভিব্যক্তি, যা দেখে কারোরই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার দুঃসাহস তাৎক্ষণিকভাবে হয় না। জোরালো প্রতিবাদও কেউ আর করে না। সবকিছু মিলিয়ে যেন গোটা বিশ্ব চরম হতাশায় তলিয়ে যাচ্ছে, অপমানে জর্জরিত হচ্ছে। এটা বলতেই হয়, মানবাধিকার ও মানবতার চরম লঙ্ঘন এবং নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় মানুষ এখন আর হাসে না।
বাংলাদেশের মানুষেরও একই অবস্থা। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট, সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, ক্ষমতাকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাবিমুখতা, নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা—ইত্যাদি প্রতিকূল পরিস্থিতি বাংলাদেশের জনগণের হাসি কেড়ে নিয়েছে। অন্যভাবে বললে, টিকে থাকার দৈনন্দিন যুদ্ধ জনগণকে হাসতে ভুলিয়ে দিয়েছে। সংকট আর সংশয় জীবনকে করে চলেছে বিপন্ন। প্রতিদিনকার পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হাসতে না পারার অজস্র ঘটনাপ্রবাহ আমরা পড়ি।
এমন সব বাস্তবতার মাঝে এক হাসির সংবাদ, যা কেবলই আমাদের কাঁদাল। সংবাদমাধ্যমে জানা গেল, হাসিকে কেন্দ্র করে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তাঁর নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। হত্যা করেছে অন্য তরুণেরা। ভিডিও ফুটেছে তেমনটাই দেখা গেছে। এককথায়, তরুণ খুন করেছে তরুণকে। এই তরুণদের এখানে বেশ আলাদা করা যায়। হত্যাকারী ও হত্যার শিকার তরুণ। অথচ কিছুদিন আগে সম্ভবত এরাই সম্মিলিতভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে একটা সমতাভিত্তিক নিরাপদ স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য মরিয়া ছিল। শপথ নিয়েছিল। তরুণদের মধ্যে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের মধ্যকার একতা, ঐক্য, সৌহার্দ্য ও দেশ-জাতির প্রতি তাদের আপসহীন আচরণ বেশ লক্ষণীয় ছিল। সাধারণ মানুষকে আশান্বিত করেছিল, স্বস্তি দিয়েছিল। প্রচলিত রাজনীতির দুর্বল অবস্থা, অপসংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণের আশা দেখা গিয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেছিল। ফলে তরুণ গোষ্ঠীর ভেতর অস্থিরতা কিংবা পাশবিকতা কারও কাম্য হতে পারে না।
যাহোক, হাসিও কারোর মৃত্যুর কারণ হতে পারে, পারভেজ তার দৃষ্টান্ত হলো। নিঃসন্দেহে এটা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার বৈকি। হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণের শেষ জবানবন্দি ছিল, তিনি কাউকেই উত্ত্যক্ত করেননি। তিনি শুধু কথা প্রসঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে হাসছিলেন। এর নেপথ্যে কোনো রহস্য থেকে থাকলে সেটা যাদের দায়িত্ব তারাই উদ্ঘাটন করবে। তবে এটা ঠিক যে তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক সংশয়, সন্দেহ বিরাজমান। তদন্তে অনেক সত্য যেমন আড়াল হয়, উধাও হয় ঠিক তেমনভাবেই নতুন তথ্য সংযোজন হয়ে। আর লাশ নিয়ে রাজনীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। লাশ নিয়ে দাবি-দাওয়াও চলে। যদিও এমন দাবি-দাওয়ায় বাবা-মায়ের সন্তান হারানোর শোক কমায় না, বরং বাড়ায়। তাঁদের ক্ষত কোনো কিছু দিয়েই পূরণ সম্ভব হয় না। লাশ নিয়ে যে প্রতিবাদ চলে, একসময় সেই আওয়াজ স্তিমিত হয়ে আসে। যাহোক, মৃত পারভেজের চেহারায় একধরনের স্নিগ্ধতা আছে। মায়াবী অভিব্যক্তি। বোঝা যায়, পারভেজের মুখে সব সময়ই হাসি লেগে থাকত। তাঁর পরিচিতজনের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সদা হাস্যময় এক তরুণ ছিলেন।
যে সমাজে মানুষ হাসতে পারে না, হাসতে ভুলে যায়, সেই সমাজে হাসির কারণে যে কাউকে হত্যা করা যেতে পারে, হত্যা করা সহজ হয়। এটা সামান্য একটা ব্যাপার মাত্র। প্রতিদিন আমরা দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায়, পত্রিকার পাতায় সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ডের সংবাদ—ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে কীভাবে একদল তরুণ নৃশংস ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। এমন ঘটনা আগে ঘটলেও তা ছিল কদাচিৎ। কিন্তু এখন প্রবণতা বেড়েছে। পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য না থাকা, আইন প্রয়োগে বাছবিচার থাকা ইত্যাদি কারণে অপরাধ বাড়ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। একজন তরুণ হাসির জন্য অপরাধী হবে এবং সেই অপরাধে তাঁকে হত্যা করা হবে, এত বড় বর্বরোচিত অপরাধ কী করে আমরা সহ্য করছি? পুলিশ অ্যাকশনে আছে বলেছে, বিচার চলছে আদালতে, কিন্তু যাঁরা তরুণদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে বসে আছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে ইচ্ছে হয়। কেন জানি মনে হয় তাঁরা এই বিষয়ে নির্লিপ্ত। এই মনে হওয়া গাঢ় হয় যখন দেখা যায় একজন আটককৃত অভিযুক্ত হাসছেন! অভিযুক্তের এই হাসি তাঁকে হত্যা করবে বলে মনে হয় না। সম্ভবত এই হাসির মানে ভিন্ন। এমন হাসি অতীতেও দেখা গেছে বহুবার। পারভেজের হাসির সঙ্গে এই হাসির তফাত আছে।
পরিশেষে বলব, মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা কি আরও বেশি রকম হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করব, নাকি হাসতে ভুলে যাব? আমরা যে কী ভয়ংকর রকম সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে দিন পাড়ি দিচ্ছি, তা সহজেই টের পাওয়া যায় এবং সেটা প্রতিনিয়ত। তরুণদের শান্ত করতে উপদেশ দেওয়ার মানুষ কই? একজন হ্যামিলিনের বংশীবাদক পাওয়া যাবে না?
কজন হাসতে পারে? হাসি এখন অনেকটা বিরল বলা যায়। দিন দিন হাসি বিরল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানবজাতির টিকে থাকার যে সংগ্রাম, ছোটাছুটি তাতে বিরহ-বেদনা, রাগ, ক্ষোভ, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার ঘটনাপ্রবাহই বেশি দৃশ্যমান এবং মুখ্য হয়ে ওঠে। এটা না বললেই নয় যে আধুনিকতা ও বিজ্ঞানসভ্যতা মানুষের জীবনযাত্রা, জীবনধারাকে যেমন সহজ ও অতি আধুনিক পিয়াসী করে তুলেছে, ঠিক তেমনি পাশাপাশি স্বার্থপর করে তুলেছে ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে। তাদের প্রচণ্ড স্বার্থপর হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। সেই সঙ্গে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার জন্ম দিয়েছে নিবিড়ভাবে। সামাজিকতা, সৌহার্দ্যমূলক আচরণ, সুসম্পর্ক, আন্তরিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য, পরোপকারিতা উধাও হয়েছে, একেবারে নেই বললেই চলে। সোজা কথা, বিশ্বজুড়ে স্বার্থপরতার কঠিন আবাদ চলছে, আর তারই ফলে যুদ্ধ, হানাহানি, দখলদারত্ব, প্রতিহিংসা, মানবতার চরম লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দিকে তাকালে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আর শিশুদের করুণ কান্নাটাই দেখে থাকে সারা বিশ্বের মানবিক মানুষ। এই কান্না সহ্য করতে পারা শুধু মুসলিম জাতিই নয়, অন্য ধর্মানুসারীদের পক্ষেও সম্ভব না। সবাই এর বিরোধিতা করে আসছে, আজ গোটা মানবতাবাদী বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই গাজার পক্ষে প্রতিবাদী হয়েছে। শোডাউন করছে। বিশ্ববাসী জেনেছে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট মানবিক। পাশাপাশি এ-ও জেনেছে মানবতার চূড়ান্ত পরিচয় দিতে এই জনগণের একটা অংশ জুতা চুরি করেছে।
যাহোক, বিশ্বের কোথাও কোথাও আবার দেখা যায় জীর্ণ, শীর্ণকায় ক্ষুধার্ত নারী-পুরুষ। আবার যে ও যারা গোটা বিশ্বকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আধিপত্য বিস্তারের দৌড়ে অতিব্যস্ত, মারণাস্ত্র নিয়ে অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করছে, তাদের মুখে হাসি নয়, স্বার্থপরতার ভয়ংকর অভিব্যক্তি, যা দেখে কারোরই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার দুঃসাহস তাৎক্ষণিকভাবে হয় না। জোরালো প্রতিবাদও কেউ আর করে না। সবকিছু মিলিয়ে যেন গোটা বিশ্ব চরম হতাশায় তলিয়ে যাচ্ছে, অপমানে জর্জরিত হচ্ছে। এটা বলতেই হয়, মানবাধিকার ও মানবতার চরম লঙ্ঘন এবং নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় মানুষ এখন আর হাসে না।
বাংলাদেশের মানুষেরও একই অবস্থা। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট, সুশাসনের অভাব, দুর্নীতি, ক্ষমতাকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাবিমুখতা, নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা—ইত্যাদি প্রতিকূল পরিস্থিতি বাংলাদেশের জনগণের হাসি কেড়ে নিয়েছে। অন্যভাবে বললে, টিকে থাকার দৈনন্দিন যুদ্ধ জনগণকে হাসতে ভুলিয়ে দিয়েছে। সংকট আর সংশয় জীবনকে করে চলেছে বিপন্ন। প্রতিদিনকার পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হাসতে না পারার অজস্র ঘটনাপ্রবাহ আমরা পড়ি।
এমন সব বাস্তবতার মাঝে এক হাসির সংবাদ, যা কেবলই আমাদের কাঁদাল। সংবাদমাধ্যমে জানা গেল, হাসিকে কেন্দ্র করে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তাঁর নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। হত্যা করেছে অন্য তরুণেরা। ভিডিও ফুটেছে তেমনটাই দেখা গেছে। এককথায়, তরুণ খুন করেছে তরুণকে। এই তরুণদের এখানে বেশ আলাদা করা যায়। হত্যাকারী ও হত্যার শিকার তরুণ। অথচ কিছুদিন আগে সম্ভবত এরাই সম্মিলিতভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে একটা সমতাভিত্তিক নিরাপদ স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য মরিয়া ছিল। শপথ নিয়েছিল। তরুণদের মধ্যে, বিশেষত শিক্ষার্থীদের মধ্যকার একতা, ঐক্য, সৌহার্দ্য ও দেশ-জাতির প্রতি তাদের আপসহীন আচরণ বেশ লক্ষণীয় ছিল। সাধারণ মানুষকে আশান্বিত করেছিল, স্বস্তি দিয়েছিল। প্রচলিত রাজনীতির দুর্বল অবস্থা, অপসংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণের আশা দেখা গিয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেছিল। ফলে তরুণ গোষ্ঠীর ভেতর অস্থিরতা কিংবা পাশবিকতা কারও কাম্য হতে পারে না।
যাহোক, হাসিও কারোর মৃত্যুর কারণ হতে পারে, পারভেজ তার দৃষ্টান্ত হলো। নিঃসন্দেহে এটা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার বৈকি। হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণের শেষ জবানবন্দি ছিল, তিনি কাউকেই উত্ত্যক্ত করেননি। তিনি শুধু কথা প্রসঙ্গে বন্ধুদের সঙ্গে হাসছিলেন। এর নেপথ্যে কোনো রহস্য থেকে থাকলে সেটা যাদের দায়িত্ব তারাই উদ্ঘাটন করবে। তবে এটা ঠিক যে তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক সংশয়, সন্দেহ বিরাজমান। তদন্তে অনেক সত্য যেমন আড়াল হয়, উধাও হয় ঠিক তেমনভাবেই নতুন তথ্য সংযোজন হয়ে। আর লাশ নিয়ে রাজনীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। লাশ নিয়ে দাবি-দাওয়াও চলে। যদিও এমন দাবি-দাওয়ায় বাবা-মায়ের সন্তান হারানোর শোক কমায় না, বরং বাড়ায়। তাঁদের ক্ষত কোনো কিছু দিয়েই পূরণ সম্ভব হয় না। লাশ নিয়ে যে প্রতিবাদ চলে, একসময় সেই আওয়াজ স্তিমিত হয়ে আসে। যাহোক, মৃত পারভেজের চেহারায় একধরনের স্নিগ্ধতা আছে। মায়াবী অভিব্যক্তি। বোঝা যায়, পারভেজের মুখে সব সময়ই হাসি লেগে থাকত। তাঁর পরিচিতজনের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি সদা হাস্যময় এক তরুণ ছিলেন।
যে সমাজে মানুষ হাসতে পারে না, হাসতে ভুলে যায়, সেই সমাজে হাসির কারণে যে কাউকে হত্যা করা যেতে পারে, হত্যা করা সহজ হয়। এটা সামান্য একটা ব্যাপার মাত্র। প্রতিদিন আমরা দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায়, পত্রিকার পাতায় সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ডের সংবাদ—ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে কীভাবে একদল তরুণ নৃশংস ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত করছে। এমন ঘটনা আগে ঘটলেও তা ছিল কদাচিৎ। কিন্তু এখন প্রবণতা বেড়েছে। পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য না থাকা, আইন প্রয়োগে বাছবিচার থাকা ইত্যাদি কারণে অপরাধ বাড়ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। একজন তরুণ হাসির জন্য অপরাধী হবে এবং সেই অপরাধে তাঁকে হত্যা করা হবে, এত বড় বর্বরোচিত অপরাধ কী করে আমরা সহ্য করছি? পুলিশ অ্যাকশনে আছে বলেছে, বিচার চলছে আদালতে, কিন্তু যাঁরা তরুণদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে বসে আছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে ইচ্ছে হয়। কেন জানি মনে হয় তাঁরা এই বিষয়ে নির্লিপ্ত। এই মনে হওয়া গাঢ় হয় যখন দেখা যায় একজন আটককৃত অভিযুক্ত হাসছেন! অভিযুক্তের এই হাসি তাঁকে হত্যা করবে বলে মনে হয় না। সম্ভবত এই হাসির মানে ভিন্ন। এমন হাসি অতীতেও দেখা গেছে বহুবার। পারভেজের হাসির সঙ্গে এই হাসির তফাত আছে।
পরিশেষে বলব, মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা কি আরও বেশি রকম হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করব, নাকি হাসতে ভুলে যাব? আমরা যে কী ভয়ংকর রকম সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে দিন পাড়ি দিচ্ছি, তা সহজেই টের পাওয়া যায় এবং সেটা প্রতিনিয়ত। তরুণদের শান্ত করতে উপদেশ দেওয়ার মানুষ কই? একজন হ্যামিলিনের বংশীবাদক পাওয়া যাবে না?
‘আপনি তো ভাই এক চোখে নুন বেচেন, আর এক চোখে তেল!’ কথাটি শুনে শুরুতে আমি একটু হকচকিয়ে যাই। ভদ্রলোক যে আমার অনেক দিনের পরিচিত, তা নয়। আমি যেখানে ভাড়া থাকি, তার গলিতে মাঝেমধ্যে দেখা হয়। সালাম বিনিময় হয়। তিনি জানেন আমি সাংবাদিকতা করি, টেলিভিশনের টক শোতে মাঝেমধ্যে যাই।
১৯ ঘণ্টা আগেআজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনে আপাকে স্মরণ করবে তাঁর স্পর্শ পাওয়া সংগঠনগুলো। ‘নতুন করে পাব বলে’—এই কটি শব্দে জড়ানো থাকবে সন্জীদা স্মরণ। যাঁরা পেয়েছে তাঁর প্রাণের স্পর্শ, তাঁরা আসবেন এখানে।
১৯ ঘণ্টা আগেকাতারের দোহায় আর্থনা সম্মেলনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা
১৯ ঘণ্টা আগেস্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণির জীবনমান ও অধিকার নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বিশেষ করে, শ্রম মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি দেওয়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের মন্তব্য একটি গভীর বাস্তবতার
১ দিন আগে