Ajker Patrika

রসেবশে /গণতন্ত্র হাঁপাতে হাঁপাতে আইসিইউতে

উপসম্পাদকীয়
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১০: ০৬
গণতন্ত্র হাঁপাতে হাঁপাতে আইসিইউতে

সেই কৌতুকটা তো নিশ্চয়ই শুনেছেন? একজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে এক তরুণের দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করছ আজকাল?’

‘জি, সৎ রাজনীতি করার চেষ্টা করছি।’ তরুণ জবাব দিলে বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, ‘ভালো। তুমি শাইন করবে।’

তরুণ বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল, ‘কীভাবে বুঝলেন?’

বয়স্ক ভদ্রলোকের সহাস্য উত্তর: ‘কারণ এ লাইনে সম্ভবত তোমার কোনো প্রতিযোগী নেই!’

২. বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ঠিক সেই বরের মতো, যাকে দেখে কোনো কনে পছন্দ করে না, তবে খালাতো ভাবি ফিসফিস করে বলে, ‘ছেলেটা দেখতে ততটা খারাপ না, কিন্তু কতটা ভালো, তারও গ্যারান্টি দিতে পারি না!’

প্রতিদিনই দেশের মানুষ জেগে ওঠে ভিন্ন এক নাটকের পর্বে। সকালে সরকার বলে, ‘সব ঠিকঠাক চলছে’, দুপুরে বিরোধী দল বলে, ‘কোনো কিছুই ঠিকঠাক চলছে না’, আর সন্ধ্যায় আমরা জনগণ দাঁত ব্রাশ করতে করতে ভাবি, ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে!’

আসলে এ দেশের রাজনীতি এমন এক পেঁয়াজ, খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে চোখে পানি আসবেই, কিন্তু শেষে রান্নার মতো কিছুই থাকে না।

এখানে কেউ ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন না, করেন ত্যাগের জন্য। কেউ কেউ এতটাই ত্যাগী, যে ত্যাগ করতে করতে শেষ পর্যন্ত নিজের বিবেকটাই ত্যাগ করে ফেলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘আমি দলের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত।’ কিন্তু দেখা যায়, ভোরবেলা পুলিশের অভিযান হলে প্রথমেই দেয়াল টপকে পালিয়ে যান!

৩. আমাদের নেতারা প্রায়ই বলেন, ‘জনগণই আমার শক্তি।’ জনগণ ভাবে—তাই নাকি? কিন্তু জনগণের ওপর যখন শক্তিপ্রয়োগ করা হয়, তখন নেতারা কোথায় থাকেন?

নেতা হওয়ার প্রথম শর্ত—মাইক ধরার স্পিড থাকতে হবে। কথা বলার জোশ থাকতে হবে। নেতা মানেই কথা বলা, কথার মালা গেঁথে নিজের গলায় পরা। মাঝেমধ্যে মনে হয়, রাজনীতির মঞ্চটা একটা লম্বা ডিবেট প্রতিযোগিতা—তফাত শুধু এই, এখানে বিজয়ী হন নেতারা, জনগণ শুধু পরাজিত পক্ষ।

৪. গণতন্ত্র এখানে সেই বিরল প্রাণী, যার কথা সবার মুখে, কিন্তু সে নিজে কোথায় থাকে কেউ জানে না। মাঝে মাঝে কেউ বলে ‘গণতন্ত্র সুস্থ আছে।’ আবার আরেকজন বলে, ‘গণতন্ত্র হাঁপাতে হাঁপাতে আইসিইউতে!’ মাঝে মাঝে তো মনে হয়, গণতন্ত্র নিজেই টেলিভিশনের পেছনে বসে বলে, ‘এই নাটকের চিত্রনাট্যটা কে লিখছে রে ভাই?’

৫. এ দেশের রাজনীতি ঠিক সেই ট্রেনের মতো, যার ইঞ্জিন যেদিকে যায়, কামরাগুলোও একে একে সেদিকেই ঝুঁকে পড়ে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আদৌ কি ব্রেক কাজ করে? কেউ কেউ আবার সিগন্যাল দেখেও থামেন না—সোজা ঢুকে পড়েন ফেসবুক লাইভে।

৬. নির্বাচনের আগে নেতারা এতটাই জনগণপ্রেমী হয়ে ওঠেন যে মনে হয় যদি ভোটের বদলে ভাত চাইতাম, তাহলে হয়তো দুই কেজি চালও পেতাম! কিন্তু ভোট হয়ে গেলে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন নেতার মোবাইল ফোনটাও থাকে ‘নো সিম কার্ড ইনসার্টেড’!

আর বিরোধী দলের অবস্থাও মন্দ না। তারা এখন এমন পর্যায়ে যে—জোরে শ্বাস নিলেও মামলা হয়, আর হাঁচি দিলে বলা হয়, ‘এটি ছিল একটি ষড়যন্ত্রমূলক হাঁচি।’

৭. কেউ কেউ বলে, রাজনীতি এখন ‘জ্ঞানী-গুণীদের’ জন্য নয়—এটা এখন ‘অভিনয়ের মঞ্চ’। কৌতুক অভিনেতারা এখন রাজনীতি করেন, আর রাজনীতিকরা করেন নাটক।

তবুও আমরা আশায় থাকি। কারণ আমরা বাঙালি—দুর্দশায়ও হেসে উঠি। বলি, ‘এবার বুঝি কিছু একটা হবে’ এবং পরেরবার আবার সেই পুরোনো রুটিন!

শেষে বলি, রাজনীতি আমাদের জীবনে মসলার মতো—অল্প পরিমাণে থাকলে খাবার স্বাদ বাড়ায়, বেশি হলে গলা-বুক জ্বালিয়ে দেয়। জ্বলেপুড়ে ছারখার হলেও আমরা তো মাথা নোয়াবার নই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত