আব্দুর রাজ্জাক প্রকৌশলী
লেখাটা কী দিয়ে আরম্ভ করব তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। কবিতার দুটি চরণ আছে, ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ’। বিষয়বস্তুর অবতারণা করতে যাচ্ছি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। কোথা থেকে শুরু করব সেটা বুঝতে পারছি না। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওভাল অফিসে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। সারা পৃথিবীতে অনেক অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে দেখিয়েছে সেখানে কী কথা হয়েছে—দুজনার মধ্যে পারস্পরিক বাগ্যুদ্ধ, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় সবারই জানা এখন। সম্পূর্ণ এপিসোড দেখে আমার মনে হয়েছে, আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসন সবচেয়ে জোর দিচ্ছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার কী করে ইউক্রেনের কাছ থেকে আদায় করবে, সেই ব্যাপারটায়। বর্তমানে ইউক্রেনের ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য টেকনিক বা এমন কোনো সম্পদ নেই যে সেগুলো জব্দ করে অথবা বিক্রি করে এই ৩৫০ বিলিয়ন ডলার আদায় করা যায়। তাই ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের মাটির নিচের খনিজ সম্পদ চাইছে।
মফস্বল শহরে দীর্ঘকাল থেকে মহাজনি ব্যবসা অর্থাৎ ঋণ দেওয়ার ব্যবসা প্রচলিত ছিল। এখনো আছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ আপদে-বিপদে, যে বছর ফসল কম হয়, যদি মঙ্গা হয়, তবে মহাজনের কাছ থেকে কিছু জমি বন্ধক রেখে প্রথমে ঋণ নেয়। এই ঋণের সুদের পরিমাণ বছরে প্রায় সমপরিমাণ প্রদেয় অর্থের সমান। মহাজন সব সময় চায় আর্থিক অনটনের মানুষগুলো কিংবা সাধারণ কৃষক বা অল্প জমির মালিকেরা এ রকম জমি অথবা স্থাবর সম্পত্তি তার কাছে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করুক।
পর্যায়ক্রমে আমাদের অঞ্চলে দেখেছি এই ঋণ প্রায় ক্ষেত্রেই তারা শোধ করতে পারে না। পরবর্তী সময়ে মহাজন ওই কৃষকের বা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জমিটুকু লিখে নেয়। এভাবেই ধীরে ধীরে অল্প জমির মালিক ঋণগ্রস্ত হয়ে তাদের সহায়-সম্পত্তি হারায়। এ রকম উদাহরণ মফস্বলে শত শত বললে ভুল হবে, হাজার হাজার আছে, যা এখনো চলছে। তাই তো প্রচলিত বচন আছে, ‘ঋণ করে ঘি খেতে নেই’। এ রকম ইচ্ছে করে ঋণ করে ভালো একটু খাবার খেলে বা কোনো অনুষ্ঠান করলে সারা জীবনের জন্য এই ভুলের খেসারত দিতে হয় জমিজমা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিসর্জন দিয়ে।
এবার আসি আসল কথায়। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রথম বীজ বপিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছিল, ইউক্রেনে নব্য নাৎসিবাদের উদ্ভব হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যেখানে রুশ ভাষাভাষী মানুষের আধিক্য আছে, সেখানে নির্বিচারে রুশ ভাষাভাষীদের হত্যা করছে নিউ নাৎসি বাহিনী। এর একটা নামও ছিল—আজব বাহিনী। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দনবাস, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে ১৪ হাজার রুশ ভাষাভাষী মানুষকে হত্যা করেছে নব্য নাৎসিরা। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল, এটাকে সার্বভৌমত্বের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করেছে রাশিয়া। রাশিয়া বারবার সাবধান করেছে ইউক্রেনকে। বন্ধ করতে বলেছে গণহত্যা, উসকানিমূলক কথাবার্তা বন্ধসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বারবার। রাশিয়া বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত যত মানুষ আছে, তার অধিকাংশই রুশ ভাষাভাষী। তাই এই অঞ্চলের মানুষের ওপর যদি অন্যায়ভাবে বল প্রয়োগ করে কিয়েভ সরকার, সেখানে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করবে।
মস্কোর কথায় কর্ণপাত করেনি কিয়েভ। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করেছে রাশিয়া। সেই সময় ইউক্রেনকে সামগ্রিকভাবে সাহায্য করেছে ন্যাটো। বিশেষ করে আমেরিকা। সেই সাহায্যের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আমেরিকা একাই দিয়েছে। আমেরিকার তৎকালীন ডেমোক্র্যাট সরকার মোটামুটি যুদ্ধবাজ হিসেবে পরিচিত। তারা কোনো শর্ত ছাড়াই এই সাহায্য দিয়েছিল। এই সাহায্যের বেশির ভাগ ছিল মিলিটারি ইকুইপমেন্ট। ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধ চায় না, যুদ্ধ বন্ধ করতে বলছে ইউক্রেনকে এবং ফেরত চাইছে তাদের দেওয়া অর্থ। ওই যে আগেই বলেছি, গ্রামের মহাজনেরা স্বল্প জমির স্বল্প আয়ের মানুষদের ঋণ দেয় ধীরে ধীরে তাদের সমস্ত ভিটেমাটি দখল করার জন্য। একেবারেই এই মহাজনি প্রথা খেটে গেল ইউক্রেনের ক্ষেত্রে! আমেরিকা তার দেওয়া অর্থ আদায় করবেই ইউক্রেনের কাছ থেকে, কোনো পরিত্রাণ নেই। যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী ইউক্রেনের জনগণকে এর খেসারত দিতে হবে।
কেন এমনটি হলো একটু বিশ্লেষণ করি। দেশের জনগণ যদি তাদের সঠিক নেতা নির্বাচন করতে না পারে, জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় চলে আসে। এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী সেই দেশের জনগণ। এখানে একটু লক্ষ করলে দেখা যায়, ইউক্রেনের জনগণ তাদের নেতা নির্বাচনে ভুল করেছিল। জেলেনস্কি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন পেশাদার কমেডিয়ান। কমেডির ক্ষেত্রে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি তেমন কোনো পদে কোনো দিনই ছিলেন না। একটা দেশের প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান হওয়ার জন্য যে ধরনের পড়াশোনা, মানসিকতা, চরিত্রের দৃঢ়তা দরকার, তার কোনোকিছুই তাঁর মধ্যে ছিল না। ইউক্রেনের জনগণ হাসি-তামাশা-ঠাট্টা অর্থাৎ কমেডি পছন্দ করে। তারা ভালোবেসেছিল কমেডিয়ান নেতা জেলেনস্কিকে। হাসি-ঠাট্টার ছলে তাঁকে ভোট দিয়েছিল! আগেই বলেছি জেলেনস্কির কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য। ইউক্রেনের যে প্রতিবেশীকে বিশ্বের দ্বিতীয় পরাশক্তি বলে মনে করা হয়, সেই শক্তিশালী প্রতিবেশীর জনগণ এবং ইউক্রেনের জনগণ একই বর্ণের, একই ভাষাভাষী, ১৯৯১ সালের আগে তারা একই দেশের জনগণ ছিল। এ রকম একটি দেশের কথায় কর্ণপাত না করে, শান্তিপূর্ণ আলোচনা না করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল ইউক্রেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব প্রায় হুমকির মুখে।
যদিও এখন ইউরোপ নতুন করে ইউক্রেনকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, রাশিয়ার বিপরীতে তাদের এই প্রতিশ্রুতি কতটুকু কাজ করবে, আমরা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। পেছনের সমস্ত কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে এ কথা স্পষ্ট যে রাশিয়ার বিপরীতে খুব একটা ভালো কিছু করতে পারবে না ইউক্রেন। আরও একটা আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে—তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পৃথিবী ধাবিত হচ্ছে কি না।
রাশিয়া গ্রেট ব্রিটেনের খবরদারি একেবারেই পছন্দ করে না। তার ওপর জার্মানির সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া জয়লাভ করেছিল। ইউরোপের সঙ্গে রয়েছে রাশিয়ার স্থলপথ, সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক ও ভৌগোলিক সম্পর্ক। অর্থনৈতিকভাবেও ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যদি জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রেট ব্রিটেন অযাচিত হস্তক্ষেপ করে ইউক্রেন যুদ্ধে, রাশিয়া যদি মনে করে ইউরোপ তার চলার পথে কাঁটা এবং পারস্পরিক স্বার্থের হানি ঘটে, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। ইউরোপসহ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের একটি কথা মনে রাখা উচিত, রাশিয়া এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে পরাজিত হয়নি। বর্তমান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কথাটি নিশ্চয়ই অনুধাবন করেছেন অন্তর দিয়ে। তাই তাঁর কাছ থেকে সবার আগে শান্তির বার্তা, যুদ্ধবিরতির বার্তা এল।
সর্বোপরি যে কথাটি দিয়ে শেষ করতে চাই তা হলো, নিজ দেশের জনগণ যেন যোগ্যতা, সততা ও বিচক্ষণতার ভিত্তিতে দেশের নেতা নির্বাচন করে। আর একটা কথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে বর্তমানে, কোনো সংস্থা, কোনো দেশ, কোনো ব্যক্তি যদি গোপনে বিদেশি টাকা এনে তাদের কথামতো দেশের মাটিতে অনুৎপাদিত খাত, সামাজিক খাত, শিক্ষা খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে ব্যয় করে, কোনো একসময় প্রাপ্ত অর্থের অঙ্ক শোধ করতে হবে সুদে-আসলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে। আমরা যেন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করি।
লেখাটা কী দিয়ে আরম্ভ করব তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। কবিতার দুটি চরণ আছে, ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ’। বিষয়বস্তুর অবতারণা করতে যাচ্ছি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। কোথা থেকে শুরু করব সেটা বুঝতে পারছি না। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওভাল অফিসে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। সারা পৃথিবীতে অনেক অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে দেখিয়েছে সেখানে কী কথা হয়েছে—দুজনার মধ্যে পারস্পরিক বাগ্যুদ্ধ, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় সবারই জানা এখন। সম্পূর্ণ এপিসোড দেখে আমার মনে হয়েছে, আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসন সবচেয়ে জোর দিচ্ছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার কী করে ইউক্রেনের কাছ থেকে আদায় করবে, সেই ব্যাপারটায়। বর্তমানে ইউক্রেনের ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য টেকনিক বা এমন কোনো সম্পদ নেই যে সেগুলো জব্দ করে অথবা বিক্রি করে এই ৩৫০ বিলিয়ন ডলার আদায় করা যায়। তাই ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের মাটির নিচের খনিজ সম্পদ চাইছে।
মফস্বল শহরে দীর্ঘকাল থেকে মহাজনি ব্যবসা অর্থাৎ ঋণ দেওয়ার ব্যবসা প্রচলিত ছিল। এখনো আছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ আপদে-বিপদে, যে বছর ফসল কম হয়, যদি মঙ্গা হয়, তবে মহাজনের কাছ থেকে কিছু জমি বন্ধক রেখে প্রথমে ঋণ নেয়। এই ঋণের সুদের পরিমাণ বছরে প্রায় সমপরিমাণ প্রদেয় অর্থের সমান। মহাজন সব সময় চায় আর্থিক অনটনের মানুষগুলো কিংবা সাধারণ কৃষক বা অল্প জমির মালিকেরা এ রকম জমি অথবা স্থাবর সম্পত্তি তার কাছে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করুক।
পর্যায়ক্রমে আমাদের অঞ্চলে দেখেছি এই ঋণ প্রায় ক্ষেত্রেই তারা শোধ করতে পারে না। পরবর্তী সময়ে মহাজন ওই কৃষকের বা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জমিটুকু লিখে নেয়। এভাবেই ধীরে ধীরে অল্প জমির মালিক ঋণগ্রস্ত হয়ে তাদের সহায়-সম্পত্তি হারায়। এ রকম উদাহরণ মফস্বলে শত শত বললে ভুল হবে, হাজার হাজার আছে, যা এখনো চলছে। তাই তো প্রচলিত বচন আছে, ‘ঋণ করে ঘি খেতে নেই’। এ রকম ইচ্ছে করে ঋণ করে ভালো একটু খাবার খেলে বা কোনো অনুষ্ঠান করলে সারা জীবনের জন্য এই ভুলের খেসারত দিতে হয় জমিজমা, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিসর্জন দিয়ে।
এবার আসি আসল কথায়। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রথম বীজ বপিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছিল, ইউক্রেনে নব্য নাৎসিবাদের উদ্ভব হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যেখানে রুশ ভাষাভাষী মানুষের আধিক্য আছে, সেখানে নির্বিচারে রুশ ভাষাভাষীদের হত্যা করছে নিউ নাৎসি বাহিনী। এর একটা নামও ছিল—আজব বাহিনী। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দনবাস, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে ১৪ হাজার রুশ ভাষাভাষী মানুষকে হত্যা করেছে নব্য নাৎসিরা। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল, এটাকে সার্বভৌমত্বের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করেছে রাশিয়া। রাশিয়া বারবার সাবধান করেছে ইউক্রেনকে। বন্ধ করতে বলেছে গণহত্যা, উসকানিমূলক কথাবার্তা বন্ধসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বারবার। রাশিয়া বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত যত মানুষ আছে, তার অধিকাংশই রুশ ভাষাভাষী। তাই এই অঞ্চলের মানুষের ওপর যদি অন্যায়ভাবে বল প্রয়োগ করে কিয়েভ সরকার, সেখানে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করবে।
মস্কোর কথায় কর্ণপাত করেনি কিয়েভ। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করেছে রাশিয়া। সেই সময় ইউক্রেনকে সামগ্রিকভাবে সাহায্য করেছে ন্যাটো। বিশেষ করে আমেরিকা। সেই সাহায্যের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আমেরিকা একাই দিয়েছে। আমেরিকার তৎকালীন ডেমোক্র্যাট সরকার মোটামুটি যুদ্ধবাজ হিসেবে পরিচিত। তারা কোনো শর্ত ছাড়াই এই সাহায্য দিয়েছিল। এই সাহায্যের বেশির ভাগ ছিল মিলিটারি ইকুইপমেন্ট। ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধ চায় না, যুদ্ধ বন্ধ করতে বলছে ইউক্রেনকে এবং ফেরত চাইছে তাদের দেওয়া অর্থ। ওই যে আগেই বলেছি, গ্রামের মহাজনেরা স্বল্প জমির স্বল্প আয়ের মানুষদের ঋণ দেয় ধীরে ধীরে তাদের সমস্ত ভিটেমাটি দখল করার জন্য। একেবারেই এই মহাজনি প্রথা খেটে গেল ইউক্রেনের ক্ষেত্রে! আমেরিকা তার দেওয়া অর্থ আদায় করবেই ইউক্রেনের কাছ থেকে, কোনো পরিত্রাণ নেই। যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী ইউক্রেনের জনগণকে এর খেসারত দিতে হবে।
কেন এমনটি হলো একটু বিশ্লেষণ করি। দেশের জনগণ যদি তাদের সঠিক নেতা নির্বাচন করতে না পারে, জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় চলে আসে। এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী সেই দেশের জনগণ। এখানে একটু লক্ষ করলে দেখা যায়, ইউক্রেনের জনগণ তাদের নেতা নির্বাচনে ভুল করেছিল। জেলেনস্কি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন পেশাদার কমেডিয়ান। কমেডির ক্ষেত্রে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি তেমন কোনো পদে কোনো দিনই ছিলেন না। একটা দেশের প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান হওয়ার জন্য যে ধরনের পড়াশোনা, মানসিকতা, চরিত্রের দৃঢ়তা দরকার, তার কোনোকিছুই তাঁর মধ্যে ছিল না। ইউক্রেনের জনগণ হাসি-তামাশা-ঠাট্টা অর্থাৎ কমেডি পছন্দ করে। তারা ভালোবেসেছিল কমেডিয়ান নেতা জেলেনস্কিকে। হাসি-ঠাট্টার ছলে তাঁকে ভোট দিয়েছিল! আগেই বলেছি জেলেনস্কির কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্য। ইউক্রেনের যে প্রতিবেশীকে বিশ্বের দ্বিতীয় পরাশক্তি বলে মনে করা হয়, সেই শক্তিশালী প্রতিবেশীর জনগণ এবং ইউক্রেনের জনগণ একই বর্ণের, একই ভাষাভাষী, ১৯৯১ সালের আগে তারা একই দেশের জনগণ ছিল। এ রকম একটি দেশের কথায় কর্ণপাত না করে, শান্তিপূর্ণ আলোচনা না করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল ইউক্রেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব প্রায় হুমকির মুখে।
যদিও এখন ইউরোপ নতুন করে ইউক্রেনকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, রাশিয়ার বিপরীতে তাদের এই প্রতিশ্রুতি কতটুকু কাজ করবে, আমরা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। পেছনের সমস্ত কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে এ কথা স্পষ্ট যে রাশিয়ার বিপরীতে খুব একটা ভালো কিছু করতে পারবে না ইউক্রেন। আরও একটা আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে—তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পৃথিবী ধাবিত হচ্ছে কি না।
রাশিয়া গ্রেট ব্রিটেনের খবরদারি একেবারেই পছন্দ করে না। তার ওপর জার্মানির সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া জয়লাভ করেছিল। ইউরোপের সঙ্গে রয়েছে রাশিয়ার স্থলপথ, সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক ও ভৌগোলিক সম্পর্ক। অর্থনৈতিকভাবেও ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যদি জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রেট ব্রিটেন অযাচিত হস্তক্ষেপ করে ইউক্রেন যুদ্ধে, রাশিয়া যদি মনে করে ইউরোপ তার চলার পথে কাঁটা এবং পারস্পরিক স্বার্থের হানি ঘটে, তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। ইউরোপসহ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের একটি কথা মনে রাখা উচিত, রাশিয়া এখন পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে পরাজিত হয়নি। বর্তমান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই কথাটি নিশ্চয়ই অনুধাবন করেছেন অন্তর দিয়ে। তাই তাঁর কাছ থেকে সবার আগে শান্তির বার্তা, যুদ্ধবিরতির বার্তা এল।
সর্বোপরি যে কথাটি দিয়ে শেষ করতে চাই তা হলো, নিজ দেশের জনগণ যেন যোগ্যতা, সততা ও বিচক্ষণতার ভিত্তিতে দেশের নেতা নির্বাচন করে। আর একটা কথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে বর্তমানে, কোনো সংস্থা, কোনো দেশ, কোনো ব্যক্তি যদি গোপনে বিদেশি টাকা এনে তাদের কথামতো দেশের মাটিতে অনুৎপাদিত খাত, সামাজিক খাত, শিক্ষা খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে ব্যয় করে, কোনো একসময় প্রাপ্ত অর্থের অঙ্ক শোধ করতে হবে সুদে-আসলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে। আমরা যেন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে এই শিক্ষা গ্রহণ করি।
রংপুরের ঈশ্বরপুর গ্রামে যতদূর চোখ যায় চোখে পড়ে মাঠে মাঠে বিভিন্ন জাতের আলুর গাছ। মূলত সেখানে উৎপাদন হচ্ছে আলুবীজ। আর সেখান থেকে উৎপাদিত আলুবীজ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এখন দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি আলুর চাষ হয়।
৪ ঘণ্টা আগেকবি হতে হতেই আর কবি হওয়া হলো না। কখনো কখনো আপাদমস্তক নিজেকে কবিদের সারির একজন ভাবতে থাকি, চলায়-বলায়-ভাবনায় একটা অপরিসীম কবিত্ব ভাব চলে আসে। দু-একটা কবিতা-টবিতা গোছের হয়তো লিখেও ফেলি, হয়তো নান্দনিক হয় না...
৫ ঘণ্টা আগেদ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তবে ময়মনসিংহে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের যে চিত্র দেখা গেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে...
৫ ঘণ্টা আগেএবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
১ দিন আগে