Ajker Patrika

সত্যের মুখোমুখি হওয়া কি খুব কঠিন

রওনক জাহান
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি

আমি মাইলস্টোন স্কুল ছেড়ে এসেছি বেশি দিন হয়নি। এখনো অনেক সহকর্মী আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন। আমি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এখন যা দেখছি, তা নিয়ে চুপ থাকা অন্যায় হবে।

পূর্ণিমা দাস এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় সেখানে অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল। এই বক্তব্যে একধরনের ‘ছোট করে দেখানোর’ চেষ্টা রয়েছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।

কারণ?

১. স্কুল ছুটি হয় বেলা ১টায়, ঠিক। কিন্তু কোচিং ক্লাসের বাচ্চারা সেখানে থাকে বেলা ৩:৩০ পর্যন্ত।

২. যারা মান্থলি টেস্টে ফেল করেছিল, ঘটনার দিন তাদের এক্সট্রা ক্লাস ছিল।

এই কথাগুলো কেউ বলেননি। অথচ এটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে বোঝা যায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ চায়নি ঘটনা পুরোপুরি প্রকাশ পাক। তাঁরা বলেছেন, কিছু বাচ্চা বাবা-মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। ঠিক কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটা ভবনে যেখানে স্কুল পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে এত শত শিক্ষার্থীকে রেখে কোচিং, পরীক্ষা, ক্লাস চালানো—এটা কীভাবে চলছে? এখানে কি আমাদের প্রশ্ন করার অধিকার নেই?

‘লাশের সংখ্যা তো ২০০-৩০০ হয়নি!’—এমন কথা শুনতে হচ্ছে এখন। এই কথার ভেতরেই রাজনীতির ছায়া স্পষ্ট। কারণ, এই বিতর্কের মধ্যে কোনোভাবে রাজনীতি এনে দিতে পারলেই কয়েকটা পক্ষের সুবিধা। আমি যদি বলি, মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ চাইছে গোপন কিছু তথ্য প্রকাশ না হোক। রাজউক দায় এড়াতে চায়, তাই রাজনৈতিক ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। বিমানবাহিনী চায় পুরোনো বিমানের দায় ঢেকে দিতে। তাই তারা ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিজেকে মুক্ত করছে—তাহলে কি ভুল বলব?

এই তিন পক্ষ—স্কুল কর্তৃপক্ষ, রাজউক, বিমানবাহিনী—তিনজনই রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। রাজনীতিকে নিজেদের দায় ঢাকতে ব্যবহার করছে।

‘লাশ বেশি হলে সুবিধা হয়’—এমন কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা কি ভুলে গেছেন এই লাশ মানে একটা শিশু, একটা পরিবার, একেকটা ভবিষ্যৎ? এ ধরনের খোঁচা শুধু অমানবিক নয়, এটা পরিকল্পিতভাবে মানুষের আবেগকে ভোঁতা করে দেওয়ার কৌশল। যেন প্রশ্ন করা ভুল, যেন অভিযোগ তোলা মানেই কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।

না। আমরা যারা প্রশ্ন করছি, তারা কেউ লাশ চাই না। আমরা চাই, কেউ যেন আর না মরে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে কোনো স্কুলে আগুন লাগলে সেখানে যেন শিশুদের লাশের গন্ধ না আসে। তাই আমরা জিজ্ঞেস করছি:

  • কেন অনিরাপদ জায়গায় স্কুল চালানো হলো?
  • কেন এতজন শিশু স্কুল ছুটির পরও সেখানে রয়ে গেল?
  • কেন এত বড় আগুনে নিরাপত্তাব্যবস্থা এত নাজুক ছিল?
  • এসব প্রশ্নের উত্তর চাওয়াটাই কি এখন অপরাধ হয়ে গেছে?

শেষে কী হবে? কাদা ছোড়াছুড়ি চলবে। মানুষ বিতর্কে মেতে উঠবে। আর মাঝখানে শিশুদের মৃত্যু শুধু একটুখানি ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা’ হিসেবে পরিণত হবে। এই ব্যর্থতার দায় কেউ নেবে না। কিন্তু আমরা কি এত সহজে ভুলে যাব?

লেখক: সাবেক শিক্ষক, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টেলিগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে আ.লীগ, হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে টাকা নিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের

আগামী ১১ দিন নৈরাজ্যের আশঙ্কা, ঠেকাতে এসপিদের এসবির চিঠি

প্রাথমিকে পাঠদান: বাইরের ২০ কাজের চাপে শিক্ষক

প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হলেন মাহফুজ আনাম, নূরুল কবীরসহ ১২ জন

‘চাঁদা না পেয়ে’ ১০ দোকানে তালা, জামায়াত নেতা ও বিএনপির কর্মীসহ গ্রেপ্তার ৪

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত