আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের একজন অন্যতম গণবুদ্ধিজীবী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম সংগঠক, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা এবং ‘সর্বজন কথা’ পত্রিকার সম্পাদক। মার্কিন শুল্ক ও সরকারের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বা গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করেছে—এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
যুক্তরাষ্ট্র তো ট্রাম্পের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে একটা উন্মাদনা শুরু করেছে। শুল্ক বৃদ্ধির একচেটিয়া সিদ্ধান্ত যেসব যুক্তিতে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, এসবের কোনো যুক্তি নেই। ট্রাম্পের যুক্তি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে এবং তাঁর দেশ থেকে আমাদের দেশে অনেক পণ্য আনা হয় না। এই যে আনা হয় না বা তাঁর দেশ থেকে পাঠানো হয় না, এসব তো অর্থনৈতিক কারণে হয়।
আমাদের বিশ্ববাজারে যে জায়গা থেকে আমদানি করা সুবিধাজনক, আমরা তো সেখান থেকেই আমদানি করব। অর্থনৈতিক যুক্তিতে তা-ই হওয়ার কথা। বাজার অর্থনীতির কথা হলো, যেখানে দাম কম পাওয়া যায়, সেখান থেকে আমদানি করা। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করার আসলে আমাদের তেমন কিছু নেই। সে কারণে সেখানে ঘাটতি থাকে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা আছে আমাদের পোশাকের। সে কারণে সেখানে আমাদের পোশাক যায়। বাজার অর্থনীতির মধ্যে তো জোরজবরদস্তির ব্যাপার থাকার কথা না।
যুক্তরাষ্ট্র বাজার অর্থনীতির কথা বলে। তারাই আবার বাজার অর্থনীতির নিয়মকানুন, বিধি-ব্যবস্থার সবকিছুকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে এখানে পুরো একটা দানবীয় সংঘাতসুলভ ব্যবহার করে নানা দেশে ইচ্ছেমতো শুল্ক আরোপ করছে। এটা আসলে অর্থনীতির শক্তির জোরে করছে না, সেটা করছে সামরিক শক্তির জোরে। যুক্তরাষ্ট্রের আসলে এখন আর অর্থনীতির কোনো শক্তি নেই।
এটা তারা করতে পারছে অন্যান্য দেশের অনৈক্যের কারণে। তারা এ কারণে সম্রাটসুলভ ঔদ্ধত্য দেখাতে পারছে। ট্রাম্পের মতলবটা ছিল বিভিন্ন দেশের ওপর ৩০ থেকে ৮০ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করা। কমানোর উদ্দেশ্য মাথায় রেখে তিনি এ রকম বড় অঙ্কের শুল্ক বসিয়েছেন। তারপর বিভিন্ন ধরনের শর্ত চাপিয়ে এখন আবার দর-কষাকষি করছেন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। বিভিন্ন ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে যেটা ২০ শতাংশ দাঁড়াল, সেটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আগে আমাদের শুল্কের পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ; তখন ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরবের চেয়ে আমাদের শুল্কহার বেশি ছিল। তার ওপর এখন ২০ শতাংশ বসল। সে হিসাবে ওই সব দেশের কাছাকাছি আছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ট্রাম্পের এ ধরনের অপতৎপরতায় শুধু বিশ্বের নানা দেশ না, স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেখানকার ভোক্তাদের বেশি দামে জিনিস কিনতে হবে। এতে করে সব দেশ থেকে যত ধরনের জিনিস যাবে, সবকিছুর দাম বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে একটা সংকট তৈরি হবে। ফলে সেখানে বেকারত্ব বাড়বে।
ট্রাম্প যত ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর নাগরিকদের, তার কিছুই পূরণ করতে পারছেন না। তাই ট্রাম্প শুধু বিশ্বের মানুষের জন্য না, নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
তাঁর এসব উদ্যোগের কারণে কিছু কোম্পানির লাভ হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের প্রত্যেকেরই প্রকৃত আয় কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি এমনিতেই সংকটের মধ্যে আছে, আরও সংকটের মধ্যে পড়বে। আর সেখানে যদি মন্দা হয়, তার প্রভাব সারা বিশ্বে দেখা দেবে শুধু ট্রাম্পের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বা গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটাকে কেন গোপন করা হলো?
বাংলাদেশকে ট্রাম্পের ধমক দেওয়া এবং জোরজবরদস্তি করে শুল্ক চাপানোর সঙ্গে নানা ধরনের শর্ত দেওয়ার সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ আসলে ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে, তার পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে ট্রাম্পের নির্দেশ। মানে ট্রাম্পের সঙ্গে কী কী ব্যবসা করতে হবে, তাঁর কাছ থেকে কীভাবে আমদানি বাড়াতে হবে, অন্য দেশের সঙ্গে কীভাবে আমদানি বাড়াতে হবে এবং অন্য দেশের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে হবে—এই সবকিছু হলো ট্রাম্পের নির্দেশ। মানে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ট্রাম্পের কথামতো হতে হবে। সেই রকম একটা নির্দেশমালা তারা বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে। পাঠানোর পরে সেটা নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই সরকার কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে জুনের প্রথম থেকে। এটার প্রতিফলন পাওয়া যায় বাজেটে। আমি বাজেট আলোচনার সময় বলেছিলাম, এবার বাজেটে ট্রাম্প এবং আইএমএফের ছায়া আছে। ট্রাম্পের শর্ত বাস্তবায়নের কারণে শতাধিক মার্কিন পণ্যের শুল্কমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাজেটে। জাতীয় স্বার্থের কোনো আলোচনা ছাড়াই এসব শুরু হয়েছে জুন থেকেই।
কেনাকাটার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এলএনজি আমদানি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যদি অন্য কোথাও কম টাকায় কেনা যায়, সেটা কেনা যাবে না। এই আমদানি চুক্তি তো কয়েক মাস আগে করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিদেশে গিয়ে সেই চুক্তি করেছেন। এরপর ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজেটের মধ্যে অস্ত্র আমদানির কথা বলা হয়েছে, মাছ-মাংস ইত্যাদি শুল্কমুক্তে আমদানি করতে হবে।
এর মধ্যে শুল্ক আলোচনার সর্বশেষ পর্যায়ে যাওয়ার আগে সরকার একটা ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বা গোপনীয়তা রক্ষা’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। মানে, এই চুক্তির কোনো কিছুই প্রকাশ করা যাবে না। সরকার ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কী কী বিষয় নিয়ে চুক্তি করেছে, সেটা আমরা জানি না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে, কয়েক মাস ধরে এই সরকারের মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি আছেন, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের শর্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সেসব বাস্তবায়নের জন্য একধাপ এগিয়ে আছেন। এতে করে তাঁরা কোনো ঝামেলার মধ্যে না পড়লেও, পুরো দেশকে একটা ফাঁদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। এই চুক্তিগুলো করার জন্য সরকারের মধ্যকার কিছু লোককে বেশি উৎসাহী দেখা যাচ্ছে। সেটাই হলো উদ্বেগের বিষয়।
গম আমরা কম দামে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে কিনতে পারতাম, কিন্তু চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনতে হবে। চীন বা অন্য দেশ থেকে কম দামে তুলা আনা সম্ভব হলেও তা আনা যাবে না। আমাদের মাছ, মাংস যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করার দরকার না হলেও তা করতে হবে। ২৫টা বোয়িং বিমান কেনার দরকার না থাকলেও সেটা তাদের কাছ থেকেই কিনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যা ইরান ও রাশিয়ার। আমরাও এ দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারব না। এতে করে বাংলাদেশের স্বাধীন কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
এখন সরকার ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইছে। কিন্তু এই ১৫ শতাংশ কমানোটা এমনিতেই সম্ভব ছিল, সেটা অন্যান্য দেশের কমানো দেখে বোঝা যাচ্ছে। এখন বাণিজ্য উপদেষ্টা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি চায়, তাহলে আমরা সেটা প্রকাশ করতে পারব। প্রকাশ করা আর না করার মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, চুক্তি তো স্বাক্ষর করা হয়ে গেছে। এতে বাংলাদেশ একটা বড় বিপদের মধ্যে পড়বে। যেসব পণ্য আমদানি করব, সেগুলো বেশি দামে কিনতে হবে। সেসবের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এগুলো হলো আর্থিক ক্ষতির দিক।
আমাদের যে বৈশ্বিকভাবে সামরিক ব্যাপারে পোলারাইজেশনের উদ্বেগ, সেসবের ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাব। আমাদের এ বিষয়ে পুরো নিয়ন্ত্রণটা যুক্তরাষ্ট্র নিতে চাইছে। এখানে তো চীনেরও বড় বিনিয়োগ আছে।
চীন থেকে অস্ত্র আনা যাবে না। সেখান থেকে পণ্য আমদানি কমাতে হবে। মানে, সরাসরি চীনের নাম করে তাদের অনেক ধরনের শর্ত আছে। চীনের সঙ্গে আমাদের এখনকার যে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, সেটা বড় আকারের। কারণ, চীনের পণ্য আমদানি আমাদের জন্য সুবিধাজনক। দামের দিক থেকে, দূরত্বের দিক থেকে এবং প্রয়োজনের দিক থেকে সবচেয়ে সহজ। আর চীন থেকে আমরা কোনো অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করি না। শিল্পের জন্য কাঁচামাল আসে, যন্ত্রাংশ আসে। আর আসে কনজ্যুমার আইটেম। চীন থেকে আসা পণ্যগুলোর দাম সুলভ হয়।
আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও সবচেয়ে বেশি চীনের পণ্য রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর এবং বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতির রীতিনীতি এবং বাজার অর্থনীতির টেক্সটবুকের কথা তারাই বেশি করে বলে থাকে, সেটাকে তারা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি কোনো বৈশ্বিক নিয়ম বা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তৈরি। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও দুর্বল অর্থনীতির ওপর এ ধরনের বৈষম্যমূলক শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ন্যায্য ও সমান সুযোগভিত্তিক’ বাণিজ্যনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন নয় কি?
এটা আগে থেকেই হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের আইন অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গেছে। আগে থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসরায়েল যে ফিলিস্তিনে প্রতিদিন মানুষ (শিশু ও নারী) হত্যা করছে, এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক বিধিব্যবস্থা, আইনকানুন—কোনো কিছুই কাজ করছে না।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছে। এটা বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের মতো না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য হতে হয় চাঁদার ওপর নির্ভর করে। একটি দেশের চাঁদার পরিমাণ বেশি হলে তার ভোটের সংখ্যা বেশি হয়। চাঁদার পরিমাণ কম হলে ভোটও কম হয়।
কিন্তু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হলো জাতিসংঘের একটি দেশের জন্য একটি ভোট। সে কারণে অন্য দেশের জন্যও একধরনের সুবিধা আছে। ফলে এই সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে। তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে ‘ব্রিকসের’ মতো সংস্থার জন্ম হয়েছে। ফলে বড় দেশের সঙ্গে ছোট দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ব্রিকসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করে না। এরপর একটা পর্যায়ে দেখা গেল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেভাবে আর কার্যকর নেই।
ট্রাম্পের এই শুল্ক চাপানোটা আন্তর্জাতিক বাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। এভাবে একটা দেশ শুল্ক আরোপ করতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাধারণ নিয়ম হলো, কোনো দেশ শুল্ক আরোপ করলে সেখানে অন্য দেশ যেতে পারে, আবার না-ও যেতে পারে। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য এখন ট্রাম্প জোরজবরদস্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। এখানে তিনি সামরিক শক্তি দেখাচ্ছেন। সমস্ত কিছু যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করে দেবে। মানে, বাংলাদেশকে হজম করে ফেলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে তারা সেই চেষ্টাই করছে।
একটা অনির্বাচিত সরকার কি এ ধরনের ঝুঁকি নিতে পারে?
অন্তর্বর্তী সরকার একটা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তাদের দায়িত্ব আরও বেশি ছিল এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য। তারা তো কোনো স্থায়ী সরকার না। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত এ ধরনের চুক্তিতে না যাওয়াই তাদের উচিত ছিল। কিন্তু দেখা গেল, তারা আগ্রহী হয়ে এ ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তিটা করল। যাঁরা চুক্তিটা করেছেন, তাঁদের তো একসময় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রবাসী, তাঁরা বাংলাদেশে থাকবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির শিকার হতে হবে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, রাজনৈতিক, সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক পোলারাইজেশন সামনে তৈরি হবে; সেগুলোর একটা ভিকটিম হতে পারে বাংলাদেশ এ চুক্তির কারণে।
বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা কি সক্ষমতার জায়গায় আদৌ পৌঁছাতে পারব?
সক্ষমতা হলো আত্মসম্মানের ব্যাপার। একটা দেশ যদি সক্ষমতা বাড়াতে চায়, তাহলে প্রথমে আত্মসম্মান বোধের দরকার হয়। কোনো আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন সরকার এ ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না জনগণকে না জানিয়ে। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে জিনিসটা আমরা অন্য কোনো দেশ থেকে কম টাকায় পাব, সেটা আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হওয়াটা তো কোনো সক্ষমতার মধ্যে পড়ে না। সক্ষমতা তো বলবে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আনার দরকার নেই। অ্যাডাম স্মিথ, রিকার্ডোদের তত্ত্বই বলে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের জিনিস আমদানি করার দরকার নেই। কারণ, সেখানে দাম বেশি পড়ে। তার মানে, এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করাই হলো সক্ষমতা। এই চুক্তি করার মধ্য দিয়ে সক্ষমতার সব সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকে বড় ধরনের বিপদের মধ্যে ফেলা হয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করেছে—এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
যুক্তরাষ্ট্র তো ট্রাম্পের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে একটা উন্মাদনা শুরু করেছে। শুল্ক বৃদ্ধির একচেটিয়া সিদ্ধান্ত যেসব যুক্তিতে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, এসবের কোনো যুক্তি নেই। ট্রাম্পের যুক্তি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে এবং তাঁর দেশ থেকে আমাদের দেশে অনেক পণ্য আনা হয় না। এই যে আনা হয় না বা তাঁর দেশ থেকে পাঠানো হয় না, এসব তো অর্থনৈতিক কারণে হয়।
আমাদের বিশ্ববাজারে যে জায়গা থেকে আমদানি করা সুবিধাজনক, আমরা তো সেখান থেকেই আমদানি করব। অর্থনৈতিক যুক্তিতে তা-ই হওয়ার কথা। বাজার অর্থনীতির কথা হলো, যেখানে দাম কম পাওয়া যায়, সেখান থেকে আমদানি করা। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করার আসলে আমাদের তেমন কিছু নেই। সে কারণে সেখানে ঘাটতি থাকে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা আছে আমাদের পোশাকের। সে কারণে সেখানে আমাদের পোশাক যায়। বাজার অর্থনীতির মধ্যে তো জোরজবরদস্তির ব্যাপার থাকার কথা না।
যুক্তরাষ্ট্র বাজার অর্থনীতির কথা বলে। তারাই আবার বাজার অর্থনীতির নিয়মকানুন, বিধি-ব্যবস্থার সবকিছুকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে এখানে পুরো একটা দানবীয় সংঘাতসুলভ ব্যবহার করে নানা দেশে ইচ্ছেমতো শুল্ক আরোপ করছে। এটা আসলে অর্থনীতির শক্তির জোরে করছে না, সেটা করছে সামরিক শক্তির জোরে। যুক্তরাষ্ট্রের আসলে এখন আর অর্থনীতির কোনো শক্তি নেই।
এটা তারা করতে পারছে অন্যান্য দেশের অনৈক্যের কারণে। তারা এ কারণে সম্রাটসুলভ ঔদ্ধত্য দেখাতে পারছে। ট্রাম্পের মতলবটা ছিল বিভিন্ন দেশের ওপর ৩০ থেকে ৮০ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করা। কমানোর উদ্দেশ্য মাথায় রেখে তিনি এ রকম বড় অঙ্কের শুল্ক বসিয়েছেন। তারপর বিভিন্ন ধরনের শর্ত চাপিয়ে এখন আবার দর-কষাকষি করছেন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। বিভিন্ন ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে যেটা ২০ শতাংশ দাঁড়াল, সেটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আগে আমাদের শুল্কের পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ; তখন ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরবের চেয়ে আমাদের শুল্কহার বেশি ছিল। তার ওপর এখন ২০ শতাংশ বসল। সে হিসাবে ওই সব দেশের কাছাকাছি আছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ট্রাম্পের এ ধরনের অপতৎপরতায় শুধু বিশ্বের নানা দেশ না, স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেখানকার ভোক্তাদের বেশি দামে জিনিস কিনতে হবে। এতে করে সব দেশ থেকে যত ধরনের জিনিস যাবে, সবকিছুর দাম বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে একটা সংকট তৈরি হবে। ফলে সেখানে বেকারত্ব বাড়বে।
ট্রাম্প যত ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর নাগরিকদের, তার কিছুই পূরণ করতে পারছেন না। তাই ট্রাম্প শুধু বিশ্বের মানুষের জন্য না, নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
তাঁর এসব উদ্যোগের কারণে কিছু কোম্পানির লাভ হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের প্রত্যেকেরই প্রকৃত আয় কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি এমনিতেই সংকটের মধ্যে আছে, আরও সংকটের মধ্যে পড়বে। আর সেখানে যদি মন্দা হয়, তার প্রভাব সারা বিশ্বে দেখা দেবে শুধু ট্রাম্পের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বা গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটাকে কেন গোপন করা হলো?
বাংলাদেশকে ট্রাম্পের ধমক দেওয়া এবং জোরজবরদস্তি করে শুল্ক চাপানোর সঙ্গে নানা ধরনের শর্ত দেওয়ার সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ আসলে ভবিষ্যতে কীভাবে চলবে, তার পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে ট্রাম্পের নির্দেশ। মানে ট্রাম্পের সঙ্গে কী কী ব্যবসা করতে হবে, তাঁর কাছ থেকে কীভাবে আমদানি বাড়াতে হবে, অন্য দেশের সঙ্গে কীভাবে আমদানি বাড়াতে হবে এবং অন্য দেশের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক রাখতে হবে—এই সবকিছু হলো ট্রাম্পের নির্দেশ। মানে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ট্রাম্পের কথামতো হতে হবে। সেই রকম একটা নির্দেশমালা তারা বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে। পাঠানোর পরে সেটা নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই সরকার কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে জুনের প্রথম থেকে। এটার প্রতিফলন পাওয়া যায় বাজেটে। আমি বাজেট আলোচনার সময় বলেছিলাম, এবার বাজেটে ট্রাম্প এবং আইএমএফের ছায়া আছে। ট্রাম্পের শর্ত বাস্তবায়নের কারণে শতাধিক মার্কিন পণ্যের শুল্কমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাজেটে। জাতীয় স্বার্থের কোনো আলোচনা ছাড়াই এসব শুরু হয়েছে জুন থেকেই।
কেনাকাটার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এলএনজি আমদানি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যদি অন্য কোথাও কম টাকায় কেনা যায়, সেটা কেনা যাবে না। এই আমদানি চুক্তি তো কয়েক মাস আগে করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিদেশে গিয়ে সেই চুক্তি করেছেন। এরপর ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাজেটের মধ্যে অস্ত্র আমদানির কথা বলা হয়েছে, মাছ-মাংস ইত্যাদি শুল্কমুক্তে আমদানি করতে হবে।
এর মধ্যে শুল্ক আলোচনার সর্বশেষ পর্যায়ে যাওয়ার আগে সরকার একটা ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বা গোপনীয়তা রক্ষা’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। মানে, এই চুক্তির কোনো কিছুই প্রকাশ করা যাবে না। সরকার ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কী কী বিষয় নিয়ে চুক্তি করেছে, সেটা আমরা জানি না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে, কয়েক মাস ধরে এই সরকারের মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি আছেন, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের শর্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সেসব বাস্তবায়নের জন্য একধাপ এগিয়ে আছেন। এতে করে তাঁরা কোনো ঝামেলার মধ্যে না পড়লেও, পুরো দেশকে একটা ফাঁদের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। এই চুক্তিগুলো করার জন্য সরকারের মধ্যকার কিছু লোককে বেশি উৎসাহী দেখা যাচ্ছে। সেটাই হলো উদ্বেগের বিষয়।
গম আমরা কম দামে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে কিনতে পারতাম, কিন্তু চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনতে হবে। চীন বা অন্য দেশ থেকে কম দামে তুলা আনা সম্ভব হলেও তা আনা যাবে না। আমাদের মাছ, মাংস যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করার দরকার না হলেও তা করতে হবে। ২৫টা বোয়িং বিমান কেনার দরকার না থাকলেও সেটা তাদের কাছ থেকেই কিনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যা ইরান ও রাশিয়ার। আমরাও এ দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারব না। এতে করে বাংলাদেশের স্বাধীন কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।
এখন সরকার ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানোকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইছে। কিন্তু এই ১৫ শতাংশ কমানোটা এমনিতেই সম্ভব ছিল, সেটা অন্যান্য দেশের কমানো দেখে বোঝা যাচ্ছে। এখন বাণিজ্য উপদেষ্টা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি চায়, তাহলে আমরা সেটা প্রকাশ করতে পারব। প্রকাশ করা আর না করার মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য নেই। কারণ, চুক্তি তো স্বাক্ষর করা হয়ে গেছে। এতে বাংলাদেশ একটা বড় বিপদের মধ্যে পড়বে। যেসব পণ্য আমদানি করব, সেগুলো বেশি দামে কিনতে হবে। সেসবের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এগুলো হলো আর্থিক ক্ষতির দিক।
আমাদের যে বৈশ্বিকভাবে সামরিক ব্যাপারে পোলারাইজেশনের উদ্বেগ, সেসবের ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাব। আমাদের এ বিষয়ে পুরো নিয়ন্ত্রণটা যুক্তরাষ্ট্র নিতে চাইছে। এখানে তো চীনেরও বড় বিনিয়োগ আছে।
চীন থেকে অস্ত্র আনা যাবে না। সেখান থেকে পণ্য আমদানি কমাতে হবে। মানে, সরাসরি চীনের নাম করে তাদের অনেক ধরনের শর্ত আছে। চীনের সঙ্গে আমাদের এখনকার যে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, সেটা বড় আকারের। কারণ, চীনের পণ্য আমদানি আমাদের জন্য সুবিধাজনক। দামের দিক থেকে, দূরত্বের দিক থেকে এবং প্রয়োজনের দিক থেকে সবচেয়ে সহজ। আর চীন থেকে আমরা কোনো অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করি না। শিল্পের জন্য কাঁচামাল আসে, যন্ত্রাংশ আসে। আর আসে কনজ্যুমার আইটেম। চীন থেকে আসা পণ্যগুলোর দাম সুলভ হয়।
আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও সবচেয়ে বেশি চীনের পণ্য রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর এবং বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতির রীতিনীতি এবং বাজার অর্থনীতির টেক্সটবুকের কথা তারাই বেশি করে বলে থাকে, সেটাকে তারা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি কোনো বৈশ্বিক নিয়ম বা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তৈরি। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও দুর্বল অর্থনীতির ওপর এ ধরনের বৈষম্যমূলক শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ন্যায্য ও সমান সুযোগভিত্তিক’ বাণিজ্যনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন নয় কি?
এটা আগে থেকেই হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের আইন অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গেছে। আগে থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসরায়েল যে ফিলিস্তিনে প্রতিদিন মানুষ (শিশু ও নারী) হত্যা করছে, এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক বিধিব্যবস্থা, আইনকানুন—কোনো কিছুই কাজ করছে না।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছে। এটা বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের মতো না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য হতে হয় চাঁদার ওপর নির্ভর করে। একটি দেশের চাঁদার পরিমাণ বেশি হলে তার ভোটের সংখ্যা বেশি হয়। চাঁদার পরিমাণ কম হলে ভোটও কম হয়।
কিন্তু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হলো জাতিসংঘের একটি দেশের জন্য একটি ভোট। সে কারণে অন্য দেশের জন্যও একধরনের সুবিধা আছে। ফলে এই সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে। তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে ‘ব্রিকসের’ মতো সংস্থার জন্ম হয়েছে। ফলে বড় দেশের সঙ্গে ছোট দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ব্রিকসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করে না। এরপর একটা পর্যায়ে দেখা গেল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেভাবে আর কার্যকর নেই।
ট্রাম্পের এই শুল্ক চাপানোটা আন্তর্জাতিক বাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। এভাবে একটা দেশ শুল্ক আরোপ করতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাধারণ নিয়ম হলো, কোনো দেশ শুল্ক আরোপ করলে সেখানে অন্য দেশ যেতে পারে, আবার না-ও যেতে পারে। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য এখন ট্রাম্প জোরজবরদস্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। এখানে তিনি সামরিক শক্তি দেখাচ্ছেন। সমস্ত কিছু যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করে দেবে। মানে, বাংলাদেশকে হজম করে ফেলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে তারা সেই চেষ্টাই করছে।
একটা অনির্বাচিত সরকার কি এ ধরনের ঝুঁকি নিতে পারে?
অন্তর্বর্তী সরকার একটা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তাদের দায়িত্ব আরও বেশি ছিল এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য। তারা তো কোনো স্থায়ী সরকার না। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত এ ধরনের চুক্তিতে না যাওয়াই তাদের উচিত ছিল। কিন্তু দেখা গেল, তারা আগ্রহী হয়ে এ ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তিটা করল। যাঁরা চুক্তিটা করেছেন, তাঁদের তো একসময় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রবাসী, তাঁরা বাংলাদেশে থাকবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির শিকার হতে হবে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, রাজনৈতিক, সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক পোলারাইজেশন সামনে তৈরি হবে; সেগুলোর একটা ভিকটিম হতে পারে বাংলাদেশ এ চুক্তির কারণে।
বাণিজ্য চুক্তি কাজে লাগাতে হলে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমরা কি সক্ষমতার জায়গায় আদৌ পৌঁছাতে পারব?
সক্ষমতা হলো আত্মসম্মানের ব্যাপার। একটা দেশ যদি সক্ষমতা বাড়াতে চায়, তাহলে প্রথমে আত্মসম্মান বোধের দরকার হয়। কোনো আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন সরকার এ ধরনের চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না জনগণকে না জানিয়ে। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে জিনিসটা আমরা অন্য কোনো দেশ থেকে কম টাকায় পাব, সেটা আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হওয়াটা তো কোনো সক্ষমতার মধ্যে পড়ে না। সক্ষমতা তো বলবে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আনার দরকার নেই। অ্যাডাম স্মিথ, রিকার্ডোদের তত্ত্বই বলে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের জিনিস আমদানি করার দরকার নেই। কারণ, সেখানে দাম বেশি পড়ে। তার মানে, এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করাই হলো সক্ষমতা। এই চুক্তি করার মধ্য দিয়ে সক্ষমতার সব সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করা হয়েছে এবং বাংলাদেশকে বড় ধরনের বিপদের মধ্যে ফেলা হয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
৩ ঘণ্টা আগেদেশে নারী জাগরণ অভূতপূর্ব। এটা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। বীরকন্যা প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া থেকে জাহানারা ইমামে এর উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ শাসিত হয়েছে নারীর অধীনে। এরশাদের পতনের পর সরাসরি সামরিক শাসনের অবসান হলে খালেদা জিয়া দেশ শাসনে আসেন।
৩ ঘণ্টা আগেআকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুদিন পরেই বৃষ্টিতে নাজেহাল হয়ে ওঠা মানুষদের এমনটাই মনে হবে। বাইরে হয়তো রোদ তখন তেমন কড়া নয়, আবার কড়াও হতে পারে, শেফালির শাখে বিহগ-বিহগী কে জানে কী গেয়ে যাবে!
৩ ঘণ্টা আগেচাঁদপুরের মতলব উত্তরের ছোট্ট গ্রাম সাড়ে পাঁচআনি। এখানেই বড় হচ্ছে সোহান—মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের এক বিস্ময়বালক, যার পায়ের জাদু দেখে বিস্মিত হচ্ছে দেশজুড়ে মানুষ।
৩ ঘণ্টা আগে