অরুণ কর্মকার
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিন, ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক জনসমাবেশে বহুকাঙ্ক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র জনসমক্ষে এনেছেন। এই ঘোষণাপত্র যে ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ করা হবে, তা-ও ওই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত হয়েছে। এটা ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের, বিশেষ করে বর্তমান এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান দাবি। ওই একই দিনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ও ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য চিঠিও পাঠিয়েছেন। এটি ছিল বিএনপি ও জামায়াতের অন্যতম প্রধান দাবি। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা হওয়ার পরও নির্বাচনের মসৃণ পথ দৃশ্যমান হচ্ছে বলে মনে হয় না।
এই দুটি ঘোষিত বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশিত মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টতই সেই আভাস পাওয়া যায়। সর্বোপরি প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং তাঁর ভাষণে যখন বলেন, ‘একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে’, তখন নির্বাচনের মসৃণ পথ কিছুটা হলেও কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টতই কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্তকারী অপশক্তির কথা বলেছেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোরও কোনো কোনোটি যে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে নাখোশ হয়েছে, তা-ও তো অপ্রকাশ্য নয়!
ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচনের ঘোষিত সময়—দুটিকেই স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, এই ঘোষণা বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক ও প্রশাসনিক জটিলতার ক্রমাবসান ঘটাবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট করেই বলেছে যে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি এবং তাতে জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নও হয়নি। নির্বাচনের ঘোষিত সময় নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি না থাকলেও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রয়েছে।
তারা বলছে, জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে হবে এখনই, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই এবং সরকার চাইলে তা দিতে পারে। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে এবং সেই নির্বাচনে মসৃণ মাঠ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে দাবি জামায়াত করে এসেছে, তা তারা চালিয়ে যাবে। তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না—এমন কোনো রাজনৈতিক মনোভাব তারা পোষণ করে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই জুলাই ঘোষণাপত্র আইনি ভিত্তি না পেলে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে আয়োজন করা না হলে জামায়াত কী করবে, তা এখনো অস্পষ্ট।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৫ আগস্ট তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়েছিল। ওই প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র হয়েছে, এটাকে স্বাগত জানাই। ভালোভাবে পড়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। এটা যে হয়েছে, সেটাকে অভিনন্দন।’ এরপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপি দাবি করেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের কার্যকারিতার ভিত্তিতে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দাবি করেছে এনসিপি। এনসিপির এই দাবির সঙ্গে জামায়াতের দাবির সাযুজ্য শতভাগ।
আমরা জানি, শুরু থেকেই এনসিপির দাবি ছিল নির্বাচনের আগে স্বৈরাচারের বিচার ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করা এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। বর্তমান পর্যায়ে সেই দাবিগুলোর কী হবে, সে বিষয়ে এনসিপি কিছু বলছে না। যদিও নির্বাচনের আগে বিচারকাজ অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ার কথা। তবে সংস্কার বলতে যে গভীর বিষয়গুলো সামনে আনা হয়েছিল, তার কিছুই হচ্ছে বলে কেউ মনে করছেন না। তবে এনসিপি মনে
করে, নির্বাচনের আগেই গণহত্যাকারীদের বিচার দৃশ্যমান করা এবং সংস্কারের বাস্তবায়ন অন্তর্বর্তী সরকারের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
লক্ষণীয় যে, জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অবস্থানের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানের সাযুজ্যও শতভাগ। ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির ও চরমোনাইর পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অধ্যাদেশ জারি বা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি করতে হবে এবং ওই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে প্রকাশিত অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের কোনো আপত্তি নেই। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনটি দলই হতাশ। এই তিন দলই মনে করে, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন উভয় ক্ষেত্রেই প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছে। গত ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে গুরুত্ব দিয়েই সরকার এগোচ্ছে। এমনকি জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির ক্ষেত্রেও প্রধান উপদেষ্টা বা সরকার বিএনপিকে যেভাবে সম্পৃক্ত করেছে, তাদের বক্তব্য শুনেছে, অন্যদের সঙ্গে সেভাবে করা হয়নি।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কমবেশি হতাশা ও প্রশ্ন অবশ্য সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যেই রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এই ঘোষণাপত্রকে ইতিহাসের খণ্ডিত ও বিকৃত রূপ এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছে। এমনকি চূড়ান্ত বিচারে এই ঘোষণাপত্র কোনো জাতীয় দলিলের মর্যাদা পাওয়ার উপযুক্ত কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এমন একটি দলিল যদি ভবিষ্যতে সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হয়, তাহলে সেটা জাতির জন্য কতটা মর্যাদার হবে, তা একটি বড় ভাবনার ও বিবেচনার বিষয়।
জুলাই আন্দোলনের রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এই যে হতাশা এবং বহুবিধ প্রশ্ন—এগুলো নিয়ে দেশ যাত্রা শুরু করেছে এমন একটি জাতীয় নির্বাচনের পথে, যে নির্বাচনকে প্রধান উপদেষ্টা ঈদের দিনের মতো উৎসবমুখর করতে চান। এমন একটি নির্বাচনের দিকে দেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, যে নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টার অভিপ্রায় অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশবাসীর প্রত্যাশাও সেটাই। তবে বর্তমান পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তেমন একটি নির্বাচনের মসৃণ পথ কতটা দৃশ্যমান, সেই প্রশ্নের অবসান এখনো হয়নি।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিন, ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক জনসমাবেশে বহুকাঙ্ক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র জনসমক্ষে এনেছেন। এই ঘোষণাপত্র যে ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ করা হবে, তা-ও ওই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত হয়েছে। এটা ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের, বিশেষ করে বর্তমান এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান দাবি। ওই একই দিনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ও ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য চিঠিও পাঠিয়েছেন। এটি ছিল বিএনপি ও জামায়াতের অন্যতম প্রধান দাবি। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা হওয়ার পরও নির্বাচনের মসৃণ পথ দৃশ্যমান হচ্ছে বলে মনে হয় না।
এই দুটি ঘোষিত বিষয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশিত মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টতই সেই আভাস পাওয়া যায়। সর্বোপরি প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং তাঁর ভাষণে যখন বলেন, ‘একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে’, তখন নির্বাচনের মসৃণ পথ কিছুটা হলেও কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টতই কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্তকারী অপশক্তির কথা বলেছেন। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোরও কোনো কোনোটি যে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে নাখোশ হয়েছে, তা-ও তো অপ্রকাশ্য নয়!
ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচনের ঘোষিত সময়—দুটিকেই স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, এই ঘোষণা বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক ও প্রশাসনিক জটিলতার ক্রমাবসান ঘটাবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট করেই বলেছে যে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি এবং তাতে জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নও হয়নি। নির্বাচনের ঘোষিত সময় নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি না থাকলেও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রয়েছে।
তারা বলছে, জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি দিতে হবে এখনই, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই এবং সরকার চাইলে তা দিতে পারে। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে এবং সেই নির্বাচনে মসৃণ মাঠ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে দাবি জামায়াত করে এসেছে, তা তারা চালিয়ে যাবে। তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না—এমন কোনো রাজনৈতিক মনোভাব তারা পোষণ করে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই জুলাই ঘোষণাপত্র আইনি ভিত্তি না পেলে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতে আয়োজন করা না হলে জামায়াত কী করবে, তা এখনো অস্পষ্ট।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৫ আগস্ট তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়েছিল। ওই প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র হয়েছে, এটাকে স্বাগত জানাই। ভালোভাবে পড়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। এটা যে হয়েছে, সেটাকে অভিনন্দন।’ এরপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপি দাবি করেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের কার্যকারিতার ভিত্তিতে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগেই মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দাবি করেছে এনসিপি। এনসিপির এই দাবির সঙ্গে জামায়াতের দাবির সাযুজ্য শতভাগ।
আমরা জানি, শুরু থেকেই এনসিপির দাবি ছিল নির্বাচনের আগে স্বৈরাচারের বিচার ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করা এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। বর্তমান পর্যায়ে সেই দাবিগুলোর কী হবে, সে বিষয়ে এনসিপি কিছু বলছে না। যদিও নির্বাচনের আগে বিচারকাজ অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ার কথা। তবে সংস্কার বলতে যে গভীর বিষয়গুলো সামনে আনা হয়েছিল, তার কিছুই হচ্ছে বলে কেউ মনে করছেন না। তবে এনসিপি মনে
করে, নির্বাচনের আগেই গণহত্যাকারীদের বিচার দৃশ্যমান করা এবং সংস্কারের বাস্তবায়ন অন্তর্বর্তী সরকারের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
লক্ষণীয় যে, জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অবস্থানের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থানের সাযুজ্যও শতভাগ। ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে দলটির আমির ও চরমোনাইর পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অধ্যাদেশ জারি বা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি করতে হবে এবং ওই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’
আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে প্রকাশিত অবস্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের কোনো আপত্তি নেই। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনটি দলই হতাশ। এই তিন দলই মনে করে, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন উভয় ক্ষেত্রেই প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছে। গত ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে গুরুত্ব দিয়েই সরকার এগোচ্ছে। এমনকি জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির ক্ষেত্রেও প্রধান উপদেষ্টা বা সরকার বিএনপিকে যেভাবে সম্পৃক্ত করেছে, তাদের বক্তব্য শুনেছে, অন্যদের সঙ্গে সেভাবে করা হয়নি।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কমবেশি হতাশা ও প্রশ্ন অবশ্য সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যেই রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এই ঘোষণাপত্রকে ইতিহাসের খণ্ডিত ও বিকৃত রূপ এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছে। এমনকি চূড়ান্ত বিচারে এই ঘোষণাপত্র কোনো জাতীয় দলিলের মর্যাদা পাওয়ার উপযুক্ত কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এমন একটি দলিল যদি ভবিষ্যতে সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হয়, তাহলে সেটা জাতির জন্য কতটা মর্যাদার হবে, তা একটি বড় ভাবনার ও বিবেচনার বিষয়।
জুলাই আন্দোলনের রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এই যে হতাশা এবং বহুবিধ প্রশ্ন—এগুলো নিয়ে দেশ যাত্রা শুরু করেছে এমন একটি জাতীয় নির্বাচনের পথে, যে নির্বাচনকে প্রধান উপদেষ্টা ঈদের দিনের মতো উৎসবমুখর করতে চান। এমন একটি নির্বাচনের দিকে দেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, যে নির্বাচন প্রধান উপদেষ্টার অভিপ্রায় অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশবাসীর প্রত্যাশাও সেটাই। তবে বর্তমান পর্যায়ে দাঁড়িয়ে তেমন একটি নির্বাচনের মসৃণ পথ কতটা দৃশ্যমান, সেই প্রশ্নের অবসান এখনো হয়নি।
আমাদের সমাজে একটা অদ্ভুত বৈষম্য চলছে। পাবলিক বনাম প্রাইভেট। আর এই বৈষম্য এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে, কারও উচ্চশিক্ষার জায়গাটা দেখে তার পুরো ভবিষ্যৎ কিংবা মেধা বিচার করা হচ্ছে।
৭ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে গণতন্ত্রের মূল তত্ত্ব একখানা সংবিধানে লেখা, ঠিক। কিন্তু তার প্রয়োগ, প্রতিপত্তি ও প্রতিদিনের বিচার কোথায় হয় জানেন? চায়ের দোকানে। এই দোকানগুলোই তো বাঙালির নিজস্ব পার্লামেন্ট। যেখানে এমপি নেই, স্পিকার নেই, কিন্তু সবাই কথা বলে। এমনকি দোকানদারও।
৭ ঘণ্টা আগেবৃহস্পতিবার গাজীপুরে পরপর দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা এবং আনোয়ার হোসেনকে নির্দয়ভাবে পা থেঁতলে দেওয়ার ঘটনা আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সাংবাদিকদের কাজ ও জীবনের নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকির মুখে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার
৭ ঘণ্টা আগেগত বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। তাদের শাসন আমলে একটি নতুন অর্থবছরেরও সূচনা হয়েছে। আজ বছর পেরিয়ে অনেকেই পেছন ফিরে তাকাচ্ছেন—অর্জন কতটুকু, ব্যর্থতা কোথায় এবং অন্তরায় কী কী? এমন একটি হিসাব-নিকাশ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় দিকনির্দেশনা দি
১ দিন আগে