মাসুদ কামাল

সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, এটিই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান করে তুলেছে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকে না। তাই এই সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দিতে হবে, গণতান্ত্রিক কিছু ধারা যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সংবিধানের চেহারাটা এমন দাঁড়াবে, যাতে এই সংবিধানই একজন ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক থাকতে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের অন্য যে কেউ, তিনি যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না থাকেন।
কেবল সংবিধানেই নয়, সংস্কারের দবি উঠেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। হাসিনা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর। এই সময়ে তারা সবকিছুকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ—সবকিছুকেই নিজেদের অনুগত করে নিয়েছিল। কাজেই পরিবর্তন আনতে হবে সেসব ক্ষেত্রেও। দাবিগুলো বিশেষ কোনো একটি গোষ্ঠীর ছিল না, ছিল সবার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করল। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি বিষয়ের সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমে গঠিত কমিশনগুলোকে বলা হলো, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে। পরে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করছি, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব রিপোর্ট আসতে থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট পেলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? তা যে হবে না, সেটা সবাই জানেন। এরপরও থেকে যাবে বেশ কিছু ধাপ। প্রথমত, প্রশ্ন উঠবে—কমিশনের দেওয়া এই যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি মানবে? ড. ইউনূসের এই সরকার তো নিয়মিত কোনো সরকার নয়। একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে
দিয়ে তারা চলে যাবে। নতুন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের লোক হবেন। ফলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো তাঁদের মানা বা না-মানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার অবশ্য বলছে, কমিশনগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তাদের মতামত নেবে। এ কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করার জন্য একটা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর কথাও বলেছেন ড. ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও এর কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা। প্রথমে গঠন করা ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুরু হবে এই নতুন কমিশনের কাজ। নতুন এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ড. ইউনূস নিজে। আর তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যত দূর বুঝতে পারছি, ছয়টি কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সেগুলো টিকবে, বাকিগুলো বাদ যাবে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাব।
এতক্ষণ আমি কেবল সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কথা বললাম। এগুলো আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে একেবারে প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ ধাপ। প্রকৃত ঝামেলাটা হয়তো দেখা দেবে সামনে। এই যে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’, আমার বিবেচনায় এটাই হবে কঠিন একটা ধাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব একটা পলিসি আছে, চিন্তা আছে। একেক দলের একেক রকম চিন্তা। সবার চিন্তা এক জায়গায় নিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নিজেদেরও রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক সুস্পষ্ট কিছু বক্তব্য আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর দেড়েক আগে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। সেসব নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে রীতিমতো পাঠচক্রের মতো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত এই ৩১ দফা কি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশন তাদের বিবেচনায় নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, যদি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কি সহজ হবে?
আমার কেন যেন মনে হয়, এই জটিলতাগুলো এড়ানো যেত। প্রতিটি সংস্কার কমিশনে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে কতটুকু কী ভূমিকা রাখতে পারছেন বলা কঠিন, তবে যে দু-একটা নমুনা, বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধির যে নমুনা এরই মধ্যে দেখা গেছে, তাতে হতাশার জন্ম হয়। এ রকম ‘দুধভাত’জাতীয় সদস্যকে যখন ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, আমার তো মনে হয় কমিশনগুলোতে দু-তিনজন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও রাখা যেত। সে ক্ষেত্রে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’ কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।
এ পর্যন্ত গঠিত কমিশনগুলোর চেহারা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে কমিটিগুলোকে একটা ‘সুশীল’ চেহারা দেওয়ার। রাজনীতিবিদদের তারা এই কমিটিতে রাখতে চায়নি। ফলে একটা প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্কার প্রস্তাব রাজনীতিবিদেরা শেষ পর্যন্ত মানবেন কেন? রাজনীতিবিদেরা কি তাহলে সংস্কার করার যোগ্যতা রাখেন না? যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য, তাঁরা সবাই কি খুবই যোগ্য? সংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো ইতিহাস কি আছে এঁদের?
আবার এসব কমিশনের সুশীল সদস্য বা চেয়ারম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখানে এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এ দেশে অবস্থানই করেন না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তাঁরা দেশকে অবলোকন করেন, দেশ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করার ইউটোপিয়ান চিন্তা হয়তো করেন। তাঁদের সেসব চিন্তা কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে? আমাদের জন্য কতটুকু লাগসই হবে? অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথাই ধরা যাক। এই ভদ্রলোক প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু? অথচ তিনিই এই তাবৎ সংস্কার কমিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ কীভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অথচ তিনিই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান! জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রধান হচ্ছে স্বয়ং ড. ইউনূস। আবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস সাহেব যখন এই নতুন কমিশনের সহসভাপতির নাম বলে দেন, তখন বোঝা যায় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো এখানে খুব একটা সময় দিতে পারবেন না, বেশির ভাগ কাজ এই সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজই করবেন। এসব ভেবে আমি আশাবাদী হই, দেশটা তাহলে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক হয়ে যাবে! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাঁর মাস্টারিতে স্বস্তি অনুভব করবে?
এসব প্রশ্ন ও সন্দেহকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে সংস্কারের দিকে।
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, এটিই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান করে তুলেছে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকে না। তাই এই সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দিতে হবে, গণতান্ত্রিক কিছু ধারা যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সংবিধানের চেহারাটা এমন দাঁড়াবে, যাতে এই সংবিধানই একজন ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক থাকতে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের অন্য যে কেউ, তিনি যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না থাকেন।
কেবল সংবিধানেই নয়, সংস্কারের দবি উঠেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। হাসিনা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর। এই সময়ে তারা সবকিছুকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ—সবকিছুকেই নিজেদের অনুগত করে নিয়েছিল। কাজেই পরিবর্তন আনতে হবে সেসব ক্ষেত্রেও। দাবিগুলো বিশেষ কোনো একটি গোষ্ঠীর ছিল না, ছিল সবার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করল। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি বিষয়ের সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমে গঠিত কমিশনগুলোকে বলা হলো, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে। পরে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করছি, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব রিপোর্ট আসতে থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট পেলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? তা যে হবে না, সেটা সবাই জানেন। এরপরও থেকে যাবে বেশ কিছু ধাপ। প্রথমত, প্রশ্ন উঠবে—কমিশনের দেওয়া এই যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি মানবে? ড. ইউনূসের এই সরকার তো নিয়মিত কোনো সরকার নয়। একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে
দিয়ে তারা চলে যাবে। নতুন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের লোক হবেন। ফলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো তাঁদের মানা বা না-মানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার অবশ্য বলছে, কমিশনগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তাদের মতামত নেবে। এ কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করার জন্য একটা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর কথাও বলেছেন ড. ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও এর কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা। প্রথমে গঠন করা ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুরু হবে এই নতুন কমিশনের কাজ। নতুন এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ড. ইউনূস নিজে। আর তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যত দূর বুঝতে পারছি, ছয়টি কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সেগুলো টিকবে, বাকিগুলো বাদ যাবে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাব।
এতক্ষণ আমি কেবল সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কথা বললাম। এগুলো আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে একেবারে প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ ধাপ। প্রকৃত ঝামেলাটা হয়তো দেখা দেবে সামনে। এই যে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’, আমার বিবেচনায় এটাই হবে কঠিন একটা ধাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব একটা পলিসি আছে, চিন্তা আছে। একেক দলের একেক রকম চিন্তা। সবার চিন্তা এক জায়গায় নিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নিজেদেরও রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক সুস্পষ্ট কিছু বক্তব্য আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর দেড়েক আগে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। সেসব নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে রীতিমতো পাঠচক্রের মতো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত এই ৩১ দফা কি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশন তাদের বিবেচনায় নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, যদি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কি সহজ হবে?
আমার কেন যেন মনে হয়, এই জটিলতাগুলো এড়ানো যেত। প্রতিটি সংস্কার কমিশনে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে কতটুকু কী ভূমিকা রাখতে পারছেন বলা কঠিন, তবে যে দু-একটা নমুনা, বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধির যে নমুনা এরই মধ্যে দেখা গেছে, তাতে হতাশার জন্ম হয়। এ রকম ‘দুধভাত’জাতীয় সদস্যকে যখন ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, আমার তো মনে হয় কমিশনগুলোতে দু-তিনজন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও রাখা যেত। সে ক্ষেত্রে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’ কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।
এ পর্যন্ত গঠিত কমিশনগুলোর চেহারা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে কমিটিগুলোকে একটা ‘সুশীল’ চেহারা দেওয়ার। রাজনীতিবিদদের তারা এই কমিটিতে রাখতে চায়নি। ফলে একটা প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্কার প্রস্তাব রাজনীতিবিদেরা শেষ পর্যন্ত মানবেন কেন? রাজনীতিবিদেরা কি তাহলে সংস্কার করার যোগ্যতা রাখেন না? যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য, তাঁরা সবাই কি খুবই যোগ্য? সংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো ইতিহাস কি আছে এঁদের?
আবার এসব কমিশনের সুশীল সদস্য বা চেয়ারম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখানে এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এ দেশে অবস্থানই করেন না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তাঁরা দেশকে অবলোকন করেন, দেশ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করার ইউটোপিয়ান চিন্তা হয়তো করেন। তাঁদের সেসব চিন্তা কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে? আমাদের জন্য কতটুকু লাগসই হবে? অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথাই ধরা যাক। এই ভদ্রলোক প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু? অথচ তিনিই এই তাবৎ সংস্কার কমিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ কীভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অথচ তিনিই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান! জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রধান হচ্ছে স্বয়ং ড. ইউনূস। আবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস সাহেব যখন এই নতুন কমিশনের সহসভাপতির নাম বলে দেন, তখন বোঝা যায় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো এখানে খুব একটা সময় দিতে পারবেন না, বেশির ভাগ কাজ এই সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজই করবেন। এসব ভেবে আমি আশাবাদী হই, দেশটা তাহলে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক হয়ে যাবে! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাঁর মাস্টারিতে স্বস্তি অনুভব করবে?
এসব প্রশ্ন ও সন্দেহকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে সংস্কারের দিকে।
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

মাসুদ কামাল

সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, এটিই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান করে তুলেছে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকে না। তাই এই সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দিতে হবে, গণতান্ত্রিক কিছু ধারা যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সংবিধানের চেহারাটা এমন দাঁড়াবে, যাতে এই সংবিধানই একজন ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক থাকতে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের অন্য যে কেউ, তিনি যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না থাকেন।
কেবল সংবিধানেই নয়, সংস্কারের দবি উঠেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। হাসিনা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর। এই সময়ে তারা সবকিছুকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ—সবকিছুকেই নিজেদের অনুগত করে নিয়েছিল। কাজেই পরিবর্তন আনতে হবে সেসব ক্ষেত্রেও। দাবিগুলো বিশেষ কোনো একটি গোষ্ঠীর ছিল না, ছিল সবার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করল। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি বিষয়ের সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমে গঠিত কমিশনগুলোকে বলা হলো, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে। পরে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করছি, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব রিপোর্ট আসতে থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট পেলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? তা যে হবে না, সেটা সবাই জানেন। এরপরও থেকে যাবে বেশ কিছু ধাপ। প্রথমত, প্রশ্ন উঠবে—কমিশনের দেওয়া এই যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি মানবে? ড. ইউনূসের এই সরকার তো নিয়মিত কোনো সরকার নয়। একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে
দিয়ে তারা চলে যাবে। নতুন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের লোক হবেন। ফলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো তাঁদের মানা বা না-মানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার অবশ্য বলছে, কমিশনগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তাদের মতামত নেবে। এ কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করার জন্য একটা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর কথাও বলেছেন ড. ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও এর কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা। প্রথমে গঠন করা ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুরু হবে এই নতুন কমিশনের কাজ। নতুন এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ড. ইউনূস নিজে। আর তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যত দূর বুঝতে পারছি, ছয়টি কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সেগুলো টিকবে, বাকিগুলো বাদ যাবে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাব।
এতক্ষণ আমি কেবল সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কথা বললাম। এগুলো আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে একেবারে প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ ধাপ। প্রকৃত ঝামেলাটা হয়তো দেখা দেবে সামনে। এই যে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’, আমার বিবেচনায় এটাই হবে কঠিন একটা ধাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব একটা পলিসি আছে, চিন্তা আছে। একেক দলের একেক রকম চিন্তা। সবার চিন্তা এক জায়গায় নিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নিজেদেরও রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক সুস্পষ্ট কিছু বক্তব্য আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর দেড়েক আগে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। সেসব নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে রীতিমতো পাঠচক্রের মতো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত এই ৩১ দফা কি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশন তাদের বিবেচনায় নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, যদি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কি সহজ হবে?
আমার কেন যেন মনে হয়, এই জটিলতাগুলো এড়ানো যেত। প্রতিটি সংস্কার কমিশনে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে কতটুকু কী ভূমিকা রাখতে পারছেন বলা কঠিন, তবে যে দু-একটা নমুনা, বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধির যে নমুনা এরই মধ্যে দেখা গেছে, তাতে হতাশার জন্ম হয়। এ রকম ‘দুধভাত’জাতীয় সদস্যকে যখন ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, আমার তো মনে হয় কমিশনগুলোতে দু-তিনজন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও রাখা যেত। সে ক্ষেত্রে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’ কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।
এ পর্যন্ত গঠিত কমিশনগুলোর চেহারা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে কমিটিগুলোকে একটা ‘সুশীল’ চেহারা দেওয়ার। রাজনীতিবিদদের তারা এই কমিটিতে রাখতে চায়নি। ফলে একটা প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্কার প্রস্তাব রাজনীতিবিদেরা শেষ পর্যন্ত মানবেন কেন? রাজনীতিবিদেরা কি তাহলে সংস্কার করার যোগ্যতা রাখেন না? যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য, তাঁরা সবাই কি খুবই যোগ্য? সংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো ইতিহাস কি আছে এঁদের?
আবার এসব কমিশনের সুশীল সদস্য বা চেয়ারম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখানে এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এ দেশে অবস্থানই করেন না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তাঁরা দেশকে অবলোকন করেন, দেশ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করার ইউটোপিয়ান চিন্তা হয়তো করেন। তাঁদের সেসব চিন্তা কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে? আমাদের জন্য কতটুকু লাগসই হবে? অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথাই ধরা যাক। এই ভদ্রলোক প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু? অথচ তিনিই এই তাবৎ সংস্কার কমিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ কীভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অথচ তিনিই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান! জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রধান হচ্ছে স্বয়ং ড. ইউনূস। আবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস সাহেব যখন এই নতুন কমিশনের সহসভাপতির নাম বলে দেন, তখন বোঝা যায় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো এখানে খুব একটা সময় দিতে পারবেন না, বেশির ভাগ কাজ এই সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজই করবেন। এসব ভেবে আমি আশাবাদী হই, দেশটা তাহলে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক হয়ে যাবে! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাঁর মাস্টারিতে স্বস্তি অনুভব করবে?
এসব প্রশ্ন ও সন্দেহকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে সংস্কারের দিকে।
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, এটিই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান করে তুলেছে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকে না। তাই এই সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দিতে হবে, গণতান্ত্রিক কিছু ধারা যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সংবিধানের চেহারাটা এমন দাঁড়াবে, যাতে এই সংবিধানই একজন ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক থাকতে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের অন্য যে কেউ, তিনি যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না থাকেন।
কেবল সংবিধানেই নয়, সংস্কারের দবি উঠেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। হাসিনা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর। এই সময়ে তারা সবকিছুকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ—সবকিছুকেই নিজেদের অনুগত করে নিয়েছিল। কাজেই পরিবর্তন আনতে হবে সেসব ক্ষেত্রেও। দাবিগুলো বিশেষ কোনো একটি গোষ্ঠীর ছিল না, ছিল সবার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করল। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি বিষয়ের সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমে গঠিত কমিশনগুলোকে বলা হলো, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে। পরে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করছি, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব রিপোর্ট আসতে থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট পেলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? তা যে হবে না, সেটা সবাই জানেন। এরপরও থেকে যাবে বেশ কিছু ধাপ। প্রথমত, প্রশ্ন উঠবে—কমিশনের দেওয়া এই যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি মানবে? ড. ইউনূসের এই সরকার তো নিয়মিত কোনো সরকার নয়। একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে
দিয়ে তারা চলে যাবে। নতুন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের লোক হবেন। ফলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো তাঁদের মানা বা না-মানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার অবশ্য বলছে, কমিশনগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তাদের মতামত নেবে। এ কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করার জন্য একটা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর কথাও বলেছেন ড. ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও এর কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা। প্রথমে গঠন করা ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুরু হবে এই নতুন কমিশনের কাজ। নতুন এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ড. ইউনূস নিজে। আর তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যত দূর বুঝতে পারছি, ছয়টি কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সেগুলো টিকবে, বাকিগুলো বাদ যাবে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাব।
এতক্ষণ আমি কেবল সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কথা বললাম। এগুলো আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে একেবারে প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ ধাপ। প্রকৃত ঝামেলাটা হয়তো দেখা দেবে সামনে। এই যে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’, আমার বিবেচনায় এটাই হবে কঠিন একটা ধাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব একটা পলিসি আছে, চিন্তা আছে। একেক দলের একেক রকম চিন্তা। সবার চিন্তা এক জায়গায় নিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নিজেদেরও রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক সুস্পষ্ট কিছু বক্তব্য আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর দেড়েক আগে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। সেসব নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে রীতিমতো পাঠচক্রের মতো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত এই ৩১ দফা কি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশন তাদের বিবেচনায় নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, যদি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কি সহজ হবে?
আমার কেন যেন মনে হয়, এই জটিলতাগুলো এড়ানো যেত। প্রতিটি সংস্কার কমিশনে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে কতটুকু কী ভূমিকা রাখতে পারছেন বলা কঠিন, তবে যে দু-একটা নমুনা, বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধির যে নমুনা এরই মধ্যে দেখা গেছে, তাতে হতাশার জন্ম হয়। এ রকম ‘দুধভাত’জাতীয় সদস্যকে যখন ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, আমার তো মনে হয় কমিশনগুলোতে দু-তিনজন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও রাখা যেত। সে ক্ষেত্রে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’ কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।
এ পর্যন্ত গঠিত কমিশনগুলোর চেহারা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে কমিটিগুলোকে একটা ‘সুশীল’ চেহারা দেওয়ার। রাজনীতিবিদদের তারা এই কমিটিতে রাখতে চায়নি। ফলে একটা প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্কার প্রস্তাব রাজনীতিবিদেরা শেষ পর্যন্ত মানবেন কেন? রাজনীতিবিদেরা কি তাহলে সংস্কার করার যোগ্যতা রাখেন না? যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য, তাঁরা সবাই কি খুবই যোগ্য? সংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো ইতিহাস কি আছে এঁদের?
আবার এসব কমিশনের সুশীল সদস্য বা চেয়ারম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখানে এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এ দেশে অবস্থানই করেন না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তাঁরা দেশকে অবলোকন করেন, দেশ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করার ইউটোপিয়ান চিন্তা হয়তো করেন। তাঁদের সেসব চিন্তা কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে? আমাদের জন্য কতটুকু লাগসই হবে? অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথাই ধরা যাক। এই ভদ্রলোক প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু? অথচ তিনিই এই তাবৎ সংস্কার কমিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ কীভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অথচ তিনিই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান! জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রধান হচ্ছে স্বয়ং ড. ইউনূস। আবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস সাহেব যখন এই নতুন কমিশনের সহসভাপতির নাম বলে দেন, তখন বোঝা যায় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো এখানে খুব একটা সময় দিতে পারবেন না, বেশির ভাগ কাজ এই সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজই করবেন। এসব ভেবে আমি আশাবাদী হই, দেশটা তাহলে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক হয়ে যাবে! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাঁর মাস্টারিতে স্বস্তি অনুভব করবে?
এসব প্রশ্ন ও সন্দেহকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে সংস্কারের দিকে।
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক


একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১ দিন আগে
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১ দিন আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১ দিন আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১ দিন আগেরাজিউল হাসান

একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। তা হলো, উষ্ণ হয়ে উঠছে বিশ্ব।
আশাপ্রদ খবরটি হলো, গত ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু। তার নাম আয়ান খান রুহাব। তার বাবা-মা ৫৮০টি গাছ লাগিয়েছেন। শিশু আয়ান তার জীবদ্দশায় যত কার্বন নিঃসরণ করবে, এই গাছগুলো তা শোষণ করে নেবে। আয়ান যদি দেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু হয়, তাহলে বিশ্বের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু কে? সে ভারতের তামিলনাড়ুর আদাভি। ২ বছর বয়সী এই শিশু জন্মানোর আগেই তার বাবা-মা প্রায় ৬ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। এই দুটি উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের জন্য বড় আশার খবর।
কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রচেষ্টার আগে দুঃসংবাদ দুটি নিয়ে আগে কিছু কথা বলি। বিশ্বে এত দিন দুটি জায়গা মশামুক্ত ছিল। এর একটি অ্যান্টার্কটিকা, অপরটি আইসল্যান্ড। এখন রইল বাকি অ্যান্টার্কটিকা। সে হিসেবে বলাই যায়, বিশ্ব এখন মশার কবজায়। মশার কামড় থেকে মানুষ বেশ কয়েক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া অন্যতম। এ ছাড়া জিকা, ফাইলেরিয়া ও ওয়েস্ট নাইল রোগের ভাইরাসও ছড়ায় মশার মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) সংস্থার হালনাগাদ তথ্যমতে, মশা হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে শুধু ম্যালেরিয়ায় প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বের প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ ৪০০ কোটির মতো মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের প্রকোপ বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। জিকার প্রকোপ বেশি আফ্রিকা, আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে। ফাইলেরিয়ার ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের ৪৪টি দেশের অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বই উষ্ণ হচ্ছে। ফলে মশার জন্য পরিবেশ আরও আদর্শ হয়ে উঠছে। উষ্ণ ও আর্দ্র এলাকায় মশার উৎপাত সবচেয়ে বেশি। নতুন গবেষণাগুলো বলছে, আর্কটিক অঞ্চল বাকি বিশ্বের তুলনায় চার গুণ বেশি উষ্ণ হচ্ছে। চলতি বছর আইসল্যান্ড সবচেয়ে বেশি গরমে পুড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আর শীতে সে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নামে তাপমাত্রা। উষ্ণায়নের কারণে এখন দেশটির এই অবস্থা। আগে দেশটি আরও শীতল ছিল।
গবেষকদের তথ্য মতে, আইসল্যান্ডে হিমবাহ গলে যাওয়া, ভেঙে যাওয়ার ঘটনা বেশ আগেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের মাছ ম্যাকেরেল পাওয়া গেছে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
এবার আসা যাক অস্ট্রেলিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলের বিষয়টিতে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ২০টি চিরহরিৎ বনের ওপর গবেষণা করে একটি গবেষণানিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁরা দাবি করেছেন, চিরহরিৎ এই বনগুলো এখন আর আগের মতো কার্বন শোষণ করছে না। বরং তারা কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই বনগুলোয় দাবানলসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে নতুন গাছ জন্মানো কমে গেছে। তার চেয়ে গাছ মরছে বেশি। গাছের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সেসব গাছের দেহাবশেষ থেকে কার্বন নিঃসরণও বেড়ে গেছে। অপর দিকে নতুন গাছের জন্ম কমে যাওয়ায় কার্বন শোষণ কমে গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বনাঞ্চলের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সব চিরহরিৎ বনেই হয়তো এখন এই পরিস্থিতি চলছে। কারণ, চিরহরিৎ বনগুলোর প্রকৃতি একই রকম হয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন আমরা মানুষেরা কী করছি? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কেউ অনুধাবন করতে পারবেন, প্রকৃতিতে একমাত্র মানুষই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রকৃতির বিনাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। আমরা সবাই জানি, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশ ও বায়ুদূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তারপরও এগুলোর নেশা আমরা ছাড়তে পারি না। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর প্রথম মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁর দেশের সরকারের নানা উদ্যোগ হয় বন্ধ করেছেন, না হয় কাটছাঁট করেছেন। তিনি গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণেই খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে তেল-গ্যাস আহরণে উৎসাহ দিয়েছেন।
প্রায় একই ধরনের কাজ করে গেছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনাঞ্চল তাঁর দেশেই। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে আমাজন ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছিলেন অনেকগুলো। একইভাবে বিশ্বের নানা দেশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, না হয় সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির আহরণ। অথচ উষ্ণায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই জীবাশ্ম জ্বালানিই। বিজ্ঞানীরা আমাদের সামনে নানা বিকল্প হাজিরও করেছেন। যেমন সৌরশক্তি, বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু সেসবে আমাদের আগ্রহ নেই। বরং মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর বুক আর কতটা ছিন্নভিন্ন করা যায়, তার প্রচেষ্টা যেন আরও গতি পেয়েছে।
অথচ প্রতিবছরই জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ) বিভিন্ন রাষ্ট্র নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দিতে অনেক ভালো ভালো কথা বলেন নেতারা। তহবিল সংগ্রহে জোর তাগিদ দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু গুটিকয়েক দেশ বাদে বাকি দেশগুলোয় আজ পর্যন্ত সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাটা পর্যন্ত দেখা যায়নি। জাতিসংঘের তহবিলে যে যৎসামান্য অর্থের জোগান আসে, তার প্রয়োগও দেখা যায় না। জাতিসংঘ অবশ্য বেশ আগেই ‘খোঁড়া হাতিতে’ পরিণত হয়েছে। তা না হলে তার সামনেই কীভাবে বিশ্বে এত অস্থিরতা চলতে পারে, নতুন করে যুদ্ধে জড়াতে পারে দেশগুলো, গাজায় কীভাবে গণহত্যা চলতে পারে?
কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়, নেতা, রাষ্ট্র আর বিশ্ব সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। আসন্ন এই বিপদকে রুখতে হলে বিশ্বের প্রতিটা মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে। আর আমরা সবাই জানি, একমাত্র গাছই হলো ‘উষ্ণায়ন নামক রোগটির’ মহৌষধ। সেই মহৌষধ আমাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে। আমরা প্রত্যেকেই কার্বন নিরপেক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি, তাহলে এই বিশ্বটা গাছে ভরে উঠতে খুব বেশি দিন লাগবে না।

একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। তা হলো, উষ্ণ হয়ে উঠছে বিশ্ব।
আশাপ্রদ খবরটি হলো, গত ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু। তার নাম আয়ান খান রুহাব। তার বাবা-মা ৫৮০টি গাছ লাগিয়েছেন। শিশু আয়ান তার জীবদ্দশায় যত কার্বন নিঃসরণ করবে, এই গাছগুলো তা শোষণ করে নেবে। আয়ান যদি দেশের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু হয়, তাহলে বিশ্বের প্রথম কার্বন নিরপেক্ষ শিশু কে? সে ভারতের তামিলনাড়ুর আদাভি। ২ বছর বয়সী এই শিশু জন্মানোর আগেই তার বাবা-মা প্রায় ৬ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। এই দুটি উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের জন্য বড় আশার খবর।
কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রচেষ্টার আগে দুঃসংবাদ দুটি নিয়ে আগে কিছু কথা বলি। বিশ্বে এত দিন দুটি জায়গা মশামুক্ত ছিল। এর একটি অ্যান্টার্কটিকা, অপরটি আইসল্যান্ড। এখন রইল বাকি অ্যান্টার্কটিকা। সে হিসেবে বলাই যায়, বিশ্ব এখন মশার কবজায়। মশার কামড় থেকে মানুষ বেশ কয়েক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া অন্যতম। এ ছাড়া জিকা, ফাইলেরিয়া ও ওয়েস্ট নাইল রোগের ভাইরাসও ছড়ায় মশার মাধ্যমে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ (সিডিসি) সংস্থার হালনাগাদ তথ্যমতে, মশা হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে শুধু ম্যালেরিয়ায় প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বের প্রায় ৩২০ কোটি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশি। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ ৪০০ কোটির মতো মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের প্রকোপ বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। জিকার প্রকোপ বেশি আফ্রিকা, আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে। ফাইলেরিয়ার ঝুঁকিতে আছে বিশ্বের ৪৪টি দেশের অন্তত ৫ কোটি মানুষ।
গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বই উষ্ণ হচ্ছে। ফলে মশার জন্য পরিবেশ আরও আদর্শ হয়ে উঠছে। উষ্ণ ও আর্দ্র এলাকায় মশার উৎপাত সবচেয়ে বেশি। নতুন গবেষণাগুলো বলছে, আর্কটিক অঞ্চল বাকি বিশ্বের তুলনায় চার গুণ বেশি উষ্ণ হচ্ছে। চলতি বছর আইসল্যান্ড সবচেয়ে বেশি গরমে পুড়েছে। বর্তমানে দেশটিতে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। আর শীতে সে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায়। মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নামে তাপমাত্রা। উষ্ণায়নের কারণে এখন দেশটির এই অবস্থা। আগে দেশটি আরও শীতল ছিল।
গবেষকদের তথ্য মতে, আইসল্যান্ডে হিমবাহ গলে যাওয়া, ভেঙে যাওয়ার ঘটনা বেশ আগেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের মাছ ম্যাকেরেল পাওয়া গেছে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
এবার আসা যাক অস্ট্রেলিয়ার চিরহরিৎ বনাঞ্চলের বিষয়টিতে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ২০টি চিরহরিৎ বনের ওপর গবেষণা করে একটি গবেষণানিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে তাঁরা দাবি করেছেন, চিরহরিৎ এই বনগুলো এখন আর আগের মতো কার্বন শোষণ করছে না। বরং তারা কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই বনগুলোয় দাবানলসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা কারণে নতুন গাছ জন্মানো কমে গেছে। তার চেয়ে গাছ মরছে বেশি। গাছের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সেসব গাছের দেহাবশেষ থেকে কার্বন নিঃসরণও বেড়ে গেছে। অপর দিকে নতুন গাছের জন্ম কমে যাওয়ায় কার্বন শোষণ কমে গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের বনাঞ্চলের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সব চিরহরিৎ বনেই হয়তো এখন এই পরিস্থিতি চলছে। কারণ, চিরহরিৎ বনগুলোর প্রকৃতি একই রকম হয়।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন আমরা মানুষেরা কী করছি? একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কেউ অনুধাবন করতে পারবেন, প্রকৃতিতে একমাত্র মানুষই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রকৃতির বিনাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। অনেকটা নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো। আমরা সবাই জানি, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশ ও বায়ুদূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তারপরও এগুলোর নেশা আমরা ছাড়তে পারি না। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর প্রথম মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁর দেশের সরকারের নানা উদ্যোগ হয় বন্ধ করেছেন, না হয় কাটছাঁট করেছেন। তিনি গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণেই খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে তেল-গ্যাস আহরণে উৎসাহ দিয়েছেন।
প্রায় একই ধরনের কাজ করে গেছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনাঞ্চল তাঁর দেশেই। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে আমাজন ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছিলেন অনেকগুলো। একইভাবে বিশ্বের নানা দেশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, না হয় সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে জীবাশ্ম জ্বালানির আহরণ। অথচ উষ্ণায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই জীবাশ্ম জ্বালানিই। বিজ্ঞানীরা আমাদের সামনে নানা বিকল্প হাজিরও করেছেন। যেমন সৌরশক্তি, বাতাসের শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু সেসবে আমাদের আগ্রহ নেই। বরং মাটি খুঁড়ে পৃথিবীর বুক আর কতটা ছিন্নভিন্ন করা যায়, তার প্রচেষ্টা যেন আরও গতি পেয়েছে।
অথচ প্রতিবছরই জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ) বিভিন্ন রাষ্ট্র নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়। জলবায়ু পরিবর্তন রুখে দিতে অনেক ভালো ভালো কথা বলেন নেতারা। তহবিল সংগ্রহে জোর তাগিদ দেয় জাতিসংঘ। কিন্তু গুটিকয়েক দেশ বাদে বাকি দেশগুলোয় আজ পর্যন্ত সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাটা পর্যন্ত দেখা যায়নি। জাতিসংঘের তহবিলে যে যৎসামান্য অর্থের জোগান আসে, তার প্রয়োগও দেখা যায় না। জাতিসংঘ অবশ্য বেশ আগেই ‘খোঁড়া হাতিতে’ পরিণত হয়েছে। তা না হলে তার সামনেই কীভাবে বিশ্বে এত অস্থিরতা চলতে পারে, নতুন করে যুদ্ধে জড়াতে পারে দেশগুলো, গাজায় কীভাবে গণহত্যা চলতে পারে?
কাজেই এ কথা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়, নেতা, রাষ্ট্র আর বিশ্ব সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। আসন্ন এই বিপদকে রুখতে হলে বিশ্বের প্রতিটা মানুষকেই উদ্যোগী হতে হবে। আর আমরা সবাই জানি, একমাত্র গাছই হলো ‘উষ্ণায়ন নামক রোগটির’ মহৌষধ। সেই মহৌষধ আমাদের সাধ্যের মধ্যেই আছে। আমরা প্রত্যেকেই কার্বন নিরপেক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করি, তাহলে এই বিশ্বটা গাছে ভরে উঠতে খুব বেশি দিন লাগবে না।


সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১ দিন আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১ দিন আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১ দিন আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে।
দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে জমে উঠেছিল নীরব হত্যার ইতিহাস। অসলো চুক্তি ছিল সেই মুখোশের শীর্ষ অলংকার—যেখানে কূটনৈতিক কলমের আড়ালে চাপা পড়েছিল রক্ত, অবরোধ আর পরাধীনতার ক্রন্দন। বিশ্বের চোখে সেটি ছিল শান্তির মাইলফলক; কিন্তু গাজার শিশুর চোখে, হেবরনের মাতৃহারা নারীর কণ্ঠে আর পশ্চিম তীরের বালুময় মাটিতে সেটি কেবল এক নিঃশব্দ প্রতারণা। এই শান্তির মুখোশের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা—দখলদারি, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার দীর্ঘ ছায়া।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিধানে ‘শান্তি’ মানে ছিল আনুগত্য—এমন এক নতজানু নেতৃত্ব, যারা স্বাধীনতার দাবিকে গিলে ফেলে ‘সংলাপ’-এর নামে আত্মসমর্পণ করবে। সেই ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ হয়ে উঠেছিল দখলের এক নতুন রূপ—এক প্রাতিষ্ঠানিক প্রহসন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শান্তি শিল্প’। ফিলিস্তিনকে নিয়ে নানা সময়ে নানা সংলাপ হয়েছে, কনফারেন্সে বাজানো হয়েছে করতালি, কিন্তু বাস্তবে গড়ে উঠেছে আরও উঁচু প্রাচীর। ইয়াসির আরাফাত, যিনি একদা মুক্তির প্রতীক ছিলেন, সেই প্রহসনের বৃত্তে প্রবেশ করেছিলেন আশায় যে আলোচনার টেবিলে হয়তো রক্তের ইতিহাসের অবসান ঘটবে। কিন্তু নির্মম সত্য হলো—তিনি যত ছাড় দিয়েছেন, তত বেড়েছে বন্দিত্বের পরিধি। তাঁর জনগণ পেয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, চেকপোস্টের দীর্ঘ সারি আর ছিন্নভিন্ন মানচিত্র। অসলো চুক্তি তাই হয়ে উঠেছিল প্রতারণার দলিল। এখন সময় এসেছে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার: আলোচনার নয়, আত্মত্যাগের আগুনেই জেগে উঠতে হবে ফিলিস্তিনবাসীকে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই।
১৯৫০-এর দশকে যখন আরব জাতিরা পরাজয়ের ভারে নুয়ে পড়েছিল, তখন এই সংকীর্ণ উপত্যকার বালুময় প্রান্তরে জন্ম নেয় ফেদায়িন আন্দোলন—মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গে প্রস্তুত এক প্রজন্ম। সমাজতান্ত্রিক স্লোগান, ইসলামি বিশ্বাস আর মুক্তিকামী রক্ত মিলেমিশে গড়ে তোলে এক আগুনে জনপদ—গাজা। যেখানে পশ্চিম তীরের শহরগুলো দমনযন্ত্র ও প্রশাসনিক বেষ্টনীর নিচে নিস্তব্ধ, সেখানে গাজা ছিল অগ্নিদীপ্ত দুর্গের মতো—এক ক্ষুদ্র স্পার্টা, যে জানে, পরাজয় মানে দাসত্ব, আর প্রতিরোধ মানে জীবন।
২০০৬ সালে হামাসের নির্বাচনী বিজয়ের পর শুরু হয় আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম অবরোধ—একটি নগরীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় পৃথিবী থেকে, যেন তাকে নিঃশেষ করা যায় ক্ষুধা, অন্ধকার ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কিন্তু গাজার মানুষ আত্মসমর্পণ করেনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের ইট দিয়ে তারা আবার ঘর তুলেছে; ভাঙা স্কুলের দেয়ালে লিখেছে বর্ণমালা; শত্রুর ফেলে যাওয়া গোলা দিয়ে বানিয়েছে নিজের অস্ত্র। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়—এটি এক জাতির হৃদ্স্পন্দন, যা রক্তে, মাটিতে, শিশুর আঁকায় আর মায়ের অশ্রুতে মিশে আছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজ অবধি চলছে গাজার ওপর বোমা নিক্ষেপ। কিছু দিন আগেও যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেটা আসলে ছিল একটা প্রতারণার ফাঁদ। অবশ্য কিছু দিন বোমা নিক্ষেপ বন্ধ থাকলেও, আবারও শুরু হয়েছে আগের মতো পরিস্থিতি।
তবুও গাজার মানুষ নত হচ্ছে না। মৃত্যুর ছায়াতেও তারা খুঁজে নিয়েছে জীবনের আলো। যে শহরে আকাশ মানে এখন ড্রোনের গুঞ্জন, সেখানেও মায়েরা শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলে, ‘আমরা মরে যাব, কিন্তু হার মানব না।’ এই বাক্য কোনো সামরিক কৌশল নয়—এটি এক আত্মিক প্রতিজ্ঞা, এক জাতির পুনর্জন্মের ঘোষণা। ‘যে জাতি মৃত্যুকেও অবরোধ করতে শেখে, তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি দমন করতে পারে না।’
ইতিহাসে কিছু যুদ্ধ শুধু ধ্বংস নয়—তারা হয়ে ওঠে এক জাতির আত্মপরিচয়ের পুনর্লিখন। গাজার যুদ্ধ তেমনই এক অধ্যায়। ইসরায়েল এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে বর্ষণ করেছে দুই লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক—ধ্বংস করেছে শহর, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির। কিন্তু বিজয়ের মুকুট আজ তাদের মাথায় নয়। গাজার ধূলি আর ধোঁয়ার মধ্যেই ফিলিস্তিনের পতাকাই উড়ছে—অমর প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। দুই হাজারেরও বেশি সামরিক যান ভস্মীভূত, শত শত ‘মেরকাভা’ ট্যাংক ইতিহাসের জঞ্জালে। যা করতে পারেনি কোনো আরব সেনাবাহিনী, তা করেছে অবরুদ্ধ গাজার মানুষ—নিজেদের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
আজ গাজার মাটি পুরো আরব জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক। ইসরায়েলের নিজস্ব ইতিহাসবিদ ও সেনা কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন—গাজায় তাঁরা কেবল ব্যর্থ নয়, পরাজিত। গাজার মানুষ পুনরুদ্ধার করেছে তিনটি সত্য—আত্মসম্মান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জাতিসত্তা। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়, কোনো মতবাদের নয়—এটি ফিলিস্তিন নামক আত্মার জয়গান, যা রক্তে লেখা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান। গাজার ধ্বংসস্তূপ তাই শুধু যুদ্ধের সাক্ষী নয়; এটি নবজাগরণের প্রতীক—এক জাতির পুনর্জন্ম, যে জাতি জানে, ইতিহাসের শেষ কথা বলে তারাই, যারা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে।
ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্ম বুঝে গেছে, স্বাধীনতা চাওয়া যায় না—অর্জন করতে হয়। গাজা প্রমাণ করেছে, প্রতিরোধই একমাত্র ভাষা যা দখলদার বুঝতে পারে—এক ভাষা যেখানে শব্দ নেই, আছে আগুন; নেই বক্তৃতা, আছে আত্মত্যাগের সুর। যে নগরী মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়েছে, সেখান থেকেই উঠেছে জীবনবোধের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’ এই বাক্য কেবল এক জাতির নয়—এটি পুরো মানবজাতির বিবেকের উচ্চারণ। কারণ, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে সভ্যতার ভণ্ড শান্তিনীতি, আর উঠে এসেছে এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। যদি কেউ প্রশ্ন করে—‘শেষ পর্যন্ত কে জিতেছে?’ উত্তরটি লেখা আছে গাজার আকাশেই—যেখানে বোমার ধোঁয়া সরে গেলে দেখা যায় এক পতাকা, রক্তে ভেজা কিন্তু উড়ছে অবিচল; যেখানে প্রতিটি শিশুর চোখে প্রতিফলিত হয় সেই অমর ঘোষণা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’

হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে।
দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে জমে উঠেছিল নীরব হত্যার ইতিহাস। অসলো চুক্তি ছিল সেই মুখোশের শীর্ষ অলংকার—যেখানে কূটনৈতিক কলমের আড়ালে চাপা পড়েছিল রক্ত, অবরোধ আর পরাধীনতার ক্রন্দন। বিশ্বের চোখে সেটি ছিল শান্তির মাইলফলক; কিন্তু গাজার শিশুর চোখে, হেবরনের মাতৃহারা নারীর কণ্ঠে আর পশ্চিম তীরের বালুময় মাটিতে সেটি কেবল এক নিঃশব্দ প্রতারণা। এই শান্তির মুখোশের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা—দখলদারি, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার দীর্ঘ ছায়া।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিধানে ‘শান্তি’ মানে ছিল আনুগত্য—এমন এক নতজানু নেতৃত্ব, যারা স্বাধীনতার দাবিকে গিলে ফেলে ‘সংলাপ’-এর নামে আত্মসমর্পণ করবে। সেই ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ হয়ে উঠেছিল দখলের এক নতুন রূপ—এক প্রাতিষ্ঠানিক প্রহসন, যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শান্তি শিল্প’। ফিলিস্তিনকে নিয়ে নানা সময়ে নানা সংলাপ হয়েছে, কনফারেন্সে বাজানো হয়েছে করতালি, কিন্তু বাস্তবে গড়ে উঠেছে আরও উঁচু প্রাচীর। ইয়াসির আরাফাত, যিনি একদা মুক্তির প্রতীক ছিলেন, সেই প্রহসনের বৃত্তে প্রবেশ করেছিলেন আশায় যে আলোচনার টেবিলে হয়তো রক্তের ইতিহাসের অবসান ঘটবে। কিন্তু নির্মম সত্য হলো—তিনি যত ছাড় দিয়েছেন, তত বেড়েছে বন্দিত্বের পরিধি। তাঁর জনগণ পেয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, চেকপোস্টের দীর্ঘ সারি আর ছিন্নভিন্ন মানচিত্র। অসলো চুক্তি তাই হয়ে উঠেছিল প্রতারণার দলিল। এখন সময় এসেছে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার: আলোচনার নয়, আত্মত্যাগের আগুনেই জেগে উঠতে হবে ফিলিস্তিনবাসীকে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই।
১৯৫০-এর দশকে যখন আরব জাতিরা পরাজয়ের ভারে নুয়ে পড়েছিল, তখন এই সংকীর্ণ উপত্যকার বালুময় প্রান্তরে জন্ম নেয় ফেদায়িন আন্দোলন—মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গে প্রস্তুত এক প্রজন্ম। সমাজতান্ত্রিক স্লোগান, ইসলামি বিশ্বাস আর মুক্তিকামী রক্ত মিলেমিশে গড়ে তোলে এক আগুনে জনপদ—গাজা। যেখানে পশ্চিম তীরের শহরগুলো দমনযন্ত্র ও প্রশাসনিক বেষ্টনীর নিচে নিস্তব্ধ, সেখানে গাজা ছিল অগ্নিদীপ্ত দুর্গের মতো—এক ক্ষুদ্র স্পার্টা, যে জানে, পরাজয় মানে দাসত্ব, আর প্রতিরোধ মানে জীবন।
২০০৬ সালে হামাসের নির্বাচনী বিজয়ের পর শুরু হয় আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম অবরোধ—একটি নগরীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় পৃথিবী থেকে, যেন তাকে নিঃশেষ করা যায় ক্ষুধা, অন্ধকার ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। কিন্তু গাজার মানুষ আত্মসমর্পণ করেনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের ইট দিয়ে তারা আবার ঘর তুলেছে; ভাঙা স্কুলের দেয়ালে লিখেছে বর্ণমালা; শত্রুর ফেলে যাওয়া গোলা দিয়ে বানিয়েছে নিজের অস্ত্র। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়—এটি এক জাতির হৃদ্স্পন্দন, যা রক্তে, মাটিতে, শিশুর আঁকায় আর মায়ের অশ্রুতে মিশে আছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আজ অবধি চলছে গাজার ওপর বোমা নিক্ষেপ। কিছু দিন আগেও যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেটা আসলে ছিল একটা প্রতারণার ফাঁদ। অবশ্য কিছু দিন বোমা নিক্ষেপ বন্ধ থাকলেও, আবারও শুরু হয়েছে আগের মতো পরিস্থিতি।
তবুও গাজার মানুষ নত হচ্ছে না। মৃত্যুর ছায়াতেও তারা খুঁজে নিয়েছে জীবনের আলো। যে শহরে আকাশ মানে এখন ড্রোনের গুঞ্জন, সেখানেও মায়েরা শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলে, ‘আমরা মরে যাব, কিন্তু হার মানব না।’ এই বাক্য কোনো সামরিক কৌশল নয়—এটি এক আত্মিক প্রতিজ্ঞা, এক জাতির পুনর্জন্মের ঘোষণা। ‘যে জাতি মৃত্যুকেও অবরোধ করতে শেখে, তাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি দমন করতে পারে না।’
ইতিহাসে কিছু যুদ্ধ শুধু ধ্বংস নয়—তারা হয়ে ওঠে এক জাতির আত্মপরিচয়ের পুনর্লিখন। গাজার যুদ্ধ তেমনই এক অধ্যায়। ইসরায়েল এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে বর্ষণ করেছে দুই লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক—ধ্বংস করেছে শহর, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির। কিন্তু বিজয়ের মুকুট আজ তাদের মাথায় নয়। গাজার ধূলি আর ধোঁয়ার মধ্যেই ফিলিস্তিনের পতাকাই উড়ছে—অমর প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। দুই হাজারেরও বেশি সামরিক যান ভস্মীভূত, শত শত ‘মেরকাভা’ ট্যাংক ইতিহাসের জঞ্জালে। যা করতে পারেনি কোনো আরব সেনাবাহিনী, তা করেছে অবরুদ্ধ গাজার মানুষ—নিজেদের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
আজ গাজার মাটি পুরো আরব জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক। ইসরায়েলের নিজস্ব ইতিহাসবিদ ও সেনা কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন—গাজায় তাঁরা কেবল ব্যর্থ নয়, পরাজিত। গাজার মানুষ পুনরুদ্ধার করেছে তিনটি সত্য—আত্মসম্মান, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জাতিসত্তা। এই প্রতিরোধ কোনো দলের নয়, কোনো মতবাদের নয়—এটি ফিলিস্তিন নামক আত্মার জয়গান, যা রক্তে লেখা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান। গাজার ধ্বংসস্তূপ তাই শুধু যুদ্ধের সাক্ষী নয়; এটি নবজাগরণের প্রতীক—এক জাতির পুনর্জন্ম, যে জাতি জানে, ইতিহাসের শেষ কথা বলে তারাই, যারা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে।
ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্ম বুঝে গেছে, স্বাধীনতা চাওয়া যায় না—অর্জন করতে হয়। গাজা প্রমাণ করেছে, প্রতিরোধই একমাত্র ভাষা যা দখলদার বুঝতে পারে—এক ভাষা যেখানে শব্দ নেই, আছে আগুন; নেই বক্তৃতা, আছে আত্মত্যাগের সুর। যে নগরী মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়েছে, সেখান থেকেই উঠেছে জীবনবোধের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’ এই বাক্য কেবল এক জাতির নয়—এটি পুরো মানবজাতির বিবেকের উচ্চারণ। কারণ, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে সভ্যতার ভণ্ড শান্তিনীতি, আর উঠে এসেছে এক নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। যদি কেউ প্রশ্ন করে—‘শেষ পর্যন্ত কে জিতেছে?’ উত্তরটি লেখা আছে গাজার আকাশেই—যেখানে বোমার ধোঁয়া সরে গেলে দেখা যায় এক পতাকা, রক্তে ভেজা কিন্তু উড়ছে অবিচল; যেখানে প্রতিটি শিশুর চোখে প্রতিফলিত হয় সেই অমর ঘোষণা—‘আমরা আছি, আমরা থাকব।’


সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১ দিন আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১ দিন আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১ দিন আগেআব্দুর রহমান

প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো। যদি আমরা রাশিয়াকে রুখতে পশ্চিমা বিশ্বের তোড়জোড় দেখি, তাহলেই বুঝব—তেল এখনো কৌশলগত অস্ত্র। কিন্তু সেই অবস্থাও দ্রুত বদলাচ্ছে। ক্রমেই তেলের জায়গা নিচ্ছে তথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় ক্ষমতার ভারসাম্য সব সময়ই প্রযুক্তির সীমানা দিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। যে প্রথম লোহা গলিয়েছে, সে-ই রাজ্য গড়েছে। যে প্রথম বন্দুক বানিয়েছে, সে-ই সাম্রাজ্য চালিয়েছে। আর এখন—যে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে, সে-ই পুরো সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেবে। ২১ শতকের ভূ-রাজনীতিতে ক্ষমতা ক্রমেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ডেটা, অ্যালগরিদম আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতায়। এআই-ই হয়ে উঠছে আগামী দিনের নতুন ‘পারমাণবিক বোমা।’ যার কাছে এই ‘অস্ত্র’ থাকবে, তথ্য থাকবে, আগামীর বিশ্ব থাকবে তারই পদতলে।
আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর একটি—ডেটা। আর এর পরিচালনার ইঞ্জিন ‘অ্যালগরিদম।’ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নিক বোস্ট্রম লিখেছিলেন, ‘যে মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবমস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে, সেই মুহূর্তে মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে কাদের হাতে সেই শক্তি থাকবে তার ওপর।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো হয়তো সেই অবস্থানে যায়নি, কিন্তু এরই মধ্যে তা বিশ্বরাজনীতির নয়া ‘হট জোনে’ পরিণত হয়েছে। একে শুধু প্রযুক্তিগত বিপ্লব বলা যায় না; বরং এটি ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোসেফ নাই বলেছেন, যে রাষ্ট্র তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভারসাম্য তার হাতেই থাকবে। বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে বর্তমান বিশ্বের দুই শীর্ষ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানও প্রবেশ করেছে এই প্রতিযোগিতায়।
এআই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ধারণাও পাল্টে গেছে। এখন যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ নয়, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মেশিন। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চালু করে জয়েন্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টার (জেএআইসি), যার লক্ষ্য যুদ্ধক্ষেত্রে এআই ব্যবহার বাড়ানো। পরে এটি একীভূত হয় চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফিসের (সিডিএও) সঙ্গে, যা এখন পেন্টাগনের এআই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘প্রজেক্ট মেভেন’-এর উদ্যোগে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে হাজারো ঘণ্টার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা হয় কয়েক সেকেন্ডে।
অন্যদিকে, চীনও বসে নেই। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ২০১৭ সালে ঘোষণা দেন ‘নিউ জেনারেশন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের।’ যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীন হবে বিশ্বের প্রধান এআই শক্তি। দেশটির সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি এখন ‘ইন্টেলিজেন্টাইজড ওয়ারফেয়ার’ ধারণার ওপর কাজ করছে। এই ধারণা অনুযায়ী, ভবিষ্যতের যুদ্ধ মানবশক্তি নয়, তথ্যশক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত রোবট ডগ, বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করার কাজে লেগে পড়েছে। এসব কাজে গতি আনতে চীন তাদের ‘সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়’ নীতির মাধ্যমে বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন বাইদু, আলিবাবা ও টেনসেন্টকে সরাসরি প্রতিরক্ষা গবেষণায় যুক্ত করেছে।
নিজ দেশে নৈতিকতার কথা বললেও ওরাকল, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, স্টারলিংক, পলান্টির, ক্লিয়ারভিউয়ের মতো মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ইউক্রেনকে তাদের ‘নেক্সট জেনারেশন ওয়ারফেয়ারের’ প্রযুক্তিভিত্তিক অস্ত্র পরীক্ষার ‘এআই ওয়ার ল্যাবে’ পরিণত করেছে। তবে বিষয়টি কেবল পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজায় আরবেল নামক এআই–চালিত এক ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে।
তাই বলা যায়, বিশ্ব নতুন এক ডিজিটাল শীতল যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অস্ত্র হলো ডেটা, যুদ্ধক্ষেত্র হলো ক্লাউড, আর সৈনিকের নাম এআই। এর লক্ষণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনে মার্কিন উৎপাদিত চিপ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বিপরীতে চিপ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে চীন।
এ তো গেল ছোট উদাহরণ। বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো এআই নিয়ে মাঠে নেমে যুদ্ধ করছে না, কিন্তু তারা এই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেই চলেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি এআই খাতে বিনিয়োগ ছিল ১০৯.১ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের ৯.৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে গবেষণায় কিন্তু এগিয়ে চীন। দেশটি ২০১৪-২০২৩ পর্যন্ত ৩৮,২১০টি জেনারেটিভ এআই সম্পর্কিত আবিষ্কার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৬,২৭৬টির তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, চীন প্রায় ৮.২ বিলিয়ন ডলারের রাষ্ট্রীয় তহবিল ঘোষণা করেছে, যা এআই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সালের মধ্যে এআই উন্নয়নে ২০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সও এআই উন্নয়নে ১০৯ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই খাতে নীতি ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো শক্তিশালী করতে চাইলেও তারা উদ্ভাবনে পিছিয়ে আছে এবং বাজারে তার প্রভাব কম। এর বাইরে, আগামী দিনে ব্যবসায় বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠতে যাচ্ছে ডেটা সেন্টার। এমনকি দুনিয়ার বুক থেকে ডেটা সেন্টার মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়ার নীরব এক প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
এআই এখনো হয়তো ব্যাপকভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়নি। কিন্তু এমন দিন দেরি নয়, যেখানে আমরা মানুষের পরিবর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে মেশিন দেখতে পাব। চীনের রোবট ডগ, ইসরায়েলের এআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি। ফলে, এটি স্পষ্ট যে যত সময় যাবে—এআইকে যুদ্ধক্ষেত্রে তো বটেই, কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। এই আশঙ্কায় ‘এআই গডফাদার’ খ্যাত জিওফ্রে হিনটন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো ধনী দেশ গরিব দেশ আক্রমণ করতে চায়, তবে তাদের বড় সুবিধা দেবে লেথাল অটোনমাস ওয়েপনস বা স্বচালিত স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র।’
তবে পদার্থবিদ ও গবেষক ম্যাক্স টেগমার্ক সতর্ক করেছেন, ‘যে মুহূর্তে মেশিন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে, তখনই যুদ্ধ মানবিক সীমা ছাড়িয়ে যাবে।’ যার প্রমাণ আমরা গাজায় পেয়েছি। মানবিকতার সব উদাহরণ সেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তবু বড় শক্তিগুলো এখনো প্রতিযোগিতায় বুঁদ হয়ে আছে। কারণ, যে দেশ আগে এআই সামরিক ব্যবহারে এগিয়ে যাবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার মানচিত্র সে-ই আঁকবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যৎ বিশ্ববাণিজ্যের গতিপথও অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই এআই দিয়েই।

প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো। যদি আমরা রাশিয়াকে রুখতে পশ্চিমা বিশ্বের তোড়জোড় দেখি, তাহলেই বুঝব—তেল এখনো কৌশলগত অস্ত্র। কিন্তু সেই অবস্থাও দ্রুত বদলাচ্ছে। ক্রমেই তেলের জায়গা নিচ্ছে তথ্য এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।
মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় ক্ষমতার ভারসাম্য সব সময়ই প্রযুক্তির সীমানা দিয়ে নির্ধারিত হয়েছে। যে প্রথম লোহা গলিয়েছে, সে-ই রাজ্য গড়েছে। যে প্রথম বন্দুক বানিয়েছে, সে-ই সাম্রাজ্য চালিয়েছে। আর এখন—যে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে, সে-ই পুরো সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেবে। ২১ শতকের ভূ-রাজনীতিতে ক্ষমতা ক্রমেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ডেটা, অ্যালগরিদম আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতায়। এআই-ই হয়ে উঠছে আগামী দিনের নতুন ‘পারমাণবিক বোমা।’ যার কাছে এই ‘অস্ত্র’ থাকবে, তথ্য থাকবে, আগামীর বিশ্ব থাকবে তারই পদতলে।
আজকের দুনিয়ায় সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর একটি—ডেটা। আর এর পরিচালনার ইঞ্জিন ‘অ্যালগরিদম।’ ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নিক বোস্ট্রম লিখেছিলেন, ‘যে মুহূর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবমস্তিষ্ককে ছাড়িয়ে যাবে, সেই মুহূর্তে মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে কাদের হাতে সেই শক্তি থাকবে তার ওপর।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো হয়তো সেই অবস্থানে যায়নি, কিন্তু এরই মধ্যে তা বিশ্বরাজনীতির নয়া ‘হট জোনে’ পরিণত হয়েছে। একে শুধু প্রযুক্তিগত বিপ্লব বলা যায় না; বরং এটি ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোসেফ নাই বলেছেন, যে রাষ্ট্র তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভারসাম্য তার হাতেই থাকবে। বিষয়টি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে বর্তমান বিশ্বের দুই শীর্ষ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানও প্রবেশ করেছে এই প্রতিযোগিতায়।
এআই বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ধারণাও পাল্টে গেছে। এখন যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ নয়, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মেশিন। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে চালু করে জয়েন্ট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টার (জেএআইসি), যার লক্ষ্য যুদ্ধক্ষেত্রে এআই ব্যবহার বাড়ানো। পরে এটি একীভূত হয় চিফ ডিজিটাল অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফিসের (সিডিএও) সঙ্গে, যা এখন পেন্টাগনের এআই কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ‘প্রজেক্ট মেভেন’-এর উদ্যোগে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে হাজারো ঘণ্টার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা হয় কয়েক সেকেন্ডে।
অন্যদিকে, চীনও বসে নেই। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ২০১৭ সালে ঘোষণা দেন ‘নিউ জেনারেশন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের।’ যেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীন হবে বিশ্বের প্রধান এআই শক্তি। দেশটির সেনাবাহিনী বা পিপলস লিবারেশন আর্মি এখন ‘ইন্টেলিজেন্টাইজড ওয়ারফেয়ার’ ধারণার ওপর কাজ করছে। এই ধারণা অনুযায়ী, ভবিষ্যতের যুদ্ধ মানবশক্তি নয়, তথ্যশক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত রোবট ডগ, বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করার কাজে লেগে পড়েছে। এসব কাজে গতি আনতে চীন তাদের ‘সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়’ নীতির মাধ্যমে বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন বাইদু, আলিবাবা ও টেনসেন্টকে সরাসরি প্রতিরক্ষা গবেষণায় যুক্ত করেছে।
নিজ দেশে নৈতিকতার কথা বললেও ওরাকল, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, স্টারলিংক, পলান্টির, ক্লিয়ারভিউয়ের মতো মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ইউক্রেনকে তাদের ‘নেক্সট জেনারেশন ওয়ারফেয়ারের’ প্রযুক্তিভিত্তিক অস্ত্র পরীক্ষার ‘এআই ওয়ার ল্যাবে’ পরিণত করেছে। তবে বিষয়টি কেবল পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইসরায়েল এরই মধ্যে গাজায় আরবেল নামক এআই–চালিত এক ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে।
তাই বলা যায়, বিশ্ব নতুন এক ডিজিটাল শীতল যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অস্ত্র হলো ডেটা, যুদ্ধক্ষেত্র হলো ক্লাউড, আর সৈনিকের নাম এআই। এর লক্ষণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনে মার্কিন উৎপাদিত চিপ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বিপরীতে চিপ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়েছে চীন।
এ তো গেল ছোট উদাহরণ। বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র এখনো হয়তো এআই নিয়ে মাঠে নেমে যুদ্ধ করছে না, কিন্তু তারা এই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেই চলেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি এআই খাতে বিনিয়োগ ছিল ১০৯.১ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের ৯.৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। তবে গবেষণায় কিন্তু এগিয়ে চীন। দেশটি ২০১৪-২০২৩ পর্যন্ত ৩৮,২১০টি জেনারেটিভ এআই সম্পর্কিত আবিষ্কার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৬,২৭৬টির তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, চীন প্রায় ৮.২ বিলিয়ন ডলারের রাষ্ট্রীয় তহবিল ঘোষণা করেছে, যা এআই উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সালের মধ্যে এআই উন্নয়নে ২০০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্সও এআই উন্নয়নে ১০৯ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই খাতে নীতি ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো শক্তিশালী করতে চাইলেও তারা উদ্ভাবনে পিছিয়ে আছে এবং বাজারে তার প্রভাব কম। এর বাইরে, আগামী দিনে ব্যবসায় বিনিয়োগের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠতে যাচ্ছে ডেটা সেন্টার। এমনকি দুনিয়ার বুক থেকে ডেটা সেন্টার মহাশূন্যে নিয়ে যাওয়ার নীরব এক প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
এআই এখনো হয়তো ব্যাপকভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়নি। কিন্তু এমন দিন দেরি নয়, যেখানে আমরা মানুষের পরিবর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে মেশিন দেখতে পাব। চীনের রোবট ডগ, ইসরায়েলের এআই-চালিত অস্ত্র ব্যবস্থার কথা আমরা বলেছি। ফলে, এটি স্পষ্ট যে যত সময় যাবে—এআইকে যুদ্ধক্ষেত্রে তো বটেই, কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। এই আশঙ্কায় ‘এআই গডফাদার’ খ্যাত জিওফ্রে হিনটন বলেছিলেন, ‘যদি কোনো ধনী দেশ গরিব দেশ আক্রমণ করতে চায়, তবে তাদের বড় সুবিধা দেবে লেথাল অটোনমাস ওয়েপনস বা স্বচালিত স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র।’
তবে পদার্থবিদ ও গবেষক ম্যাক্স টেগমার্ক সতর্ক করেছেন, ‘যে মুহূর্তে মেশিন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে, তখনই যুদ্ধ মানবিক সীমা ছাড়িয়ে যাবে।’ যার প্রমাণ আমরা গাজায় পেয়েছি। মানবিকতার সব উদাহরণ সেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তবু বড় শক্তিগুলো এখনো প্রতিযোগিতায় বুঁদ হয়ে আছে। কারণ, যে দেশ আগে এআই সামরিক ব্যবহারে এগিয়ে যাবে, ভবিষ্যতের ক্ষমতার মানচিত্র সে-ই আঁকবে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যৎ বিশ্ববাণিজ্যের গতিপথও অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই এআই দিয়েই।


সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১ দিন আগে
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১ দিন আগে
আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন। যিনি কলা দিয়েছেন ঘুষ হিসেবে, তিনি অবশ্য বলেছেন কলার সঙ্গে ১০ হাজার টাকাও দিতে হয়েছে ঘুষ গ্রহণকারীকে। ফলে জমে গেছে খেলা। স্বীকারোক্তির কারণে বদলি হয়েছেন যশোর জেলা পরিষদের সেই উচ্চমান সহকারী। ২৬ অক্টোবর রোববার যশোরে গণশুনানি চলাকালে দুদক কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজী এই আদেশ দেন।
ঘুষ নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ অফিসারদের ঘুষ বিষয়টি বোঝানোর জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন। একবার হাতেনাতে ঘুষ খাওয়া ধরা পড়েছিল। ব্রিটিশ অফিসার দেখলেন, অভিযুক্ত কর্মচারীকে কলা দেওয়া হচ্ছে। কলাকে যখন ঘুষ বলা হলো, তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন, ঘুষ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। সে কারণেই কিনা জানি না, শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুষ এখনো সরকারি বিভিন্ন মহলে দেদার খাওয়া হচ্ছে।
ঘুষ, দুর্নীতি আর লুটপাট মূলত হয় অসৎ আমলা, ব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক নেতার অসৎ মেলামেশা থেকে। দুর্নীতি, ঘুষ ও লুটপাট বনেদি অপরাধ। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এরা অভিজাতন্ত্র মেনে চলে। খুবই সহজ একটি কাজকে জটিল বানিয়ে ঘুষ খাওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করা কঠিন। যাঁরা ঘুষের খবর প্রকাশ করবেন কিংবা যাঁরা ঘুষখোরকে শায়েস্তা করবেন, তাঁরাও অনেক সময় কী কারণে নিশ্চুপ হয়ে যান, তা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। মুশকিল হলো, আমাদের যে নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই।
একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ তাঁর দামি গাড়িটা নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন দেশ, সবাই তাঁকে সমীহ করে চলেছে, এ রকম ঘটনা কি দুর্লক্ষ্য? যাঁর বেতন ৫০ হাজার টাকা, তিনি সে মাসের বেতন দিয়ে স্ত্রীকে দুই ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দিচ্ছেন, সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি, এ রকম ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, টাকাটা কোত্থেকে এল সে প্রশ্ন কেউ আর তুলতে চায় না। এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যেত যদি পারিবারিক শিক্ষায়, বিদ্যায়তনের পরিবেশে এবং সামাজিক শৃঙ্খলায় গড়ে তোলা যেত নতুন প্রজন্মকে। একটি শিশু জন্মের পরই যখন চারপাশে অনৈতিকতার চাষবাস দেখে, তখন তার কাছ থেকে সাচ্চা আদর্শবান একজন মানুষকে পাওয়ার ভাবনা শুধু বোকারাই করতে পারেন।
কলা হোক আর টাকা হোক, ঘুষ বিষয়টা যে অন্যায়, তা যদি অন্তর থেকে না বোঝা হয়, শুধু কথা বলার রাজনীতি দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়, তাহলে ঘুষ, দুর্নীতি দূর হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। যশোরের ওই উচ্চমান সহকারীর মতো হয়তো বদলির ঘটনা ঘটবে, কিন্তু ঘুষকে বদলি করার পর ঘুষহীন সমাজ তাতে গড়ে উঠবে না।

আজকের পত্রিকায় অনলাইন ভার্সনে ঘুষবিষয়ক একটি সংবাদ চোখে পড়ল। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা টানাপোড়েনের মধ্যে সংবাদটিকে নিরীহ গোছের সংবাদ হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যিনি ঘুষ গ্রহণ করেছেন তিনি অকপটে তা স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ঘুষ হিসেবে তিনি পাকা কলা গ্রহণ করেছেন। যিনি কলা দিয়েছেন ঘুষ হিসেবে, তিনি অবশ্য বলেছেন কলার সঙ্গে ১০ হাজার টাকাও দিতে হয়েছে ঘুষ গ্রহণকারীকে। ফলে জমে গেছে খেলা। স্বীকারোক্তির কারণে বদলি হয়েছেন যশোর জেলা পরিষদের সেই উচ্চমান সহকারী। ২৬ অক্টোবর রোববার যশোরে গণশুনানি চলাকালে দুদক কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবর আজিজী এই আদেশ দেন।
ঘুষ নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ অফিসারদের ঘুষ বিষয়টি বোঝানোর জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন। একবার হাতেনাতে ঘুষ খাওয়া ধরা পড়েছিল। ব্রিটিশ অফিসার দেখলেন, অভিযুক্ত কর্মচারীকে কলা দেওয়া হচ্ছে। কলাকে যখন ঘুষ বলা হলো, তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন, ঘুষ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। সে কারণেই কিনা জানি না, শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ঘুষ এখনো সরকারি বিভিন্ন মহলে দেদার খাওয়া হচ্ছে।
ঘুষ, দুর্নীতি আর লুটপাট মূলত হয় অসৎ আমলা, ব্যবসায়ী আর রাজনৈতিক নেতার অসৎ মেলামেশা থেকে। দুর্নীতি, ঘুষ ও লুটপাট বনেদি অপরাধ। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এরা অভিজাতন্ত্র মেনে চলে। খুবই সহজ একটি কাজকে জটিল বানিয়ে ঘুষ খাওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করা কঠিন। যাঁরা ঘুষের খবর প্রকাশ করবেন কিংবা যাঁরা ঘুষখোরকে শায়েস্তা করবেন, তাঁরাও অনেক সময় কী কারণে নিশ্চুপ হয়ে যান, তা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। মুশকিল হলো, আমাদের যে নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, সেটা নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই।
একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ তাঁর দামি গাড়িটা নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন দেশ, সবাই তাঁকে সমীহ করে চলেছে, এ রকম ঘটনা কি দুর্লক্ষ্য? যাঁর বেতন ৫০ হাজার টাকা, তিনি সে মাসের বেতন দিয়ে স্ত্রীকে দুই ভরি স্বর্ণালংকার কিনে দিচ্ছেন, সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি, এ রকম ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, টাকাটা কোত্থেকে এল সে প্রশ্ন কেউ আর তুলতে চায় না। এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া যেত যদি পারিবারিক শিক্ষায়, বিদ্যায়তনের পরিবেশে এবং সামাজিক শৃঙ্খলায় গড়ে তোলা যেত নতুন প্রজন্মকে। একটি শিশু জন্মের পরই যখন চারপাশে অনৈতিকতার চাষবাস দেখে, তখন তার কাছ থেকে সাচ্চা আদর্শবান একজন মানুষকে পাওয়ার ভাবনা শুধু বোকারাই করতে পারেন।
কলা হোক আর টাকা হোক, ঘুষ বিষয়টা যে অন্যায়, তা যদি অন্তর থেকে না বোঝা হয়, শুধু কথা বলার রাজনীতি দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়, তাহলে ঘুষ, দুর্নীতি দূর হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। যশোরের ওই উচ্চমান সহকারীর মতো হয়তো বদলির ঘটনা ঘটবে, কিন্তু ঘুষকে বদলি করার পর ঘুষহীন সমাজ তাতে গড়ে উঠবে না।


সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
একটি দুঃসংবাদ আর একটি আশাপ্রদ খবর দিয়ে শুরু করছি। প্রথম দুঃসংবাদ হলো, আইসল্যান্ডে মশা পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয় সংবাদ, অস্ট্রেলিয়ায় চিরহরিৎ বনাঞ্চল কার্বন শোষণের চেয়ে নিঃসরণ করছে বেশি। দুটি তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকেরা। আপাতদৃশ্যে খুব সাধারণ মনে হলেও, দুটি খবরই ভয়ংকর এক পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে।
১ দিন আগে
হাজার বছরের অপমান, বঞ্চনা আর বন্দিত্বের নাগপাশ পেরিয়ে ফিলিস্তিন আবার নবজন্ম নিচ্ছে, যেখানে প্রতিটি শিশুর কান্না ইতিহাসে প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে। দীর্ঘ দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে এক বিভ্রম ছড়ানো হয়েছিল—‘শুধু আলোচনাই শান্তি আনতে পারে।’ সেই বাক্যটি ছিল সভ্যতার মুখে পরানো এক মুখোশ, যার আড়ালে...
১ দিন আগে
প্রযুক্তিই সব সময় মানবসভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলেছে। একসময় আগুন ও চাকা করেছিল এ কাজটি। এরপর বিজ্ঞান মানুষকে মাটির নিচ থেকে ‘তরল সোনা’ তেল আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে। এই আবিষ্কারের পর দীর্ঘদিন ধরে ভূ-রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে একে কেন্দ্র করে। এমনকি এখনো।
১ দিন আগে