অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া

“ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”
-কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় কবির চেতনায়, রচনায় নবীনদের জয়গান বারবার প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি তরুণদের বীর আখ্যায়িত করে সমাজ সংস্কারে কীভাবে তারুণ্য অবদান রাখবে তার নির্দেশনাও দেন।
কর্মবীর আখ্যায়িত করে তিনি তরুণদের বলেছেন,
“প্রাণ-চঞ্চল প্রাচীর তরুণ, কর্মবীর,
হে মানবতার প্রতীক গর্ব উচ্চশির।
দিব্যচক্ষে দেখিতেছি, তোরা দৃপ্তপদ
সকলের আগে চলিবি পারায়ে গিরি ও নদ,
মরু-সঞ্চর গতি-চপল।
অগ্র পথিক রে পাঁওদল,
জোর কদম চল রে চল।”
আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড়া দেয়।
এই প্রজন্মকে নিয়ে আসলে আমরা কতটুকু ভরসা করতাম?
তার আগে আসুন দেখি, প্রজন্ম বলতে কী বুঝি?
“প্রজন্ম” শব্দটি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আসা একদল লোককে বোঝায়। সহজ ভাষায়, প্রজন্ম মানে একদল মানুষ যাঁরা একটি নিদির্ষ্ট সময় জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন। সেই সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেন। মহাকালের রিলে রেসের ব্যাটনটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁদের হাতে থাকে সময়ের প্রয়োজনে তারপর তাঁরা সেটা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যাটনটি তুলে দেন।
প্রজন্মের সময়সীমা কী?
জনসংখ্যা জীববিজ্ঞান এবং জনসংখ্যায় , প্রজন্মের সময় হলো একটি জনসংখ্যার বংশের মধ্যে পরপর দুটি প্রজন্মের মধ্যে গড় সময়। মানব জনসংখ্যায়, প্রজন্মের সময় সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে থাকে, লিঙ্গ এবং সমাজের ওপর ভিত্তি করে বিস্তৃত তারতম্যসহ। সহজ ভাষায় জেনারেশন টাইমলাইন বা প্রজন্মের সময়সীমা খুব একটা পরিচিত নয়। দূরবীনে চোখ রাখলে দেখব এই প্রজন্মের সময়সীমাকে ভাগ করা হয়েছে নিম্নরূপে:
১. দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন (মহান প্রপিতামহ প্রজন্ম): জন্মকাল ১৯২৪ থেকে এর আগে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন টম ব্রোকাও। এই প্রজন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা সামাল দেন। তাঁদের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয় দেশপ্রেমিক, অনুপ্রাণিত এক প্রজন্ম। সেই সঙ্গে তাঁরা সাইলেন্ট জেনারেশন অর্থাৎ নীরব প্রজন্মের পিতামাতা।
২. দ্য সাইলেন্ট জেনারেশন (নীরব প্রজন্ম): তাঁদের জন্মকাল ১৯২৫ থেকে ১৯৪২/৪৫ সাল অব্দি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর যেহেতু তাঁদের জন্ম, তাই তাঁরা তাঁদের বাবা-মায়েদের থেকে বেশি সতর্ক, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা বিধ্বস্ত সমকালীন পরিবেশ তাঁদের জীবনকে সাশ্রয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তাঁরা পপ কালচারকে অবয়ব দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর রক শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আরও বহু কিছুতে তাঁদের অবদান আছে। তাঁরা সাম্রাজ্যবাদ থেকে পুঁজিবাদের বৈশ্বিক রূপান্তর দেখেছেন। তাই তাঁদের মূল্যবোধ পূর্ব প্রজন্মের মতো সবার নয়। প্রজন্মান্তরের পার্থক্য দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন থেকে তাই এই প্রজন্মে দৃশ্যমান। তাঁরা বেবি বুমার্স প্রজন্মের পিতামাতা।
৩. বেবি বুমার্স (শিশু বিস্ফোরণ): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪। তাঁদের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ একদিকে যেমন জন্মহার প্রচুর বেড়ে গেছে। ফলে শিশু জন্মের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই কারণেই এই প্রজন্মের নাম হচ্ছে বেবি বুমার্স। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভাব কাটতে শুরু করেছেন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া শুরু হয়েছে কাজেই মানুষ পরিবার এবং সন্তান ধারণে আগ্রহী হতে শুরু করেছেন এই সময়। একা একা সৈন্যরা ঘরে ফেরা শুরু করেছেন। অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা সুযোগ বেড়েছে এই সময়ে। ফলে এই সময় প্রচুর সম্পদ জমতে শুরু করল শিক্ষা ও শিল্প ক্ষেত্রে। যার ফলে প্রযুক্তির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁরা পুঁজিবাদ থেকে নব্য পুঁজিবাদের আঁচ পেয়েছেন। যখন একটু একটু করে স্বাধীনতা নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। তাঁরা জেন এক্স এর পিতামাতা।
৪. জেনারেশন/ জেন - এক্স ( ল্যাচ কী / কারো দেখা শোনা, তত্ত্বাবধান ছাড়াই বেড়ে ওঠা): তাঁদের জন্মকাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল। এই সময়ে দিনশেষে অনেকেই খালি ঘরে ফিরতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে গিয়েছিল। আবার এখন থেকেই স্বামী স্ত্রীর দ্বৈত উপার্জন সংস্কৃতি চালু হয়। এই প্রজন্মই প্রথম যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের অধিকারী হন। এমটিভি অর্থাৎ কেবল টিভি দেখতে শুরু করেন। তাই কেউ কেউ তাঁদের এমটিভি জেনারেশনও বলে। এই প্রজন্ম এইডসের মহামারী দেখেন। যার ফলে নিরাপদ সেক্স এই কথাটা এখন থেকেই শোনা যাওয়া শুরু হয়। বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁরা শীতল যুদ্ধ দেখেন ১৯৭০, ৮০, ৯০-এর দশকের এই সময়টা সাক্ষী। ফলে কর্মখালি নেই এই অবস্থার সঙ্গেও তাঁদের পরিচিতি ঘটতে থাকে। যখন অধিকাংশ দেশে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম উপনিবেশিক শাসনামলের যাঁতাকলে সুস্পষ্টভাবে পিষ্ট হয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশের কথা ধরলে তাঁদের দাদারা ছিলেন ব্রিটিশ শাসিত, হয়তো কারো কারো বাবা। এই প্রজন্ম মিলেনিয়ালদের অভিভাবক।
৫. মিলেনিয়াল ( ওহ! সো প্রাউড প্রজন্ম): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল। অন্য সব প্রজন্মের থেকে তাঁরা ভিন্ন। যান্ত্রিক উৎকর্ষতা, গৃহ কাজে যন্ত্রের ব্যবহার, ইন্টারনেট তাঁদের অন্য সব প্রজন্মের থেকে আলাদা করেছে। ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা তাঁদের মধ্যে সাংঘাতিক। এই প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসী। কখনো কখনো অধিক পরিমাণ আত্মবিশ্বাস তাঁদেরকে নার্সিসিজমের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রজন্ম ধর্মীয়, জেন্ডার, রেসিজম, সেক্স্যুয়াল ওরিয়েন্টেশন-এর সচেতনতার যুগে প্রবেশ করেন। সাম্যতার প্রতি এই প্রজন্ম আগ্রহী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলব, তাঁদের জন্ম একটি স্বাধীন দেশে।
৬. জেনারেশন/ জেন - জি/জেড: জন্ম কাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল। তাঁরা নীরব প্রজন্মের মতো। অর্থাৎ এই দুই প্রজন্মের মিল আছে। মিলটা কী? মিলটা হলো অনিশ্চয়তার। জেন - জিও করোনা অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে বাস করছেন। এই বিশ্ব অবস্থা অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা নিয়ামক যেমন, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা, নব্যউপনিবেশবাদ বনাম বিউপনিবেশায়নের দ্বৈরথ। এই প্রজন্ম নিয়মিত তাঁদের সেলফোনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়। মানসিক স্বাস্থ্য, সাম্যতা, সমাধিকার, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তাঁরা সচেতন। এই প্রজন্ম জাতিগত বৈচিত্র্য, মুক্তমনা এবং পূর্ববর্তী সমস্ত প্রজন্ম থেকে সবচেয়ে বেশি প্রগতিশীল। তাঁরা পপ সংস্কৃতিকে ভিন্ন একটা রূপ দিয়েছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ প্রজন্ম কিন্তু ধারণ করেন প্রজন্মান্তরের ক্ষত অবচেতন মনে।
ইন্টারজেনারেশনাল_ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত কী?
ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত তৈরি হয় যুগে যুগে প্রজন্মান্তরের নিপীড়নে, বঞ্চনায়। সেই অনুভব আমরা এখনো অবচেতন মনে ধারণ করে এই ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা। অর্থাৎ আমার পূর্বপুরুষদের কেউ যদি কোনো কারণে নিপীড়িত বা নির্যাতিত হয়ে মনোসামাজিক বা মনো দৈহিক আঘাতপ্রাপ্ত হন, তবে এই অনুভব এবং অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্ম বহন করে। গবেষণা বলছে, এ ধরনের ট্রমা যেগুলোর সঙ্গে সহিংসতা, আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য, কারাবাস সম্পৃক্ত, সেগুলোর ক্ষত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষ বহন করে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রায় ১ লাখ শিশুকে পিতামাতার কাছ থেকে চুরি করে চার্চে এবং সরকারিভাবে বড় করা হয় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত।
পরবর্তীতে দেখা যায় এই শিশুদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে আনা হলো, এর প্রত্যেকটি তথ্য তার সচেতন মন ভুলে গেলেও অবচেতনভাবে সে মনে রাখল। ফলে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেই শুধু নয়, এই শিশুদের উত্তরাধিকারও বংশ পরম্পরায় প্রজন্মান্তরের ক্ষত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এপিজেনেটিক্স বলছে, এটা তাঁদের জিনের ওপরও বংশ পরম্পরায় প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা হচ্ছে এটা ডিএনএ-এর কোডের কোনো পরিবর্তন করে না, কিন্তু এমন কিছু পরিবর্ধন করে যা প্রজন্মান্তরে পরবর্তী উত্তরাধিকাররা এই ক্ষতর পরিমাণ পরিণাম ভোগ করে। যা পরবর্তী প্রজন্মকে বিষণ্নতা, নানাবিধ মানসিক ব্যাধি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
ভয়ংকর কথা! তাই না? আসুন বর্তমানে ফিরি। সহজ ভাষায় বলা যায় বুমারসরা এখন নানা দাদা, জেন এক্স' রা এখন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বাবা মা।
মিলেনিয়ালরা চাকরি করছেন। জেন জিরা ছাত্র। তাঁদের কিন্তু ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত নেই। এটাই কি মনস্তাত্ত্বিক মূল বিষয়? এটাই কি সাইকোপলিটিক্স ঘুরে যাওয়ার কারণ?
মজার ব্যাপার হলো এই বিভিন্ন প্রজন্মের কর্ম ক্ষেত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে,
১. এক্সিকিউটিভ পজিশনে বসে আছেন:
বুমারসরা ৬৬%
জেন এক্সরা ২৮%
মিলেনিয়ালরা ৬%
২. রেভিনিউ জেনারেট করছেন
বুমারসরা ৩২%
জেন এক্সরা ৫৭%
মিলেনিয়ালরা ১১%
৩. অভিযোজন প্রবণতা
বুমারসদের ১০%
জেন এক্সরা ৪৯%
মিলেনিয়ালরা ৪১%
৪. কস্ট (খরচ) এফেকটিভ
বুমারসরা ৫৯%
জেন এক্সরা ৩৪%
মিলেনিয়ালরা ৭%
৫. প্রযুক্তিগত জ্ঞান
বুমারসদের ৪%
জেন এক্সদের ১৮%
মিলেনিয়ালদের ৭৮%
৬. আন্ত সম্পর্ক তৈরিতে দক্ষতা
বুমারসদের ৩৪%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ১৩%
৭. সমস্যার সমাধানে দক্ষতা
বুমারসদের ২৬%
জেন এক্সদের ৫৭%
মিলেনিয়ালদের ১৭%
৮. যৌথভাবে কাজ করবার প্রয়াস (কোলাবরেশন)
বুমারসদের ২০%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ২৭%
এবার বাংলাদেশের যদি জনসংখ্যার পিরামিডটা খেয়াল করেন তবে ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক (২০২১) এর তথ্য অনুসারে দেখবেন দেখবেন, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ এই তারুণ্যের উপস্থিতি সর্বাধিক।
চিত্র: ১
পিরামিডটা খেয়াল করলে দেখবেন এখানে নারী পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান সমান। এই তারুণ্যের শক্তি কতটুকু আমরা কি টের পাচ্ছি? জেন- জিদের নিয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত অন্তত বাংলাদেশে নেই।
তবে এইটুকুই চাহিদা এই অরাজনৈতিক বিপ্লব যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি পরিবর্তন আনে। বৈষম্যবিহীন আন্দোলন ছাত্রদের পাহাড় থেকে সমতলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যর নিদর্শন।
ইতিমধ্যেই বাজারে সবজির দাম কমেছে সিন্ডিকেটের দখলবিহীন বাজারদর কমেছে। লুট হওয়া জিনিসপত্র গণভবনে ফেরত আসছে। পুলিশবিহীন সড়কে নিরাপদে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে।
কিন্তু এবার আসুন নিজের চোখে একটু আয়না ধরি। জেন- জি দের আসলে আমরা কতটুকু বুঝেছি পেরেছিলাম? সত্যিকারের কতটুকু বুঝেছি? আর কী কী বোঝা বাকি?
বিদ্রোহী নজরুলের তারুণ্য আদর্শ দিয়ে শুরু করেছিলাম, তাঁকে দিয়েই শেষ করি। জাতীয় কবি ঠিকই বুঝেছিলেন। তারুণ্য কোনো দেশ কালের গণ্ডি দ্বারা আবদ্ধ নয়। তাঁর যৌবনের প্রমূর্তি আমরা দেখেছি ১৯৫২ সালে, মহান ১৯৭১ সালে, আবার জুলাই ২০২৪-এ।
তাই না? তাইতো।

“ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”
-কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় কবির চেতনায়, রচনায় নবীনদের জয়গান বারবার প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি তরুণদের বীর আখ্যায়িত করে সমাজ সংস্কারে কীভাবে তারুণ্য অবদান রাখবে তার নির্দেশনাও দেন।
কর্মবীর আখ্যায়িত করে তিনি তরুণদের বলেছেন,
“প্রাণ-চঞ্চল প্রাচীর তরুণ, কর্মবীর,
হে মানবতার প্রতীক গর্ব উচ্চশির।
দিব্যচক্ষে দেখিতেছি, তোরা দৃপ্তপদ
সকলের আগে চলিবি পারায়ে গিরি ও নদ,
মরু-সঞ্চর গতি-চপল।
অগ্র পথিক রে পাঁওদল,
জোর কদম চল রে চল।”
আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড়া দেয়।
এই প্রজন্মকে নিয়ে আসলে আমরা কতটুকু ভরসা করতাম?
তার আগে আসুন দেখি, প্রজন্ম বলতে কী বুঝি?
“প্রজন্ম” শব্দটি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আসা একদল লোককে বোঝায়। সহজ ভাষায়, প্রজন্ম মানে একদল মানুষ যাঁরা একটি নিদির্ষ্ট সময় জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন। সেই সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেন। মহাকালের রিলে রেসের ব্যাটনটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁদের হাতে থাকে সময়ের প্রয়োজনে তারপর তাঁরা সেটা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যাটনটি তুলে দেন।
প্রজন্মের সময়সীমা কী?
জনসংখ্যা জীববিজ্ঞান এবং জনসংখ্যায় , প্রজন্মের সময় হলো একটি জনসংখ্যার বংশের মধ্যে পরপর দুটি প্রজন্মের মধ্যে গড় সময়। মানব জনসংখ্যায়, প্রজন্মের সময় সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে থাকে, লিঙ্গ এবং সমাজের ওপর ভিত্তি করে বিস্তৃত তারতম্যসহ। সহজ ভাষায় জেনারেশন টাইমলাইন বা প্রজন্মের সময়সীমা খুব একটা পরিচিত নয়। দূরবীনে চোখ রাখলে দেখব এই প্রজন্মের সময়সীমাকে ভাগ করা হয়েছে নিম্নরূপে:
১. দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন (মহান প্রপিতামহ প্রজন্ম): জন্মকাল ১৯২৪ থেকে এর আগে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন টম ব্রোকাও। এই প্রজন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা সামাল দেন। তাঁদের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয় দেশপ্রেমিক, অনুপ্রাণিত এক প্রজন্ম। সেই সঙ্গে তাঁরা সাইলেন্ট জেনারেশন অর্থাৎ নীরব প্রজন্মের পিতামাতা।
২. দ্য সাইলেন্ট জেনারেশন (নীরব প্রজন্ম): তাঁদের জন্মকাল ১৯২৫ থেকে ১৯৪২/৪৫ সাল অব্দি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর যেহেতু তাঁদের জন্ম, তাই তাঁরা তাঁদের বাবা-মায়েদের থেকে বেশি সতর্ক, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা বিধ্বস্ত সমকালীন পরিবেশ তাঁদের জীবনকে সাশ্রয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তাঁরা পপ কালচারকে অবয়ব দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর রক শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আরও বহু কিছুতে তাঁদের অবদান আছে। তাঁরা সাম্রাজ্যবাদ থেকে পুঁজিবাদের বৈশ্বিক রূপান্তর দেখেছেন। তাই তাঁদের মূল্যবোধ পূর্ব প্রজন্মের মতো সবার নয়। প্রজন্মান্তরের পার্থক্য দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন থেকে তাই এই প্রজন্মে দৃশ্যমান। তাঁরা বেবি বুমার্স প্রজন্মের পিতামাতা।
৩. বেবি বুমার্স (শিশু বিস্ফোরণ): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪। তাঁদের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ একদিকে যেমন জন্মহার প্রচুর বেড়ে গেছে। ফলে শিশু জন্মের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই কারণেই এই প্রজন্মের নাম হচ্ছে বেবি বুমার্স। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভাব কাটতে শুরু করেছেন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া শুরু হয়েছে কাজেই মানুষ পরিবার এবং সন্তান ধারণে আগ্রহী হতে শুরু করেছেন এই সময়। একা একা সৈন্যরা ঘরে ফেরা শুরু করেছেন। অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা সুযোগ বেড়েছে এই সময়ে। ফলে এই সময় প্রচুর সম্পদ জমতে শুরু করল শিক্ষা ও শিল্প ক্ষেত্রে। যার ফলে প্রযুক্তির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁরা পুঁজিবাদ থেকে নব্য পুঁজিবাদের আঁচ পেয়েছেন। যখন একটু একটু করে স্বাধীনতা নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। তাঁরা জেন এক্স এর পিতামাতা।
৪. জেনারেশন/ জেন - এক্স ( ল্যাচ কী / কারো দেখা শোনা, তত্ত্বাবধান ছাড়াই বেড়ে ওঠা): তাঁদের জন্মকাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল। এই সময়ে দিনশেষে অনেকেই খালি ঘরে ফিরতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে গিয়েছিল। আবার এখন থেকেই স্বামী স্ত্রীর দ্বৈত উপার্জন সংস্কৃতি চালু হয়। এই প্রজন্মই প্রথম যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের অধিকারী হন। এমটিভি অর্থাৎ কেবল টিভি দেখতে শুরু করেন। তাই কেউ কেউ তাঁদের এমটিভি জেনারেশনও বলে। এই প্রজন্ম এইডসের মহামারী দেখেন। যার ফলে নিরাপদ সেক্স এই কথাটা এখন থেকেই শোনা যাওয়া শুরু হয়। বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁরা শীতল যুদ্ধ দেখেন ১৯৭০, ৮০, ৯০-এর দশকের এই সময়টা সাক্ষী। ফলে কর্মখালি নেই এই অবস্থার সঙ্গেও তাঁদের পরিচিতি ঘটতে থাকে। যখন অধিকাংশ দেশে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম উপনিবেশিক শাসনামলের যাঁতাকলে সুস্পষ্টভাবে পিষ্ট হয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশের কথা ধরলে তাঁদের দাদারা ছিলেন ব্রিটিশ শাসিত, হয়তো কারো কারো বাবা। এই প্রজন্ম মিলেনিয়ালদের অভিভাবক।
৫. মিলেনিয়াল ( ওহ! সো প্রাউড প্রজন্ম): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল। অন্য সব প্রজন্মের থেকে তাঁরা ভিন্ন। যান্ত্রিক উৎকর্ষতা, গৃহ কাজে যন্ত্রের ব্যবহার, ইন্টারনেট তাঁদের অন্য সব প্রজন্মের থেকে আলাদা করেছে। ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা তাঁদের মধ্যে সাংঘাতিক। এই প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসী। কখনো কখনো অধিক পরিমাণ আত্মবিশ্বাস তাঁদেরকে নার্সিসিজমের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রজন্ম ধর্মীয়, জেন্ডার, রেসিজম, সেক্স্যুয়াল ওরিয়েন্টেশন-এর সচেতনতার যুগে প্রবেশ করেন। সাম্যতার প্রতি এই প্রজন্ম আগ্রহী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলব, তাঁদের জন্ম একটি স্বাধীন দেশে।
৬. জেনারেশন/ জেন - জি/জেড: জন্ম কাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল। তাঁরা নীরব প্রজন্মের মতো। অর্থাৎ এই দুই প্রজন্মের মিল আছে। মিলটা কী? মিলটা হলো অনিশ্চয়তার। জেন - জিও করোনা অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে বাস করছেন। এই বিশ্ব অবস্থা অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা নিয়ামক যেমন, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা, নব্যউপনিবেশবাদ বনাম বিউপনিবেশায়নের দ্বৈরথ। এই প্রজন্ম নিয়মিত তাঁদের সেলফোনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়। মানসিক স্বাস্থ্য, সাম্যতা, সমাধিকার, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তাঁরা সচেতন। এই প্রজন্ম জাতিগত বৈচিত্র্য, মুক্তমনা এবং পূর্ববর্তী সমস্ত প্রজন্ম থেকে সবচেয়ে বেশি প্রগতিশীল। তাঁরা পপ সংস্কৃতিকে ভিন্ন একটা রূপ দিয়েছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ প্রজন্ম কিন্তু ধারণ করেন প্রজন্মান্তরের ক্ষত অবচেতন মনে।
ইন্টারজেনারেশনাল_ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত কী?
ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত তৈরি হয় যুগে যুগে প্রজন্মান্তরের নিপীড়নে, বঞ্চনায়। সেই অনুভব আমরা এখনো অবচেতন মনে ধারণ করে এই ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা। অর্থাৎ আমার পূর্বপুরুষদের কেউ যদি কোনো কারণে নিপীড়িত বা নির্যাতিত হয়ে মনোসামাজিক বা মনো দৈহিক আঘাতপ্রাপ্ত হন, তবে এই অনুভব এবং অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্ম বহন করে। গবেষণা বলছে, এ ধরনের ট্রমা যেগুলোর সঙ্গে সহিংসতা, আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য, কারাবাস সম্পৃক্ত, সেগুলোর ক্ষত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষ বহন করে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রায় ১ লাখ শিশুকে পিতামাতার কাছ থেকে চুরি করে চার্চে এবং সরকারিভাবে বড় করা হয় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত।
পরবর্তীতে দেখা যায় এই শিশুদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে আনা হলো, এর প্রত্যেকটি তথ্য তার সচেতন মন ভুলে গেলেও অবচেতনভাবে সে মনে রাখল। ফলে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেই শুধু নয়, এই শিশুদের উত্তরাধিকারও বংশ পরম্পরায় প্রজন্মান্তরের ক্ষত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এপিজেনেটিক্স বলছে, এটা তাঁদের জিনের ওপরও বংশ পরম্পরায় প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা হচ্ছে এটা ডিএনএ-এর কোডের কোনো পরিবর্তন করে না, কিন্তু এমন কিছু পরিবর্ধন করে যা প্রজন্মান্তরে পরবর্তী উত্তরাধিকাররা এই ক্ষতর পরিমাণ পরিণাম ভোগ করে। যা পরবর্তী প্রজন্মকে বিষণ্নতা, নানাবিধ মানসিক ব্যাধি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
ভয়ংকর কথা! তাই না? আসুন বর্তমানে ফিরি। সহজ ভাষায় বলা যায় বুমারসরা এখন নানা দাদা, জেন এক্স' রা এখন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বাবা মা।
মিলেনিয়ালরা চাকরি করছেন। জেন জিরা ছাত্র। তাঁদের কিন্তু ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত নেই। এটাই কি মনস্তাত্ত্বিক মূল বিষয়? এটাই কি সাইকোপলিটিক্স ঘুরে যাওয়ার কারণ?
মজার ব্যাপার হলো এই বিভিন্ন প্রজন্মের কর্ম ক্ষেত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে,
১. এক্সিকিউটিভ পজিশনে বসে আছেন:
বুমারসরা ৬৬%
জেন এক্সরা ২৮%
মিলেনিয়ালরা ৬%
২. রেভিনিউ জেনারেট করছেন
বুমারসরা ৩২%
জেন এক্সরা ৫৭%
মিলেনিয়ালরা ১১%
৩. অভিযোজন প্রবণতা
বুমারসদের ১০%
জেন এক্সরা ৪৯%
মিলেনিয়ালরা ৪১%
৪. কস্ট (খরচ) এফেকটিভ
বুমারসরা ৫৯%
জেন এক্সরা ৩৪%
মিলেনিয়ালরা ৭%
৫. প্রযুক্তিগত জ্ঞান
বুমারসদের ৪%
জেন এক্সদের ১৮%
মিলেনিয়ালদের ৭৮%
৬. আন্ত সম্পর্ক তৈরিতে দক্ষতা
বুমারসদের ৩৪%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ১৩%
৭. সমস্যার সমাধানে দক্ষতা
বুমারসদের ২৬%
জেন এক্সদের ৫৭%
মিলেনিয়ালদের ১৭%
৮. যৌথভাবে কাজ করবার প্রয়াস (কোলাবরেশন)
বুমারসদের ২০%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ২৭%
এবার বাংলাদেশের যদি জনসংখ্যার পিরামিডটা খেয়াল করেন তবে ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক (২০২১) এর তথ্য অনুসারে দেখবেন দেখবেন, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ এই তারুণ্যের উপস্থিতি সর্বাধিক।
চিত্র: ১
পিরামিডটা খেয়াল করলে দেখবেন এখানে নারী পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান সমান। এই তারুণ্যের শক্তি কতটুকু আমরা কি টের পাচ্ছি? জেন- জিদের নিয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত অন্তত বাংলাদেশে নেই।
তবে এইটুকুই চাহিদা এই অরাজনৈতিক বিপ্লব যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি পরিবর্তন আনে। বৈষম্যবিহীন আন্দোলন ছাত্রদের পাহাড় থেকে সমতলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যর নিদর্শন।
ইতিমধ্যেই বাজারে সবজির দাম কমেছে সিন্ডিকেটের দখলবিহীন বাজারদর কমেছে। লুট হওয়া জিনিসপত্র গণভবনে ফেরত আসছে। পুলিশবিহীন সড়কে নিরাপদে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে।
কিন্তু এবার আসুন নিজের চোখে একটু আয়না ধরি। জেন- জি দের আসলে আমরা কতটুকু বুঝেছি পেরেছিলাম? সত্যিকারের কতটুকু বুঝেছি? আর কী কী বোঝা বাকি?
বিদ্রোহী নজরুলের তারুণ্য আদর্শ দিয়ে শুরু করেছিলাম, তাঁকে দিয়েই শেষ করি। জাতীয় কবি ঠিকই বুঝেছিলেন। তারুণ্য কোনো দেশ কালের গণ্ডি দ্বারা আবদ্ধ নয়। তাঁর যৌবনের প্রমূর্তি আমরা দেখেছি ১৯৫২ সালে, মহান ১৯৭১ সালে, আবার জুলাই ২০২৪-এ।
তাই না? তাইতো।
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া

“ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”
-কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় কবির চেতনায়, রচনায় নবীনদের জয়গান বারবার প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি তরুণদের বীর আখ্যায়িত করে সমাজ সংস্কারে কীভাবে তারুণ্য অবদান রাখবে তার নির্দেশনাও দেন।
কর্মবীর আখ্যায়িত করে তিনি তরুণদের বলেছেন,
“প্রাণ-চঞ্চল প্রাচীর তরুণ, কর্মবীর,
হে মানবতার প্রতীক গর্ব উচ্চশির।
দিব্যচক্ষে দেখিতেছি, তোরা দৃপ্তপদ
সকলের আগে চলিবি পারায়ে গিরি ও নদ,
মরু-সঞ্চর গতি-চপল।
অগ্র পথিক রে পাঁওদল,
জোর কদম চল রে চল।”
আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড়া দেয়।
এই প্রজন্মকে নিয়ে আসলে আমরা কতটুকু ভরসা করতাম?
তার আগে আসুন দেখি, প্রজন্ম বলতে কী বুঝি?
“প্রজন্ম” শব্দটি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আসা একদল লোককে বোঝায়। সহজ ভাষায়, প্রজন্ম মানে একদল মানুষ যাঁরা একটি নিদির্ষ্ট সময় জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন। সেই সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেন। মহাকালের রিলে রেসের ব্যাটনটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁদের হাতে থাকে সময়ের প্রয়োজনে তারপর তাঁরা সেটা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যাটনটি তুলে দেন।
প্রজন্মের সময়সীমা কী?
জনসংখ্যা জীববিজ্ঞান এবং জনসংখ্যায় , প্রজন্মের সময় হলো একটি জনসংখ্যার বংশের মধ্যে পরপর দুটি প্রজন্মের মধ্যে গড় সময়। মানব জনসংখ্যায়, প্রজন্মের সময় সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে থাকে, লিঙ্গ এবং সমাজের ওপর ভিত্তি করে বিস্তৃত তারতম্যসহ। সহজ ভাষায় জেনারেশন টাইমলাইন বা প্রজন্মের সময়সীমা খুব একটা পরিচিত নয়। দূরবীনে চোখ রাখলে দেখব এই প্রজন্মের সময়সীমাকে ভাগ করা হয়েছে নিম্নরূপে:
১. দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন (মহান প্রপিতামহ প্রজন্ম): জন্মকাল ১৯২৪ থেকে এর আগে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন টম ব্রোকাও। এই প্রজন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা সামাল দেন। তাঁদের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয় দেশপ্রেমিক, অনুপ্রাণিত এক প্রজন্ম। সেই সঙ্গে তাঁরা সাইলেন্ট জেনারেশন অর্থাৎ নীরব প্রজন্মের পিতামাতা।
২. দ্য সাইলেন্ট জেনারেশন (নীরব প্রজন্ম): তাঁদের জন্মকাল ১৯২৫ থেকে ১৯৪২/৪৫ সাল অব্দি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর যেহেতু তাঁদের জন্ম, তাই তাঁরা তাঁদের বাবা-মায়েদের থেকে বেশি সতর্ক, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা বিধ্বস্ত সমকালীন পরিবেশ তাঁদের জীবনকে সাশ্রয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তাঁরা পপ কালচারকে অবয়ব দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর রক শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আরও বহু কিছুতে তাঁদের অবদান আছে। তাঁরা সাম্রাজ্যবাদ থেকে পুঁজিবাদের বৈশ্বিক রূপান্তর দেখেছেন। তাই তাঁদের মূল্যবোধ পূর্ব প্রজন্মের মতো সবার নয়। প্রজন্মান্তরের পার্থক্য দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন থেকে তাই এই প্রজন্মে দৃশ্যমান। তাঁরা বেবি বুমার্স প্রজন্মের পিতামাতা।
৩. বেবি বুমার্স (শিশু বিস্ফোরণ): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪। তাঁদের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ একদিকে যেমন জন্মহার প্রচুর বেড়ে গেছে। ফলে শিশু জন্মের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই কারণেই এই প্রজন্মের নাম হচ্ছে বেবি বুমার্স। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভাব কাটতে শুরু করেছেন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া শুরু হয়েছে কাজেই মানুষ পরিবার এবং সন্তান ধারণে আগ্রহী হতে শুরু করেছেন এই সময়। একা একা সৈন্যরা ঘরে ফেরা শুরু করেছেন। অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা সুযোগ বেড়েছে এই সময়ে। ফলে এই সময় প্রচুর সম্পদ জমতে শুরু করল শিক্ষা ও শিল্প ক্ষেত্রে। যার ফলে প্রযুক্তির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁরা পুঁজিবাদ থেকে নব্য পুঁজিবাদের আঁচ পেয়েছেন। যখন একটু একটু করে স্বাধীনতা নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। তাঁরা জেন এক্স এর পিতামাতা।
৪. জেনারেশন/ জেন - এক্স ( ল্যাচ কী / কারো দেখা শোনা, তত্ত্বাবধান ছাড়াই বেড়ে ওঠা): তাঁদের জন্মকাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল। এই সময়ে দিনশেষে অনেকেই খালি ঘরে ফিরতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে গিয়েছিল। আবার এখন থেকেই স্বামী স্ত্রীর দ্বৈত উপার্জন সংস্কৃতি চালু হয়। এই প্রজন্মই প্রথম যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের অধিকারী হন। এমটিভি অর্থাৎ কেবল টিভি দেখতে শুরু করেন। তাই কেউ কেউ তাঁদের এমটিভি জেনারেশনও বলে। এই প্রজন্ম এইডসের মহামারী দেখেন। যার ফলে নিরাপদ সেক্স এই কথাটা এখন থেকেই শোনা যাওয়া শুরু হয়। বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁরা শীতল যুদ্ধ দেখেন ১৯৭০, ৮০, ৯০-এর দশকের এই সময়টা সাক্ষী। ফলে কর্মখালি নেই এই অবস্থার সঙ্গেও তাঁদের পরিচিতি ঘটতে থাকে। যখন অধিকাংশ দেশে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম উপনিবেশিক শাসনামলের যাঁতাকলে সুস্পষ্টভাবে পিষ্ট হয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশের কথা ধরলে তাঁদের দাদারা ছিলেন ব্রিটিশ শাসিত, হয়তো কারো কারো বাবা। এই প্রজন্ম মিলেনিয়ালদের অভিভাবক।
৫. মিলেনিয়াল ( ওহ! সো প্রাউড প্রজন্ম): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল। অন্য সব প্রজন্মের থেকে তাঁরা ভিন্ন। যান্ত্রিক উৎকর্ষতা, গৃহ কাজে যন্ত্রের ব্যবহার, ইন্টারনেট তাঁদের অন্য সব প্রজন্মের থেকে আলাদা করেছে। ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা তাঁদের মধ্যে সাংঘাতিক। এই প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসী। কখনো কখনো অধিক পরিমাণ আত্মবিশ্বাস তাঁদেরকে নার্সিসিজমের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রজন্ম ধর্মীয়, জেন্ডার, রেসিজম, সেক্স্যুয়াল ওরিয়েন্টেশন-এর সচেতনতার যুগে প্রবেশ করেন। সাম্যতার প্রতি এই প্রজন্ম আগ্রহী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলব, তাঁদের জন্ম একটি স্বাধীন দেশে।
৬. জেনারেশন/ জেন - জি/জেড: জন্ম কাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল। তাঁরা নীরব প্রজন্মের মতো। অর্থাৎ এই দুই প্রজন্মের মিল আছে। মিলটা কী? মিলটা হলো অনিশ্চয়তার। জেন - জিও করোনা অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে বাস করছেন। এই বিশ্ব অবস্থা অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা নিয়ামক যেমন, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা, নব্যউপনিবেশবাদ বনাম বিউপনিবেশায়নের দ্বৈরথ। এই প্রজন্ম নিয়মিত তাঁদের সেলফোনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়। মানসিক স্বাস্থ্য, সাম্যতা, সমাধিকার, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তাঁরা সচেতন। এই প্রজন্ম জাতিগত বৈচিত্র্য, মুক্তমনা এবং পূর্ববর্তী সমস্ত প্রজন্ম থেকে সবচেয়ে বেশি প্রগতিশীল। তাঁরা পপ সংস্কৃতিকে ভিন্ন একটা রূপ দিয়েছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ প্রজন্ম কিন্তু ধারণ করেন প্রজন্মান্তরের ক্ষত অবচেতন মনে।
ইন্টারজেনারেশনাল_ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত কী?
ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত তৈরি হয় যুগে যুগে প্রজন্মান্তরের নিপীড়নে, বঞ্চনায়। সেই অনুভব আমরা এখনো অবচেতন মনে ধারণ করে এই ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা। অর্থাৎ আমার পূর্বপুরুষদের কেউ যদি কোনো কারণে নিপীড়িত বা নির্যাতিত হয়ে মনোসামাজিক বা মনো দৈহিক আঘাতপ্রাপ্ত হন, তবে এই অনুভব এবং অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্ম বহন করে। গবেষণা বলছে, এ ধরনের ট্রমা যেগুলোর সঙ্গে সহিংসতা, আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য, কারাবাস সম্পৃক্ত, সেগুলোর ক্ষত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষ বহন করে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রায় ১ লাখ শিশুকে পিতামাতার কাছ থেকে চুরি করে চার্চে এবং সরকারিভাবে বড় করা হয় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত।
পরবর্তীতে দেখা যায় এই শিশুদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে আনা হলো, এর প্রত্যেকটি তথ্য তার সচেতন মন ভুলে গেলেও অবচেতনভাবে সে মনে রাখল। ফলে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেই শুধু নয়, এই শিশুদের উত্তরাধিকারও বংশ পরম্পরায় প্রজন্মান্তরের ক্ষত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এপিজেনেটিক্স বলছে, এটা তাঁদের জিনের ওপরও বংশ পরম্পরায় প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা হচ্ছে এটা ডিএনএ-এর কোডের কোনো পরিবর্তন করে না, কিন্তু এমন কিছু পরিবর্ধন করে যা প্রজন্মান্তরে পরবর্তী উত্তরাধিকাররা এই ক্ষতর পরিমাণ পরিণাম ভোগ করে। যা পরবর্তী প্রজন্মকে বিষণ্নতা, নানাবিধ মানসিক ব্যাধি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
ভয়ংকর কথা! তাই না? আসুন বর্তমানে ফিরি। সহজ ভাষায় বলা যায় বুমারসরা এখন নানা দাদা, জেন এক্স' রা এখন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বাবা মা।
মিলেনিয়ালরা চাকরি করছেন। জেন জিরা ছাত্র। তাঁদের কিন্তু ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত নেই। এটাই কি মনস্তাত্ত্বিক মূল বিষয়? এটাই কি সাইকোপলিটিক্স ঘুরে যাওয়ার কারণ?
মজার ব্যাপার হলো এই বিভিন্ন প্রজন্মের কর্ম ক্ষেত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে,
১. এক্সিকিউটিভ পজিশনে বসে আছেন:
বুমারসরা ৬৬%
জেন এক্সরা ২৮%
মিলেনিয়ালরা ৬%
২. রেভিনিউ জেনারেট করছেন
বুমারসরা ৩২%
জেন এক্সরা ৫৭%
মিলেনিয়ালরা ১১%
৩. অভিযোজন প্রবণতা
বুমারসদের ১০%
জেন এক্সরা ৪৯%
মিলেনিয়ালরা ৪১%
৪. কস্ট (খরচ) এফেকটিভ
বুমারসরা ৫৯%
জেন এক্সরা ৩৪%
মিলেনিয়ালরা ৭%
৫. প্রযুক্তিগত জ্ঞান
বুমারসদের ৪%
জেন এক্সদের ১৮%
মিলেনিয়ালদের ৭৮%
৬. আন্ত সম্পর্ক তৈরিতে দক্ষতা
বুমারসদের ৩৪%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ১৩%
৭. সমস্যার সমাধানে দক্ষতা
বুমারসদের ২৬%
জেন এক্সদের ৫৭%
মিলেনিয়ালদের ১৭%
৮. যৌথভাবে কাজ করবার প্রয়াস (কোলাবরেশন)
বুমারসদের ২০%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ২৭%
এবার বাংলাদেশের যদি জনসংখ্যার পিরামিডটা খেয়াল করেন তবে ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক (২০২১) এর তথ্য অনুসারে দেখবেন দেখবেন, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ এই তারুণ্যের উপস্থিতি সর্বাধিক।
চিত্র: ১
পিরামিডটা খেয়াল করলে দেখবেন এখানে নারী পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান সমান। এই তারুণ্যের শক্তি কতটুকু আমরা কি টের পাচ্ছি? জেন- জিদের নিয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত অন্তত বাংলাদেশে নেই।
তবে এইটুকুই চাহিদা এই অরাজনৈতিক বিপ্লব যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি পরিবর্তন আনে। বৈষম্যবিহীন আন্দোলন ছাত্রদের পাহাড় থেকে সমতলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যর নিদর্শন।
ইতিমধ্যেই বাজারে সবজির দাম কমেছে সিন্ডিকেটের দখলবিহীন বাজারদর কমেছে। লুট হওয়া জিনিসপত্র গণভবনে ফেরত আসছে। পুলিশবিহীন সড়কে নিরাপদে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে।
কিন্তু এবার আসুন নিজের চোখে একটু আয়না ধরি। জেন- জি দের আসলে আমরা কতটুকু বুঝেছি পেরেছিলাম? সত্যিকারের কতটুকু বুঝেছি? আর কী কী বোঝা বাকি?
বিদ্রোহী নজরুলের তারুণ্য আদর্শ দিয়ে শুরু করেছিলাম, তাঁকে দিয়েই শেষ করি। জাতীয় কবি ঠিকই বুঝেছিলেন। তারুণ্য কোনো দেশ কালের গণ্ডি দ্বারা আবদ্ধ নয়। তাঁর যৌবনের প্রমূর্তি আমরা দেখেছি ১৯৫২ সালে, মহান ১৯৭১ সালে, আবার জুলাই ২০২৪-এ।
তাই না? তাইতো।

“ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখীর ঝড়।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”
-কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় কবির চেতনায়, রচনায় নবীনদের জয়গান বারবার প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি তরুণদের বীর আখ্যায়িত করে সমাজ সংস্কারে কীভাবে তারুণ্য অবদান রাখবে তার নির্দেশনাও দেন।
কর্মবীর আখ্যায়িত করে তিনি তরুণদের বলেছেন,
“প্রাণ-চঞ্চল প্রাচীর তরুণ, কর্মবীর,
হে মানবতার প্রতীক গর্ব উচ্চশির।
দিব্যচক্ষে দেখিতেছি, তোরা দৃপ্তপদ
সকলের আগে চলিবি পারায়ে গিরি ও নদ,
মরু-সঞ্চর গতি-চপল।
অগ্র পথিক রে পাঁওদল,
জোর কদম চল রে চল।”
আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড়া দেয়।
এই প্রজন্মকে নিয়ে আসলে আমরা কতটুকু ভরসা করতাম?
তার আগে আসুন দেখি, প্রজন্ম বলতে কী বুঝি?
“প্রজন্ম” শব্দটি একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আসা একদল লোককে বোঝায়। সহজ ভাষায়, প্রজন্ম মানে একদল মানুষ যাঁরা একটি নিদির্ষ্ট সময় জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন। সেই সময়ের সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেন। মহাকালের রিলে রেসের ব্যাটনটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁদের হাতে থাকে সময়ের প্রয়োজনে তারপর তাঁরা সেটা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যাটনটি তুলে দেন।
প্রজন্মের সময়সীমা কী?
জনসংখ্যা জীববিজ্ঞান এবং জনসংখ্যায় , প্রজন্মের সময় হলো একটি জনসংখ্যার বংশের মধ্যে পরপর দুটি প্রজন্মের মধ্যে গড় সময়। মানব জনসংখ্যায়, প্রজন্মের সময় সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে থাকে, লিঙ্গ এবং সমাজের ওপর ভিত্তি করে বিস্তৃত তারতম্যসহ। সহজ ভাষায় জেনারেশন টাইমলাইন বা প্রজন্মের সময়সীমা খুব একটা পরিচিত নয়। দূরবীনে চোখ রাখলে দেখব এই প্রজন্মের সময়সীমাকে ভাগ করা হয়েছে নিম্নরূপে:
১. দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন (মহান প্রপিতামহ প্রজন্ম): জন্মকাল ১৯২৪ থেকে এর আগে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন টম ব্রোকাও। এই প্রজন্ম প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দা সামাল দেন। তাঁদের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা হয় দেশপ্রেমিক, অনুপ্রাণিত এক প্রজন্ম। সেই সঙ্গে তাঁরা সাইলেন্ট জেনারেশন অর্থাৎ নীরব প্রজন্মের পিতামাতা।
২. দ্য সাইলেন্ট জেনারেশন (নীরব প্রজন্ম): তাঁদের জন্মকাল ১৯২৫ থেকে ১৯৪২/৪৫ সাল অব্দি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর যেহেতু তাঁদের জন্ম, তাই তাঁরা তাঁদের বাবা-মায়েদের থেকে বেশি সতর্ক, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক মন্দা বিধ্বস্ত সমকালীন পরিবেশ তাঁদের জীবনকে সাশ্রয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তাঁরা পপ কালচারকে অবয়ব দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর রক শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আরও বহু কিছুতে তাঁদের অবদান আছে। তাঁরা সাম্রাজ্যবাদ থেকে পুঁজিবাদের বৈশ্বিক রূপান্তর দেখেছেন। তাই তাঁদের মূল্যবোধ পূর্ব প্রজন্মের মতো সবার নয়। প্রজন্মান্তরের পার্থক্য দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন থেকে তাই এই প্রজন্মে দৃশ্যমান। তাঁরা বেবি বুমার্স প্রজন্মের পিতামাতা।
৩. বেবি বুমার্স (শিশু বিস্ফোরণ): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪। তাঁদের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ একদিকে যেমন জন্মহার প্রচুর বেড়ে গেছে। ফলে শিশু জন্মের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এই কারণেই এই প্রজন্মের নাম হচ্ছে বেবি বুমার্স। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভাব কাটতে শুরু করেছেন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হওয়া শুরু হয়েছে কাজেই মানুষ পরিবার এবং সন্তান ধারণে আগ্রহী হতে শুরু করেছেন এই সময়। একা একা সৈন্যরা ঘরে ফেরা শুরু করেছেন। অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা সুযোগ বেড়েছে এই সময়ে। ফলে এই সময় প্রচুর সম্পদ জমতে শুরু করল শিক্ষা ও শিল্প ক্ষেত্রে। যার ফলে প্রযুক্তির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। তাঁরা পুঁজিবাদ থেকে নব্য পুঁজিবাদের আঁচ পেয়েছেন। যখন একটু একটু করে স্বাধীনতা নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। তাঁরা জেন এক্স এর পিতামাতা।
৪. জেনারেশন/ জেন - এক্স ( ল্যাচ কী / কারো দেখা শোনা, তত্ত্বাবধান ছাড়াই বেড়ে ওঠা): তাঁদের জন্মকাল ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল। এই সময়ে দিনশেষে অনেকেই খালি ঘরে ফিরতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে গিয়েছিল। আবার এখন থেকেই স্বামী স্ত্রীর দ্বৈত উপার্জন সংস্কৃতি চালু হয়। এই প্রজন্মই প্রথম যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের অধিকারী হন। এমটিভি অর্থাৎ কেবল টিভি দেখতে শুরু করেন। তাই কেউ কেউ তাঁদের এমটিভি জেনারেশনও বলে। এই প্রজন্ম এইডসের মহামারী দেখেন। যার ফলে নিরাপদ সেক্স এই কথাটা এখন থেকেই শোনা যাওয়া শুরু হয়। বিশ্ব রাজনীতিতে তাঁরা শীতল যুদ্ধ দেখেন ১৯৭০, ৮০, ৯০-এর দশকের এই সময়টা সাক্ষী। ফলে কর্মখালি নেই এই অবস্থার সঙ্গেও তাঁদের পরিচিতি ঘটতে থাকে। যখন অধিকাংশ দেশে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম উপনিবেশিক শাসনামলের যাঁতাকলে সুস্পষ্টভাবে পিষ্ট হয়েছেন। আমাদের বাংলাদেশের কথা ধরলে তাঁদের দাদারা ছিলেন ব্রিটিশ শাসিত, হয়তো কারো কারো বাবা। এই প্রজন্ম মিলেনিয়ালদের অভিভাবক।
৫. মিলেনিয়াল ( ওহ! সো প্রাউড প্রজন্ম): তাঁদের জন্ম কাল ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল। অন্য সব প্রজন্মের থেকে তাঁরা ভিন্ন। যান্ত্রিক উৎকর্ষতা, গৃহ কাজে যন্ত্রের ব্যবহার, ইন্টারনেট তাঁদের অন্য সব প্রজন্মের থেকে আলাদা করেছে। ইন্টারনেট নির্ভরশীলতা তাঁদের মধ্যে সাংঘাতিক। এই প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসী। কখনো কখনো অধিক পরিমাণ আত্মবিশ্বাস তাঁদেরকে নার্সিসিজমের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রজন্ম ধর্মীয়, জেন্ডার, রেসিজম, সেক্স্যুয়াল ওরিয়েন্টেশন-এর সচেতনতার যুগে প্রবেশ করেন। সাম্যতার প্রতি এই প্রজন্ম আগ্রহী। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলব, তাঁদের জন্ম একটি স্বাধীন দেশে।
৬. জেনারেশন/ জেন - জি/জেড: জন্ম কাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল। তাঁরা নীরব প্রজন্মের মতো। অর্থাৎ এই দুই প্রজন্মের মিল আছে। মিলটা কী? মিলটা হলো অনিশ্চয়তার। জেন - জিও করোনা অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে বাস করছেন। এই বিশ্ব অবস্থা অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে নানা নিয়ামক যেমন, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা, নব্যউপনিবেশবাদ বনাম বিউপনিবেশায়নের দ্বৈরথ। এই প্রজন্ম নিয়মিত তাঁদের সেলফোনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়। মানসিক স্বাস্থ্য, সাম্যতা, সমাধিকার, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তাঁরা সচেতন। এই প্রজন্ম জাতিগত বৈচিত্র্য, মুক্তমনা এবং পূর্ববর্তী সমস্ত প্রজন্ম থেকে সবচেয়ে বেশি প্রগতিশীল। তাঁরা পপ সংস্কৃতিকে ভিন্ন একটা রূপ দিয়েছে।
প্রথম থেকে চতুর্থ প্রজন্ম কিন্তু ধারণ করেন প্রজন্মান্তরের ক্ষত অবচেতন মনে।
ইন্টারজেনারেশনাল_ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত কী?
ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত তৈরি হয় যুগে যুগে প্রজন্মান্তরের নিপীড়নে, বঞ্চনায়। সেই অনুভব আমরা এখনো অবচেতন মনে ধারণ করে এই ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা। অর্থাৎ আমার পূর্বপুরুষদের কেউ যদি কোনো কারণে নিপীড়িত বা নির্যাতিত হয়ে মনোসামাজিক বা মনো দৈহিক আঘাতপ্রাপ্ত হন, তবে এই অনুভব এবং অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্ম বহন করে। গবেষণা বলছে, এ ধরনের ট্রমা যেগুলোর সঙ্গে সহিংসতা, আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য, কারাবাস সম্পৃক্ত, সেগুলোর ক্ষত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষ বহন করে। এর একটা চমৎকার উদাহরণ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রায় ১ লাখ শিশুকে পিতামাতার কাছ থেকে চুরি করে চার্চে এবং সরকারিভাবে বড় করা হয় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত।
পরবর্তীতে দেখা যায় এই শিশুদের নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে আনা হলো, এর প্রত্যেকটি তথ্য তার সচেতন মন ভুলে গেলেও অবচেতনভাবে সে মনে রাখল। ফলে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেই শুধু নয়, এই শিশুদের উত্তরাধিকারও বংশ পরম্পরায় প্রজন্মান্তরের ক্ষত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এপিজেনেটিক্স বলছে, এটা তাঁদের জিনের ওপরও বংশ পরম্পরায় প্রভাব বিস্তার করেছে। বলা হচ্ছে এটা ডিএনএ-এর কোডের কোনো পরিবর্তন করে না, কিন্তু এমন কিছু পরিবর্ধন করে যা প্রজন্মান্তরে পরবর্তী উত্তরাধিকাররা এই ক্ষতর পরিমাণ পরিণাম ভোগ করে। যা পরবর্তী প্রজন্মকে বিষণ্নতা, নানাবিধ মানসিক ব্যাধি, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
ভয়ংকর কথা! তাই না? আসুন বর্তমানে ফিরি। সহজ ভাষায় বলা যায় বুমারসরা এখন নানা দাদা, জেন এক্স' রা এখন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের বাবা মা।
মিলেনিয়ালরা চাকরি করছেন। জেন জিরা ছাত্র। তাঁদের কিন্তু ইন্টারজেনারেশনাল ট্রমা/ প্রজন্মান্তরের ক্ষত নেই। এটাই কি মনস্তাত্ত্বিক মূল বিষয়? এটাই কি সাইকোপলিটিক্স ঘুরে যাওয়ার কারণ?
মজার ব্যাপার হলো এই বিভিন্ন প্রজন্মের কর্ম ক্ষেত্রের ভূমিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে,
১. এক্সিকিউটিভ পজিশনে বসে আছেন:
বুমারসরা ৬৬%
জেন এক্সরা ২৮%
মিলেনিয়ালরা ৬%
২. রেভিনিউ জেনারেট করছেন
বুমারসরা ৩২%
জেন এক্সরা ৫৭%
মিলেনিয়ালরা ১১%
৩. অভিযোজন প্রবণতা
বুমারসদের ১০%
জেন এক্সরা ৪৯%
মিলেনিয়ালরা ৪১%
৪. কস্ট (খরচ) এফেকটিভ
বুমারসরা ৫৯%
জেন এক্সরা ৩৪%
মিলেনিয়ালরা ৭%
৫. প্রযুক্তিগত জ্ঞান
বুমারসদের ৪%
জেন এক্সদের ১৮%
মিলেনিয়ালদের ৭৮%
৬. আন্ত সম্পর্ক তৈরিতে দক্ষতা
বুমারসদের ৩৪%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ১৩%
৭. সমস্যার সমাধানে দক্ষতা
বুমারসদের ২৬%
জেন এক্সদের ৫৭%
মিলেনিয়ালদের ১৭%
৮. যৌথভাবে কাজ করবার প্রয়াস (কোলাবরেশন)
বুমারসদের ২০%
জেন এক্সদের ৫৩%
মিলেনিয়ালদের ২৭%
এবার বাংলাদেশের যদি জনসংখ্যার পিরামিডটা খেয়াল করেন তবে ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক (২০২১) এর তথ্য অনুসারে দেখবেন দেখবেন, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ এই তারুণ্যের উপস্থিতি সর্বাধিক।
চিত্র: ১
পিরামিডটা খেয়াল করলে দেখবেন এখানে নারী পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান সমান। এই তারুণ্যের শক্তি কতটুকু আমরা কি টের পাচ্ছি? জেন- জিদের নিয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত অন্তত বাংলাদেশে নেই।
তবে এইটুকুই চাহিদা এই অরাজনৈতিক বিপ্লব যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি পরিবর্তন আনে। বৈষম্যবিহীন আন্দোলন ছাত্রদের পাহাড় থেকে সমতলে পারস্পরিক সৌহার্দ্যর নিদর্শন।
ইতিমধ্যেই বাজারে সবজির দাম কমেছে সিন্ডিকেটের দখলবিহীন বাজারদর কমেছে। লুট হওয়া জিনিসপত্র গণভবনে ফেরত আসছে। পুলিশবিহীন সড়কে নিরাপদে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে।
কিন্তু এবার আসুন নিজের চোখে একটু আয়না ধরি। জেন- জি দের আসলে আমরা কতটুকু বুঝেছি পেরেছিলাম? সত্যিকারের কতটুকু বুঝেছি? আর কী কী বোঝা বাকি?
বিদ্রোহী নজরুলের তারুণ্য আদর্শ দিয়ে শুরু করেছিলাম, তাঁকে দিয়েই শেষ করি। জাতীয় কবি ঠিকই বুঝেছিলেন। তারুণ্য কোনো দেশ কালের গণ্ডি দ্বারা আবদ্ধ নয়। তাঁর যৌবনের প্রমূর্তি আমরা দেখেছি ১৯৫২ সালে, মহান ১৯৭১ সালে, আবার জুলাই ২০২৪-এ।
তাই না? তাইতো।

ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
৩ ঘণ্টা আগে
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
৩ ঘণ্টা আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্কা নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহটি হয়নি।
৪ ঘণ্টা আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ দিন আগে
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—এ চারটি বামপন্থী দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আপনারা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিলেন? আপনাদের মূল আপত্তিগুলো কী ছিল?
আমাদের প্রথম আপত্তি ছিল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত সংযুক্ত না করা। যেসব বিষয়ে সবাই মিলে একমত হয়েছি বা মোটামুটি একমত হয়েছি, সেসব যুক্ত করা ছাড়া আমরা স্বাক্ষর করব না। যেহেতু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল, সেটা স্বাক্ষর করলে তো মেনে নেওয়া হতো। সেটা জাতীয় সংসদে হলে অন্য কথা ছিল বা কোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সেটা হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সেটা মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন সে রকম কোনো ফোরাম না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যে আসার জন্য একটা চেষ্টা, একটা উদ্যোগ।
জুলাই সনদ তৈরি করার সময় এর পটভূমি ধরে আমরা ইতিহাসকে সঠিকভাবে লেখার জন্য বারবার ইনপুট দিয়েছি। আমাদের দলসহ অন্য দলের নেতারা সেটা বলেছেন। কিন্তু সনদে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকে পুরোপুরি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ছোট ছোট অনেক ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টা কীভাবে এল, সেটা তো থাকা দরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তো থাকতে হবে। যদিও বিশাল আকারে ইতিহাস লেখার জায়গা এটা না। শেষে আসবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা। এর মধ্যে মাঝখানের ঘটনাগুলো শুধু উল্লেখ করলেই চলত। সেটা তো করা হয়নি। যাঁরা খসড়াটি করেছেন, তাঁদের আমি অবশ্যই অযোগ্য বলব না। একেকজনের কথায় একেকটা বিষয় ঢুকে গেছে। কারও সঙ্গে তাঁরা বিতর্ক করেননি। ফলে আমাদের বক্তব্যগুলোকে বেমালুম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মনে করেছেন, আমাদের বক্তব্য বাদ দিলে বুঝি কোনো সমস্যা হবে না। আবার কোনো কোনো দল যা-ই বলেছে, সেটাই তাঁরা রেখেছেন; যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বক্তব্য একপেশে হয়েছে।
আবার অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের কথা হলো, এই সনদ পরিপূর্ণ হলে সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো লিপিবদ্ধ থাকত। কিন্তু সেসব রাখা হয়নি। সনদের ভেতরে আবার তাঁরা লিখেছেন—যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়া কাজ করতে পারবে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, তারাও তো কাজ করবে। তারা প্রয়োজনবোধে একমত না হলে সংসদ ত্যাগ করবে। নতুবা সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের কাছে মতামত তুলে ধরবে। এসব তো ম্যান্ডেট পাওয়া না-পাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।
এটা তো বিএনপির ভাষা। বিএনপি মনে করে, তারা ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী সংসদে যাবে। সেটা ভালো কথা। কিন্তু আমরা ম্যান্ডেট পাব কি পাব না সেটা ভিন্ন কথা। আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি চুপ না থাকার জন্য। আমরা যেমনভাবে সংসদের ভেতরে কথা বলব, তেমনি সংসদের বাইরেও কথা বলব। আমরা আবার রাজপথে আন্দোলনও করব। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কয়েকটি বামপন্থী দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি।
তবে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, যেসব বিষয়ে আমরা সহমত জ্ঞাপন করেছি (সেটার রেকর্ড আছে) সেটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই যে সাংবিধানিক প্রশ্ন, আইনের প্রশ্নসহ সংস্কার নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে তারা একটা ঐতিহাসিক দলিল তৈরি করতে পেরেছে। এই দলিল থেকে বোঝা যাবে, কোন দলের কী দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমরা বলেছি, গায়ের জোরে সংবিধান বাতিল করার দাবি—এটা অসাংবিধানিক অপরাধ। আমরা মনে করি, সংবিধান বাতিল করার দাবি তোলা যাবে এবং নতুন সংবিধান করার দাবিও তোলা যাবে—সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হবে না। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যদি বাতিল করতে চায়, সেটা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। তারা ৭ (ক) ধারার বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। এটা নিয়ে আমরা আপত্তি করেছি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষে আমরা পিআর পদ্ধতির পক্ষে, কিন্তু দুই বাসদ ও সিপিবি উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে না।
তবে আমরা যে কয়েকটি বাম দল এসব বিষয়ে একমত হয়েছি, আমরা আগামী দিনে সংসদের ভেতরে ও বাইরে এসব নিয়ে সংগ্রাম এবং রাজনৈতিকভাবে জনমত গঠনের কাজ করব। সেটা আমরা অঙ্গীকার করেছি।
এরপর আপনারা একটা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এটা দেওয়ার কারণ কী?
আমরা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম না, সেটা নিয়ে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটা আমাদের দুজন প্রতিনিধি হাতে হাতে ঐকমত্য কমিশনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর ঐকমত্য কমিশনের বক্তব্য কী?
তারা বলেছে, আপনারা অনেক কষ্ট করে, সময় নিয়ে বক্তব্য বা নোট দিয়েছেন, আপনারা এটার অংশীদার হন। আমরা বলেছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে কেন আমরা আত্মসমর্পণ করব মৌলিক, দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে? বিএনপি যেমন প্রত্যাশা করছে, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। তারাসহ তাদের মিত্ররা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাবে। তারা যেসব নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলোতে তারা পক্ষে নিতে পারে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার আগেই আমাদের মেনে নিতে হবে, সংবিধান বাতিলের ১৪ ধারা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ না, নারী ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দরকার নেই, সংবিধানের ১৫০ (২) ধারা মতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ না থাকা—এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে তো আমরা সনদে স্বাক্ষর করে দাসখত দিতে পারি না। এই ফাঁদেও পা দিতে পারি না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এসব বিষয় যদি সংশোধন না করা হয়, তাহলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি না।
এনসিপি সনদের বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্ন নিয়ে স্বাক্ষর করেনি। এটাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
তাদের তো সনদ নিয়ে কোনো দাবি নেই। তারা সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের তো সনদের খসড়া নিয়েই আপত্তি। কিন্তু তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা শুধু বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিতর্ক তুলে স্বাক্ষর করেনি।
আপনি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছিলেন। সে সময়ে তিন জোটের রূপরেখাকে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন কোনো দলই গুরুত্ব দেয়নি। এখন আপনি জুলাই সনদ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখাকে নির্দিষ্ট করে সংবিধানের সঙ্গে আপগ্রেড করা হয়নি। সে সময় যে তিনটি জোট এই রূপরেখাতে স্বাক্ষর করেছিল, তারা কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার অনেক কিছুই মানেনি। তারা সেখানকার রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। তা ছাড়া, এটার কোনো আইনি রূপও দেওয়া হয়নি। কথা ছিল তারা পরস্পরের প্রতি কোনো বৈরী আচরণ করবে না। সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। পরস্পর পরস্পরকে ধ্বংস করার জন্য এক দল অন্য দলের প্রতি বিরূপ আচরণ করেছে। এগুলোকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আচরণ বা সাংবিধানিক আইন মেনে চলা বলা যায় না।
কিন্তু এবারের জুলাই সনদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এর ধারা ও উপধারা ধরে বিতর্ক করে কে পক্ষে আছে আর কে বিপক্ষে আছে, তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সে কারণে বলতে চাই, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখার সঙ্গে এবারের জুলাই সনদটা অনেক অগ্রসর দলিল বলতে হবে। কোনো দল যদি এর কোনো বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে পালন করতে না চায়, তাহলে সব রাজনৈতিক দল তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। জুলাই সনদ একেবারেই সুনির্দিষ্ট। কিন্তু নব্বইয়ের রূপরেখা এভাবে সুনির্দিষ্ট ছিল না। আবার সেই রূপরেখার মধ্যে কোনো গভীরতা ছিল না। তারপরেও যে কিছু হয়নি, সেটা বলা যাবে না। কারণ, নব্বইয়ের পরে সব দল কিন্তু সংসদীয় সরকার পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পরেও নানা অঘটন ঘটেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে?
এখন দ্রুত দরকার একটা সংসদ নির্বাচন করা। যে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এখন কোনো জবাবদিহি করা যাচ্ছে না। আমরা যেভাবে গত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পেরেছি, এখন কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তা করতে পারছি না। এখন কোনো বিষয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করলে তারা বলে, কোনো কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার পুলিশও একই কথা বলছে।
রাজনৈতিক দলগুলো দেশটাকে ভাগাভাগি করার মতো করে কথা বলছে। এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, আবার সবাই মিলে ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এখানে এখন একটা আজব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা এ সরকার দিতে পারছে না। এ জন্য নির্বাচন করা দরকার। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারপরও নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তখন আমরা একটা রাজনৈতিক ব্যাকরণের মধ্যে প্রবেশ করতে পারব।
নির্বাচিত সরকার ভালো কাজ করলে পক্ষে থাকব আর মন্দ কাজ করলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। আগে থেকে বলা সম্ভব নয়, যারা দায়িত্বে থাকবে তারা কতটুকু পারছে বা পারছে না। তারা যদি জনগণের পক্ষে না থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আগাম নির্বাচন দাবি করব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
আপনারা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিলেন? আপনাদের মূল আপত্তিগুলো কী ছিল?
আমাদের প্রথম আপত্তি ছিল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত সংযুক্ত না করা। যেসব বিষয়ে সবাই মিলে একমত হয়েছি বা মোটামুটি একমত হয়েছি, সেসব যুক্ত করা ছাড়া আমরা স্বাক্ষর করব না। যেহেতু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল, সেটা স্বাক্ষর করলে তো মেনে নেওয়া হতো। সেটা জাতীয় সংসদে হলে অন্য কথা ছিল বা কোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সেটা হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সেটা মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন সে রকম কোনো ফোরাম না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যে আসার জন্য একটা চেষ্টা, একটা উদ্যোগ।
জুলাই সনদ তৈরি করার সময় এর পটভূমি ধরে আমরা ইতিহাসকে সঠিকভাবে লেখার জন্য বারবার ইনপুট দিয়েছি। আমাদের দলসহ অন্য দলের নেতারা সেটা বলেছেন। কিন্তু সনদে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকে পুরোপুরি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ছোট ছোট অনেক ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টা কীভাবে এল, সেটা তো থাকা দরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তো থাকতে হবে। যদিও বিশাল আকারে ইতিহাস লেখার জায়গা এটা না। শেষে আসবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা। এর মধ্যে মাঝখানের ঘটনাগুলো শুধু উল্লেখ করলেই চলত। সেটা তো করা হয়নি। যাঁরা খসড়াটি করেছেন, তাঁদের আমি অবশ্যই অযোগ্য বলব না। একেকজনের কথায় একেকটা বিষয় ঢুকে গেছে। কারও সঙ্গে তাঁরা বিতর্ক করেননি। ফলে আমাদের বক্তব্যগুলোকে বেমালুম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মনে করেছেন, আমাদের বক্তব্য বাদ দিলে বুঝি কোনো সমস্যা হবে না। আবার কোনো কোনো দল যা-ই বলেছে, সেটাই তাঁরা রেখেছেন; যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বক্তব্য একপেশে হয়েছে।
আবার অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের কথা হলো, এই সনদ পরিপূর্ণ হলে সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো লিপিবদ্ধ থাকত। কিন্তু সেসব রাখা হয়নি। সনদের ভেতরে আবার তাঁরা লিখেছেন—যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়া কাজ করতে পারবে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, তারাও তো কাজ করবে। তারা প্রয়োজনবোধে একমত না হলে সংসদ ত্যাগ করবে। নতুবা সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের কাছে মতামত তুলে ধরবে। এসব তো ম্যান্ডেট পাওয়া না-পাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।
এটা তো বিএনপির ভাষা। বিএনপি মনে করে, তারা ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী সংসদে যাবে। সেটা ভালো কথা। কিন্তু আমরা ম্যান্ডেট পাব কি পাব না সেটা ভিন্ন কথা। আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি চুপ না থাকার জন্য। আমরা যেমনভাবে সংসদের ভেতরে কথা বলব, তেমনি সংসদের বাইরেও কথা বলব। আমরা আবার রাজপথে আন্দোলনও করব। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কয়েকটি বামপন্থী দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি।
তবে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, যেসব বিষয়ে আমরা সহমত জ্ঞাপন করেছি (সেটার রেকর্ড আছে) সেটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই যে সাংবিধানিক প্রশ্ন, আইনের প্রশ্নসহ সংস্কার নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে তারা একটা ঐতিহাসিক দলিল তৈরি করতে পেরেছে। এই দলিল থেকে বোঝা যাবে, কোন দলের কী দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমরা বলেছি, গায়ের জোরে সংবিধান বাতিল করার দাবি—এটা অসাংবিধানিক অপরাধ। আমরা মনে করি, সংবিধান বাতিল করার দাবি তোলা যাবে এবং নতুন সংবিধান করার দাবিও তোলা যাবে—সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হবে না। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যদি বাতিল করতে চায়, সেটা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। তারা ৭ (ক) ধারার বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। এটা নিয়ে আমরা আপত্তি করেছি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষে আমরা পিআর পদ্ধতির পক্ষে, কিন্তু দুই বাসদ ও সিপিবি উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে না।
তবে আমরা যে কয়েকটি বাম দল এসব বিষয়ে একমত হয়েছি, আমরা আগামী দিনে সংসদের ভেতরে ও বাইরে এসব নিয়ে সংগ্রাম এবং রাজনৈতিকভাবে জনমত গঠনের কাজ করব। সেটা আমরা অঙ্গীকার করেছি।
এরপর আপনারা একটা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এটা দেওয়ার কারণ কী?
আমরা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম না, সেটা নিয়ে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটা আমাদের দুজন প্রতিনিধি হাতে হাতে ঐকমত্য কমিশনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর ঐকমত্য কমিশনের বক্তব্য কী?
তারা বলেছে, আপনারা অনেক কষ্ট করে, সময় নিয়ে বক্তব্য বা নোট দিয়েছেন, আপনারা এটার অংশীদার হন। আমরা বলেছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে কেন আমরা আত্মসমর্পণ করব মৌলিক, দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে? বিএনপি যেমন প্রত্যাশা করছে, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। তারাসহ তাদের মিত্ররা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাবে। তারা যেসব নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলোতে তারা পক্ষে নিতে পারে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার আগেই আমাদের মেনে নিতে হবে, সংবিধান বাতিলের ১৪ ধারা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ না, নারী ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দরকার নেই, সংবিধানের ১৫০ (২) ধারা মতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ না থাকা—এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে তো আমরা সনদে স্বাক্ষর করে দাসখত দিতে পারি না। এই ফাঁদেও পা দিতে পারি না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এসব বিষয় যদি সংশোধন না করা হয়, তাহলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি না।
এনসিপি সনদের বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্ন নিয়ে স্বাক্ষর করেনি। এটাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
তাদের তো সনদ নিয়ে কোনো দাবি নেই। তারা সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের তো সনদের খসড়া নিয়েই আপত্তি। কিন্তু তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা শুধু বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিতর্ক তুলে স্বাক্ষর করেনি।
আপনি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছিলেন। সে সময়ে তিন জোটের রূপরেখাকে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন কোনো দলই গুরুত্ব দেয়নি। এখন আপনি জুলাই সনদ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখাকে নির্দিষ্ট করে সংবিধানের সঙ্গে আপগ্রেড করা হয়নি। সে সময় যে তিনটি জোট এই রূপরেখাতে স্বাক্ষর করেছিল, তারা কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার অনেক কিছুই মানেনি। তারা সেখানকার রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। তা ছাড়া, এটার কোনো আইনি রূপও দেওয়া হয়নি। কথা ছিল তারা পরস্পরের প্রতি কোনো বৈরী আচরণ করবে না। সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। পরস্পর পরস্পরকে ধ্বংস করার জন্য এক দল অন্য দলের প্রতি বিরূপ আচরণ করেছে। এগুলোকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আচরণ বা সাংবিধানিক আইন মেনে চলা বলা যায় না।
কিন্তু এবারের জুলাই সনদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এর ধারা ও উপধারা ধরে বিতর্ক করে কে পক্ষে আছে আর কে বিপক্ষে আছে, তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সে কারণে বলতে চাই, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখার সঙ্গে এবারের জুলাই সনদটা অনেক অগ্রসর দলিল বলতে হবে। কোনো দল যদি এর কোনো বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে পালন করতে না চায়, তাহলে সব রাজনৈতিক দল তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। জুলাই সনদ একেবারেই সুনির্দিষ্ট। কিন্তু নব্বইয়ের রূপরেখা এভাবে সুনির্দিষ্ট ছিল না। আবার সেই রূপরেখার মধ্যে কোনো গভীরতা ছিল না। তারপরেও যে কিছু হয়নি, সেটা বলা যাবে না। কারণ, নব্বইয়ের পরে সব দল কিন্তু সংসদীয় সরকার পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পরেও নানা অঘটন ঘটেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে?
এখন দ্রুত দরকার একটা সংসদ নির্বাচন করা। যে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এখন কোনো জবাবদিহি করা যাচ্ছে না। আমরা যেভাবে গত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পেরেছি, এখন কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তা করতে পারছি না। এখন কোনো বিষয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করলে তারা বলে, কোনো কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার পুলিশও একই কথা বলছে।
রাজনৈতিক দলগুলো দেশটাকে ভাগাভাগি করার মতো করে কথা বলছে। এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, আবার সবাই মিলে ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এখানে এখন একটা আজব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা এ সরকার দিতে পারছে না। এ জন্য নির্বাচন করা দরকার। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারপরও নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তখন আমরা একটা রাজনৈতিক ব্যাকরণের মধ্যে প্রবেশ করতে পারব।
নির্বাচিত সরকার ভালো কাজ করলে পক্ষে থাকব আর মন্দ কাজ করলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। আগে থেকে বলা সম্ভব নয়, যারা দায়িত্বে থাকবে তারা কতটুকু পারছে বা পারছে না। তারা যদি জনগণের পক্ষে না থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আগাম নির্বাচন দাবি করব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড
১২ আগস্ট ২০২৪
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
৩ ঘণ্টা আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্কা নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহটি হয়নি।
৪ ঘণ্টা আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত। আহা, কী পরিষ্কার সে খালের জল, কোথাও একটা শুকনো পাতা পড়ে নেই জলের ওপর। খালের পাড়ে স্বর্ণচাঁপা, বকুল, কাঠবাদাম, চালতা, ছাতিম গাছগুলোর ছত্রবৎ পত্রাচ্ছাদন, গোড়া বাঁধানো নারকেলগাছের সারি। খালের জলে সাঁতরে বেড়াচ্ছে, লাফ দিচ্ছে মাছেরা। মাঝে মাঝে পাড়ে রয়েছে জলের ওপর বাড়ানো জেটির মতো রেলিংঘেরা পাকা চাতাল, যার ওপর দাঁড়িয়ে জলের কাছে যাওয়া যায়, খালের জলে বড়শি ফেলে মাছ ধরা যায়। ওপরে হেমন্তের ঝকঝকে নীল আকাশ, রোদের ঝিলিক। খালের পশ্চিম পাড়ে একটি অভিজাত এলাকার মনোরম ভবন। দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন ঢাকা শহর না—নেদারল্যান্ডসের কোনো এক জায়গা।
নেদারল্যান্ডসের গিথুর্ন গ্রামের ছবি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা হয়তো জানেন যে, সে গ্রামটিতে গাড়ি চালানোর মতো কোনো রাস্তা নেই, আছে গ্রামজুড়ে চলাচলের জন্য চমৎকার খাল আর হাঁটার পথ। একটা গ্রামে কোনো গাড়ির রাস্তা নেই, খাল ও খালের ওপর আছে ১৭০টির বেশি সেতু। বৈদ্যুতিক নৌকায় করে সে গ্রামের অধিবাসীরা এখান থেকে সেখানে যান। আহা, গাড়ি ও জ্বালানির দূষণমুক্ত কী শান্ত মনোরম সে গ্রাম! খালের পাড় বাঁধানো, দুই পাড়ে থাকা অনুচ্চ ঘরবাড়ি, আঙিনার কোথাও কোনো খোলা মাটি নেই, পুরোটাই সবুজ কার্পেটের মতো ঘাসে ঢাকা, মাঝে মাঝে ফুলগাছের ঝোপ। যেন সে এক স্বপ্নের জায়গা, পৃথিবীর বুকেই স্বর্গের শোভা। ঢাকার এ জায়গাটি দেখেও সেই গিথুর্ন গ্রামের ছবিটা চোখে ভাসছিল। ধন্যবাদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে নিকুঞ্জ খালের এমন সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য।
আহা রে, ঢাকা শহরের সব খাল যদি এরূপ সুন্দর হতো! এ কথা ভাবতেই মনের মধ্যে ভেসে উঠল এর বিপরীত দৃশ্য। খাল দখল করতে করতে সেগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও হয়ে পড়েছে ময়লার ভাগাড়, কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ে ভরা মশককুলের অভয়ারণ্য। বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নির্গমনের নিকাশনালার মতো ব্যবহৃত হচ্ছে কোনো কোনো খাল। পচা দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর সেই পরিবেশেই কেটে যাচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীর দিনকাল। খালগুলো যেভাবে মরতে বসেছে, তাতে আগামী ১০ বছরও লাগবে না ঢাকা শহর খালশূন্য হতে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরে খালের সংখ্যা ৪৭টি। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী ৫৬টি। ড্যাপেও খালের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৪৩টি।
ধরা হয়, অতীতে ঢাকা শহরে ৪৭টি খাল সচল ছিল। শহরের চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেসব খাল। নৌকা ও নৌযান চলত সেসব খালে। পণ্য পরিবহন ও লোক চলাচলে সে সময় খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। একসময় শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত একটি খাল ছিল, যার নাম ছিল পরীবাগ খাল। ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে তার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সেই খাল আর এখন নেই। এভাবে ধোলাইখাল, রায়েরবাজার, গোপীবাগ, নারিন্দা, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি ইত্যাদি খালগুলোরও এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। ধানমন্ডি লেকটাই একসময় ছিল খাল, হাতিরঝিলের খালে পিলখানা থেকে হাতির পালকে নিয়ে যাওয়া হতো গোসল করাতে। মোগল শাসকেরা ঢাকা শহরে বহুসংখ্যক খাল থাকায় ঢাকাকে রাজধানী করার চিন্তা করেছিল, খালগুলো তাদের চলাচল ও প্রতিরক্ষার জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শহরের জলাবদ্ধতা দূর ও পানি নিষ্কাশনের জন্যও ছিল সেগুলো সহায়ক। সেসব এখন ইতিহাস। এখন এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়।
ঢাকা শহরের সব খাল উদ্ধার করা প্রথম কাজ। উদ্ধারের পর সেসব খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে বা হাঁটার পথ তৈরি ও বাহারি গাছপালা লাগিয়ে সুশোভন করা দ্বিতীয় কাজ। তৃতীয় কাজ হলো খালগুলোতে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাটারি, বিদ্যুৎ ও হস্তচালিত নৌযান চালনার উদ্যোগ নেওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কোনো নৌযান সেসব খালে চলাচলের অনুমতি না দেওয়া হবে খালের জলজ জীবগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা ও দূষণ কমানোর গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ওয়াকওয়ে যেন শুধু ওয়াক তথা হাঁটার জন্যই ব্যবহৃত হয়, সে রাস্তায় যেন কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল না চলে। সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো খাল ও তার চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে উত্তম ব্যবস্থাপনার চর্চা অব্যাহত রাখা। খাল ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে সেখানকার সব অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণই এসব ব্যবস্থাপনাকে সুচারুরূপে বাস্তবায়নের মূল সূত্র, এর সঙ্গে থাকবে সঠিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা, উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনার প্রচারণা। এ কাজে দরকার রাষ্ট্রীয় বা সরকারের সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ, রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণের অংশগ্রহণ। অনেক তরুণ এখন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে এরূপ কাজে অংশ নিতে আগ্রহী। তাদের উৎসাহিত করে নিরাপদভাবে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করবেন জবাবদিহির মধ্যে, স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিলেমিশে। শোভাবর্ধনের চারাগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে সিটি করপোরেশনগুলোকেই। তবে এককভাবে শুধু দুই সিটি করপোরেশনের ওপর সম্পূর্ণ বিষয়টি চাপিয়ে দিলে হবে না। খালগুলোর দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী, নিশ্চিত যে তাঁরা কেউই সেসব খালের দখল স্বেচ্ছায় ছাড়বেন না। দখলমুক্ত করার জন্য জোর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা ও আইন প্রয়োগ করা দরকার।
প্রকৃতিতে প্রবহমান নদী আর খালগুলো হলো আমাদের দেহের শিরা-উপশিরার মতো। একটি ভূখণ্ডের জীবনরেখা বলা হয় এসব জলস্রোতকে। প্রবহমান এসব জলাশয় যেমন জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মাটিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও সহায়ক। ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও খালগুলোকে সচল করা দরকার। বর্তমানে ঢাকা শহরে ২৬টি খালের অস্তিত্ব চোখে দেখা গেলেও বাকি ২১টি খাল নেই। কোথায় কোথায় সেসব খাল ছিল, তা নিশ্চয়ই অতীতের মানচিত্রগুলোতে পাওয়া যাবে। সেগুলো আদৌ উদ্ধার বা দখলমুক্ত করা যাবে তা দুরাশা। উদ্ধার করা গেলে সেগুলো খনন করে সচল ও শোভাময় করা উচিত। জার্মানির বার্লিন শহরে খালে করে ক্যানালক্রুজ করার সময় খালপাড়ের দুই পাশের বিভিন্ন স্থাপনা ও নাগরিক সৌন্দর্য, সেতু, রেস্তোরাঁ দেখতে দেখতে অভিভূত হতাম। ভাবতাম, জলের দেশ, নদীর দেশ, খালের দেশ বাংলাদেশ; অথচ সে দেশের শহরগুলোর খালে কেন এ রকম নৌ-পর্যটন করা যাবে না?
খালপাড় ভেঙে যাতে কোনো নগরবাসীর এক ফুট জমিও নষ্ট না হয় সে জন্য ভেনিস, কোপেনহেগেন, প্যারিস ইত্যাদি শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও নদীর দুই পাড় যেভাবে পাকা করে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে, সেভাবে আমাদের প্রবহমান খালগুলোর পাড়ও বেঁধে দেওয়া যায়। নগরীর খালগুলো নিয়ে একটি চমৎকার পরিকল্পনার সুযোগ রয়েছে ড্যাপ বাস্তবায়নের কারণে। চলাচল, পরিবহন, জলাবদ্ধতা নিরসন, দূষণ হ্রাস, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটন, সৌন্দর্যবর্ধন, স্থানীয় মানুষের আয়বর্ধন, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা ও জরিপকাজ নিশ্চয়ই সহায়ক হবে। সবারই মনে রাখা উচিত, প্রাকৃতিক প্রবাহকে রুদ্ধ করার অধিকার কারও নেই, তার ফল কখনো ভালো হয় না। এ নিয়ে কোনো খণ্ডিত পরিকল্পনা নয়, নিতে হবে সমন্বিত সামগ্রিক পরিকল্পনা। তাহলে আমরাও দেখতে পাব একটি মনোরম মহানগর, সুশোভিত খালসমৃদ্ধ একটি সুশোভন পরিবেশ। কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে নিকুঞ্জ খালটি যদি এত সুন্দর করা যায়, সুন্দর রাখা যায়, তাহলে অন্যগুলো কেন এরূপ সুন্দর হবে না?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত। আহা, কী পরিষ্কার সে খালের জল, কোথাও একটা শুকনো পাতা পড়ে নেই জলের ওপর। খালের পাড়ে স্বর্ণচাঁপা, বকুল, কাঠবাদাম, চালতা, ছাতিম গাছগুলোর ছত্রবৎ পত্রাচ্ছাদন, গোড়া বাঁধানো নারকেলগাছের সারি। খালের জলে সাঁতরে বেড়াচ্ছে, লাফ দিচ্ছে মাছেরা। মাঝে মাঝে পাড়ে রয়েছে জলের ওপর বাড়ানো জেটির মতো রেলিংঘেরা পাকা চাতাল, যার ওপর দাঁড়িয়ে জলের কাছে যাওয়া যায়, খালের জলে বড়শি ফেলে মাছ ধরা যায়। ওপরে হেমন্তের ঝকঝকে নীল আকাশ, রোদের ঝিলিক। খালের পশ্চিম পাড়ে একটি অভিজাত এলাকার মনোরম ভবন। দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন ঢাকা শহর না—নেদারল্যান্ডসের কোনো এক জায়গা।
নেদারল্যান্ডসের গিথুর্ন গ্রামের ছবি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা হয়তো জানেন যে, সে গ্রামটিতে গাড়ি চালানোর মতো কোনো রাস্তা নেই, আছে গ্রামজুড়ে চলাচলের জন্য চমৎকার খাল আর হাঁটার পথ। একটা গ্রামে কোনো গাড়ির রাস্তা নেই, খাল ও খালের ওপর আছে ১৭০টির বেশি সেতু। বৈদ্যুতিক নৌকায় করে সে গ্রামের অধিবাসীরা এখান থেকে সেখানে যান। আহা, গাড়ি ও জ্বালানির দূষণমুক্ত কী শান্ত মনোরম সে গ্রাম! খালের পাড় বাঁধানো, দুই পাড়ে থাকা অনুচ্চ ঘরবাড়ি, আঙিনার কোথাও কোনো খোলা মাটি নেই, পুরোটাই সবুজ কার্পেটের মতো ঘাসে ঢাকা, মাঝে মাঝে ফুলগাছের ঝোপ। যেন সে এক স্বপ্নের জায়গা, পৃথিবীর বুকেই স্বর্গের শোভা। ঢাকার এ জায়গাটি দেখেও সেই গিথুর্ন গ্রামের ছবিটা চোখে ভাসছিল। ধন্যবাদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে নিকুঞ্জ খালের এমন সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য।
আহা রে, ঢাকা শহরের সব খাল যদি এরূপ সুন্দর হতো! এ কথা ভাবতেই মনের মধ্যে ভেসে উঠল এর বিপরীত দৃশ্য। খাল দখল করতে করতে সেগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও হয়ে পড়েছে ময়লার ভাগাড়, কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ে ভরা মশককুলের অভয়ারণ্য। বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নির্গমনের নিকাশনালার মতো ব্যবহৃত হচ্ছে কোনো কোনো খাল। পচা দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর সেই পরিবেশেই কেটে যাচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীর দিনকাল। খালগুলো যেভাবে মরতে বসেছে, তাতে আগামী ১০ বছরও লাগবে না ঢাকা শহর খালশূন্য হতে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরে খালের সংখ্যা ৪৭টি। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী ৫৬টি। ড্যাপেও খালের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৪৩টি।
ধরা হয়, অতীতে ঢাকা শহরে ৪৭টি খাল সচল ছিল। শহরের চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেসব খাল। নৌকা ও নৌযান চলত সেসব খালে। পণ্য পরিবহন ও লোক চলাচলে সে সময় খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। একসময় শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত একটি খাল ছিল, যার নাম ছিল পরীবাগ খাল। ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে তার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সেই খাল আর এখন নেই। এভাবে ধোলাইখাল, রায়েরবাজার, গোপীবাগ, নারিন্দা, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি ইত্যাদি খালগুলোরও এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। ধানমন্ডি লেকটাই একসময় ছিল খাল, হাতিরঝিলের খালে পিলখানা থেকে হাতির পালকে নিয়ে যাওয়া হতো গোসল করাতে। মোগল শাসকেরা ঢাকা শহরে বহুসংখ্যক খাল থাকায় ঢাকাকে রাজধানী করার চিন্তা করেছিল, খালগুলো তাদের চলাচল ও প্রতিরক্ষার জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শহরের জলাবদ্ধতা দূর ও পানি নিষ্কাশনের জন্যও ছিল সেগুলো সহায়ক। সেসব এখন ইতিহাস। এখন এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়।
ঢাকা শহরের সব খাল উদ্ধার করা প্রথম কাজ। উদ্ধারের পর সেসব খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে বা হাঁটার পথ তৈরি ও বাহারি গাছপালা লাগিয়ে সুশোভন করা দ্বিতীয় কাজ। তৃতীয় কাজ হলো খালগুলোতে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাটারি, বিদ্যুৎ ও হস্তচালিত নৌযান চালনার উদ্যোগ নেওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কোনো নৌযান সেসব খালে চলাচলের অনুমতি না দেওয়া হবে খালের জলজ জীবগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা ও দূষণ কমানোর গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ওয়াকওয়ে যেন শুধু ওয়াক তথা হাঁটার জন্যই ব্যবহৃত হয়, সে রাস্তায় যেন কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল না চলে। সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো খাল ও তার চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে উত্তম ব্যবস্থাপনার চর্চা অব্যাহত রাখা। খাল ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে সেখানকার সব অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণই এসব ব্যবস্থাপনাকে সুচারুরূপে বাস্তবায়নের মূল সূত্র, এর সঙ্গে থাকবে সঠিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা, উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনার প্রচারণা। এ কাজে দরকার রাষ্ট্রীয় বা সরকারের সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ, রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণের অংশগ্রহণ। অনেক তরুণ এখন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে এরূপ কাজে অংশ নিতে আগ্রহী। তাদের উৎসাহিত করে নিরাপদভাবে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করবেন জবাবদিহির মধ্যে, স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিলেমিশে। শোভাবর্ধনের চারাগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে সিটি করপোরেশনগুলোকেই। তবে এককভাবে শুধু দুই সিটি করপোরেশনের ওপর সম্পূর্ণ বিষয়টি চাপিয়ে দিলে হবে না। খালগুলোর দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী, নিশ্চিত যে তাঁরা কেউই সেসব খালের দখল স্বেচ্ছায় ছাড়বেন না। দখলমুক্ত করার জন্য জোর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা ও আইন প্রয়োগ করা দরকার।
প্রকৃতিতে প্রবহমান নদী আর খালগুলো হলো আমাদের দেহের শিরা-উপশিরার মতো। একটি ভূখণ্ডের জীবনরেখা বলা হয় এসব জলস্রোতকে। প্রবহমান এসব জলাশয় যেমন জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মাটিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও সহায়ক। ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও খালগুলোকে সচল করা দরকার। বর্তমানে ঢাকা শহরে ২৬টি খালের অস্তিত্ব চোখে দেখা গেলেও বাকি ২১টি খাল নেই। কোথায় কোথায় সেসব খাল ছিল, তা নিশ্চয়ই অতীতের মানচিত্রগুলোতে পাওয়া যাবে। সেগুলো আদৌ উদ্ধার বা দখলমুক্ত করা যাবে তা দুরাশা। উদ্ধার করা গেলে সেগুলো খনন করে সচল ও শোভাময় করা উচিত। জার্মানির বার্লিন শহরে খালে করে ক্যানালক্রুজ করার সময় খালপাড়ের দুই পাশের বিভিন্ন স্থাপনা ও নাগরিক সৌন্দর্য, সেতু, রেস্তোরাঁ দেখতে দেখতে অভিভূত হতাম। ভাবতাম, জলের দেশ, নদীর দেশ, খালের দেশ বাংলাদেশ; অথচ সে দেশের শহরগুলোর খালে কেন এ রকম নৌ-পর্যটন করা যাবে না?
খালপাড় ভেঙে যাতে কোনো নগরবাসীর এক ফুট জমিও নষ্ট না হয় সে জন্য ভেনিস, কোপেনহেগেন, প্যারিস ইত্যাদি শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও নদীর দুই পাড় যেভাবে পাকা করে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে, সেভাবে আমাদের প্রবহমান খালগুলোর পাড়ও বেঁধে দেওয়া যায়। নগরীর খালগুলো নিয়ে একটি চমৎকার পরিকল্পনার সুযোগ রয়েছে ড্যাপ বাস্তবায়নের কারণে। চলাচল, পরিবহন, জলাবদ্ধতা নিরসন, দূষণ হ্রাস, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটন, সৌন্দর্যবর্ধন, স্থানীয় মানুষের আয়বর্ধন, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা ও জরিপকাজ নিশ্চয়ই সহায়ক হবে। সবারই মনে রাখা উচিত, প্রাকৃতিক প্রবাহকে রুদ্ধ করার অধিকার কারও নেই, তার ফল কখনো ভালো হয় না। এ নিয়ে কোনো খণ্ডিত পরিকল্পনা নয়, নিতে হবে সমন্বিত সামগ্রিক পরিকল্পনা। তাহলে আমরাও দেখতে পাব একটি মনোরম মহানগর, সুশোভিত খালসমৃদ্ধ একটি সুশোভন পরিবেশ। কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে নিকুঞ্জ খালটি যদি এত সুন্দর করা যায়, সুন্দর রাখা যায়, তাহলে অন্যগুলো কেন এরূপ সুন্দর হবে না?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড
১২ আগস্ট ২০২৪
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
৩ ঘণ্টা আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্কা নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহটি হয়নি।
৪ ঘণ্টা আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্কা নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহটি হয়নি।
বহু প্রচার করার পরও কোথাও কোথাও অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে না। অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন, কেন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের বিয়ের পিঁড়িতে না বসানোই মঙ্গল।
বাল্যবিবাহের শিকার অল্প বয়সী মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে না। এতে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, পুষ্টিহীনতা এবং প্রসবজনিত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম বয়সে সন্তানের মা হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তারা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ে। সমাজের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ নষ্ট হয়। আত্মনির্ভরশীল হতে না পারার কারণে সংসারে নানাবিধ সংকটের মধ্যে তাদের পড়তে হয়। শিক্ষাবঞ্চিত ও অল্প বয়সে সংসার শুরু করা মেয়েরা সাধারণত আর্থিকভাবে নির্ভরশীল থাকে। এতে পরিবারে দারিদ্র্য দূর হয় না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই দারিদ্র্য চলতে থাকে।
এতে যে নারীর অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সেটাও বিবেচনায় আনা দরকার। বাল্যবিবাহের কারণে একটি মেয়ে নিজস্ব মতামত-সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং স্বাধীন জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সামাজিকভাবেই সে হেয় হতে থাকে। সংসারে তার মতামতের কোনো মূল্য থাকে না। পুরুষশাসিত সমাজে এমনিতেই মেয়েরা থাকে কোণঠাসা হয়ে, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েটি সে ক্ষেত্রে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। এ যেন তার ব্যাপারে সামাজিক নিপীড়নের জন্য একটি মুক্ত জায়গা হয়ে দেখা দেয়।
একজন মানুষ যেন মুক্ত, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সমাজে অর্থনৈতিক অবদান রাখার মতো করে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারে, সেসব দিক বিবেচনা করা না হলে সংকটে পড়ে রাষ্ট্র।
পিরোজপুরের নেছারাবাদের ঘটনাটি আশার আলো জাগায়। যদিও ইউএনও বিয়ের অনুষ্ঠানে বাধা দেননি, তবু তিনি সেখানে অংশ না নিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ চলে যাওয়ায় বিয়েটা হয়নি বলে একটি ভালো কাজ হয়েছে। যখন সমাজের একটি বড় অংশ অল্প বয়সে বিবাহ ও মাতৃত্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। ফলে জাতির অগ্রগতিতেও বাধা সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক যে মেয়েটি অভিভাবকদের কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছিল, এখন হয়তোবা সে তা থেকে মুক্ত হতে পারে। অভিভাবকেরাও সচেতন হয়ে এই শিশুটিকে শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারেন। তাতে একটি সমৃদ্ধ ও সমানাধিকারের সমাজ গঠিত হওয়ার পথে তাঁরা অবদান রাখতে পারেন।

পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্কা নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহটি হয়নি।
বহু প্রচার করার পরও কোথাও কোথাও অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে না। অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন, কেন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের বিয়ের পিঁড়িতে না বসানোই মঙ্গল।
বাল্যবিবাহের শিকার অল্প বয়সী মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে না। এতে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, পুষ্টিহীনতা এবং প্রসবজনিত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম বয়সে সন্তানের মা হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তারা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ে। সমাজের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ নষ্ট হয়। আত্মনির্ভরশীল হতে না পারার কারণে সংসারে নানাবিধ সংকটের মধ্যে তাদের পড়তে হয়। শিক্ষাবঞ্চিত ও অল্প বয়সে সংসার শুরু করা মেয়েরা সাধারণত আর্থিকভাবে নির্ভরশীল থাকে। এতে পরিবারে দারিদ্র্য দূর হয় না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই দারিদ্র্য চলতে থাকে।
এতে যে নারীর অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, সেটাও বিবেচনায় আনা দরকার। বাল্যবিবাহের কারণে একটি মেয়ে নিজস্ব মতামত-সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং স্বাধীন জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সামাজিকভাবেই সে হেয় হতে থাকে। সংসারে তার মতামতের কোনো মূল্য থাকে না। পুরুষশাসিত সমাজে এমনিতেই মেয়েরা থাকে কোণঠাসা হয়ে, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েটি সে ক্ষেত্রে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। এ যেন তার ব্যাপারে সামাজিক নিপীড়নের জন্য একটি মুক্ত জায়গা হয়ে দেখা দেয়।
একজন মানুষ যেন মুক্ত, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সমাজে অর্থনৈতিক অবদান রাখার মতো করে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারে, সেসব দিক বিবেচনা করা না হলে সংকটে পড়ে রাষ্ট্র।
পিরোজপুরের নেছারাবাদের ঘটনাটি আশার আলো জাগায়। যদিও ইউএনও বিয়ের অনুষ্ঠানে বাধা দেননি, তবু তিনি সেখানে অংশ না নিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ চলে যাওয়ায় বিয়েটা হয়নি বলে একটি ভালো কাজ হয়েছে। যখন সমাজের একটি বড় অংশ অল্প বয়সে বিবাহ ও মাতৃত্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। ফলে জাতির অগ্রগতিতেও বাধা সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক যে মেয়েটি অভিভাবকদের কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছিল, এখন হয়তোবা সে তা থেকে মুক্ত হতে পারে। অভিভাবকেরাও সচেতন হয়ে এই শিশুটিকে শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারেন। তাতে একটি সমৃদ্ধ ও সমানাধিকারের সমাজ গঠিত হওয়ার পথে তাঁরা অবদান রাখতে পারেন।

আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড
১২ আগস্ট ২০২৪
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
৩ ঘণ্টা আগে
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
৩ ঘণ্টা আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

আজ অদ্ভুদ ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের এই জয়গান প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ৪০ দিনের কম সময় এই তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদের পতন ঘটায়। এই শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শরিক হয়ে যায় সমস্ত দেশ অহিংসভাবে, অসহযোগিতাকে সম্বল করে। যদিও যে সহিংসতা এখানে দৃশ্যমান হয় সেটাই জাতীর মনকে নাড
১২ আগস্ট ২০২৪
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
৩ ঘণ্টা আগে
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
৩ ঘণ্টা আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্কা নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহটি হয়নি।
৪ ঘণ্টা আগে